ওয়ারদূন আসরার পর্ব-১০

0
1116

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“১০”

———————————
১মাস পুরোপুরি ভাবে পূর্ণ হলো। যীনাত ফজরের নামাজ পড়ছিলো এমন সময়ই মনে চারপাশটা সুগন্ধিতে ভরে যাচ্ছে। যীনাত পরম আবেশে চোখদুটো বন্ধ করে ফেলে। যীনাত “হিস হিস” শব্দ পাচ্ছে তবুও এতোটা আরামে চোখ খুলতে মন চাইলো না। যতোই নিশ্বাসের সাথে ঘ্রাণ টা নিচ্ছে ততোই যেনো মনের মাঝে হাজারো কষ্টের পাহাড় যেনো গলে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে যীনাত স্বাভাবিক হয় এবং চোখ মেলে তাকায়। নামাজ শেষে যীনাতের মন বেশ ফ্রেশ হয়ে গেছে। সে মুচকি হেসে মল্লিকা দেবীকে গিয়ে ডাকলো! যীনাতকে স্বাভাবিক দেখে মল্লিকা দেবী লাফ দিয়ে উঠে বসে এবং যীনাতকে জড়িয়ে ধরে বলে,”মা তুই আবার আগের মতো হয়ে গেছিস? জানিস এখন আমার কতোটা আনন্দ লাগছে। ঠাকুর মুখ তুলে চেয়েছেন।”

যীনাত মুচকি হেসে বলে,”আমি ঠিক আছি আন্টি আর দুঃখিত এতোদিন তোমাদের এভাবে কষ্টে ফেলার জন্য।”

– ওমা ছি ছি এ তুই কি বলছিস? এরকমটা অস্বাভাবিকের কিছু না। তোর পরিবার হারিয়েছে তো কি হয়েছে আমরা তো আছি নাকি? পাগলি মেয়ে একটা এখন চল সকলকে তো জানাতে হবে হুম?

যীনাত উত্তরে মুচকি হাসে। তার ভেতরে কি চলছে সেটা যীনাতই ভালো জানে। যীনাতের মনে যে হাজারো প্রশ্ন! কবে পাবে সে এসবের উত্তর?

যীনাতকে পরম যত্নে খাইয়ে দিচ্ছে মল্লিকা দেবী আর দেবনাথ দেব। যীনাত মুচকি হেসে তাদের সাথে কথা বলছে আর হাসছে। দূর থেকে জাইফ মুগ্ধ নয়নে যীনাতকে দেখছে। আজ যীনাতকে অপরূপ লাগছে সেই মিষ্টি হাসিতে। ইশশ কতোই না অপেক্ষা করছিলো যীনাতের এই হাসিটার জন্য। জাইফের মুখেও তৃপ্তির হাসি। যীনাতের হাসিতেই যেনো নিজের সুখ খুঁজে পাচ্ছে। দিনরাত চিন্তায় ছিলো যীনাতকে নিয়ে এমন কি নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে তার জন্য। আচ্ছা সে কি যীনাতের প্রেমে পড়ে গেলো? আদৌ কি তাই? এটা কি প্রেম নাকি ভালোবাসা? আচ্ছা আদৌ প্রেম আর ভালোবাসা কি এক? নাহ প্রেম আর ভালোবাসা দুটোর মাঝেই যে বিশাল তফাৎ!

এসবই ভেবে চলেছে জাইফ তবুও মনে কোনো এক কোণে কেউ যেনো বলছে,”আমি যীনাতকে ভালোবাসি।”

এমন সময়ই রিকেশ এসে জাইফকে ধাক্কা দিয়ে জাইফের ধ্যান ভাঙায়। জাইফ কিছু অপ্রস্তুত হয়ে বলে,”কিছু বলবি?”

– হুম আনুস্কা যীনাতের কথা শুনে বাড়িতে আসতে চাইছে। এখন কি করি বলতো?

– সমস্যা কি আসুক!

– আরে ভাই সমস্যা সেটা না এখন আনুস্কা যদি আসে সে অবশ্যই ঠাম্মিকে চাইবে তখন কি উত্তর দিবো বলতো? আর ঠাম্মি যদি আনুস্কাকে উলটা পালটা কিছু বলে তাহলে তো সব নদীতে যাবে।

– আহা! এতো টেনশনের কি আছে ঠাম্মিকে আনলে ক্ষতি কি? কিছুই হবে না আমার উপর বিলিভ রাখ।

– তুই কি করবি?

– সবটা আমার উপর ছেড়ে দে যাইহোক শুনো সবাই আজ আমাদের হবু বৌদি এবং কমলা রানী দুইজনই বাসায় আসছে তাদের সেবাযত্নের ত্রুটি রেখো না।

বলেই জাইফ রিকেশকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। রুমে এসে জাইফ কিছু একটা খোঁজা শুরু করে ড্রয়ার খুলে। রিকেশ বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো,”কিরে কি খুজছিস তুই?”

– ভিমরতি ছুটানোর ওষুধ!

– মানে?(অবাক হয়ে)

জাইফ উত্তরে শুধু মুচকি হাসে তারপর একটা প্যাকেট বের করে রিকেশকে ইশারায় কাছে ডাকে। রিকেশ জাইফের সামনে এসে বলে,”কি আছে এতে?”

জাইফ কিছু না বলে সেটা থেকে একটা ইনজেকশন আর মেডিসিন বের করে। ইনজেকশন দেখে রিকেশ অবাক হয়ে বলে,”ভাই তুই বিজন্যাস ছেড়ে কবে থেকে আবার ডাক্তারগিরি শুরু করলি?”

– কারো ভিমরতি ছুটানোর জন্য মাঝে মধ্যে ডাক্তারি ক্ষতি কিসের?

রিকেশ চেহারা দেখে বুঝা গেলো রিকেশ জাইফের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝেনি। জাইফ মুচকি হেসে বলে,”এই ইনজেকশনই পারবে ঠাম্মিকে সোজা করতে। দাদু বলেছিলো যে ঠাম্মি নাকি ছোট থেকে ইনজেকশন অনেক ভয় পায়।”

– সত্যি কাজ হবে তো?

– হুম এখন চল!

– দাদু আমার সাথে গল্প করবে?

– ওমা কেন নয় চল শুরু করি!

বলেই দেবনাথ দেব যীনাতের পাশে এসে বসে আর যীনাত দেবনাথ দেবের কাধে মাথা রেখে জিজ্ঞেস করে,”আচ্ছা দাদু কোনো কিছুতেই ভেঙে পড়া কি ঠিক?”

– একদম না। ভেঙে পড়া মানে তুই জীবনের সাথে লড়ে হেরে গেছিস। জীবনে হাজারো বিপদ বাধা আছে। আর সকলের উচিত সেই বাধা বিপদ বীরত্বের সাথে পার করা। ভেঙে পড়া শুধু ক্ষতি করতে পারে বাচাতে নয়। আর কখনো এভাবে ভেঙে পড়বে না যীনাত। সামনে অনেক পরিক্ষা তোমায় দিতে হবে তবে মনে রেখো সকল পরিস্থিতিতে সবসময় ঠান্ডা মাথায় ভাবা উচিত।

– হুম দাদু!

– কি এইহানে কি করোস তোরা? দেখতে আইসোস আই মরসি না বাচ্চি?

– ওগো কমলা বউ তোমারে ছাড়া ভাল্লাগে না গো তাই আইলাম।(রিকেশ)

– ওই ছ্যামড়া কয়বার কমু তোরে যে আরে বউ কইবিনা! আই কারো বউ না আর তুই তো এহন আরে রাইখাই বিয়া করতে যাস তো যা না হেনে আইসোস ক্যান?

– তুমি-ই তো কও বউ আমি তোমাগো সতান তাই ভাবলাম তোমার লেইগা সতীন আইনা ঘরে উঠাই!!

– ওই চুপ কর!!

– ওগো ঠাম্মি তোমাকে আমি নিতে আসছি তুমি দাভাইয়ের কথা শুইনো না!

জাইফের কথায় কমলা দেবী যেনো ইকো হয়ে গেলো। শাড়ির আচল দিয়ে চোখ মুছলো। রিকেশ জাইফ ভালো ভাবে দেখলো কিন্তু কমলা দেবীর চোখে জল নাই। তবুও দুইজন কিছু বলে না কারণ তারা জানে এই জনমে তাদের কমলা দেবীর চোখের জল দেখতে পারবে না। কমলা দেবী কাঁদআ আর ১০ তলা বিল্ডিং থেকে লাফ দেয়া একই ব্যাপার। কমলা দেবী ন্যাকামি সুরে বলে,”ওগো সোয়ামি গোওওওও!! তুমি সাড়া আরে কেউ ভালোবাসে না আর খবরও লয়না! হুদাই কি তোমারে সোয়ামি কই! ওগো সোয়ামি তুমি….১মিনিট এই রিকু হ্যানে আইয়া ব তো!!”

কমলা দেবীর কথামতো রিকেশ কমলা দেবীর পাশে গিয়ে বসলো।

– কিমুন আছু” এইডার এংরেজি কি রে ক তো! আস্পলে হইসে কি বুড়ী হয়ে গেসিতো তাই ভুইল্লা হজম কইরা লাইসি সব!

জাইফ ফিক করে হেসে দেয় কমলা দেবীর কথায়। যেই কমলা জীবনে ক, খ-ই পড়লো না ভয়ে আবার সে আবার বলে পড়সে। না হেসে থাকা যায়না। দেবনাথ দেব জাইফকে বলেছে কমলা দেবী নাকি সবসময় ১ এর পরে ৭ বলতো আর কখনো পড়াশোনার ধারে কাছেও যেতো না। জাইফের হাসি দেখে কমলা দেবী ক্ষেপা হয়ে বলে, ওই ছ্যাড়া হাসোস ক্যান? তোগো জুগ আর আগো জুগের ভিত্রে তফাৎ আসে যা তুরা বুজবি না। তোরা কি ভাবোস আই লেহাফড়া করিনাই অশিক্ষিত? পারলে মোর পরিক্ষা ল আই তোরে সব কমু!”

– আচ্ছা তাহলে বলো একের(১) পরে কি?

– সাইত(৭)। দেখসোস আই ফারি আর তোরা কস আই অশিক্ষিত!!

এবার রিকেশ জাইফ একসাথে হেসে উঠে!! বুড়ো বয়সেও চাপা মারা স্বভাব কাটেনি! জাইফ বলে,”বুঝলাম তুমি অতি শিক্ষায় গুণবতী এখন দাভাইকে কি বলতে চাও ঝটপট বলে ফেলো!”

কমলা দেবী একটা ভাব নিয়ে বলে,”দেখসোস আমি ফারি আগেই কইসিলাম কিন্তু তোরা আর কথা হুনোস নাই। সে যাইহোক রিকু ক ওইডার মানে কি?”

– হাউ আর ইউ?(how are you)

– আরেকবার ক বুজিনাই।

– হাউ আর ইউ?(how are you)

– আরে সুন্দর কইরা ক বুঝি না তো!!

– আরে বইন হা..উ আ…র ই…উ?

– কানে বাজে বুজিনা!

– হাউ আর ইউ!!

– ধীরে ধীরে ক..!!

– হা……উ আ……….র ই………..উ!

– আরেকটু জোরে ক এমনে আস্তে কইলে কেমনে হুনুম?

– আরে বুড়ী রেএএএএএ!!! আমি কইসি হাউ আর ইউউউউউউ!!!!(বিরক্ত হয়ে চিল্লিয়ে)

কমলা দেবী কানে হাত দিয়ে বলে,”ওমাগো ওই ছ্যাড়া আমি কি বয়ড়া যে এমনে ভাল্লুকের মতো চিল্লাস ধীরে সুস্থে কইলেই তো হুনি নাকি?”

বেচারা রিকেশ অসহায় দৃষ্টিতে জাইফের দিকে তাকায় এবং ইশারা দিয়ে বুঝায়,”এরে কি করা যায়?”

জাইফ হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছে একেবারে। বুড়ী সেইরকম নাকানিচুবানি খাইয়ে রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছে রিকেশকে। এভাবে অনেকক্ষণ বোঝানোর পর কমলা দেবী বুঝেছে। আর এদিকে রিকেশের অবস্থা নাজেহাল!!

– ও আচ্ছা খাড়া কইতাসি।

বলেই কমলা দেবী গলা ঝাড়লো তারপর জাইফের দিকে ফিরে গলা পরিষ্কার করে বলে,”সোয়ামি হাঊয়ার য়ুউউউউউ!”””

———————————-

চলবে!!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে