Love with vampire পর্ব-১৬+১৭

0
1316

#Love_with_vampire [১৬]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

শত আঘাতের ফলশ্রুতিতে ভঙ্গুর দেয়ালের একটা ইট সরাতে পেরেছে অহনা।সেখান দিয়ে ভেতরে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না।কিছুক্ষন আগে একবার সেখানে দূর থেকে মাথা নিচু করে দেখার চেষ্টা করলো অহনা।কিন্তু লাভ হলো না।তার দৃষ্টিতে যতদূর নজরে পড়ে সব অন্ধকার, শুধুই অন্ধকার। অহনা পাগলের মতো দেয়ালে পাথরটা দিয়ে আঘাত করছে।সে আঘাতে কখনো ইটের কোনগুলি ভেঙে,আবার কখনো হাত চাপে পড়ে অহনার হাতে রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছে।রক্ত হাত বেয়ে মাটিতে টপটপ করে পড়ছে।হাতের এহেন অবস্থায় অহনা থেমে নেই,সে পাগলের মতো পাথর দিয়ে দেয়ালে আঘাত করেই চলেছে।সে এখন স্বাভাবিক অবস্থায় নেই।একটা ঘোর কাজ করছে নিজের মধ্যে। তার শুধু বারবার মনে হচ্ছে, যেভাবেই হোক,ভেতরে তাকে যেতেই হবে,কেউ তাকে ডাকছে,প্রবল আকর্ষন করছে,সে আকর্ষন সাধারণ কোনো আকর্ষন নয়।

______

বৃদ্ধ লোকটির ভয়ঙ্কর হাসিতে সারা গুহা কাঁপছে।সে অট্টহাসিতে মেতে উঠেছে সেখানকার প্রতিটি বালিকণা।উন্মাদের মতো হাসতে হাসতে বৃদ্ধ সেই সাধক বলে উঠলো

” মুক্তি, মুক্তি, এবার সবার মুক্তি হবে।এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবো আমি।হা হা হা,সময় এসে গেছে।ভেঙ্গে ফেল এই দেয়াল,মুক্ত কর সেই শক্তিকে, আজ এতো যুগ পর আমার মুক্তি হবে।মুক্তি, হা হা হা ”

______

কোমা অবস্থায় অহনা পড়ে আছে হসপিটালের বেডে।ডাক্তাররা তার অবস্থা সনাক্ত করতে পারেননি।ডাক্তাররাও অহনার এই অস্বাভাবিক অবস্থায় প্রচুর ঘাবড়ে গেছে।তবে তারাও হাল ছারছে না,মেডিকেল সাইন্সে এমন ঘটনা তাদের কখনো মুখোমুখি করতে হয়নি।এমন যে হতে পারে সে বিষয়েও তাদের কোনো ধারণা কখনোই ছিলো না।কোমায় থাকলে একজন রোগী যেমন অবস্থায় থাকে, অহনা তেমন অবস্থায় নেই।

এই বিষয় নিয়ে দেশ-বিদেশের ডাক্তারদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে কয়েকবার।অহনাকে এখন ইউ.কে থেকে একজন স্পেশাল ডাক্তারের আওতায় রাখা হয়েছে।তিনিই অহনার চিকিৎসা করবে। তার নাম ডাঃ ক্লার্ক।অহনার এই অদ্ভুত বিষয়টা যখন ডাক্তারদের মধ্যে বেশ ছড়িয়ে গেছে তখন ডাঃ ক্লার্ক নিজেই সিদ্ধান্ত নেন অহনার চিকিৎসা তিনি করবেন।যদিও তিনি অবসরপ্রাপ্ত।

ডাঃ ক্লার্ক কেবিনে বসে অহনার ফাইল দেখছেন।তার বিষয়ে কিছু জানার চেষ্টা করছেন।বেশ কিছুক্ষণ ফাইল দেখে একটা সাদা কাগজে লিখলেন

Name : Ahana, Age : 18, Class : Intermediate, Problem : Infinite

এইটুকু লিখে ডাঃ ক্লার্ক ফোন করলেন।ডাঃমনসুর কে ফোন করে নিজের কেবিনে ডাকলেন।কিছুক্ষন পর ডাঃ মনসুর কেবিনে আসলেন।

তারা ইংরেজিতে কথা বলছে।কথোপকথনের বাংলায় অনুবাদ –

ডাঃ মনসুর- ” শুভ সন্ধ্যা স্যার।কেমন আছেন? ”

” ভালো।আমি মিস অহনাকে দেখতে চাচ্ছি।ওনার কাছে নিয়ে যান আমায় ”

” স্যার আপনি আজকেই এসেছেন। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর…”

ডাঃ মনসুরের কথা আটকে দিয়ে ডাঃ ক্লার্ক বললেন

” ডাঃমনসুর।প্রয়োজনের অধিক কথা বলবেন না।অপ্রয়োজনীয় কোনো কিছু আমার পছন্দ না।”

” দুঃখিত স্যার ”

” মিস অহনাকে হসপিটালে এডমিট করা হয়েছে ২ দিন আগে। এই দুদিনে আপনারা কি কি ট্রিটমেন্ট করেছেন সেগুলির ফাইল আমার ডেস্কে রাখবেন।আর এখন আমায় মিস অহনার কাছে নিয়ে চলুন ”

” অবশ্যই স্যার।চলুন”

ডাঃক্লার্ক চেয়ার ছেড়ে উঠতেই একজন নার্স হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলেন।তাকে দেখে মনে হচ্ছে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে।ভয়ে চেহারা একদম স্যাতস্যাতে হয়ে গেছে।নার্স ছুটে এসে আঞ্চলিক ভাষায় ডাঃক্লার্কের উদ্দেশ্য কিছু বললো।ডাঃক্লার্ক, ডাঃমনসুরের দিকে তাকালেন।তার তাকানোর অর্থ হলো নার্সের কথা ইংরেজিতে ট্রানসিলেট।ডাঃ মনসুর ট্রানসিলেট করলেন

” স্যার মিস অহনার হাত থেকে রক্ত পড়ছে।হঠাৎ করেই হাত ফেটে গলগল করে রক্তপাত হচ্ছে ”

” লেটস চেক ”

” কিম্তু স্যার মিস অহনা তো কোমায়,তাহলে হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে কিভাবে? স্যার আমার ভয় করছে ”

” ইউ সাট আপ।ভুলে যাবেন না আপনি একজন ডাক্তার ”

” আপনি কিছিই জানেন না স্যার।নতুন এসেছেন,আস্তে আস্তে সব বুঝতে পারবেন।এই মেয়ে সাধারণ মেয়ে না।অলৌকিক কিছু আছে এর মধ্যে ” ডাঃমনসুর ফিসফিস করে বললেন।

” ডাঃমনসুর,ফিসফিস করা আমার পছন্দ না।যা বলার স্বাভাবিক হয়ে বলবেন।আর এটা অস্বাভাবিকের কিছু হয়নি।রোগীর হাতে হয়তো নার্সের অসাবধানতার কারনে লেগে গেছে,তাই রক্ত বেড় হচ্ছে ”

” জি স্যার হতে পারে ”

তারা দু’জনই অহনাকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে গেলেন।ডাঃমনসুর ঘরের ভেতরে ঢুকলেন না।তিনি ইতোমধ্যে অহনাকে অন্য চোখে দেখছেন।তার মনে অহনা মানুষ না,অন্য কিছু,যার জন্ম এই পৃথিবীতে নয়,অন্য কোথাও।ডাঃ ক্লার্ক তার এই কর্মকান্ডে অতি বিরক্ত হলেন।মনে মনে বললেন ” এই হলো ডাক্তারের অবস্থা”।

তিনি অহনার কাছে দারালেন।তার সুক্ষ্ম দৃষ্টি আরো সুক্ষ্ম হয়ে গেলো।চোখ থেকে চিকন ফ্রেমের ধূসর রঙ্গের চশমাটা খুলে হাতে নিলেন।এদিকে ভয় ভয় নিয়ে ডাঃ মনসুর ক্লার্কের পাশে দারালেন।ক্লার্কের কাছে এসে ভয়ার্ত স্বরে বললো

” স্যার,নার্সকে রাগারাগি করেছি।ভয়ও দেখিয়েছি,বলেছি সত্যিটা না বললে তার চাকরি নট করে দিবো,কিন্তু সে বারবার বলছে সে কিচ্ছু করেনি।আমারো মনে হচ্ছে নার্স কিছু করেনি।এই রোগী সাধারণ কেউ না স্যার ”

” কোনো রোগীই সাধারণ নয় ”

” স্যার আমি সেটা বলিনি। আমি বলতে চাচ্ছি ”

” এই রোগীর প্যারানরমাল শক্তি আছে।তাই তো? ”

” জি স্যার ”

” আপনি আপাতত চুপ করে থাকুন।এই রোগীর আগে দেখছি আেনার চিকিৎসা বেশি প্রয়োজন ”

” সরি স্যার।আমি চুপ।একদম চুপ ”

অহনার হাত থেকে এখনো রক্ত পড়ছে।পুরো হাত কেটে গেছে,আবার কোথাও কোথাও কালো হয়ে আছে।মনে হচ্ছে যেখানটায় কালো হয়েছে সেখানে চাপা লেগেছে।ডাঃক্লার্ক একটু অবাক হলো।এমনটা হওয়ার কারন তিনি বুঝতে পারছেন না।তিনি অহনার হাত থেকে রক্ত নিলেন।রক্ত একদম তাজা।কিন্তু কিভাবে?।

” ডাঃ মনসুর ”

” জি স্যার ”

” রক্তটা পরিক্ষা করে দেখুন।এই রক্ত আর মিস অহনার শরীরে থাকা রক্তের গ্রুপ পরিক্ষা করে আমায় জানান।আর এই রুমে তো সিসি ক্যামেরা আছে তাই না? ”

” জি স্যার আছে ”

” গুড।ভিডিও ফুটেজটা আমার ওখানে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যাবস্থা করুন এক্ষুনি ”

” জি স্যার।আমি এক্ষুনি দেওয়ার ব্যাবস্থা করছি ”

” আর এখানে ডিটটিরত নার্সকে ডাকুন।ওনার কাছে কিছু জানার আছে”

নার্সকে ডাকা হলো।নার্স এসে গুটিসুটি হয়ে দরজার কাছে দারিয়ে আছ।তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে অহনাকে দেখে খুব ভয় পেয়েছে।সম্ভবত আজকেই নার্স থেকে তিনি রিজাইন নেবেন।ডাঃক্লার্ক ডাঃ মনসুর কে যা যা বলছেন ডাঃ মনসুর সেসব নার্সকে জিগ্যেস করছেন

” আপনি প্রথম থেকেই এনার দেখা শোনা করছেন? ”

নার্স ” না স্যার,আমার ডিউটি আজ সকাল থেকে ছিলো ”

” কাল কে ডিউটিতে ছিলো? ”

” জানিনা স্যার ”

” আপনি সকালে যখন ডিউটিতে আসেন তখন কি রোগী স্বাভাবিক ছিলো? মানে রোগীর কি হাত কাটা ছিলো? ”

” না স্যার।তার হাত কাটা ছিলো না।সারাদিন ভালোই ছিলো।কিছুক্ষণ আগে হঠাৎ রক্ত পড়া শুরু হলো ”

” একটু খুলে বলুন বিষয়টা ”

” স্যার আমার ঘুম পাচ্ছিলো হঠাৎ। ওয়াসরুমে গেলাম চোখে জল দিতে।চোখে জল দিয়ে এখানে এসেই দেখি রোগীর হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে।তখনি আমি ছুটে গেলাম ডাঃ ক্লার্কের কাছে।”

” হঠাৎ করেই এমনটা হলো? আচ্ছা যখন ওয়াসরুমে গেলেন তখন কি রুমে কেউ এসেছিলো? ”

” না স্যার,আমি দরজা ভেতর দিয়ে লক করে রেখেছিলাম ”

” আচ্ছা আপনি এখন যান ”

” স্যার আমি আরেকটা অদ্ভুত জিনিস দেখছিলাম ”

” কি দেখেছেন? ”

” দেখলাম রোগী ঘাড় নড়াচড়া করছে ”

” উনি এখনে কোমায় আছেন।কিভাবে ঘাড় নড়াচড়া করবেন উনি? ”

” স্যার আমি নিজেই দেখেছি,”

” আপনি এখন যান।সময় হলে আপনাকে ডাকা হবে।”

ডাঃ ক্লার্ক গভীর মনোযোগ দিয়ে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখছেন।ভিডিওতে এক পর্যায়ে তিনি প্রচুর ঘাবড়ে গেলেন।এসির মধ্যেও তার শরীরে ঘাম জমতে শুরু করেছে।তিনি টিস্যু দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে লাগলেন।

চলবে?

#Love_with_vampire [১৭]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

ডাঃ ক্লার্ক গভীর মনযোগ দিয়ে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখছেন।ভিডিওতে এক পর্যায়ে তিনি প্রচুর ঘাবড়ে গেলেন।এসির মধ্যেও তার শরীরে ঘাম জমতে শুরু করেছে।তিনি টিস্যু দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে লাগলেন।

এসির মধ্যেও ঘামতে দেখে ডাঃমনসুর কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন।ডাঃক্লার্কের মতো একজন নির্ভয়,সাহসী ডাক্তার হয়েও ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে, নিশ্চই এখানে কোনো রহস্য আছে।ডাঃ মনসুর নিচু স্বরে বললেন

” স্যার আপনি ঠিক আছেন তো? ”

ডাঃ ক্লার্ক আড় চোখে মনসুরের দিকে তাকালেন।কিছু না বলে আবারো ভিডিও ফুটেজ দেখতে লাগলেন।তাকে আগের থেকে এখন আরো চিন্তিত লাগছে।বেশ কিছুক্ষণ পর তিনি মনিটরের ওপর থেকে চোখ সরালেন।চশমাটা খুলে টেবিলে রাখতে রাখতে বললেন

” ডাঃমনসুর ”

” জি স্যার ”

” আপনি প্যারানরমাল কোনো কিছুতে বিশ্বাস করেন? ”

” না স্যার,এসব আবার হয় নাকি,আমি স্যার অনেক সাহসী, লাশ কাটা ঘরে থাকতে বললে আমি থাকতে পারবো স্যার, কোনো সমস্যা হবে না”

” থামুন,এতো কথা তো জানতে চাইনি ”

” সরি স্যার ”

” মিস অহনার বিষয়টার ব্যাখ্যা আছে আপনার কাছে? ”

মনসুর শুকনো ঢোক গিললো।লজ্জাজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।উত্তরে কিছু বললো না। ডাঃ ক্লার্ক চশমাটা টেবিল থেকে নিয়ে চোখে দিয়ে বললেন

” চা’য়ের ব্যাবস্থা করতে পারবেন? গত কয়েক মাস থেকে চায়ের ওপর আসক্তি বেড়েছে।বাড়িতে অবসর থাকি,টুকটাক বই পড়ি,বইয়ের সাথে চায়ের দারুণ কম্বিনেশন ”

কথাগুলি বলে ডাঃক্লার্ক গম্ভীর হয়ে গেলেন।প্রয়োজনের বেশি তিনি কথা বলেন না।এখন কেন এতো অপ্রয়োজনীয় কথা বলছেন?মনসুর নামের লোকটির বেশি কথা বলার বিষয়টা কি তাকে প্রভাবিত করছে? মানুষের স্বভাব হলো অন্যর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া।সেটা হোক ভালো,কিংবা খারাপ।

” এক্ষুনি করছি স্যার।শুধু দুইটা মিনিট সময় দেন।গাঢ় লিকারের চায়ের ব্যাবস্থা করছি স্যার।তবে স্যার বাংলাদেশে চা বিপুল পরিমাণ উৎপন্ন হলেও আমরা আসল চা টা পাই না।আসল চা রপ্তানি হয় বিদেশে। আমরা আট নম্বর কোয়ালিটির চা টা পাই।এই চায়ের স্বাদ আমেরিকার চায়ের মতো হবে না ”

” আপনি অপ্রয়োজনীয় অনেক কথা বলেন।এখন যান এখান থেকে আর মিস অহনাকে যে নার্স দেখাশোনা করতো তাকে আমার এখানে পাঠিয়ে দিন,”

” জি স্যার ”

মনসুর চলে গেলো।তার অপ্রয়োজনীয় কথায় ডাঃক্লার্কের এখন হালকা মাথা ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। এই লোককে তিনি এখন তেমন পছন্দ করছেন না।চশমাটা খুলে টেবিলে রাখতেই নার্স দরজায় কড়া নাড়লো।ডাঃক্লার্ক আসতে বললেন।তিনি ভেতরে এসে ভয় ভয় নিয়ে দারিয়ে আছে।

” চেয়ারে বসুন ”

” ধন্যবাদ স্যার ”

তখনি হসপিটালের একজন টি-বয় এসে চা দিয়ে গেলো।দু’কাপ চা।ডাঃক্লার্ক একটি কাপ হাতে নিয়ে বললেন

” আপনি হয়তো কোনো কারনে কোনো বিষয় লুকাচ্ছেন।কেনো লুকাচ্ছেন সেটা আমি জানিনা।তবে জেনে যাবো।ভালো হয় যদি আপনি সত্যিটা আমায় বলে সাহায্য করেন ”

” স্যার আমি তো সব সত্যিই বলেছি ”

” সত্যি বলেছেন,তবে অনেকটাই লুকিয়েছেন। কি লুকাননি? ”

নার্সকে দেখে মনে হলো সে ঘাবড়ে গেছে।ডাঃক্লার্ক তার সামনের জলের গ্লাসটা ওনারদিকে এগিয়ে দিলেন।নার্স এক নিশ্বাসে সব জল খেয়ে শান্ত ভঙ্গিতে বললেন

” স্যার আমি কিছু লুকাইনি ”

” আচ্ছা মানলাম আপনি কিছি লুকাননি।মিস অহনার হাতে যখন রক্ত দেখলেন তখন ছুটে এলেন, অথচ মিস অহনার কপাল বেয়ে যখন রক্ত পড়ছিলো তখন কেনো এলেন না? ”

” স্যার আমি সবটা খুলে বলি ”

” হ্যা বলুন ”

” আমি যখন সন্ধায় ডিউটিতে আসি তখন আমার হালকা খিদে পেয়েছিলো।তো আমি বাইরে গেলাম হালকা নাস্তা করার জন্য। আর এসেই দেখি…. ”

” থাকলেন কেন? বলুন? ”

” এসেই দেখি রোগীর কপাল দিয়ে রক্ত পড়ছে।আমি দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাই,এমনকি ভয়ে আমি জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে উঠি।আমার চিৎকারে কয়েকজন স্টাফ ছুটে এলো।আমি চোখ বন্ধ করে দরজার বাহিরে হাটু মুড়ে বসে ছিলাম।ওনারা এসে কি হয়েছে জানতে চাইলে আমি হাত উঁচিয়ে দেখিয়ে দিলাম রোগীর দিকে।তখনও আমি চোখ বন্ধ করে আছি ভয়ে।তারা ভেতরে দেখে আমায় বললো ভেতরে তো সব ঠিক আছে।আমি কি দেখে ভয় পেয়েছি জানতে চাইলে আমি বললাম রোগীর কপাল বেয়ে রক্ত পড়ছে। তারা সবাই বললেন আমি নাকি ভুল দেখেছি। আমি অবাক হয়ে গিয়ে দেখি সত্যিই রোগীর কপালে রক্ত নেই।”

” তারপর? ”

” তারপর সবাই চলে গেলো।আমি বিষয়টা দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম। এতো বড় ভুল আমি দেখলাম কি করে ভেবে নিজের কাছে নিজেই লজ্জা হতে লাগলো।এরপর ওয়াসরুমে গেলাম ফ্রেস হতে।কাল রাতে আমার ঘুম তেমন ভালো হয়নি। ভুম ও পাচ্ছিলো।তাই ফ্রেশ হতে গেলাম।ওয়াসরুমে থেকে বেড় হয়েই দেখলাম রোগীর হাত থেকে রক্ত পড়ছে।তারপর তো আপনি জানেনই ”

” হুম।আচ্ছা কপালে যখন রক্ত পড়ছিলো তখন কি কপালে কোনো আঘাতের চিন্হ ছিলো?ধরুন কেটে যাওয়া বা এমন কিছু? ”

” না স্যার,তবে কপালের আশেপাশে কিছু যায়গার চামড়া ছিলে যাওয়া ছিলো।আমার তেমন মনে পড়ছে না ”

” আচ্ছা ঠিক আছে।আপনি এখন যেতে পারেন।”

নার্সটি চলে গেলো।সঙ্গে সঙ্গে চলে আসলেন ডাঃমনসুর।তিনি এসেই বলা শুরু করলেন ” স্যার চা’টা কেমন হয়েছে? স্পেশাল ভাবে তৈরি করা চা স্যার “।ক্লার্ক গম্ভীর স্বরে বললেন,চা ভালো হয়েছে। অথচ এখনো তিনি চা মুখে দেননি।এবার কাপে চুমুক দিলেন।চা যথেষ্ট সুন্দর হয়েছে।ডাঃ মনসুর বললেন

” স্যার,কিছু ভেবে পেলেন? ”

” এখনো তেমন কিছু বুঝতে পারছি না।এমন জটিল রহস্য এর আগে আমি কখনো পাইনি। এখানে আসুন।ভিডিও ফুটেজটা দেখুন। ”

ডাঃমনসুর উৎসুক হয়ে কাছে গেলেন।ভিডিও ফুটেজটা দেখে রীতিমতো তার মুখ হা হয়ে গেছে।তিনি ধপ করে চেয়ারে বসলেন।ডাঃক্লার্ক বললেন

” ডাঃ মনসুর, আপনি ঠিক আছেন তো? ”

” জ..জ..জি স্যার ”

” ভিডিও দেখে কি বুঝলেন? ”

” স্যার এটা কিভাবে সম্ভব স্যার? আ…বআমি তে আমার কেরিয়ারে এমন দৃশ্যর মুখোমুখি হইনি ”

” হুম, কিছু একটা রহস্য আছে।মিস অহনার হঠাৎ কপাল ফেটে গলগল করে রক্ত পড়ছে,আবার কিছুক্ষণ পর সেটা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেলো।তারপর হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে ”

মনসুর কিছু বললো না।ক্লার্ক চায়ে আরেকটা চুমুক দিয়ে বললেন,

” ব্লাড টেস্ট করতে বলেছিলাম, করেছেন? ”

” জি স্যার,রিপোর্ট আসলো বলে ”

বলতে বলতে একজন এসে রিপোর্টটা টেবিলে রাখলো।ক্লার্ক চশমাটা চোখে দিয়ে রিপোর্টে চোখ বুলালেন।রিপোর্ট দেখে তাকে বেশ চিন্তিত মনে হলো।তিনি রিপোর্টটা মনসুরের হাতে দিলেন।মনসুর রিপোর্টটা দেখতেই অবাক হয়ে চেয়ে রইলো।ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে ক্লার্ককে জিগ্যেস করলেন।

“স্যার,কিভাবে সম্ভব এটা? এটাতো অলৌকিক ব্যাপার।রীতিমতো ভূতূড়ে কান্ড।মিস অহনার রক্তের কোনো গ্রুপ ই নেই? এটা কিভাবে সম্ভব স্যার ”

” আপনি কি ঠিক মতো পরিক্ষা করেছেন? ”

” জি স্যার,আমি নিজ হাতে পরিক্ষা করিয়েছি ”

” একটা রোগীর রক্ত পরিক্ষা করা হলো,আর সেই রক্ত কোনো গ্রুপের আওতায় পড়লো না।কিভাবে? ”

” স্যার, আমি এই কেইচ থেকে সরে যেতে চাই,আমি এই কেইচে থাকতে চাই না স্যার ”

” ডাঃ মনসুর আপনি ভুলে যাচ্ছেন আপনি একজন ডাক্তার। আর ডাক্তার হয়ে আপনি প্যারানরমাল বিষয়ে ভয় পেয়ে সরে যাবেন এটা আমি মেনে নিবো না।”

” এখন তাহলে কি করবেন স্যার? ”

” মিস অহনাকে এক্স-রে করাতে হবে।ওনার বিষয়ে সকল খুটিনাটি বিষয় আমি জানতে চাই”

কথামতো কিছুক্ষণ পর অহনাকে এক্স-রে করাতে নিয়ে যাওয়া হলো।এক্স-রে রশ্মি অহনার শরীরে পড়তেই ডাঃক্লার্ক একটা বিষয় লক্ষ্য করলো,অহনার শরীরে রশ্মি প্রবেশ করছে না,এমন দেখাচ্ছে যে রশ্মির নিচে কোনো মানুষই নেই.!

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে