কি ছিলে আমার পর্ব-২৯+৩০

0
1726

#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-২৯

সকাল সাড়ে সাতটায় ফখরুল সাহেব চলে গেলেন অফিসের উদ্দেশ্যে। ছেলের বিয়ে উপলক্ষে ছুটি যা নিয়েছেন তা কালই শেষ হয়েছে৷ তিনি আজ তাই দ্রুতই অফিসের জন্য রওনা দিয়েছেন। মৈত্রীদের এলাকা থেকে যেতে মাত্র ত্রিশ মিনিট এর মত লাগতো কিন্তু এখান থেকে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট লাগে। তাই নাশতা না করেই বেরিয়ে পড়েছেন তিনি৷ যাওয়ার আগে ইরশাদকে বলে গেছেন, “রেস্ট নেওয়ার আগে ওকে বলিস ইরিনের সাথে কথা বলে নেয় যেন। কাল সারারাত ছটফট করেছে, খাবারও খায়নি।”

শ্বশুর বেরিয়ে যেতেই মৈত্রী গিয়েছিল শ্বাশুড়ির কাছে। কিছু সময় পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়েছে। তার খুব একটা কথা বলার অভ্যাস নেই তবুও চেষ্টা করলো নোরা, ময়ূখের হয়ে দু একটা কথা বলতে কিন্তু তার এ বিষয়ে চ-র-ম অপারগতার কারণে কথা আগায়নি৷ তাকে সে মুহূর্তে ইরশাদ এসে বাঁচিয়ে দিলো কথা বলার হ্যাপা থেকে। মৈত্রী রান্নাবান্না কখনোই তেমন একটা শেখেনি। বলা যায় জীবনের এই দিকটা তার মাঝে তেমনভাবে উদয় হয়নি বলেই অজ্ঞতা এ বিষয়ে তবুও সকালে তো নাশতা চাই সকলেরই। ইরশাদ মায়ের পাশে বসতেই ময়ূখও ঢুকলো ঘরে।
“আম্মা!”

ইরিন ডাক শুনেও তাকালেন না ময়ূখের দিকে। সে বার তিনেক ডেকেও যখন কোন সাড়া পেলো না তখন ইরশাদ ইশারা করলো মায়ের কাছে এসে পাশে বসতে। ময়ূখ তা না করে হঠাৎই আম্মার পা জড়িয়ে ধরলো। পুরুষ মানুষ নাকি কাঁদতে জানে না! ময়ূখ কেঁদে ফেলল বাচ্চাদের মত করে।

“আমাকে মা-ফ করে দাও আম্মা আমি ভুল করছি। অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে আমাকে ক্ষ-মা করে দাও প্লিজ। তোমাকে ক-ষ্ট দিতে চাইনি।”

বাচ্চাদের মত করেই ময়ূখ কাঁ-দ-ছে নিজের দো-ষ স্বীকার করছে। ইরিন নড়েচড়ে পা ছাড়াতে চেষ্টা করছেন। তাঁর নিজের চোখেও অশ্রু টলমল কিন্তু তা ঝরতে দিচ্ছেন না। ইরশাদকে আদেশ দেওয়ার মত করে বললেন, “ইরশাদ ওকে পা ছাড়তে বল আমার। এসব কান্নাকাটি দেখতে চাইনি আমি।”

ময়ূখ ছাড়লো না সে একই কথা বারবার বলছে। ইরিন এবার আরও রেগে নিজেই পা ছাড়িয়ে উঠে বসলেন৷ নোরাও এসে ঢুকলো সে সময়। ইরিন এক পলক সবাইকে দেখে নিয়ে ইরশাদকে বললেন, মৈত্রীকে ডাক।

মৈত্রী ঘরে ঢুকতেই ইরিন বললেন, “তোমার সব গয়নাগুলো নিয়ে এসো তো যেগুলো এ বাড়ি থেকে দেওয়া হয়েছে এনগেজমেন্ট এর আংটিটাও।”

সবাই বিষ্ময়ে হ-ত-বাক হয়ে গেছে। মৈত্রী অবশ্য অত কিছু ভাবেনি শুধু চুপচাপ গয়নাগুলো নিয়ে এলো। ইরিন সেগুলো একে একে সব সাজিয়ে বিছানায় একপাশে রাখলো। তারপর উঠে গিয়ে নিজের আলমারি খুলে মোটা একটা কালো রঙের ব্যাগ বের করলো। ব্যাগ খুলে পুরনো দু’টো কাপড় সরাতেই চোখে পড়লো গয়নার বাক্স। সেগুলো একের পর এক নামিয়ে বিছানার অন্যপাশে রাখলো একইভাবে। সবাই বোঝার চেষ্টা করছে প্রায় বেশিরভাগ একইরকম গয়না। এরপরের কথাগুলো বলার আগে ইরিন নোরা আর মৈত্রীকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। তারপর ময়ূখকে কিছু গয়না দেখিয়ে বলল, “এই যে একই রকম দুইটা করে যা দেখছিস সেগুলা আমার বিয়ের গয়নাগাটি যা আমি শ্বশুর বাড়ি বাবার বাড়ি মিলিয়ে পেয়েছিলাম। সে যুগেই আমি প্রায় পঁচিশ ভরি গয়না পেয়েছি তা একদম কড়ায়গণ্ডায় দুই ভাগ করে একই ডিজাইনে নতুন করে গড়িয়ে রেখেছি। আমার কোন মেয়ে নেই তাই শখ করতাম দুই ছেলে বিয়ে করিয়ে দুই বউকে মেয়ে বানাব। তাদের জন্য এইসব গয়না আর ওই যে মৈত্রীর যেগুলো বাড়তি সেগুলো নতুন গড়িয়েছি বিয়ে উপলক্ষে আর ভেবেছিলাম বাবুকে বিয়ে করানোর সময়ও কিছু গড়াবো। আমার, আমাদের যা কিছু আছে সব কিছুতে আমরা দুই সন্তানকে নিয়েই স্বপ্ন সাজিয়ে রাখছি। ইরশাদ যেখানে নিজে মেয়ে পছন্দ করে বিয়ে করতে পারে সেখানে তোকে কি বাঁধা দিতাম? ইরশাদ জীবনে ধোঁকা পেয়ে পা-গ-লের মত হয়ে যাচ্ছিলো তখন যদি তার পাশে থেকে শুধু মাত্র তার জন্য নিজের বাড়িঘর, ব্যবসা সব ফেলে দূরে যেতে পারি তবে তুই কারো জন্য ভে-ঙে পড়লে তোর পাশে থেকে তোর জন্য কিছু করবো না ভাবলি কি করে! নাকি লোকের কথাই ঠিক আমি শুধু তোর বাবার বোন ফুপুই রইলাম কখনো মা হয়ে উঠতে পারিনি?”

“কি বলছো আম্মা! তুমিই আমার মা আমার জীবনে তুমি, বাবা আর ভাই-ই সব। আমাকে ক্ষমা করে দাও আম্মা এই বিয়ে কেমনে কি করে আমি কিচ্ছু বুঝতে পারিনি৷ এত বড় ভুল কি করে করলাম আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি।” ময়ূখ তার আম্মার পা জড়িয়ে বসে আছে মেঝেতে৷ ইরিন কি পরি-মাণ ক-ষ্ট পেয়েছে তা সবাই উপল-ব্ধি করতে পারছে কিন্তু ময়ূখের কথাগুলো শুনে ইরশাদ চিন্তিত হলো৷ ইরিন তার নিজের ভেতরকার সকল ক-ষ্ট এক নিমেষেই উগড়ে দিয়েছে কিন্তু রা-গ পড়েনি এখনো৷ ইরশাদ বুঝতে পারলো মায়ের রা-গ পড়তে সময় লাগবে তাই আপাতত ময়ূখকে টেনে নিয়ে গেল ঘরের বাইরে৷ সারাদিন আর ইরিন সামনে এলো না কারো। মৈত্রী রান্না করতে জানে না কিন্তু না খেয়ে থাকাও মুশকিল। তাই ইরশাদই রান্নার ব্যবস্থা করলো। মৈত্রীকে দিয়ে তরকারি কা-টি-য়ে নিজে রান্না করলো। পাশে দাঁড়িয়ে মৈত্রী সব মন দিয়ে দেখলো। দুপুরে নিজেই শ্বাশুড়িকে জোর করে খাওয়াচ্ছিলো তখন ইরিন জানতে চাইলো সবাই খেয়েছে কিনা৷ মৈত্রী বুঝলো তিনি সবাই বলতে ময়ূখের খোঁজ নিচ্ছেন৷ মৈত্রীর ভালো লাগছে এই নতুন সংসার, নতুন আপন মানুষগুলোকে। পরিবারের সংঙ্গা তার কাছে আগে যেমনটা নিস্পৃহ ছিল একন তেমনটা লাগছে না৷ সংসার জীবনটা সমুদ্রের মত কখনো শুভ্র ফেনিল সুন্দরে ভরা, কখনো উত্তাল ঢেউয়ের মত বি-প-দজ-নক। প্রতিকূল, অনুকূল দুই অবস্থাই সে মাত্র চারদিনে টের পেয়ে গেছে৷ রাতে খাবার গরম করতে করতে মৈত্রী ভাবলো শ্বশুরমশাইও ময়ূখ ভাইয়ার ওপর রেগে আছেন। উনার সাথেও কি মান-অভিমান মিটিয়ে নেওয়া উচিত না! সে ইরশাদকে গিয়ে এ কথা বলতেই সেও সম্মত হলো। ইরশাদ নিজের ঘর থেকে বের হতেই দেখতে পেল ময়ূখ বাবা -মায়ের ঘরেই ঢুকছে। তার আর কিছু করার দরকার নেই ভেবে ঘরে ফিরে গেল।

“চলে এলেন যে!”

“তোমার দেবর বুদ্ধিমান নিজে থেকেই চলে গেছে বাবার কাছে এন্ড আই নো, যা আমরা ভাবছি সে নিজেই করে নেবে। আচ্ছা বলতে ভুলে গেছি তোমার ফোন তুলেছিলাম আমি আঙ্কেল কল দিয়েছে। কথা বলে নাও।”

“আচ্ছা” বলেই মৈত্রী তার বাবাকে কল দিয়ে কথা বলল।

“বাবা তুমিও কি মাফ করবে না আমায়?”

“কিসের মাফ! কি করেছে তুমি?”

“আম্মার মত তুমিও আমার ওপর রে-গে থাকবা? ভুল তো সন্তানেরাই করে তাই না!”

“আমি কারো ওপরই রে-গে নেই। ইরশাদ বিয়ে করতে চেয়েছে করিয়ে দিয়েছি। তুমি নিজেই করবে ভেবেছো, করে নিয়েছো এতে আমার রা-গ করার থাকবে কেন আমি বা আমরা কে তোমার!”

“বাবা! এ কথা অন্তত বোলো না তুমি৷ বাবা হও তুমি আমার আমি ভু-ল, দো-ষ যা করবো তা তুমিই তো দেখবে।আমি যা করেছি ভুল করেছি আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবা। আমি আর কখনো এমন ভু-ল করবো না।”

“বারবার ক্ষ-মা-র কথা বলছো কেন? আমি বাবা তো নাম কো ওয়াস্তে দিন শেষে আমি সেই ফুপাই থাকবো। তোমার জীবনের আপনজনের লিস্টে বউ, বাচ্চা, বাবা -মায়ের অনেক পরে আসবে আমার নাম৷ আমি রেগেও নেই আর না তোমাকে দোষী বলছি।”

“আম্মাও কথা বলছে না আমার সাথে তুমিও পর করে দিচ্ছো। তুমি আমার ফুপা নও তুমিই আমার বাবা আবরার খন্দকারেরও উর্ধ্বে তোমার জায়গা। আমাকে মাফ করে দাও না বাবা প্লিজ। ” এলোমেলো কথাবার্তায় ময়ূখ জড়িয়ে ধরলো ফখরুল সাহেবকে। তিনি আর মনের ওপর জোর খাটাতে পারলেন না। বুকের ওপর হামলে পড়া ছেলেটাকে দু হাতে জড়িয়ে নিলেন। ইরিন রান্নাঘর থেকে এক কাপ চা নিয়ে এসেছিলেন ইরশাদের বাবার জন্য কিন্তু দরজায় দাঁড়িয়ে দৃশ্যটা দেখতেই সরে গেলেন তিনি। মনে মনে এমনটাই তো চাইছিলেন৷ যে মানুষটা নিঃস্বার্থভাবে ময়ূখকে লালন পালন করলেন আজ তার মনে দেওয়া কষ্ট ময়ূখকেই লাঘব করতে হবে।

রাতের খাবারে ঘরের দৃশ্য চমৎকার ভাবে বদলে গেল। ইরিন রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে সব বেড়ে দিচ্ছে মৈত্রী আর নোরা সব টেবিলে সার্ভ করছে। বাবা ছেলেরা তিনজনে একত্রে বসতেই ইরিনরাও সব গুছিয়ে বসলো টেবিলে৷ ইরিন এখনো সরাসরি কথা বলছে না ময়ূখের সাথে তবে এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে তা দেখে ফখরুল সাহেব ময়ূখকে ইশারা করলো, “চিন্তা নেই দু এক দিন চুপ থাক নিজেই কথা বলবে।”

খাওয়ার ফাঁকেই ইরশাদ সবাইকে জানিয়ে দিল তার সিলেটের চাকরির কথা। ইরিন অবশ্য আগে থেকেই অনুমতি দিয়েছিলেন ছেলেরা চাকরি যেখানে ইচ্ছে করুক৷ তারা কখনো এসবে হস্তক্ষেপ করবেন না তবে অবস্থা যদি এমন হয় বাবা মা সাথে যেতে পারছেন না তখন অবশ্যই বিয়ে করে তবেই দূরে যাবে। একা ছেলেদের কোথাও থাকতে দেবেন না। ইরশাদ এখন বিবাহিত তাই তিনি আ-প-ত্তি করেননি। কিন্তু চি-ন্তার বিষয় মৈত্রী হুট করে এই নতুন লাইফে এসে আরেক লাইফে ঢোকা সে মানিয়ে নিতে পারবে কিনা! তারওপর ইরশাদ জানালো মাসের প্রথম দিনেই জয়েন করতে বলা হয়েছে। মানে হাতে আর দিন দশেক আছে মাত্র। ইরশাদ মায়ের চিন্তা বুঝতে পেরে জানালো সে আপাতত মৈত্রীকে নিচ্ছে না সাথে। সেখানে তাকে অফিসের কাছেই বাসা দেওয়া হবে সে গিয়ে আগে দেখে আসুক সেখানকার ব্যবস্থা কেমন তারপর বুঝে শুনে গুছিয়ে পরেই নেবে মৈত্রীকে। এরই মাঝে মুজিব আর রোকসানার পক্ষ থেকে ফোনকল পাওয়া গেল৷ তারা ইরিনের কাছে জানালেন মৈত্রীকে নিতে চান তারা নাইওরি বলে নিয়ম আছে তাদের। ইরিন হাসিমুখে বলে দিলেন আপনারা যেদিন চাইবেন। কথা হলো আগামী পরশু এসে নিয়ে যাবে তারা। ইরিন এসবের মাঝে মনে রাখলেন তার বড় ভাইয়া বার বার তাকে ফোন করলেও ছোট ভাইয়া কাজের বাহানায় সেই যে আর কোন খোঁজ নেয়নি। নোরা বিয়ে করে ফেলল, মেয়েটা অন্যায় করলো কি ঠিক সে বিষয়ে কি তাকে কিংবা বড় ভাইকে কিছুই বলার নেই! ময়ূখের প্রতি রাগ উবে গিয়ে যেন ছোট ভাইয়ার ওপরই পড়লো তার। ঘুমাতে যাওয়ার আগে নোরাকে ডেকে বললেন, “ভাইয়া কল দিলে বলবে ফুপি আগামী সপ্তাহে বিয়ের রিসেপশন রাখবেন।”

“শুধু এটাই বলব!”

“হু, বাকিটা তিনিই বুঝবেন।”

নোরা বুঝলো ফুপি কোন কারণে তার বাবার ওপর রে-গে আছে। হতে পারে তার কারণেই। সে কাল অন্যঘরে ঘুমিয়েছে কিন্তু আজ তাকে ময়ূখের সাথে ময়ূখের ঘরেই থাকতে হবে৷ এ নিয়ে ভীষণ উত্তেজিত সে। নিয়ম, শৃঙ্খলা নিয়ে তার কখনো কোনো ভাবনা ছিলো না কিন্তু আজ সে এ বিষয়ে সতর্ক থাকবে ঠিক করলো। যত যাই হোক ময়ূখের বেড়ে ওঠা তার মাঝে নিয়মনীতি, সংস্কৃতি নিয়ে নিশ্চয়ই একটা ব্যাপার থাকবে। সে ঘরে ঢুকে আগেই ব্যাগ থেকে সেলোয়ার-কামিজ নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো৷ কিছু সময়ের মাঝেই পরনের শার্ট-জিন্স সব বদলে সেলোয়ার-কামিজ পরে বেরিয়ে এলো৷ ময়ূখ বিছানা ঠিক করে দুটো কম্বল রাখছে বিছানায়। এক ফাঁকে জানালার পর্দা টেনে, বারান্দার দরজা ভালো করে লক করে বিছানায় এলো। আজ শীত বেশি লাগছে তার ওপর নোরা এ ঘরে থাকবে তাই একটা কম্বল তাকেই দিতে হবে। ময়ূখ নিজের মত সব গুছিয়ে খাটের এক পাশে শুয়ে পড়লো৷ নোরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চোখে একটু কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক দিলো। হাতে, পায়ে ক্রিম মেখে চুলগুলো আঁচড়ে বিছানায় উঠলো। ঘরের বাতি জ্বালানোই ছিল সে ময়ূখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ৷ বোঁজা চোখেও ময়ূখ টের পেল নোরার দৃষ্টি তাই চোখ খুলে জিজ্ঞেস করলো, “তাকিয়ে আছো কেন?”

“দেখছিলাম।”

“নোরা, শোনো একটা কথা আগেই ক্লিয়ার করা দরকার। আমাদের বিয়েটা কিভাবে হলো, কেন করলাম এ বিষয়টা আমার কাছে এখনো পরিষ্কার নয়। তুমি তো সব জানো বিশ্বাস করো সেদিন কি হলো তোমার সাথে কথা বলতে বলতেই কি হয়ে গেল আমি বুঝিনি৷ আমার এখনো মনে পড়ে না সেদিন কথার মাঝেই এমন কি হলো যার জন্য আমি তোমার বলার সাথে সাথেই বিয়ে করতে রাজী হয়ে গেলাম! আমি তোমাকে অস্বীকার করছি না শুধু একটু সময় চাই। কেমন যেন এক গোলকধাঁধায় আটকে আছি আমি নইলে এমন কেন করলাম! সেদিনের সেই সময়টুকু একদমই অ-স্প-ষ্ট আমার মস্তিষ্কে। শুধু তোমার চোখ দুটি ছাড়া কিছুই মনে পড়ে না আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ওই সময়টুকুই কেউ মুছে দিয়েছে আমার ব্রেন থেকে৷”

ময়ূখ এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে বলে যাচ্ছিলো কথাগুলো তখনও মৈত্রী সেদিনের মত তাকিয়ে আছে তার দিকে৷ ময়ূখ নিজের চোখ নামিয়ে নিলো৷ অন্যপাশ ফিরে বলল, এভাবে তাকাবে না আমার দিকে নোরা। প্লিজ।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে ইরশাদকে দেখছিলো। খাটে বসে ল্যাপটপে মনযোগ ইরশাদের আর সেটাই আয়নায় স্পষ্ট৷ সামনে বসে সরাসরি তাকাতে কেমন লজ্জা লজ্জা লাগে বলেই মৈত্রী তাকে লুকিয়ে -চুরিয়ে দেখার সুযোগ মিস করে না৷ এখনও তাই সেভাবেই দেখছিল। ইরশাদ কেমন করে যেন টের পেয়ে গেল তা,
“এখনো এমন চুরি করে দেখার কোন মানে হয়?”

হঠাৎ এমন কথায় হকচকিয়ে গেল মৈত্রী। দ্রুত হাতে চুল বেঁধে ঘরের বাতি নেভাতে গেল। তা দেখে ইরশাদ এবার শব্দ করে হেঁসে ফেলল।

“তোমার কাজ শেষ হয়েছে বলে কি আমারও শেষ? এখনই বাতি বন্ধ করছো কেন!”

“স্যরি, বুঝতে পারিনি।”

“না বোঝার জন্য একটা শা-স্তি দিলে কেমন হয়?”

“শা-স্তি! ”

“হু, মিষ্টি একটা উহুম দুইটা শা-স্তি দিব। আগে বিছানায় আসো।”

“জ্বী!”

“উফ এসো তো।”

কপাল কুঁচকে ইরশাদ কথাটা বলেই ল্যাপটপ অফ করে মৈত্রীকে দিলো রেখে আসার জন্য৷ মৈত্রী সেটা রিডিং টেবিলে রেখে বিছানায় এলো। ইরশাদ যেন এই অপেক্ষাতেই ছিল এতক্ষণ। সে মৈত্রীকে টেনে বাহুবন্ধনে নিলো। কপালে চুমো খেয়ে বলল, “কাজী দিয়ে কলমা পড়ে বিয়ে হয়েছে এখনো এমন চো-রের মত দেখার কি আছে? বিয়ের আগে এমন করে জানালা থেকে উঁকি মেরে দেখতে ইট’স ওকে তখন জামাই ছিলাম না কিন্তু এখনো! আর দ্বিতীয় কথা বিয়ে করেছি বউকে দেখবো তার জন্য হলেও বাতি জ্বালিয়ে রাখতে হবে তো! আমি আবার আঁধারে কাজ সারা টাইপ পুরুষমানুষ নই।”
স্ত্রীর সাথে মজা করার ক্ষেত্রে ইরশাদ যেন লাজলজ্জা সব গিলে ফেলেছে৷ সে মৈত্রীর সাথে আরও অনেক রকম হাসিঠাট্টা করে টেনে নিলো নিজের মাঝে নিয়ে নিলো। মৈত্রীও শরীরের টানে সাড়া দিলো। ভালোবাসায় শুধু মন নয় দেহও ডুবে যায় অতলে। ইরশাদ, মৈত্রীর জীবনের একটা সময় বি-ষা-দ আর একাকীত্বের যে অসীম সাগরে হারিয়ে গিয়েছিল তা প্রকৃতির অপার ষ-ড়-যন্ত্রে সুন্দর এক পরিণতি দিল। জীবন থেমে থাকে না কারো জন্যই থেমে নেই ইরশাদ, মৈত্রী কিংবা সায়রার।

চলবে

#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-৩০

বাইরে আজ শীতের প্রকোপ যেন ইউরোপীয় শীতের অনুভূতি দিচ্ছে। দুপুরে কুয়াশা একটু কম ছিলো কিন্তু বিকেল শুরু হতেই চারপাশ আঁধারে ঘিরে আসছে। মৈত্রী আজ শাড়ি পরে তৈরি হয়ে আছে। ইরিন পরশুর কথা বললেও মৈত্রীর খালা আবার বিদেশে চলে যাবে বলে নাইওর নেওয়ার দিন এক এগিয়ে দিয়েছে। যেহেতু ইরশাদকেও সিলেটে যেতে হবে নতুন চাকরির সুবাদে তাই আগেই সে গিয়ে সবটা দেখে আসবে। অফিস থেকে তাকে থাকার জন্য যে বাসা অফার করা হয়েছে মূলত সেটা দেখে কি লাগবে না লাগবে সব গোছানোর জন্যই আগে যাওয়া। অফিস থেকেই তারা জানিয়েছে কি কি সুবিধা তাকে দেওয়া হচ্ছে আর তার পেছনে স্যালারি থেকে কতোটা কে-টে নেওয়া হবে। মৈত্রীদের নিতে খুব বেশি মানুষজন আসেনি আত্মীয় বলতে মৈত্রীর নানী, খালা, মুজিব, ফখরুল, মিশু শেলি আর খুব কাছের বলে অরুণিমার শ্বাশুড়ি আর শিপলু এসেছে। দুপুরে খাওয়ার পর সবাইকে মোটামুটি রেস্ট করতে দেওয়া হয়েছে বলে মৈত্রী আর ইরশাদও নিজের ঘরে এসেছিলো৷ তখন ইরশাদ ছোট্ট একটা ব্যাগে নিজের কাপড় গুছিয়ে নিতে নিতে মৈত্রীকে বলল, “মন খা-রা-প নাকি!”

“না”

“মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে মন খারাপ ”

“আপনি আজ না গেলে হয় না? আমাদের বাড়ি চলুন আজ কাল না হয়…”

“উহুম, সময় কম হাতে। যত তাড়াতাড়ি ওখানে সব গোছানো হবে তত তাড়াতাড়ি তোমাকে নিয়ে যেতে পারব৷ আম্মু কি বলেছে জানো তো!”

মৈত্রী মাথা নাড়লো, সে জানে৷ ইরিন কাল বলেছেন, মৈত্রীকে শুরুতেই সাথে পাঠাবেন হোক নতুন জায়গা। দরকার পড়লে পরিচিত কাজের লোক জোগাড় করে দেবেন তবুও ইরশাদ এই শীতে একা একা থাকবে তা তিনি চান না। মৈত্রী নিজেও চায় না একা থাকতে৷ কি হলো কে জানে মাত্র কয়েক দিনেই এই মানুষটিকে ছাড়া তারা একদম থাকা মু-শ-কি-ল। ইরশাদ ব্যাগ গোছানো হলো মৈত্রীকে দু হাতের মাঝে জড়িয়ে ধরলো। মৈত্রী চুপচাপ তার বুকের ওপর মুখ রেখে চোখ বুজলো। তীব্র পুরুষালী এক ঘ্রাণ তার নাকে এসে লাগছে। এই ঘ্রাণটা সে ইরশাদকে জড়িয়ে ধরেই পেয়েছিল। মিষ্টি, মাতাল করা এই সুবাসে শুধু পারফিউম নয় যেন ইরশাদের শরীরেরই নিজস্ব একটা ঘ্রাণ মিশে আছে। ইরশাদ মৈত্রীর বুঁজে রাখা চোখের পাতায় চুমু খেয়ে নিলো।

“মন খা-রা-প করতে হবে না। সেখানে আমার কাজ আশা করি দু দিনেই হয়ে যাবে তারপর সোজা তোমাদের বাড়ি গিয়ে উঠব। আম্মুও তো বলল তোমাকে এবার এক সপ্তাহ থাকতে দিবে সেখানে।”

মৈত্রী চোখের ইশারায় বোঝালো সে জানে। এক সপ্তাহে বাপের বাড়ির প্রথম নাইওর তারপর হয়তো অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সিলেটে গিয়ে সংসার পাতবে। সন্ধ্যার দিকে মৈত্রীদের বিদায় দিয়ে ইরশাদ গেল মার্কেটে। ইরশাদ চাকরিতে জয়েন করার তিন দিন আগের ডেট পড়েছে ময়ূখ নোরার রিসেপশন ডেট। সেই সুবাদেই টুকটাক কেনাকাটা করতে হবে আব্বুর সাথে। ইরিন কাল যাবেন আরও কিছু গয়না তৈরির জন্য সাথে নোরাও যাবে৷ ইরশাদ মার্কেটে গিয়ে প্রথমেই একটা শাড়ি পছন্দ করে ফেলল মৈত্রীর জন্য পরে মনে হলো এই শীতে শাড়ি না লেহেঙ্গা হবে সুবিধাজনক পোশাক। তাই আবার তা পাল্টে লেহেঙ্গাই কিনলো৷ ময়ূখকে ফোন করে সাথে নিয়ে গেল কনভেনশন হল বুকিং এর জন্য৷ রাত প্রায় আটটা পর্যন্ত সে কাজে ঘুরে ফিরে বাড়ি এসে আবার তৈরি হলো সিলেটের উদ্দেশ্যে৷ রাতের খাওয়া শেষে ইরশাদ রওনা দিল । ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফখরুল সাহেব ডাকলেন ময়ূখকে। ব্যাংকে যেতে হবে টাকা তুলতে ময়ূখ জানালো সে চলে যাবে। নোরা ময়ূখের ঘরে বসেই টুকটাক কাজ করছিলো ইরশাদের ল্যাপটপে। তার মম বিয়ের কথা জানার পর থেকেই বিভিন্ন ভাবে তাকে ফোর্স করছে দেশে ফেরার জন্য এখানে তার কোন ভবিষ্যত নেই। জীবনে কখনো কখনো সরল পথকে মানুষ নিজেই জটিল করে ফেলে। সেটা হতে পারে পথভ্রষ্টতা কিংবা তার করা চরম কোন ভুল। নোরা যা করেছে সে এখনো বুঝতে পারছে না ভুল করেছে নাকি পথভ্রষ্ট হয়েছে! যাই করে থাকুক না কেন তার জন্য হয়তো সে একা না ময়ূখকেও শেষ পর্যন্ত ভো-গা-ন্তিতে ফেলবে। নোরা তার মাকে আপাতত এই সান্ত্বনা নিয়ে থামিয়েছে, সে ফিরে আসবে মাস খানেকের মাঝে৷ এমনিতেও প্রফেসর তাকে দু একটা হু-ম-কি দিয়ে ফেলেছে৷

ইরশাদ সিলেট থেকে যেদিন ফিরলো সেদিন সে বাড়ি না এসে মৈত্রীদের বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হলো। বাপের বাড়ি আসার তৃতীয় দিন চলে মৈত্রীর অথচ তার মনে হচ্ছিল কতদিন হয়ে গেছে সে ইরশাদকে দেখে না। ওই বাড়িতে তার কত পুরনো এক সম্পর্ক আছে এমনটাই মনে হয়েছে এই তিনদিনে। আজ তার ভারী মন খা-রা-প ছিল দিনভর ইরশাদ ব্যস্ত থাকায়। মৈত্রী সকাল, দুপুর মিলিয়ে প্রায় বিশ বারের মত কল দিয়েছে মানুষটা রিসিভই করেনি৷ এই নিয়ে শিপলুর মা বার কয়েক ক্ষে-পি-য়ে গেছে মৈত্রীকে৷ কি যে লজ্জা লাগছিল যখন অরুণিমা বলছিল, “স্বামীর সোহাগ মিস করছো বুঝি? ইরশাদ তো দেখি তার বউকে দু দিনেই পা-গ-লি-নী করে দিয়েছে!”

ইরশাদ যখন পৌঁছুলো মৈত্রী তখন রান্নাঘরে। বাড়িতে সবাই জেনেছে ইরশাদের সিলেট শিফট হওয়ার কথা। রোকসানা তাই ইচ্ছে করেই প্রতিবেলা মৈত্রীকে রান্নাঘরে ডাকেন৷ সহজ সব পদ রান্না শিখাচ্ছেন, কা-টাকু-টিও বাদ নেই। মৈত্রীও আগ্রহ নিয়ে তা শিখছে। এখনো এ বেলায় সে রাতের জন্য দু পদের ভর্তা করলো। ইরশাদ ভাই এসেছে সে কথাটা মিশু গিয়ে রান্নাঘরে বলতেই কেমন মৈত্রীর কান্না পেল। রোকসানা আচারের বৈয়াম কেবিনেট থেকে নামাতে নামাতে মৈত্রীকে বললেন, “সে কি জামাই আসবে তুমি তো বললে না! রাতের খাবারে আমি তো শুধু ভর্তা ভাজি করলাম!”
বিয়ের অনুষ্ঠানের পর এই প্রথম শ্বশুর বাড়ি এসেছে ইরশাদ। নতুন জামাই পাতে ভালো মন্দ না দিলে নাক কা-টা যাবে ভেবেই রোকসানা অ-স্থি-র হয়ে উঠলেন। তিনি মৈত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি ঘরে যাও ইরশাদকে দেখো কি লাগে না লাগে। এ্যাই মিশু তুই শেলিকে ডাক আমাকে কিছু পেয়াজ মরিচ কেটে দিক।” তড়িঘড়ি কথাটা বলে রোকসানা ফ্রিজ খুললেন, মুরগি, গরু দুটোই দ্রুত হাতে রেঁধে ফেলবেন ভাবছেন৷ মৈত্রী তা দেখে বলল, “মামনি তাড়াহুড়ো করতে হবে না। রাতের বেলা এত কিছু খাবে না হয়ত!”

“ওমা মেয়ে কি বলে। খাক না খাক সেটা বড় কথা না জামাই প্রথমবার এসেছে…”

“তাহলে আমি বরং চলেই যাই৷” মৈত্রী আর রোকসানা কথার মাঝেই ইরশাদ এসে দাঁড়ালো রান্নাঘরের সামনে। মুখের ওপর জানিয়ে দিলো এখন ভারী সব রান্নার আয়োজন করলে সে এখনই বাড়ি চলে যাবে। বাধ্য হয়ে রোকসানা শুধু ভর্তা ভাজি আর ফ্রিজে থাকা ইলিশ মাছের পিস ভেজে দিলো৷ ইরশাদও তৃপ্তির সাথে বড় বড় দু পিস মাছ ভাজা আর বেগুন ভর্তায় খাওয়া শেষ করলো। মুজিব সাহেবের ভালো লাগলো না রোকসানাও কেমন একটু দোনোমোনো করে শেষে ঘন দুধে সেমাই রেঁধে দিলেন। পরদিন ইরশাদ জানালো সে মৈত্রীকে সাথে নিয়ে যেতে চায়। তাই হলো দুজনে বিকেলেই চলে গেল নিজের বাড়িতে৷

ইরশাদ -মৈত্রী বাড়ি না থাকায় ময়ূখ রাতে সবার অগোচরে ইরশাদের ঘরে ঘুমিয়েছে। কিন্তু আজ তারা ফিরে আসায় সেই সুযোগ নেই। আজ তাকে নিজের ঘরেই ঘুমাতে হবে এবং নোরার পাশেই। মন মস্তিষ্ক কিছুতেই সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না৷ সময় তো চেয়েছে নোরার কাছে কিন্তু নোরাকে আপন করা কি আদৌও সহজ হবে? সে ইরশাদের মত শীতল মানুষ নয়, সবরকম পরিস্থিতিকে সহজেই এক্সেপ্ট করা তার ধাঁতে নেই। নইলে সে এতোটাও অবুঝপনা করত না মৈত্রী ইরশাদের বিয়ের সময়। নিজের অধৈ-র্য্য আর বেপ-রো-য়া স্বভাবই তাকে কতগুলো ভুলের সম্মুখীন করলো! আজীবনের ভুলটা তো সে করেছে নোরাকে বিয়ে করে। দুজনের ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা কিছুতেই মিল নেই৷ আর সবচেয়ে বড় কথা হলো দুজনের কেউই কম্প্রো-মা-ইজ শব্দটার সাথে একদমই আপোষহীন। জীবন নানারকম রঙ দেখায় তেমনটা দেখা ময়ূখের জীবনে শুরুই হলো বুঝি! ঘরে ঢুকে সে বিছানা করে একপাশে শুয়ে পড়ে নিঃশব্দে৷ নোরা দু দিন হয় খুব বেশিই ল্যাপটপে ডুবে থাকছে৷ ময়ূখ খেয়াল করলেও সেদিকে খুব একটা পাত্তা দেয়নি৷ সে এখনো ঘুমাবে বলে চোখ বুজেছিল। ঘরের বাতি নেভানো হয়েছে বুঝতে পেরে চোখ খুলতেই আঁধারে তার বুকের ওপর নোরাকে অনুভব করলো৷ মেয়েটা বড্ড উ-গ্র তার যে মানসিক চাওয়ার চেয়ে দৈহিক আকৃষ্টতা বেশি তা সে উপলব্ধি করতে পারছে৷ আঁধার হাতড়ে নোরার ওষ্ঠপুট অনেকটা জ-ব-রদস্তিই দখল করেছে ময়ূখের ঠোঁট। সুস্থ স্বাভাবিক কোন পুরুষই বোধহয় এমন মুহূর্ত উপেক্ষা করতে পারে না। মেজাজ বি-ক্ষি-প্ত হওয়ার আগেই শীতল হয়ে গেছে নোরার এলোমেলো স্পর্শে। ময়ূখ খুব করে চাইলো এমনটা না হোক নোরা শুনলো না। সে তার ইচ্ছেমত চুমু খেলো ময়ূখকে, কম্বল জড়িয়ে নিঃশব্দে পড়ে রইলো ময়ূখের বুকে। এ মুহূর্তে আর সরিয়ে দিতে ইচ্ছে করলো না মেয়েটাকে। নিস্তব্ধতার দেয়া ভে-ঙে নোরাই মুখ খুলল, “আমি চলে যাব তোমাকে স্বস্তি দিয়ে।”

“কবে?”

“তুমি খুব স্বা-র্থপ-র ময়ূখ। ভালো বাসো না তাই বলে এভাবেই চাচ্ছো আমি চলে যাই! আমি চলে যাব শুনে প্রথমেই তোমার ‘কবে’ মানে কতটা দ্রুত আমি যাই তা জানতে চাচ্ছো?”

“আমি সত্যিই সময় চাই। আমি তোমাকে কখনোই অস্বীকার করব না নোরা। আমার শিক্ষা, আম্মার দেওয়া শিক্ষা মেনেই বড় হয়েছি আমি। ভাইয়ের মত নরম কিংবা আদর্শ ফ্যামিলিম্যান নই কিছুটা উ-গ্র তবুও সম্পর্ককে সম্মান করতে জানি আমি৷ তুমি শুধু সময় দাও আমি ঠিক মানিয়ে নেব।”

“আমাদের রিসেপশনের দিন সন্ধ্যায় ফ্লাইট আমার।”

নোরা আগের চেয়ে জোরে ঠেসে রইলো ময়ূখের বুকে। মন খা-রা-প করে বলল, “আর মাত্র পাঁচ দিন তারপরই আমি চলে যাব আমাকে একটু আদর করে দিবে ময়ূখ।”

আকুল কণ্ঠ বড় কানে বাজে ময়ূখের৷ সে না চাইতেও নোরাকে আদুরে স্পর্শে আপন করে নেয়। জীবন তো একটাই আর তার গন্ডি কতটুকু কারো জানা নেই৷ কি হবে যদি নোরাকে আপন করে নেয়!

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে