আড়ালে তুমি পর্ব – ৯

0
758

#আড়ালে তুমি
পর্ব ৯
লেখকঃ শাহরিয়ার কবির নীল

অফিসে বসে কাজ করছিলাম। এমন সময় পিয়ন এসে আমাকে একটা খাম দিয়ে গেলো। খামের উপরে কোম্পানি লোগো দেওয়া আছে। বুঝলাম এটা কোম্পানি থেকে দেওয়া। তবে কি হতে পারে? তাই খুলে দেখলাম৷

তবে ভিতরে যা ছিলো তা দেখে আমি অনেকটাই বিস্মিত হলাম। কারণ ভিতরে ছিলো আমার প্রমোশান লেটার। আমাকে এক ধাপ প্রমোশন দিয়ে কর্মকর্তা থেকে জুনিয়র কর্মকর্তার পোষ্ট দেওয়া হয়েছে। তবে আমি এটা জীবনেও আশা করিনি। আর আমার আসা হলো মাত্র কয়েকদিন এর ভিতর কিভাবে প্রমোশন পায়? এটা কি আদৌ সম্ভব? আমি এর কারণ জানার জন্য ম্যামের কেবিনে গেলাম।

আমিঃ আসতে পারি?

শিলা ম্যামঃ আসো আসো। কিছু বলবে?

আমিঃ না মানে ম্যাম আমাকে হঠাৎ করে প্রমোশন দেওয়া হলো কেনো?

শিলা ম্যামঃ আসলে তোমার কাজ বসের অনেক পচ্ছন্দ আর কম সময়ে তুমি অন্যদের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে গিয়েছো। তাই তোমার রিপোর্ট দেখে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। আর তোমার বেতন বেড়ে ৩৭ হাজার হয়েছে। এটা সবাইকে এখনও বলা হয়নি৷ পরে বলে দিব।

আমিঃ কিন্তু ম্যাম আমার জয়েন করা এখনও ১ বছরও পূর্ণ হয়নি। ১ বছর পূর্ণ হতেও অনেকটা সময় বাকি আছে। তার থেকেও বড় কথা আমি কোনো বড় কাজে এখনও অবদান রাখিনি। তাহলে প্রমোশন কিসের জন্য?

শিলা ম্যামঃ দেখো এতো কৈফিয়ত আমি দিতে পারবনা। প্রমোশন পেলে সবাই খুশি হয় আর তুমি কিনা কারণ জানতে চাইছো? আচ্ছা প্রমোশন না চাইলে চাকরি ছেড়ে দিড়ে দাও। ( রেগে)

আমিঃ সরি ম্যাম। আমার ভুল হয়ে গেছে। ক্ষমা করে দিবেন। আর কখনও আপনার উপর কথা বলবোনা। ( মাথা নিচু করে)

শিলা ম্যামঃ মন খারাপ করলে? সরি আমি এভাবে বলতে চাইনি। আর তোমার কাজের জন্যই তোমাকে প্রমোশন দিয়েছি। প্লিজ কিছু মনে নিয়ো না? ( নমর গলায়)

আমিঃ আরে ম্যাম কি বলছেন? কিছু মনে করিনি।

শিলা ম্যামঃ তাহলে আপনি করে বলছো যে?

আমিঃ সরি আর বলবোনা।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা যাও। কাল থেকে নতুন ডেস্কে কাজ করবা।

আমি চলে এলাম। সত্যি বলতে প্রমোশন পেয়েও কেনো জানি খুশি হতে পারছিনা। কেমন জানি মনে হচ্ছে আমার যোগ্যতার অধিক কিছু দিচ্ছে আমাকে। তারপরও এসব ভাবনা বাদ দিলাম। বেতন বেশি এটাই আসল কথা। ডেস্কে এসে বসতেই বর্না আপু জিজ্ঞেস করলো

বর্না আপুঃ নীল ম্যামের রুমে কেনো গিয়েছিলে? কোনো কাজ ছিলো?

আমিঃ আসলে আমাকে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। কিজন্য দিয়েছে তা জানতে গিয়েছিলাম৷

বর্না আপুঃ কিহহ? তোমার প্রমোশন হয়েছে?। congratulations

আমিঃ ধন্যবাদ আপু।

রফিক ভাইঃ কিসের কংগ্রাচুলেশনস?

বর্না আপুঃ তোমার ভাই প্রমোশন পেয়েছে?

রফিক ভাইঃ সত্যিইই? ( খুশি হয়ে)

আমিঃ হ্যাঁ।

রফিক ভাইঃ অভিনন্দন নীল। তবে প্রমোশন অনেক তাড়াতাড়ি দিয়ে দিলো। যদিও তোর অগ্রগতি অনেক বেশি।

আমিঃ ধন্যবাদ ভাই।

রফিক ভাইঃ এখন কাজ কর। বাসায় গিয়ে আজকে দুই ভাই মিলে অনেক মজা করব।

আমিঃ আচ্ছা।

আমি কাজে মন দিলাম। অফিস শেষে রিফাতকে আনতে গিয়ে গরুর মাংস, মিষ্টি নিলাম। আজকে জমিয়ে খাওয়া দাওয়া হবে।

রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রফিক ভাইয়ের কাছে গেলাম। বেল বাজার পর আপু দরজা খুলে দিলো। আমার হাতে ব্যাগ দেখে জিজ্ঞেস করলো

বর্না আপুঃ নীল তোমার হাতে কি এগুলো?

আমিঃ আপু মিষ্টি আর গরুর মাংস আছে। আজকে মাংস রান্না করো। সবাই মিলে জমিয়ে খাবো আজকে।

বর্না আপুঃ এসবের কি দরকার ছিলো?

আমিঃ ওহহ আপু আজকের দিনে কোনো প্রশ্ন করবেনা। যাও যাও এগুলো রান্না করে নিয়ে এসো।

বর্না আপুঃ আসলে তুমি একটা পাগল।

আমাদের কথা বলতে দেখে রফিক ভাই জিজ্ঞেস করলো

রফিক ভাইঃ কি হয়েছে বর্না ভাই বোন মিলে কি কথা বলছ?

বর্না আপুঃ তোমার ভাই গরুর মাংস আর মিষ্টি নিয়ে এসেছে।

রফিক ভাইঃ অযথা এসব করার কি দরকার ছিলো?

আমিঃ দরকার আছে। আর বেশি কথা বলবেনা। চলো গিয়ে গল্প করি।

বর্না আপুঃ রিফাত কই?

আমিঃ ও রুমে আছে।

বর্না আপুঃ তুমি কি পাগল নাকি? ওকে একাই রেখে এলে কেনো? আমি নিয়ে আসছি। মায়ের সাথে দুষ্টুমি করবে।

আমিঃ আচ্ছা। ভাই চলো আমরা গল্প করি গিয়ে।

অনেক মজা করে পার করলাম সময়টা। পরেরদিন অফিসে আমার প্রমোশনের কথা বলে দিলো। সবাই আমাকে অভিনন্দন জানালো। আমাকে নতুন ডেস্ক দেওয়া হলো।

পার হয়ে গেলো আরও ২ মাস। শিলার ব্যাপারে কোনো তথ্য পেলাম না। এর মাঝে ভাইয়া একটা বাইক কিনেছে। যদিও কোনো দরকার ছিলোনা তবুও শখের বসে কিনেছে।

আজকে শুক্রবার। আজকে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছি। আজকে আমার তৃপ্তি আর রাকিবের সাথে দেখা করার কথা। মূলত আমিই ওদের ডেকেছি শিকার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার জন্য। ওরা সকাল ১০ টায় আমাকে সেই ক্যাফেতে ডেকেছে। আমি রেডি হয়ে ভাইয়ার বাইক নিয়ে চললাম। আমি পৌছে দেখও ওরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি গিয়ে ওদের সালাম দিলাম

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো তোমরা?

ওরাঃ আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ। তোমাকে একটা কথা বলার জন্য ডেকেছি তৃপ্তি।

তৃপ্তিঃ বলো।

আমিঃ আমি যা জিজ্ঞেস করবো তা সত্যি সত্যি বলবা। যদি কোনো সময় বন্ধু মনে করে থাকো তবে মিথ্যা কথা বলবানা।

তৃপ্তিঃ হয়েছে কি বলবা তো?

আমিঃ আচ্ছা শিলার সাথে কি তোমার কোনো ধরনের যোগাযোগ আছে?

তৃপ্তিঃ না না৷ ওর সাথে প্রায় ৬ বছর থেকে কোনো যোগাযোগ নাই আমার। কেনো কি হয়েছে?

আমিঃ সত্যি বলছ তো?

তৃপ্তিঃ কসম করে বলছি ওর সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নাই৷

আমিঃ আসলে প্রায় ৪ মাস আগে হঠাৎ শিলা আমাকে একটা এস এম এস দিয়েছিলো। তারপর অনেক কল করলেও আমি আর ফোন খোলা পাইনি।

তৃপ্তিঃ কি বলছো নীল? ( অবাক হয়ে)

আমিঃ হুম। তবে আমার সন্দেহ ও আমার আশে পাশেই আছে। কারণ আমার নতুন নম্বর ওর জানার কথা না। তবুও যেহেতু জেনেছে তাই ও আমাদের থেকে দূরে নেই এটা আমি নিশ্চিত। কিন্তু তুমি যদি নম্বর না দিয়ে থাকো তাহলে দিলো কে?

তৃপ্তিঃ এটাই তো ভাবার বিষয়। আর আদিবার সাথে যোগাযোগ করলে ও অবশ্যই আমাকে বলতো। তার মানে আদিবাও কিছু জানেনা। আর ও যদি তোমার আশেপাশেই থাকে তবে সামনে আসছেনা কেনো?

আমিঃ এটাই তো আমার কথা। এখন কেনো ও আড়াল করে রেখেছে নিজেকে? তবে ওকে সমানে নিয়ে আসতে হলে কিছু একটা করতে হবে।

তৃপ্তিঃ কি করবা?

আমিঃ কিছু একটা করাই লাগবে। আচ্ছা বাদ দাও এটা নিয়ে ভেবে দেখবো। তা তোমাদের কি অবস্থা?

তৃপ্তিঃ অনেক ভালো। আর একটা গুড নিউজ দেওয়ার আছে।

আমিঃ কিসের গুড নিউজ?

তৃপ্তিঃ আসলে আমি মা হতে চলেছি৷ ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা আমি।

আমিঃ বাহ। অনেক ভালো একটা খবর শোনালে। কংগ্রাচুলেশনস তোমাদের। তা এতো দিন জানাও নি কেনো?

তৃপ্তিঃ আসলে ব্যস্ততার কারণে বলা হয়নি।

আমিঃ আচ্ছা। আবারও তোমাদের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা আর দোয়া৷ আচ্ছা আজ আমি চলি পরে আরেকবার দেখা করবো।

রাকিবঃ আরে ভাই কি বলেন? এলেন তো মাত্র কিছু সময় আগে। এখনই চলে যাবেন?

আমিঃ আসলে একটু কাজ আছে।

রাকিবঃ ভাই অন্তত একটা কফি খেয়ে যান।

আমিঃ আচ্ছা।

তারপর আর কিছুক্ষন থেকে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম৷ ও হ্যাঁ আপনাদের তো বলাই হয়নি। আদিবা আর নাহিদ ভাইয়ের একটা ছেলে হয়েছে। নাহিদ ভাই ফোন করে বলেছে। যখন আদিবা আমাদের সাথে দেখা করতে আসে তখন ও ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলো। আপনাদের এটা বলাই হয়নি।

যাই হোক আমি বাইক নিয়ে বাসায় ফিরছি আর একটা কথাই ভাবছি আসলে শিলা চাই কি? কেনো ও আড়ালে রয়েছে? এসব ভাবতে ভাবতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম৷ বাইক টার্ন করতে গিয়ে সমানে থেকে আচমকা একটা কার এসে সজোরে আঘাত করল। আমি বাইক থেকে ছিটকে দূরে গিয়ে পড়লাম। আমার পাঁ অনেক ব্যাথা করছে। হেলমেট পরা ছিলাম তাই মাথায় কম আঘাত লেগেছে তবে একেবারে কম লাগেনি। আমার শরীর অনেক বেশি ব্যাথা করছে। হাত পাঁয়ের অনেক জায়গয় আঘাত পেয়েছি। মূহুর্তেই সেখানে ভিড় জমে গেলো। একটু পর আমি সেন্স হারিয়ে ফেললাম।

এদিকে উপস্থিত মানুষ এম্বুলেন্স ডেকে পাঠালো। একজন আমার পকেট থেকে ফোন বের করে রফিক ভাইকে ফোন দিয়ে সব বলল। রফিক ভাইতো শুনে পাগল প্রায়। রিফাতকে তার শাশুড়ীর কাছে রেখে বর্না আপুকে নিয়ে হাসপাতালে চলে এলো। এসে আমার খোজ নিয়ে আমার কেবিনের কাছে এলো। একজন লোক রফিক ভাইকে দেখে জিজ্ঞেস করল

লোকটাঃ আপনি কি রফিক?

রফিক ভাইঃ জ্বী।

লোকটাঃ আমিই আপনাকে ফোন দিয়েছিলাম। ওনাকে ইমিডিয়েটলি অপারেশন করাতে হবে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন। আপনি এক্ষুনি গিয়ে ডাক্তারের সাথে দেখা করে আসুন। পেসেন্টের অবস্থা সিরিয়াস।।

লোকটা মুখে এই কথা শুনে ভাইয়া আর আপু স্তব্ধ হয়ে গেলো। ভাইয়া লোকটাকে বিদায় দিয়ে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে গেলো।

রফিক ভাইঃ ডাক্তার আমার ভাইয়ের কি হয়েছে?

ডাক্তারঃ দেখুন উনি অনেক বেশি আহত হয়েছেন। ইমিডিয়েটলি অপারেশন না করলে উনাকে বাঁচানো যাবে না।

রফিক ভাইঃ তো শুরু করুন। আর দেরি করছেন কেনো?

ডাক্তারঃ তার জন্য ৩ লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে।

রফিক ভাইঃ আমি এক্ষুনি সব করে দিচ্ছি৷ আপনি অপারেশনের ব্যবস্থা করুন।

এরপর ভাইয়া টাকা জমা দিলেন আর আমার অপারেশন শুরু হলো। ভাইয়া আর আপু দুজনেই অনেক কান্না করছে। আল্লাহর কাছে আমার জীবন ভিক্ষা চাইছেন।

৩ ঘন্টা অপারেশনের পর ডাক্তার বেরিয়ে আসলেন। ভাইয়া তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন

রফিক ভাইঃ ডাক্তার সাহেব আমার ভাইয়ের কি অবস্থা?

ডাক্তারঃ দেখুন আমরা সর্বোচ্চ চেষ্ঠা করেছি। তবে এর আগেও ওনার মাথায় অনেক বড় একটা চোট লেগেছিলো। এবারের চোট বড় না হলেও আগের জায়গাতে চোট লাগায় রোগি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সাথে ওনার ডান পাঁ ভেঙে গেছে। ৩ দিনের ভিত জ্ঞান না ফিরলে আমার পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব নয়।

ভাইয়া আর আপু অনেক হতাশ হলেন। তবে আল্লাহর উপর ভরসা রাখলেন। ওনারা আমাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। আমার অবস্থা উনারা সহ্য করতে পারেন নি৷

রাতে ভাইয়া আর আপু রিফাতের জন্য বাসায় আসলেন। তারাকে আসতে দেখেই রিফাত জিজ্ঞেস করলো

রিফাতঃ আংকেল আমার আব্বু কই?

রফিক ভাইঃ তোমার বাবা কাজের জন্য বাইরে গেছে। দুই দিন পর আসবে।( কান্না আটকে রেখে কথাটা বললো।

রিফাতঃ বাবা আমাকে নিয়ে গেলোনা কেনো? আমাকে ফেলে গেলো কেনো? ( কান্না করে)

বর্না আপুঃ কাঁদছো কেনো বাবা? তোমার বাবা চলে আসবে৷

রিফাতঃ আমি কার কাছে থাকবো? ( ফুঁপিয়ে কান্না করছে)

বর্না আপুঃ তুমি আমার কাছ থাকবে।

তারা অনেক চেষ্টা করে রিফাতের কান্না থামালো। রাতে ভাইয়া আপু কেউ ঘুমাতে পারলোনা। রিফাতের জন্য বাড়ি এসেছে আমার জন্য একটা নার্স ঠিক করে। এসেছে।

পরদিন দুজন মিলে অফিস থেকে ৩ দিনের ছুরি নিলো। ম্যাম আমার কথা জিজ্ঞেস করলে ভাইশা বলেন আমি একটু অসুস্থ তাই আসতে পারিনি। অতঃপর ছুটি নিয়ে ওরা হাসাপাতালে চলে আসলো। আমাকে এক নজর দেখে ভাইয়া ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গেলো।

রফিক ভাইঃ ডাক্তার সাহেব আমার ভাইয়ের অবস্থা এখন কেমন?

ডাক্তারঃ দেখুন আমি আগেই বলেছি ৩ দিনের মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে কিছুই বলা সম্ভব না। এখন ওনার অবস্থা দেখে কিছুই বলা যাচ্ছেনা। তবে আমার মনেহয়..

রফিক ভাইঃ কি মনেহয় ডাক্তার?

ডাক্তারঃ আমার মনেহয় উনি বাঁচতে পারবেন না। ওনার পালস রেট কম। সাথে সুস্থতার কোনো লক্ষণ দেখছিনা।

রফিক ভাইঃ ডাক্তার কি বলেন এসব? আপনি কি মজা করছেন?

ডাক্তারঃ না আমি মজা করছিনা। আমি সত্যটা আপনাকে বললাম। মিথ্যা কথা বলে আস্বাস দিতে চাইনা। তবে সুস্থ হয়ে যেতেও পারেন। আশা ছাড়বেন না।

রফিক ভাই কাঁদতে কাঁদতে বর্না আপুর কাছে এলো। বর্না আপু ভাইয়ার চোখে পানি দেখে জিজ্ঞেস করলেন

বর্না আপুঃ ডাক্তার কি বললেন?

রফিক ভাইঃ নীল তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।

বর্না আপুঃ তাহলে কাঁদছো কেনো?

রফিক ভাইঃ না মানে এমনি।

বর্ণা আপুঃ দেখো আমার থেকে কিছু লুকাবেনা৷ আমি স্পস্ট বুঝতে পারছি তুমি কিছু লুকাচ্ছো আমার থেকে।

রফিক ভাইঃ আরে না। আমি আবার কি লুকাবো।

বর্না আপুঃ আচ্ছা তাহলে আমিও ডাক্তারের সাথে দেখা করে আসি।

বর্না আপু ডাক্তারের কেবিনের দিকে হাঁটা দিবে তখনই রফিক ভাই আপুকে থামিয়ে দিলো। তারপর আপুকে সব খুলে বললো। সব শুনে দুজনেই চোখের জল ছেড়ে দিলো। কাউকে কিছু বলতেও পারছেনা।

এদিকে ২ দিন হয়ে গেলেও আমি অফিসে আসছিনা দেখে ম্যামের মনে কেমন জানি ভয় কাজ করতে লাগলো। সারাদিন কাজে মন দিতে পারলেন না। তবে কাউকে জিজ্ঞেস করবেন এই উপায়ও নাই৷

পরেরদিন শুক্সবার। ম্যাম সকালে উঠে সিদ্ধান্ত নিলেন বর্ণা আপুকে ফোন দিবেন৷ কারণ একমাত্র রফিক ভাই আর বর্না আপুই বলতে পারেন আমার কথা। যেই ভাবা সেই কাজ। শিলা ম্যাম বর্না আপুকে ফোন দিলেন৷

বর্না আপুঃ আসসালামু আলাইকুম।

শিলা ম্যামঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম।

বর্না আপুঃ আজকে ফোন দিলেন যে? কোনো কাজ আছে?

শিলা ম্যামঃ না মানে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম।

বর্না আপুঃ কি কথা?

শিলা ম্যামঃ আসলে নীলের কি হয়েছে বলতে পারবেন?

বর্না আপুঃ সেরকম কিছুই না। একটু অসুস্থ আরকি।

শিলা ম্যামঃ কি হয়েছে প্লিজ বলুন।

বর্না আপুঃ কিছু হয়নি ম্যাম। ঠিক হয়ে যাবে। ( কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)

শিলা ম্যামঃ আপনি প্লিজ বলুন আমাকে।

এবার আর বর্না আপু নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না৷

বর্না আপুঃ আসলে ম্যাম হয়েছে কি ( সব খুলে বললেন ম্যামকে)

সব শুনে ম্যাম বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। অস্থির হয়ে পড়লেন তিনি। তারপরও নিজেকে শান্ত রেখে জিজ্ঞেস করলেন

শিলা ম্যামঃ এখন ওর অবস্থা কেমন আর কোথায় আছে ও?

বর্না আপুঃ ডাক্তার বলেছে আজকের মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে হয়তো আর কোনো আশা থাকবেনা। ওকে ***** হাসপাতালে ভার্তি করে এসেছি।

শিলা ম্যামঃ এসেছি মানে?

বর্না আপুঃ বাড়ি এসেছি। ওর ছেলেটাকে তো সামলাতে হবে। কাউকে কিছু বলিনি। তাই রাতে বাড়ি আসতে হয়।

ম্যাম আর কিছু না ভেবে ফোন রেখেই হাসপাতালে দৌড় দিলো। তার কান্না যেনো থামতেই চাইছেনা৷ কোনো রকমে হাসপাতালে এসে আমার রুম নম্বর জেনে আমার কেবিনের সামনে চলে আসলেন। এসে দেখতে পেলেন আমার শরীরের অনেক জায়গায় ব্যান্ডেজ করা৷ মুখে মাস্ক লাগানো এবং কোনো রকম রেসপন্স নাই৷ ম্যাম আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না। ম্যাম কোনো বাধা না মেনে কেবিনে ঢুকে পড়লেন৷ নার্স বাধা দিলেও তার কোনো বাধা না মেনেই সোজা এসে আমার পাঁ ধরে কাঁদতে লাগলেন।

শিলা ম্যামঃ নীল নীল কি হয়েছে তোমার? কথা বলো প্লীজ। দেখো আমি আমি তোমার শিলা। এতোদিন পরে তোমাকে পেয়েও হারাতে পারব না। এতোদিন পাশে থেকেও নিজেকে আড়াল করার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি বাধ্য ছিলাম নীল। তোমার ভালোর জন্য আমি তোমাকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম৷ আর এতোদিন পরে তোমাকে পেয়েও তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য তোমার সামনে আসিনি৷ আমি দেখতে চেয়েছিলাম তুমি আমাকে আগের মতো ভালোবাসো কিনা৷ আমি অনেক ভুল করে ফেলেছি নীল। আমাকে একটাবার সুযোগ দাও। শেষ একটা সুযোগ দাও আমাকে৷ তোমার কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা৷ আমাকে এভাবে একা রেখে যেওনা৷ আমি বাঁচতে পারবোনা। ( ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে)

এদিকে যে সময়ে শিলা ম্যাম আমার কেবিনে ঢুকে ঠিক সেই সময়ই রফিক ভাই আর বর্না আপু হাসপাতালে আসেন। এসে ম্যাম কে আমার পাঁ ধরে কান্না করতে দেখেন। বর্না আপু তাড়াতাড়ি করে উনাকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলেন তবে ছাড়াতে পারলেন না। অনেক চেষ্টা করে ছাড়িয়ে নিলেন।

বর্না আপুঃ এসব কি করছেন? দেখছেন তো অসুস্থ। এসবের মানে কি?

শিলা ম্যামঃ আমাকে যেতে দিন ওর কাছে। আমি ওকে ছাড়া বাঁচবোনা। প্লীজ আমার জানের কাছে যেতে দিন।

বর্না আপুঃ মানে কি বলছেন? আপনার জান মানে?

শিলা ম্যামঃ আমি ওর বউ। আমিই ওর শিলা। আজ আমার জন্য আমার কলিজাটা মরতে বসেছে। ওর অবস্থার জন্য আমি দায়ি। ( এক নাগারে কেঁদেই চলেছে)

রফিক ভাইঃ ও তার মানে আপনিই সেই ছলনাময়ী? ছেড়ে যখন গিয়েছিলেন তখন আবার ফিরে এলেন কেনো? ঠিকই তো নিজেকে সামলে নিয়েছিলো। আপনার কথা ভেবে কাঁদলেও নিজের ছেলের জন্য নিজেকে ধৈর্য ধরে থেকেছে। আপনাকে অনুরোধ করছি আপনি চলে যান। ওর ঠিক হয়ে যদি আপনাকে সামনে দেখে তাহলে আর নিজেকে সামলাতে পারবেনা। প্লিজ ওকে বাঁচতে দিন। আল্লাহর কাছে এটাই চাওয়া যদি চোখ খুলে তাহলে আপনাকে দেখার থেকে আল্লাহ যেনো ওকে নিজের কাছে ডেকে নেন৷ আর হ্যাঁ ওর কিছু হলে রিফাতের আশা করবেন না। ওকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবো।

শিলাঃ এরকম অলক্ষুণে কথা বলবেন না। মানছি আমি ভুল করেছি তবে আমি যা করেছি সব বাধ্য হয়ে করেছি আর ওদের ভালোর জন্যই করেছি৷ আমি সব খুলে বলবো প্লিজ আমাকে ওর কাছে থাকতে দিন। ওর কিছু হলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো। আমার মতো স্ত্রী বেঁচে থাকার অধিকার রাখেনা।

বর্না আপুঃ পাঁচ বছর দূরে ছিলেন মানলাম তারপরও ওকে কাছে পেয়েও কেনো দূরে রেখেছিলেন? আর আজ কেনো ফিরে এসে ওর কাছে থাকার কথা বলছেন? যার জন্য ওকে ছেড়ে এসেছিলেন সে কি আপনাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে?

শিলাঃ বিশ্বাস করুন ও ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পুরুষের স্পর্শ আমার গায়ে নেই। একমাত্র আল্লাহই জানেন আমি পবিত্র। আমি যা করেছি আমার স্বামী সন্তানের জন্যই করেছি তবে খারাপ কিছু করিনি। ওকে ছেড় যে কতটা কষ্টে কাটিয়েছি তা আমিই জানি৷ ওদের সুরক্ষার জন্য যোগাযোগ করতে পারিনি। ও আমাকে যতটা ভালোবাসে তার থেকে দ্বিগুন বেশি ভালোবাসি আমি ওকে। আমি সব খুলে বলবো। আমাদের দুইজনকে আলাদা করতে যে মানুষটার অবদান ছিলো সে তার কর্মের ফল দুনিয়াতেই পেয়েছে। আমি সব খুলে বলবো। ওকে কাছে পেয়েও কিছু বলিনি কারণ আমি দেখতে চেয়েছিলাম ও এখনও আমাকে ভালোবাসে কিনা। তবে আমার এই ভুলের জন্য যে আজ ওকে হারাতে বসব এটা আমি কোনোদিনও ভাবিনি। প্লিজ আমাকে ওর কাছে যেতে দিন। ( কেঁদে কেঁদে)

ভাইয়া আর আপু শিলার চোখের পানি দেখে আর ওকে আটকে রাখলেন না। আমার কাছে আসার অনুমতি দিলেন। ও আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে বলতে লাগলো

শিলাঃ এই জান উঠো বলছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি আর কখনও তোমাকে ছেড়ে যাবোনা৷ আর আড়ালে থাকবোনা। দয়া করে একটা বারের জন্য চোখ খুলো? আমার উপর রাগ করে থেকো না। প্লিজ উঠো ( কাঁদতে কাঁদতে)

এরপর যা হলো তার জন্য বাকি সবাই প্রস্তুত থাকলেও শিলা মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। ও হতভম্ব হয়ে গেলো। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছিলোনা৷ চোখ থেকে পানি পড়াও বন্ধ হয়ে গেলো। এক মুহূর্তের জন্য পুরো শরীর অবশ হয়ে গেলো ওর। কারণ এরপর যা ঘটলো………………..

চলবে…………….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে