অবেলায় তোমার ডাকে পর্ব-০৩

0
1432

#অবেলায়_তোমার_ডাকে
#জুবাইদা_মেহেরুন
#পর্ব_০৩

এক মাস কেটে গেছে!

তার সাথে চুটিয়ে প্রেম করছি আমি। তার সবকিছুই আমার কাছে ভালো লাগার কারণ। তার আচার-আচরণ, কথা-বার্তা, অঙ্গভঙ্গি, স্টাইল সবই আমার মাঝে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে আসে। তাকে না দেখলে আমার দিন যেন কাটেই না। নিজেকে পাগল পাগল মনে হয় এখন। গভীর ভাবে জরিয়ে পড়েছি তার মায়ায়। তার দুষ্টুমিষ্টি কথা কেড়ে নিয়েছে আমার মন। হ্যাঁ, ভালোবেসে ফেলেছি আমি তাকে। এখন সে আমার নেশা! পড়াশোনার কোন খবর নেই আমার। দিন রাত তার কথাই ভাবি। কিন্তু সে একদম অন্যরকম, আমাকে শুধু শুধু পড়ার জন্য বকে। খাওয়া দাওয়া, পড়াশোনা, কোচিং করা সব কিছুর প্রতিই খেয়াল রাখে সে। এখন তো প্রতিদিন আমাকে সেই কলেজে দিয়ে আসে। আমি যে তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছি! সামনে পরীক্ষা, আমার পড়াশোনা করা প্রয়োজন। তাই আমাকে সে ডিস্টার্ব করতে চায় না। আগের মতো দেখা বা কথা আমাদের হয় না। এটা সে আমার ভালোর জন্যই করেছে। তবুও আমার খুব খারাপ লাগছে। কেন জানি না, তাকে ছাড়া মনে হয় আমি অসম্পূর্ণ।

এদিকে লন্ডনে,,,

হাতে ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে বসে আছে অরিদ্র। কিছুই ভালো লাগছে না তার। গত এক মাসে পুরো পাল্টে গেছে সে। যে ছেলেটা মেডিকেলে এতো ভালো রেজাল্ট করতো সেই ছেলেটা আজ একদম নিচের সারিতে চলে গেল। একদম বদলে গেল! কি হয়েছে কেউ বুঝতে পারছে না।পরিবারেরও কারো সাথে যোগাযোগ নেই তার। অভ্রতো (সিহার স্বামী) পাগল হয়ে গেছে। তাই আজ অভ্র ও সিহা দুজনে মিলে লন্ডন চলে আসলো। কলেজে গিয়ে জানতে পারলো অরিদ্র ক্লাবে আছে। সে সোজা ক্লাবের দিকে চলে গেল। অরিদ্রের নাজেহাল অবস্থা দেখে অভ্র কেঁদে ফেললো। তার হাত থেকে ওয়াইনের গ্লাসটা ফেলে দিয়ে তাকে টেনে নিয়ে আসলো। অরিদ্র বারবার এককথাই বলছে, আমায় নিয়ে যাচ্ছো কেন? আমি তো পুরো শেষ হয়ে গেছি।

অভ্র অরিদ্রকে নিয়ে বাড়ি চলে গেলো। অরিদ্র মাতাল অবস্থায়ই ঘুমিয়ে পড়েছে। তাকে শুইয়ে দেওয়ার সময় শুনতে পেল অরিদ্র বিড়বিড় করে বলছে, ইশুবতী তুমি ছাড়া যে আমি একা। আমি পারবো না তোমায় ছাড়া থাকতে। আমার চোখের সামনে অন্য কারো হবে, এটা কি করে সহ্য করবো আমি? ভালোবাসি ইশুবতী, অনেক বেশি ভালোবাসি। তোমাকে আমি মন প্রান উজাড় করে ভালোবাসি। কিন্তু আমি তো তা প্রকাশ করতে পারলাম না ইশুবতী। তোমার তো অরিদ্রের ইশুবতী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কি হলো বলতো? কেন এমন হলো? I love you Esuboti! Love you so much!

অরিদ্রের মুখে এসব কথা শুনে অভ্র আর সিহা একে অপরের দিকে চেয়ে থাকে। দুজনেরই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। অরিদ্র ইশাকে ভালোবাসতো? এর জন্য এই অবস্থা করেছে নিজের?

আজ সকালে ফোন দিয়ে সে তার সাথে দেখা করতে বললো। উফফ, খুব ভালো লাগছে। প্রায় চার দিন পর তার সাথে দেখা হবে। আমি নীল রঙের একটা শাড়ি পড়ে তার সাথে দেখা করতে গেলাম। নীল রঙ নাকি তার খুব প্রিয়!
পার্কে বসে তার জন্য অপেক্ষা করছি আমি। সেই কখন থেকে বসে আছি কিন্তু সে আসছে না। অনেক বিরক্ত লাগছে, আশেপাশের ছেলেগুলো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে আমাকে। এটা খুব খারাপ লাগছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে এলো সে। মুখ ফুলিয়ে বসে রইলাম আমি।

সরি,সরি,সরি। লেট হওয়ার জন্য আ’ম এক্সট্রেইমলি সরি!

আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম। সে আমার পাশে এসে বসলো। আমার বা হাতটা তার দু হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে বললো,

ইশা! আমি চলে যাচ্ছি। অফিসে অনেক কাজ, তাই আসতে দেরি হয়েছে।

আমি তার দিকে তাকালাম। কথাটা শুনেই তো আমার মাথা ঝিমঝিম করছে। বুকের মধ্যে এলোপাথাড়ি ঢেউ বইছে। তাকে ছাড়া থাকতে পারবো তো আমি? আমি তো তার মায়ায় গভীর ভাবে জরিয়ে পড়েছি।

আপনি চলে যাচ্ছেন মানে?

সে আমার দু গালে দুই হাত রেখে বললো, এখন যাচ্ছি কিন্তু সব কাজ গুছিয়ে আবার ফিরবো। তোমাকে ছাড়া তো থাকতে পারবো না!

আমি তাকে জড়িয়ে কেঁদে দিলাম। সে আমায় শান্তনা দিয়ে বললো, আমি আবার আসবো পাগলি! তাছাড়া এখন তো যাচ্ছি না, আর এক সপ্তাহ পড়ে যাবো।

তাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম। ছেড়ে দিলেই মনে হয় চলে যাবে। সেও আমাকে জাপটে ধরেছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে অনবরত।

এদিকে সকালে ঘুম থেকে উঠেছে অরিদ্র। মাথাটা প্রচুর পরিমাণে ঝিমঝিম করছে। উঠেই দেখতে পায় অভ্র আর সাফিন সামনে বসে আছে। সে অবাক হলো এরা কখন এলো? সে সাফিনকে কোলে নিয়ে অভ্রের পাশে যেয়ে বসলো।

কেমন আছো ভাইয়া? কখন এলে? একটা ফোন অবধি করলে না!

এখানে তুই কি করছিস?

কেন? পড়াশোনা?

এবারের রেজাল্ট?

অরিদ্র মাথা নিচু করে নেয়।

কি হয়েছে অরিদ্র? এমন করছিস কেন?

নাস্তা হাতে সিহাও সেখানে চলে আসে।

অরিদ্র তুমি ইশাকে ভালোবাসতে?

অরিদ্র আরেক দফা অবাক হলো। সে কি করে জানলো?

কি হয়েছে ভাবি? হঠাৎ এগুলো কি বলছো?

সিহা খানিকটা ধমক দিয়ে বলে,
আমি আমার প্রশ্নের উত্তর চাই অরিদ্র। আমার প্রশ্নের উত্তর কিন্তু এটা নয়।

অরিদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
হ্যাঁ, ভালোবাসি। শুধু ভালোবাসি না অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি। ও তো আমার নেশা। যে নেশায় আমি আসক্ত। যাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। আমার প্রতিটি ক্ষণেই তাকে প্রয়োজন। জানো ভাবি যখন প্রথম তোমাদের বিয়ের ছবি আমাকে দিয়েছিলে সেদিনই আমার চোখ আটকে যায় এক পিচ্চি মায়াবতীর উপর, আমার ইশুবতীর উপর! এরপর তার প্রতি ভালো লাগা কাজ করতো এই ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা! যখনই তুমি কোন ছবি দিতে তখনই আমার বেহায়া চোখ দুটো তাকে খুঁজতো। আমার ইশুবতীর হাসি আমার কাছে বড্ড নেশালো। ওপস! সে তো আর আমার নেই আমি আমার ইশুবতী বলছি কেন? সে তো শুভ্রের! একমাত্র তাঁরই অধিকার তার উপর!

সিহা কাঁদছে। অস্ফুটিত স্বরে বললো, অরিদ্র! আরো আগে বললে না কেন? কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো?

অরিদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, কিছু কথা না হয় আড়ালেই থাক। কিছু প্রহর না হয় একান্তই আমার থাক। কিছু আবেগ না হয় নাই প্রকাশ করলাম। আছি তো বেঁচে, থাকবো না হয় তার স্মৃতি গুলো নিয়ে, পরম যত্নে বয়ে বেড়াবো সেগুলো। যদি কোন এক অবেলায় ডাক পড়ে ছুটে যাবো তার কাছে। #অবেলায়_তোমার_ডাকে এর অপেক্ষায় জীবন পাড়ি দিবো। নিজেকে আবার গুছিয়ে নিব। #অবেলায়_তোমার_ডাকে আমি না হয় থাকবো তোমার পাশে।

সিহা আর থাকতে পারলো না অভ্রকে জরিয়ে কাঁদতে থাকলো। অভ্রও তার থাকতে পারলো না!

————————————————–

কেটে গেল দু দুটো মাস!

শুভ্র আমেরিকা চলে গেছে সেই কবে। শুরুতে ভালোই যাচ্ছিল আমাদের। সারাদিন ফোনোর উপর ফোন আসতো তার কিন্তু ইদানিং কোন ফোনই আসে না। আমি ফোন করলে তার ফোন ব্যস্ত! কার সাথে কথা বলছে সে? আমাকে ফোন করার তো তার সময়ই নেই। তাকে কোন প্রকার সন্দেহ করতে চাইছি না আমি। ভালোবাসার মানুষটির উপর বিশ্বাস থাকা দরকার, তার প্রতি বিশ্বাস আছে আমার। কিন্তু কে জানতো সে আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা কারবে? হঠাৎ এক ঝড় লণ্ডবণ্ড করে দিবে সব!

চলবে,,,,,,,,

[অনুগ্রহ করে ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে