অবেলায় তোমার ডাকে পর্ব-০১

0
2612

#অবেলায়_তোমার_ডাকে
#জুবাইদা_মেহেরুন (লেখনীতে)
#সূচনা_পর্ব

বিকেল গড়িয়েছে!
কোচিং শেষে সবে মাত্র বাসায় আসলাম‌। বাসায় আসতে না আসতে মা আমার হাতে একটা গাঢ় লাল রঙের শাড়ি ধরিয়ে দিলেন। আমি হা করে তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে। তিনি বললেন, “এই শাড়িটা তাড়াতাড়ি পড়ে তৈরি হয়ে নাও।”
কিছুই বুঝতে পারলাম না আমি।আমি তো শাড়ি পরি না আর পড়তেও পারি না। এটা তো মা জানে তবুও শাড়ি কেন? কি হয়েছে আজ?

মায়ের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারলাম, “মা হঠাৎ শাড়ি কেন? আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না তা তুমি বেশ ভালো করেই জানো তবুও কেন?”

মা বললেন, “ওহ! ভুলেই তো গেছি। আমি সিহাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি, ও তোকে রেডি করে দিবে তুই বস।”

“কিন্তু কেন মা? কি হয়েছে? আমাকে বলবে?”

“আজ তোমায় দেখতে আসবে ইশা! ছেলেটা খুব ভালো। পরিবারসহ আমেরিকা থাকে। বাপ-ছেলে অনেক বড় বিজনেসম্যান।”

কিন্তু মা কিভাবে কি? আমি তো পড়াশোনা করছি! পড়াশোনার মাঝে এই,,,

“কোন কিন্তু না মা। এই সমন্ধটা বেশ পছন্দ হয়েছে তোমার বাবার। পাত্রপক্ষ তোমার ছবি দেখে তোমাকে খুব পছন্দ করেছে। এখন তোমাকে দেখতে চাচ্ছে। তোমার পড়াশোনার কোন ক্ষতিই হবে না। বিয়ের পরও তুমি পড়তে পারবে। তাছাড়া বিয়েটা তো এখনই হচ্ছে না। ছয় মাস পর হবে, তোমার এইচএসসি পরীক্ষার পরেই হবে। তখন ছেলের পুরো পরিবার বাংলাদেশে আসবে। বিয়ের পর তোমাকে ওখানেই নিয়ে যাবে।”

কথাগুলো বলেই মা চলে গেলেন। আমি শাড়ি হাতে খাটের উপর বসে পড়লাম।

আমি ইন্দ্রিয়া মুসকান ইশারা। সবাই ইশা বলেই ডাকে। আমার বাবা ইমতিয়াজ আহমেদ একজন আইনজীবী।আমি আমার বাবা মায়ের ছোট মেয়ে। আমরা দুই বোন বড় বোন সাবিহা সুলতানা সিহা। আমার আপু একজন ইঞ্জিনিয়ার। আপুর বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর। দুলাভাই ডাক্তার। আমার একটা দুই বছরের ভাগ্নে আছে। আমি ইন্টার ২য় বর্ষের ছাত্রী। ছোটবেলা থেকেই শিক্ষক হওয়ার খুব শখ আমার। সেই হিসেবেই সামনে এগোচ্ছি আমি। আজ কোচিং থেকে ফিরেই শুনলাম আমার বিয়ে ঠিক হচ্ছে! কিন্তু হঠাৎই বাবা এই ডিসিশন কেন নিলো বুঝতে পারলাম না। এতক্ষণ মা আমাকে ছেলের হাজারো সুনাম শুনিয়ে দিয়ে গেলেন।

ভাবনায় ছেদ ফুটিয়ে বড় আপু সিহা ঘরে প্রবেশ করলো।

ইশা তাড়াতাড়ি আয় তোকে রেডি করে দেই। ছেলেপক্ষ এলো বলে!

আমি আপুর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম, “আপু হঠাৎ এসব কি? আমি বিয়ে করতে চাই না।”

এই বিয়ের কথা বলেছে কে? এখন তো শুধু আংটি পড়াবে। সেই ছয় মাস পরে বিয়ে। এই ছয় মাসে যদি ইশা মণির ছেলে পছন্দ না হয় তবে বিয়ে ক্যানসেল।

শুনে কিছুটা স্বস্তি লাগছে। যাক একটা তো অপশন পেলাম। একদম নাকোচ করে দিবো।

পাত্রপক্ষের সামনে বসে আছি আমি। সামনে থেকে একজন যে আমায় চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে এটা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছি আমি। মাথা নিচু করে বসে আছি সেখানে। ছেলের মা বাবা আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ! আমার বাবা মায়ের সাথে মত বিনিময় করছে। আমার খুব বিরক্ত লাগছে এই মুহূর্তে।

হঠাৎ ছেলের মা বললেন, “মেয়ে তো মাশাল্লাহ! আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। এখন ওরা না হয় একটু আলাদা কথা বলুক।”

আমার বাবাও তাকে সায় দিলেন। “মা, তুমি বরং শুভ্রকে নিয়ে ছাদে যাও।”

হ্যাঁ, জানতে পারলাম তার নাম শুভ্র। আমি সেখান থেকে উঠে ছাদের দিকে অগ্রসর হলাম। বুঝতে পারলাম সেও আমার পিছু পিছু আসছে। ছাদের এক কোণে যেয়ে স্থির হয়ে দাঁড়ালাম। সে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এতোক্ষণে একটা বারও তার দিকে তাকালাম না। এটা হয়তো সে বুঝতে পেরেছে। সে গলা খাঁকারি দিল। আমার ধ্যান ভেঙে গেল।

Excuse me! অপূর্ব কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলাম। এতোটা মধুর তার কন্ঠস্বর! সামনে প্রতীয়মান ব্যক্তিকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে কিন্তু মাথা নিচু করেই রাখলাম।

জ্বি,,

তোমার নাম কি?

ইন্দ্রিয়া মুসকান ইশারা।

বাহ্ খুব সুন্দর নাম তো। তা আমাকে দেখছো না কেন? বিয়েতে মত নেই?

আমি চুপ করে রইলাম।

ইশারা এদিকে দেখো। আমি জানি এভাবে হুট করে একটা অপরিচিত ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করাটা ঠিক হয় নি। এইজন্যই তোমায় ছয়টা মাস দিলাম! এই ছয় মাসে তোমার যদি আমাকে পছন্দ না হয় তাহলে আমাদের সম্পর্কটা না হয় অপূর্ণ থাকবে!

তার কথাগুলো আমার খুব ভালো লাগলো। এবার সামনে থাকা যুবকটিকে দেখলাম। এক অন্যরকম মায়া জুড়ানো তার চেহারায়! সাথে সাথে পলক নামিয়ে নিলাম। সেটা বোধহয় সে খেয়াল করলো! সে হাসছে আমি তা বুঝতে পারছি।

নিরবতা কাটিয়ে সে বললো, “আমার পরিচয়টা না হয় দেই। আমি সাইমন সাবিদ শুভ্র। পেশায় একজন বিজনেসম্যান। আমেরিকায় পড়াশোনা শেষ করে সেখানেই বিজনেস করছি। ছোট থেকেই সেখানে বড় হয়েছি আমি কিন্তু সেখানের কালচার আমার ততটা ভালো লাগে না। আমার তো ভালো লাগলো নিজ দেশের এক মায়াবিনী পরিকে! যাকে দেখলে প্রেমে পড়তে ইচ্ছে হয় বার বার।

তার কথা শুনে একরাশ মুগ্ধতা আমায় চেপে ধরলো। মানুষ এত সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারে?

ইশারা! এই লাল শাড়ি আর হালকা সাজে না তোমায় অপূর্ব লাগছে। সত্যি বিয়েটা যদি এখনই,,,

আমি তার কথা শুনে নড়েচড়ে উঠলাম। সে আবার বলতে শুরু করলো,

ইশারা! আমি তোমাকে জোর করছি না। তুমি কয়েকদিন আমার সাথে মিশো, যদি তোমার ভালো লাগে তাহলেই আমাদের বিয়েটা হবে। আপাতত আংটিটা,,

তার কথা বুঝতে আর বাকি রইল না আমার। আস্তে আস্তে হাতটা বাড়িয়ে দিলাম। সে আমার ডান হাতের আঙুলে আংটিটা পড়িয়ে দিলো।

এখন নিচে চলুন। সবাই বসে আছে তো।

যাবো তো কিন্তু তোমার নাম্বার টা……

০১……….

নিচে এসে দেখলাম মা বাবা বেজায় খুশি। হয়তো তাদেরকে খুশি দেখতে হলেও আমায় এই সম্পর্কের বেড়াজাল আবদ্ধ হতে হবে। পাত্রের আমাকে খুব পছন্দ হয়েছে শুনে তো বাবা পাগল! পাত্রপক্ষকে বিদায় দিলেন। আমি খেয়াল করলাম যাওয়ার সময় সে এদিক ওদিক চোখ বুলাচ্ছে, হয় তো আমাকেই খুঁজতে ব্যস্ত! আমি মুচকি হাসলাম। মানুষটার মাঝে অনেক বেশি মুগ্ধতা বিরাজ করে।

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে শুয়ে পড়লাম, ঘুম পাচ্ছে প্রচুর। সারাদিনে একটুও বিশ্রাম নিতে পারি নি, এখন বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন। চোখের পাতা দুটোকে সবে মাত্র এক করেছি। হঠাৎ ফোনের টুং টুং রিংটোন ভেসে আসে কানে। বিরক্তি নিয়ে ফোনের দিকে তাকাই, আননাউন নাম্বার! এতো রাতে কে ফোন দিবে আমাকে?
ফোনটা রিসিভ করলে ওপাশের ব্যক্তিটি বলে উঠে,
“ঘুমিয়ে পড়েছো মায়াবিনী?”

কে আপনি?

এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?

বুঝতে বাকি রইল না কে সে‌।

এতো রাতে আপনি ফোন করেছেন কেন?

আমার হবু বউ কি করছে তাই জানতে চাচ্ছি আরকি,

সে তো ঘুমিয়ে ছিল আপনি জেগে তুললেন।

তাই নাকি? আমাকে একটু সময় দেওয়া যায় না?

আজ সে খুব ক্লান্ত। কাল আপনার সাথে কথা বলবে এখন ঘুমোবে।

আমার যে ঘুম আসছে না, সে তো আমার ঘুম কেড়ে নিলো!

ঘুম না আসলে বসে বসে মাছি তাড়ান,

গুড আইডিয়া বাট তুমি থাকলে বেশি ভালো হতো, দুজনে মিলে তাড়াতাম।
তার কথায় আমি হেসে ফেললাম। এক অজানা ভালো লাগা কাজ করছে আমার মধ্যে। তার সাথে অনেকক্ষণ কথা বললাম কথা শেষে চুপটি করে শুয়ে রইলাম। পাড়ি দিলাম ঘুমের রাজ্যে!

এদিকে লন্ডনে,,,,

এক সুদর্শন যুবক কলেজ ক্যাম্পাসে বসে একটি মেয়ের হাস্যজ্জ্বল ছবির দিকে চেয়ে আছে। এটা তার রোজকার কাজ, সময় পেলেই সে তার ইশুবতীকে দেখে। সামনাসামনি দেখার আশায় ব্যাকুল তার প্রান। কি জানি কি নেশা আছে তার মধ্যে, যা তাকে প্রতিনিয়ত আকৃষ্ট করছে। ছবিটির উপর পরম যত্নে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয় সে। এই ইশুবতীই তার দুনিয়া, তার সব!

“আর কত অপেক্ষা করবো বলো? এবার না হয় আমার মনের কথা তোমায় বলেই দিবো। আমি আসছি ইশুবতী, আসছি আমি তোমার কাছে। পাগল করে দিলে আমায়!

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে চলে গেলাম। চারদিক টা দেখতে লাগলাম বেশ ভালো লাগছে এখন। কিন্তু সদর দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম,,,,,

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে