কেবিন নং থার্টি সিক্স পর্ব-০২

0
1322

#কেবিন_নং_থার্টি_সিক্স
পর্ব:০২
লিখা:জাহান আরা

রাত সাড়ে দশটায় অনাকাঙ্ক্ষিত কল টি এলো।অচেনা নাম্বার দেখে প্রথমে রিসিভ করি নি,কিন্তু বারবার ফোন বাজতে থাকায় অগত্যা রিসিভ করতে হলো।
ওপাশ থেকে বিষাদময় একটা কণ্ঠস্বর বলে উঠলো,”কাজল!কাজললতা! ”

এক মুহূর্ত লাগলো আমার বুঝতে কে কল দিয়েছে,বুঝতে পারার সাথে সাথেই বুকের ভিতরের ক্ষতটা যেনো কেউ খুঁচিয়ে তুললো।
গলায় ফাঁস হয়ে বসা কান্নারা বের হওয়ার জন্য হাঁসফাঁস করছে তবুও তাদের দমিয়ে রাখলাম অনেক চেষ্টা করে।
আমার যেনো কিছুটা অভিমান হলো।এতোদিন পর কেনো নেহাল কল দিলো!
ও কি জানতে পারে নি এতোদিন?

আমি আর নেহাল সেই স্কুল লাইফ থেকেই বেস্ট ফ্রেন্ড। দুজনের বাসা পাশাপাশি হওয়াতে স্কুল কলেজ সবখানেই দু’জন একসাথে ছিলাম।সবাই ভাবতো আমাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক আছে। বিষয়টা নিয়ে আমরা দু’জন ও খুব মজা নিতাম।কেউই ওদের ভুল ভাঙাতে যেতাম না।
ক্লাসের সবার বদ্ধমূল ধারণা ছিলো এটা।তবে কখনো আমাদের বাসা থেকে কেউ কিছু সন্দেহ করে নি বা বাঁধা দেয় নি।

একপর্যায়ে যখন ক্লাসের সবাইকে অভ্রর কথা জানালাম তখন সবাই কিছুটা অবাক হয়।
কেউই ভাবতেই পারে নি আমার আর নেহালের মধ্যে শুধুই ফ্রেন্ডশিপ রয়েছে।

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবারও বললো,”কাজল!কাজললতা!লতা!রাগ করে থাকিস না দোস্ত আমার,আমি আসলেই এতোদিন কোনো খবর পাই নি,এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো অথচ আমি কারো থেকেই খবর পাই নি।আজ দুপুরে জানতে পেরেছি,জানতে পারার সাথে সাথেই আমি বাংলাদেশের টিকিট কেটে ফেলেছি দোস্ত।”

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আস্তে করে বললাম,”ওহ আচ্ছা।”

“এখনো রেগে আছিস আমার উপর?”

“না রাগবো কেনো?”

“আমি জানি দোস্ত,তোকে আমার চাইতে বেশি ভালো করে কে চিনে?
কেউ না,১১ বছরের বন্ধুত্ব আমাদের,বন্ডিং কি এতোই খারাপ না-কি বল?”

“হু,এজন্যই আমার বিয়েতে আসার ও সময় হয় নি তোর,আর আমাকে তো কল দেওয়াটাই ভুলে গেছিস তুই।”

“কি করবো বল দোস্ত,আমি ছেলে তুই মেয়ে,এটাই প্রধান বাঁধা,আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এটা তুই জানিস,আমি জানি,আমরা মানি,কিন্তু সবাই তো এই সম্পর্ক টা সহজভাবে নিবে না,আমি আসলে চাই নি তোর কোনো ক্ষতি হোক আমার দ্বারা। তাই যোগাযোগ রাখি নি।অভ্র ভাই তো এমনিতেই কিছুটা কনজারভেটিভ,অন্তত আর কেউ না জানুক আমি তো জানি অভ্র ভাইকে তুই কতোটা ভালোবাসতি আর উনি তোকে কতোটা ভালোবাসতো।আমাকে নিয়ে তোর সংসারে কোনো অশান্তি হোক তা আমি চাই নি।আগেই সাবধানতা অবলম্বন করেছি তাই।তোর জন্য আমার সবসময়ই দোয়া ছিলো,আজীবন থাকবে।”

অভ্রর নাম শুনতেই আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না।কেঁদে ফেললাম।ওপাশ থেকে নেহাল কিছুটা সময় দিলো আমাকে নিজেকে সামলে নেয়ার।তারপর বললো,”কিভাবে কি হয়েছে আমাকে খুলে বল,আমি আসছি দেশে,আমার ছোট মামা পুলিশ কমিশনার,আমি মামাকে বলবো অভ্র ভাইয়ের মামলার তদন্তের কথা।”

নেহালের কথা শুনে কিছুটা আশ্বস্ত হলাম।সেদিনের সব স্মৃতি আজও আমার মনে আছে।বিন্দুবিসর্গসহ সব স্মৃতি মাথায় রয়ে গেছে।

“রাত দশটার দিকে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি আর অভ্র আমাদের রুমে চলে আসি।রাত ১১ টার দিকে অভ্রর কল আসে,ওর কোনো এক পেশেন্ট কল দিয়েছিলো সম্ভবত। ঘরে নেটওয়ার্ক সমস্যা হওয়ায় অভ্র মেইন ডোর খুলে বাগানে চলে যায়। যাওয়ার সময় দুষ্ট হাসি হেসে আমাকে বলে যায়,রেডি থাকো বউ,আসছি।
অভ্রর কথা শুনে আমি ও হেসে উঠি।ও বের হতেই আমি উঠে পরনের শাড়ি পালটে সিঁদুর লাল রঙের শাড়িটা পরে নিই, শাড়িটি অভ্রর খুব প্রিয় ছিলো।
দুই হাত ভর্তি রেশমি চুড়ি পরি,একটু হালকা সাজগোজ করি। কাজল পরতে গিয়ে ও আর পরি না।আমি জানি অভ্র নিজ হাতে আমাকে কাজল পরিয়ে দিতে কতোটা পছন্দ করে।

বাহিরে ডাইনিং রুমে কিছু একটা ধাক্কা খাওয়ার শব্দ পাই হঠাৎ করে। কিন্তু তখন ততটা পাত্তা দিই নি,ঘরে দুইটা বিড়াল আছে।বড় ভাসুরের মেয়ে রাইফার পোষা।মেয়েটা সারাদিন দুই বিড়ালের সাথে কাটায়।
তখন যদি একবার উঠে এসে চেক করতাম অথবা অভ্রকে জিজ্ঞেস করতাম তবে হয়তো এই দূর্ঘটনা হতো না।
১০ মিনিট পর অভ্র রুমে এলো।

আমি জিজ্ঞেস করলাম,কে কল দিয়েছে?
অভ্র বললো, কল দিয়েছে এক লোক,আমার পুরনো পেশেন্ট ছিলো,তার কথা শেষ হতেই চায় না।কোনোমতে বলে এসেছি ভাই দিনে কথা বলবো,আমি প্রথমত ছুটিতে আছি এখন,দ্বিতয়ত এখন আমার ঘুমের সময়,আপনার সাথে দিনে কথা বলবো।

অভ্রর কথার মাঝখানেই বাহিরে আবারও কিছু শব্দ হলো,দরজা খোলার শব্দের মতো।
অভ্র একটু জোরে ডাকলো,বাবা না-কি?

ওপাশ থেকে জবাব এলো,হু!

শ্বশুর আব্বার রাতে ঘুম না এলে বাগানে হাটার অভ্যাস,উনি প্রায় এরকম করেন।তাই আর কেউ সন্দেহ করলো না।
কিন্তু ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারি নি সেটা শ্বশুর আব্বা ছিলো না।ছিলো ডাকাতের মধ্যে একজন,যে কি-না দরজা খুলে দিচ্ছিলো অন্যদেরকে।

অভ্র আমার সামনে বসে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো অপলক।তারপর বললো,আমার যদি কখনো ফাঁসির আদেশ হয়,আমি শেষ ইচ্ছে জানাতে হলে বলবো তোমাকে এই শাড়িটি পরে যেনো ১ ঘন্টার জন্য আমার সামনে বসিয়ে রাখে,আমি যেনো দুচোখের তৃষ্ণা মেটাতে পারি তোমাকে দেখে।

অভ্রর কথা শুনে আমি কিছুটা লজ্জা পাই।আমার ঠোঁটে একটা গভীর চুমু খায় অভ্র।তারপর ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে কাজল নিয়ে আমাকে কাজল পরিয়ে দিলো।

বাহিরের রুমে কারো পা টিপে হাটার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, অভ্রকে বলতেই অভ্র বিড়াল বলে উড়িয়ে দিলো।আরো গভীরভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
তখনই দরজায় নক করার শব্দ শুনতে পেলাম।

চলবে…..???

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে