একদিন তুমিও ভালোবাসবে পর্ব-২৫+২৬+২৭

0
1716

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~২৫||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

আমি আমার নাম্বারটা রাজদাকে দিয়ে দিলে রাজদা ছুটে বেরিয়ে যায় ভার্সিটি থেকে। এদিকে আমার তো আগের ঘটনার কথা ভেবে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আমি একা দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় আমার কাঁধে হাতের স্পর্শ পেলাম….

‘কোয়েল তুই? পেয়েছিস ওনাকে?’

‘আদিত্যদার খবর রাজই দিতে পারবে মৌ। সঠিক লোকই দায়িত্ব নিয়েছে।’

আমি কোয়েলের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত সুরে বললাম,

‘আমার কেন জানি না ভীষণ ভয় করছে জানিস তো? মনে হচ্ছে…মনে হচ্ছে কিছু একটা বাজে হতে চলেছে।’

‘আমারও তাই মনে হচ্ছে মৌ। তুই আজকে সবার সামনে রণিতকে চড় মেরে ঠিক করিসনি। এতে তুই নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনলি। তোকে তো বলেছিলাম ও একজন পলিটিশিয়ানের ছেলে যা কিছু করতে পারে।’

কোয়েলের কথা শুনে কাঁচুমাচু মুখ করে হাত কচলাতে কচলাতে বললাম,

‘আসলে…মাথার ঠিক ছিলো না ওই মুহূর্তে। তাছাড়া আদিত্য কে ওরকমভাবে দেখে…

‘কিরকম ভাবে দেখে?’

‘আরে…আরে, উনি খুব রেগে ছিলেন আগের থেকে যা বুঝলাম রাজদার কথায় কিন্তু আমাদের দিকে যখন তাকিয়ে ছিলেন তখন কেমন জানো মুখটা ফ্যাকাশে লাগছিলো।’

‘হ্যাঁ তো তাতে তোর কি?’

‘আমার কি মানে? কি বলছিস তুই?’

‘ভুল কি বললাম? তোর কি যায় আসে আদিত্যদার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে থাকলে? আর তাছাড়া তুই তো রণিতকে পছন্দ করতিস তাহলে একসেপ্ট করলি না কেন? ওর জন্যেই তো তুই আদিত্যদার সাথে মিসবিহেভ করেছিলি তাই না? তাহলে একসেপ্ট করে নিতিস।’

‘তোর মাথা ঠিক আছে? কিসব আজেবাজে কথা বলছিস তুই কোয়েল? আমি একজন বিবাহিতা মেয়ে আর আদিত্য আমার স্বামী! ওনার কিছু হলে আমার খারাপ লাগে। ওনাকে কষ্ট পেতে আমি দেখতে পারবো না আর ওনাকে ছাড়া অন্য…

‘থেমে গেলি কেন? বল! বল, ওনাকে ছাড়া অন্য…অন্য কাউকে তুই একসেপ্ট করতে পারবি না নিজের লাইফে, কি? তাই তো?’

কোয়েলের কথায় রেগে গিয়ে মুখ ফসকে কি বলে ফেলেছি খেয়ালই ছিলো না। অগত্যা চুপ করে থাকা ছাড়া উপায় রইলো না। কোয়েল আবার বললো,

‘নিজের লাইফে অন্য কাউকে যখন মেনে নিতেই পারবি না তখন কেন আদিত্যদাকে সুযোগটা দিচ্ছিস না মৌ? আদিত্যদা তো চায় সবটা নতুনভাবে শুরু করতে তাই না?’

‘কিন্তু আমি চাই না কোয়েল। সবটা নতুন করে শুরু করতে গেলে আমাকে ওনার আগের করা ব্যবহারগুলো ভুলতে হবে। আর তাছাড়া আমি একজন বিবাহিতা তাই এভাবে কোনো ছেলে আমাকে বিনা অধিকারে টাচ করবে সেটা আমি মেনে নেবো না। আমি ওনার জিয়ার মতো মেয়ে নই। ডিভোর্স দিয়ে দেবো বলেই যে আমাকে এরপর অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই তাই না?’

‘তুই কি জানিস তুই নিজেই নিজেকে ঠকাচ্ছিস?’

‘আমি কেন নিজেকে ঠকাতে যাবো?’

‘এভাবে নিজের অনুভূতিগুলোকে মিথ্যে প্রমাণ করার চেষ্টা করিস না মৌ। বিয়ে জিনিসটাকে মানিস তুই। আচ্ছা মানলাম তুই আদিত্যদাকে মেনে নিবি না, পছন্দ করিস না ঘৃণা করিস। সিঁথির সিঁদুর টা তোর কাছে এতটা ইম্পরট্যান্ট কেন যে চুলের আড়ালে সেটা একটু হলেও দিয়েছিস? ডিভোর্স হলে তো এমনিতেও পড়বি না তাহলে এখনই মুছে দে। কেন মানিস এতে আদিত্যদার ক্ষতি হবে? কি হবে ও মরে গেলে?’

‘কোয়েল! মুখ সামলে কথা বল। এমনিতেই উনি কীভাবে আছেন তার কোনো খোঁজ পাইনি আমি। কোথায় আছেন কি করছেন কিচ্ছু জানি না তার মধ্যে তুই এমন….

প্রথমে রেগে জোর দিয়ে কথা বললেও শেষ মুহূর্তে কেঁদে ফেললাম। হঠাৎ করেই কোয়েল আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘তুই জানিস তোর এতটা খারাপ কেন লাগছে আজকে আদিত্যদার কথা ভেবে?’

আমি কোয়েলকে জড়িয়ে ধরে কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিলে কোয়েল বলে,

‘কারণ জিয়া যখন আদিত্যদার সাথে ক্লোজ থাকে তখন তুইও কষ্ট পাস। আজ তোর অবস্থায় আদিত্যদা দাঁড়িয়ে তাই তুই খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছিস আদিত্যদা কেমন ফীল করছে। আদিত্যদা আর তুই এখন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে মৌ, আমি খুব ভালো ভাবে জানি তুই আদিত্যদাকে ভালোবাসিস। এবার হতে পারে তুই এটা বুঝেও অস্বীকার করছিস, মানতে চাইছিস না আদিত্যদার আগের ভুলগুলো ভেবে কিংবা তুই নিজের অনুভূতিগুলোর অর্থ বুঝতে পারছিস না। জানিস না তোর এই অনুভূতিগুলোর নাম কি।’

কোয়েল আমাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা করে দাঁড় করলে আমি নিচের দিকে তাকিয়ে থাকি। ও আমার চোখ মুছিয়ে দিয়ে আমার দু-গালে হাত রেখে বলে,

‘চিন্তা করিস না আদিত্যদার কিচ্ছু হবে না। ও একদম ঠিক থাকবে। যে গেছে আদিত্যদার খোঁজ করতে সে’ই কিছু হতে দেবে না আদিত্যদার। তুই চল এখন ভার্সিটি, আজকে আর ক্লাস করা লাগবে না।’

কোয়েলের সাথে হোস্টেলের দিকে হাঁটতে হাঁটতে আমি ওকে জিজ্ঞেস করি,

‘তুই কীভাবে শিওর হচ্ছিস যে রাজদা ওনার কিছু হতে দেবে না?’

‘(হেসে) শুধু আমি না, ভার্সিটির যে কাউকে জিজ্ঞেস করেনে যারা আদিত্যদা আর রাজকে চেনে। তারা সবাই আমার মতই বলবে।’

‘এমন কেন? ওরা বেস্ট ফ্রেন্ডস তাই?’

‘ওরা হলো গিয়ে ব্রাদার ফ্রম অনাদর মাদার! বাংলা ভাষায় যদি বলিস হরিহর আত্মা। দুজন দুজনকে সামলে রাখে সবসময়ই। আদিত্যদা কেমন? এটা যদি তুই কখনো জানতে চাস, তাহলে বলবো রাজের কাছে চলে যাবি। এ টু জেড সব ইনফরমেশন দিয়ে দেবে তোকে। তাই তো বললাম, চিন্তা করিস না আদিত্যদাকে রাজ ঠিক সামলে নেবে। একমাত্র ওই পারে আদিত্যদা রেগে গেলে তাকে শান্ত করতে…আপাতত!’

‘আপাতত টা এতো জোর দিয়ে বললি কেন? আপাতত মানে?’

‘আপাতত মানে এতদিন অবধি রাজ ছাড়া আদিত্যদার রাগকে কেউ সামলাতে পারেনি কিন্তু এখন তো তুইও এসে গেছিস। তাই বললাম আর কি! (মুখ টিপে হেসে)’

‘ইয়ার্কি মারবি না একদম। হুহ! আচ্ছা তুই আদিত্যকে আদিত্যদা বলিস কিন্তু রাজদা কে রাজ কেন? কি ব্যাপার?’

আমার কথায় কোয়েল চুপ করে গেলো। যাক, একদম সঠিক জায়গায় তীর গিয়ে বিঁধেছে তাহলে। অপেক্ষা করতে লাগলাম কোয়েলের উত্তরের আশায়। ও উত্তর না দিলে ওকে আবার জিজ্ঞেস করবো ঠিক সেই সময় কোয়েল বললো,

‘আদিত্যদা, রাজ, অঙ্কিত, আমি আর জিয়া সবাই একই স্কুলে পড়তাম। আদিত্যদা, রাজ আর অঙ্কিত সেইম ক্লাসে ছিলো, আমি আর জিয়া সেইম ক্লাসে ছিলাম। সেখান থেকেই সবার সাথে সবার পরিচয়। আমি ছোটো থেকেই আমার থেকে যারা বড়ো তাদের নাম ধরে ডাকি এবার সে দাদা হোক বা দিদি। আদিত্যদাকে আমার প্যারেন্টস চেনেন তাই শিখিয়ে দিয়েছিলো দাদা বলতে। তাও প্রথম প্রথম বলতে পারতাম না তাই মা বকেছিলো। তারপর থেকে দা বলি। বুঝলি? (হেসে)’

কোয়েল হাসলো ঠিকই কিন্তু আমার কেমন জানো খটকা লাগলো। কিছু বলবো তার আগেই কোয়েল হোস্টেল এসে যাওয়ায় হোস্টেলের ভিতর ঢুকে গেলো। আমিও যেই না ঢুকতে যাবো ওমনি আমার ফোন বেজে উঠলো। ফোন বার করে দেখি রাজদা ফোন করেছে। সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে হ্যালো বলতেই রাজদা বললো,

‘আদি একদম ঠিক আছে। তুমি চিন্তা করো না।’

‘কোথায় আছে এখন?’

‘আমার সাথেই। আমি ওর বাড়িতেই আছি কদিন তাই অসুবিধা হবে না।’

‘আ..আচ্ছা।’

রাজদা কল কেটে দিলে আমি হোস্টেলের ভিতর চলে এলাম। ওনার খবর পেলেও কেন জানো মনটা খচখচ করছে। তাই চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে একটু শুতেই ঘুমিয়ে পড়লাম চিন্তা করতে করতে।

৪২.
ভার্সিটিতে আগে আগে এসে পড়েছি আজকে, কোয়েল একটু দেরীতে আসবে। গতকাল রাজদার খবর দেওয়ার পর আর কোনো খবর পাইনি। হস্টেল ফিরে ঘুমিয়ে পড়ায় ঘুম থেকে উঠতে রাত হয়ে যায়। যার ফলে রাজদা কে আর ফোন করতে পারিনি আর ওনাকে ফোন করারও সাহস হয়ে ওঠেনি। জানি না আজকে উনি আসবেন কি না ভার্সিটিতে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় অঙ্কিত পাশে এসে দাঁড়ালো।

‘কোয়েল কোথায়?’

‘পরে আসবে। তুমি কোথায় ছিলে?’

‘সেটা জেনে তোর কি কোনো কাজ আছে?’

‘এভাবে কেন বলছো?’

‘যেভাবে বলার সেভাবেই বলছি।’

‘আমি জানি তুমি কালকের ঘটনার জন্য রেগে আছো। কিন্তু বিশ্বাস করো আমার কোনো ইচ্ছা ছিলো না রণিতের সাথে কথা বলার। তোমাদের কথামতো আমি ওর থেকে দূরত্ব বজায় রাখবো ঠিক করেছিলাম কিন্তু ও হুট করেই ওরকম একটা কাজ করে বসলো…

‘আর তুইও ওকে চড় মেরে দিলি?’

আমি অবাক হয়ে তাকালাম অঙ্কিতের দিকে। অঙ্কিত আমার রণিতকে চড় মারা নিয়ে রেগে আছে?

‘মৌ তোর আইডিয়া নেই রণিত কতটা খারাপ। ও যে কতটা ভয়ংকর হয়ে দাঁড়াতে পারে তুই ভাবতেও পারছিস না। তুই কাজটা একদম ঠিক করিসনি। আজ অবধি রণিতের এরমভাবে অপমান কেউ করেনি তাও আবার সবার সামনে। আরে অপমান করা তো দূর, কেউ ভাবে পর্যন্তনি। না জানি ও কি ফন্দি আঁটবে তোকে ফাঁসানোর জন্য।’

অঙ্কিতের কথাগুলো শুনে ভয় পেয়ে গেলাম। কেন যে না বুঝে কাজ করি কে জানে বাবা। এখন? এখন কি হবে? অঙ্কিত তো এই ইয়ারটাই ভার্সিটিতে থাকবে তারপর কি করবো আমি? এই ভাবতে ভাবতে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখি আদিত্য আসছেন, পাশে রাজদা। আমি একটু এগোতেই ওনার হাতের দিকে চোখ গেলো আমার। ওনার ডান হাতে ব্যান্ডেজ করা। কিছু বলবো তো দূর ওনার কাছে পৌঁছনোর আগেই উনি প্রিন্সিপাল ম্যাডামের ঘরে ঢুকে গেলেন।

‘এই মৌ, এভাবে দৌঁড়ে এলি কেন?’

অঙ্কিতের কথা শুনে শুধু ওর দিকে অসহায় ভাবে তাকালাম। রাজদা যে বলেছিলেন ওনার কিছু হবে না তাহলে ওনার হাতে ব্যান্ডেজ কেন? কোয়েলও বলেছিলো রাজদা সামলে নেবে তাহলে কেন ওনার হাতে ব্যান্ডেজজজ! ভীষণ রকম মাথা গরম হচ্ছে ওনার উপর। রাগ হলেই কি নিজের ক্ষতি করতে হবে? বড্ড অসহায় লাগছে এবার নিজেকে। না না, এভাবে অস্থিরতার মধ্যে থাকবো কীভাবে আমি? আমাকে ওনার সাথে কথা বলতে হবে।

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~২৬||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

‘কি রে? এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে কি উঁকি ঝুঁকি করছিস?’

আমি প্রিন্সিপাল ম্যাডামের রুমের বাইরে বেশ অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম ঠিক তখন কোয়েল পিছন থেকে ডাকলে আমি ওর দিকে তাকাই তারপর আবার ওইদিকে তাকিয়ে বলি,

‘আদিত্য আর রাজদা প্রিন্সিপাল ম্যাডামের ঘরে আছেন।’

‘ওহ আচ্ছা বুঝলাম, বরের জন্য অপেক্ষা করছিস।’

‘বাজে কথা বলিস না তো। জানিস ওনার ডান হাতে ব্যান্ডেজ করা? তুই তো খুব বলেছিলি কিছু হবে না।’

‘আদিত্যদার হাতে ব্যান্ডেজ করা?’

‘হ্যাঁ। উনি যখন এলেন তখন দেখেছি।’

‘ও আচ্ছা। তা রণিতকে কোথাও দেখেছিস?’

‘ওকে আমি দেখতে যা…বো…

কোয়েল আমার দিকে ছোটো চোখ করে হালকা হেসে তাকাতেই আমার মাথায় ব্যাপারটা খেললো। আদিত্য রণিতকে কিছু করেননি তো? হে ভগবান। আমি অসহায় ভাবে কোয়েলের দিকে তাকালে কোয়েল বলে,

‘আমার দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। সামনে তাকাও, তোমার পতিদেব আসছে। তাকেই জিজ্ঞেস করে নাও হতে ব্যান্ডেজের কারণ। আমি চলি।’

কোয়েল কথাটুকু বলে চলে গেলে আমি সামনের দিকে ঘুরতেই দেখি আদিত্য আর রাজদা এদিকে আসছেন। আমি কি করবো ভেবে না পেয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। ওনারা এদিকে না এসে অন্য দিকে চলে যেতে নিলে আমি ওদের দিকে এগাই আর তখনই রাজদার সাথে আমার চোখাচুখি হয়। রাজদা আমাকে চোখের ইশারায় ওরা যেদিকে যাচ্ছে সেদিকে যেতে বলে। আমিও সেই মতো চুপচাপ ওদের পিছু পিছু যেতে থাকি।

‘ম্যাডাম যাই বলুক কাজটা কিন্তু আমাদের করতেই হবে রা….তুমি?’

আদিত্য নিজের মতো করে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলেন রাজদা যে কখন সরে গেছেন টেরই পাননি। রাজদা সরে গিয়ে আমাকে ওনার পিছনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে ইশারা করে চলে যান।

‘হ্যাঁ, কেন জিয়াকে আশা করেছিলেন?’

আমার কথা শুনে উনি চলে যেতে নিলে আমি মুখ টিপে হাসি থামিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলাম,

‘কোথায় যাচ্ছেন? জিয়ার কাছে?’

আমার প্রশ্ন শুনে উনি আমার দিকে রেগে তাকালে আমি জোর করে নিজের হাসি থামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। আমার সামনে এসে উনি জোরে বলেন,

‘তোমার প্রবলেমটা কি? সারাক্ষন কেন জিয়া জিয়া করো? ও কি তোমাকে আমার চামচামি করতে পাঠিয়েছে?’

‘আমি জিয়ার চামচামি করছি? (রেগে)’

‘তা নয় তো কি। সারাক্ষন জিয়ার নাম জপতে থাকো। জিয়া যে আশ্রম খুলেছে জানতাম না তো। তুমি সেই আশ্রমেই যাচ্ছো নাকি জপ শিখতে?’

‘হিহিহি। উপস, স্যরি স্যরি। আসলে এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন আদিত্যদার কথাটা শুনে হাসি পেয়ে গেলো। কেটে পর কোয়েল! (বিড়বিড়িয়ে)’

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই কোয়েলের হাসি শুনে ওর দিকে তাকালাম। ও সুরসুর করে কেটে পড়লো কথাগুলো বলে। আদিত্যের দিকে আবার তাকাতেই দেখি উনিও হাসছেন, আমাকে তাকাতে দেখে আবার চুপ করে গেলেন। আমি ওনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

‘হাতে কি হয়েছে? ব্যান্ডেজ কেন?’

আদিত্য চুপ করে রইলেন আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার বদলে। উনি নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন দেখে আমি আবার বললাম,

‘কি হলো বলবেন তো?’

‘হম? তেমন কিছু না।’

‘তাহলে কেমন কিছু? শুধু শুধু কি হাত কেটে যায় নাকি মানুষের? দেখি হাতটা।’

আদিত্য আমার দিকে তাকালে আমি নিজেকে সংযত করে বললাম,

‘(আমতা আমতা করে) না মানে কতটা কেটেছে দেখতাম আর কি।’

‘(হেসে) আচ্ছা? ব্যান্ডেজের উপর দিয়ে দেখতে?’

ওনার কথা শুনে আবার বিপাকে পড়ে গেলাম। কি বলবো ভাবছি এমন সময় উনি আমার কাছে এসে স্লো ভয়েজে বললেন,

‘এতো চিন্তা আমার জন্য?’

‘না মানে…

‘মানে কি?’

‘আপনি আসল কথাটা না বলে কথা কেন ঘোরাচ্ছেন?’

‘(হেসে) তাই নাকি? আমি কথা ঘুরাচ্ছি?’

‘ত..তা নয়তো কি?’

‘আচ্ছা বেশ। রাজের সাথে একটু মারামারি করতে গিয়ে কেটে গেছে।’

‘(ভ্রু কুঁচকে, রেগে) কি?’

‘হ..হ্যাঁ। আমার মাথা গরম ছিলো ওর কাজকর্মে তাই মেরে দিয়েছি। ওইসব আমাদের মধ্যে হতেই থাকে।’

‘আচ্ছা এই ব্যাপার? ঠিক আছে আমি রাজদার থেকে জিজ্ঞেস করে নিচ্ছি।’

‘এই কেস করেছে। (বিড়বিড়িয়ে)’

‘কিছু বললেন?’

‘ইয়ে হ্যাঁ মানে না মানে, রাজ তো বেরিয়ে গেছে ভার্সিটি থেকে। পরে কথা বলো।’

‘আগে তো দেখি।’

বলেই হাঁটতে শুরু করলাম রাজদা যেদিকে গেছেন সেদিকে। কেমন জানো মনে হচ্ছে মিথ্যে কথা বলছেন উনি আমাকে। উনি রাজদাকে কেন মারতে যাবেন? অবশ্য রাগের মাথায় কি করেন না করেন তা তো ঠিকও থাকে না ওনার। তাও একবার জিজ্ঞেস করবো আমি।

‘ওই তো রাজদা।’

কিছুটা যেতেই দেখলাম রাজদা দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটছেন। আমি জোর পায়ে হেঁটে রাজদার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,

‘রাজদা।’

‘আরে মৌমিতা? তুমি এখানে?’

‘হ্যাঁ। আপনার খোঁজ নিতে এসেছি।’

‘(অবাক হয়ে) আমার খোঁজ কেন?’

‘কালকে আদিত্য আপনাকে মেরেছে তো তাই। তা আপনি ঠিক আছেন তো?’

‘(আশ্চর্য হয়ে) আমাকে আদিত্য মেরেছ..ছে.. হ..হ্যাঁ হ্যাঁ মেরেছে তো, মেরেছে।’

রাজদা কে পিছনের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করতে দেখে আমি পিছন ফিরলাম। ফিরতেই দেখি আদিত্য দাঁড়িয়ে আছেন।

‘এ কি? আপনি এখানে কেন? কখন এলেন আপনি?’

‘এ..এই তো, এক্ষুনি এলাম। তুমি রাজকে খুঁজছিলে তাই ভাবলাম আমিও তোমাকে একটু হেল্প করি। তাই আর কি!’

আমি আদিত্যের কথা শুনে পাত্তা না দেওয়ার ভান করে রাজদার দিকে ফিরতেই রাজদা একটা ক্যাবলামার্কা হাসি দিলো আর বললো,

‘আমি একদম ঠিক আছি। আদিত্য আর আমার মধ্যে এসব প্রায়ই চলতে থাকে, হে হে হে। (আদিত্যের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে) তুমি চিন্তা করো না।’

‘আচ্ছা।’

আমি ঘুরে আদিত্যের দিকে তাকাতেই আদিত্যও ক্যাবলামার্কা হাসি দিলো আমাকে দেখে। আমি সেই দেখে ভ্রু কুঁচকাতেই আদিত্য চুপ করে গেলেন। আমি এগানো শুরু করলাম।

‘কি রে আদি, তুই মিথ্যে বলেছিস কেন?’

‘তো কি সত্যি বলতাম?’

‘পরে সত্যি জানলে কি হবে বল তো?’

‘আগে জানুক। তারপর দেখা যাবে।’

‘রণিতের হাত-মুখ আস্ত আছে তো?’

আমি কিছু দূর যেতেই দাঁড়িয়ে গিয়ে পিছন ফিরে রাজদাকে জিজ্ঞেস করলাম কথাটা। রাজদা আমতা আমতা করে বললো,

‘ইয়ে,ম..মানে?’

‘না, আপনাকে আদিত্য এমন মারলো যে ওনার হাত কেটে গেলো কিন্তু আপনার কিচ্ছুটি হলো না, তাই জিজ্ঞেস করলাম। আপনিই তো ভালো জানবেন তাই না? যাই হোক, মিথ্যে বলার চেষ্টাটা আর কোনোদিন করবেন না আপনারা, স্পেশালি আপনার বন্ধুকে বলবেন। আর সাথে এটাও বলবেন যাতে রাগের মাথায় বেশি গায়ের জোর না দেখায়। আসি।’

আমি কথাগুলো বলে একবার আদিত্যের দিকে তাকিয়ে সামনে ফিরলাম। সামনে ফিরতেই হাসি পেলো কিন্তু না হেসে মুখ চেপে চলে এলাম ওখান থেকে।

‘নে, আরো বল মিথ্যে। গাধা একটা।’

‘তোর কপালে একটা ব্যান্ডেজ করিয়ে আনা দরকার ছিলো।’

‘শুধু কেন ব্যান্ডেজ করবো আমি?’

‘শুধু শুধু কেন? সত্যি সত্যি করার ব্যবস্থা করে দিতাম আমি।’

আদিত্য বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে রাজের দিকে তাকিয়ে হাসলে রাজ নিজের শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বললো,

‘আয়। দেখি কেমন সত্যি করতে পারিস।’

আদিত্যকে আর কে পায়? দিয়েছে ভোঁ দৌঁড়। ওর পিছন পিছন রাজও দৌঁড়াচ্ছে।

অন্যদিকে,

কোয়েল হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে আমার কথা শুনে। সত্যি বাবা, হাসার মতোই কথা। মানুষ মিথ্যে বলতে পারে না ঠিক আছে বাট এরকম? এগুলো তো বোকামি। নিজেরই হাসি পাচ্ছে এসব কথাগুলো ভেবে।

‘দেখ, দেখ। আদিত্যদা তোকে কত ভালোবাসে। তোর জন্য বেচারা রণিতকে হসপিটালে পাঠিয়ে দিলো। আগেই বলেছিলাম আমি এগুলো তোকে ইভেন আজকে সকালের কথাটাও মিললো আমার। হুহ!’

‘বাদ দে এসব কথা। আমি তো ভয় পাচ্ছি রণিত এতে রেগে গিয়ে আবার কিছু করবে না তো? এখন না করুক আদিত্য ভার্সিটি থেকে পাস আউট করে গেলে তো করতেই পারে?’

‘নাহ সোনা। তোমার বর তোমার প্রেমে পড়েছে বলতে গেলে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। তোমার আর কোনো ক্ষতি হতে অন্তত উনি বেঁচে থাকতে দেবেন না। বুঝলে?’

‘কি সব আজে বাজে কথা বলছিস? বেঁচে কেন থাকবে না?’

‘বাহবা! এখন যদি বলি তুমিও তোমার বরকে ভালোবাসো, ওমনি লম্বা লম্বা ডায়লগ দিতে শুরু করবে। এদিকে এত্তো এত্তো ভালোবাসা, এত্তো এত্তো কেয়ার। কি যে করবো তোদের নিয়ে আমি!(কপালে হাত দিয়ে)’

কোয়েলের কথাগুলো শুনে আমার নিজেরও ভালো লাগছে। উনি সত্যি আমার জন্য রণিতকে মারলেন? তাছাড়া আর কি বা হবে? ওনার তো রণিতের সাথে ইনফ্যাক্ট কাওর সাথেই কোনো শত্রুতা নেই। রণিত আমাকে প্রপোজ করেছে, আমাকে ছুঁয়েছে বলেই উনি ওকে মেরেছেন। ভাবতেও অবাক লাগছে, আজ যদি অঙ্কিত আমাকে না বলতো যে রণিতের অবস্থা খারাপ, সে হসপিটালে ভর্তি। তাহলে জানতেই পারতাম না বিষয়টা। উনি সত্যি আমার জন্য ভাবেন এটা তো কিছুদিন আগে থেকেই বুঝতে পারছি আমি। তাহলে কি উনি সত্যি সবটা নতুন করে শুরু করতে চান? কোয়েলের কথা মতো কি উনি আমাকে ভালো…

‘(অবাক হয়ে) একি!’

আমি কোয়েলের চিৎকার শুনে সামনে তাকাতেই দেখি আদিত্য কোয়েল কে সামনে রেখে ওকে বাঁচাতে বলছে রাজদার থেকে। কারণ রাজদা ওকে মারবে বলে ধরতে চাইছেন। বেশ বুঝতে পারলাম মিথ্যে ধরা পড়েছে তাই এই অবস্থা। আমি এখানে দাঁড়িয়ে হাসছি আর ওদিকে বেচারি কোয়েল একবার এদিক আরেকবার ওদিক করছে। ইশ! কি বাজে একটা অবস্থা। আমি কোনো মতে হাসি থামিয়ে ভাবলাম,

‘না, না। এবার থামাতে হবে। নাহলে এ সারাদিন চলবে। আর এরা যা করছে, এরপর তো পরে যাবে।’

আমার ভাবতে দেরী হলো কিন্তু ওটা বাস্তবায়িত হতে দেরী হলো না। রাজদা আদিত্যকে ধরতে গেলে আদিত্য কোয়েলকে রাজদার দিকে ঠেলে দেয় আর নিজে এদিকে দৌঁড়ে আসতে নিলে হোঁচট খায়। আমি সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে আদিত্যকে ধরে নেই আর উনি আমাকে শক্ত করে ধরেন।

‘ঠিক আছেন আপনি?’

‘তুমি ঠিক আছো?’

‘হ্যাঁ আমি কে…

‘তুমি ঠিক থাকলে আমিও ঠিক আছি।’

আমি ওনার কথায় লজ্জা পেয়ে মাথা নামাতেই কোয়েলের দিকে চোখ গেলো। কোয়েলের কোমর রাজদা শক্ত করে ধরে আছে আর কোয়েল রাজদার কলার। ঠিক যেমন লাইব্রেরিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিলো একদৃষ্টে, এখনও তাই। আমার তাকানো দেখে আদিত্যও তাকালেন ওদের দিকে। আশেপাশে থাকা কয়েকটা স্টুডেন্টসও তাকিয়ে আছে। তাই আমি আদিত্যকে ছেড়ে দূরে সরে এলাম। আদিত্য সামান্য হেসে মাথা চুলকে আমার দিকে তাকালে আমি ওনার দিকে আর না তাকিয়ে কোয়েলের কাছে এগিয়ে জোরে জিজ্ঞেস করি,

‘এই কোয়েল! ঠিক আছিস?’

কোয়েল আর রাজদা একে অপরকে মুহূর্তের মধ্যে ছেড়ে দেয় আর ছিটকে দূরে সরে যায়। আমি একটু অবাক হই এতে। আদিত্য কোয়েলকে কিছু বলতে নিলেই কোয়েল দৌঁড়ে চলে যায় অন্যদিকে। আমি রাজদার দিকে তাকালে রাজদাও অন্য প্রান্তে চলে যায়। এটা কেমন হলো? আমি কনফিউজড হয়ে আদিত্যের দিকে তাকালে উনি আমাকে কোয়েলের পিছনে যাওয়ার ইশারা করে নিজে রাজদার পিছনে চলে যান। আমিও ওনার কথা মতো ছুট দেই কোয়েলের পিছনে।

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~২৭||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

৪৩.
আমি কোয়েলের পিছনে এসে দেখলাম ও দাঁড়িয়ে আছে। ওর পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত রাখতেই ও অন্যদিকে ঘুরে গিয়ে বললো,

‘ত..তুই এখানে এলি কেন? আমি তো যেতাম ওদিকে।’

কোয়েলকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললাম,

‘এই একই প্রশ্ন আমার। তুই এখানে এলি কেন? কি এমন হলো যে ছুটে এদিকে চলে এলি? রাজদার থেকে এতো পালিয়ে পালিয়ে বেরাস কেন বল তো তুই?’

‘কারণ আমার ওকে ভালো লাগে না তাই, আর কিছু?’

কোয়েল বেশ রেগে কথাটা বললো। আমি বুঝতে পারছি না কোয়েল এতো কেন রেগে রয়েছে রাজদার উপর। আগে কি কিছু হয়েছিলো? তাই হবে, ওরা তো স্কুল লাইফ থেকেই একে অপরকে চেনে। থাক, এখন কিছু জিজ্ঞেস করবো না। পরে কোয়েলের মুড ঠিক হলেই জিজ্ঞেস করবো।

‘কি হলো চল? কতক্ষন এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি?’

‘হ্যাঁ, চল।’

কোয়েল আগে হাঁটতে শুরু করলো আর আমি ওর পিছন পিছন হাঁটতে থাকলাম।

অন্যদিকে,

‘এভাবে আর কতদিন নিজে কষ্ট পাবি আর ওকেও কষ্ট দিবি রাজ?’

আদিত্যের প্রশ্নে রাজ তাচ্ছিল্য হেসে মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলে আদিত্য হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আদিত্য ভার্সিটির বাইরে এসে দেখেছিলো রাজ চুপচাপ একটা পার্কের বেঞ্চে বসে আছে। রাজের পাশে বসে রাজকে প্রশ্নটা করলে রাজ কোনো উত্তর দেয় না তাই কিছুক্ষন পর আদিত্য আবার বললো,

‘কোয়েল তো কিছুই জানে না তোর ব্যাপারে।’

‘জানতে চায়ও না।’

‘তুই জানাতে না চাইলে কীভাবে জানবে?’

‘আসার পর থেকে দেখা ছাড়া একটা কথাও বলেনি। চেষ্টা করলে এড়িয়ে গেছে। মৌমিতাই সাক্ষী আসার পর থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর।’

আদিত্য রাজের কাঁধে হাত রেখে বললো,

‘তুই যেটা করেছিস সেটা তো ঠিক নয় রাজ। এটা ভুলে যাস না। কোয়েলের রেগে থাকার কারণ তো আছেই।’

‘(আদিত্যের দিকে তাকিয়ে) আমার ওকে জানানোর কিচ্ছু নেই আদি। ও ওর লাইফে মুভ অন করুক, আমি আমার লাইফে করবো। ছোটবেলার ভালোলাগা নামক আবেগকে তো আর জোর করে ভালোবাসা নাম দেওয়া যায় না তাই না?’

‘(হেসে) তুই বলছিস তুই কোয়েলকে ভালোবাসিস না? তাহলে ওর থেকে দূরে গিয়েও কেন ওর এতো খোঁজ রাখতিস?’

‘(শান্ত কণ্ঠে) আমি কখন বললাম আমি ওকে ভালোবাসি না? আমি তো ওকে নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসি কিন্তু তাই বলে যে ও’ও আ..আমাকে ভা..ভালোবাসবে তার তো কোনো মানে নেই আদি।’

রাজ কথাটুকু বলে উঠে গেলে আদিত্য নিজের জায়গায় বসে জোরে বলে ওঠে,

‘কোয়েলও কিন্তু তোর খোঁজ প্রত্যেকটা মুহূর্তে নেওয়ার চেষ্টা করেছে রাজ।’

আদিত্যের কথা শুনে রাজ দাঁড়িয়ে গেলে আদিত্য মুচকি হেসে রাজের কাছে এগিয়ে গেলো। পাশে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত গুঁজে বললো,

‘তুই আমাদের সাথে চার বছর যোগাযোগ রাখিসনি রাজ। কোয়েল তখন ছোটো ছিলো সদ্য ক্লাস নাইনে উঠেছে আর তুই সেই সময় এইচ.এস. দিয়ে হাওয়া হয়ে গেলি। ওই ছোটো বয়সেই ও অনেকের কাছে খোঁজ করেছে তোর কিন্তু কোনো খোঁজ পায়নি। ও এখনও জানে না যে আমি তোদের ব্যাপারটা জানি তাহলে তখন কীভাবে আমাকে জিজ্ঞেস করতো তোদের ব্যাপারটা? শুধু এটুকু জানতে পেরেছে যে তুই আমার থেকেই ওর খবর পেতিস। কিন্তু অবাক ব্যাপার তুই জানতিস না।’

আদিত্য কথাটা বলে হাসতে শুরু করলে রাজও হেসে ফেললো। আসলে রাজ যেই ছেলেটার থেকে খবর নিত কোয়েলের সেই ছেলেটাকে আদিত্যই ইনফরমেশন দিতো। আদিত্য ছেলেটাকে কিছু বলতে দেয়নি রাজকে কারণ টা রাজের প্রতি আদিত্যের অভিমান। আদিত্য রাজকে বললো,

‘আমার মনে হয় এবার তোর কোয়েলকে নিজের মনের কথাটা বলা উচিত। দেখ না ওর উত্তর কি আসে। ওর উত্তরেই তুই বুঝতে পারবি ও অভিমান করে আছে নাকি সত্যিই তোকে পছন্দ করে না।’

রাজ মাথা নাড়লো শুধু আদিত্যের কথায় আর মনে মনে ভাবলো,

‘ও হয়তো সত্যিই আমাকে পছন্দ করে না। কিন্তু ওকে এটুকু তো জানাতেই হবে যে আমি ওর জন্যেই চলে গেছিলাম আর ওর জন্যেই ফিরে এসেছি।’

‘কি রে? কি এতো ভাবছিস? চল।’

রাজকে আদিত্য টেনে ভার্সিটির দিকে নিয়ে চলে গেলো। ক্লাস শেষে আদিত্য আর রাজ বসে কথা বলছে বন্ধুদের সাথে কিন্তু আদিত্যের চোখ খুঁজছে মৌমিতাকে। আদিত্য বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে সেটা দেখে রাজ হেসে আদিত্যের কানে কানে বললো,

‘বউরে খুঁজিস? তাহলে ওইদিকে দেখ।’

রাজের কথামতো আদিত্য সেদিকে তাকালে দেখে মৌমিতা আর কোয়েল কথা বলতে বলতে আসছে। রাজ আদিত্যকে বললো,

‘দেখ, তোর বউ এর খেয়াল রাখছি আমি।’

আদিত্য হেসে রাজের দিকে ঘুরে বললো,

‘আমার বউয়ের খেয়াল রাখিসনি, নিজের বউয়ের রেখেছিস। একসাথে দুটো কাজ করছিস বল?’

‘(মাথা চুলকে, হেসে) ভো তো হেইন।’

এদিকে,

আমি আর কোয়েল কথা বলতে বলতে আসছিলাম সে সময় দেখলাম আদিত্য আর রাজদা ওদের বন্ধুদের সাথে কথা বলছে। আমার সাথে সাথে কোয়েলও এটা দেখতে পেলে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে বলে,

‘চল, হস্টেলে ফিরতে লেট হয়ে যাচ্ছে।’

কথাটুকু বলেই কোয়েল গটগট করে হেঁটে বেরিয়ে গেলে আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একবার রাজদাদের দিকে তাকাই। রাজদা আমাকে দেখলে তাচ্ছিল্য হাসলে আদিত্য পিছন থেকে ইশারা করে কোয়েলের সাথে যেতে। আমি সেটা দেখে হাঁটা ধরি কোয়েলের পিছনে। হম, আদিত্যও তার মানে সবটাই জানেন ওদের ব্যাপারে। ওনাকেই না হয় সুযোগ পেলে জিজ্ঞেস করব। হ্যাঁ, সেটাই ভালো হবে। এই বিষয় দিয়েই কথা বলা শুরু করা যাবে। নাহলে আগের দিনের ব্যবহারের পর কীভাবে কথা বলবো মাথায় আসছিল না। এটাই একটা মাত্র উপায় এটা দিয়ে শুরু করে না হয় আগের দিনের বিষয়ে যাবো। কথাগুলো ভেবেই একটু দৌঁড়ে গিয়ে কোয়েলের পাশে হাঁটতে শুরু করলাম।

রাতে,

‘কাজটা হয়ে গেছে রাজ?’

‘অলমোস্ট। বাট আমাদের একবার কলকাতা যেতে হবে।’

‘হম।’

‘কাজটা কিন্তু রিস্কি, ঠিক হচ্ছে কি?’

‘ঠিক কাজে রিস্ক তো থাকবেই ভাই। কিন্তু পিছিয়ে আসলে তো চলবে না তাই না?’

‘প্ল্যানটা দারুন কিন্তু।’

‘তুই না থাকলে এক্সিকিউট করতে পারতাম না। তোকে দেখেই ঠিক করে নিয়েছিলাম প্ল্যানটা কোনো না কোনো ভাবে কাজে লাগাতেই হবে।’

‘চল, অনেক কথা হলো। ঘুম পাচ্ছে।’

‘হ্যাঁ।’

আদিত্য কথা শেষ করে নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকলে রাজ সেটা দেখতে পায়। বলে,

‘করেই দেখ একবার ফোন। মে বি ও’ও ওয়েট করছে তোর ফোনের?’

রাজের কথাটা শুনে আদিত্যের মনে এক চিলটে আশার আলো জেগে উঠলো। আদিত্য হালকা ভয় নিয়েই ফোনটা হাতে নিয়ে রাজের দিকে তাকালে রাজ হেসে ভরসা জুগিয়ে ঘুমোতে চলে যায়।

অন্যদিকে,

‘ধুর, কিছুতেই ঘুম আসছে না। কি যে হচ্ছে আজকে।’

অনেকক্ষণ ধরে এপাশ ওপাশ করতে করতে উঠে বসলাম। উঠে বসে কোয়েলের দিকে তাকাতেই দেখলাম ও গভীর ঘুমে মগ্ন। কি করবো ভেবে না পেয়ে ফোনটা হাতে নিলাম। গান শুনি, এতো রাতে ওনাকে ফোন করবো না। আর কি বা বলবো? কোয়েলদের কথা জিজ্ঞেসটা না হয় পরেই করবো। কথাটা ভেবে হেডফোনটা হাতে নিতেই ফোনের আলো জ্বলে উঠলো। স্ক্রিনে ওনার নাম ভেসে উঠছে, ভাইব্রেশনে রাখায় কোনো আওয়াজ হয়নি। আমি কোনো কিছু না ভেবেই ফোনটা রিসিভ করে নিলাম। রিসিভ করার পর অপেক্ষা করতে লাগলাম ওনার কিছু বলার কিন্তু ওদিক থেকেও কোনো রকম কোনো কথা নেই। আমি ধৈর্য হারিয়ে ফোনটা রাখতে নিলেই উনি ওপাশ থেকে বললেন,

‘ঘুমাওনি?’

‘না। ঘুম আসছিলো না।’

‘আচ্ছা।’

‘আপনি কেন ঘুমাননি?’

‘ঘুম আসছিলো না আমারও।’

‘আচ্ছা।’

আবার নীরব হয়ে রইলাম দুজন। এবার আমি নীরবতা ভেঙে বললাম,

‘রাজদা আপনার সাথে রয়েছে?’

‘হ্যাঁ, একই রুমে আছি দুই বন্ধু। ঘুমিয়ে পরেছে ও তাই আমি ব্যালকনিতে আছি।’

‘ঠিক আছেন উনি?’

‘হ্যাঁ, ঠিকই আছে। কোয়েল ঠিক আছে তো?’

‘হ্যাঁ, অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছে।’

‘ওর কথা বাদ দাও। কুম্ভকর্ণ এখনকার যুগে থাকলে ওকেই বিয়ে করতো আর নিজের পাটরানী বানাতো। কুম্ভ রাশি হলে যে মানুষ এমন ঘুমায় তা ওকে না দেখলে জানতে পারতাম না।’

[তোর বররে কিন্তু আমি মাইরা দিমু সুমি বেবি।😒 আমারে এসব কি কইতাসে? ঘুমাচ্ছি বলে রিপ্লাইটা দিতে পারলাম না। তুই দে আমার হয়ে।😗]

‘দেখুন, ঘুম নিয়ে এরকম বলবেন না। ঘুম হচ্ছে গিয়ে স্বাস্থ্যের পক্ষে অনেক ভালো।’

‘ওহ, তুমিও তাহলে ঘুমেরই দলে?’

‘আজ্ঞে।’

দুজনেই হেসে উঠলাম। এভাবেই গল্প চলতে লাগলো আমাদের। গল্প করতে করতে কখন যে চোখ লেগে গেছে টেরই পাইনি। সকালবেলা ঘুম ভাঙতেই দেখি ফোন কানের কাছে রয়েছে আর ওনার কলটাও কেটে গেছে অনেক আগে। আমি তাড়াতাড়ি উঠে ড্রেস বার করলাম কারণ কোয়েল ওয়াশরুমে। কোয়েল বের হলে আমি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিয়ে বের হয়ে যাই ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে