ওয়ারদূন আসরার পর্ব-০৯

0
1171

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“০৯”

———————————

যীনাত জ্ঞান হারাতেই মাঝের সাপের মাথার চিকচিক করা বড় মনিটা কিছু যাদুমন্ত্রের মাধ্যমে যীনাতের মাথায় মনিটা ঢুকিয়ে দেয় তারপর তাদের জিবহা দিয়ে যীনাতের গালে এবং জাইফের গালে আলিঙ্গন করে সেখান থেকে চলে গেলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই জাইফ নড়েচড়ে উঠে। তারপর পাশে যীনাতের দিকে তাকাতেই দেখে যীনাত সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে। তা দেখে জাইফের মনে অজানা ভয় নাড়া দিলো। তাড়াতাড়ি যীনাতের দিকে ফিরে যীনাতের গাল থাপ্রে যীনাতের জ্ঞান আনার চেষ্টা করে কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না!

– যীনাত, এই যীনাত উঠুন! কি হয়েছে আপনার আপনি জ্ঞান হারালেন কি করে? উফফ শিট! এক মুহূর্তে কি করে সেন্সলেস হলো আর আমি-ই বা টের কেন পেলাম না?? এখন কি করবো?

জাইফ যীনাতকে কোলে করে গাড়িতে নিয়ে আসে এবং নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে যীনাতের সিটবেল্ট লাগিয়ে দেয়। যেই গাড়ি স্টার্ট দিবে এমন সময়ই জাইফের ফোন আসে। জাইফ তড়িঘড়ি করে ফোন রিসিভ করে।

– আরে ওই জাইফ তুই আর যীনাত কোথায় উদয় হয়ে গেলি জানিস কতোটা টেনশনে আছি তার উপর নিজের বডিগার্ড দের আমাদের এখানেই রেখে গেছোস? যীনাত কোথায় আ…

রিকেশ আর কিছু বলার আগেই জাইফ শান্ত কন্ঠে বলে,”দাভাই যীনাত সেন্সলেস হয়ে গেছে আমি এখন ওকে হসপিটাল নিয়ে যাচ্ছি। চাইলে আসতে পারিস!”

বলেই রিকেশকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে জাইফ ফোন কেটে দেয় আর রিকেশ হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছিলো। জাইফ তড়িঘড়ি করে স্পিড কিছুটা বাড়িয়ে শহরের একটা হসপিটালে যীনাতকে নিয়ে চলে আসে এবং সেখানেই যীনাতকে এডমিট করে। রিকেশ জাইফের বডিগার্ড দের দিয়ে জাইফের লোকেশন ট্রেক করে তারাও চলে আসে সাথে আনুস্কাও এসেছে। আনুস্কা জানে যীনাতের সব কথা রিকেশ আগেই বলে দিয়েছে।

জাইফ কেবিনের সামনে পায়চারি করছে আর বারবার কেবিনের কাচের ভেতর দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে ডাক্তার তার কাছে আসছে কিনা। ভেতরে যীনাতের চেকআপ চলছে৷ এমন সময়ই রিকেশ, আনুস্কাসহ বডিগার্ডরাও চলে এসেছে। রিকেশ জাইফের কাছে এসে উত্তেজিত হয়ে বলে,”কি হয়েছে যীনাতের কিভাবে সেন্সলেস হলো?”

– আমিও বুঝতে পারছি না দাভাই কিভাবে কি হলো হঠাৎ করেই সেন্সলেস হলো। এখন ডক্টর চেকআপ করছে ডক্টরই ভালো বলতে পারবে সবটা।

জাইফের কথার মাঝেই ডাক্তার কেবিন থেকে বের হয়ে আসে। জাইফ রিকেশের কাছ থেকে ডাক্তারের কাছে এসে বলে,”ডক্টর কি বুঝতে পারলেন?”

– দেখুন চিন্তার কোনো কারণ নেই। বেশি ভয় পাওয়ার কারণে জ্ঞান হারিয়েছে। কিছুক্ষণের মাঝেই সেন্স ফিরবে।

– থ্যাংকস ডক্টর।

ডক্টর মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো। এতোক্ষণে সবাই যেনো স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো।

– যাক সব ঠিক আছে।(আনুস্কা)

– জ্বী হবু বৌদি।

আনুস্কা হেসে দেয় জাইফের কথায়। জাইফ দরজার গ্লাস দিয়ে যীনাতকে দেখছে। কেমন নিষ্পাপ লাগছে যীনাতকে। পুরো মায়াবী চেহারা পৃথিবীর সব মায়া যেনো যীনাতের চেহারায় এসে ভর করছে। যীনাতের দিকে এভাবে অপলক ভাবে তাকানো দেখে আনুস্কা জাইফকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে,”কি ঠাকুরবো, এভাবে কি দেখছেন? প্রেমে-ট্রেমে পড়লেন নাকি?”

জাইফ নিঃশব্দে হাসলো। রিকেশ আনুস্কার কান ধরে টেনে বলে,”এই তোর সিরিয়াস টাইমেও চুলকানি গেলো না?”

আনুস্কা রিকেশের হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না তাই রেগে বলে,”ওই ছাড়ো আমাকে এভাবে কেউ হবু স্ত্রীর কান ধরে? আহ!! ছাড়ো আমার মান-সম্মান যে সব গেলো!!”

– রাখ তোর মান-সম্মান! ভেবেছি এতোদিনে শুধরে গেছিস কিন্তু একদমই বদলাসনি৷ লোকে ঠিকই বলে, “কুকুরের ল্যাজ কখনো সোজা হয়না যেমনটা তুই!”

– একদম আমাকে তুই-তোকারি করবে না।(রিকেশের হাত থেকে নিজের কান ছাড়িয়ে।) আর আমাকে কুকুরের ল্যাজ বললা এতো সাহস তোমার!! একবার বিয়ে হতে দাও সবকিছুর শোধ শুধে আসলে ঘুষে নিবো।

– ছ্যাহ ঘুষ খাবি ছি ছি ছি! যা সর তোর সাথে আমার বিয়ে ক্যান্সেল করে দিবো।

– এরকম করার দুঃসাহস করলে পিঠের ছাল তুলে দিবো মনে রেখো।

– এই তোরা কি শুরু করেছিস বলতো আর দাভাই! তুই কি বললি,”ভেবেছি আগের থেকে শুধরে গেছিস” এটার কি তোরা একে অপরকে আগে থেকেই চিনিস?(ভ্রু কুচকে)

আনুস্কা জাইফের পিছে লুকিয়ে বলে,”হ্যাঁ গো ঠাকুর প! সেই ভার্সিটি লাইফ থেকে এর পিছে ঘুরসি কখনো পাত্তা পর্যন্ত দেয়নি হুহ!”

– তো বৌদি আপনাকে যে পাত্তা দেয়নি সে আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হলো কেন?(ভ্রু কুচকে)

– আরে ভাই আমি জানতাম নাকি এটাই সেই আনুস্কা! এমন হলে তো আমি কখনোই রাজি হতাম না।

– হইসে আপনার আর এমন চেটাং চেটাং কথা বাদ দেন! রেস্টুরেন্টে তো ঠিকই বলেছেন আমায় বিয়ে করবেন, এই করবেন, সেই করবেন ব্লা ব্লা ব্লা আর এখন আসছেন লোক দেখানো কথা শুনাতে হুহ খচ্চর ছেলে!।

– দেখ আনুস্কা আর একবার যদি মুখ খুলেছিস তাহলে হসপিটালের ডক্টর দিয়ে তোর মুখ সেলাই করে দিবো।

– নিখুচি করেছি আপনার সেলাইয়ের! ঘোড়ার আন্ডা টাই করার মুরোদ আছে আপনার।

এদের দুজনের ঝগড়ায় জাইফ পেটে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে শেষ। কি কিউট তাইনা এমন দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া? আচ্ছা যীনাতের সাথেও যদি এমন ঝগড়া করে? কখনো তো যীনাতকে রাগী ফেসে দেখেনি তাহলে এবার থেকে টুকটাক ঝগড়া করলে কেমন হয়? এগুলোই আনমনে ভাবছিলো আর মুচকি মুচকি হাসছিলো জাইফ।

সেন্স ফিরতেই যীনাতকে নিয়ে জাইফ বাসায় আসে। জ্ঞান ফেরার পর থেকে যীনাত কারো সাথে একটা কথাও বলেনি শুধু এইটুকু বলেছে,”আমি বাড়ি যাবো!” তাই কেউ আর জোর করেনা রিকেশ আনুস্কাকে ড্রপ করতে চলে যায় আর জাইফ যীনাতকে নিয়ে বডিগার্ডস রা চলে আসে। যীনাত কারো সাথে কোনোরকম কথা না বলে নিজের রুমে চলে যায় এবং দরজা লাগিয়ে ফ্লোরে বসে ডুকরে কেঁদে উঠে। জাইফ যীনাতের আচরণ কেন যেনো হজম করতে পারছে না। মল্লিকা দেবী যীনাতকে এভাবে চলে যেতে দেখে জাইফের কাছে এসে বলে,”কিরে কি হলো সকালে তো খুব হাসিখুশি-ই দেখলাম এখন ওর এই অবস্থা কেন?”

– আমি জানিনা মা হঠাৎ-ই এমন করছে!(সেন্সলেস হওয়ার কথাটা জাইফ তার মাকে বললো না।)

– ওমা সেকি বলছিস! আচ্ছা যীনাতের কি তার পরিবারের কথা মনে পড়ছে?

জাইফ এতোক্ষণে ধ্যানে এসে বলে,”হ্যাঁ মা পরিবারের কারণেও এমন হতে পারে।”

– হে ঠাকুর! জাইফ ওকে একা থাকতে দিস না মেয়েটা বড্ড আবেগী কি থেকে কি করে ফেলে বলা যায়না।

মল্লিকার কথায় জাইফের মনে এক অজানা ভয় নাড়া দিলো কিন্তু এখন যীনাতের কাছে যাওয়া টা কি ঠিক হবে? মাঝে মধ্যে টুকটাক একা রাখাও শ্রেয় আর যীনাতকে যতোটুকু চিনেছে তাতে উলটা পালটা কথা যীনাত তো স্বপ্নেও ভাবে না। তবুও কোনো এক জায়গায় এসে জাইফের হিসাব মিলছে না। সে যাইহোক এখন সে নিজেও ক্লান্ত তাই ঞ্জ্জের রুমে চলে গেলো।

এভাবে টানা কয়েকদিন কেটে গেলো। যীনাত কারো সাথেই মিশে না সারাক্ষণ কান্না করে নয়তো পাথরের মতো বসে থাকে। আবার মাঝে মধ্যে “মা, আব্বাজান, ফুয়াদ” বলে চিৎকার দেয় আর ডুকরে কেঁদে উঠে। যীনাত দিনদিন মানসিক ভাবে যেমন ভেঙে পড়ছে তেমনি খাওয়া দাওয়াও ঠিক মতো করছে না। পরিবারের সবাই চিন্তায় পড়ে যায় হঠাৎ মেয়েটার কি হলো যার জন্য এভাবে ভেঙে পড়ছে। এতোদিন তো ঠিকই ছিলো।৷ বেশি চিন্তা হচ্ছে জাইফ আর দেবনাথ দেব এর। দেবনাথ দেব ডাইরেক্ট বলে দিয়েছে প্রতি রাতে যেনো মল্লিকা দেবী যীনাতের পাশে ঘুমান। মল্লিকা দেবীও মেনে নেয় কারণ যীনাতকে সে মেয়ের চোখে দেখে তারও যে যীনাতের এরূপ ব্যবহার সহ্য হয়না। এভাবে প্রায় ১ মাস জেটে যায়।

———————————

চলবে!!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে