অতঃপর দুজনে একা পর্ব-১৩

0
1307

#অতঃপর দুজনে একা – [১৩]
লাবিবা ওয়াহিদ

—————————–
–“আচ্ছা আয়ন্তি, আমি বাসায় যাচ্ছি। তুই সন্দেশ কিনে বাসায় চলে আসিস।”

নীলা অবশিষ্ট কথাগুলো বলে কল কেটে সামনে তাকাতেই থমকালো। তার থেকে কিছুটা দূরত্বে নিলয় অবস্থান করছে। নিলয়কে এতগুলো দিন পর দেখার ফলে হঠাৎ যেন ঝটকাই খেলো। নিলয় রিকশা থেকে নেমে এদিকেই আসছে। নীলাকে এখনো লক্ষ্য করেনি অবশ্য। নীলা নির্নিমেষ চেয়েই আছে নিলয়ের পানে। নিলয় মোবাইল চেক করতে করতে নীলার কাছাকাছি আসতেই নীলাকে দেখতে পেলো। সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নীলা যেন নিজের ধ্বংস দেখতে পেলো, সেই দৃষ্টিতে নীলার হৃদপিন্ডের ধুকপুকানি বেড়ে গেলো। নিলয় ফোন পকেটে রেখে নীলার মুখোমুখি এসে দাঁড়ায় এবং সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বলে,
–“নীলু, তুই? বাড়ি ফিরছিস?”

চমকালো নীলা। অপ্রস্তুত হয়ে জড়ানো কন্ঠে বললো,
–“হ..হ্যাঁ। তুমি এদিকে?”
–“হ্যাঁ। অফিসের কিছু কাজের জন্যে এসেছি। এছাড়া তোর ভাবীর জন্যে কিছু কেনা…”

নিলয়ের যেন হুঁশ ফিরলো। নীলা বুকের মধ্যে বিরাট পাথর বসিয়ে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলে,
–“তাহলে কিনে আসো। আমি যাই, কেমন?”

নীলা চলে আসতে নিলে নিলয় পিছু ডেকে বলে,
–“রিকশা ডেকে দিবো আমি?”
নীলা থমকে দাঁড়ালো শুধু, উত্তরে কিছু বললো না। ভেতরটা খাঁ খাঁ করছে তার। চোখও ঝাপসা হয়ে আসছে। নিলয় এগিয়ে এসে বলে,
–“এখনো তুই আমাকে ভালোবাসিস নীলু? এটা কী করে সম্ভব করলি? আমার জন্যে তোর জীবন থামিয়ে রাখবি? সময় তো এসব মানে না।”
–“হয়তো ঠিকই বলেছো তুমি নিলয়। সরি, নাম ধরে ডাকলাম তবে কেন যেন ভাইয়া ডাকটা আসে না৷ যাইহোক, জীবন থামেনি। সেই সময় থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছি। তবে..”
–“তবে..?”

নীলা অন্যদিকে ফিরলো। গলা ভেঙ্গে আসছে তার। নিজেকে সামলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে শুধায়,
–“অনুভূতিগুলো আমার খুব দামী নিলয়। আমি তাদের সস্তা অনুভূতিতে রূপান্তর করত্র চাই না।”

নীলা এক মুহূর্তও দাঁড়ায় না। দ্রুত পায়ে হেঁটে এক রিকশা ডেকে সেটায় উঠে পরলো। সময় বিলম্ব না করে রিকশাতে করে চলে গেলো নিলয়ের দৃষ্টির সীমানার বাইরে। বহুদূরে। নিলয় সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রয়।

————————–
আয়ন্তি এবং মাহবিন পাশাপাশি বসে আছে। আয়ন্তির যেন নিঃশ্বাস আটকে আছে। শক্ত হয়ে বসে আছে সে। পরপর আয়ন্তি মাহবিনকে কোণা চোখে দেখছে। একসময় হুট করে চোখাচোখি হয়ে গেলো৷ আয়ন্তি চমকে উঠলো। অপ্রস্তুত হলো, ভড়কালো। তড়িৎ নজর ঘুরিয়ে ফেলে আয়ন্তি৷ হৃদপিন্ড তীব্র শব্দে ধকধক করেই চলেছে। মাহবিন সুজনের উদ্দেশ্যে গম্ভীর স্বরে বলে ওঠে,
–“এখানে সুইট’স কোথায় ভালো পাওয়া যায়?”
–“সামনের মোড়েই একটা ভালো সুইট’স শপ আছে স্যার। একবার টেস্ট করেছিলাম।”
–“ওকে। ড্রাইভার, গাড়ি সেখানে নিয়ে যাও।”

আয়ন্তির মন-কুঠুরির রঙিন প্রজাপতি’রা আনন্দের সাথে উড়তে লাগলো যেন। একঝাঁক জোনাকি’রা তার বক্ষের ভাঁজে ভাঁজে বিচরণ করে সুখের ঢেঊ খেলিয়ে দিচ্ছে। ঠিক কেন আয়ন্তির জানা নেই। আচ্ছা, এই সুখপাখিদের কারণ কী মাহবিনের সাথে সময় কাটানো? ভাগ্যিস তখন সন্দেশগুলো মাটিতে পরে গিয়েছিলো। না হলে যে আজও মাহবিনের দেখা পেত না। যাক, উপরওয়ালা যা করেন ভালোর জন্যেই করেন। লম্বা নিঃশ্বাস ফেললো আয়ন্তি, খুবই গাঢ় সেই নিঃশ্বাস। কিন্তু এ কী? মাহবিনের চোখ-নাক লাল দেখাচ্ছে কেন? কই, এতক্ষণ তো খেয়াল করেনি। শি’ট। উত্তেজনায় প্রিয় পুরুষটিকে যে খেয়ালই করেনি। আয়ন্তির হাতে হাত শক্ত করে চেপে রাখলো। নিচের অধর ভিঁজিয়ে মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে শুধায়,
–“আর ইউ আপসেট?”

মাহবিন যেন চমকালো। তড়িৎ আয়ন্তির পানে তাকায়। আয়ন্তি তখন জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে মাহবিনের পানে৷ দৃষ্টি তার গভীর। মাহবিন নিন নাকে বিচরণ চালিয়ে জোরে নিঃশ্বাস গ্রহণ করলো। অতঃপর গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
–“নো।”

আয়ন্তির হৃদয় যেন এই উত্তর নিতে নারাজ। তার ব্যাকুল হৃদয় তাক প্রবলভাবে বিরক্ত করে চলেছে। আয়ন্তি নিজেকে দমিয়ে রেখে শক্ত হয়ে থাকা শরীর ছাড়লো। শান্তিতে বসলো। আয়ন্তি আবার প্রশ্ন করলো,
–“তাহলে চোখ-মুখ লাল কেন?”
পরপর শোনা যায় মাহবিনের গম্ভীর কন্ঠস্বর।
–“রাতে ঘুম হয়নি।”
মাহবিনের সোজা জবাব। যেন তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই, এ বিষয় সামনে আগানোর। কিন্তু আয়ন্তির হৃদয় অবাধ্য হয়ে পরেছে। কপালে পরেছে চিন্তার ভাঁজ। আরও কিছু প্রশ্ন করার জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করতেই গাড়ি থামলো। পরপর শোনা গেলো মাহবিনেএ সেক্রেটারি সুজনের কন্ঠস্বর। রাশভারী কন্ঠে শুধালো,
–“এসে গেছে স্যার।”

—–
–“দেখো, কোন সুইট’স তোমার পছন্দ?”
আয়ন্তি একবার কাচের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার আশেপাশে। ভীষণ বড়ো এই মিষ্টির দোকানটি। লম্বা বড়ো কাঁচের ভেতর নানান ধরণের মিষ্টি, সন্দেশ এবং ছানা। মিষ্টির সৌন্দর্যও ভীষণ আকর্ষণীয়। তবে আয়ন্তির চোখ আটকায় ছানার সন্দেশ এবং চকলেটে আবৃত এক ধরণের মিষ্টান্নে। আয়ন্তি কোনটাকে বেছে নিবে দ্বিধায় পরে গেলো। মাহবিন আয়ন্তির দৃষ্টি অনুসরণ করে সেসব মিষ্টির দিকে তাকালো। আয়ন্তির লোভনীয় দৃষ্টি তখনো সেদিকে স্থির। মাহবিন আশেপাশে তাকিয়ে বলে,
–“দই আর রসমালাই খাও?”

আয়ন্তি চমকে মাহবিনের পানে তাকালো। কিছু না ভেবে ইতিবাচক মাথা নাড়ায়। মাহবিন তৎক্ষণাৎ দোকানের কর্মচারীর উদ্দেশ্যে বলে,
–“দুই কেজি করে রসমালাই এবং দই দাও। আর এই মিষ্টি আর সন্দেশ গুলাও দুই কেজি করে প্যাক করে দাও।”

আয়ন্তি শুধু চমকায় না বরং বিষ্ময়ে যেন আকাশ থেকে জমিনে এসে পরেছে। এতগুলো মিষ্টি কেন? তাও দুই কেজি করে? ওরে বাবা, এ যে পরিমাণে অনেক বেশি। আঁতকে উঠলো যেন আয়ন্তি। নেতিবাচক মাথা নাড়িয়ে বলে,
–“এই না, না। এতগুলোর কী প্রয়োজন?”

মাহবিন আয়ন্তির সম্মুখে এসে দাঁড়ায়। অতঃপর আয়ন্তির দিকে ঝুঁকে মৃদু স্বরে শুধায়,
–“মাহবিন ক্ষতিপূরণ দিতে জানে আয়ন্তি।”

আয়ন্তি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে রয় মাহবিনের সেই রক্তিম চোখ জোড়ায়। সেই চোখ জোড়ার ভাষা বুঝতে অক্ষম সে। মাহবিন সরে দাঁড়ায়। আয়ন্তি তখনো পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ শব্দে আয়ন্তির সম্বিৎ ফেরে। অল্প সংখ্যক ফাঁক হয়ে যাওয়া অধরজোড়া নিমিষেই মিলিয়ে ফেললো। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে মাহবিনের পানে তাকিয়ে আপনমনে শুধালো,
–“আপনাকে যে এত ভালোবাসলাম, তার ক্ষতিপূরণ তো আজও দিলেন না মাহবিন।”

——————–
নীলা চমকে মিষ্টির প্যাকেটগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। এখনো কোনো প্যাকেট আনবক্স করেনি। করবে কীভাবে, এখনো যে তার বিষ্ময় কাটছে না। চোখ যেন তার কোটর হতে বেরিয়ে আসার উপক্রম। কোনক্রমেই তার বিষ্ময় কাটছে না। কখন থেকে একই ভঙ্গিতে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে, তার হুঁশ নেই। ওয়াশরুমের খট করে খোলা দরজার নীলার ধ্যান ভাঙ্গে। আয়ন্তি চুল মুছতে মুছতে বের হচ্ছে। নীলার বেড রুমে নজর বুলালো। আয়ন্তি লাল থ্রি-পিছ পরে বেরিয়েছে। কী ভেবে নীলা বলে ওঠে,
–“কী রে আয়ন্তি? কাবিন টাবিন হলো নাকি যে এত মিষ্টির বাহার? আর লাল বউ হয়ে বের হলি যে? গলিতে তোর বর অপেক্ষা করছে বুঝি?”

আয়ন্তি তেড়ে এসে হাতের তোয়ালটা নীলার মুখশ্রীতে ছুঁ’ড়ে মা’ রলো। চোখ রাঙিয়ে তেঁজী কন্ঠে বলে ওঠে,
–“শাট আপ নীলা।”
–“তো আমি আর কী বলব বল? হতেও পারে মাহবিন ভাই আমাদের জিজু হয়ে গেলো? কী? পারে না? আচ্ছা গেস কর।”

নীলার বলা উক্তিতে আয়ন্তির গাল জোড়া লাল আভায় বিস্তৃত হলো। নীলা তা লক্ষ্যও করলো। নীলা তো আন্দাজে শুধু ঢিল ছুঁ’ড়েছিলো। কিন্তু তার এই ঢিল যে এভাবে কাজে দিবে কে জানতো? নীলা ভীষণ চমকালোও বটে। উচ্ছ্বাসের সাথে আওড়ায়,
–“এই, সত্যি কী তোর আর মাহবিন ভাইয়ের মধ্যে কিছু চলছে? হু, আগের এবং এখনের হিসাব তো তা-ই বলছে। তলে তলে এতকিছু ঘটায় ফেললা আর আমি আজ জানলাম? এত চালাক কবে থেকে হলি আয়ন্তি? আমাকেও কিছু জানালি না?”

শেষ বাক্যে যেন দুঃখ প্রকাশ করলো নীলা। আয়ন্তিও বুঝে গেলো তার কিছু লুকিয়ে লাভ নেই। তাই ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
–“তুই যা ভাবছিস তেমন কিছুই না। তুই যেমন নিলয় ভাইকে ভালোবাসিশ, তেমনটাই আমাদের সম্পর্ক।”

নীলার মুখ ভার হয়ে গেলো৷ দুঃখের রেশ মুখজুড়ে বিস্তৃত। হাসার চেষ্টা করে বললো,
–“খুলে বল।”
–“মাহবিনকে আমি ভালোবাসি। সেই প্রথমদিন থেকেই। কিন্তু কে জানতো পাত্র মাহবিন নয় ওয়াসিফ। সেদিনই প্রথমবারের মতো মন ভেঙ্গেছিলো আমার। চাইলেও হৃদয় থেকে মাহবিনকে বের করতে পারিনি। অনুভূতির কাছে হার মেনে মাহবিনকে নিয়ে হাজারো অনুভূতি বুনতে লাগলাম, অপেক্ষা করতে লাগলাম, শেষটার।”
–“এর মানে মাহবিন ভাই জানে না তুই তাকে..?”
–“নাহ। জানাইনি।”

কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো বৈঠকঘরে। নীলা আয়ন্তির হাতে তোয়াল দিয়ে বলে,
–“বারান্দার রশিতে টানিয়ে দিয়ে আয়। আমি প্যাকেটগুলো খুলে দেখি তাহার প্রেমিকার জন্যে কী কী পাঠাইছে।”
–“এবার সত্যি মা’ই’র খাবি।”
–“উহু, এরপর থেকে যা করবো তার সত্যি সত্যি আদর দিবি।”
–“মানে?”
–“মানে তোয়াল বারান্দায় দিয়ে আয়।”

আয়ন্তি নীলাকে ভেংচি কেটে চলে গেলো। নীলা ততক্ষণে হাতের কাটারটা নিয়ে মিষ্টির প্যাকেট খুলতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।

—————–
কেটে গেলো এক মাস। মাসের মাঝামাঝিতে-ই আয়ন্তিদের ফ্ল্যাটের অপর রুম অর্থাৎ তালাবদ্ধ রুমটায় নীলার দুই বান্ধুবী ভাড়া নিয়েছে। নীলাই এনেছে ওদের। যদিও ওরা নীলার ক্লোজ বান্ধুবী নয়, একই ডিপার্টমেন্টেরই তাঁরা। তালাবদ্ধ রুম দেখতে আর ভালো লাগছিলো না তার। এছাড়া বাড়িওয়ালাও তাকে আগে থেকে বলে রেখেছিলো যেন এখানে ভাড়াটিয়া আনতে সাহায্য করে। নীলাও আর না করতে পারেনি। তাই যারা ঘর খুঁজছিলো তাঁদের এই স্থান সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে। ওরা অবশ্য নিজেদের মতো করেই থাকে। মাঝেমধ্যে টুকটাক কথা হয় আর কী। এই এক মাসে আয়ন্তির বাবা নুরুল আলম অনেক চেষ্টা করেছেন মেয়েকে ঘরে নিয়ে আসার জন্যে। কিন্তু বারংবার ব্যর্থ হন। মেয়ে যে তার মতোই জেদী, ত্যা’ড়া প্রকৃতির। তবে হার মানেনি নুরুল আলম। মেয়ের জন্যে বক্ষঃস্থলে করা প্রতিটি হাহাকার যে মেটাতে হবে।

আয়ন্তি এই এক মাসে একবারও মাহবিনের দেখা পায়নি। রিয়নেরও খুব একটা খবর নেই। বর্তমানে অফিসের কাজে ভীষণ ব্যস্ত সে। কাজের ব্যস্ততায় আয়ন্তিকে রোজ কল করার সময় হয়ে ওঠে না। একদিন সকালে আয়ন্তিকে জয়া কল করলো। আয়ন্তি ছিলো তখন ঘুমে কাত। ফোনের বিরক্তিকর রিংটোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো তার। কপালে গভীর বিরক্তির ভাঁজ ফেলে কল রিসিভ করলো।
–“কী আয়ন্তি ঘুম হলো?”

পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে আয়ন্তির চোখ জোড়া খুলে যায়। উঠে বসে সে। ঠিক শুনেছে নাকি স্বপ্ন দেখছে? আবারও জয়ার কন্ঠস্বর শুনলো। হাসলো আয়ন্তি। হাই তুলতে তুলতে বললো,
–“হ্যাঁ বলো। ঘুম তো রোজই হয়, তোমার কন্ঠ তো আর রোজ শোনা হয় না।”
–“যাক, ভালো। শোন, ওয়াসিফ কানাডা চলে গেছে। আমার পাসপোর্ট সহ অন্যান্য কাজ চলছে। কয়েক মাস পরে ওয়াসিফ আসবে, আমায় বিয়ে করে কানাডা নিয়ে যাবে।”
–“এই কথা শোনানোর জন্যে আমায় কল দিয়েছো?”
–“কেন? জেলাস হচ্ছিস না?”

আয়ন্তি তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। হাসতে হাসতে বললো,
–“দুই পয়সার ক্যারেক্টার নিয়ে আমার এত ফু’টানি কখনো হয়নি যে আমি জেলাস হবো।”
জয়া তেঁতে উঠলো। বাজখাঁই গলায় বললো,
–“আয়ন্তি! মুখ সামলে কথা বল। নাটক করবি না, আমি জানি তুই জ্বলছিস।”
–“কেন জ্বলবো? আমার ঠ্যাকা পরেছে?”
–“কেন? তোর না ওয়াসিফ হবু বর ছিলো?”
আয়ন্তির মুখে হঠাৎ এক গা**লি চলে আসলো। জবানকে দমিয়ে রাখলো আয়ন্তি। কী ভেবে নিজেকে সামলে হেসে দিয়ে বলে,
–“কোনো কালেই ছিল না। ওটা ছিলো একটা এক্সিডেন্ট। ভুল করে এক সা’প আমার জীবনে ঢুকে গেছিলো জাস্ট। এর বেশি কিছু না।”
–“ও আচ্ছা তাই? খুব আফসোস হচ্ছে না? ওয়াসিফের মতো পয়সাওয়ালাকে ধরে রাখতে পারলি না?”
–“মোটেও না। ভালো দিয়ে ভালোকে ধরতে হয়, আর খা’রা’পকে খা’রা’প দিয়ে। তুমি দুই নম্বর চয়েজ করেছো, আর আমি এক নম্বর।”
–“মানেহ? কাকে চয়েজ করেছিস?”
–“নিজের চরকায় তেল দাও তুমি। এসব তোমার না জানলেও চলবে।”
–“নাহ৷ তুই বল! আমি জানতে চাই।”

আয়ন্তি ঠোঁট কামড়ে ভাবনায় পরে গেলো। কী ভেবে হেসে দিয়ে বলল,
–“মাহবিনকে মনে আছে? মাহবিন হচ্ছে আমার সেই রত্ন। এফেয়্যার চলছে আমাদের। শীঘ্রই বিয়ের দাওয়াতটাও পেয়ে যাবে। তবে তোমাদের নোং’ রা’মির মতো নয় আমাদের সম্পর্ক। আমাদের সম্পর্ক হচ্ছে সম্মানের, পবিত্রতার।”

আয়ন্তি জয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে খট করে কল কেটে দিলো। ইচ্ছে করেই মিথ্যে বলেছে সে। গালি তো দিতে পারছে না তাই এই পথ অবলম্বন। জানে, জয়া ভেতরে ভেতরে ফুঁসবে। ভেতরে ভেতরে পৈশাচিক আনন্দ পেলো আয়ন্তি। নীলাকে ডাকলো। হাসি তার এখনো অধরে এঁটে আছে। আজ মন বড্ড ফুরফুরে লাগছে মাহবিনের কথাগুলো বলতে পেরে। যদিও মস্তিষ্ক জানে এই কথাগুলো ভিত্তিহীন, তাও মন যেন সেসব পাত্তা দিচ্ছে না। সে যে উড়ন্ত রঙিন প্রজাপতির সাথে সুর মেলাতে ব্যস্ত। আয়ন্তি হাত দ্বারা চুল খোপা করতে করতে নীলার উদ্দেশ্যে আবারও হাঁক ছাড়লো,
–“নীলা ওঠ। ভার্সিটির জন্যে সত্যি-ই দেরী হয়ে যাচ্ছে। ব্রেকফাস্টও বানাতে হবে। হাতে সময় নেই, তোর হেল্প আজ লাগবে আমার।”


ফ্ল্যাট থেকে একপ্রকার তড়িঘড়ি করে বের হলো আয়ন্তি। নীলা এখনো ভেতরেই। আয়ন্তি নীলাকে ডাকতে ডাকতে শুধালো,
–“তুই আমাকে আর শান্তি দিলি না নীলু। এত স্লো কেন তুই? এমনিতেই লেট আবার রিকশা না পেলে তো…”
হঠাৎ আয়ন্তির সামনে নজর যেতেই থমকালো সে। এ কাকে দেখছে আয়ন্তি? সত্যি নাকি কল্পনা, ভ্রম? মাথা ভনভন করছে আয়ন্তির। একরাশ বিষ্ময়ও চোখে-মুখে দৃশ্যমান। মাহবিন তাদের পাশের ফ্ল্যাটে চাবি দিয়ে দরজা খুলছে। কিছু শব্দ কানে আসলে মাহবিনও আয়ন্তিকে দেখলো। ভূত দেখার মতো চমকে উঠলোও বটে। হয়তো প্রত্যাশা করেনি মাহবিন। আয়ন্তি অস্ফুট করে শুধালো,
–“আ…পনি এখানে?”

———————-
~চলবে, ইনশাল্লাহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে