seeing with you Part-06

0
1571

#seeing_with_you
Episode – 6
জায়রা ইনছান

এভাবেই ৪দিন কেটে গেল কিন্তু মুরাকের অবস্থা খারাপ হয়ে আসছে তাও সে নিজেকে সামলিয়ে বাহির থেকে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছে। রাতে তাকে হসপিটালে থাকতে দেখে মোমো বলে উঠলো,,, মি.মুরাক আপনি বাসায় গিয়ে রেস্ট নেন আপনার অবস্থা খারাপ হয়ে আসছে। সে চোখগুলো জোর করে খুলে বলে,, No need, I’m fine! তার কথা শুনে মোমো ফোস করে এক নিঃশ্বাস ফেলে। এ সময় তার দাদি বলে উঠে,, বুটুল তুই বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড় সারাদিন অফিসে আর রাতে এখানে, ক্লান্ত শরীরে ঘুম না হওয়াটা মুশকিল। সে বলে,, না আমি ঠিক আছি। দাদি বলে,, তুই অসুস্থ হলে আমার খেয়াল কে রাখবে তোর সুস্থ থাকতে হবে। মোমো এরই মধ্যে বলে,, নাহয় দুজনকে এখানে বেডে শুয়ে স্যালাইন দিতে হবে। মুরাক রাগি দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায় মোমো চুপ করে যায়। তারপর দাদি তাকে হরেকরকম বুঝাতে থাকে না পেরে বলে,, মুনতাহা তো এখানে আছেই তো এতো চিন্তা কিসের বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড় ও আমার সাথে থাকবে নাহয়!! মোমো চমকে ফট করে তাকায় দাদির দিকে তারপর মনে মনে বলে,, এহ্যা আমি না ঘুমিয়ে এখানে পেঁচার মতো বসে থাকবো আম্মুউউউউ আমি বাসায় যাবো। মুরাক আড়চোখে মোমোর দিকে তাকায় মোমো মুখ কালো করে মাথা নুয়ে নখ কুটাচ্ছে মুরাক বলে,, বাসার থেকে কাউকে পাঠাচ্ছি আমি। মোমোর মুখ হাসিজ্জ্বল হয়ে যায় যাক বাবা এখানে আজ রাত থাকতে হবে না ঘুমোতে পারবো!! দাদি তখন বলে,, না কাউকে পাঠাতে হবে না এক রাতের জন্য কি! তুই বাংলোতে গিয়ে ঘুমা কাউকে জানানোর প্রয়োজন নেই যাহ। মোমোর মুখ মলিন হয়ে যায় তার ঘুমের প্রয়োজন একদিন না ঘুমালে তার পাগল পাগল অবস্থা আর দাদি কিনা…। মুরাক তার দিকে তাকায় মোমোর মুখ দেখে তার অত্যন্ত হাসি পাচ্ছে বাঁকা হেঁসে বলে,, আচ্ছা। তারপর গম্ভীর স্বরে মোমো কে বলে,, আমার দাদির খেয়াল রাখবা যদি কিছু হয় তাহলে তোমার খবর আছে। বলে চলে যায় সে। এদিকে মোমো চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে সে কি এমনে বলছে নাকি হুমকি দিছে? মাথায় আসছে না মোমোর। সে গিয়ে দাদির পাশে বসে মুচকি হেসে দাদি তার সাথে গল্প করা শুরু করে কথার মাঝখানে মোমোর ফোনে কল আসে ইভান করেছে রিসিভ করতেই ইভান বলে,, ‘এই বাসায় আসতে এতো দেরি হচ্ছে কেন কয় তুই?’ মোমো একটু সরে গিয়ে বলে,, ‘আজকে বাসায় আসবো না’। ‘কেন’ অবাক হয়ে যায় ইভান। মোমো ঘুম ঘুম স্বরে বলে,, ‘পেশেন্ট এর দেখাশুনা করতে হবে তাই আব্বু আম্মু ঘুমিয়ে গেছে?’ ‘না তোর অপেক্ষায় বসে আছে তারা তাই কল দিলাম তাহলে তুই সকালে আসবি নাকি মধ্যরাতে আসবি?’ মোমো বলে,, না না সকালে আসবো তোমরা সবাই ঘুমাতে চলে যাও আমার টেনশন করতে হবে না আমি ঠিক আছি’। আশ্বাস দিয়ে বলে সে। ইভান দ্রুত গতিতে বলে,, যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে আমাকে কল দিছ আমি সাইকেল নিয়ে চলে আসবো আর হ্যা সাবধানে থাকিস রাখি! মোমো মুচকি হেসে বলে,, আচ্ছা বাই! বলে কেটে দেয় মোমো হাসছে কারণ ইভান ছোট ভাই হয়েও বড় ভাইয়ের মত সব কাজ কারবার। তারপর আবার দাদির পাশে বসে গল্প করছে কিছুক্ষণ পর রিদান তাকে টেক্সট করে লিখে,, তাড়াতাড়ি আমার কেবিনে আসো কুইক! মোমো বিরক্ত মুখ নিয়ে কেবিনে ঢুকে রিদান তাকে দেখে বলে,, তুমি বাসায় যাওনি কেন? রিদানের মুখে এটা শুনে সে চমকে উঠে তার মুখে হাসি নেই প্রশ্নাত্তর মুখে মোমোর দিকে তাকিয়ে আছে রিদান আবার বলে,, এখন সাড়ে এগারোটা বাজে খবর আছে ম্যাডাম? মোমো দৃষ্টি সরিয়ে বলে,, আজকে এখানে থাকব! “কেন” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে রিদান। “আপনার বন্ধু মুরাক বাসায় চলে গেছে আর দাদির দায়িত্ব আমাকে দিয়ে গেছে তাই” অন্য দিকে তাকিয়ে বলে সে। “ওয়েট তাহলে আমি অন্য নার্সের ব্যবস্থা করছি তুমি বাসায় যাও” ফোন হাতে নিতে নিতে বলল। মোমো খুশি হয় কিন্তু আবার মুখ কালো করে ফেলে মুরাকের বলা কথা মনে করে‌ “আমার দাদির খেয়াল রাখবা যদি কিছু হয় তাহলে তোমার খবর আছে” এটা অন্য নার্স যদি দাদির কিছু করে ফেলে শাস্তি তো ভুগতে হবে আমার বলে মনে মনে। তারপর রিদানকে বলে,, না স্যার আমি থাকব আর আপনি নিজেই আমাকে দায়িত্ব দিলেন প্রথম দিন। রিদান একটু চিন্তা করে বলে,, আচ্ছা তোমার সাথে আমিও থাকবো তাহলে। মোমো অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,, কেন স্যার? “এমনেই” বলে মুচকি হাসে আবার। মোমো মনে মনে বলে,, থাক তাতে আমার কি! তারপর সে দাদির কেবিনে চলে যায় তার চলে যাওয়াতে রিদান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে,, তোমাকে আমি একদম ছেড়ে যাবো না “প্রিয়সী”। বলে এক মিষ্টি হাসি দেয়। এদিকে মোমো দাদির করা বকবক ‌শুনেই যাচ্ছে সে অনেক বার বলে ঘুমিয়ে পড়তে কিন্তু এ কথা দাদি মানতে নারাজ তিনি বকবক করেই যাচ্ছেন মোমোর বিরক্ত ও ঘুম আসলেও সে সব দমিয়ে শুনে যাচ্ছে।

সকালে,,,,,,
মুরাকের একটু দেরিতে ঘুম ভাঙ্গে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে ৯:১৫ বাজে আজ তার ফ্রেশ লাগছে অনেকক্ষন ঘুমিয়েছে সে। বিছানা ছেড়ে উঠতেই তার মনে পড়ে হসপিটালের কথা সে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হতে চলে যায়।
এদিকে রাত জেগে গল্প করাতে দাদি ও মোমো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন মোমো সোফার সাথে হেলান দিয়ে মাথাটা সোফার উপরে ফেলে দেয় মুখটা হা করে ঘুমিয়ে আছে সে এক জায়গায় তার পরনে স্কাফ আরেক জায়গায়। কিছুক্ষণ পর মুরাক দাদির কেবিনে ঢুকে দাদিকে এসময় পর্যন্ত ঘুমোতে দেখে অবাক হয় পাশেই তার চোখ যায় মোমো কে আধমরা হয়ে ঘুমোতে দেখে তার সামনে যায় তাকে ছোট ছোট চোখে দেখে নেয় সব ঠিকঠাক শুধু পরনের স্কাফ ও মাথা ঠিক নেই মুরাক তার স্কাফ ঠিক করে দেয় চেহারা দেখার জন্য মুরাক জিরাফ এর মতো ঘাড় লম্বা করে সোফার উপরে দিকে দেখে সাথে সাথে মুখ বানিয়ে ফেলে সোজা হয়ে দাঁড়ায় বিড়বিড় করে বলে,,, মেয়েরাও মুখ হা করে ঘুমায়! পরক্ষণে তার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আসে সে মোবাইল বের করে মোমোর ঘুমুঘুমু মুখের ছবি তুলে ফেলে। তারপর তাকে ডাকতে শুরু করে মোমোর উঠার কোন নাম নেই মুরাক বিরক্ত হয়ে তার বাহু ধরে তাকে দাঁড় করায় মোমো সাথে সাথে মুরাকের গায়ে ঢলে পরে মোমো টুস করে চোখ খুলে ফেলে তার মাথা ঘুরে উঠে তাও মাথা নুয়ে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছে সে অন্যদিকে ফিরে তার মুখ মুছে নেই চুল ঠিক করে মুরাকের দিকে ফিরে তাকায় সে রাগি দৃষ্টিতে অনেকক্ষণ তাবৎ মোমোর মতিগতি দেখছে মোমো মুচকি হেসে বলে,, কি হয়েছে? মুরাক দাদির দিকে ইশারা করে বলে,, এতোক্ষণ ঘুমাচ্ছে কেন? “লে হালুয়া কি হবে আমার রাতভর জেগে গল্প করছি এটা কিভাবে বলব?” মোমো মাথা নিচু করে নখ কুটাচ্ছে আর কি বলবে চিন্তা করছে। মুরাক চেঁচানো সুরে বলে,,, মুখে কি ঘি ভরে রাখছো কথা বের হচ্ছে না কেন? মোমো হালকা কেঁপে উঠে বলে,, উমম্ দাদিকে ঘুমের ওষুধ দিছি তাই। টুপ মিথ্যা বলে দেয় সে। মুরাক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চলে যায়। এদিকে মোমো তার চলে যাওয়াতে ধপাস করে বসে বলে,, উহহ্ বাঁচা গেল এবার।

৭দিন পর,,,,
দাদিকে হসপিটাল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরই মধ্যে মুক্তি মিলে মোমোর, যাক তার আর দেখা হবে না মুরাকের সাথে এ ভেবে এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মোমো মুখে তার মিষ্টি হাসি দাদিকে বিদায় দিয়ে কি যেন মহৎ কাজ করে ফেলল সে। আজ তার খুশি খুশি লাগছে এতো দিন যেন জেলখানা থেকে মুক্তি পেল।
।।
দুদিন কেটে যায় দাদি বসে আছে আর চিন্তা করছে,, যদি মুনতাহা এখানে থাকত তাহলে কথা বলার সাথী পেতাম ওই বুইড়া হাবলা তো আমার কথা কোন কাল থেকেই শুনতো না হুহহ মুনতাহার সাথে আমার ছোট কালের কথা নিয়ে গল্প করেছি সেও তার ছোট বেলার কথা নিয়ে গল্প করেছে কি মজাই ছিলাম হসপিটালে আর এখানে… এরই মধ্যে মুরাক এসে হাজির হয় মুরাক হেসে বলে,, কার সাথে এতোক্ষণ কথা বলছিলা যে আমাকে দেখে চুপ করে গেছ হুম? দাদি কষ্ট স্বরে বলে,, আমার শরীর খারাপ লাগছে! মুরাক অস্তির করে বলে,, কেন আবার কি হয়েছে তোমার ওয়েট আমি রিদানকে কল করি। দাদি একটু চিন্তা করে ফট করে বলে,, না না রিদানকে কল করার দরকার নেই একটু পর ঠিক হয়ে যাব শুধু শরীরটা একটু চিনচিন ব্যাথা করছে। মুরাক কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে বলে,, তাহলে তোমার জন্য একটা নার্স রাখব সে সারাক্ষণ তোমার সাথে থাকবে আর তোমার খেয়াল রাখবে কেমন? দাদি মনে মনে খুশি হয় কিন্তু বাহিরে প্রকাশ করে না বলে,, আচ্ছা, মুনতাহা কে রাখবা সে আমার সুন্দর করে খেয়াল রাখে। “কিহহ” বলে চেঁচায় উঠে বলে,, না ও এখানে থাকবে না ওর থেকে বেটার নার্স রাখবো আমি। দাদি মনে খারাপ করে বলে,, মুনতাহা কে রাখলেন কি সমস্যা ওকে আমার ভালো লাগে তোর দাদু আমার কথা শুনে না কিন্তু মুনতাহা আমার কথা শুনে ও খেয়াল রাখে বুঝলি? রাখলে ওকেই রাখবি নাহলে কোন নার্স রাখার দরকার নেই হুহ। মুরাক চোখ বন্ধ করে রাগ দমিয়ে বিরক্ত সুরে বলে,,, Ok Ok Fine!!

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে