এক শহর প্রেম পর্ব-১০

0
1175

#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১০
মারসাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। আঁখিজোড়া তার মলিন। বদ্ধ ছাদের দিকে নজর সরিয়ে মুদন করে নেয় নয়নযুগল। তারপর হতাশ কন্ঠে বলে,

–আমি আপনাকে আপডেট জানাবো ভাই। আই নিড সাম টাইম টু থিংক।

ভিপি আশিক লম্বা নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মারসাদের মুখোমুখি দাঁড়ায় তারপর মারসাদের কাঁধে হাত রেখে বলে,

–টেক ইউর টাইম। সময় এখনও আছে। ভেবে চিন্তে যা ভালো মনে হয় জানাও।

মারসাদ ও আহনাফ বেরিয়ে আসে সেখান থেকে। কিছু দূর এসে ওরা দুইজনে মাঠের ঘাসের উপরে বসে। মারসাদ ঘাসের উপর গা এলিয়ে দিয়ে কপালে হাত ঘষতে ঘষতে বলে,

–মা*থা ব্যাথাতে ছিঁড়ে যাচ্ছে। স্লিপিং পি*ল লাগবে কয়েকটা।

আহনাফ বিরক্ত হলো মারসাদের কথায়। বিরক্তি নিয়ে বলে,
–সবকিছুতে তোর স্লিপিং পি*ল না নিলে হয় না? তুই তো এ*ডিক্টেড হয়ে যাচ্ছিস এটাতে। মাথাব্যথা দূর করার অনেক ইফেক্টিভ উপায় আছে। লো ডোজের পেইনকি*লারও নিতে পারিস।

মারসাদ হতাস কন্ঠে বলে,
–ওই তিক্ত স্মৃতি থেকে মুক্তি পেতে ঘুম জরুরী আমার। দিন রাত পরে পরে ঘুম জরুরী। ইট হার্টস মি ভেরি ব্যাডলি। যতোদিন ওই জানো*য়া-র গুলোকে নিজেদের আসল জায়গা দেখাতে পারবো ততোদিন আমার এই অস্থিরতা নির্মূল হবে না। সবে তো শুরু ওদের ব*র্বাদীর!

আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মারসাদের সবটাই তার জানা। মারসাদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করলেও সে বারবার শিউড়ে উঠে। কিছুক্ষণ বসে থেকে ওরা ক্যান্টিনের উদ্দেশ্য যায়। পরের ক্লাসটা মারসাদ করবে না তবে আহনাফ করবে। মারসাদ কিছু খেয়ে হোস্টেলের দিকে যেতে থাকে। পথিমধ্যে দেখে মাহি, আদিরা সাথে আরও দুটো মেয়ে সাবিহা ও রিন্তি বসে বসে হেসে হেসে লাঞ্চ করছে। মারসাদ আলতো হেসে চলে গেলো। সে খাবারের পরপরই দুইটা স্লিপিং পি*ল খেয়ে নিয়েছে। রিন্তি মারসাদকে যেতে দেখে মাহিকে ডাক দিয়ে বলে,

–দোস্ত তোর ভাই!

মাহি তাকিয়ে দেখে মারসাদ বাঁক ঘুরে চলে গেছে। মাহি বলে,
–দাভাইয়ের তো এখন ক্লাস থাকার কথা। আহনাফ তো তাই বলেছিল। হঠাৎ কি হলো?

সাবিহা মাহির কথাতে পিঞ্চ করে বলে,
–সে যাইহোক কিন্তু আহনাফ ভাইয়ার সাথে না তোর শ*ত্রুতা? তাহলে এতো কিসের যোগাযোগ? তাও নিজের ভাইয়ের তথ্য ভাইয়ের বন্ধুর থেকে! কুছ কুছ তো হ্যায় মেরি জান!

সাবিহার কথায় আদিরা ও রিন্তি হেসে উঠলো। মাহি সাবিহার পিঠে কিছু উত্তম-মাধ্যম দিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলল,

–কী শুরু করেছিস তোরা? সকাল থেকে এসবই করছিস। আমার মনে ওসব কিছু নেই যা তোরা মিন করছিস। ওকে!

আরেকদফা হাসির রোল পড়লো। মাহি এবার মুখ ফুলিয়ে রাগ করে উঠে চলেই গেলো।

_________

–ভাই! ভাই! মারসাদ ভাইরে দেখলাম আশিক ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেছিলো।

সুমন নামের এক ছেলে সাগরকে দৌঁড়ে এসে হড়বড়িয়ে খবর জানালো। সাগর ছেলেটার মুখ নিঃসৃত বুলি শুনে রেগে ছেলেটার গালে কষে এক চ ড় বসিয়ে দিয়ে বলল,

–তুই এই খবর আমাকে এখন দিচ্ছিস!

সাগর ছেলেটাকে কিছুক্ষণ অশ্রাব্য গালাগাল করে। ছেলেটা গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে সবটা সহ্য করে নিলো। সাগর ছেলেটিকে আবার বলল,

–কী বিষয়ে কথা হয়েছে কিছু জানতে পেরেছিস?

সুমন ছেলেটা ঐ অবস্থায়ই ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়িয়ে না জানায়। সাগর রেগে আরেকটা চ ড় বসিয়ে দিয়ে রেগে বলল,

–অর্ধেক খবর নিয়ে আসিস কেনো অকর্মা গুলো? আমার সামনে থেকে দূর হ। নয়তো তোর রক্ষে নেই।

ছেলেটা তৎক্ষণাৎ দৌঁড়ে স্থান ত্যাগ করে। সাগর রাগে সামনের বেঞ্চ ধা*ক্কা দিয়ে ফেলে দেয় তারপর রাগে কটমট করে বলে,

–মারসাদ! মারসাদ! মারসাদ! এই ছেলেটা আমার পথের কাঁ*টা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সেচ্ছায় ভিপি নির্বাচন থেকে সরে গিয়েও এর বেষ্টফ্রেন্ডকে রেখে গেছে। একে পুরোপুরি ক্ষমতাহীন করতেই হবে। আমার সকল কর্মকান্ডে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় সে। কিছু একটা করতেই হবে। নিলয় এদিয়ে আয়।

নিলয় এগিয়ে আসলে সাগর বলে,
–তোর কাজ কতটুকু? পরিকল্পনা মোতাবেক চলছে তো?

নিলয় শ*য়*তানি হেসে বলে,
–নো টেনশন দোস্ত। পাখি খাঁচার ভিতরে অলরেডি ঢুকে গেছে। এখন পাখিকে আরও দুর্বল করতে হবে। এতোটাই দুর্বল যে পাখি আমার ইশারায় সব করতে রাজি হয়ে যায়। আমি এখন তার কাছে খুব ভালো একজন মানুষ। তোর বন্ধু হয়েও যে আমি এতো ভালো তা তাকে বিশ্বাস দিতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয় নি বস!

সাগর বিশ্রি হাসলো। তারপর বিশ্রি ভাবে বলল,
–তা সাধুপুরুষ কী পাখির রূপের সুধা পান করবে না?

নিলয় কুৎসিত হেসে বলে,
–আরেকটু সবুর করতে হবে যে। নিলয় নিজের ইম্প্রেশন নষ্ট করবে না এখনই।

আরেকটা ছেলে এসে সাগরদের বলল,
–ভাই, সামিরা আপু আসছে।

সাগর সামিরাকে ভেতরে আসতে দিতে বললে সামিরা ভেতরে এসেই সাগরের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে,

–তুমি না বলেছিলে আদিরার ব্যাবস্থা করবে? কী হলো সেটার? সে এখনও ফিট এন্ড ফাইন! হোয়াই?

সাগর সামিরার চারপাশে ঘুরে সামিরার কাঁধ জরিয়ে বলে,
–কুল সামিরা বেবি। ওই মেয়েকে আপাততো বাদ দেও। ওই পুচকে মেয়েকে যেকোনো সময় ধরাশায়ী করা যাবে। তুমি এটা বলো, মারসাদের কারও সাথে তুখড় শ*ত্রুতা আছে?

সামিরা সাগরের হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিয়ে কপাল কুঁচকে সন্দিহান কন্ঠে বলে,

–তা জেনে তোমার কী কাজ?

সাগর বাঁকা হেসে বলে,
–আমরই তো কাজ। মারসাদকে দুর্বল করতে পারলে তোমারও লাভ। তুমি ইজিলি তোমার পথের কাঁটা উপড়ে ফেলতে পারবে। মারসাদ তখন কোনো বাঁধা দিতে পারবে না।

সামিরা ভাবলো। মারসাদকে তার পদতলে দেখতে তারও ভালো লাগবে। কথায় কথায় অপমানে জর্জরিত করা থামবে তখন মারসাদ নিজে এসে তার কাছে ধরা দিবে। সামিরা বাঁকা হেসে বলে,

–মারসাদদের সবচেয়ে বড়ো শত্রু এমপি রুহুল শিকদার ও তার দুঃসম্পর্কের ভাতিজা রাদিব। রাদিব হচ্ছে মারসাদের বড়ো বোনের হাজবেন্ড। রাদিবের ট*র্চারের কারণে মারসাদের বড়োবোন আজ পৃথিবীতে নেই। মারসাদ রাদিব ও রুহুল আমিনকে সহ্য করতে পারে না। তবে রাদিব গা ঢাকা দিয়ে আছে কোনো একটা দেশে। কেউ বলে ইন্ডিয়াতে আছে রাদিব। মারসাদ রাদিবকে পেলে আর ছাড়বে বলে মনে হয় না। রাদিবের নামে থানায় মা*র্ডা*র কেসের মা*মলা চলছে।

সাগর সামিরা হাতে চু*মু দেয়। সামিরা সাগরের কাজে রেগে সাগরকে ধা*ক্কা দিয়ে নিজের সামনে থেকে সরায় তারপর বলে,

–আমাকে বাজে টাচ করার চেষ্টাও করবে না। আই এম নট ইউর টয়!

সামিরা সেখান থেকে চলে গেলে সাগর অট্টহাসিতে ফেটে পরে।
–ইউ আর জাস্ট এ টয় সামিরা বেবি। আমার হাতের পুতুল তুমি। নিজের অজান্তেই তুমি আমার কথায় সব করো।

সাগরের সাথের সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠে।

________
কয়েকদিন পর,,

আদিরা ক্লাসে একা বসে বসে পড়ছে। আজ একটা ক্লাস টেস্ট আছে। খাতায় যা লেখা সেগুলো পড়ছে। পুরো ক্লাসে কেউ নেই। পড়তে পড়তে সামনের দিকে নজর গেলে দেখে টিচারের লেকচার টেবিলে মারসাদ কনুইতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে ঝুলছে বাঁকা হাসি আর চোখে রম্যতার ছাঁপ। আদিরা একটু অবাক হলো। আশেপাশে নজর বুলিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না। মারসাদ রম্য স্বরে বলে,

–কী খুঁজছো মনোহারিণী!

আদিরা মারসাদের সম্বোধনে চমকে গেলো। মারসাদ আদিরার দিকে এগিয়ে এলো। তারপর আদিরার দিকে ঝুঁকে বলল,

–অবাক হচ্ছো? হতে পারো। তোমার তো স্বভাব এটা। আমি কিছু পরীক্ষা করতে এসেছি এখানে।

আদিরা মারসাদের ঝুঁকে আসা দেখেই তৎক্ষণাৎ পেছোনে মাথা সরিয়ে নিয়েছিল। মারসাদের দিকে জিজ্ঞাসু নয়নে চাইলো। মারসাদ প্রতিউত্তরে চমৎকার হেসে বলল,

–সবাই আমার মন পড়তে পারে জানো? সবাই বলে আমি তোমাতে মন হারিয়েছি। আদৌতেও কী তা সত্যি? সেটাই পরীক্ষা করতে এসেছি। আমি যদি সত্যি তোমাতে মন হারিয়ে বসি তবে আমার হারানো মন সুদে-আসলে ফেরত চাই। বুঝতে পেরেছো? তখন কার্পণ্য করলে কিন্তু চলবে না! মারসাদ ইশরাকের মন নিজের কাছে রাখার দায়ে তোমাকে হা*জতেও যেতে হতে পারে মেয়ে!

আদিরা হতবাক হয়ে বোকার মতো মারসাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তার মুখাবয়বের অভিব্যক্তি দেখে যে কেউ বলতে পারবে, মারসাদের বলা প্রতিটা শব্দ ও বাক্য তার মস্তিষ্কের উপর দিয়ে গেছে। তার যে কিছুই বোধগম্য হয় নি তা তার মুখশ্রীতে স্পষ্ট। মারসাদ আদিরার থুতনিতে হাত দিয়ে ঠেলে মুখের অল্পবিস্তর ফাঁকা জায়গা বন্ধ করে দিলো। আদিরা আরও দূরে সরে যায়। মারসাদ হেসে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,

–ক্লাসের পর মিনারের কাছে চলে আসবে। একটুও যেনো দেড়ি না হয়। নয়তো তুলে নিয়ে আসবো। তুমি আমাকে যতোটুকু চিনো তাতে আমার কাজ সম্পর্কে তোমার ধারণা থাকার কথা।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে