একমুঠো বসন্ত পর্ব-০৫

0
562

#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_৫

সাফাত বেরিয়ে যাওয়ার সময় মিলি তার নিজের মতো করে মোবাইল চালাচ্ছিল। একবার ফিরেও তাকালো না। মিলির এমন ভাব দেখে সাফাতও আর আদিক্ষেতা করে ডাকলো না। সে কাপড় ব্যাগ নিয়ে নিজের মতো করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

মিলি সাফাতের এমন অবজ্ঞা আচরণ দেখে রেগে গেল। সে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে খাটের মাঝে মোবাইলটা ছুড়ে মারলো। সাফাত তাকে একবারও বললো না! সে ভেবেছিল যাওয়ার শেষ সময়ে মিলির এমন ব্যাবহার পেয়ে সাফাত অনুশোচনায় ভুগে তার কাছে এসে মাফ চাইবে। মিলি যা বলবে সাফাত তা করবে তবুও মিলি যেন ক্ষমা করে দেয় সেটাই বলবে। তারপর মিলি ক্ষমার পরিবর্তে শর্ত দিবে যে এই কাজে যেভাবেই হোক মিলিকে যেন নিয়ে যায়। তারপর সাফাত আমান শেখের কাছে গিয়ে বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে অনেক জোরাজোরি করে মিলিকে সহ নিয়ে যাবে। কিন্তু কিছুই হলো না! সাফাত উল্টো তার রাগও ভাঙানোর চেষ্টা করলো না? মিলির এখন নিজেকে নিজেরই বোকা মনে হচ্ছে। কেন সকালে রাগের মাথায় ঐসব বলে দিতে গেল! সকালে যদি ঐভাবে এসব না বলতো তাহলে এখন পরিস্থিতিটা এমন হতো না। মিলির এখন কান্না পাচ্ছে। সে এখানে একা কীভাবে থাকবে!

সাফাত বাবা মায়ের রুমে গিয়ে বাবাকে বলে বেরিয়ে পড়লো। নিহিলা ব্যালকনিতেই দাঁড়িয়ে ছিল।

সাফাত নিচে গাড়ির পেছনে ব্যাগ ঢোকাতে এসে উপরে চোখ যেতেই দেখলো নিহিলা তাকিয়ে আছে। নিহিলা মূলত সাফাত বেরোবে সেই ভাবনা ভেবেই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েছিল। কিসের টানে দাঁড়িয়েছিল সে জানে না কিন্তু তার মনে হলো একটিবার গিয়ে দেখি মানুষটাকে। এই মানুষটা আবার যখন ফিরবে তখন হয়ত নিহিলা বহুদূরে চলে যাবে। আর দেখা হবে না। আজকেই সাফাত ভাইয়ের স্মৃতির সাথে এটাই ওর শেষ দেখা। প্রতিবার সাফাত ভাই যখনোই বাইরে এভাবে ব্যাবসার জন্য যেত ততোবারই নিহিলা মেইন দরজা অব্দি এগিয়ে দিয়ে দৌড়ে রুমে এসে এভাবেই ব্যালকনি দিয়ে বিদায় জানাতো। আজও তার ইচ্ছে হলো কিন্তু সব ইচ্ছে কী আর পূরণ হয়!

সাফাত নিহিলার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করলো। অথচ এখন তার স্ত্রীর এভাবে তাকে বিদায় দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু সে করলো না তা। অথচ সাফাত যাকে অবজ্ঞা করেছে সেইই দাঁড়িয়েছে! সাফাতের অন্যবারের কথাগুলো মনে পড়ে গেল। প্রতিবার এভাবেই নিহিলা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে হাসি মুখ করে বলতো,

“নিজের খেয়াল রাখবেন সাফাত ভাই। আমার জন্য আসার সময় কিছু নিয়ে আসবেন। খালি হাতে ঢুকতে দিবো না। এতদিন অপেক্ষার ফল হিসেবে নিশ্চই কোনো উপহার আনবেন। খাবার ঠিকমতো খাবেন।”

সাফাত হাসলো। এখন এসব অতীত। মেয়েটা আর এভাবে কোনোদিন বলবে না। কেন নিজের দোষে এমন রত্নকে সে হারিয়ে ফেলল! অথচ এই বিয়ে দিয়েই তার চেয়ে মুক্তি পেতে চেয়েছিল সাফাত তবে বিয়ে করেও কেন শান্তি পাচ্ছে না! কেন মেয়েটার মায়া ভুলতে পারছে না সে! সাফাত নিজের ভাবনা দেখেই তাচ্ছিল্য হাসলো। সে ভাবনা থেকে বেরিয়ে উপরে আবারো তাকাতেই দেখলো নিহিলা নেই। সে রুমের ভেতরে চলে গিয়েছে। সাফাতের খারাপ লাগলো। এই প্রথম মেয়েটি এতো চুপ ছিল। এমনভাবে তো নিহিলাকে মানায় না। মন থেকে একটা চিৎকার ভেসে এলো যেন সাফাতকে বলছে, “এসবকিছুর জন্য তুই নিজেই দায়ী সাফাত। একটা হাসিখুশি চঞ্চল মেয়েকে কেমন নির্জীব বানিয়ে দিয়েছিস এর ফল উপরওয়ালা তোরে দিবে।” কথাটা ভাবনাতে আসতেই তার নিজেকে নিজে আফসোসে ঘিরে ধরলো। নিজের প্রতি ঘৃণা জন্মাতে শুরু করলো। এতটা খারাপ কীভাবে হলো সে!
সাফাত গাড়ি ছেড়ে দিতেই নিহিলা রুম থেকে বেরিয়ে এলো। সাফাতের গাড়িটা যতক্ষণ মিলিয়ে যায়নি ততক্ষন তাকিয়ে রইল। আগের বারের কথাটা বারবার মনে পড়ছে। কেন এমন হলো! কেন এমন লাগছে তার!জীবনের একটা পর্যায়ে এসে ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায় কারোর উপর অতিরিক্ত আশা রাখা উচিত না। যে মানুষটা যতবেশি আশা রাখে সে মানুষটা ততবেশি কষ্ট পায়। বেশিরভাগ মানুষ সব থেকে বেশি আশাহত হয় তার প্ৰিয় মানুষটার কাছ থেকে কারণ সবাই প্ৰিয় মানুষটার উপরই বেশি আশা রাখে। মনে মনে তারা যা ভেবে রাখে তার বিপরীতটাই পেয়ে থাকে এতে কষ্টও বেশি পায়। প্রিয় মানুষটার উপর আশা রাখা দোষের কিছু না। আশা রাখা স্বাভাবিক কিন্তু অতিরিক্ত আশা রাখা দোষের। যেমনটা নিহিলার বেলায় হয়েছে। সে সাফাতের উপর অতিরিক্ত আশা রেখে ফেলেছিল যার ফলে বিপরীতটাই হয়ে কষ্ট পাচ্ছে।

————–
সূর্যের তীক্ষ্ণ রশ্মী চোখে পড়তে নিহিলা চোখমুখ কুঁচকে নিল। বিরক্তিতে ‘চ’-ক্রান্ত শব্দ করে কপাল কুঁচকে তাকাতেই দেখল কেউ একজন জানালার পর্দা সরিয়ে দিয়েছে। নিহিলা রিহি ভেবে বিরক্তিসূচক চেহারা করে ফেলল।

“রিহির বাচ্চা, পর্দা লাগা।”বলেই সে পাশ ফিরে লেপ টেনে আবারো চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।

“ঘুম আসবে না জেনেও আবার ঘুমানোর ভান ধরছিস কেন?”

মায়ের কথা শুনে নিহিলা চোখ মুখ কিচে উঠে বসলো। সে এতক্ষন ভেবেছিল, রিহি তার সাথে মজা করছে তাই রেগে কথাটা বলেছিল।

“তাহলে ভাঙালে কেন মা?”

রেহেনা বেগম মেয়ের কথা শুনে মেয়ের কাছে এগিয়ে কপালে হাত ছুঁলো।

“কী হয়েছে মা?”

“সেটা তো তুইই বলতে পারবি। তুই তো এতো বেলা অব্দি কোনোদিন উঠিসনি!”

“এখনো কিসের বেলা?” বলতে বলতেই নিহিলা ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই নিজেও বোকা বনে গেল।

“এতো বেলা অব্দি ঘুমালাম!”

রেহেনা বেগম মেয়ের কাছে এগিয়ে এলেন।

“রাতে ঘুমাসনি তাই না?”

নিহিলা মায়ের কথায় তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে নেমে কাপড় নেয়ার জন্য ছুটলো।

“কী যে বলো না মা! রাতে ঘুমাবো না কেন?”

রেহেনা বেগম মেয়েকে আর ঘাটলেন না। তিনি জানেন মেয়ে তার কথা ঘুরাচ্ছে কিন্তু এই কথাটা লম্বা করতে তারও ইচ্ছে হলো না তাই আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। তার মাঝে মাঝে খারাপ লাগে, বুকটা খালি খালি লাগে নিহিলার জন্য। তার কী মেয়ে কী হয়ে গিয়েছে সেটা ভেবেই খারাপ লাগাটা কাজ করে। তার মেয়ের দিকে ধ্যান দেওয়া উচিত ছিল। নিজেকে ব্যর্থ মা হিসেবে মনে হচ্ছে। আফসোসবোধে ঘিরে ধরেছে । আগে যদি মেয়ের খবরাখবর নিতো তবে আজ পরিস্থিতিটা এতো বাজে হতো না।

#চলবে ইন শা আল্লাহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে