কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-০১

0
3670

#কাঠগোলাপের মোহে🌼
#মোনামি শেখ
#part:1

ভাইয়া প্লিজ ছেরে দেন প্লিজ ভাইয়া।আর জিবনেও আপনার রুমে আসবোনা।প্লিজ এই বারটি আমায় মাফ করে দেন।প্লিজজজজজজজজ……..!!!

এত করে বলার পরেও আমার হাতটা ছাড়ছেনা প্রণয়
ভাইয়া।

এদিকে ব্যাথার চোটে চোখ বেয়ে ঝরছে আমার অমূল্য অশ্রু। এই সময়টা যেন বেশ করে উপভোগ করছে প্রণয় ভাইয়া তা বেশ ভালোকরেই বুঝতে পারছি।আমার আর্তনাদ যেন তার মনে পৈশাচিক আনন্দের ঝড় তুলছে অনবরত।

এবার আর সয্য করতে না পেরে দিলাম গগনবিদারী এক চিৎকার। চমকে গিয়ে পেছন থেকে মোচড়ানো হাতটা ছেড়ে দিয়ে সরে গেলেন প্রণয় ভাইয়া। আমি অনেক কষ্টে হাতটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে আনলাম।

হাতটার অবস্থা দেখে আত্মাটা কেঁপে উঠল আমার। ইশ কি হয়েছে হাতটা।অনেক্ষন হাতটা চেপে রাখায় রক্ত জমাট বেধে লাল টকটকে হয়ে গেছে সাথে প্রণয় ভাইয়ার হাতের পাঁচ পাঁচটা আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট। কেমন যেন ব্যাথা করছে বারবার।কেমন যেমনটা যে কি সেটা জানা নেই আমার এই মহূর্তে।

প্রণয় ভাইয়া সোফায় ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে। আমার ঐ রকম চিৎকারে কেউ ছুটে আসেনি এই রুমে।কারণ রুমটা সাউন্ড প্রুভ। এই কথা কিছুমহূর্তের জন্য হয়তো প্রণয় ভাইয়া ভুলে গিয়েছিলো।তাই আমার হাতটা ছেরে দিয়েছে। যাই হোক আজ নিজের অজান্তেই নিজে বেঁচে গেছি এই মানুষ রুপি এলিয়েন টার হাত থেকে।

এসব ভাবতে ভাবতেই প্রণয় ভাইয়ার রুম থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে নিজের রুমে যেতে লাগলাম।

নিজের রুমে গিয়ে একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করতে চেষ্টা করলাম। চোখের পানি নাকের পানি মিশে একাকার হয়ে গেছে।

কোনো মতে বাম হাত দিয়ে চোখ মুখ মুছে নিলাম। তারপর কাবার্ড থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম। ওয়াশরুমে ধুকে দরজাটা লাগিয়ে সামন ঘুরতেই আয়নায় নিজের মুখটা চোখে পড়লো আমার।

আয়নার আরো কাছে এগিয়ে গেলাম আমি। আয়নার কাছে গিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে নিজের মুখটা দেখতে লাগলাম। চোখ গুলো ফুলে লাল লাল হয়ে গেছে।নাকের ডগাটা লালচে আভা ধারণ করছে।সাথে সাথে গাল গুলোও ফুলে উঠেছে। মুখটা কেমন যে পানসে পানসে দেখাচ্ছে!!!

__ ইশ আমার মুখটার কি অবস্থাই নাই করছে। ওই ভিন্ন জগতের এলিয়েন এর ঘরে জিবনও আর ধুকবো না। নিজের ইচ্ছেয়। আল্লাহ তুমি আর ঔ এলিয়েন এর ঘরে আমায় আর নিয়ে যাই ও না প্লিজ। তোমার কাছে এখন এটাই আমার চাওয়া।

আর সব দোশ ওই পুষির। বেচারি ওই যদি দৌড়ে ওই এলিয়েন টার ঘরে গিয়ে ধুকে না পড়তো তো আমিও আর ঐ ঘরে যেতাম না।এত মানুষের ঘর থাকতে পুষির নাকি প্রণয় ভাইয়ার রুমেই যাওয়া চাই।আর ওর সব দোশ এসে পড়ে আমার এই অবলা ঘাড়ে।

এনমিতেই পশু পাখিকে বাড়িতে রাখা পছন্দ করেন না প্রণয় ভাইয়া।অবশ্য নিজেই তো একটা ভিনগ্রহের প্রাণী। তাই অন্য প্রাণীকে সয্য হয়না তার বিশেষ করে আমার পুষিকে। এই আমার পুষির.. তার আবার ওই প্রণয়কেই পছন্দ।ঘুরে ফিরে খালি প্রণয়ের রুমে ধুকে পড়ে শত বাধা দেওয়া শর্তেও!!!

যাই হোক এখন যা হবার হয়ে গেছে। এখন ঝটপট শাওয়ার টা সেড়ে নেই।এনমিতেই আজ বাইরে একটু ঠান্ডা ঠান্ডা আবহওয়া। তাই কোনো প্রকার রিস্ক নিতে চাচ্ছিনা।

শাওয়ার নিয়ে কেবল বাইরে বেড়িয়েছি তখন দরজার ওপাশে দাড়িয়ে আমাকে ডেকে যাচ্ছে খালামনি।

কলি বেগমঃঅয়ত্রি এই অয়ত্রি দরজাটা খোল।এখনো খেতে নিচে আসিস নি কেনো???

আমি– আসছি খালালমনি একটু ওয়েট করো। বলেই ব্যালকানিতে গিয়ে ভেজা তোয়ালেটা মেলে দিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম।

দরজাটা খুলে দিতেই খালামনি আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।

__কি হয়েছে খালামনি এভাবে আমাকে দেখছো কেন?

কলি বেগমঃতুই এত রাতে শাওয়ার নিলি কেনো???

—আসলে শরীরটা কেমন যেন গুলাচ্ছিলো আর মাথাটাও ধরেছিলো তাই শাওয়ার নিলাম।এখন একটু বেটার ফিল করছি।তুমি চিন্তা করিও না।

কলি বেগমঃতা বলে তুই এত রাতে শাওয়ার নিবি??যদি আবার জ্বর-টর বাঁধিয়ে ফেলিস??সামনেই তোর এইচএসসি ফাইনাল পরিক্ষা। এটা তো তোকে মাথায় রাখতে হবে তাইনা????

__সরি মাই ডিয়ার খালামনি।এসব বাদ দাও।আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে।তাই চলো। বলেই খালামনির হাত ধরে নিচে যেতে লাগলাম।

নিচে গিয়ে দেখলাম আমার খালু যাকে আমি ছোটআব্বু বলেই ডাকি।তিনি ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। আমাকে দেখেই মুচকি হাসি দিয়ে আমন্ত্রন জানালেন।
আর তার পাশেই সেই ঘাড়ত্যারা এলিয়েন প্রণয় ভাইয়াটা বসে নিজের মতো খাবার গোন্ডে পিন্ডে গিলছে।মনে হয় সাত জন্মেও এই খাবারের নাগাল পায়নি তিনি হুহ।আমার হাতের বারোটা বাজিয়ে এখন নিজে কি শান্তি করে খাচ্ছে। অথচ আমি এখন ভেবে কুলকিণারা পাচ্ছিনা যে কিভাবে নিজের হাতে খাবো।হাতটা ব্যাথায় মনে হয় পঁচে গেছে এমন মনে হচ্ছে। আর খালামনি ও ছোটআব্বু যদি দেখে আমার হাতের এই অবস্থা তো নিশ্চিত বাড়িতে লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে দিবে। যদিও তারা প্রণয় ভাইয়ার মুখের উপর বেশি কথা বলতে পারবেনা। এসব মন মনেই আলোচনা করলাম।

খালামনি প্লেটে খাবার দিলো আমি করুন চোখে খাবার গুলো দেখে যাচ্ছি।হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।তাই চট করে খালামনিকে বললাম– খালামনি আজ আমার তোমার হাতে খাইয়ে দাওনা প্লিজ।আমার আজ নিজ হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না।

আমার কথায় হেসে ফেললো ছোট বাবা আর খালামনি। আর প্রণয় ভাইয়া একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিজের মতো করে খেতে লাগলো।

এরপর খালামনি আমায় খাইয়ে দিলো।আমি বেশ আয়েশ করেই খেলাম।মনেই নাই যে আমার হাতটার যাচ্ছেতাই অবস্থা।

খাওয়া শেষে পড়ালেখার অজুহাতে সোজা রুমে চলে এলাম।এসেই ড্রায়ার থেকে মুভ মলম টা বের করে নিজের হাতে লাগিয়ে নিলাম। আর মনে মনে ওই মুখ পোড়া এলিয়েনটাকে গালি দিতে লাগলাম।যাই হোক ওই এলিয়েনটারে গালি দিয়ে অন্তত নিজের মনের কিছুটা ক্ষতটা সাড়াতে পারবো।

__হাতে মলমটা লাগানো হলেই সোজা গিয়ে কোম্বল জড়িয়ে শুয়ে পড়লাম।আজ আর রাত জেগে পড়বোনা।

বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করে দেখলাম ১১ টা বাজে।তাই চটপট ফোনটা যথাস্থানে রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।

আর এদিকে প্রণয় ব্যালকানিতে দারিয়ে একটার পর একটা সিগারেট ফুকছে। সিগারেটের বিষাক্ত ধোয়া গুলো মিশে যাচ্ছে হাওয়ায়।

বাইরের দৃশ্যটা আজ অন্যরকম ওই লাগছে তার কাছে। আজ আকাশে কোনো চাঁদ উঠেনি না উঠেছে তাঁরা তবুও চারিপাশ একটু আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। হালকা মৃদু বাতাস এসে ছুয়ে যাচ্ছে প্রণয়ের সিল্কি চুলগুলো।আর তার সাথে জেগে উঠেছে গায়ের প্রত্যেকটা লোমকূপ।

হঠাৎ হঠাৎ গা কাঁপুনি দিয়ে উঠছে প্রণয়ের। কিন্তু এতকিছুর পরেও চোখে ভাসছে অয়ত্রির সেই চোখের পানি গুলো।অজান্তেই সে বারবার অয়ত্রিকে কষ্ট দিয়ে ফেলে এটা সে কেন করে তা সে নিজেই জানেনা।তবে সে অয়ত্রিকে সয্য করতে পারেনা।বিশেষ করে অয়ত্রির ছেলেমানুষী গুলো। অয়ত্রির করা সেই ভুল টা আজও চোখে ভাসে প্রণয়ের।তাই হয়তো সে অয়ত্রিকে দেখতে পারেনা।

এসব ভাবতে ভাবতেই ১টা বেজে যায়।মোবাইলে টাইমটা দেখে নিয়ে ঘুমতে যায় প্রণয়।

সকালে আড়মোড়া ভেঙ্গে হাই তুলতে তুলতে ঘুম থেকে উঠলাম। উঠেই দেয়ালে ঘড়িটির দিকে তাকালাম।সকাল ৭ টা বাজে। নাহ প্রায় ঠিক টাইমেই উঠেছি।যদিও একটু লেটও হয়েছে।তবে সেটা গুরুতর বিষয় নয়।

হঠাৎ মাথার চুল গুলো ঠিক করতে করতে কালকের ঘটনাটা মনে পড়লো।তাই চুল গুলো ঠিক করে নারিয়ে চারিয়ে দেখলাম।নাহ ব্যাথাটা একটু কমেছে।তবে পুরোটা কমে নি।

আর দেরি না করে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।ফ্রেশ হয়ে ব্যালকানিতে গেলাম।ব্যালকানিতে গিয়েই চোখ পড়লো
পুষির উপর। ব্যালকানির কোন ঘেঁষে গুটিশুটি মেরে বসে আছে। আমি গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।
কালকের ঘটনাটার পর ওর কথা মনেই ছিলোনা আমার।

কাল প্রণয় ভাইয়ার ধমক খেয়ে দৌড়ে ঘরে এসে নিজের আস্তানায় ধুকে পড়েছে বেচারি।সকালের আলো ফুটতেই হয়তো এখানে বসে গেছে। আজ আর পুষির সাথে কথা বলবোনা। এটা কাল প্রণয় ভাইয়ার রুমে থাকতেই ঠিক করে নিয়েছি। তাই আজ আর পুষির সাথে কথা বললাম না।

পুষিকে রেখে উঠে দাড়িয়ে আমার প্রিয় কাঠ গোলাপের
গাছের কাছে গেলাম। আজ আরোও ২ টা কাঠগোলাপ ফুটেছে।তা দেখে আমার মনটা আনন্দে নেচে উঠলো।
এই কাঠগোলাপ ওই হলো আমার একমাএ মোহ। কাঠগোলাপ আমার একমাএ বেস্টফ্রেন্ড।আমার সর্বক্ষনের সাথী। আমার নেশাও বটে।

এটা আমার ১৫ তম জম্মদিনে প্রণয় ভাইয়া খালামনির দ্বারা আমায় গিফট করেছিলো। তখন গাছটা অনেক ছোট ছিলো। কিন্তু এখন অনেকটা বড় হয়ে গেছে।

তখন প্রণয় ভাইয়া বিদেশে ছিলো।পড়ালেখার কারণে সে আমেরিকাতে ৫ বছর ছিলো। ২ মাস হয়ছে তিনি দেশে ফিরেছেন।সাথে আমার জম হয়েও ফিরে এসেছেন।

এই দুইমাস একটা দিনও তার জন্য শান্তিতে কাটাতে পারিনি।

👉চলবে👈🌼

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে