একদিন তুমিও ভালোবাসবে পর্ব-২৮+২৯+৩০

0
1767

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~২৮||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

৪৪.
আমি আর কোয়েল ভার্সিটিতে এসে ক্লাস শেষ করলাম কিন্তু একবারও আদিত্য বা রাজদাকে কোথাও দেখলাম না। এদিকে অঙ্কিতও দু-তিন দিন ধরে ভার্সিটি আসছে না। ব্যাপারটা কি?

মৌমিতা: এই কোয়েল?’

কোয়েল: হ্যাঁ, বল?’

মৌমিতা: অঙ্কিতের কি খবর রে?’

কোয়েল: আব, জানি না রে ঠিক। কথা হচ্ছে না।’

মৌমিতা: কোয়েল? কিছু লুকাচ্ছিস আমার থেকে তুই?’

কোয়েল: ল..লুকাবো কেন? আর কি বা লুকাবো বল তো। আমি সত্যি জানি না যে অঙ্কিত কোথায়। শুধু অঙ্কিত? আদিত্যদা আর র.. (একটু থেমে) রাজকেও কোথাও দেখছি না।’

মৌমিতা: তুইও খেয়াল করেছিস ব্যাপারটা?’

কোয়েল: হ্যাঁ, করবো না কেন? বুঝতে পারছি না হুট করে কি হলো।’

কোয়েলের কথা শুনে আমি একটু কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। কিছু দূর হাঁটার পর কোয়েলকে সন্দেহজনক ভাবে বললাম,

মৌমিতা: আমার না একটা কথা মনে হচ্ছে জানিস তো?’

কোয়েল: কি কথা?

মৌমিতা: আদিত্য আর রাজদা কিছু একটা করতে চলেছে জানিস তো?

কোয়েল: মানে? ওরা আবার কি করবে? (অবাক হয়ে)

মৌমিতা: যেদিন থেকে রাজদা এসেছে সেদিন থেকে ওনার হাব-ভাব বদলে গেছে।

কোয়েল: (হেসে) আরে তোকে তো আমি বললাম ওরা হরিহর আত্মা। দুজন দুজনের শক্তি ওরা। এতদিন রাজ না থাকায় আদিত্যদা তেমন কিছুই বলতো না কাওকে, কাজে করে দেখাতো। বেশিরভাগ সময় নিজের বই নিয়ে বসে থাকতো কাওর সাথে তেমন কথা বলতো না। আর এখন? সারাক্ষনই রাজের সাথে বকবক করতে থাকবে।

মৌমিতা: এক্সাক্টলি! এটাই তো করা উচিত ওনার কিন্তু উনি সেটা করছেন না। আর এখানেই আমার সন্দেহ হচ্ছে।

কোয়েল: ধুর! আমি কিছু বুঝতে পারছি না তুই আমাকে খুলে বল।

মৌমিতা: আমি রাজদা আসার পর থেকেই ওনাকে ফলো করছি। রণিত যেদিন আমাকে প্রপোজ করলো সেদিনও উনি চুপ ছিলেন। চুপ করে বেরিয়ে গেছিলেন ওখান থেকে আর তারপর…

কোয়েল: তারপর?

মৌমিতা: সেদিন ওনার হাতের ব্যান্ডেজের কারণ কি জানিস?

কোয়েল: আদিত্যদা রণিতকে মেরেছে? আর এই জন্যেই ওকে দেখা যাচ্ছে না? (হাইপার হয়ে)

মৌমিতা: চুপ, চুপ, চুপ! এতো জোরে বলিস না। কেউ শুনে নিলে খারাপ হবে।

আমার কথা শুনে কোয়েল শান্ত হয়ে কপালে হাত দিয়ে বললো,

কোয়েল: মাই গড! তুই এটা আমাকে আগে কেন বলিসনি?

মৌমিতা: বেকার চিন্তা করবি তাই বলিনি।

কোয়েল: মৌ! তোর জন্য আদিত্যদা ফাস্ট টাইম কোনো ছেলের গায়ে হাত তুললো। আজ অবধি ও কোনোদিনও এসব মারপিটে নিজের নাম জড়ায়নি। সব থেকে বড়ো কথা একটা মেয়ের জন্য আদিত্যদা এতোটা ফেরোসিয়াস হয়ে উঠেছে। আমি তোকে বলছি আদিত্যদা সত্যি তোকে ভালোবাসে। সহ্য করতে পারছে না ও তোকে অন্যকাওর সাথে।

মৌমিতা: উফ, কোয়েল তুইও না। কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে গেলি বল তো? (ব্লাশ করে)

কোয়েল: উহুম উহুম, ব্লাশও করা হচ্ছে।

মৌমিতা: ধুর! যেটা বলছিলাম সেটা শোন।

কোয়েল: হম, বল।

মৌমিতা: এই কদিন আমি যতবার ওদেরকে কথা বলতে দেখেছি ততবারই আদিত্য রাজদা কে কিছু বলছিলেন আর ওনার মুখে রাগ স্পষ্ট ছিলো।

কোয়েল: ওহ এই ব্যাপার?

মৌমিতা: (অবাক হয়ে) এই ব্যাপার মানে? তোর অবাক লাগলো না ব্যাপারটা?

কোয়েল: হম, লেগেছে তো। তুই ঠিকই বলেছিস, ওদের মধ্যে কোনো একটা কিছু তো চলছে। কিছু একতা ঘোট ওরা পাকাচ্ছে কিন্তু যা করবে সব ভেবে চিন্তেই করবে আমার মনে হয়।

মৌমিতা: আমার কেন জানি না খুব টেনশন হচ্ছে। (ভয় ভয়ে)

কোয়েল: বুঝতে পারছি। আচ্ছা চল খোঁজ করে দেখি ওর দুজন এসেছে কি না। না আসলে না হয় আমি ফোন করবো আদিত্যদাকে, ওকে?

মৌমিতা: হ্যাঁ, হ্যাঁ। এটাই ভালো হবে।

আমি আর কোয়েল নিজেদের জায়গা থেকে একটু এগোতেই পিছন থেকে আওয়াজ এলো,

__কোথায় যাচ্ছিস? আদিত্যকে খুঁজতে?

আমরা পিছন ফিরে দেখলাম জিয়া দুহাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওর দিকে তাকালেই ও বাঁকা হাসে, সেই দেখে কোয়েল কিছু বলতে নিলে আমি কোয়েলকে বাঁধা দেই। এখন ওকে কিছু না বলাই ভালো, হয়তো ও খোঁজ দিতে পারবে আদিত্যের।

মৌমিতা: তোর কেন মনে হলো আমি আদিত্যকে খুঁজতে যাচ্ছি?

জিয়া: (হেসে) সারাক্ষন তো ওর পিছনেই ঘুরঘুর করিস।

মৌমিতা: (হেসে) হাসালি জিয়া। আমি সারাক্ষণ ওর পিছনে ঘুরঘুর করলে তোর কি হবে? ওটা তো তার চাকরি। আমারই চাকরির দরকার নেই রে।

আমার কথা শুনে কোয়েল মুখ টিপে হাসলে জিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

জিয়া: আমি আদিত্যের পিছনে ঘুরি না। আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি তাই একসাথে থাকি। আর এই জন্য আমি জানি ও কোথায় আছে, কি করছে। ওর সব খবর ও আমাকেই বলে কারণ আমিই ওর একমাত্র নিজের। তাই বেকার তুই ওর পিছনে পরে থাকিসনা কোনো লাভ হবে না। তোর মতো থার্ড ক্লাস মেয়েকে ও ডিসার্ভ করে না।

কোয়েল: আর তুই আদিত্যদাকে ডিসার্ভ করিস না। চল মৌ!

কোয়েল আমাকে টানতে টানতে ওখান থেকে নিয়ে এলো আর রাগে গজগজ করতে থাকলো একা একা।

কোয়েল: কি মনে করে নিজেকে? গায়ে পড়া ফালতু মেয়ে একটা। সবসময় ছেলে দেখলেই গায়ে ঢলে পড়তে হবে। নেকিমাসি একটা তার আবার এত বড়ো বড়ো ডায়লগ। যেই ছেলে দেখতে সুন্দর, টাকা আছে সেই ছেলের গায়ে গিয়েই ঢলে পড়তে হবে। যত্তসব!

মৌমিতা: (আমতা আমতা করে) ইয়ে মানে, এটা কি সেদিন রাজদাকে জড়িয়ে ধরেছিলো সেটার রাগ?

আমার কথা শুনে কোয়েল আমার দিকে এমন একটা রাগী লুক দিলো যে আমি ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করে দাঁড়ালাম।

কোয়েল: ধুর, থাকবোই না আমি এখন এখানে।

কোয়েল গটগট করে চলে গেলে আমি হেসে ফেলি কিন্তু আবার ওনার কথা মনে পড়তেই চিন্তিত হয়ে পড়ি। সেদিন কেমন জানো রাগ নিয়ে প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডামের কেবিনে ঢুকলেন। কি করতে চলেছেন উনি?

কয়েকদিন পর,

কোয়েল: খবর পেয়েছিস কোনো?

মৌমিতা: উহুম। খোঁজ পেলে কি আর এতো টেনশন করতাম?

কোয়েল: কোথায় যেতে পারে বল তো দুজন তাও আবার এরমভাবে হুট করে? কিছুই তো বুঝতে পারছিনা।

মৌমিতা: ফোন করেছিলি?

কোয়েল: ধরেনি আর কল ব্যাকও করেনি। তুই কি রাজকে ফোন করেছিলি?

মৌমিতা: হ্যাঁ। একই অবস্থা। না রিসিভ করেছে আর না কল ব্যাক করেছে। কি যে করছে কিছুই বুঝতে পারছি না।

কোয়েল: এই মৌ, এই? ওটা আদিত্যদার বাবা না?

আমি কোয়েলের কথা শুনে ভার্সিটির গেটের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বাবা গাড়ি থেকে নামছেন। উনি এখানে কেন? আগেরদিন মায়ের সাথে কথা বললাম কই আমাকে তো বললেন না বাবা আসছেন? কি হচ্ছে কিছুই তো বুঝতে পারছি না।

কোয়েল: এইবার আমারও টেনশন হচ্ছে মৌ। হঠাৎ জ…আঙ্কেল এখানে কেন বল তো?

মৌমিতা: চল তো একটু এগিয়ে দেখি।

কোয়েল আর আমি ওনার পিছনে এগোতেই দেখি আদিত্য আর রাজদা দাঁড়িয়ে আছেন। বাবা গিয়ে প্রথমে আদিত্যকে জরিয়ে ধরলেন তারপর রাজকে জড়িয়ে ধরলেন। ভার্সিটির অনেকেই জড়ো হয়ে গেছে। হঠাৎ করেই…….

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~২৯||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

৪৫.
কোয়েল আর আমি ওনার পিছনে এগোতেই দেখি আদিত্য আর রাজদা দাঁড়িয়ে আছেন। বাবা গিয়ে প্রথমে আদিত্যকে জরিয়ে ধরলেন তারপর রাজকে জড়িয়ে ধরলেন। ভার্সিটির অনেকেই জড়ো হয়ে গেছে। হঠাৎ করেই….পিছন থেকে একটা জোরে চিৎকার ভেসে আসে,

__কি হচ্ছে টা কি এসব?

কোয়েল: এটা তো জিয়ার বাবা।

মৌমিতা: আমি কোনদিন ওনাকে দেখিনি। তোকে বলেছিলাম না কিছু একটা হতে চলেছে? দেখ।

কোয়েল: কি যে করেছে এরা কে জানে। আদিত্যদা মনে হয়…

পরেশবাবু (জিয়ার বাবা): আদিত্য! তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। তুমি আমাকে জিজ্ঞেস না করে, আমার পারমিশন না নিয়ে কিভাবে এই কাজটা করতে পারো? তোমার কোনো ধারণা আছে এর ফলে তোমার কি শাস্তি হতে পারে?

আদিত্য: আপনি আমার শাস্তির কথা না ভেবে বরং নিজের শাস্তির কথা ভাবুন। আমাকে যদি কেউ শাস্তি দিতে চায় সেটা আপনি কিন্তু আপনাকে শাস্তি দেবে আইন। জানি ওখানেও টাকা খাওয়াবেন আপনি বাঁচার জন্য। সাথে মনে রাখবেন, আমি যেমন এটা জানি এরপর সবাই এটা জানবে। আপনি একজন ঘুষখোর, স্মাগলার সেটা সবাই জানবে! (জোরে)

পরেশবাবু: আদিত্য! দ্বারাও। এক্ষুনি আমি তোমার ব্যবস্থা করছি।

পরেশবাবু নিজের পকেট থেকে ফোন বার করতেই আদিত্যের বাবা অর্থাৎ আমার শ্বশুরমশাই পরেশবাবুর কাঁধে হাত রেখে বললেন,

আকাশবাবু: এতো হাইপার হচ্ছিস কেন তুই? এতদিন তুই এই ভার্সিটির বোর্ডের মেম্বার ছিলি আজ না হয় তোর জায়গাটা আমি নিলাম। এতে অসুবিধা কোথায়? আমি তো তোর বন্ধু তাই না?

আদিত্য: সো কলড ফ্রেন্ড ড্যাড!

আকাশবাবু: আহ আদি! বড়দের মাঝে কথা বলো না। আমরা কথা বলছি তো নাকি?

আদিত্যকে ধমক দিয়ে শ্বশুরমশাই পরেশবাবুকে আবার বললেন,

আকাশবাবু: দেখ তুই যেমন কাজ করেছিস তার পরিণাম তোকে একদিন না একদিন ভোগ করতেই হতো। এটা তুই নিজেও খুব ভালো ভাবে জানিস তাই বেকার ভার্সিটির বাইরে সিনক্রিয়েট করিস না।

কথাটা শেষ করতেই পরেশবাবু বাবার কলার ধরতে যান আর আদিত্য সাথে সাথে পরেশবাবুর হাত ধরে নেন,

আদিত্য: (অতিরিক্ত রেগে, দাঁতে দাঁত চেপে) সাহস তো কম না আপনার? আপনি আমার সামনে আমার বাবার গায়ে হাত তুলছেন? এটা ভার্সিটির বাইরে করার চেষ্টা করলে আপনার হাত ভেঙে রেখে দিতাম আমি।

রাজ: আদি! হাতটা ছাড় ওনার।(জোরে)

আদিত্য রাজের কথা শুনে রাজের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে চোয়াল শক্ত করেই পরেশবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন,

আদিত্য: আমার সামনে এই সাহসটা আর কোনোদিন দেখাবেন না। দেখালে আজ যেটা করিনি সেটা করতে বাধ্য হবো। আমি থাকতে আমার বাবার দিকে হাত তো দূর, চোখ তুলেও তাকাতে দশ বার ভাববেন।

কথা শেষ করে আদিত্য ঝাড়া মেরে পরেশবাবুর হাত ছেড়ে দেন। রাজ পিছন থেকে আদিত্যকে বলে ওঠে,

রাজ: আদি সরে আয়, প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম এসে পড়বেন।

রাজদা কথাটা বলতেই পরেশবাবু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে রাজদার দিকে তাকালেন আর সেটা দেখতেই রাজদা সঙ্গে সঙ্গে ভয় পেয়ে যাওয়ার ভান করে বললেন,

রাজ: এভাবে তাকাবেন না স্যার, বাচ্চা ছেলে আমি ভয় পেয়ে যাচ্ছি তো? (অসহায় মুখ করে)

পরেশবাবু: আমি জানি আদিত্যের সাথে তুমিই ছিলে। তুমিই ওকে মদত দিয়েছো এসব করার জন্য।

রাজ: একদম ঠিক জানেন। আমি ছাড়া কে বা আদির সাহায্য করতে পারে বলুন? কিন্তু আমি এসেছি দেখেই আজ আপনার এই দশা এমনটা ভাববেন না কারণ আপনি যা শুরু করেছিলেন তাতে আপনার পাপের ঘরা ভরে গেছিলো। আমি না আসলে আদি নিজেই কাজটা করে নিতো, মোট কথা আপনি ঠিক সময় ঠিক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছেন। (মুচকি হেসে)

পরেশবাবু: তোমাকে তো আমি পরে দেখে নেবো। (দাঁতে দাঁত চেপে)

রাজ: কেন? এখন দেখতে কি সমস্যা? এতো প্রেসারে চোখের পাওয়ার বেরে গেছে নাকি?

রাজদার এমন কথা শুনে সবাই হেসে ফেললে পরেশবাবু রাজের দিকে এগিয়ে গিয়ে আস্তে করে কথা বলতে শুরু করলেন যার ফলে কেউ কিছু শুনতে পাচ্ছি না।

পরেশবাবু: তুমি আমাকে চেনো না রাজ। তোমার উইক পয়েন্ট আমি খুব ভালো ভাবে জানি। তোমাকে জব্দ করার ওষুধ আমার হাতের মুঠোয় আছে। (মুচকি হেসে)

কোয়েল: (মনে মনে– হঠাৎ করে পরেশবাবু রাজকে এতো আস্তে আস্তে কি বলছেন? ওরা তো বেশ জোরে কথা বলছিল, তাহলে?)

মৌমিতা: (মনে মনে– কি হলো? পরেশবাবু কি বললেন এতো আস্তে রাজদাকে? কথা শেষ করে কোয়েলের দিকে তাকালেন কেন?)

পরেশবাবু হঠাৎ করেই কোয়েলের দিকে তাকালেন বাঁকা হেসে তাই আমি আর কোয়েল একে অপরের দিকে তাকালাম। আবার ওনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি রাজদা কে বললেন,

পরেশবাবু: আদিত্যের ব্যবস্থা এমনিতেই হয়ে যাবে ও নিয়ে আমি ভাবছি না।

রাজ: ভুলেও এই কাজটার কথা মাথায় আনবেন না।

পরেশবাবু: বাহবা! নিজের কথা না ভেবে বন্ধুর কথা ভাবছো? ভালো ভালো! আমার কিছু না। তোমরা যেমন তোমাদের কাজ করেছো আমিও আমার কাজ করবো।

রাজদা হঠাৎ করেই গম্ভীর হয়ে গেছিলেন, এখন কেমন জানো রেগে পরেশবাবুর দিকে তাকালেন। ব্যাপার টা কি? সেটা ভাবার আর সময় পেলাম না তার আগেই প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম চলে এলেন।

প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম: প্লিজ কিপ সাইলেন্স। দেখুন, আপনাদের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ এভাবে ভার্সিটির মধ্যে স্টুডেন্টদের সামনে সিনক্রিয়েট করবেন না। (হাত জোড় করে)

পরেশবাবু: আপনার থেকে আমি এটা আশা করিনি ম্যাডাম। (ক্ষোভ প্রকাশ করে)

প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম: দেখুন পরেশবাবু, আমার এখানে কোনোরকম কোনো হাত নেই। আদিত্য যে এরকম কিছু করবে ও সেটা আমাকে জানায়নি, আমি এ সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। কিভাবে বুঝবো বলুন হুট করেই কাওকে না বলে আদিত্য কমিশনারের কাছে আপনার বিরুদ্ধে এত স্ট্রং এভিডেন্স জমা দেবে আর কমপ্লেইন করবে? আমি জানলেও কিছু করতে পারতাম না কারণ এভিডেন্সগুলো সত্যিই খুব স্ট্রং। শেষে একটা কথাই বলবো আমি আপনাকে, আপনার থেকে আমরা কেউ এইসব আশা করিনি। প্লিজ, যা হয়েছে তা মেনে নিয়ে আপনি চলে যান। (হাত জোড় করে)

পরেশবাবু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দ্বারা আদিত্য, রাজদা আর বাবার দিকে তাকিয়ে প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম কে বললেন,

পরেশবাবু: এর মূল্য আপনাদের দিতে হবে। হারে হারে এবার আপনারা টের পাবেন আমি কি জিনিস।

আদিত্য: কথাটা আরেকবার রিপিট করুন আমি রেকর্ড করে কমিশনারকে পাঠাচ্ছি।

পরেশবাবু আদিত্যের কথা শুনে ওর দিকে তাকালে আদিত্য ঠোঁট বন্ধ করে হেসে চোখ বুজে সম্মতি জানান যে উনি কাজটা করবেন। পরেশবাবু আর কিছু না বলে আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করেন। আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার পর হঠাৎই উনি পিছন ফিরে কোয়েলের দিকে তাকান আর তারপর রাজদার দিকে তাকান। আমিও ওনার মতো রাজদার দিকে তাকালে দেখি রাজদা চোয়াল শক্ত করে পরেশবাবুর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। সেটা দেখে পরেশবাবুর দিকে তাকালে দেখতে পাই উনি কোয়েলের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলেন আর চলে গেলেন।

কোয়েল: এই মৌ! চল এখন এখান থেকে।

মৌমিতা: (মনে মনে– রাজদার হঠাৎ চুপ করে যাওয়াটা বেশ সন্দেহজনক। হয়তো কোয়েল খেয়াল করেনি পরেশবাবুর চাহুনি তাই কিছু বললো না। উনি যেভাবে সবাইকে শাসালেন তাতে বোঝাই যাচ্ছে উনি কিছু একটা করবেন। আদিত্যের কোনো ক্ষতি করবেন না তো উনি?)

কোয়েল: কি রে চল?

মৌমিতা: আদিত্যের কোনো ক্ষতি করবে না তো উনি? আমার খুব চিন্তা হচ্ছে কোয়েল। (ভয় পেয়ে)

কোয়েল: সকলের সামনে আদিত্যদাকে যে হুমকি দিয়েছে, সে যে কিছু একটা করবে সেটা স্বাভাবিক মৌ। আদিত্যদাকে এখন প্রতিটা মুহূর্তে সতর্ক থাকতে হবে। যেকোনো সময় বিপদ হতে পারে।

মৌমিতা: আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না। (কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে)

কোয়েল: আচ্ছা তুই চল। আদিত্যদারা ভিতরে যাচ্ছে প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডামের সাথে। ওখান থেকে যখন বেড়াবে তখন পুরো বিষয়টা জানতে চাইবো।

আমি আদিত্যের দিকে তাকালাম কোয়েলের কথা শুনে। কাকতলীয়ভাবে উনিও আমার দিকে তাকালেন একই সময়ে। আমি ওনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর রাজদার দিকে তাকালে উনিও রাজদার দিকে তাকান। তারপর আমার দিকে তাকালে আমি রাজদার দিকে ইশারা করে চলে গেলাম।

আদিত্য: (মনে মনে– তখন পরেশবাবু কিছু একটা বলছিলেন আস্তে করে রাজকে। তারপরেই রাজ চুপচাপ হয়ে গেলো। কি এমন বললো উনি ওকে?) কি বললো উনি তোকে?

রাজ: হম? কিছু না। ভিতরে আয় আঙ্কেলকে নিয়ে।

রাজ কথাটুকু বলেই ভিতরে চলে গেলো ভার্সিটির। আদিত্য রাজের ব্যবহারেই বুঝতে পারলো যে সত্যি কিছু একটা বলেছে পরেশবাবু ওকে।

‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৩০||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

৪৬.
আমি আর কোয়েল ক্লাস করলাম না, অপেক্ষা করতে লাগলাম আদিত্য আর রাজদার বাইরে আসার। আমি কিছুক্ষণ আগের কথা কোয়েলকে বললাম,

মৌমিতা: তুই কি খেয়াল করেছিলি পরেশবাবু বেরিয়ে যাওয়ার সময় তোর দিকে তাকিয়ে ছিলো?

কোয়েল: কই না তো। উনি রাজের সাথে কথা বলার সময় আমার দিকে একবার তাকিয়েছিলেন কিন্তু বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও কি..??

মৌমিতা: হ্যাঁ। বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও উনি তাকিয়েছিলেন সেটাও খুব অদ্ভুত ভাবে। তোর দিকে তাকানোর পর উনি আবার রাজদার দিকে তাকান। আচ্ছা কোয়েল, উনি তোকে নিয়ে রাজদাকে কিছু বলেননি তো?

কোয়েল: (বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে) কি যা তা বলছিস বল তো তুই। আমাকে নিয়ে রাজকে কেন কিছু বলতে যাবে? আমি কে হই রাজের? (আস্তে করে)

মৌমিতা: তাহলে উনি ওভাবে তাকালেন কেন? তুই বুঝতে পারছিস না কারণ তুই দেখিসনি। আমি দেখছি ওনার চাহুনি কতটা ভয়ানক ছিলো। উনি যেভাবে অপমানিত হয়েছেন তার বদলা তো উনি নেবেনই। (ভয়ে ভয়ে)

কোয়েল: বিপদ আদিত্যদার উপর বেশি, আদিত্যদা কাজটা করেছে মৌ। তুই এখন যতটা পারিস আদিত্যদার সাথে থাকিস। আদিত্যদার মতি গতির যেমন ঠিক নেই তেমন টেম্পারেরও কোনো ঠিক নেই। হুটপাট রেগে যায় আর কিছু একটা করে বসে।

মৌমিতা: আর রাজদা? রাজদার জন্যেই আদিত্য কাজটা করতে পেরেছেন এটা কেন ভুলে যাচ্ছিস তুই? তাছাড়া জিয়া আদিত্যকে ভালোবাসে, পরেশবাবু নিজের মেয়ের ভালোবাসার তেমন কোনো ক্ষতি করবে না। দেখলি না, উনি কিন্তু বেশি কথা রাজদার সাথেই বললেন। রাজদাকেই উনি শাসিয়েছেন, আমি শিওর!

কোয়েল: ওর কথা ভাবতে হবে না তোকে। ও নিজেকে সামলাতে জানে আর কিছু হলে তো আদিত্যদা আছে, আদিত্যদা ওকে সামলে নেবে। বাদ দে ওর কথা, আমি ভাবতে চাই ন…

মৌমিতা: রাজদা!

কোয়েল কথাগুলো একনাগাড়ে বলে যাওয়ায় আমি কিছুতেই কোয়েলকে থামিয়ে বলতে পারছিলাম না যে, ওর পিছনেই রাজদা আর আদিত্য দাঁড়িয়ে আছেন। বাধ্য হয়ে আমি রাজদার নাম নিতেই কোয়েল চুপ হয়ে গেলো। কোয়েল পিছন ফিরতেই রাজদা কোয়েলের দিকে তাকিয়ে এক পা, দু-পা করে পিছতে পিছতে পিছন ফিরে চলে গেলেন।

মৌমিতা: এটা তুই কি বললি কোয়েল? এভাবে বলাটা তোর উচিত হয়নি।

কোয়েল এখনও রাজদার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলে আদিত্য এগিয়ে আসেন। কোয়েলের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,

আদিত্য: পরেশবাবু ওকে কি বলেছেন আমি জানি না। খুব সম্ভবত ওর উইক পয়েন্টকে টার্গেট করবেন। এটা শোনার পর থেকে রাজ চুপ করে গেছে কারণ ও ওর প্রিয় মানুষটাকে হারাতে চায় না আরেকবার। আমার কিছুই হবে না যদি না আমি জিয়াকে নিজের থেকে দূরে সরাই। আমি এতদিন জিয়ার এতো বাড়াবাড়ি তো সহ্য করছিলাম এই দিনটার জন্যেই। এটা তুই খুব ভালোভাবেই জানিস। কিন্তু এটা কি জানিস রাজের কাছে জিয়ার মতো কেউ নেই? পরেশবাবু অ্যাকচুয়ালি কি বলেছে ওকে, এটা জানাটা দরকার যেটা আমি এতক্ষণেও জানতে পারি…

আদিত্যের কথা শেষ হওয়ার আগেই কোয়েল চলে গেলো সেদিকে, যেদিকে রাজদা গেছেন। কোয়েল চলে গেলে আমি আদিত্যের দিকে তাকাই, উনি এখনও ঐদিকেই তাকিয়ে আছেন। ওনার কথাগুলো শুনে প্রথমে খারাপ লাগলেও পরে অবাক হলাম। উনি এইজন্য জিয়াকে এতটা প্রশ্রয় দিয়েছিলেন?

আদিত্য: এখানে একা দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি হস্টেল যাবে?

মৌমিতা: আপনি জিয়াকে এতদিন প্রশ্রয় দিয়েছিলেন ওর বাবাকে শাস্তি দেওয়ার পরে সেটার লাভ নেওয়ার জন্য? আপনি জিয়াকে ইউস করছেন? জিয়া যদি সবটা জেনে যায় কি হবে ভেবেছেন?

আদিত্য: (হেসে) বিশ্বাস করবে না জিয়া, ওর বাবার কথা। আগেও এমন অনেক কিছু করেছি আমি তারপরেও জিয়ার বাবা জিয়ার জন্যেই আমার কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।

মৌমিতা: আর আপনি সেটারই সুযোগ নিয়ে আজ একাজ করলেন তাই না? কাওকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা উচিত নয়। (অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে)

আদিত্য: এটাই তো জিয়াকে বুঝতে হবে। আসলে, মানুষ যতক্ষণ না নিজে পরিস্থিতির স্বীকার হয় ততক্ষণ পর্যন্ত কিছুই বুঝতে পারে না, বুঝতে চায় না! তাছাড়া জিয়ার ও শাস্তি পাওয়াটা দরকার।

কথাটুকু বলে আদিত্য একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়তেই আমি ওনাকে এ বিষয়ে আমার শেষ প্রশ্নঃটা করলাম,।

মৌমিতা: তাহলে এতো দিন কেন কিছু করলেন না? রাজদার সাহায্যের অপেক্ষা করছিলেন নাকি অন্য কোনো কারণের জ…

আমার প্রশ্ন শেষ করার আগেই উনি আমার চোখে চোখ রাখলে আমার বুকের ধুকপুকানি বাড়তে শুরু করে। আমি যেটা ভাবছি সেটাই কি সত্যি? ওনার চোখ অন্তত তাই বলছে আমার দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা। এ কি? উনি আবার আমার দিকে এগোচ্ছেন কেন? ওনাকে এগোতে দেখলে আমি পিছতে নিলেই উনি খপ করে আমার হাতটা ধরে নেন আর আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলেন,

আদিত্য: (মনে মনে– তুমি যদি সত্যি বুঝতে যে যেন আমি এখনই এমনটা করলাম তাহলে কতই না ভালো হতো। আচ্ছা তোমার কি একবারও মনে হচ্ছে না যে কেন তুমি আসার পরই আমি জিয়াকে শাস্তি দিলাম? একবারও মনে এই প্রশ্নটা আসছে না কেন? কারণ আমি চাই না তোমাকে কেউ হ্যারাস করুক, এর প্রমাণ তো তুমি আগেও পেয়েছো তাহলে কেন বুঝতে পারছো না আমাকে?) রাজ যেমন নিজের প্রিয় মানুষটাকে হারানোর ভয় পায় তেমন আমিও চাই না কেউ আমার উইক পয়েন্টকে টার্গেট করুক। চলো, হস্টেল পৌঁছে দিচ্ছি।

আমার দিকে কিছুক্ষণ একভাবে তাকিয়ে থেকে হুট করেই উনি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকলে আমার মনে প্রশ্নগুলো আবার জেঁকে বসলো।

মৌমিতা: (মনে মনে– জিয়াকে এই সময়ই শাস্তি কেন দিলেন? আমি আসার আগেই তো দিতে পারতেন তাই না? আর একটু আগে কি বললেন উনি? কোয়েল যা বলছে সেটাই কি ঠিক তাহলে?)

আদিত্য: বসো।

ওনার গলার আওয়াজ পেয়ে চোখ খুলতেই ওনার দিকে তাকালাম, উনি আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে ইশারা করতেই দেখলাম ওনার গাড়ির দরজা উনি খুলে রেখেছেন। আমি সেটা দেখে একটু লজ্জায় পরে গেলাম।

আদিত্য: কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হ… (একটু থেমে) থ্যাংক ইউ এই শীতের মধ্যে এতক্ষন দাঁড় না করিয়ে রাখার জন্যে।

উনি উনার কথা শেষ করার আগেই আমি বসে যেতেই উনি আমাকে পিঞ্চ করে কথাটা বললেন। আমি ভেংচি কাটতেই উনি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে গাড়ির জানলার উপর দুহাত রেখে তার উপর চিবুক রাখতেই আমি একটু পিছিয়ে গেলাম। উনি সামান্য হাসলেন! ওনার এমন হাসি আমার বুকে গিয়ে বিঁধলো।

আদিত্য: আমার কথা ভেবে চোখ বন্ধ করে রেখেছিলে? অবশ্য এটাই স্বাভাবিক আমি মানুষটাই এমন যে আমার কথা সবাই ভাবে। (মুচকি হেসে)

মৌমিতা: অঙ্কিত অনেকদিন ধরে ভার্সিটি আসছে না। চিন্তা হচ্ছে আমার ওকে নিয়ে, কি যে হলো ওর…

আমার কথা শেষ করার আগেই আদিত্যর হাসি হাসি মুখটা নিমিষে গাম্ভীর্যে পরিণত হলো। চোয়াল শক্ত করে নাক ফুলিয়ে উনি উঠে গেলেন আমার সামনে থেকে আর আমি মুখে হাত চেপে হেসে ফেললাম। উনি ড্রাইভিং সিটে বসতেই আমি নিজের হাসি কন্ট্রোল করে বাইরের দিকে তাকালাম।

মৌমিতা: সত্যি, উনি জেলাস? তাও আবার আমাকে নিয়ে? (আদিত্যের দিকে একবার তাকিয়ে, পুনরায় চোখ সরিয়ে নিয়ে) আমি এত সহজে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারবো না আবেগের বশে। আমাকে বুঝতে হবে উনি কি চাইছেন, কতটা ভাবছেন আমাদের সম্পর্ককে নিয়ে। এখনই যদি ওনাকে ধরা দিয়েদি তাহলে হয়তো সবটা বদলে যেতে পারে আবার। (আদিত্যের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে) কিন্তু উনি এরকম চুপ করে গেলেন কেন? তখনের কথাটা কি একটু বেশিই বলে ফেলেছি?

ঠিক করলাম, আদিত্যের সাথে কথা বলবো। কিন্তু কি নিয়ে? কোয়েলের বিষয়েই বরং বলি।

মৌমিতা: বলছি, আমি চলে এলাম কিন্তু কোয়েল? ও তখন কোথায় গেলো কিছুই তো জানতে পারলাম না।

আদিত্য: ও ঠিক আছে, যেখানে আছে। এখন বিষয় ওর ঠিক থাকা নিয়ে নয়, ওর ঠিক রাখা নিয়ে।

মৌমিতা: মানে? কাকে ঠিক রাখবে ও আবার? (অবুঝের মতো)

আদিত্য: (এক গালে হেসে) সঠিক সময়ে সব জানবে।

ওনার উত্তরের পরিবর্তে আমি আর কিছু বলার মতো খুঁজে পেলাম না। চুপ করে রইলাম। ভাবছি, জিজ্ঞেস করবো মনে যেই প্রশ্নটা চলছে? না থাক!

মৌমিতা: আচ্ছা আপনি কি রেগে…

আদিত্য: হস্টেল এসে গেছে।

আমি আদিত্যের কথা শুনে বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখলাম হস্টেলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে গাড়িটা। ওনার কথা বলার ধরণেই বুঝতে পারলাম উনি রেগে আছেন তখনের কথাটা নিয়ে।

আদিত্য: অনেক দেরী হয়ে গেছে। হস্টেলে যাও নাহলে ম্যাডাম…

মৌমিতা: আমি তখন মজা করেই কথাটা বলেছিলাম। আপনার খারাপ লাগবে বুঝতে পারিনি, স্যরি! সাবধানে বাড়ি ফিরবেন।

কথাটা বলে দরজা খুলতে নিলেই উনি আমার হাত ধরে বাঁধা দিলেন। আমার দিকে হঠাৎ করে এগিয়ে এলে আমি শকড হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে থাকি। উনি আমার চোখে চোখ রেখেই আস্তে করে বলেন,

আদিত্য: সিট বেল্ট না খুলেই নেমে যাবে?

ওনার কথা শেষ হতেই বুঝতে পারলাম উনি আমার সিট বেল্টটা খুলে দিলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে নেমে গেলাম গাড়ি থেকে।

আদিত্য: ঘরে ঢুকে টেক্সট করবে আমাকে। আর অযথা হস্টেল থেকে একা বেড়াবে না। মনে থাকে জানো কথাটা।

আমি ওনার ধমক শুনে চুপচাপ চলে এলাম ঘরে। ব্যাগটা রেখে ফোন হাতে নিয়ে একটা টেক্সট করে জানলার সামনে দাঁড়ালাম। দেখলাম উনি গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে এক হাতে ফোন দেখছেন আর অন্য হাতে সিগারেট খাচ্ছেন। আমার ফোনে সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ এলে আমি সেটা ওপেন করি,

“ঘরে যাও। ঠান্ডার মধ্যে জানলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।”

আজব ব্যাপার, উপরের দিকে না তাকিয়েও কীভাবে টের পেল আমি জানলার সামনে দাঁড়িয়ে আছি? রিপ্লাই করলাম,

“আপনিও ঠান্ডার মধ্যে গাড়িতে বসে সিগারেট খান আর সিধে বাড়ি যান।”

রিপ্লাই দেওয়ার পর উনি আমার দিকে তাকালেন আর সিগারেটটা একটানে শেষ করে গাড়িতে গিয়ে বসলেন।

“ঘরে যাও।”

“আপনি যাবেন না?”

আমার মেসেজের রিপ্লাই এলো না কোনো। আমি কি করবো বুঝতে না পেরে ফোনটা রেখে ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে