আমি দূর হতে তোমারে দেখেছি পর্ব-১১

0
847

#আমি_দূর_হতে_তোমারে_দেখেছি
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১১(প্রাপ্তবয়স্ক মনস্কদের জন্য)

রায়া বারান্দা থেকে যেতে লাগলে ইহান রায়াকে পিছন থেকে ডাক দেয়। রায়া আর না এগিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে যায়।
ইহান বলে ওঠে, ” তোকে ভালোবাসি রায়া।”
রায়া ইহানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, ” সময় সময় আপনার ভালোবাসায় আমার ভয় হয়। এত ভালোবাসা আমার সইবে তো!”

” ঠিক সয়ে যাবে। তুই আমার খুব শখের নারী। আমি তোর কাছেই বারবার আটকে গেছি। আমি, আমার চোখ আর আমার মন সবকিছুই তোর কাছে এসে থেমে গেছে। তোকে আমি খুব যত্নে রাখব। শখের জিনিস অবহেলায় না, যত্নে রাখতে হয়। সমরেশ মজুমদারের একটা উক্তি আছে না? – ‘ভালোবাসা হলো বেনারসি শাড়ির মতো, ন্যাপথালিন দিয়ে যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখতে হয় , তাকে আটপৌরে ব্যবহার করলেই সব শেষ।’ আমি তোকে বেনারসি শাড়ির মতো যত্নে রাখব।”

বলেই ইহান রায়ার কাছে এসে কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়। ইহান নিজেই রায়াকে রেখে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বলে,” আজ আমিই রান্না করব৷ এখন তোর রান্না করতে হবে না। তুই রুমেই থাক, আমি আসছি।”

ইহান রুম থেকে রান্নাঘরের দিকে এগুতেই রায়া নিজেও ইহানের পিছন পিছন রান্নাঘরের দিকে চলে যায়। রান্না করার পুরোটা সময় রায়া ইহানকে মুগ্ধচোখে দেখেছে। ইহানকে দেখে মনে মনে ভাবে- পুরুষ মানুষকে রান্নাঘরে খুব একটা খারাপ লাগে না। মাঝেমাঝে তাদের রান্নাঘরে পাঠিয়ে রান্নাঘরের সৌন্দর্য্য বর্ধন করাই যায়।

রান্না শেষ হলে দুজন সেটা নিয়ে খাবার টেবিলে চলে যায়। নুডলস একটা প্লেটে নিতে দেখে রায়া বলে, ” আপনি খাবেন না? একটা প্লেটে কেন নিচ্ছেন?”

” দুইটা প্লেট লাগবে না। কারণ তুই খাচ্ছিস না।”
” কেন?”
” কারণ আমি তোকে খাইয়ে দেব।”

রায়া অবাক চোখে ইহানের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইহান মুচকি হেসে রায়ার দিকে খাবার বাড়িয়ে দেয়। রায়া ইহানের দিকে তাকিয়েই খেয়ে নেয়। এত ভালোবেসে কোন শ*ত্রু বি*ষ দিলেও তো নির্দ্বিধায় খেয়ে নেওয়া যায়। রায়া ইহানের হাতেই খেয়ে নেয়। প্রিয় মানুষের হাতের রান্না হয়তো একটু বেশিই সুস্বাদু হয়। যে পুরুষ ভালো রান্না করে সেই পুরুষ অসম্ভব রকমের ভালোবাসতেও পারে।
______

রায়া বৃষ্টিতে ভিজছে। দাঁড়িয়ে দুই হাত দুই দিকে দিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছে। বৃষ্টির ফোঁটা রায়ার চোখেমুখে গালে ঠোঁটে পড়ছে। ইহান ছাদেই রায়ার থেকে একটু দূরে বসে বসে রায়ার ভেজা দেখছে। বৃষ্টির ফোটায় ফোটায় ভিজে একাকার অবস্থা। প্রকৃতি যে বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে পরিবেশ আরও সুন্দর থেকে সুন্দর হয়ে ওঠে। ভাবনাতেই জেগে ওঠে প্রিয় গানের লিরিক্স।

রিমঝিম ধারাতে,
চায় মন হারাতে

রিমঝিম ধারাতে,
চায় মন হারাতে

এই ভালোবাসাতে
আমাকে হারাতে…

এলো মেঘ যে এলো ঘিরে
বৃষ্টি সুরে সুরে শোনায় রাগিনী

মনে স্বপ্ন এলোমেলো, এ কী শুরু হলো
প্রেমের কাহিনী…

এলো মেঘ যে এলো ঘিরে
বৃষ্টি সুরে সুরে শোনায় রাগিনী

মনে স্বপ্ন এলোমেলো, এ কী শুরু হলো
প্রেমের কাহিনী…

রিমঝিম এ ধারাতে, চায় মন হারাতে।
রিমঝিম এ ধারাতে, চায় মন হারাতে।

ইহান ভাবনা থেকে ফিরে বসা থেকে উঠে রায়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রায়ার সবচেয়ে কাছে এসে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, ” প্রিয় বৃষ্টিবিলাসী, আপনার থেকে আর দূরে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না আমার পক্ষে। বৃষ্টিকন্যার রূপ যে প্রতিটি বৃষ্টির ফোটায় বেড়ে যাচ্ছিল আর মোহিত করছিল, বিচ্ছিরিভাবে আকর্ষণ করছিল আমায়।”

কথা শেষ করে কানে ঠোঁট ছুয়ে দিতেই বিদ্যুৎ চমকানোর মতো চমকে ওঠে রায়া। ইহান সাথে সাথে রায়ার কোমর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। রায়া স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ইহান আকাশের দিকে মুখ করে মাথা এদিক ওদিক করে জোরে ঝাঁকি দিতেই চুলে থাকা পানি রায়ার মুখে ছিটে যায়। রায়া সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয়। ইহান মুখ নিচু করে রায়ার দিকে তাকায়, রায়া নিজেও এবার ইহানের দিকে চোখ খুলে চেয়ে থাকে। ইহানের নে*শায় বুদ হয়ে যাওয়া দৃষ্টি যেন তাকে বেধে ফেলছিল, কাছে টানছিল। রায়ার পলকহীন দৃষ্টির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই কাছে এগুতে থাকে সে। ইহানের চুম্বন যেন রায়ার প্রতিটি শিরায় উপশিরা আন্দোলিত করছে। রায়া সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয়। ইহানের পিঠ খামচে ধরে। হৃৎস্পন্দনের গতি বেড়েই চলেছে। ইহানের চুম্বনে যেন সবকিছু উলোটপালোট করে দিচ্ছে। পরিবেশ যেন আরও একটা সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষী হয়। রায়া ইহানের সম্মোহনী ডাকে সাড়া দেয়। নিজেও যেন প্রিয় মানুষকে পেতে নিজেকে তার দিকে এগিয়ে দেয়। ইহান রায়ার সাড়া পেয়ে সময়টা আরও উপভোগ্য করে তোলে।

রায়া ওয়াশরুম থেকে পোশাক চেঞ্জ করে বাহিরে এসে মাথা মুছছিল। ইহান বারান্দায় দাঁড়িয়ে কারও সাথে কথা বলছিল। রায়া একবার সেদিকে উঁকি দিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে চুল মুছতে মুছতে ছাদের কথা মনে করে মিটিমিটি হাসতে থাকে। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি আর আকাশের তলায় বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুজনের চুম্বনরত অবস্থার কথা মনে পরতেই রায়া চোখ বন্ধ করে নেয়। রায়া অন্যমনস্ক হয়ে আয়নায় নিজেকে দেখছে আর চুল মুছছে এমন অবস্থায় ইহান পিছনে এসে দাঁড়িয়ে একটু নিচু হতেই রায়া এক ঝটকায় চুলগুলো পিছনে দিয়ে ফেলে। ইহান ‘আহ’ শব্দ করতেই রায়া জ্ঞানে ফিরে আসে। ইহানকে চোখে হাত দিয়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রায়া বারবার স্যরি বলেই যাচ্ছে।

ইহান চোখে হাত রেখেই বলে, ” এত স্যরি বলতে হবে না। ঠিক আছে। আমি তোর পিছনে দাঁড়িয়েছি সেটা তুই দেখিস নি?”

রায়া অসহায়ের ভঙ্গিতে বলে, ” আসলে আমি খেয়াল করিনি।”
” কিহ! আয়নাতে আমাকে দেখিস নি?”
” না, দেখিনি।”
” আমার বৃষ্টিপ্রিয়া কি অন্ধ হয়ে গেল বৃষ্টিতে ভিজে?”
” চোখ আঙুল দিয়ে ঢেকেই এসব বলা শুরু করেছেন! আমার কাছে আসুন চোখে ভাপ দিয়ে দিচ্ছি।”

শাড়ির আঁচল মুখে নিয়ে ইহানের কাছাকাছি এসে চোখে সেটা দিতে থাকে। ইহানও সেই সুযোগে খাটের ওপর বসে, রায়াকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। রায়ার কোমরে হাত দিয়ে সুরসুরি দিতেই রায়া লাফিয়ে ওঠে। ইহান আরও শক্ত করে রায়াকে ধরে হাসতে থাকে।

রায়া রাগী গলায় বলে, ” ভালো হবেন না আপনি? এত অসভ্য কেন?”

ইহান মুখে হাসি রেখেই বলে, ” বউয়ের কাছে ভালো হয়ে কী করব? পৃথিবীর কোন পুরুষই তার নিজস্ব নারীর কাছে সভ্য না তাই আমিও এর ব্যতিক্রম হতে চাই না।”
” আপনি একটু বেশিই অসভ্য। ”

ইহান মাথা উঁচু করে রায়ার গালে চুমু খেয়ে বলে, ” তখন বৃষ্টিতে ভেজা চুমুর টেস্ট কেমন ছিল?”

রায়ার মুখে কথা আটকে যায়। এই প্রশ্নের উত্তরে কী বলা উচিৎ? এই প্রশ্নের উত্তর কি আসলেই দেওয়া যায়!

ইহান রায়াকে পায়ের ওপর বসিয়ে নিয়ে কাধে থুতনি রাখতেই রায়ার অস্বাভাবিক লাগতে শুরু করে। ইহানের শ্বাস পড়তেই রায়া ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিতে থাকে। রায়ার ঘাড়ে ঠোঁট ছুইয়ে দিতেই তড়িৎ গতিতে ইহানের দিকে ফিরে তাকায় রায়া। ইহান আবারও রায়ার দিকে নেশাক্ত চোখে তাকিয়ে রায়ার দিকে এগুতে থাকে। ইহানকে এগুতে দেখে রায়া নিজেও একপা দু’পা করে পিছিয়ে যেতে থাকে। ইহান সাথে সাথে রায়ার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়। রায়ার কপালে চুম্বন করতেই রায়া মাথা নিচু করে নেয়। গালে, ঠোঁটে ইহানের স্পর্শে কেঁপে কেঁপে ওঠে রায়া। ইহানের মাতাল করা স্পর্শ তাকে ভীষণ লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে। রায়া নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বারান্দায় চলে যায়৷ বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে নিজেকে শান্ত করতে থাকে। হৃৎস্পন্দন বড্ড বেড়ে গিয়েছে তার। ইহান পিছন থেকে এসে রায়ার কাধ থেকে চুল সরিয়ে আবারও ঠোঁট ছুইয়ে দেয়। রায়া পিছন ফিরে ইহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ইহান রায়াকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে অগ্রসর হয়। রায়া তখনও লজ্জায় মাথানিচু করে আছে।

ইহান রুমে এসে রায়াকে বিছানায় বসিয়ে বলে ওঠে, ” রায়া, আমি আজ আমাদের সম্পর্কটাকে পূর্ণতা দিতে চাই। আমি তোকে সম্পূর্ণভাবে পেতে চাই আজ। আজকে শুধু আকাশ থেকে মাটিতে নেমে আসা বৃষ্টি, তুই আর আমি। আজ প্রকৃতি আমাদের এক নতুন সম্পর্কের সাক্ষী হবে, আমাদের ভালোবাসায় তাল মিলিয়ে মেতে উঠবে আমাদের সাথে। ”

রায়া নিশ্চুপ বসে আছে৷ ইহান আর রায়া নিজেদের সম্পর্কের পূর্ণতায় আর নতুন নাম দিতে নিজেরা নিজেদের একধাপ এগিয়ে দেয়। তারপর প্রকৃতিও সাক্ষী হয় আরও একটা ভালোবাসায় পরিপূর্ণ মুহুর্তের।

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে