♥Love At 1st Sight♥
~~~Season 3~~~
Part – 42
writer-Jubaida Sobti♥
স্নেহা : [ হেসে মাথা নাড়িয়ে ] রিয়েলি! আই কান্ট লিভ উইদাউট ইউ রাহুল! ব্যাস যেখানেই নিয়ে যাবেন যান আমার এসব আর সজ্য হচ্ছে না!
– আ..আই লাভ ইউ রাহুল
রাহুল : [ মুচকি হেসে স্নেহার কপালে চুমু খেয়ে ] আই লাভ ইউ টু! [ চোখ বন্ধ করে নিলো স্নেহা গড়িয়ে পানি পড়ছে গাল বেয়ে ]
রাহুল : স্নেহা! বিয়ে করবে আমায়?..[ স্নেহা চোখ বন্ধ অবস্থায় হেসে মাথা নাড়ালো, রাহুলের খুশির উত্তেজনা শেষ হচ্ছে না স্নেহার মাথা নাড়ানো দেখে, সে হাসবে নাকি কাদবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না, তার এই ইন্নোসেন্ট বার্ড সব কিছু ছেড়ে তার হাত ধরে যেতে রাজি হয়ে গেছে, এর চেয়ে খুশির মুহুর্ত জীবনে আর কি হতে পারে, সাত-পাচ না ভেবে মাথা আগলে নিয়ে বুকে টেনে নিলো স্নেহাকে, স্নেহা ও রাহুলের বুকে মাথা লুকিয়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে ]
রাহুল : ইউ নো স্নেহা…মাঝে মাঝে এমন মনে হয়, আমার জন্মটাই হয়েছে তোমাকে ভালোবাসার জন্য! [ মুচকি হেসে ] আর তোমার জন্ম হয়েছে একদিন পুরোপুরি আমার হয়ে যাওয়ার জন্য! [ স্নেহা ও মুচকি হেসে মাথা তুলে তাকালো ]
রাহুল : বুকের বা পাশের স্পন্দন এর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর স্পন্দনটাই তুমি… ইচ্ছে করে বার বার স্পন্দন করুক…
স্নেহা : [ রাহুলের গালটেনে দিয়ে ] বারবার করলে তো হার্ট এট্যাক চলে আসবে,
রাহুল : তাহলে ঐ হার্ট এট্যাকটাই বারবার করতে চাই! [ With tedi smile ]
[ স্নেহা ব্লাশিং হয়ে মুচকি হেসে আবারো শক্ত করে চেপে জড়িয়ে ধরলো ]
রাহুল : ডো ইউ নো স্নেহা! হাও ডেঞ্জারাস ইওর স্মাইল?…
স্নেহা : [ হেসে ] ব্যাস রাহুল!
রাহুল : সিরিয়াসলি স্নেহা!
স্নেহা : যদি এমন হয়, তাহলে ঐ ডেঞ্জারাস স্মাইল এর পাসওয়ার্ডটাই আপনি! [ হেসে উঠলো রাহুল ও ]
রাহুল : সো্ স্নেহা! তাহলে তুমি এক্ষুণি আমার সাথে চলছো তো?
স্নেহা : [ অবাক হয়ে ] এক্ষুনি?…কোথায় যাবো?..কোক..কোথায় থাকবো?
রাহুল : আমার বাসায়?..
স্নেহা : [ মাথা তুলে ] উইদাউট ম্যারেজ?..
রাহুল : নো! আজই বানাবো তোমাকে মিসেস রাহুল!
– কি? হবে তো মিসেস্ রাহুল?
[ লজ্জা পেয়ে জড়িয়ে ধরলো স্নেহা, রাহুল ও মুচকি হেসে স্নেহার মাথায় চুমু খেয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখলো, স্নেহা ও রাহুলের বুকের মাঝে চোখ বটে মুখ লুকিয়ে চুপটি করে আছে..টেনে নেওয়া প্রতিটা শাসই রাহুলের বুকের স্মেল এর সাথে গ্রহণ করছে…যেনো ইচ্ছে হচ্ছে এক শ্বাসেই সব স্মেল আটকে নিবে, টেনে নেওয়া শ্বাসগুলো আর ছুড়ে ফেলতে মন চাইছে না স্নেহার, চোখ বটে দু-জনেই জড়িয়ে ধরে আছে ]
এভাবেই কিছু সময় পেড়িয়ে যাওয়ার পর, হঠাৎ টুকটাক আওয়াজ ভেসে এলো কানে…
চোখ খুললো রাহুল,স্নেহার তো খবরই নেই…হারিয়ে গেছে রাহুলের বুকের মাঝে..
রাহুল : স্নেহা! [ বলেই ছুটিয়ে আনতে চাইলো কিন্তু স্নেহা তাও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে ]
হঠাৎ,
জারিফা : [ চেচিয়ে ] ওহ গড! [ চোখে হাত দিয়ে ] সরি সরি..আমি কিছু দেখিনি! [ মার্জান আর শায়লা ও এগিয়ে এলো, জারিফার কান্ডে হেসে উঠলো রাহুল, তাড়াহুড়ো করে ছুটে দাড়ালো স্নেহা! ]
মার্জান : স্নেহা তুই?..এইখানে?..তোর না মামার বাসায় যাওয়ার কথা ছিলো… আমরা তো আরো তুই বাসায় নেই ভেবে চাবি দিয়ে দরজা খুলে এলাম!
স্নেহা : হ্যা! যাওয়ার কথা ছিলো..কিক..কিন্তু যাওয়া হয়নি!
জারিফা : [ একটু কেশে ] হুমমম! বুঝতে পেরেছি কেনো যাওয়া হয়নি [ চোখ মেড়ে রাহুলের দিক ইশারা করে ] হুম হুম..রাইট?..
স্নেহা : নট রাইট!
রাহুল : [ হেসে স্নেহাকে কাছে টেনে নিয়ে ] সো্ গাইস্ একটা গুড নিউজ! [ সবাই কৌতুহলি ভাবে তাকালো রাহুলের দিক ]
– আমরা বিয়ে করছি! [ জারিফা, মার্জান, শায়লা তিনজনই অবাক হয়ে থমকে, হা করে চেয়ে আছে ]
রাহুল : [ হাত নাড়িয়ে ] হ্যালো, গাইস্! আর ইউ দেয়ার?..
জারিফা : [ চেচিয়ে ] কিহহহহহ?…বিয়ে?…[ রাহুল চমকে উঠলো জারিফার চেচানিতে ]
মার্জান : [ জারিফাকে ধাক্ষা দিয়ে ] হায় আল্লাহ, কানের পর্দা ফাটিয়ে দিবি নাকি?..
রাহুল : [ মুখ গোমড়া করে ] হোয়াট গাইস্ তোমরাও খুশি না আমাদের বিয়েতে?..
জারিফা : নো নো..জিজু তেমন কিছুই না আমরা তো খুশি অনেক খুশি..ইনফ্যাক্ট আমরা এতো খুশি, যে খুশি হজম করাই যাবে না… [ কাদো ভাবে ] কিন্তু জিজু আমাদের শপিংই তো করা হয়নি! [ মার্জানের দিক তাকিয়ে ] আরে ডান্স?..ডান্সই তো রিহর্সল করিনি.. [ রাহুল মুখ লুকিয়ে মাথায় হাত দিয়ে হেসে উঠে, স্নেহা ও মুচকি হাসলো ]
শায়লা : [ জারিফাকে চিমটিয়ে ] আরে ওসবের চিন্তা বাদ দে..বিয়ে হচ্ছে এটাই বেশ.. [ রাহুলের দিক তাকিয়ে ] আপনারা এক কাজ করেন তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরেনেন! বাকিসব তারপর নাহয় দেখা যাবে!
মার্জান : ক্যারেক্ট আগে বিয়েটা সেরেনিন..বাকি সব পরে দেখা যাবে…
জারিফা : [ চেচিয়ে ] গাইস্! ইউ মিন..রাহুল এবং স্নেহা! পালিয়ে বিয়ে করছে?..
রাহুল : নো নো আমি পালিয়ে না, স্নেহা পালিয়ে করছে [ স্নেহা আড়চোখে তাকালো রাহুলের দিক, বাকিরা হেসে উঠে ]
জারিফা : ওয়াও আই এম সো্ এক্সাইটেড এই প্রথম পালিয়ে বিয়ে দেখবো.. ইয়েস্!
মার্জান : [ দৌড়ে এসে স্নেহাকে জড়িয়ে ] স্নেহা মাই ডিয়ার! কনগ্রেচুলেশন ইন এডভান্স!
রাহুল : আরে বিয়ে আমিও তো করবো, আর কনগ্রেচুলেশন শুধু ও কে?..
মার্জান : [ হেসে ] ওকে মাই জিজাজি! আপনাকে ও কনগ্রেচুলেশন!
রাহুল : দিস্ ইজ নট ফেয়ার! ওকে জড়িয়ে ধরে আর আমাকে এমনিতে [ সবাই আবারো হেসে উঠলো ]
মার্জান : হ্যা ওটাও মিলবে! বাট আগে বিয়েটা করেনিন তারপর!
জারিফা : বাই দ্যা ওয়ে! জিজু এতোক্ষণ তো তাই করছিলেন! পাশেরটাকে যতো ইচ্ছে ততো জড়িয়ে রাখেন আমরা কবে নিষেধ করলাম? [ চোখ টিপ মেরে ]
রাহুল তেডি স্মাইল দিয়ে তাকালো স্নেহার দিক স্নেহা ও হেসে একটু তাকিয়ে লজ্জায় আবার মাথা নিচু করে ফেললো,
মার্জান : আচ্ছা আপনারা বসেন একসাথে, আমরা ফ্রেশ হয়ে আসি [ সবাই হেসে হুরহুর করে পাশের রুমে চলে গেলো, স্নেহা আর রাহুল ঐ রুমেই দাঁড়িয়ে আছে ]
রাহুল : [ স্নেহার কোমোড়ে হাত রেখে কাছে টেনে নিয়ে ] সো্ স্নেহা! আপনার পার্মিশন পেলে এবার আমি যেতে পারি! আর…সন্ধ্যায় রেডি থাকবেন মিসেস্ রাহুল হওয়ার জন্য!
স্নেহা : কেমন যেনো সব সপ্নই মনে হচ্ছে!
রাহুল : সপ্ন না স্নেহা! সপ্নটা সত্যিতে পূরণ হতে যাচ্ছে! [ মাথা নাড়ালো স্নেহা ]
– [ স্নেহার ঘাড়ের চুল গুলো স্লাইড করে সরিয়ে দিয়ে ] যেতে তো ইচ্ছে হচ্ছে না তোমাকে ছেড়ে… [ বুকেটেনে শক্ত করে জড়িয়ে ] ইচ্ছে হচ্ছে এইভাবে জড়িয়ে ধরে রাখি, [ হেসে উঠলো স্নেহা ]
রাহুল : [ দু-হাত দিয়ে স্নেহার মুখ তুলে ধরে ] কিন্তু যেতে হচ্ছে, [ তেডি স্মাইল দিয়ে ] সব ঠিকঠাক করা ও তো বাকি! [ কিছু বলছে না স্নেহা কেমন যেনো লজ্জা লেগেই চলছে হঠাৎ ]
রাহুল : তাহলে আসি এবার আমি!.. আর হ্যা! কোথাও একা বেরুবা না..যেতে হলে আমাকে ফোন দিবা! এমনিতেও তোমার আজ আর কোথাও বেরুনোর দরকার নেই!
– এন্ড তোমার মামার বাড়িতে তো মোটেও দরকার নেই!
– জাষ্ট ওয়েট ফর ইভিনিং! [ চোখ টিপ মেড়ে ]
স্নেহা : [ ব্লাশিং হয়ে হেসে ] হুমম!
রাহুল চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো হঠাৎ তখনি আবার থেমে গিয়ে স্নেহার দিক তাকালো, স্নেহা ও অবাক হয়ে তাকাতে তাকাতে ততোক্ষণে রাহুল আড়চোখে আশেপাশে তাকিয়ে, একহাত স্নেহার কোমোড়ে রেখে কাছে টেনে আরেকহাত স্নেহার থুথনিতে রেখে মাথা তুলে ধরলো, আলতো করেই ঠোটে চুমু খেলো স্নেহার, চোখ কুচকে জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলতে লাগলো স্নেহা! রাহুল তেডি স্মাইল দিয়ে তাকিয়ে রইলো স্নেহার ব্লাশিং হয়ে যাওয়া চেহেরার দিক,
রাহুল : বাহহ! স্নেহা! সেকেন্ডেই লাল হয়ে যাও! [ লজ্জায় চোখ নামিয়ে রাখলো স্নেহা ]
কপাল টেনে আরেকটি চুমু খেয়ে হেসে চেয়ারের উপর থেকে জ্যাকেটটা এগিয়ে নিয়ে পড়তে পড়তে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে রাহুল,
থমকে দাঁড়িয়ে আছে স্নেহা! মনে মনে ভাবছে, রাহুলটাও মাঝেমাঝে এমনভাবে আদর করে যায় না, ইচ্ছে করে ঐ আদরে ডুবে মরেই যাবে!
পাশের রুম থেকে রাহুল আর তার ফ্রেন্ডসদের কথা বলার আওয়াজ আসছে.. কিন্তু না স্নেহা যাবে না লজ্জা লাগছে, সাথে ব্লাশিং ও হচ্ছে, হ্যা! অবাকটাই বেশি লাগছে, তবে অনেক খুশি ও ফিল হচ্ছে, কারণ আজ তো সে চিরজীবনের জন্যই রাহুলের হয়ে যাবে, আজ তার বিয়ে,
– [ চমকে গিয়ে ] হোয়াট আজ আমার বিয়ে? [ ধীরেধীরে টেনশন চেহেরা নিয়ে খাটে বসে পড়লো ]
এগিয়ে এলো জারিফা, হেসে স্নেহার দিক তাকাতেই কনফিউজড হয়ে গেলো, ধীরেধীরে কাছে এসে পাশে বসলো, স্নেহা ও অবাক হয়ে আড়চোখে তাকালো,
জারিফা : স্নেহা! জানেমান! ইউ ওকে! [ স্নেহা মাথা নাড়ালো, মার্জান আর শায়লা ও এগিয়ে এলো, শায়লা আপেল কেটে কেটে প্লেটে রাখছে ]
জারিফা : স্নেহা তুই আর রাহুল আজ বিয়ে করবি! [ একটু কেশে ] আ..আই মিন..[ ফিসফিসিয়ে ] তোদের বাসর রাত আজ রাতেই হবে?..
স্নেহা : ছিঃ জারিফা! তোরা কোন কথা থেকে কোথায় চলে যাস বলতো?..
মার্জান : [ আপেল খেতে খেতে ] বাট স্নেহা! শি ইজ রাইট! তুই রেডি থাকিস!
জারিফা : [ চোখ মেরে ] স্নেহা! নেক্সট মানথসে্ই আমাদের গুড নিউজ শুনিয়ে দিশ কেমন!
মার্জান : [ স্নেহার পাশে এসে বসে ধীরেধীরে স্নেহার মুখ থেকে গলা পর্যন্ত স্লাইড করে ] ভাবছি স্নেহা! রাহুল কোনদিক থেকে শুরু করবে,
জারিফা : [ স্নেহার কোমোড়ে স্লাইড করে ] আই থিংক এইখান থেকে, না নাহ…[ স্নেহার ঠোটে স্লাইড করে ] আই থিংক এইখান থেকেই, [ শায়লা মিটিমিটি হাসতে লাগলো তাদের কান্ডে ]
স্নেহা : [ হাত সরিয়ে দিয়ে ] কিসব আজেবাজে ছি! [ বলেই উঠে চলে যাচ্ছিলো, মার্জান হেসে পেছন থেকে টেনে আটকিয়ে আবার খাটে বসিয়ে দিলো ]
মার্জান : ওহো স্নেহা! এতো লজ্জা পেলে চলবে, [ হেসে ] আচ্ছা বল তুই তোর মামার বাড়িতে গেলিনা কেনো?..
[ স্নেহা দীর্ঘ একটি শ্বাস ফেলে সকাল থেকে হয়ে যাওয়া সব ঘটনায় খুলে বললো তাদের ]
মার্জান : [ রাগান্বিত ভাবে ] হমুমানের বাচ্চা, গন্ডারের বাচ্চা, বানরের বাচ্চা, শকুনের বাচ্চা সব জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট এই সামির! কতোবড় সাহস ওর!
জারিফা : কতোকিছুই না হয়ে গেলো এর মাঝে! আমার তো শুনেই বুকটা এখনো কাপছে!
শায়লা : কিন্তু স্নেহা! তুই একটা কাজ ভালো করেছিস, রাহুলের বাবার কাছে গিয়ে, রাহুল মুখে শিখার না করলেও অন্তত মনে মনে তো বুঝতে পেরেছে ওর বাবা ওর জন্য কেয়ার করে!
মার্জান : হ্যা! যদি রাহুলের বাবা-মা ও এক হয়ে যেতো তাহলে আর তোর বাবা ও রাহুলের প্যারেন্টসকে নিয়ে কিছুই বলতে পারতো না!
[ চোখে পানি টলমল করছে স্নেহার ]
জারিফা : আরে স্নেহা! কাদছিস কেনো?..
স্নেহা : আমরা চাইলেই ওর বাবা-মা কে নিয়ে কতো কিছুই বলছি! একমাত্র ওই জানে ওর মাঝে ওর প্যারেন্টসদের নিয়ে কি চলছে!
– এখন বুঝছি প্যারেন্টস সাথে না থাকলে কতো কষ্ট হয়! আজ তাদের না জানিয়েই রাহুলকে বিয়ে করবো এটা কখনোই ভাবিনি! কিন্তু আমি বাধ্য! রাহুলেরওতো কোনো দোষ নেই! ওর শুধু এটাই দোষ ও আমাকে ভালোবেসেছে!
মার্জান : [ স্নেহার কাধে মাথা রেখে ] ডোন্ট ক্রাই ডিয়ার, সব ঠিক হয়ে যাবে!
শায়লা : [ স্নেহার চোখ মুছে দিয়ে ] আরে স্নেহা! আজ খুশির দিন এভাবে কাদছিস কেনো, আজ তো তুই যেটা চাইছিস সেটাই পূরণ হতে যাচ্ছে!
স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] বাট শায়লা! একবার বিয়ে হয়ে গেলে এরপর বাবা আমার সামনে আসা তো দূরের কথা চেহেরাও দেখবে না আমার!
– ওদের একবার দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে! মা, রাশু ওদের…[ বলেই কাদতে লাগলো ]
মার্জান : [ স্নেহার চোখ মুছে দিয়ে ] আরে তো কান্নার কি আছে, এমনিতেও ঠিক বলছিস এরপর আর ওরা দেখা করেকি না করে কে জানে! তাই আজ গিয়েই দেখে আয়!
স্নেহা : কিক..কিন্তু! রাহুল করতে দেবে না! ও নিষেধ করে গিয়েছে কোথাও একা না বেরুতে,আর মামার বাড়িতে তো মোটেও না,
জারিফা : এক সেকেন্ড! তোর একা বেরুতে হবে না! আমরা কি মরে গিয়েছি নাকি?..আমি যাবো তোর সাথে ডোন্ট ওয়ারি! আ..আই মিন এমনিতেও আমার বের হওয়ার ছিলো, আমার ব্লাড টেষ্ট ডেট আজকে!
মার্জান : একা যাচ্ছিস নাকি তোর ওনিও!
শায়লা : [ হেসে ] হুম হুম ওনি ও বুঝি?..
জারিফা : [ মাথা নাড়িয়ে ] ইয়েস্! ওনিও!
মার্জান : তাহলে তো প্রবলেম সলভ! তুই ওর সাথেই বেড়িয়ে যা!
স্নেহা : কিন্তু…
মার্জান : আরে এতো কিন্তু কিন্তু করছিস কেনো?.. তুই বল তোর ইচ্ছা আছে তো?.. [ স্নেহা মাথা নাড়ালো ] একবার ওখানে গিয়ে পৌছা, তারপর আসার সময় রাহুলকে বুঝিয়ে বলে দিবি যেনো ও তুকে ঐখান থেকেই পিক করে নেই!
শায়লা : হ্যা! আসার সময় রাহুলকে ফোন করে বলেদিস তারপর ও আর নিষেধ করতে পারবে না, এমনিতেও আজ ও তোর সাথে রাগ দেখাবে না কেনো বলতো?..
জারিফা : [ কিটকিটিয়ে হেসে ] কারণ আজ রাগলে রাহুলের কপালে শনি আছে! বিয়ে করবে কাকে?.. [ সবাই খিলখিল করে হেসে উঠে, স্নেহা ও আর হাসি থামিয়ে রাখতে পারলো না, হেসে উঠলো ]
_______________________________________
দুপুরের লাঞ্চ করে, কাপড় চোপড় পড়ে তৈরী হয়ে বেরুতে বেরুতেই ৪টা বেজে গেলো, জারিফা স্নেহাকে তার মামার বাসায় নামিয়ে দিয়ে সে চলে যায়!
স্নেহা বেল দিতেই তার মা এসে দরজা খুললো, জড়িয়ে ধরেই কেদে উঠলো দু-জন!
মা : আমি জানতাম তুই আসবি! আয় ভেতরে আয়!
[ স্নেহা ভেতরে ঢুকতেই দেখে তার বাবা বসে আছে ড্রইং রুমে, রাশু পাশে পড়ছিলো, স্নেহাকে দেখে খুশি হয়ে এগিয়ে এলো, স্নেহা ও হেসে গাল টেনে দিলো রাশুর, ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো বাবার কাছে ]
স্নেহা : বাবা!
বাবা : সকালে আসতে বলেছিলাম!
স্নেহা : [ কিছুক্ষণ চুপ থেকে ] স..সকালেই আসতাম বাবা, তোমাদের কিছু বলার ছিলো, কিন্তু কিছু ঘটনা ঘটে যাওয়ার কারণে আর আসা হয়নি! তবে এখন এসেছি সেগুলো বলতে, [ স্নেহার বাবা স্নেহার দিকই ফিরে তাকালো ]
– আ..আমি বলেছিলাম…রার..রাহুলকে ভুলে যাবো, কিক..কিন্তু আমি করিনি..আমি গিয়েছিলাম বাবা রাহুলের কাছে! আমি পারিনি ভুলতে রাহুলকে [ কাদো কন্ঠে ] আমি পারবো না, হহ..হয়তো কখনোই না,
– বাবা রাহুলকে ছেড়ে থাকা ছাড়া তুমি আর যাই বলবে আমি তাই করতে রাজি!
– আ..আমি জানি আমি তোমাদের অবাধ্য হচ্ছি, কিন্তু বাবা.. রাহুলকে ছেড়ে থাকাও সম্ভব নয় আমার পক্ষে,
বাবা : [ রাগান্বিত ভাবে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ] তাহলে কোন মুখ নিয়ে এসেছিস আমার সামনে নিজের চেহেরা দেখাতে? [ আংগুল দিয়ে ইশারা করে ] দরজা ঐদিকে, বেরুতে পারিস, এইখানে আসার আর দরকার নেই! আমাদের কোনো মেয়েই নেই! [ অবাক হয়ে তাকালো স্নেহা ]
স্নেহার মা : আরে কিসব বলছো?..
স্নেহার বাবা : যা বলছি তাই! ওকে বলো বেড়িয়ে যেতে ওর এই চেহেরা দেখতেই আমার ঘৃণা লাগছে! এতো বছর মেয়েভেবে কিই বা হয়েছে, ধোকাটাই পেয়েছি!
স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] ধোকা তো তোমরাও দিচ্ছিলে বাবা আমায়, না বলে আজই সামিরের সাথে এনগেজমেন্ট ঠিক করে রেখেছো!
স্নেহার বাবা : তোর ভালোর জন্যই করছিলাম! সামিরের চেয়ে অন্য কোনো ছেলে তোর জন্য ভালো হবে বলে আমি মনে করি না,
স্নেহা : বাবা আমি রাহুলকে ভালোবাসি ওর জায়গায় অন্য কাউকে এটা ভাবতেও আমার কষ্ট হয়, আমি জানি তোমরা আমার ভালো চাইছো, কিন্তু…
বাবা : [ চেচিয়ে ] ব্যাস! চিনি না আমরা তোকে আজ থেকে! [ বলেই ভেতরে চলে গেলো, চেয়ে আছে স্নেহা, চোখ থেকে গড়গড় করে পানি ছুটে পড়ছে, মায়ের দিক তাকাতেই মা এগিয়ে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেই, ধীরেধীরে পাশ ফিরে হেটে বেড়িয়ে গেলো স্নেহা ]
স্নেহা : [ কেদে কেদেই শিরি দিয়ে নিচে নামছে আর ভাবছে ] বাবা এভাবে নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারলো? মহান কিছুই তো চাইনি, শুধু রাহুলকে চেয়েছি , সামিরের সাথে এভাবে জোড় করে বিয়ে দেওয়াটা এমনি মনে হচ্ছে বাবা তুমি তোমার জমির টাকা আমাকে দিয়েই শোধ করছো! [ চোখ মুছে ] তবে যাই হোক আমি আর পিছে হাটবো না, এখন থেকে রাহুলই আমার সব! ওকে তো আমার কিছু বলারই প্রয়োজন হয় না, দূর থেকেই আমার মন কি চাই সব বুঝে নেই! ওকে তো যতোই ভালোবাসবো ততটাই কম পড়বে! [ গেইটের ধারে এসে চোখ-মুখ ভালোভাবে মুছে ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে রাহুকে ফোন দিলো ]
রাহুল : [ ফোন রিসিভ করে ] হেইই! তোমার কথায় বলছিলাম এখন দাদীকে! দাদী বলছে তোমাকে এক্ষুনি নিয়ে আসতে, [ হেসে ] কে কি বলবে এতে কিছু যায় আসে না নাকি দাদীর, এখানে এনেই নাকি ধুমধাম করে বিয়ে দিবে, আমিও বললাম স্নেহা এই ঘরে নেক্সট পা রাখবে তো এক্কেবারে মিসেস্ রাহুল হয়েই পা রাখবে, তারপর ধুমধাম বাকিসব তোমাদের যা করার করো, এরআগে স্নেহাকে এক্কেবারের জন্য আমার করা চাই! [ রাহুলের কন্ঠ শুনতেই স্নেহার বুক ফেটে আরো কান্না আসছিলো, কথা বের হচ্ছিলো না মুখ দিয়ে চুপ করেই রাহুলের কথা গুলো শুনে রইলো ]
রাহুল : স্নেহা! ইউ ওকে?..
স্নেহা : [ ফুফিয়ে উঠে ] হুমম! ঠিঠ..ঠিকাছি!
রাহুল : স্নেহা তুমি কাদছো?.. [ মুখ চেপে ধরে রাখলো স্নেহা ]
– স্নেহা! কি হয়েছে?..কিছু তো বলো?..আমি জানি তুমি কাদছো!
স্নেহা : [ হিচকিয়ে কেদে কেদে ] রাহুল! আ..আমি মামার বাসায় এসেছি! ওদের দেখবো বলে, বাব..বাবাকে আরেকবার বলে দেখলাম… [ ফুফিয়ে কেদে ] ওনি বললো ওনার নাকি কোনো মেয়ে নেই! [ বলেই কাদতে লাগলো ]
রাহুল : [ জোড়ে শ্বাস ফেলে ] ও..ওহ..ওকে! প্লিজ ডোন্ট ক্রাই!
– স্নেহা! আমি নিষেধ করেছিলাম কোথাও না বেরুতে! [ কেদেই চলছে স্নেহা ]
– আচ্ছা ওকে ওকে! প্লিজ! কান্না করতে হবে না, এখন কোথায় আছো বলো?
স্নেহা : গেগ..গেইটের দিকই আছি!
রাহুল : ঠিকাছে! ওখানেই থাকো, ওখান থেকে কোথাও যাবা না, আমি আসছি!
স্নেহা : আচ্ছা!
রাহুল : স্নেহা!
স্নেহা : হুম!
রাহুল : ডোন্ট ক্রাই! ওকে?..
স্নেহা : [ মাথা নাড়িয়ে ] হুম! ওকে!
_______________________________________
[ রাহুল ফোন রেখে পকেটে ঢুকিয়ে টেবিল থেকে তাড়াহুড়ো করে গাড়ীর চাবিটা এগিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে ]
দাদী : আরে রাহুল! কই যাচ্ছিস?..সব ঠিকাছে তো?..
রাহুল : [ চেচিয়ে ] হ্যা দাদী! আসছি পরে কথা হবে!
[ বেড়িয়ে গেলো রাহুল গাড়ী নিয়ে, যতো তাড়াতাড়ি পারছে ততো তাড়াতাড়িই ড্রাইভ করছে, আধঘণ্টা পরই গেইটের সামনে এসে পৌছালো, গাড়ী থেকে নেমে চারদিক চোখ বুলালো কিন্তু স্নেহাকে কোথাও দেখা যাচ্ছিলো না, মোবাইল বের করে ফোন দিতেই রাহুল অবাক হলো স্নেহার ফোন সুইচড অফ আসছে, কিন্তু এই সময় হঠাৎ স্নেহা ফোন কেনো সুইচড অফ করলো, গেইটের ভেতর ঢুকে দেখলো ওখানেও নেই, ফোন দিলো আবার মার্জানের কাছে ]
মার্জান : হ্যালো!
রাহুল : স্নেহা! বাসায় আছে?..
মার্জান : [ জিহবায় কামড় মেরে ] আ..এক্সুলি স্নেহা তো বাসায় নেই! ও ওর মামার বাড়ি গিয়েছে! কিন্তু আসার সময় আপনাকে জানাবে বলেছে!
রাহুল : আমি ওর মামার বাসার নিচেই আছি! ও গেইটের দিকই দাঁড়িয়ে আছে বললো, এসে দেখি নেই! ফোন দিচ্ছি সুইচড অফ আসছে!
মার্জান : [ অবাক হয়ে ] আচ্ছা?..আশেপাশে আরেকটু খুজে দেখুন! হয়তো ঐদিকটা কোথাও হবে!
রাহুল : আচ্ছা! আমি দেখছি!
মার্জান : পেলে জানাবেন কিন্তু!
রাহুল : হুম ওকে!
[ বলেই রাহুল ফোন পকেটে ঢুকিয়ে তাড়াহুড়ো করে উপরে উঠলো, বেল বাজাতেই স্নেহার মা এসে দরজা খুললো,
রাহুল জানে না তিনি কে হবে স্নেহার,বা হঠাৎ রাহুলকে দেখে কি ভাববে তারা…একমাত্র এখন রাহুলের মাথায় স্নেহা কোথায় এটাই ঘুরছে, স্নেহার মা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, বেল এর আওয়াজ শুনে স্নেহার বাবা ও এগিয়ে এলো ভেতর থেকে ]
রাহুল : স্নেহা কোথায়?..
স্নেহার মা : স্নেহা?..ও তো বেড়িয়েছে অনেক্ষণ হলো! তুমি কে?..
রাহুল : বেরুবার পরে আর আসেনি?..
স্নেহার মা : নাহ! আ..আসেনি!
রাহুল : তার মানে আপনারাও জানেননা স্নেহা কোথায়?..
স্নেহার মা : ওর ফ্রেন্ডসদের সাথেই তো থাকে হয়তো ওখানেই গিয়েছে!
রাহুল : হয়তো? ওয়াও গ্রেট!
– আই থট শুধু আমার প্যারেন্টসরাই এমন! বাট না আমি ভুল…এখন দেখছি শালার সব প্যারেন্টসরাই এমন!
– আর হ্যা! আমি কে জানতে চেয়েছিলেন তাই না? তো শুনুন আমি সেই যার জন্য স্নেহাকে তার প্যারেন্টস তাদের মেয়ে বলে অস্বীকার করছে!
[ বলেই রাগান্বিতভাবে নিচে নেমে চলে এলো রাহুল,গেইট থেকে বেড়িয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছে বারবার ফোন দিচ্ছে স্নেহাকে কিন্তু সুইচড অফই আসছে! বন্ধ অবস্থায় ফোন ট্রেস করা ও পসিবল হচ্ছে না, মাথায় নানাধরনের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, হঠাৎ চোখ পড়লো অপোজিটের একটি দোকানের উপর, দৌড়ে এগিয়ে গেলো দোকানের দিক! ]
রাহুল : এক্সকিউজ মি ভাইয়া! এইদিকে গেইটের দিক কোনো মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন?..
দোকানদার : কতো মেয়েই তো দাড়াই ভাই! কোন মেয়ের কথা বলবো?..
রাহুল : হাইট আমার কাধ পর্যন্তই হবে, ফর্সা করে, কিছুক্ষণ আগেই ছিলো! ঐদিকে গেইটের দিক, একটু মনে করেন! [ ভাবতে লাগলো দোকানদার ]
রাহুল : হয়তো ফেইসে কান্নারভাব ও ছিলো!
দোকানদার : কান্নার ভাব না কাদতেই দেখছি একটা মেয়েকে! কিন্তু ওনি তো অনেক আগেই চলে গেছে!
রাহুল : চলে গেছে?..
দোকানদার : একটা ছেলে আসছিলো ওনার সাথেই চলে গেছে!
রাহুল : [ অবাক হয়ে ] ছেলের সাথে ?
দোকানদার : হ্যা! একটা ছেলে আসলো গাড়ী নিয়ে, ওনার সাথে কি কি বললো এতো ধ্যান দেইনি! যেতে চাচ্ছিলো না মেয়েটা, হাত ধরে টেনেই নিয়ে গেছে! [ হেসে ] হয়তো বয়ফ্রেন্ডই হবে! রাগ করেছে তাই মানাইতে নিয়ে যাচ্চে!
রাহুল : [ রাগান্বিত ভাবে ] শিট!
– শিট! শিট! শিট! উফফফ [ বলেই রেগে মাথায় হাত দিয়ে চুল টেনে ধরে রাখলো, তাড়াহুড়ো করে দৌড়ে গিয়ে গাড়ীতে উঠলো,
মাথায় ও কিছু আসছিলো না সে কোথায় কোন জায়গায় গিয়ে খুজবে স্নেহাকে? রাগে চোখ-মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে রাহুলের, এই মুহূর্তে প্রত্যেক জায়গায় গিয়ে গিয়ে খোজবে ওই টাইমটাও নেই,
না জানি স্নেহা কোন হালে কি অবস্থায় আছে, ভাবতেই রাগে মাথার রগ সহ ভেসে উঠছে রাহুলের,
চিন্তা করতে লাগলো কি করা যায় কোন জায়গায় গিয়ে খুজবে,
হঠাৎ, কিছুক্ষণ পরই মাথায় আসলো আজ সকালে স্নেহার সাথে ঘটা ঘটনাটি, এবার ধীরেধীরে ক্লিয়ারলি বুঝতে পারছে রাহুল,কি হতে চলছে,
হুমম তবে এটাও ভেবে নিয়েছে রাহুল, আজ হয়তো সামিরের লাশ পড়বে আর নয়তো ওর লাশ, [ স্টার্ট দিয়ে টান দিলো গাড়ী, মোবাইলটাও বেজে উঠলো ]
চলবে…