এক শহর প্রেম পর্ব-০৮

0
1173

#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৮
–এই মেয়ে দাঁড়াও। তোমার সাথে কথা আছে।
মারসাদের সিরিয়াস কন্ঠস্বরে আদিরা ভয় পেয়ে গেলো। এই মাত্র সে জবা ফুল গাছ থেকে একটা ফুল ছিঁড়েছে। এখন এটার জন্য কী ব*কা শুনতে হবে? আদিরা ভয়ে ভয়ে পেছোন ফিরলো। মেকি হাসতে চাইলো। মারসাদ আদিরাকে মেকি হাসতে দেখে ভ্রুঁ কুঁচকালো অতঃপর সামনে এসে সন্দিহান কন্ঠে বলল,

–কী হয়েছে? তুমি কী আবারও ভয় পেয়েছো কোনো কারণে?

আদিরা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। আমতা আমতা করে কিছু বলতে চাইল। তার আগেই তার মনের অজান্তেই তার ফুল নিয়ে রাখা হাতটা পেছোনে লুকালো। মারসাদ সেদিকটা ঠিকই লক্ষ্য করলো আর নিরব হেসে বলল,

–ফুল ছিঁড়া নিষেধ তবে আমি তোমাকে ব*কবো না। জবা গাছটাতে ভরপুর ফুল। আর কিছুক্ষণ পর এগুলো মুষড়ে যাবে। এর থেকে যদি কারও হাতের শোভাবর্ধন করে তবে ক্ষতি কী?

আদিরা যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। মারসাদ এবার সিরিয়াস কন্ঠে বলে,
–শোনো তুমি টিউশন খুঁজছিলে না? আমার স্টুডেন্টের সাত বছর বয়সি চাচাতো ভাইকে পড়াতে পারবে? ক্লাস টু তে পড়ে সে। ওর কোনো টিচার টিকে না। প্রচুর দুরন্ত বাচ্চা।

আদিরার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক খেলে গেলো। মাস শেষ হতে আর আট দিনের মতো আছে। তার স্টুডেন্টের মা এখনও নতুন টিউশন খুঁজে দিতে পারে নি আর সে নিজেও পায় নি। মারসাদ আবারও বলল,

–তোমাকে কিন্তু আজ থেকেই পড়াতে হবে। আর সে বলেছে তুমি যদি এই মাসে বাকিদিন গুলো প্রতিদিন যাও তবে তোমাকে অর্ধেক পেমেন্ট করবে। রাজী তুমি?

আদিরা রাজী হয়ে যায়। খারাপ কী? তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলেই হয় তো টিউশন গুলো পেয়ে যাচ্ছে। মারসাদ বলে,

–তাহলে সন্ধ্যার পর তোমাকে আমি রিসিভ করতে আসবো। তোমার মেসে বলে রাখবে।

আদিরার চোখ মুখে বিমর্ষতা ফুটে উঠলো। আদিরা বলল,
–সন্ধ্যার পর? সকালে হলে হয় না?

মারসাদ লম্বাশ্বাস ফেলে বলে,
–না। বাচ্চাটা সকালে একটু বেশি সময় ঘুমোয়। আর দুষ্ট বাচ্চা তো। রাতেই পড়বে। চিন্তা করো না। পরের মাসে তিনদিন রাতে পড়াবে আর শুক্রবার দিনে পড়িও। রাতে যেদিন পড়াবে সেদিন আমার সাথে দিন মিলিয়ে নিও যাতে যাতায়াত প্রবলেম না হয়। এই সাত-আট দিনই সমস্যা হবে তোমার।

আদিরা মিনমিন স্বরে বলল,
–আপনার সাথেই তো যেতে চাই না!

মারসাদ শুনলো। তাও ভ্রুঁ উুঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
–কিছু বললে?

আদিরা মেকি হাসি দিয়ে বলে,
–না। না। কিছু না। আসি ভাইয়া।

আদিরা মুখে না বললেও মনে মনে আদিরা ভাবে,
“পরের মাস থেকে দেখি বলে কয়ে দিনের বেলা আনতে পারি কি-না। উনার সাথে এই সাতদিনই বা কিভাবে যাবো! নেহাত জরুরী আমার।”

……..

আদিরা চলে যাবার পর আহনাফ একটা গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে। আহনাফ এসে পাশে দাঁড়িয়ে মারসাদের কাঁধে কনুই রেখে বলে,

–কী চলছে?

মারসাদ বাঁকা হেসে বলে,
–ফগ চলছে!

আহনাফ উচ্চস্বরে হেসে মারসাদকে ঘু*সি দিয়ে বলে,
–শা*লা! তুই আদিরার জন্য টিউশনও খুঁজছিস আবার কেয়ারনেসও দেখাচ্ছিস! তাও বলবি জাস্ট সরল মুখ দেখে এমনিই মায়া লেগেছে? হাহ্!

মারসাদ ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
–অযথা বেশি বোঝার স্বভাব তোর। ওর দরকার ছিল আর রাতের বেলা মেয়েটার সেফটিও দরকার।

আহনাফ বাঁকা হেসে বলে,
–তাহলে কয়েকমাস আগে সামিরাকে কেনো রাত নয়টার দিকে বাড়িতে পৌঁছে দিলি না বা একটু এগিয়েও দিলি না? আমি তোর বেষ্টফ্রেন্ড বন্ধু! তোরে চিনি এক দুই বছর হলো না কিন্তু! তোর সবকিছু আমার সাথে শেয়ার করতি। সেই স্কুল থেকে। তাই আমার সামনে লুকাতে গিয়ে বারবার ধরা খেয়ে যাস।

মারসাদ বাঁকা চোখে তাকালো। তারপর আহনাফের হাত কাঁধ থেকে সরিয়ে স্থান ত্যাগ করলো। আহনাফ হাসলো আর নিজে নিজেই বলল,

–তোকে স্বিকার করতেই হবে। ইউ আর ইন ফার্স্ট স্টেজ অফ লাভ।
_________

আদিরা টিউশন করিয়ে সন্ধ্যার আগে মেসে ফিরলো। ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে বিছানার সাথে গা এলিয়ে দিয়ে কয়েক মিনিট গড়ানোর পরপরই ফোনটা চিৎকার করে বেজে উঠলো। আদিরা ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আননওন নাম্বার তাই কে টে দিলো। কিছুক্ষণ পর আবারও বেজে উঠলো। আদিরা এবারও রিসিভ করলো না। মোট চারবার ফোন আসার পর পঞ্চমবারে টেক্সট আসলো,

“ফোন রিসিভ করছো না কেনো? এখনি রিসিভ করবে।
_____মারসাদ”

আদিরা বেকুব বনে গেলো। লোকটা তার ফোন নাম্বার কোথায় পেলো? এই প্রশ্নই তার মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে। আবার ফোন বেজে উঠলে আদিরা রিসিভ করে কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে রাগী কন্ঠে মারসাদ বলে উঠলো,

–জলদি নিচে আসে। টিউশনের সময় হয়ে আসছে মনে আছে? দশ মিনিটের মধ্যে নিচে আসবে। কাম ফার্স্ট।

আদিরাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কে*টেও দিলো। আদিরা ঠোঁট উল্টে বসে রইল কিছুক্ষণ। তারপর মেসেজ টোনের আওয়াজে মেসেজটা ওপেন করে দেখে সেখানে লেখা,

“বড্ড ঘাড়*ত্যা*ড়া তুমি। মুখ দিয়ে বুলি না ফুটলেও ত্যা*ড়ামি লেভেল ভালোই। এতো না ভেবে জলদি নিচে আসো। তোমার জন্য সারারাত বসে থাকতো পারবো না। জলদি আসো।”

আদিরা মুখ কালো করে উঠে গেলো। তৈরি হয়ে নিচে নামলো। মারসাদ রিকশাতে বসে আছে। আদিরার জন্য পেছোনে আরেকটা রিকশা। স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে উঠে বসলো। গন্তব্য পৌঁছানোর পর রিকশাওয়ালারা ওদের নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো পারিশ্রমিক না নিয়ে। আদিরা অবাক হয়ে বলল,

–ভাড়া নিলো না তো আমার থেকে।

মারসাদ সামনে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
–তোমার তো আমার সাথে বসতে সমস্যা তাই ডাবল রিকশা নিয়েছি। এখন তাও তোমার সমস্যা? আজব তুমি!

আদিরা বোকার মতো তাকিয়ে থেকে হুঁশ হবার পর মারসাদের পেছোনে যেতে থাকে। স্টুডেন্টের বাসায় গিয়ে স্টুডেন্টকে দেখেই আদিরা বুঝে গেছে প্রচণ্ড ধৈর্যশীল না হলে একে পড়ানো সম্ভব না। স্টুডেন্টের মা ছেলের চঞ্চলতা আদিরাকে বলে তারপর গেলো। স্টুডেন্ট আদিরাকে প্রশ্নর উপর প্রশ্ন করে যাচ্ছে। যেমনঃ নাম কী? কোন ক্লাসে পড়ে? কোথায় থাকে? কোন সাবজেক্টে পড়ে? মেসে কেনো থাকে? গ্রামের বাড়ি কোথায়? ভাই-বোন কতজন? নাস্তাতে কী খেয়েছে? বন্ধু-বান্ধব কতজন? ইত্যাদি।

আদিরা হাঁপিয়ে উঠেছে উত্তর দিতে দিতে। স্টুডেন্টের মা একবার এসে ধ মক দিয়ে গেছে তার ছেলেকে কিন্তু ছেলে আবার কিছুক্ষণ পড়ার পর প্রশ্ন করা শুরু করেছে। আবার নিজে সারাদিন কী করলো না করলো সবটা বলে। পড়ানোর শেষে স্টুডেন্টের মাকে আদিরা দিনে পড়ানোর কথাটা জানায়। স্টুডেন্টের মা পরের মাস থেকে কোনোমতে শুক্রবার ও শনিবার দিনে পড়ানোর কথা বলেছে কিন্তু বাকি দুইদিন রাতেই।
______

মাহি খুব মনোযোগ দিয়ে নিরিবিলিতে কিছু আঁকছে। আশেপাশে কারও উপস্থিতি তার স্মরণে আসছে না। আদিরা মাহির পেছোনে দাঁড়িয়ে চিত্রটা খুব ভালো করে লক্ষ্য করে বলে,

–চেনা চেনা লাগছে চিত্রর মানুষটাকে।

মাহি চমকে পেছোনে তাকিয়ে আদিরাকে দেখে হাসে। তারপর মাহি বলে,

–সেদিনও এটাই আঁকছিলাম কিন্তু ছুটির পর পুরো চিত্রটা বিগড়ে গেছিলো। তাই আজ একসাথে একটু সময় নিয়ে আঁকছি।

আদিরা উৎসুক হয়ে বলল,
–আমি চিত্রর মানুষটাকে দেখেছি মনে হচ্ছে।

মাহি মুচকি হেসে বলল,
–হ্যাঁ। এটা দাভাইয়ের বন্ধু আহনাফ!

আদিরা এবার চিনতে পারে পুরোপুরি। তারপর মাহিকে প্রশ্ন করে,
–তুমি তাকে ভাইয়া বলো না? নাম ধরে বলো যে?

মাহি মুখ লটকে বলল,
–সে আমার চিরশ*ত্রু! আমাকে না জ্বালালে তার পেটের ভাত হ*জম হয় না। আমাকে পিঞ্চ করা এর অন্যতম প্রিয় কাজ। তাই একে আমি ভাই-টাই বলে সম্মান দিতে পারবো না। পারলে তো তুই করে বলতাম! কিন্তু দাভাইয়ের বন্ধু বলে আপনি-তুমি দুইয়ের সংমিশ্রণে বলি। তাছাড়া উনার কোনো প্রবলেম নেই উনাকে ভাই না বলাতে। কখনও কথার মাঝে বাধ সাধে নি ভাই না বলাতে।

আদিরা মুচকি হাসলো অতঃপর রম্য স্বরে বলল,
–তা এজন্যই কী চিরশ*ত্রুকে রঙ-তুলিতে ফুটিয়ে তুলছো? কী দারুন শ*ত্রুতা তোমাদের!

মাহি ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো আদিরার দিকে। আদিরার চোখে-মুখে রম্যতার ছাঁপ দেখে বলল,

–তুই কী আমাকে পিঞ্চ করছিস?

আদিরা ঠোঁট চেপে হাসি আটকিয়ে মাথা নাড়িয়ে না বোধক ইশারা করে। মাহি আদিরাকে একবার পরখ করে আবার চিত্রতে তুলি দিয়ে ঠিক করা শুরু করলো। পেছোনে দাঁড়িয়ে আদিরা মুখ টিপে নিঃশব্দে হাসছে। মাহি হুট করে পেছোন মুড়লো। আদিরাকে হাসতে দেখে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

–তুই হাসছিস কেনো?

আদিরা এবার হাসি আটকাতে না পেরে জোরেই হেসে দিলো। অনেকদিন পর সে প্রাণখোলা হাসছে। মাহি না বুঝে তাকিয়ে আছে। অদূরে কেউ আদিরার হাসির ছবি তুলে নিলো। তারপর নিজে নিজেই বলল,

“যার হাসি মুগ্ধতা ছড়ায়। তাকে আমি কিভাবে হারাই!”

…….

মারসাদ ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে আহনাফকে নিয়ে ভিপি আশিক ভাইয়ের কাছে যাচ্ছে। আশিক ভাই মারসাদের কাছ থেকে জানতে চান কেনো মারসাদ ভিপির পদে দাঁড়িয়েও সরে যেতে চায়। আসলে সাগর সবার কাছে ব্যাপারটা বলে বেড়াচ্ছে যার দরুন গুঞ্জন উঠেছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে