seeing with you Part-05

0
1636

#seeing_with_you
Episode – 5
জায়রা ইনছান

রিদানকে কেবিনে না পেয়ে মোমো বুঝতে পারলো কেন সে কেবিনে নেয়।‌ মোমো সামনে এগোতেই রিদানকে এক রোগীর কেবিনে দেখতে পাই পাশেই মুরাক বসে আছে মোমো মুখ ভেংছি দিয়ে কেবিনে ঢুকে রিদান ও শুয়ে থাকা দাদি তাকে দেখে চমকে উঠে কিন্তু মুরাক মোটেও চমকাই নি সে মোমো কে মুখ ভেংছি দিতে দেখেছিলো সে স্বাভাবিক ভাবেই বসে আছে রিদান মুচকি হেসে মোমোকে সব ভালোভাবে বুঝিয়ে চলে যায়। মোমো দাদির ফাইল চেক করে দাদিকে স্যালাইন দিবে এমন সময় কেবিনে কে যেন ঢুকে যায় মোমো ফিরে দেখে দুই মধ্যবয়স্ক মহিলা ও পুরুষ ও তার সমান বয়সী এক মেয়ে ও একজন বৃদ্ধ লোক। মোমো বুঝে গেল এরা মুরাকের পরিবারের সদস্য। বৃদ্ধ লোকটি মুরাক কে বলে,, বুটুল এভাবে কেউ গাড়ি চালাই? তোর দাদি তোর সাথে গাড়িতে ছিলো তারপরও এতো স্পিডে গাড়ি চালাও কেন? মুরাক একবার মোমোর দিকে তাকিয়ে কপাল চুলকাতে চুলকাতে বলে,, দাদু যখন তখন এই নামে ডাকো কেন? আর বাবার মত স্লো মোশনে গাড়ি চালাবো নাকি এই জনমে তো পৌছাতাম না। তার দাদা এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। মোমো তার দাদিকে স্যালাইন দিয়ে দেয়। মুরাক দাঁড়িয়ে বলে উঠে,, আমি এখন অফিসে যাচ্ছি রাতে এখানে থাকব। তখন মেয়েটি বলে উঠে,, না ভাইয়া আমি এখানে থাকব আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি। এ সময় মধ্যবয়স্ক লোকটি বলে,, মাহিরা, মুরাক তোমাদের কারোই এখানে থাকার প্রয়োজন নেই আমি থাকব। মোমো এক ব্রু উঁচু করে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মুরাক সবাইকে থামিয়ে বলে,, তোমাদের সবার থেকে আমি ফিট আছি সো রাতে আমি এখানেই থাকব দাদির পাশে, ব্যাস আমি আর কারোর কথা শুনতে চাই না। বলে মোমোর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে হনহন করে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। মোমোও সেখান থেকে চলে আসে।
।।।
রাত ৮টা,,,,,,,,
মুরাক অফিসে সমস্ত কাজ শেষ করে হসপিটালে দাদির কেবিনে ঢুকে। পরপর করে সবাই কেবিন থেকে বেরিয়ে বাসায় চলে যায় শুধু কেবিনে মুরাক ও দাদি আছে। মোমো আরেকটা স্যালাইন দেওয়ার জন্য ঢুকে চমকে যায় কিছু না বলে স্যালাইন দিয়ে মুরাক কে বলে,, এই যে স্যালাইন নিচে চলে আসার পর স্যালাইন অফ করে দিয়েন। মুরাক মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই। মোমো ওখান থেকে চলে আসে সে চিন্তা করছে,, এতো ক্লান্ত হওয়ার পরও দাদির সাথে থাকবে আর স্যালাইন এর কারনে রাত জাগতে হবে যাক তাতে আমার কি! আমি কেন চিন্তা করছি পাগল! বলে বাসার দিকে রওনা দেয়।
।।।
সকাল,,,,,,,,
মোমো দাদির কেবিনে ঢুকে দেখে দাদি শান্তিতে ঘুমোচ্ছে পাশে ফিরে দেখে মুরাক মাথা নিচু করে বসে আছে পরনে তার ধূসর রঙের টি-শার্ট ও কালো প্যান্ট সিল্কি চুল গুলো এলোমেলো হয়ে কপালে আছড়ে পড়ছে সে চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছে কিন্তু অবাধ্য চুল গুলো বারবার পড়ছে মুখে ঘুমের রেশ পুরো রাত ঘুমোতে পারিনি বোঝা যাচ্ছে তাও তাকে ঝিমোতে দেখে বেশ সুন্দর লাগছে মোমোর সে তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নেয় নিজের মাথায় হালকা চাটি মেরে বলে,, ছিঃ মোমো এই খোচ্চর টাকে এভাবে দেখে আছিস কেন পাগল! মোমো গিয়ে স্যালাইন এর তাকিয়ে দেখে স্যালাইন অফ করা। পিছন থেকে গম্ভীর কন্ঠে আস্তে করে বলে উঠে,, স্যালাইন আমি রাতে অফ করে দিছি। মোমো ভয়ে লাফ দিয়ে উঠে দাদির উপর পড়ে যাবে এমন সময় মুরাক তার কোমড় ধরে টেনে আনে মোমো চোখ বড়বড় করে তাকায় বলে,, পিছন থেকে এভাবে কেউ ভূতের মত বলে কত ভয় পায়ছি জানেন! বলে সরে দাঁড়ায় মুরাক তার দিকে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে যেন বুঝতে পারিনি কিছুই। মোমো তাকে পাত্তা না দিয়ে দাদির হাত থেকে স্যালাইন এর সুঁই নিবে সে এমন সময় খেয়াল করে মুরাক তার দিকে তাকিয়ে আছে ফিরে দেখে মুরাক বুকে দুহাত গুজে হেলান দিয়ে ব্রু কুঁচকে গম্ভীর মুখে তার কাজ দেখে আছে দুজনের চোখাচোখি হতেই মোমো চোখে সরিয়ে নেয় সুঁই নেওয়াতে মনোযোগ দেয়। কিন্তু সে নিতে পারছে না কারণ মুরাক তার দিকে তাকিয়ে আছে সে পিছে ফিরে বলে,, এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? মুরাক তার দিকে তাকিয়ে বলে,, তাড়াতাড়ি সুইটি নিয়ে নাও। মোমো বিরক্ত সুরে বলে,, এভাবে তাকালে নিব কেমনে? আপনার চোখ সরান। বলে তার দিকে পিঠ দিয়ে স্যালাইন এর সুঁই টি আস্তে করে নিয়ে নেয়। হালকা ব্যাথা অনুভব করে দাদি জেগে উঠে দুজনকে দেখে বলে,, গুড মর্নিং। মোমো ও মুরাক দুজনেই একসাথে বলে উঠে,, গুড মর্নিং দাদি। তারা একে অপরের দিকে তাকায় তাদের এহেন কাজে দাদি হেসে দেয় তারপর মোমো কে উদ্দেশ্য করে বলে,, তোমার নামটা কি কালকে জানতে পারিনি। মোমো হেসে মুখে বলে,, মুনতাহা তাসরিন মোমো। মুরাক বিস্ময়কর চোখে তার দিকে তাকায়।‌ দাদি মুরাক কে বলে,, আজকে অফিসে যাবে? ‘না যাব না’ দ্রুত উত্তর দেয় মুরাক। ‘আচ্ছা আমি দাদির জন্য নাস্তা নিয়ে আসি’ বলে মোমো। মুরাক তার দিকে তাকায় বলে,, হসপিটালে খাবার খাবে আমার দাদি? মোমো প্রশ্নাত্তর দৃষ্টিতে বলে,, তো? ‘হসপিটালের খাবার গুলো ভালো না’ এক রোখা হয়ে বলে মুরাক। ‘ওনার খাবারের তালিকা ঠিক নেই তাই ওনার থেকে হসপিটালের ‌রান্না করা খাবারিই খেতে হবে’ ফাইল দেখে বলে মোমো। ‘ অসুস্থ কে আরও অসুস্থ করে তুলবে এখানকার খাবার এর চেয়ে ভালো ড্রাইবারকে বলে বাসার থেকে খাবার নিয়ে আসি’ তাচ্ছিল্য ভাবে বলে মুরাক। তাদের তর্ক করতে দেখে দাদি মুরাক কে বলে,, একদিন এখানের খাবার খেলে কিছু হয়ে যাবে নাতো বুটুল।”বুটুল” নামটা শুনে মোমো ফিক করে হেসে দেয় মুরাক তার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকায় সাথে সাথে মোমোর হাসি উধাও হয়ে স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়ায়। ‘যাও নিয়ে আসো খাবার’ বলে উঠে দাদি। মোমো মুচকি হেসে চলে যায় খাবার আনতে। ১০ মিনিট পর আসে মোমো খাবার নিয়ে মুরাক সাথে সাথে নাক মুখ কুঁচকে ফেলে খাবার দেখে ‘মরা সবজি ও রুটি খাবে যে তুমি’ বিচিত্র রকমের চেহারা বানিয়ে ফেলে সে। ‘এগুলোই খেতে হবে’ খাবার দেখে বলে দাদি। তারপর খাওয়া আরম্ভ করেন। মুরাক মুখ বানিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দাদির দিকে। মোমো মনে মনে খুশি হয়ে বলে,, আমিই জিতছি হুহহ!‌ খাওয়া শেষে তিনি মোমো কে বলেন,, কিসে পড়ো তুমি? মোমো হেসে উত্তর দেয়,, জ্বি অনার্স এর তৃতীয় বর্ষে। ‘আচ্ছা পরিবারে কে কে থাকে? আগ্ৰহ নিয়ে জিজ্ঞেস করেন। ‘মা বাবা আমি আর ছোট ভাই’ বলে মোমো। ‘কিসে পড়ে সে? নড়েচড়ে বসে জিজ্ঞেস করে। ‘সবেমাত্র SSC দিছে’ ট্রে নিতে নিতে বলল সে। মুরাক বসে বসে চুল এদিক ওদিক করছে ও তাদের শুনে মনে মনে,, একতো ঘুম হয়নি আমার আর এদিকে তারা বান্ধবীর মত গল্প করছে কি এক্টা অবস্থা! দাদি মোমো কে মুরাকের দিকে দেখিয়ে বলে,, ও মুরাক বিজনেস ম্যান, ছোট কাল থেকেই গম্ভীর টাইপের, যথেষ্ট ভদ্র ও কেয়ারিং হালকা পাতলা রান্না করতে জানে ও বাস্কেটবল ও খেলতে জানে। মোমো উৎফুল্ল কন্ঠে বলে,, কিহ আপনি বাস্কেটবল খেলেন আমার ভাইও খেলে সবসময়। ব্রু উঁচু করে তাকায় মুরাক। দাদি মোমো কে বলেন,, ও বাস্কেটবল এর চেম্পিয়ান। মুরাক বিরক্তিতে চোখ উল্টে ফেলে কারন তার দাদি তার অতিরিক্ত প্রশংসা করছে। মোমো মুখ উল্টে বলে,, আমার ভাইও চেম্পিয়ান ওনার সাথে খেলতে দিলে আমার ভাইই জিতবে। ‘পাক্কা খেলোয়াড় এর সাথে কাচা খেলোয়াড় কখনো পেরে উঠে না’ টিটকারি মেরে বলে মুরাক। তাদের আবার ঝগড়া করতে দেখে দাদি বলে উঠে,, থামো তোমরা! প্রতিযোগিতা করতে পারো বাস্কেটবল নিয়ে। ‘হুম তোমার ভাইকে ডাকিয়ো দেখবো কে জিতে’ ব্রু উঁচু করে বলে মুরাক। মোমো মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। রাতে মোমো সেখান থেকে চলে আসে শুধু কেবিনে রয়ে যায় মুরাক ও তার দাদি।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে