অধিকার পর্ব-১১

0
2913

#অধিকার #এগারতম_প্রহর
#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)

দরজা খুলতেই হুট করে ইরাদ এভাবে এসে রুহিকে জড়িয়ে ধরবে এটা ও ভাবতে পারেনি।
-আজ আমি অনেক খুশি রুহি।
কিন্তু রুহির মধ্যে কোনো ধরনের অনুভূতি কাজ করছেনা। হাত উঠিয়ে ইরাদকে ও ধরেও নি,,
ইরাদ এত কাছে থাকার পরেও মনের দুরত্ব সবচেয়ে বেশি লাগছে ওর।
কারন এই মনের মাঝে ইরাদকে হারানোর ভয় কাজ করছে। শুধু মাথায় ঘুরছে ইরাদ কি ওকে ছেড়ে দিবে? রুহির কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ইরাদ ওকে ছেড়ে দিলো, আর মনে মনে ভাবলো হয়তো এভাবে পারমিশন ছাড়া ওকে ধরাটা ও পছন্দ করেনি।
রুহি কিছুই বলছেনা, ওকে ছেড়ে দেওয়ায় হেটে হেটে বিছানায় বসে পরেছে। ইরাদ ভাবলো রুহি হয়তো টায়ার্ড খাটের অন্যপাশে বসে নিজে থেকেই বললো
-একটা গুড নিউজ আছে,,
-চলে যেতে হবে?
– জ্বি,, কাল সকালেই।
-আপনি কি করে বুঝলেন?
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে রুহি চোখের পানি লুকিয়ে বললো,
-বুঝতে পেরেছিলাম আপনাকে যখন ডেকে নিয়ে গেলো।
– রুহি আমার মনে অনেক বড় একটা পাহাড় ছিলো সেটা নেমে গেলো। খুব শান্তি পাচ্ছি।
– হুম,, ঘুমিয়ে পরুন।
রুহির কথা বলতে ভালো লাগছেনা। হয়তো ইরাদ কাল বাড়ি ফিরে ওকে বলবে চলে যেতে।
এটা ইরাদের মুখে শুনার ইচ্ছে রুহির নেই। আজ ও বলে ফেলতে পারতো তাই রুহি ঘুমের ভান করে শুয়ে রইলো,, এমন কঠিন সত্যি ও শুনতে চায়না।
খুব কষ্ট হচ্ছে রুহির।
আস্তে করে পাশ ফিরে রুহি শুয়ে পরলো।

ইরাদের মনটা অজকে অনেক ভালো লাগছে,,, কেমন যেন একটা ঘোর লেগে আছে,,
রুহিকে তাকিয়ে দেখলো ও,, ঘুম অবস্থায় কত ভালো লাগছে ওকে। রুহির দিকে তাকিয়ে একটা নেশা কাজ করছে,, ইচ্ছা করছে ওকে আদর করতে। কলিজার ভেতরে লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে এই মেয়েটাকে,, কিন্তু ও তো কথা বলতে চাইছে না এখন তাই ইরাদ উঠে বারান্দায় চলে গেলো,, এমন কেন লাগছে ওর? খুব অস্থিরতা কাজ করছে মনের মধ্যে এক ঝড় শুরু হয়ে গেছে,, রুহির থেকে দূরে থাকতে পারছেনা আর ইরাদ।
এদিকে রুহির ঘুম আসছেনা বিছানাটা খুব খালি খালি লাগছে,, ইরাদকে পাশে না দেখলে ওর ভালো লাগে না। ঘুম ও যেন আসতে চায়না।
ও উঠে ইরাদের কাছে গেলো আর মনে মনে ভাবছে,,
“যা কাল বলবে তা আজই বলুক,, সহ্য না হলেও করতে তো হবেই”

বাইরে হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এই অসময়ের বৃষ্টিতে আজকে সবাই কত খুশি হবে,, দম্পতিদের জন্য একটা ভালো সময় কাটানোর বাহানা ও হয়ে যাবে। এদিকে ইরাদ একা একা দাড়িয়ে আছে কিন্তু ওর তো মন আজ অনেক খুশি।
একে তো রুহি ওর সাথে আছে আর,, দ্বিতীয়ত
এত ভালো একটা সংবাদ পেয়েছে ও।

দরজায় হেলান দিয়ে রুহি দাড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে, বৃষ্টি দেখে মনে মনে বলছে
“আমার ভিতরের ঝড় আল্লাহ বাইরেও দিয়ে দিলেন? চোখের পানি বাধা দিয়ে রেখেছি কিন্তু ভিতরে তো রক্তক্ষরণ হয়ে যাচ্ছে। এই হৃদয়ের পোড়ানি কি করে নিভবে?”

ইরাদ ও বাইরের দিকেই তাকিয়ে রুহির কথা ভাবছে,, কিছুক্ষণ পরে পেছনে ঘুরে ওকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ইরাদ সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, একদম কাছে এসে পরাতে রুহির হার্ট যেন দৌড়াতে শুরু করেছে। ইরাদের চোখ দুটো এমন লাগছে কেন? এত নেশা লাগানো,, মনের মধ্য তোলপাড় চলতে শুরু করেছে ওর।
ইরাদ আস্তে করে রুহির হাত দুটো নিজের হাতের সাথে মিশিয়ে রুহিকে ওয়ালের সাথে আটকে ধরে,,
রুহি চোখ বড় বড় করে ওকে দেখছে,, ও রুহির পুরো চেহারাটা দেখছে একটা ঘোর নিয়ে,, ইরাদের নিঃশ্বাস রুহির চোখে মুখে এসে বারি খাচ্ছে,, ইরাদের এত কাছে আসায় রুহির শ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হয়ে যাচ্ছে,, দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যাচ্ছে ওর। ছেলেটার চোখ গুলো,, হাসিটা ওকে মাতাল করে তোলে,,
“আপনি আনেক সুন্দর”
রুহি চমকে উঠে এমন কথা শুনে,,
ইরাদের ঠোঁটের কোণে একটা দুষ্ট হাসি নিয়ে রুহির চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আস্তে করে ডান কানে একটা চুমু দিলো। ইরাদের এমন আচরণ রুহি কেপে উঠে এর সাথে খুব অবাক ও হয়ে যায়,, কিচ্ছু বুঝতে পারছেনা, এমন কেন করছে ইরাদ??
এরপর রুহির হাত দুটো দেয়ালের সাথে মিশিয়ে এক হাত দিয়ে ধরে অন্য হাত ওর কোমড় জড়িয়ে দেয়,, রুহি চোখ বন্ধ করে ফেলে,, এমন কিছু ও কল্পনা ও করতে পারেনি,, ইরাদের এত কাছে আসা ওর ভালো লাগছে ইচ্ছা করছে নিজেকে উজাড় করে ওকে কাছে টেনে ভালোবাসা দিতে।পরক্ষণেই মাহিরার কথা মনে পরে গেলো। ইরাদ তাহলে এমন করছে কেন? রুহি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ইরাদকে বুকে একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।
-কি হয়েছে?
-আ আআ আপনি এএমন করছেন ক কেন?
কাপাকাপা আওয়াজে রুহি বলে,,
-আমি আপনাকে অনেক ….
এমন সময় ইরাদের ফোন বেজে ওঠে,,
স্ক্রিনে লিখা মাহিরা নাজিম,, রুহির চোখ ছলছল করছে,,
-ফোন ধরুন,,
-নাহ,, এখন আমি আপনার সাথে সময় কাটাবো।
আবারো রিং বেজে চলছে এবার ইরাদ বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করলো,,
-জ্বি আপু বলুন
“আপু” শুনে রুহি চমকে উঠে,, মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে যেন সব।
মাহিরাকে আপু বললো কেন?
ওপাশ থেকে কি বলেছে রুহি শুনতে পাচ্ছেনা,
ইরাদ বললো,,
– হ্যাঁ কোর্টের লিগ্যাল নোটিশ আপনার রুম থেকে বেড় হওয়ার পরেই পেয়েছি,, থ্যানক্স টু ইউ আপু।
আপনি না থাকলে আমার সেই দাদার দেওয়া বাড়িটা পেতাম না। ভাইয়া বাচ্চাদের সাথে আপনার দাওয়াত রইলো আপু ঢাকা ফিরলে অবশ্যই বাসায় আসবেন।
রুহির মাথায় কিছুই না ঢুকায় ও ইরাদকে জিজ্ঞেস করেই ফেললো
-কে ছিল কলে?
-মিসেস নাজিম,, আপু লয়ইয়ার।
-উনি একটু আগে?
-হুম কি কাজে নাকি এসেছে এখানে আজকে হুট করেই,, আর আমাদের দেখেছেন। ই-মেইলটা পেয়ে সব বুঝে নিয়েছি কি না জানার জন্য ডেকেছিলেন,,
আসলে দাদার একটা পুরোনো বাড়ি ছিলো যেখানে আমার আব্বুরা বড় হয়েছিলো সেই বাড়িতে অন্যজন দখল দিতে চাচ্ছিলো,, একটু আগে সেটা পুরোপুরি আমাদের হয়ে গেছে এখন আর কোনো ঝামেলা নেই। শুধু আমার সাইন লাগবে আমি সেটা বুঝে পেয়েছি এই হিসেবে।

রুহির মাথায় এখন সব ঢুকেছে। “তাহলে মাহিরা নাজিম ইরাদের কেউ না। উনি তো কাজের জন্য ডেকেছিলেন। আর আমি কি না কি ভেবেছিলাম। কত গুলো সময় শুধু কথক ভেবে নষ্ট করলাম। আমি একটা গাধা”

এসব ভাবতে ভাবতে রুহি দেখে ইরাদ ওর দিকে তাকিয়ে আছে,, চোখে সেই দুষ্টুমি আর ঠোঁটের কোণে একটা দুষ্ট হাসি। এবার রুহি একটা ঢোক চাপলো কারণ কিছু ক্ষন আগে ইরাদ যা করেছিলো তা ও কিছু মুহূর্ত ভুলে গেলেও এখন আবার মনে পরে গেলো সব কিছু। রুহি ইরাদকে না দেখার ভান করে ওকে পাশ কাটিয়ে বারান্দার ভেতরে চলে গেলো দরজা থেকে সরে। এখন বাইরের বৃষ্টিটা দেখতে ভালো লাগছে ওর। আকাশের দিকে তাকিয়ে হেসে আল্লাহ কে মনে মনে একটা থ্যাংক ইউ দিলো রুহি। লজ্জা ও লাগছে অনেক ইরাদ এমন করলো কেন হঠাৎ করেই।

পেছন থেকে এসে ইরাদ ওকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে বেশ কিছুক্ষন,,

এরপর বললো,,
“আমার বউটা?”
রুহির হাত পা এখন ঠান্ডা হয়ে আসছে,, এত আদুরে গলায় ইরাদ তো কথা বলেনা। এমন করে বউ ও বললো,,
“ছাড়ুন”
“নাহ”
“কেন?”
“আদর করি একটু?”
“উহুম”
“আপনার ঠোঁট গুলো আমার অনেক ভালো লাগে ইচ্ছে করে একদম খেয়ে ফেলি”

“আ আমি ঘু ঘুমামাববো..”
“এখনই?”
“হুম”
“ঠিক আছে”
এই বলেই রুহিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে পরলো ইরাদ।
এমন ঝড়েরবেগে কোলে করে এনে বিছানায় রাখাতে রুহির শক্ত হয়ে ইরাদের দিকে তাকিয়েই আছে।
রুহির তাকানো দেখে ইরাদ রুহির গালে হাত দিয়ে বলে
“ঘুম না আসছে?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ ”
বলেই রুহি পাশ ফিরে শুয়ে পরলো।
ইরাদ ওকে টেনে এনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো
“ওদিক ফিরে থাকলে ঘুমাতে দিবো না রাতে আজকে..”
রুহি চুপ করেই আছে।
“এদিকে ফিরে ঘুমান,, ”
“উহুম”
“তাহলে কিন্তু আজকে আর সত্যিই ঘুমাতে দিবো না”
“কেন?”
“আদর করবো,, খুব করে আর এরপর….
রুহি ইরাদের মুখ চেপে ধরে বলে
“আচ্ছা এদিক ফিরেই ঘুমাচ্ছি”
বলেই রুহি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিলো,, এবার ইরাদ ওকে নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে রাখলো।
রুহি এভাবে থেকেই ঘুমিয়ে পরলো। এই মানুষের স্পর্শ ওকে বাচার অনুভূতি দেয় নতুন করে। সুখ দেয়, শান্তি দেয়। প্রথম যেন এতটা তৃপ্তি নিয়ে রুহি ঘুম দিলো। আর ইরাদ? ও একটু পর উঠে গোসল করলো অনেকক্ষন লাগিয়ে এরপর এসে রুহিকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে গেলো

ভোরের আলো ফুটে গেছে চারিদিকে প্রতিদিনের মত আজকেও রুহি নামাজ পরে নিলো,, ইরাদকে ডাক দিলো কিন্তু ও উঠলো না,, ঘড়িতে প্রায় ৯টা বেজে গেছে ইরাদের ওঠার কোনো নাম নেই। রুহি কিছুক্ষণ টিকটক দেখলো এরপর বসে বসে ইরাদকে দেখছে আর চকলেট খাচ্ছে প্রায় ১০ মিনিট পরে আরিশার কল আসলো।
-হ্যালো আপু..
-হাই ভাবী।
-ঘুম কেমন হইসে তোমাদের?
-আমি তো সেই কখন উঠে গেছি আপনার ফ্রেন্ড এখনো উঠে নি।
– উঠবে কিভাবে অনেক মেহেনত করিয়েছো যে রাতে।
এই বলেই আরিশা হাসা শুরু করলো।
-না আপু,,
– না মানে?
– রাতে কিছু করো নি তোমারা??
– উহুম
-ইউ মিন সিরিয়াসলি??
-এভাবে বলছো কেন আপু?
-তোমাদের পর পর দুইদিন মেডিসিন খাওয়ালাম আমি আর পিয়াল তাও কিছু করো না তোমরা আনরোমান্টিক কাপল একদম।

রুহির চোখ বড় বড় হয়ে গেলো,, ইরাদের আচরনের রহস্য প এতক্ষনে বুঝে গেছে,, তাহলে কি এর আগের রাতে রুহিও একই কর্মকান্ড করেছিলো?
আর এই সব কিছু ঘিরেই কি ওর আর ইরাদের বিয়ে হয়েছে??
লজ্জায় রুহির মাথা কাটা যাচ্ছে।

ইরাদ ঘুম থেকে উঠে গেছে,,
ঘড়িয়ে তাকিয়ে দেখে বলে,,
-আল্লাহ ১০টা বাজে,, আমি এতোক্ষন ঘুমালাম,, সাথে সাথেই গত রাতের কথা গুলো আধো আধো মনে পরতে শুরু করেছে ওর। পাশে রুহিকে দেখে কি বলবে এখন তাই ও বুঝতে পারছেনা।

-আচ্ছা নাস্তা করেছেন?
-উহুম
-কেন?
-আপনি উঠেন নি তাই।
-আই এম সরি।
আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি,, রুহি লজ্জা পাচ্ছে কিন্তু মনে হচ্ছে ইরাদ তাহলে ওর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখে। হয়তো ইরাদ ও ওকে ভালোবেসে ফেলেছে। কেমন যেন ফুরফুরা লাগছে।
সুন্দর করে ও সাজছে একটু পরে ইরাদের সাথেই তো ঘুরতে বেড় হবে ও।

(চলবে..)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে