আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব-১১

0
427

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব১১
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ হ্যালো আপা ভাই কে আসার সময় সিলেটের চা নিয়ে আসতে বইলেন তো। বাবা নিয়ে যেতে বলছে।

তানিয়া বেগম স্মিত হেসে বলে-
-“ তোমার ভাইকে বলে দিয়েছি আগেই, আজ ফেরার পথে নিয়ে আসবে। তোমরা যাবে কবে গ্রামে?
-“ এই তো চিত্রার এক্সামের ঝামেলা শেষ হলে। আপনারা যাবেন না?
-“ হ্যাঁ যাবো।
-“ এক সাথেই তো তাহলে যাওয়া যায়।
-“ আমি আর তৃষ্ণা না হয় যেতে পারবো কিন্তু তুষার আর তার বাপের তো আগে সময় বের করতে হবে।
-“ সেটাও ঠিক,আচ্ছা আজ রাখি রান্না বান্না করতে হবে ভাবি তার ভাইয়ের বাসায় গেছে।
-“ আচ্ছা রাখো।

চয়নিকা বেগম ফোন টা কেটে মেয়ের হাতে ধরিয়ে দেয়। চিত্রা ফোনটা নিয়ে সোফায় বসে টিভিতে রোডিস দেখতে থাকে। এরমধ্যে উপর থেকে রায়ান কয়েকটা ফাইল নিয়ে এসে চিত্রার ওপর পাশে বসে। চিত্রা নড়েচড়ে বসে। একবার টিভির দিকে তো আরেকবার রায়ানের দিকে তাকাচ্ছে। রায়ান চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ তোমার এক্সাম কবে?

চিত্রা টিভির দিকে চেয়ে বলে-
-“ আটাশ তারিখে।
-“ তো পড়াশোনা না করে টিভির সামনে বসে আছো কেনো?
-“ সবসময় ই কি পড়াশোনা করতে হবে নাকি? আর এই সন্ধ্যায় কে পড়তে বসে।
-“ সব স্টুডেন্ট সন্ধ্যাতেই পড়তে বসে। টিভি বন্ধ করে পড়তে যাও।

চিত্রা টিভি টা বন্ধ করে ফোন টা হাতে নিয়ে উপরে চলে যায়। নিজের রুমে না ঢুকে সোজা বাবার কাছে চলে যায়। দরজার সামনে এসে দরজা ফাঁক করে দেখে তার বাবা ঘরে নেই। সন্ধ্যার সময় তার বাবা তো স্টাডি রুমে থাকে। চিত্রা ছুট লাগালো স্টাডি রুমে। সাহেল আহমেদ স্টাডি রুমে বসে বই পড়ছেন। চিত্রা চুপিচুপি রুমে ঢুকে বাবার পাশে বসলো। রুম টার চার দিকে চার টা বড় বড় বুক শেল্ফ। তাতে রয়েছে হরেক রকমের বই। সাহেল আহমেদ নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে তার মেয়ে বসে আছে। মুচকি হাসেন।

-“ আজ হঠাৎ এ ঘরে যে?
-“ এমনি।
-“ বই পড়বে?
-“ হ্যাঁ।
-“ যাও পছন্দ মতো একটা বই নিয়ে পড়ো।

চিত্রা বসা থেকে উঠে গিয়ে শেল্ফ থেকে হুমায়ুন আহমেদের অপেক্ষা নামক বই টা নিয়ে আসে। বইটা খুলে পড়তে নিবে আর ওমন সময় চিত্রার ফোন বেজে উঠে। সাহেল আহমেদের কপালে দু ভাজ পড়লো। বইয়ের দিকে চোখ রেখেই বলল-
-“ পড়ার সময় ফোন সাথে রেখো না। এরা প্রচুর বিরক্ত করে।

চিত্রা বই টা টেবিলে রেখেই স্টাডি রুম থেকে বের হয়। রাতুল ফোন দিয়েছে। একবার ভাবলো ফোন টা রিসিভ করবে না কিন্তু কি একটা মনে করে ফোন টা রিসিভ করলো চিত্রা। ওপাশ থেকে ভেসে আসলো-

-“ কেমন আছো চিত্রা?
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আমি,আপনি?
-“ আমি ভালো নেই।

চিত্রা ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করলো-
-“ ভালো নেই কেনো?
-“ বিয়ে টা কি করা যায় না?
-“ করা গেলে অবশ্যই আমি না করতাম না।
-“ অন্য কাউকে পছন্দ করো?
-“ না।
-“ কাল একবার দেখা করতে পারবা?
-“ কেনো?
-“ একটু দেখা করতাম।
-“ বাসায় আসেন।
-“ না তোমার কোচিং এর সামনে দাঁড়িয়ে থেকো।
-“ আচ্ছা রাখি।

কথাটা বলে চিত্রা ফোন কেটে দেয়। একদিকে তুষার ভাই আরেক দিকে রাতুল ভাই। চিত্রা তপ্ত শ্বাস ফেলে নিজের রুমে চলে আসে।

রাফি আর রাসেল আহমেদ বসে আছে অধরার সামনে। রাসেল আহমেদ কাগজপত্র বের করে অধরার সামনে রাখে। অধরা কাগজ গুলোতে সাইন করার আগে রাসেল আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ আমি টাকা ক্যাশ নিতে চাই না, আমি চাই টকাগুলো আমার একাউন্টে ট্রান্সফার হোক।

রাফি বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে ফেলে। সামান্য জমি নিয়ে কি তাল-বাহানা করছে এই মেয়ে। ফাস্ট দেখে যতোটা ভালো লেগেছিল এখন ততটাই বিরক্ত লাগে।

-“ আপনার টাকা গুলো আপনার একাউন্টে ট্রান্সফার হয়ে যাবে। আর প্যারা দিয়েন না তো সাইন করেন এখন।
-“ আগে টাকা টা পাঠান।

রাফি পকেট থেকে ফোন টা বের করে রায়ান কে ফোন করে বলে দেয় টাকা ট্রান্সফার করে দিতে। টাকা অধরার একাউন্টে আসলে অধরা কাগজ গুলোতে সাইন করে দেয়। রাফি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। রাসেল আহমেদ কাগজ গুলো ফাইলে ঢুকিয়ে অধরার দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ ধন্যবাদ, আপনার এবং আপনার ফ্যামিলির ইনভাইট রইলো আমাদের বাসায় কালে দুপুরে। আই থিংক না করবেন না।
রাফি তার বাবার কথা শুনে তার হাত চেপে ধরে। ফিসফিস করে বলে-

-“ ইনভাইট কেনো দিচ্ছো তাও বাসায়। রেস্টুরেন্টে খাইয়ে দিলেই তো হয়।

অধরা বাপ বেটাকে পর্যবেক্ষণ করে বলে-
-“ চেষ্টা করবো আসার। এখন আসি বাই।

কথাটা বলে অধরা চলে যায়। রাসেল আহমেদ আর রাফিও চলে আসে।

————–

-“ হ্যাঁ রে তুষার তোর কি মাধবীর মেয়ে ময়নার কথা মনে আছে?

তুষার খাবার খাচ্ছিল হঠাৎ তানিয়া বেগমের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বলে-
-” কয়েক বছর আগে যে এসেছিল বাচ্চা মেয়েটা?
-“ হ্যাঁ। ও কিন্তু এখন আর বাচ্চা নেই।
-“ কিসে যেনো পড়ে?
-“ এবার এসএসসি দিবে।
-“ এসএসসি দিবে। যে কিনা এখনো স্কুলের গণ্ডী পাড় করে নি সে তো এখনও বাচ্চাই।
-“ মেয়েটা কিন্তু দেখতে বেশ সুন্দর।

তুষার কিছু বললো না। তানিয়া বেগম গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলে-
-“ এবার গ্রামে গিয়ে ভাবছি মাধবীর সাথে কথা বলবো।
তুষার ভাত খেতে খেতে জবাব দেয়-
-” ভালো তো।
-“ কি নিয়ে কথা বলবো জিজ্ঞেস করলি না?
-“ কি নিয়ে কথা বলবা?
-“ তোর আর ময়নার বিয়ের ব্যাপার নিয়ে কথা বলবো।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই তুষার বিষম খায়। তানিয়া বেগম তুষারের মাথায় পিটে হাত বুলিয়ে বলে-
-“ ধিরে সুস্থে খা,এখনই তো গলায় আটকে যাচ্ছিল ভাত।

তুষার গ্লাস থেকে পানি খেয়ে বলে-
-“ আমার গলায় ভাত আটকে যাচ্ছিল না মা, আমার শ্বাস টাই আটকে যাচ্ছিল তোমার কথা শুনে। তুমি কার সাথে কার বিয়ের কথা বলছো!
-“ কেনো তর আর ময়নার।
-“ মাথা কি একেবারে খারাপ হয়ে গেছে? ওর বয়স কত? আঠারোও হয় নি ওর থেকে গুনে গুনে দশ-এগারো বছরের বড় আমি।
-“ তাতে কি? বয়স কোনো ম্যাটারই করে না।
-“ তোমার চোখ এতো বাজে আগে তো জানতাম না মা।
-“ কেনো কি হইছে?
-“ তুমি আশেপাশে মেয়ে রেখে গেছো ঐ মাধবী খালার মেয়ে ময়নার কাছে!

তানিয়া বেগম আফসোস নিয়ে বলেন-
-“ আশেপাশে তো কত মেয়ে দেখালাম তোকে, তুই তো পছন্দ করলি না। আমি কি ছেলের বিয়ে দেখতে পারবো না ইহকালে?
-“ তুমি কি ভাবছো ঐ পিচ্চি মেয়ের কথা বললে আমি রাজি হয়ে যাবো?
-” সুন্দরী রাজি না হওয়ার কি আছে?
-“ সুন্দর ধুয়ে ধুয়ে তুমি পানি খাও মা।

সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে কথা টা বলে তৃষ্ণা। তানিয়া বেগম রাগী দৃষ্টি নিয়ে মেয়ের পানে চায়। তুষার প্লেটে হাত ধুয়ে উপরে উঠে চলে যায়। তানিয়া বেগম মেয়ের কান ধরে বলে-
-“ সম সময় কথার মাঝে কথা বলাই লাগবে তাই না?

তৃষ্ণা তানিয়া বেগমের হাত থেকে কান ছাড়াতে ছাড়াতে বলে-
-“ কান টা তো ছাড়ো ব্যাথা পাচ্ছি।

তানিয়া বেগম কান ছেড়ে দেয়।
-“ তুমি এতো মেয়ে দেখছো কই তোমার ভাইয়ের মেয়েকে তো দেখলে না?

তানিয়া বেগম বিরক্তি নিয়ে বলে-
-“ কার কথা বলছিস?
-“ কে আবার মামুর মেয়ে চিত্রা। ওরেও তো পারো এই বাড়ির বউ বানিয়ে আনতে।

তানিয়া বেগম কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। তৃষ্ণা কে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে-
-“ তুষার কে কি একবার চিত্রার কথা বলে দেখবো?
-“ দেখো গিয়ে বলে।
-“ রাজি হবে তো?
-“ সেটা আমি জানি নাকি?
-“ আগে গ্রামে গিয়ে নেই ঘুরে আসি তারপর কোমড় বেঁধে নামবো, ছেলের বিয়ে দিয়েই ছাড়বো।

-“ কবে যাচ্ছি আমরা?
-“ চিত্রার এক্সাম শেষ হোক তারপর।
-“ সবাই এক সাথে যাবে নাকি?
-“ হ্যাঁ তোর বাবা তো বললো এবার সবাই একসাথে যাবে।

-“ ভাইয়া কি আমাদের সাথে যাবে?
-“ জানি না,ওরে তো এখনও বলাই হয় নি। এখনও তো দেরি আছে বলবো নি।

-“ খাইতে দাও,পড়া আছে আমার। শুধু ছেলেরেই ডেকে ডেকে খাবার দাও। আমাকেও তো ডাকতে পারো সাথে।
-“ হিংসুটে, শুধু আমার ছেলে টাকে হিংসে করে।

——————-

-“ রাফি ভাইয়া কি করা যায় বলোতো?

রাফি আর চিত্রা কোচিং এর বাহিরে হাঁটছে। চিত্রার কথা শুনে রাফি মাথা উঁচু করে তাকিয়ে বলে-
-“ কি করবা?
-“ আর বইলো না রাতুল ভাই আসতেছে।
-“ রাতুল কেনো আসছে?
-“ জানি না।
-“ ঐ যে দেখো রাতুল আসছে।
চিত্রা তাকিয়ে দেখে সত্যি রাতুল তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। চিত্রা আশেপাশে তাকালো। রাতুল চিত্রার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ বাহ রাফি কেও সাথে নিয়ে এসেছো দেখছি।
-“ কি আর করবো বলুন,বোন তো একা তো বাহিরে ছাড়া যায় না। ভাই হিসেবে এইটুকু তো করতেই হয়।

রাতুল স্মিত হাসলো। রাফির কথাটা তার মোটেও পছন্দ হয় নি।
-“ একটু সাইডে আসবে কথা বলতাম?

চিত্রা রাফির পানে তাকালো। রাফি ইশারায় যেতে বললো। চিত্রা রাতুলের পেছন পেছন গেলো কিছুটা সামনে।

-“ চিত্রা বলছিলাম কি আর একটা বার কি ভেবে দেখা যায় না?
-“ কি?
-“ বিয়ে টা নিয়ে,না মানে মা আজ মেয়ে দেখতে যাবে।
-“ দেখেন রাতুল ভাই,আপনার মা যাকে দেখতে যাচ্ছে তাকে বিয়ে করুন। আপনি সুখীই হবেন। আমার জবাব আগেও যা ছিলো এখনও তাই থাকবে।
-“ এটাই শেষ কথা?
-“ হ্যাঁ।
-“ আচ্ছা তাহলে ভালো থেকো।

রাতুল চলে যায়। রাফি এগিয়ে এসে বলে-
-“ কি বললো?
চিত্রা রাফির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ কি আর বলবে,ঐ বিয়ে নিয়ে কথা বললো।
-“ তুমি কি বললে?
-“ আগেও যা বলেছি তাই বললাম।
-“ রাজি হলেও তো পারতে।
-“ কখনোই না,চলে বাসায়।

রাফি মাথা নাড়িয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। চিত্রা তপ্ত শ্বাস ফেলে। রাতুল একমাত্র রিয়ার ভাই দেখেই চিত্রা রাতুল কে বিয়ে করবে না। রাতুল কে রিজেক্ট করতে কিছুটা খারাপ লাগলেও ভালো লাগা ছিলো অসীম। কিছুটা রিভেঞ্জ নেওয়াই যায় সবার অগোচরে।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে