Love with vampire পর্ব-১৮+১৯

0
1247

#Love_with_vampire [১৮]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

কথামতো কিছুক্ষণ পর অহনাকে এক্স-রে করাতে নিয়ে যাওয়া হলো।এক্স-রে রশ্মি অহনার শরীরে পড়তেই ডাঃক্লার্ক একটা বিষয় লক্ষ্য করলো,অহনার শরীরে রশ্মি প্রবেশ করছে না,এমন দেখাচ্ছে যে রশ্মির নিচে কোনো মানুষই নেই.!

ডাঃক্লার্ক মনিটরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অহনার শরীরের ওপর রশ্মি প্রবেশ করছে, কিন্তু তার প্রতিবিম্ব কম্পিউটারে ভেসে উঠছে না।বিষয়টা খুবই অস্বাভাবিক। ক্লার্ক তার এই জীবনে না দেখা অনেক কিছিরই সম্মুখীন হচ্ছেন।চিন্তা,ভয় দুটোই কাজ করছে।এমন কেন হচ্ছে সে হিসেব কিছুতেই মেলাতে পারছেন না তিনি।ডাঃক্লার্ক মিস অহনার কাছে গেলেন।অহনাকে একটু পর্যবেক্ষন করলেন তিনি,অহনার শ্বাস প্রশ্বাস ঠিকি চলছে।কিন্তু তার শারীরবৃত্তীয় কোনো অংশই কাজ করছে না।শুধু শ্বাস চলছে এইটুকুই। এমন অবস্থায় রোগীর রোগ হিসেবে কি ধরে নেওয়া যেতে পারে সেটা ভেবেই খুন হয়ে যাচ্ছে ক্লার্ক।

__________

দেয়ালের তিনটি ইট ইতোমধ্যে অহনা ভেঙ্গে ফেলেছে।তার হাত বেয়ে টপটপ করে করে পড়ছে,কিন্তু সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই।বেশ কিছুটা যায়গা তৈরী হয়েছে,এইদিক দিয়ে ভেতরে কি আছে তা অনায়াসে দেখা যেতে পারে।সূর্যের রশ্মি একশো আশি ডিগ্রি বরাবর অবস্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত ভেতরে আলো যেতে পারছে না।একশো আশি ডিগ্রি কোন বরাবর সূর্যের আলো দেয়ালে পড়তে আরো বেশ কিছি মুহূর্ত অহনাকে অপেক্ষা করতে হবে।

দেয়ালের অন্যপ্রান্তে অনুভব হিংস্র হায়েনার রুপ ধারন করেছে।তার ধারালো চকচকে দাঁত তীব্র অন্ধকারেও কিছুটা স্পষ্ট বেঝা যাচ্ছে। সাদা জিনিষের ওপর প্রতিফলন ঘটে বেশি।যেমন যত অন্ধকারই হোক না কেন,তীব্র অমাবস্যাতেও শীতপ্রধান দেশে জমে থাকা তুষার স্পষ্ট দেখা যায়।ছায়াটা ক্রমশ দেয়ালের ভাঙা অংশটার কাছে যাচ্ছে। হেলে দুলে হাটছে।অনুভব এখন সবকিছু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।ভ্যাম্পেয়ার রুপে তার কাছে সূর্যের আলো যেমন স্পষ্ট, তেমনি গাঢ় অন্ধকার ও স্পষ্ট। অনুভব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে একটা ছায়া নারীমূর্তি অহনার আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া দেয়ালের প্রতি দুই হাত উঁচিয়ে দিয়ে এগোচ্ছে। অনুভব একটা তীব্র গর্জন করলো।গর্জনে পুরো ঘর জুড়ে একটা ভয়ঙ্কর রেশ চলে এসেছে।অনুভব এক লাফ দিয়ে সেই ছায়ার ওপর পড়লো,।দু’হাতে সেই ছায়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেললো।কিন্তু কোনো লাভ হলো না।এটা ছায়া ! কোনো দেহ নয়,।এই ছায়াকে অনুভব স্পর্শ করতে পারছে না।স্পর্শ করতেই বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে। অনুভব গোঙ্গানির মতো গর্জন করতেই থাকলো।বাতাসে ছড়িয়ে যাওয়া সেই ছায়া আবারো মিলিত হলো।

ছায়াটার গলা অস্বাভাবিক লম্বা।চুলগুলি মাটিতে ছুঁই ছুঁই করেও ছুঁতে পারছে না।অনুভব বুঝতে পারলো এভাবে সে কিছুই করতে পারবে না।তবুও সে সেই ছায়ার ওপর বার বার ঝাপিয়ে পড়ছে। এক পর্যায়ে অনুভব সেই ভাঙ্গা অংশের সামনে দারালো।যেনো ছায়াটা আর এগোতে না পারে।

ছায়াটা অনুভবের সামনে দারিয়ে। অনুভব তার তীক্ষ্ণ ধারালো দাঁত বেড় করে গর্জন করছে,সেই ছায়া অনুভবের একদম কাছে দারালো।হাত বাড়ালো অনুভবের প্রতি,ছায়াটার কোনো আকৃতি না থাকলেও অদৃশ্য ভাবে অনুভবের চোখের দিকে ছায়াটার চোখে পড়লো,কি স্নিগ্ধ, মায়াবী সেই চোখ।অনুভব একপলকে চেয়ে আছে।অনুভবের দৃষ্টি কোমল হচ্ছে,সে ফিরে যাচ্ছে মানুষ রুপে।এক পর্যায়ে অনুভব আর হিংস্র পশুর রুপে থাকতে পারলো না।সে এখন মানুষ রুপে ফিরে এসেছে।এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ছায়াটার অদৃশ্য মায়াবী সেই চোখে।

সূর্যের আলো এবার ঘরের ভেতর প্রবেশ করছে। অহনা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।অহনা ইচ্ছে করলেই ঝুঁকে দেখতে পারে ঘরের ভেতর কি আছে,কিন্তু সে পারছে না।কোনো এক অজানা ভয় তাকে গ্রাস করে রাখছে।অহনা ভয় ভয় নিয়ে দেয়ালে চোখ রাখলো।ভেতরে তাকাতেই
____________

ডাঃক্লার্ক নিজের কেবিনে আসলেন।অহনার ফাইল থেকে সাদা কাগজটা বেড় করলেন।যেখানে আগে থেকে অহনার নাম,বয়স এবং রোগের বিষয় উল্লেখ ছিলো।রোগ তখন তেমন উল্লেখ করা ছিলো না।রোগের জায়গায় লেখা ছিলো ইনফিনিটি, অসীম।ডাঃক্লার্ক মনসুরকে টেলিফোন করলেন।বেশ কিছুক্ষণ পর ডাঃমনসুর আসলেন।

” স্যার আমায় ডেকেছেন,? ”

” মিস অহনার আগের ফাইল দেখলাম,সেখানে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে মিস অহনা কোমায় আছেন ”

ডাঃ মনসুর লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলেন।এরুপ একটা রিপোর্ট তৈরী করা ছাড়া তার কোনো উপায় ও ছিলো না।সে লজ্জিত ভঙ্গিতে বললো

” স্যার প্রথমত আমাদের তো তাই মনে হচ্ছিল, যে মিস অহনা কোমায় আছেন ”

” এখনও কি তাই মনে হয়? ”

” না স্যার।আমার তো মনে হয় মিস অহনা ভূ…..”

” আপনি থামুন।আপনি কি বলতে চান সেটা বুঝতে পেরেছি। আপনি ডাক্তার হলেন কিভাবে সে বিষয়েই সন্দেহ আছে আমার।”

” সরি স্যার ”

” কিসের জন্য সরি ”

” জানিনা স্যার ”

ডাঃক্লার্ক মনে মনে মনসুরকে গাধা বললেন।কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রেখে বললেন

” আমি মিস অহনার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলতে চাই।ব্যাবস্থা করতে পারবেন? ”

” অবশ্যই পারবো স্যার ”

ডাঃমনসুর চলে গেলেন।ডাঃক্লার্ক চশমাটা খুলে টেবিলের ওপর রাখলেন।চোখ বন্ধ করে তিনি সিটি টিভি ফুটেজের ভিডিওটা মনে মনে কল্পনা করতে লাগলেন।

ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে অহনা চোখ বন্ধ করল শুয়ে আছে।তার কোমড় অব্দি চাঁদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।হঠাৎ কোনো কারনে অহনার কপাল ফেটে রক্ত পড়তে লাগলো।হঠাৎ কপাল ফেটে যাওয়ার রহস্যটা কি ? কি হতে পারে? শএধু তাই নয়,রক্ত গড়িয়ে পড়লো ফ্লোরে।ফ্লোরে পড়ার সাথে সাথে যে ঘটনাটা ঘটলো সেটা ছিলো আরো আতঙ্কজনক।কপাল বেয়ে গড়িয়ে রক্ত যখন ফ্লোরে পড়লো তখন অদৃশ্য মনে হচ্ছে কেউ রক্তগুলি খাচ্ছে,।একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে যে কোনো একটি অদৃশ্য জিহ্বা রক্ত চেটে চেটে খাচ্ছে। এক পর্যায়ে ফ্লোরে এবং অহনার কপাল বেয়ে গলা বেয়ে গড়িয়ে পরা রক্তগুলিও খেয়ে ফেললো,এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অহনার কপাল থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেলো।একপর হাত থেকে রক্তপাত শুরু হলো।সব বিষয়টা কেমন অস্বাভাবিক। এর ব্যাখ্যা কি আদোও বের করতে সম্ভব?।

ডাঃক্লার্কের মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো।ডাঃমনসুর অহনার বাবা,মাকে নিয়ে এসেছে।ক্লার্ক চশমাটা চোখে দিলেন।একজন মাঝারি বয়সী লোক বসে আছেন,বয়স আনুমানিক ৩৫-৪০ বছর,এরমধ্যেই হবে। তার সঙ্গেই বসে আছেন অল্পবয়সী একজন মহিলা। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার বয়স ২৫ এর বেশি হবে না।ডাঃক্লার্ক স্বাভাবিক ভাবেই বললেন

” কেমন আছেন? ”

” জি ভালো আছি ” মাঝ বয়সী লোকটা বললেন।

” এখানে আসতে কষ্ট হয়নি তো? ”

” না, হয়নি ”

” আসলে আমি মিস অহনার বিষয়ে কিছু জানতে চাচ্ছিলাম ”

” হ্যা বলুন কি জানতে চান ”

” আপনারা কখন জানতে পারলেন যে মিস অহনা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে? ”

” আমি ঠিক জানিনা।আমি বাহিরে ছিলাম।বিয়ের পরেরদিন আমি আমার বন্ধুকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিতে গিয়েছিলাম। তখনি অহনার মা ফোন করে বিষয়টা জানায় ”

” আপনি তাহলে তেমন কিছুই জানেন না? ”

” আমি জানা মাত্র অহনাকে হসপিটালে নিয়ে আসি।এই পর্যন্ত ”

ডাঃক্লার্ক অহনার মা’কে উদ্দেশ্য করে বললেন

” আপনি বিয়ের দিন রাতে,মানে বাসর রাতে ঢোকার আগে পর্যন্ত তো ছিলেন তাই না? ”

” হ্যা ছিলাম ”

” অহনার মধ্যে কি কোনো অস্বাভাবিকতা নজরে পড়েছিলো আপনার? ”

” না ডাক্তার সাহেব, অহনা ভালোই ছিলো।বাসর ঘরে ঢোকার আগেও ওর বোনদের সাথে কত হাসি মজা করছিলো।পরেরদিন সকাল ১০ টা বাজে তবুও অহনা নিচে নামছিলো না।আমার তখনি একটু সন্দেহ হয়েছিলো,অহনা ভোর ৫ টায় উঠতো রোজ।কিন্তু আমি তেমন গুরুত্ব দিই নি,তারপর যখন নাস্তা নিয়ে ওর ঘরে যাই তখন কয়েকবার ডাকাডাকি করলাম কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পাইনি।তখন দরজা ভাঙ্গা হলো,আর তারপর দেখলাম অহনা মা বিছানায় শুয়ে আছে,কোনো কথা বলছে না ”

বলেই তিনি কান্না শুরু করলেন।ডাঃক্লার্ক হাতের ইশারায় ডাঃমনসুর কে বললেন ঢ়েন তাদের নিয়ে যায়।ডাঃমনসুর তাদের বাইরে নিয়ে গেলেন।ক্লার্ক চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে রইলেন।মনসুর এসে চুপিচুপি ডাঃক্লার্কের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো

” স্যার, আমি একটা কথা বলি,মিস অহনাকে ইনজেকশনে মেডিসিন দিয়ে ফেরে ফেলি,নইলে স্যার আমরা কেউ বাঁচবো না।এই মেয়ে সাধারণ কোনো মেয়ে না স্যার। এক্স-রে মনিটরে তার শরীরের কোনো ছাপ তুলতে পারলো না,আরো কত ভৌতিক ব্যাপার ঘটছে।আরেকটা কথা স্যার,আপনি কোনোদিন কোনো বিষয়ে হার মানেননি,যদি এই বিষয়ে হার মানেন তাহলে আপনার সুনাম নষ্ট হয়ে যাবে,ঠিক বললাম তো স্যার?স্যার আপনি বললে আজ রাতেই ব্যাবস্থা করি?

” হ্যা! ঠিক বলেছো একদম,আমিও তাই ভাবছি, সিরিজে বিষ নাও,যা করার এখনি করতে হবে! ”

চলবে?

#Love_with_vampire [১৯]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

” হ্যা! ঠিক বলেছেন একদম,আমিও তাই ভাবছি, সিরিজে বিষ নিন,যা করার এখনি করতে হবে! ”

” সত্যি স্যার? আপনি সত্যি বলছেন? ”

” হ্যা সত্যি, সিরিজে বিষ নিয়ে সেটা আপমার মাথায় ঢুকিয়ে রাখেন ”

” ঠিক বুঝলাম না স্যার ”

” আমার সামনে থেকে সরে যান।আপনি নিজেই তো একটা সাইকো, আপনি অন্যের কি চিকিৎসা করবেন।পারলে নিজের চিকিৎসার ব্যাবস্থা করেন ”

ডাঃ মনসুর অপমানিত বোধ করলেন। রাগে গিজগিজ করতে করতে কেবিন থেকে বেড় হয়ে গেলেন।ডাঃক্লার্ক তার চলে যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলেন,মনে মনে বললেন ” এ্যা’চ,বিগ এ্যা’চ “।

______________

সূর্যের আলো ঘরের ভেতর প্রবেশ করছে। অহনা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।অহনা ইচ্ছে করলেই ঝুঁকে দেখতে পারে ঘরের ভেতর কি আছে,কিন্তু সে পারছে না।কোনো এক অজানা ভয় তাকে গ্রাস করে রাখছে।অহনা ভয় ভয় নিয়ে দেয়ালে চোখ রাখলো।ভেতরে তাকাতেই অহনা দেখতে পেলো কেউ পেছন ফিরে দারিয়ে আছে।কে দারিয়ে আছে সেটা দেখার জন্য চাহনি একটু ওপরে তুলতেই অনুভবের ভ্যাম্পেয়ার রুপটা অহনার নজরে পড়লো।সাথে সাথেই অহনা ভয়ে কয়েক পা সরে গেলো।

” অনুভব ভ্যাম্পেয়ার রুপ নিয়েছে ঘরে ঢুকে? কিন্তু কেন? অকারণে তো সে ভ্যাম্পেয়ারে পরিণত হয় না,এখন তো পূর্নিমার রাত ও না,তাহলে কি অনুভব কোনো বিপদে পারেছে, তাই ভ্যাম্পেয়ারে পরিণত হয়েছে? আমি থাকতে অনুভবের কিচ্ছু হতে দিবো না ” এসব মনে মনে আওড়ানোর পর অহনা পাথরটা আবারো হাতে তুলে নিলো।যেভাবেই হোক এই দেয়াল ভাঙ্গতেই হবে।

দেয়ালের ওপাশে অনুভব দারিয়ে আছে।সেই ছায়াটা ধীর গতিতে এগিয়ে আসছে,তখনই আবারো দুম দুম শব্দ শুরু হতে লাগলো দেয়ালে। “তার মানে কি অহনা আবারো দেয়াল ভাঙার জন্য দেয়ালে আঘাত করছে? অহনা এখানে আসলেই কোনো বিপদ হতে পারে।আমি তো কোনো না কোনো ভাবে বেড় হবোই,কিন্তু অহনা যদি কোনো বিপদো পড়ে তখন? নাহ,ওকে কোনো ভাবেই ভেতরে আসতে দেওয়া যাবে না ” কথাগুলি মনে মনে ভেবে অনুভব দেয়ালের আরো কাছে গেলো।

দেয়ালের খুব কাছে গিয়ে চিৎকার করে অহনাকে বললো ” অহনা তুমি থামো,এই ঘরে তোমার বিপদ,তুমি দেয়ালে আঘাত করা বন্ধ করো।আমি যেভাবেই হোক বেড় হতে পারবো,কিন্তু তুমি যদি এখাবে চলে আসো তাহলে এই ছায়াটা হয়তো তোমার কোনো ক্ষতি করে ফেলতে পারে।এতোক্ষণে আমি বেড়িয়ে আসতাম,কিন্তু ও ছায়া জন্য আমি কিছিই করতে পারছি না।তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো অহনা? ”

দেয়ালের ওপাশ থেকে অহনা শুধু চাপা গর্জন শুনতে পেলো।অহনার মনে হলো অনুভব কষ্ট পাচ্ছে, তাই এভাবে চাপা গর্জন করছে।কিন্তু অনুভব যে তাকে কিছু বলার চেষ্টা করছে সেটা অহনার বোধগম্য হচ্ছে না।অহনা আরো জোরে জোরে দেয়ালে আঘাত করতে থাকলো।হাত বেয়ে রক্ত টপটপ করে পড়তে লাগলো সেখানে।

অনুভব লক্ষ্য করলো বেশ কয়েকবার বলার পরেও অহনা থামছে না।এমনটা কেন হচ্ছে?এটা তো হওয়ার কথা নয়,অহনা অনুভবের কথা শুনবে না এটা অসম্ভব।তখনি অনুভবের মনে হলো যে সে তো ভ্যাম্পেয়ারের রুপে আছে।তাই তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না,যা বেড় হচ্ছে তা গর্জন,এজন্যই অহনা বুঝতে পারছে না।কিন্তু অহনাকে বোঝাতেই হবে যে ওর এই ঘরে আসা যাবে না।কিন্তু কিভাবে বলবো সেটা? আমি কি মানুষ রুপে ফিরে যাবো? তাহলেই তো অহনা শুনতে পাবে।হ্যা আমায় সেটাই করতে হবে “।

কয়েক মুহূর্ত ভেবে অনুভব সিদ্ধান্ত নিলো যে সে মানুষে পরিণত হবে।মনে মনে একটা ভয় ও হতে লাগলো,মানুষ রুপ নিলে তো তার আলাদা কোনো শক্তি থাকবে না।এবং এইটা’ই সুযোগ নিয়ে যদি ছায়াটা আমার কোনো ক্ষতি করে? আমার ক্ষতি করা মানে তো অহনাও সংকটে পড়বে।কিন্তু আপাতত আমায় ওকে বাঁচানোর জন্য মানুষ হওয়া জরুরি।

অনুভব চোখ বন্ধ করলো।বন্ধ করতেই তার শরীরে একটা জোড়ালো খিচুনির মতো হলো।সে এখন ভ্যাম্পেয়ার থেকে মানুষের রুপ ধারন করেছে।চোখ খুলতেই অনুভব বলার চেষ্টা করলো।কিন্তু তার মুখ থেকে কোনো শব্দ বেড় হচ্ছে না।অনুভব অনেক চেষ্টার পরেও কোনো আওয়াজ বের করতে পারলো না।তখনই একটা হাসির শব্দ কানে ভেসে এলো।অনুভব পেছন ফিরে তাকালো।অনুভব বেশ বুঝতে পারলো এই হাসিটা এই ছায়াটার।আমার কন্ঠ এই বন্ধ করিয়ে দিয়েছে।যেমনটা ভেবেছিলাম তেমনটাই হলো।আমি কি অহনাকে তাহলে বাঁচাতে পারলাম না?

শুধু এইটুকু ভাবর সময়টার মধ্যেই অনুভব দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো।অসম্ভব মাথায় যন্ত্রনা শুরু হয়েছে।অনুভব জানে এই ব্যাথার কারন কি,কে এই ব্যাথা দিচ্ছে।মাথা ব্যাথায় অনুভব ধপ করে কালো বালির ওপর পড়ে গেলো।এতো তীব্র মাথা ব্যাথায় অনুভব আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো সে।কালো বালির ওপর পড়ে রইলো তার নিথর দেহ।ছায়াটা ভয়ঙ্কর শব্দ করে হাসছে।সে শব্দ শুধু ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

অহনা দেয়ালে আঘাত করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছে।দেয়ালের বেশ অনেকটা জায়গা ভেঙ্গে গেছে।এখন চাইলেই সেখান দিয়ে ভেতরে যাওয়া সম্ভব। অহনা আঁচলটা বুকের সাথে শক্ত করে বাঁধলো। তখন একটা অস্ফুটে আওয়াজ কালে ভেসে এলো

“অহনা,অহনা ”

অহনা বেশ বুঝতে পারলো এটা রুপার স্বর।অহনা একটু বিভ্রান্ত হলো।রাগী স্বরে উত্তর দিলো

” এখন চুপ থাকো,আমার ভেতরে যেতে হবে। একদম চুপ ”

বলেই অহনা দেয়ালের ওপর ডান পা’টা তুলে দিলো।তখনই আবারো রুপা বলে উঠলো

” অহনা দারাও,ভেতরে যেও না, আমার কথা একটু শোনো যেও না ভেতরে ”

অহনার এবার প্রচুর রেগে গেলো।রেগেমেগে উত্র দিলো

” তোমায় চুপ করতে বলেছি না? অনুভব ভেতরে বিপদে পড়েছে,জানিনা এখন কোন অবস্থায় আছে সে,আর আমি এখানো দারিয়ে থাকবো? ”

” অনুভবের বিষয়েই তেমাকে বলবো আমি।আমি তোমায় বারণ করবো না।শুধু আমার কথা শুনো তুমি ”

” যা বলার তারাতাড়ি বলে বিদেয় হও ” রেগে গিয়

” অনুভব এখন বিপদে আছে,সে বিপদের কারনটা তুমি ”

” কিহ্? আমি কারন? ”

” হ্যা তুমি।অনুভব ভ্যাম্পেয়ার রুপে ছিলো,সেই রুপে ঘরে তার কোনো ক্ষতি করতে পারতো না সেই ছায়া।কিন্তু তুমি প্রবেশ করলে তোমার ক্ষতি হবে এই ভেবে অনুভব তোমায় বারবার বারন করেছিলো দেয়াল না ভাঙ্গার জন্য ”

” কি বলছো তুমি? অনুভব কখন আমায় বললো? ”

” বলেছিলো, যখন সে ভ্যাম্পেয়ার রুপে ছিলো।তখন তার আওয়াজ তোমার কাছে গর্জনের মতো শোনাচ্ছিলো ”

অহনার তৎক্ষনাৎ মনে পড়লো হ্যা সত্যিই তো, অনুভব তো গর্জন করেছিলো।অহনা হতভম্ব হয়ে বললো

” কিন্তু আমি তো সেই গর্জন বুঝতে পারিনি ”

” তোমায় বলার জন্য অনুভব মানুষে রুপান্তর হয়েছিলো।কিন্তু বলার আগেই ”

” বলার আগেই মানে? অনুভবের কি কিছু হয়েছে? কি হলো চুপ করে গেলে কেনো বলো? ”

” মানুষ রুপে ফিরে যেতেই সেই ছায়ার শক্তিতে অনুভব জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে ”

” তুমি আমায় এসব আগে কেনো বলোনি ”

” আমি প্রথম থেকেই চেষ্টা করেছিলাম,কিন্তু তুমি তো সেটা শুনতেই পাচ্ছিলে না।কেমন একটা ঘোরে ছিলে ”

” এখন আমি কি করবো সেটা বলো।আমি কিচ্ছু বুঝতে পাচ্ছি না এখন আমার কি করা উচিৎ। আচ্ছা আগে এটা বলো তুমি কিভাবে এসব জানলে? তুমি তো বলেছিলে ওই ঘরের কিছু তুমি দেখতে পারো না? ”

” দেয়াল ভেঙ্গে ফেলার সাথে সাথে সেই বলয়টা কেটে যায়,এজন্যই আমি সবটা দেখতে পাচ্ছিলাম।তেমায় বলার চেষ্টাও করেছি,কিন্তু তুমি কিচ্ছু শুনতে পাচ্ছিলে না ”

তখনই অহনার কানে একটা শব্দ এলো।এমন মনে হলো যেনো দেয়ালের ওপারে ভারি কোনো কিছু ধুপধাপ আঁচড়ে পড়ছে। অহনা আতঙ্কে জমে গেলো।কি এভাবে আঁচড়ে পড়ছে?

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে