আমি দূর হতে তোমারে দেখেছি পর্ব-১৩

0
784

#আমি_দূর_হতে_তোমারে_দেখেছি
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৩

ইহান পাঞ্জাবি-পাজামা পরে বের হতেই ইহানের দিকে চোখ আটকে যায় রায়ার। কালো রঙের পাঞ্জাবি সাদা রঙের পাজামাতে ইহানকে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে।

ইহান পাঞ্জাবির হাতা ঠিক করতে করতে রায়ার দিকে এগিয়ে আসে। রায়ার সামনে দাঁড়িয়ে শাহরুখ খান স্টাইলে হাত দুইপাশে দিয়ে বলে,” কেমন লাগছে আমাকে? মেয়েরা কি প্রেমে পড়বে?”

রায়া কোমরে দুই হাত দিয়ে বলে, ” অন্য মেয়েদের কেন প্রেমে পড়তে হবে?”
” প্রেমে পড়লে একটু ভালো লাগতো আর কি!”
” প্রেমে না পড়লে ভালো লাগবে না?”
” লাগবে, তবে কম।”
” এই যে নিজের পা দুটো দেখছেন না? এগুলো কিন্তু আমি রাখব না, কে*টে বাড়িতে ফেলে রাখব।”

” থাক, মেয়েদের বলে দিও আমার বিয়ে হয়ে গেছে।” বলেই দুজন একসাথে হেসে ফেলে। ইহান রায়াকে কাছে টেনে বলে, ” পাঞ্জাবী-পাজামা পরে এসেছি। এবার বর তার বউকে চুমু খাবে না? আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি।”
” কিন্তু আমার তো আগে গিফট চাই। কী যেন এনেছেন আমার জন্য, ওটা দিয়ে তারপর সবকিছু।”
” আমাকেই ঠ*কাবি সবসময়। পেয়েছিস একটা মানুষ, যা বলছিস তাই শুনছি।”
” আমার কি আর দশজন আছে নাকি যে দশজনের মধ্যে একজন কথা না শুনলেও হবে?”
” দাঁড়া একটু।”

ইহান রায়াকে ছেড়ে জানালার কাছে গিয়ে জানালার বাহিরে থাকা ফুলগাছ থেকে একটা ফুল ছিড়ে নিয়ে এসে রায়ার কানে গুজে দেয়। রায়াকে টেনে আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে বলে,” দেখতো, এখন বেশি সুন্দর লাগছে না?”

রায়া মুচকি হেসে বলে, ” আপনার বউকে আপনি যেভাবে সাজাবেন সেভাবেই সুন্দর হবে।”
” আমার বউ বলে কথা।”
” জি। এবার আমার গিফট বের করেন।”
” লাগবেই?”
” জি। জলদি দেন। অনেক অপেক্ষা করিয়েছেন।”
” আমিও অপেক্ষা করছি। ”
” গিফট চাই গিফট।”

ইহান মেঝেতে বসে এক হাটু উঁচু করে সেখানে রায়াকে পা রাখতে বলে। রায়া ইহানের হাটুর ওপর পা রেখে শাড়িটা একটু তুলে দাঁড়িয়ে থাকে৷ ইহান পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা পায়েল বের করে রায়ার পায়ে পরিয়ে দেয়।

একইভাবে বসে থেকেই জিজ্ঞেস করে,” কেমন লাগছে? পছন্দ হয়েছে?”

রায়া হাসির রেখা টেনে বলে,” আপনার পছন্দকে অপছন্দ করার উপায় আছে?”
” তাহলে পছন্দ হয়েছে!”
” হু, অনেক পছন্দ হয়েছে। সুন্দর লাগছে আমাকে?”

রায়ার পা নিচে নামিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় ইহান। রায়া দুই হাত নিজের দুই হাত দিয়ে ধরে গেয়ে ওঠে-
আপ কি তারিফ ম্যা কিয়া কাহে
আপ হামারি জান বান গায়ে….
আপ হামারি জান বান গায়ে…….

ইহানের অবস্থা বুঝতে পেরে রায়া ইহানকে থামিয়ে বলে ওঠে, “আমরা এখানে রোমান্স করতে থাকলে ছাদে সব অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাবে, চলুন চলুন। তাড়াতাড়ি চলুন।”

রায়া নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দরজার দিকে যেতে থাকলে ইহান বলে ওঠে, ” সবাই শুনে রাখো নারীরা ছলনাময়ী, একটা চুমু খেতে দেবে বলে সেই কখন থেকে আশায় রেখে গিফট পাওয়া হয়ে গেছে আর চলে যাচ্ছে। নারী আমি তোমাকে ঘৃ*ণা করি।”

রায়া ইহানের কথা শুনে হাসতে হাসতে তার কাছে ফিরে আসে। ইহানের গালে একটা চুমু দিয়ে বলে, ” এই নারীকে ছলনাময়ী না আবেদনময়ী বলতে শেখো জান।”

রায়া ইহানের হাত ধরে এবার ঘর থেকে বের হয়। রুম থেকে বের হয়েই দেখে বিচ্ছুবাহিনী বাহিরে দাঁড়িয়ে তাদের দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে। তাদের সবার তাকিয়ে থাকা দেখে ইহান আর রায়া নিজেরা একে অপরকে দেখতে থাকে৷ রায়া আর ইহান দাঁড়িয়ে যায়।

রায়া ইহানের দিকে বেঁকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, ” এরা সবাই সবকিছু দেখে ফেলেনি তো?”

ইহান হালকা কেশে সবার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, ” অনুষ্ঠান রেখে এখানে কী তোদের?”

সবার মধ্যে থেকে একজন বলে,” আমরা সবাই নাচবো, আপুর তো নাচের আগে একবার দেখে নেওয়ার কথা। মামি বলল আপু নিচে এসেছে তাই ডাকতে এসেছিলাম।

রায়ার হঠাৎ মনে পড়তেই ইহানকে ছাদে যেতে বলে সবাইকে নিয়ে একটা রুমে চলে যায়। ইহান সবকিছু বোঝার চেষ্টা করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছাদে চলে যায়।
_____

হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত সাড়ে দশটা বেজে যায়৷ সবাই একে একে ছাদ থেকে যাওয়া শুরু করে দিয়েছে। রায়া আর ইহান তখনও একপাশে চেয়ারে বসে বসে গল্প করছে। রায়া আক্ষেপ করে বলে,” আমার বিয়ে আর এত আনন্দ করে হলো না। এই আক্ষেপটা আমার সারাজীবন থেকে যাবে।”

ইহান রায়ার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে, ” যা হয়নি একইরকম ভাবে তো আর তা সম্ভব না। তবে আমাদের বিবাহবার্ষিকীতে আমরা আবার বর-বউ সাজবো, বাসর করব হবে না?”
” বর-বউ সাজা পর্যন্ত ঠিক ছিল। ”
” বর-বউ সাজবো আর বাসর হবে না?”

রায়া নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, ” যাবেন আপনি এখান থেকে নাকি ধা*ক্কা দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দেব কোনটা?”
” জড়িয়ে ধরলেই হবে। ধরবি জড়িয়ে? দেখ সবাই চলে গিয়েছে পর্দার ওইপাশে বর সাহেব আর হবু বউয়ের সাথে প্রেমালাপ করছে আর যারা আছে তারা নিজেদের কাজে ব্যস্ত, আমাদের কেউ দেখবে না।”
” ধা*ক্কা দিয়ে ফেলে দিলেও হয়তো কেউ খেয়াল করবে না তাই না?”
” জামাইকে ভালোবাসতে হয়, ভয় দেখাতে হয় না।”

রায়া কিছু বলবে তখনই ইহান তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,” মাহমুদ আসছে, চুপ থাক এবার। মানসম্মানের দফারফা করে ফেলিস না ওর সামনে।”

রায়া আর কিছু না বলে মুচকি হেসে মাথা নিচু করে নেয়। মাহমুদ এসে ইহানকে ডাকতেই দুজনে একসাথে তার দিকে তাকায়। সামনে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে ইহানকে বলে,” চল একটু বের হই।”

ইহান জিজ্ঞেস করে, ” এতরাতে কোথায় বের হব?”
” মালিহা ফোন করেছিল, ওর সাথে দেখা করতে যাব। তুই প্লিজ আমার সাথে চল।”
” এতরাতে আমি আমার বউকে একা রেখে কোথাও যাব না। পরীর মতো বউ আমার, যদি হারিয়ে যায়? ”

ইহান কথাটা বলতেই রায়া ইহানের পায়ের ওপর চিমটি কাটতেই ইহান তার দিকে তাকিয়ে বলে, ” কী হয়েছে? আমি কি ভুল বলেছি নাকি?”

মাহমুদ হাসতে হাসতে বলে, ” বেশি দূরে তো না। তোর বউকেও নিয়ে চল৷ আমি আমার বাইক নিয়ে যাচ্ছি তুই আর রায়া তোদের বাইক নিয়ে চল। এতদিন রায়াকে সাথে নিয়ে মালিহার সাথে দেখা করেছি আর আজ তোদের দুজনকেই নিয়ে যাব চল। রায়া যাবি না?”

রায়া আমতা আমতা করে বলে, ” ভাইয়া, অনেক রাত হয়ে গেছে। ঘড়ি দেখো, দশটা চল্লিশ বাজে। এগারোটা বাজতে বেশি দেরি নেই।”
” বিশ মিনিটেরই তো ব্যাপার। যাইতে সাত মিনিট আসতে সাত মিনিট আর ওখানে পাঁচ, ছয় মিনিট। এগারোটার মধ্যেই চলে আসব চল।”

রায়া কিছু না বলে ইহানের দিকে তাকায়। ইহান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় আর বলে,” চল, বউ নিয়ে মাঝরাতে বেড়ানো হয়নি। সুন্নাত পালন করে আসি আর তাছাড়া মাহমুদ মালিহার সাথে দেখা করলে আমার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মশা মা*রতে হবে তার চেয়ে বউ নিয়ে যেয়ে সময় কাটানো ভালো। রায়া তুই না গেলে মালিহার কোন বোন যদি ওর সাথে এসে আমাকে পছন্দ করে ফেলে তখন আমি কী করব? তোর নিজের বরের কথা ভেবে অন্তত যাওয়া উচিৎ। ”
” সবকিছুতেই মজা খুঁজে পায় এই লোক। চলো আমিও যাব।”

তিনজন বাইক নিয়ে বেরিয়ে যায় একট অসম্ভব সুন্দর সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে। নির্দিষ্ট সময়ে চারজনের দেখাও হয়ে যায়। মাহমুদ আর মালিহাকে কথা বলার সুযোগ করে দিতে চাইলে মালিহা বলে,” আমি তো কথা বলতে বা ব্যক্তিগত সময় কাটাতে আপনাদের আসতে বলি নি ভাইয়া।”

রায়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,” তাহলে?”
মালিহা বলে,” আমি তো মাহমুদকে বলে দিয়েছি, তোমাদের দুজনকে নিয়ে আসতে। সামনেই একটা চায়ের স্টল আছে, ওখানকার চায়ের কোন তুলনা হয় না। কাল বিয়ে হয়ে গেলে আর ওখানকার চা খেতে পারব কি না সেটা ভেবেই তোমাদের আসতে বলেছি। সবাই গিয়ে এখন চা খাব তারপর আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে তোমরা চলে যেও। ”

মালিহার কথায় সবাই রাজি হয়ে যায়৷ বাড়ির সামনে এসে সবাই বাইক নিয়ে চা খেতে বের হয়। রাত্রির অন্ধকারেও চাঁদের আলোয় টইটম্বুর করছে রাস্তাঘাট। প্রিয় মানুষের সাথে রাতে রাস্তায় বের হওয়া, একসাথে বসে চা খাওয়া, গল্পগুজব সব মিলিয়ে সবাই কিছুটা সময় একসাথে খুব ভালোভাবে কাটিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। দুটি হৃদয় আজ প্রবল অপেক্ষায় কাল একসাথে হওয়ার আর অন্য দুটি হৃদয় ভালোবাসায় মাখামাখি হচ্ছে প্রতিটাক্ষণ।

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে