অপূর্ণতা পর্ব-১৬+১৭

0
1128

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_১৬_১৭

হঠাৎ আরিয়ান গাড়ি ব্রেক করায় অদ্রিতা ভাবনা থেকে বের হয়ে আসে।বাহিরে তাকিয়ে দেখে তারা বাড়িতে চলে এসেছে।আরিয়ান প্যাকেটগুলো নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরে আর তার পিছু পিছু অদ্রিতাও গাড়ি থেকে নেমে যায়।অদ্রিতা গিয়ে বাড়ির কলিং বেল বাজাতেই তার মা ছোটে এসে দরজা খুলে দেয়। আরিয়ান অদ্রিতার বাবাকে সালাম দিয়ে ভিতরে ঢুকে। অদ্রিতার ভাই এসে আরিয়ানের হাত থেকে প্যাকেট গুলো নিয়ে যায়।আরিয়ানও সবার সাথে হাসি মুখে সুন্দর করে কথা বলে।তার ভাই বোনের সাথে মজা করছে। আমি আশা করিনি ওনী এত ভালো ব্যবহার করবেন আমার পরিবারের সবার সাথে। তাই কিছুটা অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম। আমার তাকানো দেখে ওনীও বুঝতে পারছেন যে আমি অবাক হচ্ছি তাই আমার দিক থেকে অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নেয়।

অদ্রিতার বাবা আরিয়ানের সাথে কথা বলা শেষ করে অদ্রিতাকে জিজ্ঞেস করে,”তুই কেমন আছিস?”

আমি ভালো আছি , তুমি?

একটু খারাপ…. তোকে ছাড়া কি করে ভালো থাকি বলতো হাসি দিয়ে বলে।

অদ্রিতাও হেসে তার বাবাকে জরিয়ে ধরে।তার বাবার সাথে কথা বলা শেষ হলে ছোট ভাই বোনের সাথে দুষ্টমি করে। আরিয়ান এইসব কিছু বসে বসে দেখছে।এতদিন তার সাথে যেই অদ্রিতা ছিল তার সাথে এই অদ্রিতার কোন মিল নেই। এখানে এসেই হাসি খুশি হয়ে গেছে।সবার সাথে কত সুন্দর কথা বলছে, মজা করছে আর বাড়িতে তো সারাদিন চুপচাপ থাকে। মনে হয় যেন সে কথাই বলতে পারে না।এই সব কিছু ভাবছে এমন সময় অদ্রিতার মা আরিয়ানের কাছে এসে বলে….

বাবা,আমার মেয়েটাকে একটু দেখে রেখো। আমার মেয়েটা একটু কালো তাই হয়তো তোমার ওকে পছন্দ নাও হতে পারে কিন্তু আমার মেয়ের মন অনেক ভালো। কেউ তাকে একটু ভালোবাসলে, একটু করলে,,সে তার জন্য সব কিছু করতে পারে।আমি তো ওর মা তাই ওর মুখ দেখেই বুঝি হয়তো সে কষ্ট পাচ্ছে। তুমি ওকে কোন কষ্ট দিও না। এতদিন ও অনেক কষ্ট পেয়েছে তাই তুমি ওকে একটু ভালোবাসো আর যত্ন করো।

আরিয়ান মুচকি হেসে বলে জ্বি মা,… অবশ্যই। এখন তো ওর সব দায়িত্ব আমারই। তাই আমি ওকে দেখে শুনে রাখবো।আপনারা কোন চিন্তা করবেন না, আমি তার কোন অযত্ন হতে দিবো না ।( অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে)

অদ্রিতার মা আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার বাবাব বলেন,” ওরা মাত্র এসেছে।এখন ওদের ফ্রেস হয়ে একটু রেস্ট নিতে দাও যা কথা আছে পরে বলো।অদ্রিতা মা… আরিয়ানকে তোর রুমে নিয়ে যা ফ্রেস হয়ে একটু বিশ্রাম নিক।অদ্রিতা তার বাবার কথা মতো আরিয়ানকে নিয়ে রুমে যায়।”

আরিয়ান রুমে ঢুকেই দরজায় বন্ধ করে দেয়।হঠাৎই দরজা বন্ধ করায় অদ্রিতা ভয় পেয়ে যায় আর বলে আপনি দরজা বন্ধ করছেন কেন। আরিয়ান তার কথার উওর না দিয়ে সোজা তার দিকে এগিয়ে যায়।অদ্রিতা আরিয়ানে দিকে তাকাতেই দেখে তার চোখ লাল হয়ে আছে, বোঝাই যাচ্ছে সে রাগে আছে।এতক্ষন তো সব ঠিক ছিল। কি সুন্দর সবার সাথে হাসি মুখনিয়ে কথা বলেছেন।কিন্তু হঠাৎ করে কি এমন হলো যে ওনী এততা রেগে গেলেন?আরিয়ানের আগানো দেখে সে পিছিয়ে যেতে থাকে আর পিছাতে পিছাতে তার পিঠ দেওয়ালের সাথে আটকে যায়।পিছনে আর যাওয়া জায়গা না থাকায় অদ্রিতা ভয়ে ঢুক গিলতে থাকে। ওইদিন তো সামান্য বিষয়ে আমার সাথে কটতা খারাপ আচরণ করেছেন।এত জোরে হাত চেপে ধরেছেন যে আজও ব্যাথা করছে আজকে আবার কি করবেন?

আরিয়ান এসেই শক্ত করে অদ্রিতার হাত চেপে ধরে ঝাড়ি মেরে বলে,”এখানে এসেই আমার নামে নালিশ করা শুরু করে দিয়েছ?”

অদ্রিতা ভীতু স্বরে বলে, ” কি..কিসের নালিশ। আপনি কি বলছেন আমি তো কিছুই বুঝছিনা।আরিয়ান এতোই জোরে অদ্রিতার হাত চেপে ধরেছে যে ব্যাথায় তার চোখ দিয়ে পানি পরছে।”

আরিয়ান রাগে গম্ভীর স্বরে বলে,” এমন ভাবে কান্না করছো যে আমি তোমাকে মেরেছি।কান্না থামাও এইসব ন্যকামি আমার পছন্দ না। তোমার মা কেন বললো যে… তুমি কালো বলে আমার তোমাকে পছন্দ হয়নি। তুমি কষ্টে আছো।আমি তো না করেছি যে এইসব কথা কাউকে না বলতে আর তুমি এসেই তোমার মাকে সব বলে দিয়েছো।আমার নামে তাদের কাছে নালিশ করেছো।”

আমি মাকে কিছু বলিনি। আপনার কোথায়ও কোন ভুল হচ্ছে।

আরিয়ান আরোও রেগে অদ্রিতার বাহুতে আরো জোরে চাপ দিয়ে বলে,” হুমম… সব ভুল তো আমারই হয়। তুমি যদি কিছু না-ই বলে থাকো তবে ওনী এই কথাগুলো কি করে বললেন। আন্সার মি?”

আরিয়ান এতোই জোরে হাতে চেপে ধরে যে ব্যাথ্যায় অদ্রিতার চোখ দিয়ে পানি পরছে।সে ভীতু স্বরেই বলে,”মা তো তাই হয়তো মেয়ের মুখ দেখে বুঝতে পেরেছে সে সুখে আছে না কষ্টে আছে। সব মাই তার সন্তানের মুখ দেখে বুঝতে পারে সে সুখে আছে না কষ্টে আছে। আপনার মা বুঝতে পারে না আপনি সুখে আছেন না কষ্টে আছেন।”

অদ্রিতার কথা শুনার পর আরিয়ানের খেয়াল হয়… সে তো এতক্ষন অনেক জোরে অদ্রিতার হাত চেপে ধরে আছে তাই সাথে সাথে সে তার হাত ছেড়ে দেয়।রাগ উঠলে সত্যিই মানুষের ব্রেন কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অদ্রিতা তো তার সামনেই সবার সাথে কথা বলেছে সে তো এইসব কিছুই বলেনি। কেন যে এমন হয়,আমি কন্ট্রোলই করতে পারি না নিজের রাগকে। আর বার বার একই কাজ করে ফেলি।সে নিজের ভুল বুঝতে পারে তবুও সে অদ্রিতাকে সরি বলে না।ইগো বলেও একটা কথা আছে যা আরিয়ানের অন্য সবার থেকে একটু বেশিই আছে।অদ্রিতাকে সরি বলতে তার ইগোতে বাঁধছে। তাই সে বলে তোমার মা- বাবা যেন এই বিষয়টা না জানে। ওয়াশরুমটা কোন দিকে?

অদ্রিতা হাতের ইশারা দিয়ে দেখিয়ে দেয় আর আরিয়ান কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে। একটু পরেই আরিয়ান ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে আর সাথে সাথেই অদ্রিতা ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে। আর এই ফাঁকে আরিয়ান অদ্রিতার রুমটা দেখতে থাকে,,,,
.
..

চলবে,,,,,
#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_১৭

অদ্রিতা ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে আর এই ফাঁকে আরিয়ান অদ্রিতার রুমটা দেখতে থাকে ।
রুমটা তার রুমের মতো ততোটা বড় নয় কিন্তু সুন্দর করে গোছানো ।দেখেই বুঝা যাচ্ছে এইটা কোনো মেয়ের রুম। ঘরের এক পাশে বই রাখার রেগ আছে আর সেখানে অনেক রকমের বই আছে।রুমে একটি পড়ার টেবিল আছে। সেখানে কয়েকটা বই সুন্দর করে গুছানো আছে আর তার পাশেই একটি ডায়রি রাখা আছে। ডায়রিটা দেখে আরিয়ানের অনেক ইচ্ছে হলো এইটার ভিতর কি লেখা তা দেখতে কিন্তু অন্যের জিনিস তো না বলে দেখা ঠিক না। তাই ডায়েরিটা পড়তে কেন জানি তার সংকোচ হতে লাগলো তবুও সে ডায়েরিটা খুলে পড়তে থাকে!

ডায়েরির শুরুতেই লিখা,,,
কালো হওয়া কি সত্যিই কোনো অপরাধ না অভিশাপ। আমি কালো বলেই তো সবাই আমাকে এত অবহেলা করে। কেউ আমাকে বুঝতে চেষ্টা করে না। কালো বলে কি আমি মানুষ না। আমারও তো মন আছে, আমারও তো কষ্ট হয় তা কেউ কেন বুঝে না?

ডায়েরির পরেরে পেইজে লেখা…..
#অপূর্ণতা এমন একটি শব্দ যা আমার জীবনে প্রতিটি পদে ওতোপ্রেতো ভাবে জড়িত।ছোটবেলায় তো অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম কই কোনোটাই তো পূর্ণতা পায় নি।
জীবনে এক ভালোবাসা চেয়েছিলাম তাও
অপূর্ণ রয়ে গেছে।হারিয়ে গেছে আমার থেকে অনেক দূরে।
জীবনে নিজের ইচ্ছায় কিছু হতে চাইলাম, সেই ইচ্ছে তাও আর হয়তো পূরন করা সম্ভব না।

পড়তে পড়তে ডায়েরীর একদম শেষে চলে আসে…..
আল্লাহ তো সবার জন্য একজন জীবনসঙ্গী লিখে রাখেছে। আমি তার অপেক্ষায় আছি। সে হয়তো আমাকে বুঝবে। কালো বলে কখনো আমাকে অবহেলা করবে না।আমি যেমন সে আমাকে সেভাবেই মেনে নিবে আর ভালোবাসবে। তখন আমার সকল দুঃখ কষ্টের অবসান হবে। তার ছোঁয়াতেই হয়তো কেটে যাবে আমার জীবনের সকল #অপূর্ণতা।তখনই হয়তো পূর্ণতা পাবে আমার জীবন।

হঠাৎই ওয়াশরুমে পানি পরা শব্দ বন্ধ হয়ে যায় তাই সে তাড়াতাড়ি ডায়েরিটা বন্ধ করে যে-ভাবে ছিল সেইভাবেই রেখে দিয়ে খাটের উপর শুয়ে গেম খেলতে থাকে।

অদ্রিতা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আরিয়ানকে বলে.. আপনি শুয়ে রেস্ট নিন আমি মাকে রান্নায় হেল্প করে আসি।এই বলে অদ্রিতা চলে আসতে চাইলে আরিয়ান তাকে ডাক দেয় আর সাথে সাথে অদ্রিতা পিছনে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে… কিছু লাগবে আপনার??

ফাস্ট এইড বক্সটা একটু নিয়ে আসো??

অদ্রিতা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,” কেন?”

আরিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে আমি তোমাকে কোন প্রশ্ন করতে বলি নি।শুধু যা বলছি তা করো।

অদ্রিতা আর কিছু না বলে আরিয়ানকে বক্সটা দিয়ে চলে আসবে ঐ সময় আরিয়ান আবারও ডাক দেয়,,

আমিকি তোমাকে এখন চলে যেতে বলছি??

নাতো,,

আরিয়ান বিরক্ত হয়ে বলে, “তবে চলে কেন যাচ্ছিলে…. এখানে বসো।”

আরিয়ানের এই আচরণে অদ্রিতা কিছুটা অবাক হয়। মনে মনে ভাবছে ওনী কি করে আমার সাথে এত ভালো ভাবে কথা বলছে?
অদ্রিতা কিছু না বলে আরিয়ানের সামনে বসে।

আরিয়ান শান্ত স্বরে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”তখন ঐভাবে এতটা জোরে তোমার হাত ধরা ঠিক হয়নি তার জন্য সরি।হাত দুটো দেখি।
অদ্রিতা হাত দুটো সামনের দিকে দিতেই, আরিয়ান দেখে সে যেখানে ধরেছিল সেখানে কালো হয়ে গেছে। অদ্রিতা এতটাও কালো নয় যে তা বুঝা যাবে না। আরিয়ান সেখানে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে পরে হাত ছেড়ে দেয় আবাও গেম খেলায় ব্যস্ত হয়ে পরে।”

আরিয়ানের এই সামান্য তম কেয়ারে অদ্রিতার মন খুশিতে ভরে যায়। তার কালো মুখটাও যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠে।আরিয়ানের নজরও তা এড়ায় না।তবুও সে আর কিছু বলে না।

কিছুক্ষন ঐভাবে বসে থাকার পরে অদ্রিতার খেয়াল হয় তা মা একা একা রান্না করছে তাই সে রান্না ঘরে চলে যায় তার মাকে হেল্প করার জন্য।রান্না ঘরে ঢুকতেই তার মা.. অদ্রিতার মুখ দেখেই বুঝতে পারে সে এখন অনেক খুশি। আসার সময়তো তার মুখ একদম কালো হয়েছিল তাদের সামনে ঠিকই হেসে হেসে কথা বলেছে তবুও তিনি বুঝেছেন তার মেয়ের মন ভালো নেয়। আর এখন তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তার মন অনেক ভালো আছে। তাই তিনি জিজ্ঞেস করে… কিরে এত খুশি কেন??

মা,ওনী সত্যিই অনেক ভালো। আমার অনেক কেয়ার করে। মেয়ে মুখে এই কথা শুনে তিনি হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। মনে মনে তিনি ভয় পাচ্ছিলেন আরিয়ান যদি তার মেয়েকে মেনে না নেয়, সে যদি তাকে আরও কষ্ট দেয় তবে তো তারা সারাজীবনের জন্য মেয়ের কাছে অপরাধী হয়ে থাকবেন। তাই তিনিও মনে মনে অনেক খুশি হলেন।
.
.
.
চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে