একদিন তুমিও ভালোবাসবে পর্ব-২২+২৩+২৪

0
1938

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~২২||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

সন্ধ্যায়,

আদিত্য বাংলোর বাগানে বসে আছে একা একা। মাঝেমধ্যেই গাল মুছছে হাত দিয়ে কারণ, কারণ আদিত্য কাঁদছে। হ্যাঁ, আজ মৌমিতার কথাগুলো তার একটু বেশিই খারাপ লেগেছে। মৌমিতার কিছু কথায় যেমন রাগ হচ্ছে তার থেকে বেশিরভাগ কথায় সে কষ্ট পাচ্ছে। আদিত্য কোনোদিনও খুব না কষ্ট পেলে কাঁদে না, আজ পর্যন্ত নিজের বাবার ব্যবহার ছাড়া কাওর ব্যবহারে সে কাঁদেনি। এমন সময় কেউ একজন আদিত্যের কাঁধে হাত দেয়। আদিত্য পাশ ফিরতেই অবাক হয়ে বলে ওঠে,

‘তুই এখানে?’

‘কেন? কাকে আশা করেছিলি?’

আদিত্য পাশ ফিরে দেখে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকারেও চিনতে অসুবিধা হয়নি আদিত্যের ছেলেটিকে। ছেলেটি আদিত্যের পাশে বসতে নিলে আদিত্য উঠে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে যার ফলে ছেলেটি একটু অবাক হয়ে যায়। ছেলেটি আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে বলে,

‘কি হয়েছে ভাই? তোকে আপসেট লাগছে।’

‘রাজ! আমি ঠিক নেই। একদম ঠিক নেই।’

রাজ, একটু অবাক হলেও ও আদিত্যকে কিছুক্ষণ ধরে রেখে তারপর সোজা করে জিজ্ঞেস করলো,

‘আমি কি সেই আদিত্যকে দেখছি যে কি না অলওয়েজ স্ট্রং থাকতো। কোনকিছুই তাকে ভাঙতে পারতো না এটলিস্ট বাইরে থেকে তো না। আজ এমন কি হলো যাতে তুই ঠিক নেই? কি এমন হয়ে গেলো আমি না থাকায়?’

রাজের কথা শুনে জানো হুঁশ এলো আদিত্যের। আদিত্য নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে রাজকে বললো,

‘না, নাহ। তেমন কিছুই না। আমি ঠিক আছি। তুই বল, কেমন আছিস এখন? ভুলেই তো গেছিস আমাকে।’

আদিত্যের কথা এড়ানোর ধরণ দেখে রাজ হেসে বললো,

‘তুই আমাকে লুকানোর চেষ্টা করছিস?’

রাজের কথায় আদিত্য বেঞ্চে বসে পড়ে ধপ করে, দু-হাত দিয়ে মুখ ঢেকে। রাজ এবার পুরোপুরি শিওর হয়ে গেলো আদিত্যের কিছু একটা তো হয়েছে। রাজ মনে মনে ভাবলো,

‘আদি এতটা আপসেট? এতটা ওয়ারিড? কিন্তু কি নিয়ে? কিছু না, বেশ বড়ো কিছুই হয়েছে।’

রাজ আদিত্যকে টেনে তুলে দাঁড় করালো আর বললো,

‘ভিতরে চল। আমি সবটা শুনতে চাই।’

৩৯.
‘কাজটা কি ঠিক হলো মৌ?’

কোয়েলের প্রশ্নটা শুনে কোনো উত্তর দিলাম না। আজকে আদিত্যের সাথে আমি একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। এতটা করা ঠিক হয়নি তার উপর ওনার শেষের কথাগুলো ভুলতে পারছি না।

‘দেখ মৌ, আমি যা জানি আদিত্যদা কখনও কাওর নামে মিথ্যে কথা বলে না। আর, অঙ্কিতও আমাকে বলেছিলো রণিত ছেলেটা খুব একটা সুবিধার না। ও পলিটিশিয়ানের ছেলে।’

‘হোয়াট? তুই এটা এখন আমাকে বলছিস? আগে কেন বলিসনি?’

আমি রেগে কথাটা কোয়েলকে জিজ্ঞেস করলে কোয়েল চুপ করে যায়। আমার মাথা আরো গরম হয়ে গেলো ব্যাপারটা দেখে।

‘কি হলো, বলবি কিছু?’

‘অঙ্কিত তোকে ভালোবাসে মৌ!’

‘কি? কি বলছিস এসব?’

‘ঠিকই বলছি। ও তোকে ভালোবাসে তাই তোর সাথে রণিতকে একদমই সহ্য করতে পারে না। এই কারণেই আমি ভেবেছিলাম হয়তো তোকে রণিতের থেকে দূরে রাখার জন্য অঙ্কিত মিথ্যে বলছে কিন্তু এখন যখন আদিত্যদাও এটাই বললো তখন আমি মানতে বাধ্য হলাম।’

কোয়েলের কথা শুনে আমার মাথায় হাত পরে গেলো। আমি আন্দাজ করেছিলাম অঙ্কিতের ব্যাপারটা কিন্তু এটা যে সত্যি হবে আমি ভাবিনি। এখন? এখন কি করবো আমি?

‘কি রে? কি ভাবছিস?’

‘কি করবো এখন?’

‘কি আবার করবি? কিছুই না। জাস্ট মজা দেখ।’

আমি কোয়েলের কথা শুনে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

‘মজা দেখবো মানে?’

‘(হেসে) মানে এটাই যে আদিত্যদা নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে তাও আবার সেটা নিজে থেকেই। তাই জন্যেই তো ও বললো যে, “সবটা নতুন করে শুরু করতে চায়।” তুই পুরোনো কথাগুলো, ওর ভুলগুলো একের পর এক মনে করিয়ে দিয়ে ওকে নিজের কাছে নিজেকেই অপরাধী বানিয়ে দিয়েছিস। এখন হয়তো ও আরো বেশি করে নিজের ভুলগুলো শোধরানোর চেষ্টা করবে।’

‘এই তো বললি কাজটা ঠিক করিনি। তাহলে এখন সাপোর্ট করছিস যে?’

কোয়েল একটা বড় নিশ্বাস ছেড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর বললো,

‘তুই যেই কষ্টটা পেয়েছিস সেটা কোনোদিনই ভোলবার নয় জানিস তো? তাই আদিত্যদাকে একটু তো কষ্ট সহ্য করতেই হবে। ও যেইরকম ব্যবহারটা তোর সাথে করেছিলো ফুলশয্যার রাতে, আজ ও সেইরকম একটা ব্যবহার তোর কাছ থেকে পেয়েছে। তুই নিজেকে এতটা খারাপ ভাবিস না।’

‘তুই ভাব সেদিন আমি নিজে থেকে ওনাকে বললাম তারপর আমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলো। ওনার চোখের সামনে রণিত আমাকে কোলে তুলে নিয়ে এলো, অঙ্কিত ওভাবে আমাকে ধরে ছিলো তা দেখার পরেও উনি কিছুই বললেন না। আমি যখন বললাম আমাকে ধরতে তখন ধরলেন আর আজ এসেছিলেন আমার উপর অধিকারবোধ দেখাতে। কার না মাথাটা গরম হয় বল তো?’

কোয়েল আমার কাঁধে হাত রেখে বললো,

‘আদিত্যদা যেহেতু কোনোদিন বিয়ের কনসেপ্ট মানেনি তাই ওর তোর প্রতি এই অধিকারবোধ, জেলাসি, অনুভূতি আর ভালোবাসা সব কিছু বুঝতেই একটু সময় লাগবে। হ্যাঁ, এখন এমন একজন যদি কেউ আসে, যে আদিত্যদাকে বোঝাবে এসব তাহলে অতো বেশি কষ্ট করতে হবে না।’

‘ভালোবাসা? হাসাস না। উনি আমাকে কোনোদিনই ভালোবাসবেন না। আর না আমি বাসতে পারবো।’

‘হায় রে, ভালোবেসে বসে আছে আবার বলছে ভালোবাসতে পারবে না। আদিত্যদার মতো এরেও যে বোঝাতে হবে এটা তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। কোই নাহি, আদিত্যদা আগে বুঝুক তারপর ও নিজেই ওর বউকে বুঝিয়ে দেবে।’

আমি কোয়েলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম নিজে নিজে কিসব বিড়বিড় করে চলেছে। আমি ওর বাহুতে হালকা একটা চাপর মেরে বললাম,

‘কি বিড়বিড় করছিস তুই?’

‘ক..কি..কিছু না। চল, ম্যামের পড়া রেডি করতে হবে।’

‘আজব।’

অন্যদিকে,

‘এতো কিছু হয়ে গেছে আর তুই আমাকে কিছু জানাসনি আদি?’

আদিত্যের সব কথা শুনে রাজ রেগে গেলে আদিত্য অভিমানের সুরে বললো,

‘তুই’ই তো কোনো যোগাযোগ রাখিসনি।’

রাজ পারে না আদিত্যের মাথাটা ফাটিয়ে দিতে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,

‘কেন রে হারামজাদা? তোর কাছে আমার কন্টাক্ট নাম্বার ছিলো না? আমি করিনি তাই তুইও করিসনি? আরে বাবা আমি তো আসতাম এক্সাম দিতে। এমন তো না যে আমার তোর সাথে ঝগড়া হয়েছে। আলাদাই অভিমান করে বসে আছিস তুই।’

রাজ আদিত্যের পাশে চুপ করে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ বসে থাকার পরেও যখন দেখলো আদিত্যের কোনো রিয়াকশন নেই তখন পাশে তাকাতেই দেখলো আদিত্য চুপ করে বসে আছে। রাজ আদিত্যের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর সামনে হাঁটু ভাঁজ করে বসে বললো,

‘আমি আর যাচ্ছি না কোথাও। পারমানেন্ট এসে পড়েছি তোর কাছে।’

আদিত্যের কোনো রিয়াকশন নেই।

‘আরে বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে ভাই। আমি যেই অবস্থায় ছিলাম সেই সময় আমি কাউকে কিছু জানাতে পারিনি।’

‘আমি কেউ হয়ে গেছি। হম, ঠিকই আছে।’

‘বাপ আমার আমি সেটা বলিনি। তুই কেন এমন করছিস? আমি ফিরে এসেছি তো?’

আদিত্য রেগে উঠে বলতে শুরু করলো,

‘তোর এই ভুল হয়ে গেছে বলায় সবটা ঠিক হয়ে যাবে না রাজ। আমি যেই কষ্টটা পেয়েছি সেটা তুই কমাতে পারবি না। সবাই জানতো তোর আর আমার সম্পর্কটা কি রকম ছিলো। সেই ছোটোবেলা থেকে আমরা একে অপরকে ছাড়া চলিনি, একে অপরকে না বলে কোনো কিছু করিনি হরিহর আত্মা ছিলাম। আর তুই কি করলি? আমাকে না জানিয়ে হুট করে কোথায় একটা চলে গেলি। এখন এসেছিস স্যরি বলতে? আইডিয়া আছে আমি কতটা একা পরে গেছিলাম? খোঁজ রেখেছিস আমার? শুধু কো….

‘আরে ভাই আমার শান্ত হ তুই। আমি বলছি তো আমার মনের অবস্থায় ভালো ছিলো না নাহলে তোকে ছাড়া আমি কাকেই বা বলবো আমার কথা? তুই ছাড়া আমার কে আছে বল? আমি নিজেও তো তোকে ছাড়া একাই ছিলাম। আমার কথা শোনার মতো, ভাবার মতো কেউ ছিলো না ভাই। এখন যখন আমি ফিরে এসেছি তখন প্লিজ ভুল বুঝিসনা আমায়।’

আদিত্যকে থামিয়ে দিয়ে রাজ আদিত্যকে নিজে থেকে জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বললো। আদিত্যও আর কথা না বাড়িয়ে রাজকে জড়িয়ে ধরলে রাজ স্বস্তি পায়। কিছুক্ষণ পর আদিত্যকে ছেড়ে বলে,

‘তোর বউ তো তোকে ভালোই শিক্ষা দিয়েছে।’

‘মানে? কি বলতে চাইছিস?’

‘তুই বুঝিসনি? তুই নিজের মধ্যে নিজের পরিবর্তন বুঝিসনি আদি?’

আদিত্য রাজের কথা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। কিছুই বুঝতে পারছে না সে রাজের কথা। রাজ সেটা বুঝতে পেরে আদিত্যকে বসিয়ে বললো,

‘তুই মৌমিতার সাথে যেটা করেছিস সেটা যে ভুল তুই সেটা বুঝতে পেরেছিল, শুধু এটাই না মৌমিতা যে এটাতে কতটা কষ্ট পেয়েছে সেটা আজ ওর করা ব্যবহারের তুই অনুভব করেছিস। তাই তো আমাকে বললি যে, এখন আমার স্যরি চাওয়ায় তোর পাওয়া কষ্টটা কমবে না। ঠিক যেমন তোর করা আগের ব্যবহারে মৌমিতার কষ্টটা কমবে না তোর এখনকার স্যরিতে।’

আদিত্য চুপ করে রইলো রাজের কথা শুনে। কিছু সময় পর আদিত্য নীরবতা ভেঙে বললো,

‘আমার সাথে যে কি হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। ভার্সিটিতে মৌমিতা আসার প্রথমদিন থেকেই আমি ওকে চেয়েও এভয়েড করতে পারছি না। বারবার মাথায় ঘুরছে জিয়া ওর জন্য কি না কি প্রবলেম ক্রিয়েট করবে, ওকে ফাঁসাবে তখন? তখন কি হবে? আমি চাই’ই না মৌমিতা কোনো প্রবলেম ফেস করুক।’

‘আর? আর কি কি চলছে এখন তোর মাথায়?’

আদিত্য কিছুক্ষণ ইতস্ততবোধ করতে করতে একটা সময় বলেই দেয়,

‘প্রথমে আমার মৌমিতার সাথে অঙ্কিতকে সহ্য হচ্ছিলো না কিন্তু এখন, এখন…

‘এখন রণিতের সাথেও তুই মৌমিতাকে সহ্য করতে পারছিস না। তোর মন চাইছে অঙ্কিত হোক বা রণিত তুই ছাড়া কেউই জানো মৌমিতাকে টাচ তো দূর ওর আশেপাশেও জানো না ঘেঁষে। তাই তো?’

আদিত্য হা করে রাজের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলে রাজ জোরে হেসে ফেলে। আদিত্য বোকার মতো মুখ করে রাজকে জিজ্ঞেস করে,

‘তুই কি করে জানলি?’

রাজ কোনোরকমে নিজের হাসি থামালেও আদিত্যের মুখ দেখে আবার হেসে ফেলে। এতে আদিত্য বিরক্ত হয়ে গেলে রাজ নিজেকে স্বাভাবিক করে। করে বলে,

‘ইউ আর ইন লাভ ব্রো! ইউ আর ফল ইন লাভ উইথ মৌমিতা।’

রাজের কথা শুনে আদিত্যের বিষম লেগে গেলো। রাজ সেটা দেখে হেসে আদিত্যকে জল দিলে আদিত্য সেটা ঢকঢক করে খেয়ে নেয়। তারপর চোখ বড় বড় করে হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করে,

‘কি বললি?’

‘তোর মত অবস্থা আমারও। আমি নিজেই ভেবে পাচ্ছি না তুই, আদিত্য ব্যানার্জী! ভালোবেসে ফেলেছে। মাই গড!’

‘ভাই, কি বলছিস এসব?’

‘দেখ আদি, আমি জানি তুই এসব প্রেম-ভালোবাসা, বিয়েতে বিশ্বাসী নস কিন্তু বিয়ে এমন একটা জিনিস যা সবাইকে বদলে দেয়। তুই মুখে বলেছিস ঠিকই তুই এই বিয়েটা মানিস না কিন্তু তোর মনে মনে এটা আছে যে মৌমিতা তোর বউ। প্রথমত, ঠিক এই জন্যেই তুই চাস না মৌমিতা কোনো প্রবলেম ফেস করুক, মৌমিতাকে কেউ হ্যারাস করুক। এটা তোর মৌমিতার উপর কর্তব্যবোধ। দ্বিতীয়ত, তুই চাস না মৌমিতা অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বলুক, মিশুক। তোর কথা মতো ও চলুক এটা চাইছিস তুই। এটা তোর ওর উপর অধিকারবোধ কারণ তুই জানিস মৌমিতা তোর!’

রাজের “মৌমিতা তোর” কথাটা আদিত্যের বুকে এসে লাগলো। এই দুটো শব্দই জানো ওর মনে দাগ কেটে গেলো। ও নিজের অজান্তেই মনে মনে আওড়াতে লাগলো, “মৌমিতা আমার!” রাজ বুঝলো আদিত্য বুঝতে শুরু করেছে তাই আবারও বলতে শুরু করলো,

‘তোর মাথায় সারাক্ষন মৌমিতার কথা ঘুরছে। যেখানে আজ অবধি তুই কোনো মেয়েকে নিয়ে ভাবিসনি। তুই আমাকে বললি মৌমিতা পায়ে চোট পেয়ে কষ্ট পাওয়ায় তোর কষ্ট হয়েছে। আজ অবধি কোনো মেয়ের কষ্টে তোর কষ্ট হয়েছে আদি? যখন মৌমিতা ডান্স কম্পিটিশনের গ্রীন রুমে বলেছিল ওর পরিবারের জন্য মন খারাপ করছিলো তখনও তোর খারাপ লেগেছিল তাই তুই ওর পরিবারকে নিয়ে চলে এসেছিলি। মৌমিতা যখন জিতেছিলো তখন ওর খুশিতে তুই খুশি হয়েছিলি কিন্তু তার সাথে তোর খারাপও লেগেছিলো কারণ তুই ওর সাথে পারফরম্যান্স করতে পারিসনি। সিরিয়াসলি? আদিত্য ব্যানার্জী কোনো মেয়ের সাথে পারফরম্যান্স করতে না পারার জন্য কষ্ট পেয়েছে? আচ্ছা তোর শরীর খারাপের সময় কেন তুই চাইছিলি মৌমিতা তোর সাথে থাকুক?’

‘আমার ভালো লাগে ও আমার কাছে থাকলে।’

‘এক্সাক্টলি! তোর ভালো লাগে। তুই মৌমিতার সাথে টাইম স্পেন্ড করতে চাস কারণ ও কাছাকাছি থাকলে তোর ভালো লাগে। যেখানে জিয়াকে তুই সহ্যই করতে পারিস না, শুধু জিয়া কেন অন্য কোনো মেয়েকেই তুই সহ্য করতে পারিস না।’

আদিত্যের কাছে একে একে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। যেই প্রশ্নের উত্তর ও এতদিন খুঁজছিলো তা একে একে সব সে পেয়ে গেছে। সে সত্যি রাজের কথা অস্বীকার করতে পারছে না। তবুও রাজকে বললো,

‘তুই ভুল বুঝছিস রাজ। আমি আর ভালোবাসা? না, না আমি ভালোবাসি না। কি বলছিস এসব?’

‘আচ্ছা তুই ভালোবাসিস না? তাহলে কেন মৌমিতার ডিভোর্স দেওয়ার কথায় তোর খারাপ লেগেছে? মৌমিতার বলা প্রত্যেকটা কথায় তোর এতটাই খারাপ লেগেছে যে তোর চোখে জল এসেছে, তুই কেঁদেছিস। অঙ্কিত আর রণিতের সাথে শুধু না মৌমিতা যদি অন্য যেকোনো ছেলের সাথে ক্লোজ হয় তুই সেটা সহ্য করতে পারবি না আদি।’

‘তেমন কিছুই না রাজ। রণিত ভালো না তাই আমি মৌমিতা কে বারণ করেছি।’

‘আর অঙ্কিত?’

‘আগে অঙ্কিতের সাথে কথা ছিল না ত..তাই রাগ ছিলো এখন ক..কোনো প্রবলেম নেই।’

‘আচ্ছা তাই? ঠিক আছে তাহলে মৌমিতার সাথে তোর ডিভোর্স করিয়ে অঙ্কিতের সাথে ওর বিয়ে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দে…

‘রাজ একদম বাড়াবাড়ি করবি না বলে দিলাম। লিমিট ক্রস করছিস তুই।’

আদিত্য রাজের কলার ধরে কথা বললে রাজ কোনো রিয়াক্ট করে না। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। আদিত্য নিজের রিয়াকশন বুঝে সঙ্গে সঙ্গে রাজকে ছেড়ে দিলো। রাজ আদিত্যের কাঁধে হাত রেখে বললো,

‘ভাব একটু এই বিষয়ে। সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে তোর কাছে। আমি জাস্ট তোকে হেল্প করার জন্য পয়েন্টগুলো ক্লিয়ার করে দিলাম। ওকেই?’

রাজ কথাগুলো বলে বেরিয়ে গেলে আদিত্য চিন্তিত হয়ে পড়ে কিন্তু মৌমিতার কথা মনে পড়তেই নিজের অজান্তে ও হাসে। তারপর সেটা বুঝতে পেরেই আদিত্য চুপ করে গেলো আর মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~২৩||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

৪০.
আমি আর কোয়েল ভার্সিটির মাঠে হাঁটছিলাম। তাড়াতাড়িই এসে পড়েছি আজকে ভার্সিটিতে কারণ কোয়েল লাইব্রেরিতে যাবে বইয়ের জন্য। কিন্তু ম্যাডাম না থাকায় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে হঠাৎ একটা হৈ-চৈ শুনতে পেলাম। আমি কোয়েলকে বললাম,

‘ওদিক থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ আসছে না?’

‘হ্যাঁ, আমিও তো সেটাই শুনতে পাচ্ছি। কেউ কি এসেছে নাকি?’

‘ঠিকই তো। ওদিকে তো ভার্সিটির মেইন গেট কিন্তু কে এমন এসেছে যে এতো চিল্লাচিল্লি হচ্ছে।’

‘(হেসে) দেখ তোর কম্পিটিটর এসেছে হয়তো। তুই যেদিন নিউ লুক নিয়ে এসেছিলি সেদিনও এরকম হয়েছিলো।’

‘চুপ কর আর চল।’

‘ধুর খালি ধমক দেয়। রসকসহীন একটা!’

[কি রে সুমি বেবি? তুই রসকসহীন?😂🤣]

আমি আর কোয়েল ভার্সিটির মেইন গেটের দিকে এগিয়ে গেলে দেখতে পাই আদিত্যের গাড়ি গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে। আদিত্য তো বাইক নিয়ে আসে তাহলে আজ গাড়ি নিয়ে এসেছে কেন?

‘আজকে বাইক নিয়ে আসেননি কেন আদিত্য?’

কথাটা কোয়েলকে জিজ্ঞেস করতেই দেখলাম কোয়েল ঘামছে, দেখে মনে হচ্ছে নার্ভাস হয়ে পড়েছে। ওর হাত ধরে আরেকটু এগোতেই দেখলাম দুটো ছেলে দাঁড়িয়ে সবার সাথে কথা বলছে। ওদের মধ্যে একজন তো আদিত্য আরেকজন কে? পিছন ফিরে থাকায় মুখটা দেখতে পাচ্ছি না।

‘এই কোয়েল? তুই চিনিস আদিত্যের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা কে?’

কোয়েল উত্তর না দিলে আমি ওকে একটু ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

‘এই কোয়েল? কি হয়েছে বল তো তোর? এরকম চুপ করে আছিস কেন?’

‘ক..কই? কিছু না। আমার কি হবে?’

‘ওহ, ছেলেটাকে চিনিস?’

‘ন..না। চিনি ন..না।’

কোয়েলের ব্যবহারটা কেমন অস্বাভাবিক লাগছে আমার কাছে। এদিকটায় আসার পর থেকেই কেমন জানো ঘামছে, কথা বলতে পারছে না। আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো আদিত্যের গলার আওয়াজে,

‘সো গাইজ! আমার সাথে এটা কে এইটা জানতেই দাঁড়িয়ে আছো তো তোমরা? দেখে নাও কে…

আদিত্য নিজের দু-হাত আগে করে ছেলেটিকে দেখালে ছেলেটি আদিত্যের হাতে মারে আর বলে,

‘আমি এখানে নতুন না। এমনভাব করছিস জানো আমি কোনো সেলিব্রেটি।’

আদিত্য কোনো উত্তর দেবে তার আগেই আশেপাশের সবাই একসাথে চিৎকার দিয়ে উঠলো,

‘রাজজজ!’

‘দেখ, তুই সেলিব্রেটি।’

আদিত্যের কথায় ছেলেটি অর্থাৎ রাজ হাসলো। হেসে আমাদের দিকে তাকাতেই রাজের হাসি আস্তে আস্তে মলিন হতে শুরু করলো। আমি সেটা দেখে কোয়েলের দিকে তাকাতেই দেখলাম ও এভাবে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে।

‘রাজজ!’

সামনে তাকাতেই দেখলাম জিয়া দৌঁড়ে এসে রাজকে জড়িয়ে ধরলো। ওর জড়িয়ে ধরতেই আদিত্য দু-হাত তুলে এক-কদম অন্যদিকে চেপে এলো আর মিটমিট করে হাসতে লাগলো। এদিকে বেচারা রাজের অবস্থা খারাপ। জিয়া মাথা তুলে রাজকে জিজ্ঞেস করতেই রাজ নিজের মুখ স্বাভাবিক করে নিলো,

‘কেমন আছো তুমি? আর কোথায় ছিলে এতদিন?’

‘আমি ভালো আছি জিয়া। তুমি কেমন আছো?’

‘আমি ভালোই আছি। বললে না তো কোথায় ছিলে?’

‘এখানেই, তার আশেপাশে।’

‘তার আশেপাশে বলতে?’

‘ম..মানে তোমাদের আশেপাশে নাহলে এক্সাম দিতে কীভাবে আসতাম বলো?’

‘আমি খুব খুব খুব হ্যাপি তুমি আসায়। অনেক মিস করছিলাম আমি তোমায়।’

কথাটুকু বলেই জিয়া আবার রাজকে জড়িয়ে ধরলে আদিত্য আবার হেসে উঠলো যা দেখে রাজ পারলে গিলেই ফেলে আদিত্যকে। আদিত্য নিজের হাসি থামিয়ে বললো,

‘তুই সবার সাথে কথা বল। এখানে সবাই তোকে অনেকককক মিসসসস করছিলো। আমি আসছি।’

কথাটা শেষ করেই আদিত্য পালালো একপ্রকার ওখান থেকে। এদিকে রাজ সমানে চেষ্টা করছে জিয়াকে ছাড়ানোর কিন্তু জিয়ার ছাড়ার কোনো নামই নেই। নানান কথা ও বলে চলেছে রাজকে ওর বাহু জড়িয়ে। সেইসময় হুট করেই রাজের ফোনে ফোন আসে হয়তো, তাই ও জিয়াকে বলে,

‘আমার একটা খুব জরুরি কল এসেছে আমি আসছি। পরে কথা বলবো।’

রাজকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও প্রায় পালালো জিয়ার হাত থেকে ছাড়া পেয়ে। আমি তো হেসেই ফেললাম। হাসতে হাসতে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখি কোয়েল নেই।

‘যাহ বাবা! কোয়েল কোথায় গেল? এক্ষুনি তো এখানেই ছিল। উফঃ, এই মেয়েটাও না কখন কি করে বোঝা মুশকিল।’

আমি কোয়েলকে খুঁজতে শুরু করলাম কি আর করার। তখনই হুট করে মনে পড়লো ওর তো লাইব্রেরি যাওয়ার কথা। মনে হয় ওখানেই গেছে। কথাটা মনে পড়তেই লাইব্রেরির দিকে হাঁটা ধরলাম।

অন্যদিকে,

‘এই হারামজাদা! তুই আমাকে ওই শাকচুন্নির হাতে ফেলে পালালি কেন? এই বন্ধুত্ব তোর? ওই ডাকিনি এক্ষুনি আমার প্রাণ নিয়ে নিচ্ছিলো জাপটে ধরে।’

আদিত্য রাজের কথা শুনে হাসতে লাগলো ফোন ধরে। আদিত্যের হাসি শুনে রাজ রেগে বললো,

‘তুই হাসছিস? শোন, ও তোর পিছনে পরেছে ওকে আমার ঘাড়ে ঝোলানোর চেষ্টাও করবি না।’

‘আরে তুই চটছিস কেন? তোকে বাঁচানোর জন্যেই তো ফোনটা করলাম। আমি ওখান থেকে বেরিয়ে না এসে তোকে ফোন না করলে দুজনকেই ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। মেয়েটা পারে বটে!’

‘দাঁড়া না। আছে ওর কপালে।’

‘কি আছে?’

‘সময় হলেই দেখতে পাবি। ওর ছ্যাঁচড়ামি আমি যদি না বার করেছি তো আমার নাম রাজ রয় না। সকলের সামনে কাঁদিয়ে ছাড়বো।’

‘এটা তো আমিও চাই। ওর জন্য মৌ কম কষ্ট পায়নি।’

‘আহা, মৌমিতা থেকে মৌ? মেরি মেহনাত রাঙ লায়ি হেইন লাগত হেইন। তা মৌয়ের আগে “আমার” টাও বসা।’

‘(মুচকি হেসে) প্রিন্সিপালের রুমে যায় জলদি, রাখলাম আমি।’

রাজ ফোন রেখে কিছুক্ষণ আগের কথা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রিন্সিপালের রুমে এগিয়ে গেলো। এদিকে, আদিত্য প্রিন্সিপালের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ফোন হাতে নিয়ে হাসছে আর ভাবছে,

‘সিরিয়াসলি? আই অ্যাম ইন লাভ? আদিত্য ব্যানার্জী ইজ ইন লাভ? আমার তো নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না, মৌকে কিভাবে বিশ্বাস করাবো? ওহ গড!’

আদিত্য মুখ বেজার করে দেয়ালে মাথা ঠেকালো।

‘উহুম, হার মানলে চলবে না। ভালো যখন বেসেছি হাল এতো সহজে ছাড়বো না। শি ইজ মাইন! অনলি মাইন! ওই আমার ফাস্ট লাভ আর ওই লাস্ট। মৌকে ছাড়া যে আমার চলবে না, ওকে যে আমি ভালোবেসে ফেলেছি এটা ওকে বুঝতেই হবে। এট এনি কস্ট ওকে বুঝতে হবে।’

এদিকে,

রাজ নিজের মনে ফোন ঘাটতে ঘাটতে প্রিন্সিপালের রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো সেই সময় ওর পা আটকে গেলো। আস্তে আস্তে নিজের বাঁ দিকে তাকাতেই ওর হার্টবিট ফাস্ট হতে শুরু করলো। রাজ কিছু না ভেবেই ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে দৌঁড়ে লাইব্রেরিতে ঢুকে গেলো।

কোয়েল লাইব্রেরিতে থাকা মইতে দাঁড়িয়ে উপর থেকে একটা বই নামানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু অনেক উপরে থাকায় সেটা হাতের নাগালে পাচ্ছিলো। কোয়েল তাই আরেকটা ধাপ উপরে উঠে দুই-হাত বাড়াতেই বইটা হাতে পেয়ে গেলো কিন্তু হঠাৎ করেই ব্যালেন্স হারিয়ে পরে গেলো। কোয়েলের চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে থাকার কারণ ছিলো সে ব্যাথা পাবে কিন্তু কই? কোনো ব্যাথা তো হচ্ছে না। আর কার স্পর্শ সে অনুভব করছে? ব্যক্তিটির শরীরের সুবাস পেয়ে কোয়েল জানো ইচ্ছা করেই চোখ খুলছে না।

রাজ বাইরে দাঁড়িয়েই দেখতে পেয়েছিলো কোয়েলকে অতো উপরে বই হাতড়াতে। তাই সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসে আর আসতে না আসতেই দেখে কোয়েল আরো উপরে উঠেছে। কোয়েলকে ডাক দিতে যাবে তার আগেই কোয়েল পরে যেতে নিলে রাজ ধরে নেয়। কোয়েল চোখ বুজে থাকায় বেশ ভালোই হয়েছে রাজের। তখন সবার মাঝে জিয়া চলে আসায় কোয়েল সরে যাওয়ায় রাজ ঠিক ভাবে দেখতেই পায়নি কোয়েলকে। রাজ আস্তে আস্তে কোয়েলকে সোজা করে দাঁড় করালেও ওকে ছাড়ে না। কিন্তু সোজা করে দাঁড় করানোর ফলে কোয়েল চোখ খোলে। চোখ খুলতেই রাজের সাথে চোখে চোখ পড়ে যায় কোয়েলের। দুজনেই নির্বাক হয়ে একে অপরকে দেখছে। না রাজ কোয়েলের কোমর ছেড়েছে আর না কোয়েল রাজের কলার।

‘কোয়েল! তুই ঠিক আছিস?’

আমি লাইব্রেরিতে ঢুকতে গিয়ে দেখতে পাই কোয়েল অনেক উপরে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে ডাকবো সেই সময়েই ও পা হরকে পরে যাচ্ছে দেখে সেদিকে এগোতে নিলেই দেখি রাজদা কোয়েলকে ধরে নিয়েছে। আমার গলার আওয়াজ পেয়ে কোয়েল বলতে গেলে এক ঝটকায় রাজের থেকে সরে গেলো। জানো কোনো ঘোর কাটলো।

‘হ..হ্যাঁ। আমি ঠিক আছি। চল ক্লাসের জন্য দেরী হয়ে যাচ্ছে।’

কোয়েল আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে নিলেই আমি ওকে বলি,

‘রাজদা তোকে বাঁচালো, একটা থ্যাংক ইউ তো বল অন্তত।’

‘থ্যাংক ইউ।’

কোয়েল আমার কথা শুনে রাজদার দিকে না ফিরেই থ্যাংক ইউ টা কোনো রকমে বলে আমাকে নিয়ে টানতে টানতে ওখান থেকে চলে এলো। আসার সময় আমি পিছন দিকে ফিরে রাজদার দিকে তাকালে দেখতে পাই রাজদা অসহায় ভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগেও আমি লক্ষ্য করেছি রাজদা কোয়েলের দিকে তাকিয়ে ছিলো আর কোয়েল সরে যাওয়ায় ওকে খুঁজছিলো। ব্যাপার টা কি?

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘
||পর্ব~২৪||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

৪১.
আদিত্য প্রিন্সিপালের ঘরের বাইরে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো চোখ বন্ধ করে সেসময় আদিত্যকে কেউ একটা ধাক্কা দেয়। আদিত্য চমকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কে এসেছে সেটা দেখতে পেয়ে ক্যাবলা হাসলো আর মাথাটা হালকা চুলকে বললো,

‘রাজ তুই? কখন এলি?’

‘প্রথম প্রেমে পড়লে সত্যিই মানুষের এমন দশাই হয় এটা তোকে না দেখলে শিওর হতে পারতাম না।’

‘ই..ইয়ে মানে…

‘কার কথা ভাবছিলি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে? তোর বউয়ের?’

রাজ হেসে কথাটা জিজ্ঞেস করলে আদিত্য হালকা হেসে হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে বলে,

‘ভাবছিলাম ওকে কি ভাবে বলবো আমার মনের কথাটা? ওর সাথে যেই বিহেভটা আমি করেছি সেটা তো ও ডিসার্ভ করতো না। এখনও ও আমার জন্যেই সাফার করছে। জানি না ও আমাকে মেনে নিতে পারবে কি না।’

রাজ আদিত্যকে চিন্তিত দেখে ওর কাঁধে হাত রেখে বললো,

‘তুই একবার যখন বুঝতে পেরেছিস তুই মৌমিতাকে ভালোবাসিস তখন হাল ছাড়িস না। হ্যাঁ, দোষ তোর বেশি বাট তুই সেটা শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করছিস এটা দেখলেও মৌমিতা তোকে ক্ষমা করে দিতে পারে। কিন্তু ভাই, জিয়ার কেসটা? ওটা আমি বলতে পারছি না। জিয়া যেভাবে তোর সাথে চিপকে থাকে সেটা কোনো মেয়েই মেনে নেবে না। কোন স্ত্রী মানতে পারে নিজের স্বামীকে অন্য একটা মেয়ের সাথে? সেখানে তুই তো আবার জিয়াকে নিজের জিএফ বলে রেখে দিয়েছিস।’

‘রাজ তুই ভালো ভাবে জানিস আমি কাউকে বলিনি জিয়া আমার জিএফ। ও নিজেই লোককে বলে বেড়ায় সেখানে আমি কি করতে পারি বল তো? কিন্তু তুই ঠিকই বলছিস, এই বিষয়ে মৌয়ের রাগ করাটা স্বাভাবিক। আমি নিজেই তো ওকে অন্য কোনো ছেলের সাথে সহ্য করতে পারি না।’

রাজ জোরে হেসে ফেললো আদিত্যের কথা শুনে সেই দেখে আদিত্য ভ্রু কুঁচকালে রাজ ওকে বলে,

‘আমি ভাবতেই পারছি না তুই নিজেকে অন্যের জায়গায় রেখে তার অবস্থাটা, অনুভূতিগুলো বোঝার চেষ্টা করছিস। এটাই তো চাই ব্রো! বৌদিকে তো মানতেই হবে এবার। আমাদের এতদিনের নিরামিষ আদিত্য ব্যানার্জীকে কয়েক মাসেই বদলে দিয়েছে।’

‘ঠিক আছে ঠিক আছে, চল চল। দেরী হয়ে যাচ্ছে, এমনিতেই দেরী করে এসেছিস তুই। কোথায় ছিলি?’

রাজ হাসছিলো এতক্ষন কিন্তু আদিত্যের প্রশ্ন শুনে আস্তে আস্তে ওর মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেলো। সামাল দেওয়ার জন্য আমতা আমতা করে বললো,

‘আমি, ওই, ওই আসার পথে ভার্সিটিটা একটু ঘুরে দেখছিলাম। তাই দেরী হলো আর কি।’

‘তুই তো এক্সাম দিতে এসেছিস, তাহলে তোর তো ভার্সিটি ভোলার কথা নয়?’

আদিত্য এভাবে কথাটা ধরে ফেলবে রাজ ভাবতে পারেনি। এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে রাজ বললো,

‘ছাড় না, চল ভিতরে।’

‘রাজ!’

রাজ এগিয়ে যেতে নিলে আদিত্য রাজের কাঁধে হাত রেখে বাঁধা দিলো। ওর দিকে এগিয়ে, পাশে দাঁড়িয়ে বললো,

‘কথা বলেছে….(একটু থেমে) কোয়েল?’

রাজ কেমন জানো নেতিয়ে পড়লো আদিত্যের প্রশ্নে। একটা ব্যর্থতার নিশ্বাস বেরিয়ে আসলো তার ভিতর থেকে। চোখ-মুখ শক্ত করে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলে আদিত্য রাজকে জিজ্ঞেস করে,

‘যার দায়িত্ব আমাকে দিয়ে গেছিলি, প্রতিটা মুহূর্তে যার খবর নিয়েছিস সে কেমন আছে জানতে চাইলি না তো একবারও?’

রাজ অবাক হয়ে আদিত্যের দিকে তাকালে আদিত্য হালকা হাসে। হেসে বলে,

‘তুই কি ভেবেছিস? তুই খবর নিবি অন্যদের থেকে আর আমি টের পাবো না এটা হতে পারে?’

‘কেমন আছে ও?’

ভাঙা গলায় রাজের উত্তর পেলে আদিত্য একটু মজার ছলে বলে,

দেখ, আমার নিজেরও তো প্রাণের ভয় আছে নাকি? তোর প্রাণপাখির খেয়াল না রাখলে তুই তো আমার প্রাণপাখি ফুরুত করে দিতি? তখন আমার বাচ্চা বউটার কি হতো বল?’

‘শালা তোরে তো?’

__’প্রিন্সিপাল ম্যাডাম আপনাদের ডাকছেন।’

রাজ আদিত্যের কলার ধরে ওকে মারতে গেলে প্রিন্সিপালের রাখা স্টাফটি এসে পরে। তাকে দেখে রাজ আদিত্যকে ছেড়ে দিলে আদিত্য জয়ের হাসি হাসে। সেই দেখে রাজ বলে,

‘বেঁচে গেলি। চল, চল। না জানি ইনি আবার কি বলবে?’

‘জিয়ার বাবা যা শিখিয়েছে তাই বলবে, আবার কি?’

‘ওই জন্যেই তো যেতে মন চাইছে না।’

‘কিন্তু যেতে তো হবেই।’

আদিত্য আর রাজ একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলো জানো যুদ্ধে যাচ্ছে। ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখলো প্রিন্সিপাল ম্যাডাম চিন্তিত হয়ে বসে আছেন, ওদের দেখেই উঠে দাঁড়ালেন। রাজের দিকে তাকিয়ে জানো স্বস্তি পেলেন উনি যেটা আদিত্য লক্ষ্য করলো।

‘রাজ, তুমি এইবার রেগুলার আসবে তো?’

রাজ আদিত্যের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে একটু ইতস্তত করে বললো,

‘হ..হ্যাঁ।’

‘কিছু একটা করো তোমরা দুজন মিলে এবার। প্লিজ!’

‘কি হয়েছে ম্যাডাম? পরেশবাবু কি কিছু…

‘হ্যাঁ। উনি ডিরেক্টর হওয়ার পর থেকে উল্টো পাল্টা বিষয়ে আমাদের সাপোর্ট করতে বলছেন। ওনার মেয়ের কাজকর্মের কথা তো ছেড়েই দাও। আদি, তুমি বুঝতে পারছো তো আমি কিসের কথা বলছি?’

‘বুঝতে পারছি ম্যাডাম। আপনি চিন্তা করবেন না।’

প্রিন্সিপাল ম্যাডাম ওদের কাছে এগিয়ে এসে রাজের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘তুমি যে নিজের কাজে এভাবে সাফল্য পাবে, তা সত্যি ভাবিনি আমি। যাক, তোমাকে সাপোর্ট করে আমি ভুল করিনি তাহলে। আরো এগিয়ে যাও, এত কম বয়সে তুমি এত ভালো কাজ করছো ভাবতেই গর্ব হচ্ছে। আদির মতো তুমিও যে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছো এটা জেনে আমি খুব খুশি।’

রাজ প্রিন্সিপাল ম্যাডামের কথা শুনে ভয়ে ভয়ে আদিত্যের দিকে তাকালে দেখে আদিত্য নিরাকার ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এটা দেখে রাজ মনে মনে বললো,

‘ঝড় ওঠার আগের পরিবেশ। এখান থেকে বাইরে বেরিয়ে বাঁচবো কি না সন্দেহ, আপনি আমাকে আরো এগানোর কথা বলছেন?’ শেষ রাজ, তুই শেষ। তোর আর বিয়ের শখ পূরণ হবে না বাদ বাকির কথা তো ছেড়েই দে।’

‘আমার নিজেকে অনেক হেল্পলেস লাগছে বিশ্বাস করো? একজন প্রিন্সিপাল হয়ে আমি কিছুই করতে পারছি না শুধুমাত্র পলিটিক্যাল প্রেসারের জন্য। ওরা এখন রণিতকেও দলে টেনেছে।’

কথাটা শুনে আদিত্য চমকে উঠলো। ও মনে মনে এইটাই ভেবেছিলো যা সত্যি দাঁড়ালো।

‘যাই হোক, শীত এসে গেছে। আদি, তুমি তো জানোই প্রত্যেকবার আমাদের ভার্সিটি থেকে ট্যুরে নিয়ে যাওয়া হয়। এইবারও হবে আর তুমি যেহেতু ইউনিয়ন লিডার প্লাস লাস্ট ইয়ার তাই দায়িত্ব তোমার উপর। সাথে পার্টনার হিসাবে রাজকেও নিয়ে নিতে পারো। সমস্যা নেই।’

‘তার আগেই অনেক বড়ো সমস্যার সমাধান করবো ম্যাডাম। আসছি।’

আদিত্য কথাটুকু বলেই বেরিয়ে গেলো প্রিন্সিপালের রুম দিয়ে। রাজ তো বোকার মতো তাকিয়ে আছে আদিত্যের যাওয়ার দিকে। কিছুক্ষণ পর ওর নিজেকে নিয়ে ভয় লাগতে শুরু হলে, প্রিন্সিপাল ম্যাডাম কে বললো,

‘ম্যাডাম আপনি আদির সামনে কথাগুলো না বললেই পারতেন। ও তো..

‘আমি ইচ্ছা করেই বলেছি রাজ। তোমরা দুজন একে অপরকে না জানিয়ে কিচ্ছু করোনা সেখানে তোমাদের সাকসেসের বিষয়টা লুকিয়ে গেছো? যত বেশিদিন এটা লুকিয়ে রাখবে তত খারাপ হবে তোমাদের সম্পর্ক সবটা জানার পর, যেটা আমি চাই না। যাও, সবটা মিটিয়ে নাও নিজেদের মধ্যে। তোমাদের দুজনকে এক হয়ে ন্যায়ের জন্য লড়তে হবে, কেউই একা পারবে না।’

রাজ প্রিন্সিপালের কথায় হেসে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। বেরিয়ে ভাবতে লাগলো আদিত্য কোথায় যেতে পারে রাগের মাথায়।

অন্যদিকে,

‘এভাবে ওখান থেকে টেনে নিয়ে এলি কেন আমাকে? আর এরমভাবে কে থ্যাংক ইউ বলে?’

‘তো কীভাবে থ্যাংক ইউ বলতাম? ফুল-মালা দিয়ে পুজো করে? ওনাকে কে বলেছিলো আমাকে বাঁচাতে? আমি পড়ে গেলে পড়ে যেতাম তাতে ওনার কি? যত্তসব!’

আমি কোয়েলের ব্যবহারে অবাক হয়ে গেলাম। এরকম ব্যবহার করছে কেন হঠাৎ করে? আমি কোয়েলের কাঁধে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

‘কি হয়েছে তোর? সামান্য বিষয়ে এতো রিয়াক্ট কেন করছিস?’

আমার কথা শুনে কোয়েল জানো হুঁশে ফিরলো। কোয়েল কিছু বলবে তার আগেই আমি নিজের হাতের উপর কাওর হাতের স্পর্শ পেলাম। পাশে তাকাতেই দেখলেন রণিত আমার হাতটা ধরে দাঁড়িয়েছে।

‘তুই এখানে?’

আমি হাতটা ছাড়াতে যাবো তখনই রণিত আমার হাতটা নিজের বুকের সামনে ধরলো আর আমি অবাক হয়ে গেলাম। কোয়েলের দিকে তাকাতেই দেখলাম ও’ও আমার মতো অবাক হয়ে আছে।

‘কি করছিস রণিত? সবাই দেখছে তো নাকি?’

‘দেখুক, আই ডোন্ট কেয়ার।’

‘রণিত হাতটা ছাড় আমার, প্লিজ!’

আমি রণিতের থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু ও ততো বেশি করে আমার হাত শক্ত করে ধরছে। মুহূর্তেই ভার্সিটির স্টুডেন্ট যারা আশেপাশে ছিলো তাঁরা সবাই তাকিয়ে আছে। মাথাটা এতো গরম হচ্ছে কিন্তু কিছু করতেও পারছি না। এরমধ্যেই রণিত হুট করে আমার আরেক হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললো,

‘আই লাভ ইউ মৌমিতা! আই রিয়েলি রিয়েলি লাভ ইউ। প্রথম দেখাতেই আমি তোর প্রেমে পরে গেছি, যাকে বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইড। প্লিজ, আমাকে ফিরিয়ে দিস না। আমি পারবো না তোকে ছাড়া থাকতে। ট্রাস্ট মি, আমি তোর মনের মতো হয়ে থাকবো। প্লিজ!’

আমি বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি রণিতের কথাগুলো শুনে। কি বলবো বা কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছে না। কিছু ভেবে না পেয়ে আশেপাশে তাকাতেই আমার নজর একজনের উপর স্থির হয়ে গেলো।

‘আদিত্য! উনি কি? উনি কি রণিতের কথাগুলো শুনে ফেলেছেন? মনে হয় তাই, ওইজন্যেই ওনার মুখটা এরকম ফ্যাকাশে লাগছে কিন্তু আমি কি করতে পারি? আমি তো কথা বলা কমিয়ে দুরত্ব বাড়িয়ে নিতেই চেয়েছিলাম ওনার কথা শুনে কিন্তু তার আগে যে রণিত এমন করবো কি করে বুঝবো?’

আদিত্য ওখান থেকে চলে গেলেন আমার দিকে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে। ওনার চোখটা কেমন জানো ছলছল করেছিল। না, না। এটা একদম ঠিক হলো না। কালকেই উনি বারণ করলেন রণিতের সাথে মিশতে আর আজকেই এমন? যতই হোক, আমি একজন বিবাহিত মেয়ে। এভাবে একজন পর পুরুষ আমাকে স্পর্শ….

কথাটা ভাবতেই আমার মধ্যে কি হলো জানি না। আমি জোর করে রণিতের হাত থেকে হাতটা ছাড়াতে চাইলেও রণিত না ছাড়লে ওকে বলি,

‘হাত না ছাড়লে উত্তর পাবি না।’

কথাটা শুনে রণিত আমার হাত ছেড়ে দিলে আমি সজোরে একটা চড় বসিয়ে দেই ওর গালে সবার সামনে। ও চুপচাপ মাথা নিচু করে থাকলে আমি বলি,

‘সাহস কি করে হলো তোর আমাকে এভাবে টাচ করার? আমি তোকে রাইট দিয়েছি কোনোদিন আমাকে টাচ করার? আগের দিন কোলে তুলেছিলি আমাকে হেল্প করার জন্য তাই কিছু বলিনি বলে ভেবে নিলি কখনো কিছু বলবো না? আজকের পর থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করবি না। নাহলে এর পরিণাম ভালো হবে না।’

কথাগুলো বলে আদিত্য যেদিকে গেছেন সেদিকে চলে এলাম। কোয়েল আমার পিছনে আসলে ওকে বললাম,

‘আদিত্য এদিকেই এসেছিলেন। তুই একটু ওদিকটায় খোঁজ।’

‘আদিত্যদা দেখেছে পুরো বিষয়টা?’

‘তাই তো মনে হচ্ছে।’

কোয়েল অন্যদিকে চলে গেলে আমি খুঁজতে থাকি কিন্তু আদিত্য কোথাও নেই। কোথায় চলে গেলেন এক মুহূর্তের মধ্যে?

__’আদি কে খুঁজছেন?’

পিছন থেকে একটি ছেলের আওয়াজ পেয়ে ঘুরলাম তার দিকে। রাজ! হ্যাঁ, উনি তো জানতেই পারেন আদিত্যের কথা।

‘হ্যাঁ। আপনি জানেন উনি কোথায়?’

‘নাহ। যতদূর জানি রেগে আছে, কিন্তু কোথায় আছে আর ঠিক কি বিষয়ে রেগে আছে বুঝতে পারছি না।’

‘আমার জন্যেই রেগে আছেন।’

‘কেন? আপনি কি করেছেন….বৌদি!’

আমি চমকে উঠলাম রাজের কথায়। ওনার দিকে অবাক ভাবে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকালে উনি হেসে ফেলেন আর বলেন,

‘চিন্তা করবেন না আমি আদিত্যের বেস্ট ফ্রেন্ড টি পুরো বিষয়টাই জানি। কাওকে বলবো না আমি। এখানে কেউ নেই তাই বৌদি বলে ডাকলাম নাহলে মৌমিতাই বলতাম।’

‘তাহলে আপনি না বলে তুমি বলবেন। আপনার থেকে বয়সে ছোটো আমি।’

‘যো হুকুম, বৌদিমনি।’

‘(হালকা হেসে) আচ্ছা আপনি দেখেছেন ওনাকে?’

‘নাহ। রেগে আছে কিন্তু তুমি কি কিছু করেছ? আমি যতটুকু জানি আমার জন্য রেগে আছে।’

আমি রাজদাকে সবটা বললাম কিছুক্ষণ আগে যা যা ঘটেছে। সব শুনে উনি একটা ঢোঁক গিলে বললেন,

‘তোমার নাম্বারটা দাও। আমি তোমাকে সবটা জানাবো যদি আস্ত থাকি। আজকে বোম্ব ব্লাস্ট হবে একটা।’

‘এ্যা?’

‘হ্যাঁ! তাড়াতাড়ি করো। ও যদি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় সমস্যা হয়ে যাবে। এখন তুমি ওর কাছে যেও না, আমিই যাচ্ছি।’

আমি আমার নাম্বারটা রাজদাকে দিয়ে দিলে রাজদা ছুটে বেরিয়ে যায় ভার্সিটি থেকে। এদিকে আমার তো আগের ঘটনার কথা ভেবে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আমি একা দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় আমার কাঁধে হাতের স্পর্শ পেলাম…………….

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে