আড়ালে তুমি পর্ব – ৮

0
751

#আড়ালে তুমি
পর্ব ৮
লেখকঃ শাহরিয়ার কবির নীল

আমি তৃপ্তির দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী গেলাম। ক্যাফে খুঁজে পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। ভিতরে ঢুকে তৃপ্তি আর রকিবকে দেখতে পেলাম। তবে তাদের সাথে আরও দুইজন বসে গল্প করছে।আমি ওদের ওখানে গিয়ে হাই বললাম। এবার উল্টোদিকে ফিরে থাকা দুইজন আমার দিকে ফিরলো। ওমা এতো আদিবা আর নাহিদ ভাই! ওরা এখানে? কিছু বুঝে ওঠার আগেই নাহিদ ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। একটু পর ছেড়ে দিয়ে বললো

নাহিদ ভাইঃ তুমি তো আমাকে ভাই বলেছিলে। তাহলে কিভাবে পারলে তুমি আমাকে না জানিয়ে চলে আসতে?

আমিঃ আমি বধ্য ছিলাম ভাই। নিজের ছেলেটার জন্য আমাকে এসব করতে হয়েছে।

নাহিদ ভাইঃ বসো আগে। বসে কথা বলি।

আমি বসলাম। তারপর বললামঃ ভাই আপনি হঠাৎ ঢাকাতে?

নাহিদ ভাইঃ যেদিন তোমার সাথে তৃপ্তির দেখা হয় সেদিনই ও আমাদের ফোন করে জানাই। আর আমার কাজও সেরম ছিলোনা তাই শহরটা ঘুরতে আর তোমাকে দেখতে চলে এলাম। তা নম্বর বন্ধ করেছো কেনো?

আমিঃ সব আশাই তো শেষ হয়ে গেছিলো আমার৷ আমিও আড়ালে চলে যেতে চেয়েছিলাম।

আদিবাঃ আচ্ছা নীল আর শিলা কিসের জন্য নিজেকে আড়াল করে নিলো?

আমিঃ হয়তো আমার থেকেউ ভালো কাউকে পেয়েছিলো। তাছাড়া আমার কাছে থেকে কষ্ট ছাড়া পেয়েছে কি? সব সময় তো কষ্টই করেছে। আমিও চলতাম তার টাকায়।

আদিবাঃ শিলা এমনটা করতে পারেনা। এর পিছনে নিশ্চয় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে।

আমিঃ রহস্য থাকলেও এখন আর কোনো যায় আসেনা৷ এখন আমার ছেলেটাই আমার সব। তবে সেদিন যদি ও আমার ছেলেটাকেও নিয়ে চলে যেতো তাহলে আমি নিজেকে মুক্ত করে দিতাম।

আদিবাঃ এসব বলছো কেনো? আমরাও ওকে অনেক খুঁজেছি। তার বিন্দুমাত্র কোনো হদিস পাইনি। আচ্ছা শিলার মায়ের সাথে যোগাযোগ হয়নি?

আমিঃ না। চেষ্টা করিনি আর।

আদিবাঃ রিফাত কেমন আছে?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে এখন। হয়তো আমার ভাগ্য ভালো কারণ যেখানেই আমি যেখানেই থাকি আমার সেখানেই একটা বড় ভাই হয়ে যায়। এখানেও এলজন বড় ভাই পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ ওদের নিয়ে এখন ভালো আছি।

নাহিদ ভাইঃ তা আর কতদিন এভাবে একা থাকবে নীল? একটা বিয়ে করে নিলেই তো পারো।

আমিঃ নাহ। পরিশ্রুতি দিয়ে যে একা করে চলে গেলো তারপর আর কাউকে কিভাবে বিশ্বাস করবো? তাছাড়া আমার কাজের জন্য রিফাত অবহেলিত হোক এটা আমি সহ্য করতে পারবোনা।

আদিবাঃ এখন এসব বাদ দাও তো। অনেকদিন পর দেখা হলো একটু জমিয়ে আড্ডা দেই।

নাহিদ ভাইঃ ঠিক বলেছো। বাদ দাও ওসব কথা।

তারপর ওদের সাথে ভালো একটা সময় পার করলাম। বাসায় ফিরতে একটু দেরি হলো। রফিক ভাই ফোন দিয়েছিলো তবে আমি দেরি হবার কারণ বলে দিয়েছি।

বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে রিফাত ভাইয়ের ফ্ল্যাটে গেলাম। ওদের সাথে কিছু কথা বলে রিফাতকে নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে আসলাম।

রাত ১১ টা। রিফাত ঘুমিয়ে গেছে। আমি ফোন টিপছি। এমন সময় শিলা ম্যামের ফোন আসলো।

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম।

শিলা ম্যামঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। কি করছো?

আমিঃ আমি শুয়ে আছি। তুমি?

শিলা ম্যামঃ আমিও শুয়ে আছি। আচ্ছা একটা কথা বলার জন্য তোমাকে ফোন দিলাম।

আমিঃ কি কথা?

শিলা ম্যামঃ তুমি চাইলে রফিক সাহেবের মাকেও নিয়ে আসতে পারো।

আমিঃ সেটা রফিক ভাইয়ের ব্যাপার। কিন্তু বাকি স্টাফরা কি বলবে?

শিলা ম্যামঃ ওদের যা মনে আসবে বলবে তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। তুমি রফিক সাহেবকে বলে দিও।

আমিঃ আচ্ছা বলে দিবো।

শিলা ম্যামঃ তোমার ছেলে কি করছে?

আমিঃ ও ঘুমিয়ে গেছে।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা তুমি রফিক সাহেবকে বলে দিও। তারপরও আমি নিজেই উনাকে বলবো।

আমিঃ আচ্ছা।

ম্যাম ফোন কেটে দিলো। যাক একদিক দিয়ে অনেক ভালো হয়েছে। কিছুদিন ঘুরে আসা যাবে তাহলে। বাইরে কোথাও ঘুরতে যাইনি কোনোদিন। আসলে যাইনি বললে ভুল হবে যাওয়ার যোগ্যতাই হয়নি৷ এবার ঘুরেই আসি।

সকালে রফিক ভাইকে সবটা জানালাম। এটা শুনে অনেক খুশি। আসলে আন্টি সব সময় বাড়িতেই থাকে। কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়না এবার যেহেতু সুযোগ পেয়েছেন তাই খুশি হলো অনেক।

কয়েকদিন অফিস করার পর আজকে আমাদের ট্যুর। রাতে বাস ছাড়বে। অনেক বিলাসবহুল বাস। এসি, ওয়াইফাই সব আছে। যাইহোক রাত ১০ টায় সবাই এসে উপস্থিত হলো। সবাই নিজের নিজের সিটে বসে পড়লো। আমি মাঝের দিকে একটা ট্রিপল সিট পেলাম। আমি, জানালার পাশে বসে রিফাতকে মাঝে বসিয়ে দিলাম। তবে আরেকটা সিট কার এটা বুঝতে পারলাম না৷ একবার দাড়িয়ে দেখলাম সবাই নিজের নিজের সিটে বসে পড়েছে। একটাও ফাঁকা নাই আমারটা বাদে। এসব ভাবনা বাদ দিয়ে আমি রিল্যাক্সে বসে পড়লাম। রিফাতকে ফোন দিলাম। ও কার্টুন দেখতে ব্যস্ত।

আমি জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি৷ এমন সময় মেয়েলি গলায় কেউ বললো ” নীল আমাকে জানালার পাশের সিটটা দিবে?”

আমি তাকিয়ে দেখি এটাতো শিলা ম্যাম! তার মানে উনি এসই সিটে বসবেন? এর মাঝে ম্যাম আবারও বললো

শিলা ম্যামঃ কি হলো? আমাকে জানালার পাশের সিটটা দিলে খুশি হতাম।

আমিঃ সমস্যা নাই তুমি আসো।

আমি বেরিয়ে এসে ম্যামকে ভিতরে ঢুকতে দিলাম। তিনি সিটে গিয়ে বসলেন। রিফাত মাঝের সিটে বসে আছে আর আমি কিনারায়। ঘুরতে এসেও তিনি বোরকা পরেই আছেন। ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগলো। একটু পর বাস ছাড়লো। ছাড়ার কিছুক্ষন পর ম্যাম বললো

শিলা ম্যামঃ নীল আমার পাশে এসে বসবে?

আমিঃ কিছু বলবে ?

শিলা ম্যামঃ রাস্তা তো কম না। তাই ভাবলাম একটু গল্প করি।

আমিঃ ওখান থেকেই বলো। আমি ঠিক মতোই শুনতে পাচ্ছি।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা। তা তুমি কি আজীবন এভাবেই থাকবে?

আমিঃ এভাবে মানে?

শিলা ম্যামঃ মানে এভাবেই একাই সারাজীবন পার করবে?

আমিঃ তাছাড়া আর কি করার আছে?

শিলা ম্যামঃ একটা বিয়ে তো করতে পারো।

আমিঃ হাহ্। এসব কথা আমার মাথায় আসেনা আর আনতেও চাইনা। তা তোমার হাসবেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে না?

শিলা ম্যামঃ কিভাবে দিবো বলো? যদি হাসবেন্ড নাম প্রাণীটা কাছেই না থাকে।

আমিঃ মানে?

শিলা ম্যামঃ মমমম মানে আমি এখনও বিয়ে করিনি।

আমিঃ কথা আটকাচ্ছে কেনো?

শিলা ম্যামঃ ওই এমনি আরকি। আচ্ছা একটা কথা বলবে?

আমিঃ কি?

শিলাঃ তোমার বিয়ের প্রতি এতোটা অবিশ্বাস কেনো?

আমিঃ এটা অনেক বড় ঘটনা। আমি বলতে চাচ্ছিনা।

শিলা ম্যামঃ বললে সমস্যা কি?

আমিঃ ব্যাপারটা আমার জন্য অনেক কষ্টদায়ক তাই।

শিলা ম্যামঃ তাও বলো। আমার জানতে অনেক ইচ্ছা হয়।

আমিঃ প্লিজ জোর করিও না৷

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা আমাকে বললে তো আমি কাউকে বলবনা।

আমিঃ আপনি যদি মিডিয়ার সামনেও প্রচার করেন তাও আমার কিছু যাই আসেনা। তবে আমার অতীতটা অনেক বেশি কষ্টদায়ক।

শিলা ম্যামঃ রাস্তা তো অনেক দূরের সংক্ষেপে বলো প্লিজ।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে শুনুন তাহলে ( তারপর সব বললাম আমার অতীতের ব্যাপারে)

বলার ইচ্ছা ছিলোনা কারণ আমি ব্যাপারটা ভুলাতে চায় তবুও কেনো জানিনা সবাই এটা শুনতেই ব্যস্ত। আমার ভিতরের অবস্থা কেউ জানার চেষ্টা করেনা। মনে পড়লে যে আমার বড্ড কষ্ট হয়।

আমার বলা শেষ হলে আমি ম্যামের দিকে লক্ষ করলাম চোখ দুটো কেমন জানি ভেজা ভেজা লাগছে। তবে বুঝতে পারছিনা।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা ওনি এমনটা কেনো করেছিলেন? ওনিই তো নিজে থেকেই সব করেছেন তারপর ছেড়ে গেলেন কেনো?

আমিঃ জানিনা। হয়তো আমার থেকে বেটার কাউকে নিজের জীবনে পেয়েছিলো। আর আমি কি বা দিয়েছি তাকে?

শিলা ম্যামঃ ওনার উপর তোমার বিশ্বাস নাই? ওনি এমন কাজ করতে পারে এটা তুমি বিশ্বাস করো?

আমিঃ আমি বিশ্বাস করতে চাইনা। তবে যে আমার ছেলেকে ফেলে চলে গেছে তাকে বিশ্বাস করতেও চাইনা৷ হয়তো আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসার জিনিস ছিলো সে তবে তার কারণেই আমাকে বাকি জীবন কষ্ট নিয়ে কাটাতে হবে। আমি ওকে কোনোদিন ভুলতে পারবোনা।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা ওনার খোজ নেওয়ার চেষ্টা করোনি?

আমিঃ দীর্ঘ পাঁচ বছর প্রতিটা দিন ওকে ফোন করেছি তবে খোলা পাইনি৷ যে শাশুড়ী আমার সংসার দেখে মন খুলে দোয়া করেছিলেন তারও আর খোজ পাইনি৷ তার বাড়ি যাবার সাহস হয়নি কারণ ওর বড়লোক বাবা হয়তো আমার কিছু করে বসতে পারে। আর আমার কিছু হলে আমার ছেলেটার কি হবে? আমি জানি এতিমদের জীবন কতটা কষ্টের হয়। তাই নিজের ছেলের ভালোর জন্য নিজেকে সামলে নিয়েছি।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা যদি ওনি কখনও ফিরে আসেন?

আমিঃ আসতে পারে তবে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর তাকে দিতে হবে।

শিলা ম্যামঃ সেটা কি?

আমিঃ আমি শুধু আমাকে এভাবে ফেলে যাবার কারণটা জানতে চাইবো। জানো ওকে এখনও আমি অনেক বেশি ভালোবাসি। ও ফিরে আসলে আমি না করতে পারবোনা৷ তবে কারণটা ওকে বলতে হবে। জানো এখনও রাতের তারাদের প্রশ্ন করি ” আমাকে একা রেখে কেনো #আড়ালে_তুমি?

শিলা ম্যামঃ অভিমানের পাহার জমিয়ে রেখেছেন দেখছি।

আমিঃ ৫ বছর আর কয়েকদিন পর ৬ বছর হবে। এতোদিনে কি অভিমানের পাহার জমা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু?

শিলা ম্যামঃ এমনটাও তো হতে পারে যে ওনি কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন৷

আমিঃ ম্যাম আমি আর কথা বাড়াতে চাইনা। প্লিজ সবাটাই তো জানলেন এখন আপাতত আর এই নিয়ে প্রশ্ন করবেন না?

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আরও ৬ ঘন্টার পথ বাকি। ঘুমিয়ে পড়ো।

আমি কষ্টগুলো বুকে মাঝে দাবিয়ে রেখেই ঘুমিয়ে পড়লাম। সাধারণত ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে ৮-৯ ঘন্টা লাগে। তবে বাস একটু ধীরে চালাচ্ছেন সাবধানতার জন্য।

ঘুম থেকে উঠে দেখি বাস এখনও চলছে। পৌছাতে কতক্ষন লাগবে এটা দেখার জন্য গুগল ম্যাপে ঢুকলাম। দেখি আরও ৩ ঘন্টার পথ। এর মধ্যে সকাল হয়ে গেছে। ম্যামের দিকে চেয়ে দেখি উনিও জেগে আছেন আর ফোন টিপছেন। একটু পর একটা হোটেলের সামনে বাস থামে।

অনেক্ষন বসে থাকার ফলে প্রায় সকলেই প্রকৃতির ডাক অনুভব করছে। সবাই বাস থেকে নেমে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিলো। তারপর মুখ হাত ধুয়ে সকালের খাবার খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে আবার বাস ছাড়লো।

২.৩০ ঘন্টা পর আমরা পৌছে গেলাম আামদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষে। এরপর হোটেলে রুম বুক করা হলো। সকালে ফ্রেশ হলো। সকলকে বলে দেওয়া হয়েছে দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটে লাঞ্চ করা হবে। সবাই অনেক টায়ার্ড দীর্ঘ একটা জার্নি করার পর।

দুপুরের খাবারের আগে কেউ বেরই হলোনা৷ দুপুরে খাবারের পর সবাই মিলে রুমে গেলো। তবে আমার একটু সমস্যাই হলো কারণ মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা শুরু হলো। আমি রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম তবে ব্যাথার কারণে ঘুম আসছেনা। ভাবলাম আজকে রুমেই পার করবো দিনটা৷

বিকালে রফিক ভাই আর বর্না আপু ঘুরতে যাবার জন্য ডাকলো। তবে আমি অসুস্থ হবার কারণে গেলাম না। রুমেই থাকলাম। হাতে ৪ দিন পড়েই আছে ঘুরার জন্য। আমি রিফাতকে নিয়ে যেতে বললাম। ওনারা রিফাতকে নিয়ে গেলেন। আমি শুয়ে থাকলাম। একটু পর ঘুমিয়ে পড়লাম।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় ফিরে আসলো সবাই। তবে অসুস্থ হবার কারণে কেউ ডাক দেয়নি। আমার ঘুম ভাঙলো ৮ঃ৩০ মিনিটে। ডিনারের টাইম রাত ৯ টায়। উঠে দেখি মাথা ব্যাথা আর নেই সাথে অনেক ফ্রেশও লাগছে। আমি উঠে রফিক ভাইকে ডাক দিলাম। উনি আমাকে দেখে আমার শরীর কেমন আছে জিজ্ঞেস করলো। আমিও ওনাকে বললাম যে আমি ঠিক আছি। তারপর রিফাতকে নিয়ে খেয়ে আসলাম।

তবে এসে আর ঘুম আসছেনা৷ অনেক্ষন ঘুমার কারণে এখন আর ঘুম আসছেনা। তাই মুভি দেখতে বসলাম। Marvel এর মুভি ভালো লাগে দুটো মুভি দেখলাম। দেখার পর ঘুমালাম।

সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেছে। দেখি ৭ টা বাজে। ব্রেকফাস্টের টাইম ৯ টায় তাই ফেসবুকে গল্প পড়ছিলাম। এর মাঝে আবার রিফাত জেগে গেছে। ওকে তৈরি করে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে গেলাম। তারপর উঠে আসার সময় আমার শিলা ম্যাম ডাক দিলো।

শিলা ম্যামঃ তা শুনলাম কালকে নাকি তুমি অসুস্থ ছিলে? তা এখম কেমন আছো?

আমিঃ এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আছি।

শিলা ম্যামঃ তাহলে ইনজয় করো।

সকালে কয়েক জায়গায় গেলাম। বিকালের দিকে বীচে ঘুরতে যাবো। আমি, রফিক ভাই, বর্না আপুরা একসাথে ছিলাম। তবে সাথে আরেকজনও ছিলো সেটা আর কেউ না শিলা ম্যাম। উনি আমাদের সাথেই ঘুরছেন। তাছাড়া একলা যাবেন বা কোথায়? আমার সাথে কোনো কথা নাই। ওনি বর্না আপুর সাথে থাকছেন। অনেক ভাব জমে গেছে দুজনের মধ্যে। এদিকে রফিক ভাই ব্যাচেলারের মতো আমার সাথে থাকছেন। যদিও কোনো সমস্যা হয়না।

বিকালের দিকে আমরা বীচে ঘুরতে গেলাম। সেখানে অনেক্ষন সময় কাটালাম। তবে এখানেও শিলা ম্যাৃ সম্পূর্ণ ঢেকে রেখেছেন নিজেকে। সন্ধ্যার পর সকলে মিলে সি ফুড খেলাম। শিলা ম্যাম আদর্শ পর্দাশীল নারীর মতে করে খাচ্ছেন।

ফিরতে একটু রাত হলো। অনেক কিছু খাবার ফলে রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম। পরেরদিন সকালে উঠে ভাবলাম ছাদ থেকে ঘুরে আসি। যেই ভাবা সেই কাজ। ৭ তলা হোটেল৷ আমি লিফটে করে টপ ফ্লোরে গেলাম সেখান থেকে সিড়ি হয়ে ছাদে গেলাম। তবে সেখানে গিয়ে দেখি আরেক অবাক করা ঘটনা। ছাদে আগে থেকেই শিলা ম্যাম আর অফিসেরই একজন কর্মচারী দাড়িয়ে কথা বলছে। ওরা একটু আড়ালে ছিলো। তবে এরপরও যে আরও ঘটনা ঘটবে এটা বুঝতে পারিনি৷ কারণ কথার মাঝেই ছেলেটা পকেট থেকে একটা আংটি বের করে ম্যামের সামনে বসে পড়লো

ছেলেটিঃ আজি জানিনা আপনি কথাটা কিভাবে নিবেন হয়তো ভাবতে পারেন আমি আপনার টাকার জন্য আপনাকে এসব বলছি তবে না। আমি যেদিন এই অফিসে প্রথম এসেছিলাম সেদিন আপনার মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে আমি চোখদুটোর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। আমি আপনাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। আমি আপনাকে বিয়ে করে আপনার সাথে থাকতে চাই। দিবেন আমাকে সেই সুযোগ? হয়তো আমার বেশি কিছু নাই তবে ঢ়া আছে সবটা দিয়ে আমি আপনাকে ভালোবাসবো। আপনি কি আমার জীবনসঙ্গী হবেন?

ম্যামকে দেখি দাঁড়িয়েই আছেন। একটু পর ছেলেটার হাত থেকে আংটিটা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলো। তারপর বলতে শুরু করলো

শিলা ম্যামঃ How dare you talk to me like this? Do you forget who am I? Just look at yourselfe, who are you? You are noting but a simple employee and I am you boss. I am giving you a last warning if such incident happens further, you will get your rewad.

( আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে এসব বলার? আপনি কি ভুলে গেছেন আমি কে? নিজের দিকে দেখুন, কে আপনি? আপনি একজন সাধারণ কর্মকর্তা ছাড়া আর কিছুই না এবং আমি আপনার বস। আমি আপনাকে লাষ্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি যদি এরকম কোনো কাহিনী ভবিষ্যৎ ঘটে, তাহলে আপনি তার পুরষ্কার পেয়ে যাবেন।)

ছেলেটিঃ ম্যাম সত্যি আমি আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। আমাকে ফিরিয়ে দিয়েন না। আমার মায়ের শেষ ইচ্ছা আমি যেনো একটা ভালো মেয়ে বিয়ে করি। আর আপনাকে আমার অনেক ভালো লেগেছে। প্লিজ ম্যাম।

শিলা ম্যামঃ Don’t try to get sympathy including you mother into this. I don’t care about your mother and I don’t care about her last wish. These words can’t make me emotional. If that is her last wish then go and find some others. And I also don’t care about you. So just leave otherwise I will take hard steps.

( নিজের মায়ের কথা বলে সহানুভূতি অর্জন করার চেষ্টা করবেননা। আমি আপনার মায়ের শেষ ইচ্ছা বা আপনার মা কোনোটার ব্যাপারেই পরোয়া করিনা। আর আপনার কথায় আমি আবেগি হয়ে পড়বোনা। সেটা যদি তার শেষ ইচ্ছা হয় তাহলে অন্য কাউকে খুজে নিন। আর হ্যাঁ আমি আপনারও কোনো পরোয়া করিনা। চলে যান নাহলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো)

ছেলেটিঃ সত্যি আপনি এসবের পরোয়া করেন না? আমি যদি মরেও যায় তাও না?

শিলা ম্যামঃ আপনি কে হ্যাঁ? আপনি মরলে বা বাঁচলে আমি কেনো সেসবের পরোয়া করবো? আর এইমাত্র না বললেন আপনার মায়ের শেষ ইচ্ছার কথা? এখন তো আমি আরও সিওর যে আপনি আমার টাকার জন্যই সব করছেন। নিজের মায়ের কথা ভাবলে কখনও মরার কথা মাথায় আনতেন না। আর হ্যাঁ আপনি চাইলে মরতে পারেন। আমরা এখন ৭ম ফ্লোরের ছাদে। এখান থেকে লাফ দিলে সিওর মারা যাবেন। চাইলে চেষ্টা করতে পারেন৷ তবে যদি ভাবেন তারপর আমি অনুশোচনায় ভুগবো এমনটা মোটেও হবেনা৷ যান লাফ দেন৷

ছেলেটা এবার মাথা নিচু করে নিলো। আমিতো শুধু এটাই ভাবছি যে ম্যাম রাগতেও পারে? সব সময় ওনাকে নম্র ভাবে থাকতে দেখেছি তবে আজ এই রাগ প্রথম দেখলাম। ছেলেটা আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছে।

শিলা ম্যামঃ আমি প্রথমেই বলেছিলাম বেশি কথা না বলতে। অনেক বেশি বলে ফেলেছেন এখন অফিস গিয়ে পুরষ্কারের প্রস্তুতি নিতে থাকুন।

শিলা ম্যাম চলে আসতে গিয়ে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন

শিলা ম্যামঃ তুমি কখন আসলে?

আমিঃ এই মাত্র এলাম।

শিলা ম্যামঃ ওহ৷ আচ্ছা আমি নিচে যাবো। একটু পর ঘুরতে বের হবো তাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিও।

আমিঃ আচ্ছা।

শিলা ম্যাম চলে গেলেন। ছেলেটা এখনও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওনার ব্যাপরে না ভেবে রুমে ফিরে এলাম। ব্রেকফাস্টের পর পাশের একটা মেলাতে ঘুরতে গেলাম। সেখানে শামুকের অনেক সুন্দর জিনিস দেখতে পেলাম৷ অনেক সুন্দর কারুকার্য। অনেক ভালো লাগলো।

আজ ৩য় দিন পার হলো। আর ২ দিন বাকি। সুন্দর সময়গুলো হয়তো তাড়াতাড়ি চলে যায়। এই ৩ দিন অনেক ভালো কাটলো। রিফাতও অনেক খুশি ঘুরতে পেয়ে আর সাথে জায়গাটাও এতোটা মনোরম যে শুধু ঘুরতে ইচ্ছা হয়। রুমের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেও অনেক সুন্দর একটা দৃশ্য চোখে পড়ে৷ সব মিলিয়ে দারুন একটা সময়। যদি যথেস্ট পরিমান টাকা থাকতো তাহলে একটা বাড়ি করে এখানেই থেকে যেতাম।

রাতে বসে আড্ডা দিচ্ছি। অফিসের অনেকগুলো কলিগ একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি হোটেলের ছাদে৷ মেয়েরা একটু দূরে বসে আছে। সবাই মিলে একটা গেম খেলছে। একটা বাটিতে সকালের নাম লিখা আছে৷ একজন তুলবে আর যার নাম উঠবে তাকে গান গাইতে হবে। ৪ জনের সাথে এরকম হলো। বেচারিরা গান গাইতে না পারলেও বাধ্য হয়ে ২-৪ লাইন রিডিং এর মতো করে বলছে। ৪র্থ জন শেষে এবার একটা চিট তোলা হলো। যেটা ভয় পেয়েছিলাম সেটাই৷ এবার আমার নাম উঠেছে। গান মোটামুটি পারি। তবে গাইতে লজ্জা লাগে। এখন আর কি করার? এখন তো গাইতেই হবে। সব লাজ লজ্জা দূর করে একটা রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া শুরু করলাম

“কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে
কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না
মোহমেঘে তোমারে…
অন্ধ করে রাখে, তোমারে দেখিতে দেয় না
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না
ক্ষনিক আলোকে আঁখির পলকে তোমায় যবে পাই দেখিতে
ওহে ক্ষনিক আলোকে আঁখির পলকে তোমায় যবে পাই দেখিতে
ওহে ‘হারাই-হারাই’ সদা হয় ভয়
‘হারাই-হারাই’ সদা হয় ভয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে
আশ না মিটিতে হারাইয়া- পলক না পড়িতে হারাইয়া-
হৃদয় না জুড়াতে হারাইয়া ফেলি চকিতে
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না
ওহে কী করিলে বল পাইব তোমারে, রাখিব আঁখিতে আঁখিতে-
ওহে কী করিলে বল পাইব তোমারে, রাখিব আঁখিতে আঁখিতে-
ওহে এত প্রেম আমি কোথা পাব, নাথ
এত প্রেম আমি কোথা পাব, নাথ, তোমারে হৃদয়ে রাখিতে
আমার সাধ্য কিবা তোমারে-
দয়া না করিলে কে পারে-
তুমি আপনি না এলে কে পারে হৃদয়ে রাখিতে
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না
ওহে আর-কারো পানে চাহিব না আর, করিব হে আজই প্রাণপণ-
ওহে আর-কারো পানে চাহিব না আর, করিব হে আজই প্রাণপণ-
ওহে তুমি যদি বল এখনি করিব…
তুমি যদি বল এখনি করিব বিষয় -বাসনা বিসর্জন
দিব শ্রীচরণে বিষয়- দিব অকাতরে বিষয়-
দিব তোমার লাগি বিষয় -বাসনা বিসর্জন
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না
কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে
কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না”

গান গাওয়া শেষে সবাই হাত তালি দিলো। গলাটা খুব সুন্দর না হলেও চলার মতো। সবাই অনেক প্রসংসা করলো। গানটা আমার পচ্ছন্দের। অনেক শুনি তাই মুখস্ত হয়ে গেছে।

আড্ডা শেষে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম৷ আজকে ট্যুরের শেষ দিন। এখন পর্যন্ত অনেক ঘুরলাম তবে কোনো কিছু কিহা হয়নি। তাই ভাবলাম আজকে কিছু পচ্ছন্দ হলে কিনে নিবো। অনেক কিছু কিনলাম। ঘর সাজানোর জন্য কিছু উপকরন আর কিছু সো পিস কিনলাম।

আজকে রাতে আবার রওনা দিবো। রাত ১১ টায় বাস ছাড়বে তাই তার আগেই সব গুছিয়ে নিলাম। তারপর সময় মতো বাসে উঠে পড়লাম৷ রাত ১১ঃ৩০ টায় আবার বাস ছাড়লো। রিফাত ঘুমিয়ে গেছে। আমি নিজে থেকে শিলা ম্যামকে বললাম

আমিঃ আচ্ছা কিছু কথা বলতে পারি?

শিলা ম্যামঃ হ্যা বলো

আমিঃ আসলে সেদিন ছাদে যে ছেলেটা তোমাকে প্রপোজ করেছিলো তাকে ওভাবে না বললে হতোনা?

শিলা ম্যামঃ তার মানে তুমি সব শুনেছিলে? ( অবাক হয়ে)

আমিঃ হুম। হয়তো তোমাকে সত্যি ভালোবাসতো।

শিলা ম্যামঃ আরে রাখো তো এদের ভালোবাসা। ওটা ভালোবাসা না ওটা আমাকে ফাঁসানো ধান্দা ছাড়া আর কিছুই না।

আমিঃ এমনটা কেনো মনে হলো?

শিলা ম্যামঃ ও যখন কথার মাঝে ওর মাকে ঢুকিয়েছিল তখনই বুঝে গিয়েছলাম যে এটা কিছুইনা। কারণ ও আমাকে ইমোশনাল করে সিম্প্যাথি অর্জন করতে চাইছিলো।

আমিঃ আচ্ছা ও যদি সত্যি কিছু করে বসতো?

শিলা ম্যামঃ করলে করতো তাতে কার কি আসে যায়?

আমিঃ ওর প্রতি মায়া হয়নি?

শিলা ম্যামঃ আজব? ওর প্রতি কেনো আমার মায়া হতে যাবে? সত্যি মরে গেলেও আমার সামান্যটুকু অনুশোচনা হতোনা। আর আমার মনে আগে থেকেই অন্যের বসবাস রয়েছে। তাকে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছিনা।

আমিঃ এটা ওকে বুঝিয়ে বললেই পারতেন।

শিলা ম্যামঃ বুঝালেও বুঝতোনা। তবে ওর ব্যবস্থা করে রেখেছি। অফিসে গিয়েই বুঝবে।

আমিঃ মানে?

শিলা ম্যামঃ ওকে সিলেট ট্রান্সফার করে দিবো।

আমিঃ এটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছেনা?

শিলা ম্যামঃ বেশি কি হলো? তাছাড়া আমি তো ওর চাকরি নিচ্ছিনা বরং উপকার করছি। ওখানে গিয়ে একটা ফ্ল্যাট পাবে। এতে বেশির কি হলো?

আমিঃ তাহলে ঠিক আছে। তা আপনার মনের কথা আপনার পচ্ছন্দের মানুষটাকে বলতে পারছেন না কেনো?

শিলা ম্যামঃ কারণ আমি দেখতে চাই সে আগের মতো আছে কিনা। ( একটু আনমনে কথাটা বললো)

আমিঃ মানে?

শিলা ম্যামঃ নননন না মমমম মানে কিছুনা।

আমিঃ তবে দেরি হয়ে যাবার আগেই সব করে ফেলুন। দেরি হয়ে গেলে আর ফিরে পাবেননা।

শিলা ম্যামঃ দেরি হলেও সে হারাবেনা। আমি কিছুটা সময় চাই। আমি তাকে আরেকটু বুঝতে চাই৷

আমিঃ তুমি যে কি বলো তার আগা মাথা আমি কিছুই বুঝিনা।

শিলা ম্যামঃ তোমাকে কিছু বুঝতে হবেনা। সময় হলে সেই মানুষটাকে সকলের সামনে নিয়ে আসবো।

আর কোনো কথা বললাম না। কারণ তার কথা আমি কিছুই বুঝিনা। সোজাভাবে কোনো কথা বলেননা। যাইহোক আমি ফেসবুকে গল্প পড়তে লাগলাম। ৩০ মিনিট পর আমার ফোনে একটা মেসেজ আসলো। আমি মেসেজটা দেখলাম।

তবে যে নম্বর থেকে মেসেজ আসলো আর যে মেসেজ আসলো তা দেখার পর আমি কিছু সময় স্তব্ধ হয়ে থাকলাম৷ এতোদিন পর হঠাৎ সেই চিরোচেনা নম্বর থেকে মেসেজ আসলো৷ তবে সব চাইতে বড় কথা আমার এই নম্বর পেলো কোথায়? তাহলে কি ও আশেপাশে কোথায়ও আছে? আসলে যে নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে তা আর কারও নয় নম্বরটি ছিলো শিলার আগের নম্বরটা। মেসেজে লিখেছে

“কেমন আছো প্রিয়?”

আমি এই ঘটনার জন্য আমি মানসিক ভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। পুরো অস্থির হয়ে পড়লাম। এই মূহুর্তে আমার কি করা উচিৎ আমি বুঝতে পারছিনা। চোখের জল বেরিয়ে আসতে চাইছে তবে আমার জন্য পারছেনা। আমি আর দেরি না করে সেই নম্বরটিতে কল করতে লাগলাম। কিন্তু কানে ভেসে আসলো সেই চিরচেনা কন্ঠ যা পাঁচ বছর ধরে শুনে আসছি।

” আপনার কাঙ্ক্ষিত নম্বরটিতে এই মূহুর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা, অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার কল করুন—- The number you are calling can not be reached at the moment, please try again later”

আমি অনবরত কল করতে থাকলাম তবে আর কল ঢুকছেনা। আমি পারছিনা চিৎকার করে কান্না করতে। অস্থির হয়ে গিয়েছি। তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছি ও আমার আশে পাশেই আছে। তার থেকেও বড় কথা আমার এই নম্বর পেলো কোথায়? এই নম্বর তো তৃপ্তি আদিবা এরাকেও দিয়েছি। তার মানে কি ওরা আমাকে মিথ্যা বলছে? ওরা কি জানে শিলা কোথায়? যদি না জানে তাহলে শিলা আমার নম্বর পেলো কোথায়? আমি কিভাবে ওকে খুজবো? এখন আমার কি করা উচিৎ?

আমার বসে থাকতে ইচ্ছা করছেনা৷ মন চাইছে বাস থেকে নেমে চিৎকার করে কান্না করি। তবে সেই সুযোগ নেই। আমি সিটে বসে ছটফট করছি। পাশে তাকিয়ে দেখি শিলা ম্যামও ঘুমিয়ে গেছে। বাসের সবাই ঘুমিয়ে গেছে। তবে আমি পারছিনা। এভাবে হঠাৎ মেসেজ দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখার মানে কি? তার কি আমার কথা একটুও মনে পড়ছেনা?

সারা রাস্তা ছটফট করতে করতে এসেছি। এক সেকেন্ডের জন্যও চোখ বুঁজতে পারিনি। তবে ও আমার আশেপাশে আছে। আমার কিছু একটা করতে হবে যাতে ওকে আমি ওকে আমার সামনে নিয়ে আসতে পারি। কিছু একটা ভাবতে হবে৷

বাড়িতে এসেও চোখে একটুও ঘুম নাই। বার বার আমি ওর নম্বরে ফোম দিচ্ছি। সারাদিন আমার একটুও ঘুম হলোনা৷ রাতেও খেতে গিয়ে আমার অন্যমনস্ক হয়ে থাকা দেখে রফিক ভাই প্রশ্ন করলো

রফিক ভাইঃ নীল কি ব্যাপার কোনো সমস্যা?

আমিঃ না কোনো সমস্যা নাই।

রফিক ভাইঃ তাহলে না খেয়ে অন্যমনস্ক হয়ে আছিস কেনো?

আমিঃ এমনিই ভালো লাগছেনা

রফিক ভাইঃ কোনো সমস্যা থাকলে খুলে বল।

আমিঃ কোনো সমস্যা নেই ভাই।।

রফিক ভাইঃ তাহলে খেয়ে নে।

আমি চুপচাপ খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। কোনো মতেই ঘুম আসছেনা। শেষ রাতের দিকে ঘুম আসলো।

সকালে উঠে না খেয়েই অফিসে গেলাম৷ সারাদিন চুপচাপ কাজ করলাম৷ আমি শুধু একটা কথাই ভাবছি কিভাবে শিলাকে সামনে আনবো? সেদিনের মতো কাজ শেষ করলাম৷

দেখতে দেখতে আরও ২ মাস কেটে গেলো। এই দুই মাসে প্রতিদিন আমি শিলাকে ফোন দিয়েছি। লাভ হয়নি৷ আজকে অফিসে বসে কাজ করছি। তখন পিয়ন এসে আমাকে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে গেলো।
আমি বুঝতে পারলাম না কিসের খাম এটা।

খামটা খুলে ভিতরে যা দেখালাম তা দেখে আমি বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলাম। এটা কিভাবে সম্ভব? এতো কম সময়ে এটা কি আদৌ হওয়া পসিবল? কারণ খামের ভিতরে যা ছিলো…………..

চলবে……………….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে