অবেলায় তোমার ডাকে পর্ব-০৪ এবং শেষ পর্ব

0
1878

#অবেলায়_তোমার_ডাকে
#জুবাইদা_মেহেরুন
#পর্ব_০৪ (অন্তিম পর্ব)

হাসপাতালে দাঁড়িয়ে আছি আমি। আজ খুব খুশি লাগছে আমার। হাতের রিপোর্টটা নিয়ে সামনে এগোচ্ছি আমি। হঠাৎ আমার চোখ দুটো থমকে যায় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে। দাঁড়িয়ে নয় হুইলচেয়ারে বসে আছে সে। আমার দিকে তাকিয়ে আছে অসহায় ভাবে। তাকে দেখে পাঁচ বছর আগের কথা গুলো মনে পড়ে গেল……

অতীত…..

শুভ্র বিদেশে যাওয়ার পর থেকে ভালো নেই আমি। প্রতিনিয়তই তার স্মৃতিগুলো জাপটে ধরে আমাকে। তার জন্য সবসময় আমার মন খারাপ থাকে। পরিবারের সবাই বিষয়টা লক্ষ করলেও আমাকে কিছু বলে নি। শুভ্রের ফোনের অপেক্ষায় বসে থাকি সারাটা দিন। পড়াশোনা বলতে কিছু একটা যে আছে আমার জীবনে তা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম আমি। কিছুদিন এভাবে কাটছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সব পাল্টে গেল। শুভ্র আর আগের মতো নেই। আমার সাথে আগের মতো কথা বলে না, আমার ম্যাসেজের রিপ্লাই দেয় না। সারাদিনে কোন ফোন করে না, আমি ফোন করলেও তাকে ব্যস্ত পাই। এভাবে কয়েকদিন চলছিল। সপ্তাহে একটা কল আসে আমার কাছে। এ নিয়ে আমি প্রশ্ন করলে সে বলতো সে নাকি অনেক ব্যস্ত, রাগ করতে না বারণ করতো। আমি ও রাগ করতাম না। সামনে পরীক্ষা পড়াশোনায় মন দেওয়া দরকার! আমিও পড়াশোনা চালিয়ে যাই।

দেখতে দেখতে আমার এইচএসসি পরীক্ষা ঘনিয়ে এলো। আমি পরীক্ষা দিলাম, খুব ভালোই হয়েছে আমার পরীক্ষা! পরীক্ষা শেষ আমি তো বেজায় খুশি কাল শুভ্রসহ তার পরিবার আসছে! কিন্তু কে জানতো আমার জন্য এতো বড় চমক নিয়ে আসছে!

শুভ্র এলো! তাকে দেখে আমি বাকরুদ্ধ! পাশে তার স্ত্রী পায়েল দাঁড়িয়ে আছে। আমি সহ আমার পরিবার অবাকের চরম পর্যায়ে। বাবা তো হার্ট অ্যাটাক করলেন। শুভ্র আমাকে বললো এখান থেকে যাওয়ার পর নাকি তার(শুভ্রের স্ত্রী) মায়ায় গভীর ভাবে জরিয়ে পড়েছে সে। এরপর নাকি তারা বিয়ে করে নিয়েছে।

ভাবতে লাগলাম এই তার ভালোবাসা? এক জনের পর আরেক জনের মায়ায় আবদ্ধ হওয়া? তার প্রতি খুব ঘৃণা হচ্ছিল আমার! সেদিনের পর থেকে তার সাথে কোন কথাই বলি নি আমি। তার কারণে আমার বাবা হয়েছিল মৃত্যু পথের যাত্রী। এরপর থেকে তার জন্য আমার মনে ঘৃণা ছাড়া বেশি কিছু জন্মায় নি।

আজও তাকে দেখে ঘৃণা হচ্ছিল আমার। চোখ ফিরিয়ে চলে আসতে নিলাম। তখন শুনতে পেলাম তার কন্ঠ,

আমায় কি ক্ষমা করা যায় না মায়াবিনী?

আমার গাঁ জ্বলে যাচ্ছে তার কথায়। তীব্র রাগ দেখিয়ে বললাম, দেখুন আমাকে ওভাবে ডাকবেন না।

জানি, এখন আমার সেই অধিকার নেই।

তাহলে আমার থেকে দূরে থাকুন। আমি আপনার ছায়াও দেখতে চাই না।

হুম, এটা তুমি ঠিকই বলছো। তুমি সুখে থাকো এটাই আমার কামনা। পারলে আমায় ক্ষমা করো মায়াবিনী।

একজন‌ নার্স থেকে জানতে পারলাম পাঁচ বছর আগে এক এক্সিডেন্ট এ সে তার পা হারিয়েছে। তার স্ত্রী সকল সম্পত্তি নিজের নামে করিয়ে তাকে পথের ফকির বানিয়ে দিয়েছে। শুনে আমি এক দৃষ্টে চেয়ে থাকলাম।

কাঁধে কারো স্পর্শ অনুভব করলাম। পিছন ফিরে দেখলাম ডা. আদ্রিন আনাফ অরিদ্র, আমার স্বামী! হ্যাঁ, এখন আমার পৃথিবী তাকে জুড়ে। আমি আমার সবটা উজাড় করে এখন তাকেই ভালোবাসি। আমার ভালো লাগার মুহূর্ত তাকে ঘিরে।

শুভ্র থেকে বড় একটা ধাক্কা খাওয়ার পর ভেঙে পড়েছিলাম আমি। নিজেকে চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ করে নিয়েছিলাম। তখন আমার পাশে ছিল সে। আমাকে সবটা সময় শক্তি জুগিয়েছে সে। যখন ভালোবাসার নামে মিছে খেলাগুলোকে ঘৃনা করতাম আমি, আমার পাশে সে ছিল সেই দিনগুলোতে। এক মূহুর্ত চোখের আড়াল হয় নি সে। ফলশ্রুতিতে আজ সে আমার স্বামী! আমার ভালোবাসা! আমার দুনিয়া!

অরিদ্রকে দেখে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। বেচারার নাজেহাল অবস্থা বিগত কয়েক দিন যাবত এর কারণও আমি। অনেক অসুস্থ আমি। বেচারা রাত দিন এক করে দিয়েছে। চেম্বারে বসা বন্ধ তার! শত মানা করা সত্ত্বেও আজ মেডিকেলে নিয়ে এসেছে আমাকে। ডাক্তার অনেক গুলো টেস্ট দিয়েছে সেগুলোর রিপোর্টই হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি।

কি হয়েছে ইশুবতী? কি বলেছে ডাক্তার?

আমি রিপোর্টগুলো এগিয়ে দিলাম।

রেজাল্ট পজিটিভ!

হুম, আপনি বাবা হচ্ছেন অরিদ্র।

অরিদ্র আমায় কোলে তুলে নিলো। সারা হাসপাতাল আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তো লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলাম।

কি করছেন অরিদ্র? ছাড়ুন, সবাই দেখছে।

সে আমাকে নামিয়ে দিল। আমার মাথায় ভালোবাসার এক পরশ এঁকে দিল। গাড়ি করে বাড়ি ফিরে আসলাম।
দুটি নয়ন এক দৃষ্টে আমাদের দিকেই তাকিয়ে ছিল।

বাড়িতে সকলে খবরটা শুনে বেশ খুশী হলো।

রাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি আমি। অরিদ্র এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো।

কি ভাবছো জান?

জানেন অরিদ্র আজ না শুভ্রকে দেখেছিলাম!

অরিদ্রের মুখটা চুপসে গেল। বুঝতে পারলাম মন খারাপ হয়ে গেছে।

আরে আমার জামাইটা মন খারাপ করার কিছু নেই। আমার মনে তার জন্য কোন ফিলিংস নেই। আমি এখন আপনাকে ভালোবাসি! না শুধু ভালোবাসি না, অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি।
অরিদ্র হাসলো।

ভালোবাসি তোমায় কোন এক অবেলায়। ভালোবাসি তোমায় নিজের অস্তিত্বের মায়ায়! থাকবো পাশে কোন এক #অবেলায়_তোমার_ডাকে তোমার চাওয়ার মাঝে!

আমি অরিদ্রকে জরিয়ে ধরলাম সেও আমায় জরিয়ে ধরলো।

~সমাপ্ত~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে