Love At 1st Sight Season 3 Part – 68

0
7101

Love At 1st Sight
~~~Season 3~~~

Part – 68

writer-Jubaida Sobti

রাহুল : এতো কিউট করে তাকিয়ে থেকোনা স্নেহা! আমার কিন্তু তোমার এই কিউট এক্সপ্রেশন গুলোতে আনলিমিটেড কিস্ দিতে মন চাই, [ মৃদু হাসলো স্নেহা রাহুলের কথা শুনে ]

রাহুল : এভাবেই হাসবা অলোয়েজ সুট করে তোমার ফেইসে্!

মাথা নাড়ালো স্নেহা, দূর থেকে বাকিরা তাকিয়ে আছে,কেউ কেউ ছবিও তুলছে, মুখে বিস্ময়কর একটি হাসি ঝুলিয়ে লিনিসা ফুফি এগিয়ে এলো রাহুল আর স্নেহার দিক,

লিনিসা ফুফি : ওয়াও স্নেহা! তুমি তো খুব সুন্দর ডান্স পারো! আম স্পিচলেস্ ডিয়ার!

রাহুল : আরে ফুফি ও তো ডান্স টিচার তাই সুন্দর ডান্স পারে, উমম আমার ডান্সের ব্যপারে কিছু বলতে পারো, আম হেয়ারিং?

লিনিসা ফুফি : তোর আর নতুন করে কি বলবো!

রাহুল : আরে! নতুন করে কি বলবে মানে, অন্তত মিথ্যা মিথ্যা তারিফ ওতো করে দিতে পারো! [ লিনিসা ফুফি হেসে রাহুলের মাথায় আলতো করে একটি বারি দিলো, হঠাৎ পেছন থেকে কেউ ডাক দিলো ফুফিকে ]

লিনিসা ফুফি : আচ্ছা স্নেহা! এদিকে এসো তোমায় ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই!

রাহুল : আর আমি বাদ?

লিনিসা ফুফি : হ্যাঁ! তুই এখন থেকে বাদ! [ বলেই ফুফি হেসে স্নেহাকে টেনে নিয়ে চলে গেলো, স্নেহা ও মাথা ঘুরিয়ে রাহুলের বেচারা চেহেরার দিক একবার তাকিয়ে মুচকি একটি হাসি দিলো ]

রাহুল : [ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ] ইয়াহ, রাহুল! তুই তো এখন এমনিতেই বাদ! বিকজ আফটার ম্যারেজ ছেলেদের তো কোনো পাত্তাই থাকে না, ইউ হেভ টু বুঝতে হবে! [ নিজে নিজে কিছুক্ষণ বকবক করতে লাগলো এভাবে, আর না পেরে এদিকওদিক তাকিয়ে আবার ফ্রেন্ডসদের আড্ডায় গিয়ে জয়েন করলো ]

____ আর এইদিকে, প্রোগ্রাম শুরুর সময় ক্যামেরা বন্ধি করা, স্নেহা আর রাহুলের কিছু ভালোবাসার মুহুর্তের ছবি স্লাইড হচ্ছিলো, স্ক্রিন টিভিতে, আর দূর থেকে পপকর্ণ হাতে নিয়ে খেতে খেতে মৃদু হেসে ছবিগুলো তাকিয়ে যাচ্ছে মার্জান, হঠাৎ আসিফ এসে দাড়ালো পাশে,তাতে ও কোনো খবর হলো না মার্জানের, ছবি গুলোর ভেতরেই যেন একদম ঢুকে পড়েছে!

আসিফ : [ গলা ঝেড়ে ] বাহ! কি রোমাঞ্চকর মুহূর্ত! মাঝে মাঝে রাহুল স্নেহাকে দেখে অনেক হিংসে হয়, জানো? [ মার্জান অবাক হয়ে তাকালো ]

আসিফ : [ হেসে ] ওদের বন্ডিংটা অনেক স্ট্রং! খুবই ভাগ্যশালীদের কপালেই এমন ভালোবাসা জুটে! [ কিছু বললো না মার্জান, মৃদু হেসে মুখটা অন্যপাশ ফিরিয়ে নিলো ]

আসিফ : কার কপালে ছিলো এই রাহুল কে জানতো! ঠিকই স্নেহা জিতে নিয়েছে!

মার্জান : এক্সকিউজ মি!

আসিফ : [ মনে মনে ] উমমম! গায়ে লেগেছে! এবার,

মার্জান : আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন, রাহুলের পেছনে অন্যান্য মেয়েরা যেভাবে ভাগদৌড় করে জেতার ট্রাই করেছে,

– স্নেহাও তেমনটাই করেছে? হুম?

আসিফ : নাহ! তা না বাট..

মার্জান : বাট? বাট কি আবার হ্যাঁ? লিসেন্ট রাহুলই স্নেহার কাছে এসেছিলো ওকে? স্নেহা যায়নি! সো্ আদার গার্লসদের সাথে আমার ফ্রেন্ড এর কমপেয়ার করবেন না! হুহ!

আসিফ : ও হ্যালো! তোমার ফ্রেন্ডস্ ফ্রেন্ড আর আমার ফ্রেন্ডস্ কিছুইনা তাই না?

মার্জান : হোয়াটেভার!

আসিফ : আসলে আমি বুঝাতে চাইছিলাম যে রাহুলের পেছনে কিন্তু অনেক মেয়েরাই পাগল! বাট কেউই এন্ট্রি নিতে পারেনি একমাত্র স্নেহা ছাড়া!

– এ..এতো মেয়ে পাগল মানে বুঝোতো ব্যপারটা, যার তার ভাগ্যের দ্বারা পসিবল হয় না কিন্তু এসব,

মার্জান : হিহি! তাহলে তো স্নেহা ডাবল ভাগ্যবতি তাই না? যে ছেলের পেছনে এতো মেয়ে পাগল! আর ঐ ছেলেই স্নেহার পেছনে পাগল! ওয়াও!

আসিফ : [ হেসে ] মানে হারতে চাইবে না কখনো তাই না?

মার্জান : নেভার!

আসিফ : আর যদি আমার কাছ থেকে হারো?

মার্জান : হোহহো! ইম্পসিবল! [ কথাটি বলে আর থামতে পারলো না মার্জান, হুট করে আসিফ মার্জানের গালে একটি চুমু বসিয়ে দিলো, সাথেসাথেই মার্জানও চারশো চল্লিশ ভল্টের একটি শকিং এক্সপ্রেশন নিয়ে মূর্তি হয়ে গেলো ]

আসিফ : [ মার্জানের কানের দিক ফিসফিসিয়ে ] যদি আমাকে হারাতে চাও! তাহলে তোমার থেকে আমায় দুটো দিতে হবে মিস্ এংড়ি বার্ড! [ বলেই মার্জানের হাতের পপকর্ণের প্যাকেট থেকে একটি পপকর্ণ মুখে ঢুকিয়ে হেসে হেসে চলে গেলো, ধীরেধীরে আড়চোখে চারদিক চোখ বুলাতে লাগলো মার্জান ও,কেউ দেখেছে কিনা ও বুঝতে পারছে না,মুখটা বিরক্তিকর করে পপকর্ণের প্যাকেটটা টেবিলে ছুড়ে রেখে সেও সরে গেলো ওপাশ থেকে ]

বিকেল ৪টা থেকেই গেষ্টরা বিদায় নিতে শুরু করে দিয়েছে,৫ টা বাজতে বাজতে প্রোগ্রাম শেষই হয়ে গেছে, গেষ্টরাও সবাই চলে গেছে, সারভেন্টরা পরিস্কার করার কাজে লেগে পড়েছে, রাহুল তার বাকি ফ্রেন্ডসদের বিদায় দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখে নেহাল চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে, ড্রিংক্স খেয়ে গ্লাসটি কপালের উপর কাত করে লাগিয়ে রেখেছে, তা দেখে রাহুল ও মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো,কপালের উপর থেকে গ্লাসটা হাতে নিয়ে নিতেই চোখ খুলে তাকালো নেহাল!

রাহুল : [ চেয়ার টেনে বসে ] কি হয়েছে দেবদাস হয়ে আছিস কেনো? বলিসনি এখনো?

নেহাল : [ কিটকিটিয়ে হেসে ] দেবদাস হয়নি ব্রো! দেখ হাসছি আমি এই দেখ হিহি!

রাহুল : তারমানে পাগল হয়ে গেছিস?

নেহাল : [ নাকফুলিয়ে ] হ্যা পাগল হয়ে গেছি দেখছিস না? [ কাদো কন্ঠে ] ব্রো আর মাত্র দু-ঘন্টা! আর ওর কোনো রেস্পন্সই নেই! গিভ মি সাম আইডিয়া ব্রো! এভাবে চলতে থাকলে আমার তো সুইসাইড করতে হবে!

রাহুল : ওয়াও নেহাল! আমি না সরাসরি কাউকে সুইসাইড করতে দেখিনি! এই উইশটা আমার বাকি আছে ব্রো!

নেহাল : ওও ইয়াহহ! ইডিয়ট! কোথায় আমাকে বাচার আইডিয়া দিবি তা না, তুই তো আমায় মেরে তোর উইশ পূরণ করার ড্রিম দেখছিস! [ হাসতে লাগলো রাহুল নেহালের অবস্থা দেখে ]

নেহাল : [ মুখ গোমড়া করে ] আমার না তোর বিয়েতে আসাই উচিৎ ছিলোনা!

– না আসলে আর ওর সাথেও দেখা হতো না, এন্ড নাও মরার প্লান ও করতে হতো না!

রাহুল : আরে মেয়েদের মতো কথাবার্তা বলছিস কেনো স্টুপিড! ভেতরের জোশটা কোথায়? ফরেন মেয়ে পটাতে তো আমার চেয়ে ওস্তাদ বেশি ছিলি তুই! আর দেশী মেয়ে পটাতে এই অবস্থা?

নেহাল : পটিয়েছিলাম এঞ্জয় করার জন্য! এসব ট্রু লাভ-টাভ হয়নি কখনো!

রাহুল : এটাও কিন্তু ঠিক বলেছিস তুই!

– আরে ফেইসবুক, টুইটার, ইন্সটেগ্রাম, ভার্সেটিতে মেয়েরা পেছনে লাইন লেগে থাকতো আর আমার কোনো রেসপন্সই থাকতো না! বাট যখনিই এই ট্রু লাভের চক্করে পড়েছি বস্ তারপর আমি বুঝলাম,রেসপন্স না পেলে কতোটা পেইন লাগে!

– [ মৃদু হেসে ] কতো ঝামেলা গেছে এই ভালোবাসার উপর! সবশেষে স্নেহা এখন আমার!

নেহাল : [ রাহুলের কাধে জড়িয়ে ] ব্রো এইবার আমারটা একটু ভাব!

রাহুল : আমার রিভেঞ্জ নেওয়া বাকি আছে কিন্তু!

নেহাল : কিসের রিভেঞ্জ আবার?

রাহুল : ওহ রিয়েলি? ইউ ফরগেট ইট! ঈশাকে নিয়ে স্নেহার সামনে আমাকে কি কি বলছিলি?হ্যাঁ?

নেহাল : ওওও! ইয়াহহ!

রাহুল : উমমম ইয়াহহ!

নেহাল : [ কাদো কন্ঠে ] শিট ম্যান! আই ওয়াজ কিডিং! রিভেঞ্জটা দরকার হলে আমাদের রিলেশন হয়ে যাওয়ার পর নিয়ে নিবি! আরে রাহুল আমি জানি তুই এতোটাও কঠোর না!

রাহুল : তাই?

নেহাল : প্লিজজ!

রাহুল : ওখে!

নেহাল : [ রাহুলের গালে একটি চুমু খেয়ে ] ইয়াহ! থেংক ইউ থেংক ইউ! এবার বল!

রাহুল : তুই!

নেহাল : হ্যাঁ আমি!

রাহুল : এখন আর ওর সাথে দেখা করবি না,

নেহাল : [ অবাক হয়ে ] হোয়াইইই?

রাহুল : আগে পুরো কথাটা তো শোন!

নেহাল : ও..ওখে!

___এইদিকে রাহুলের রুমে,শায়লা দাঁড়িয়ে আছে জানালার একপাশে,

মার্জান : ঐ! মন খারাপ? একা দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

শায়লা : নাহ! এ..এমনিতেই!

মার্জান : আচ্ছা চল রাহুলের কাজিনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসি, ওরা সবাই আজই চলে যাবে! আর নেহালকে ও সরি বলেদিস ঐদিনের রোং বিহেইভিয়ার এর জন্য! বেচারার কোনো দোষ ছিলো না কিন্তু! আমরা তো ওর উপর শুধু শুধুই রাগ দেখিয়েছিলাম!

শায়লা : হুম!

মার্জান : চল! [ বলেই দুজন গিয়ে রাহুলের কাজিনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিলো, নিচের হল রুমে আসতেই দেখে রাহুল, আসিফ, রিদোয়ান পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে বসে আছে, আশেপাশে সারভেন্টরা পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত, রাহুল তাদের দেখে হাত নাড়ালো, তাই দুজনই এগিয়ে গেলো ]

রাহুল : শুনো! আমার বউ কোথায়?

মার্জান : উপরেই আছে! আর আপনি বলুন আপনাদের দলের আরেকজন কোথায়?

রাহুল : কে? আসিফ? ঐতো! [ মার্জান আড়চোখে তাকাতেই আসিফ ও হেসে ঠোট উচু করে চুমুর মতো করে দেখালো, ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো মার্জান, তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে রাহুলের দিক তাকিয়ে ফেললো, রাহুল ও মুচকি মুচকি হাসছে মার্জান এর রিয়েক্ট দেখে, মজা নিচ্ছিলো আসিফ ও ]

মার্জান : [ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ] আ..আমি নেহালের কথা বলছি!

রাহুল : তুমি নাকি শায়লা? [ রিদোয়ান আর আসিফ কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো, শায়লা আড়চোখে তাকালো রাহুলের দিক, চোখ টিপ মারলো রাহুল ও ]

মার্জান : আপনারা মজা নিচ্ছেন আমাদের?

রাহুল : নো নেভার! সরি এক্সুলি! মানে..আমি বলছিলাম যে নেহালকে আমি দেখিনি! বাহিরের দিক যেতে দেখেছিলাম এরপর আর দেখিনি!

মার্জান : আচ্ছা! ওনি আসলে কষ্ট করে আমাদের পক্ষ থেকে একটু সরি আর বাই বলে দিবেন প্লিজ!

রাহুল : শিয়র!

মার্জান : থেংক ইউ! [ বলেই আসিফের দিক একবার তাকিয়ে মুখ ভেংগিয়ে, শায়লার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে গেলো, রাহুল,আসিফ, রিদোয়ান তিনজনই হাসতে লাগলো ]

হঠাৎ কিছুক্ষণ পর,

গীতালি : [ এগিয়ে এসে ] রাহুল ভাইয়া! দাদী আপনারে ডাকতাছে! [ রাহুল ও মাথা নাড়িয়ে উঠে, উপরের দিক চলে গেলো, দাদীর রুমে ঢুকতেই দেখে বাকিরা সবাই একত্রে জড়ো হয়ে আছে ]

রাহুল : [ এগিয়ে গিয়ে ] কি কথা হচ্ছে আমাকে ফেলে?

জারিফা : অহ জিজু! ভালোই হয়েছে, আপনিও এসেছেন! চল স্নেহা রাহুলকেও বাই বলেদে!

রাহুল : এক্সকিউজ মি? বাই বলবে মানে?

জারিফা : তো বাই বলবে না? বাকিদের বলে দিয়েছে শুধু আপনাকেই বলা বাকি! [ রাহুল কনফিউজড হয়ে তাকিয়ে রইলো স্নেহার দিক ]

জারিফা : বুঝেননি তাই তো? এক্সুলি স্নেহা আমাদের সাথে এখন চলে যাবে!

রাহুল : হোয়াটটটট? [ বলতেই সবাই শকড হয়ে তাকালো রাহুলের দিক, জারিফা আর রাহুলের কাজিনরা কানে আংগুল দিয়ে দিলো তাড়াতাড়ি ]

রাহুল : আ..আই মিন! গতপরশুই তো বিয়ে হয়েছে মাত্র! আজই কেনো যাবে?

রাহুলের মা : [ মুচকি হেসে ] বাট রাহুল! এটাই তো অভজার্ভেন্স! রিসিপশানের দিন ব্রাইড তার বাবার বাড়ী চলে যায়!

রাহুল : ডিসগাষ্টিং অভজার্ভেন্স! কে বের করেছে এসব?

জারিফা : দেখেন! এখন তো আর এসব বলে লাভ হবে না জিজু! তাই না! [ মিটিমিটি হাসছে সবাই রাহুলের ফেইস্ এক্সপ্রেশন দেখে ]

জারিফা : কই! স্নেহা,তাড়াতাড়ি কর!

রাহুল : [ স্নেহার হাত ধরে টেনে তারপাশে এনে ] আরেহ! তাড়াতাড়ি কর মানে? লিসেন্ট! আমার বউ আমি যেতে না দিলে কেউ নিয়ে যেতে পারবানা বলেদিলাম?

জারিফা : বাট জিজু..

রাহুল : হেইই! বাট আবার কি? বললাম তো নিয়ে যেতে পারবানা!

– আরে মা! এসব অভজার্বেন্স পালন করা এতোটাও তো জরুরী না!

রোহানী : রাহুল ভাইয়া! সবার ক্ষেত্রে জরুরী হলে, তোমার ক্ষেত্রে কেনো জরুরী হবে না?

জারিফা : হ্যা ঠিকই তো! [ স্নেহার হাত ধরে ] চল স্নেহা!

রাহুল : [ জারিফা থেকে স্নেহার ছুটিয়ে নিয়ে ] দেখো এসব আমার আগে জানা ছিলো না,

– স্নেহা! তুমিও তো আমায় কিছু বলোনি!

– আরেহ কেউই তো আমায় কিছু বলোনি, নাহলে আমি রিসিপশান আরো ওয়ান উইক পরে করতাম!

আলিসা : [ নাক ফুলিয়ে ] ওয়ান উইক পরে আমাদের ফেলে একা একা রিসিপশান করতে তাই না?

রাহুল : [ মাথা চুলকিয়ে ] আরে হ্যাঁ! সেটাও তো ঠিক!

জারিফা : আচ্ছা যা হয়েছে, হয়েছে আর তো কিছু করার নেই! সো্ এবার কিন্তু আপনার মেনে নিতে হবে! স্নেহা তুই চলতো!

রাহুল : [ স্নেহার হাত ধরে সরিয়ে নিয়ে ] ঐ আধিঘারওয়ালি এতো দুশমনি করছো কেনো বলোতো?

– আরে দাদী তুমি তো অন্তত কিছু বলো! দিস ইস নট ফেয়ার না? মাত্রই তো স্নেহাকে পেলাম আর ওরা বলছে আজই নিয়ে চলে যাবে! এটা কোনো কথা হলো?

দাদী : [ মৃদু হেসে ] আরে বোকা বানাচ্ছে তোকে ওরা! [ কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো বাকিরা, স্নেহার বাবা মা ও মিটিমিটি হাসতে লাগলো রাহুলের কান্ড দেখে ]

রাহুল : আচ্ছা? [ বলেই নিস্থব্দ হয়ে সবার দিক চোখ বুলাতে লাগলো ]

আলিসা : উফফ! ভাইয়া একটা সেকেন্ড এর জন্যও ভাবীকে দূরে রাখতে চাইনা কি যে ভালোবাসাআআআ.. [ হুট করে রাহুল বারি দিলো আলিসার মাথায়, আলিসা ও হেসে চুপ হয়ে গেলো, ব্লাশিং হতে লাগলো রাহুল ও, স্নেহার দিক তাকাতেই দেখে সেও হাসছে মুচকি মুচকি ]

দাদী : তবে রাহুল! এটাই কিন্তু নিয়ম! রিসিপশানের দিন বউ তার বাপের বাড়ী চলে যাবে! বিয়েটা যেহেতু তাড়াহুড়োতে হয়েছে তাই আমিও স্নেহার বাবাকে বলে দিয়েছি!

– যেভাবেই হোক স্নেহাকে কিন্তু আজ নিয়ে যেতে পারবেন না! [ স্নেহার বাবাও হেসে দিলো দাদীর কথা শুনে ]

রাহুল : ওয়াও দাদী! আমার মনের কথা চুরি করে নিলা! এক্সুলি আমার দাদী বলে কথা! [ হাসতে লাগলো দাদী ও ]

স্নেহার মা : আচ্ছা! স্নেহা আমরা এবার আসি তাহলে! [ স্নেহা মাথা নাড়িয়ে,রাহুলের হাত ছেড়ে তার মায়ের দিক এগুতেই যাবে, তখনি ]

রাহুল : একমিনিট! [ বলেই স্নেহার ছেড়ে দেওয়া হাতটা আবারও শক্ত করে ধরে নিয়ে ]

– এবার যাও! [ স্নেহা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রাহুলের দিক ]

রাহুল : এক্সুলি তোমাকে বিশ্বাস করলেও এই নটি কোম্পানির দলের উপর মোটেও বিশ্বাস নেই! যদি আবার তোমাকে টেনে নিয়ে চলে যায়! [ বাকিদের সাথে সাথে স্নেহার বাবা-মা ও হেসে দিলো রাহুলের কথা শুনে, স্নেহার ও কি আর করার রাহুলের হাত ধরে রেখেই তার মা কে গিয়ে জড়য়িে ধরলো, আর এইদিকে জারিফা স্নেহাকে টেনে নেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে বাড়িয়ে, বারবার রাহুলকে ভয় লাগাতে লাগলো ]

রাহুল : তোমাকে তো আমি পড়ে দেখে নেবো! [ বলেই মুচকি হেসে আবার স্নেহার দিক তাকালো, কাদছে স্নেহা, তার মাকে জড়িয়ে ]

রাহুল : [ মাথা ঝুকে আংগুল দিয়ে স্নেহার চোখের পানি মুছে নিয়ে ] আরে স্নেহা! ডোন্ট ক্রাই, বেবী! তুমি চাইলে যেতে পারো আমি তো জাষ্ট…মানে…

জারিফা : জাষ্ট! মানে?

রাহুল : তুমি চুপ করো!

হাসলো স্নেহা রাহুলের কথা শুনে, বাকিরাও হেসে চলছে রাহুলের একেক কান্ডে, অবশেষে স্নেহার বাবা-মা ও স্নেহাকে রাহুলের হাতে বুঝিয়ে দিয়ে, স্নেহার ফ্রেন্ডসদের সাথে নিয়ে চলে গেলো!

৬টা বাজতে চলছে, সন্ধ্যাটাও ঘনিয়ে আসছে প্রায়! আর এইদিকে, গেষ্ট হাউজের শিরির চৌকাটে বসে আছে, রাহুল,রিদোয়ান এবং আসিফ! আর নেহাল এদিকওদিক হাটাহাটি করছে অস্থিরতা হয়ে!

রাহুল : আরে ইডিয়ট এতো অস্থির হচ্ছিস কেনো?

নেহাল : যদি প্লানটা কাজে না আসে?

রিদোয়ান : [ হেসে ] না আসলে নেই!

নেহাল : নেই মানে? হোয়াট ডু ইউ মিন?

রাহুল : উফফ! ইডিয়ট, রিলেক্স থাক! প্লান কাজে আসবে! আমি দিচ্ছি গ্যারান্টি!

আসিফ : এবার যাবি?

নেহাল : [ রাহুলের দিক তাকিয়ে ] মম!

রাহুল : আমি করবো হ্যান্ডেল! তুই শুধু যেভাবে করতে বলছি সেভাবেই করে যা!

নেহাল : [ মুখ গোমড়া করে ] ওখে! [ বলেই নেহাল আর আসিফ এক গাড়ীতে উঠে চলে যায়, আর রিদোয়ান রিদোয়ানের গাড়ী করে বেড়িয়ে যায় ]

রাহুল ও তাদের বিদায় দিয়ে এগিয়ে এলো রুমে, দরজা লক করে ড্রেসিং এর দিক তাকাতেই যেনো চোখ ঝলসে গেছে রাহুলের! ডার্ক অলিভ কালারের একটি তাতের শাড়ি পড়ে, টাওয়েল দিয়ে ভেজা চুল গুলো মুছতে লাগলো স্নেহা! তবে রাহুল ও নিজেকে সামলাতে পারলো কই, ধীরেধীরে এগিয়ে গিয়ে স্নেহার পেছনে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো,

গা শিরশির করে উঠলো স্নেহার, কোমোড়ে রাহুলের হাতের স্পর্শ, চুল মুছা থামিয়ে দিয়ে আয়নার দিক তাকালো স্নেহা, আর রাহুল নেশাচ্ছন্ন দৃষ্টিতে তার দিকই তাকিয়ে আছে, চুলে জমে থাকা বিন্দু জলের একটি ফোটা কুড়িয়ে নিয়ে স্নেহার মুখের উপরই ছিটকে মারলো রাহুল, মুচকি হেসে চোখ কুচকে বন্ধ করে ফেলেছে স্নেহা!

রাহুল : ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কিছু বানাতে পারি আর নাই পারি স্নেহা! তোমার হৃদয়ে পৌছাবার ফ্লাইওভারটা অবশ্যই বানিয়েই ফেলেছি!

স্নেহা : আ..আপনার কাপড় বের করে রেখেছি, ফ্রেশ হয়ে পড়েনিন!

রাহুল : আফসোস ফেব্রুয়ারী ও যদি থার্টি ডেইস্ এর হতো, তাহলে বছরে আরো দু-দিন এক্সট্রা মিলে যেতো তোমার এই নূরানী চেহারাটা দেখার!

স্নেহা : [ রাহুলের গাল টেনে দিয়ে ] এবার রোমান্টিক ডায়লগ ছেড়ে তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়েনিন! আপনার আবার ওদের সি-অফ করতে এয়ারপোর্ট ওতো যেতে হবে তাই না?

রাহুল : ভেজা চুলে তোমাকে কিনা লাগছে স্নেহা!

– আচ্ছা একটা জিনিষ খেয়াল করেছো কখনো, তুমি যখন কথা বলো না? তখন তোমার ঠোট দুটো.. [ বলেই রাহুল তার মুখ স্নেহার কাছাকাছি আনতেই স্নেহা হেসে রাহুলকে ঠেলে সরিয়ে দেই ]

রাহুল : আরে স্নেহা! আমার কথাটা তো শুনো!

স্নেহা : হ্যাঁ শুনতে হবে না আমি জানি আপনার মতলব কি! [ বলেই রাহুলের হাতে টাওয়েলটা ধরিয়ে দিয়ে বাথরুমের দিক যেতে ইশারা করলো, রাহুলের ও কি আর করার, মুখটা গোমড়া করে চলে গেলো, স্নেহাও হেসে ড্রেসিং এর উপর থেকে চিরুনিটা নিতে যাবে তখনিই হঠাৎ ঘাড়ের উপর কারো গরম নিশ্বাস উপভোগ করলো, পাশফিরে তাকাতেই,

রাহুল : [ ফিসফিসিয়ে ] আর কতোক্ষণ ভাগবা স্নেহা! [ বলেই চোখ টিপ মেরে চলে গেলো ওয়াসরুমে,স্নেহা নিশ্চুপ হয়ে কানে চুল গুজে আয়নায় নিজের চেহেরার দিক তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ, হঠাৎ ব্লাশিং করা একটি হাসি দিয়ে চিরুনীটা এগিয়ে নিয়ে চুল আচড়াতে শুরু করে দিলো ]

খানিক্ষণ পর রাহুল ফ্রেশ হয়ে বেরুলো ওয়াসরুম থেকে, এদিকওদিক তাকিয়ে দেখলো রুমের, স্নেহা নেই কোথাও, তারমানে বুঝতে পারলো ফুফিদের কাছেই গেছে! স্নেহার রেখে যাওয়া খাটের উপর থেকে কাপড় গুলো নিয়ে পড়ে নিলো রাহুল,ড্রেসিং এর ধারে এসে পার্ফিউম লাগাচ্ছে ঐটাইমেই স্নেহা ঢুকলো রুমে!

রাহুল : বারবার কোথায় গায়েব হয়ে যাও বলো তো?

স্নেহা : সবাইকে বাই বলতে গিয়েছিলাম! আর সবাই আমাকেই ঠেলেঠুলে রেষ্ট করতে পাঠিয়ে দিয়েছে!

রাহুল : ঠিকই তো করেছে সব এনার্জি এখন শেষ করে দিলে হবে? আমার জন্য ওতো কিছু রাখো!

স্নেহা : ছিঃ রাহুল! আপনি সব কথাকে অলোয়েজ নিগেটিভ সাইড নিয়ে চলে যান কেনো বলেন তো?

রাহুল : [ স্নেহার হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে ] নিগেটিভ সাইডে ভালো করে এখনো নিয়ে যেতে দেখেছো কোথায় স্নেহা?

স্নেহা : নি..নিচে ওরা অপেক্ষা করছে আপনার!

রাহুল : আম অলসো্ ওয়েটিং স্নেহা! [ বলেই স্নেহার ঠোটের দিক ঠোট এগিয়ে নিচ্ছিলো ]

স্নেহা : রা..রাহুল আপনার জ্যাকেট!

রাহুল : হোয়াট?

স্নেহা : ঠান্ডা লাগবে প..পড়ে নিন!

রাহুল : রোমান্টিক মুড বিগড়ে দেওয়ার নোবেলটা তুমিই প্রাপ্তি স্নেহা! [ বলেই খাটের উপর থেকে জ্যাকেটটা এগিয়ে নিয়ে হুটহাট করে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে, জিহবায় কামড় খেয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগলো স্নেহা ও ]

৮ টা বেজে ৩০ মিনিট, স্নেহা গা হেলিয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে রইলো বিছানায়, তবে রাহুলের দুষ্টুমির স্বরণে মনটা ছটফট করেই চলছে, আর না পেরে উঠে বসে ফোন দিলো রাহুলের মোবাইলে, কিন্তু মোবাইলটা ড্রেসিং এর উপর থেকেই বেজে উঠলো, দীর্ঘ একটি বিষন্নতার নিশ্বাস ফেলেই মনে মনে ভাবতে লাগলো স্নেহা!

– আবার ও ফেলে গিয়েছে মোবাইলটা! আমাকে কেয়ারলেস্ বলেন একবার নিজের দিকটাও তো দেখুন মিষ্টার তেডি স্মাইল! হুহ!

কি আর করবে ভেবে পাচ্ছিলো না স্নেহা! তাই উঠে ড্রেসিং এর দিক এগিয়ে গেলো, নিজের চেহেরার দিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো আয়নায়! রাহুলের দুষ্টু-মিষ্টি কান্ডগুলো ভেবে ভেবেই মৃদু হাসছে, হঠাৎ কাজলের পেন্সিলটা উঠিয়ে নিয়ে দু-চোখ ভরে লাগিয়ে নিলো, রাহুলের দেওয়া টিপের পাতাটাও সংগে করে নিয়ে এসেছে স্নেহা! তাই ওখান থেকেই সাদা স্টোনের ছোট্ট একটি টিপ লাগালো কপালে, হালকা গোলাপী রঙের লিপস্টিকটাও মেখে নিলো ঠোটে! মাথার চুলগুলোও চিরুনী দিয়ে আঁচড়ে সেট করে নিচ্ছে, হঠাৎ ঐসময় রাহুলের ফোনের মেসেজ টোনটা বেজে উঠলো, স্ক্রিনের বাতিটা একবার জ্বলে আবার নিভে গেছে!

নিজ হাতে এগিয়ে নিলো স্নেহা মোবাইলটা, কোনো এক আননোওন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে! তাও আবার এক-দুটো নয় ৬৩টা মেসেজ এসেছে একই নাম্বার থেকে একইদিনে, কৌতুহল জাগলো স্নেহার তাই মেসেজে ক্লিক করেই দিলো!

১ম মেসেজ ওপেন করতেই, লিখা ছিলো,

– হোয়াই আর ইউ ডোন্ট রিপ্লায়িং মি রাহুল!

২য় মেসেজ,

– ঐ চাম্বুস আন্টির সাথেই বসে আছো নিশ্চয় তাই তো আমার সাথে কথা বলছো না!

৩য় মেসেজ,

তোর সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো আমায় এখনো কষ্ট দিচ্ছে রাহুল! তোর কি একটিবার ও মনে পড়ে না এসব? মোবাইলের এলভামের ছবি গুলো শুধু সৃতি করেই সাজিয়ে রেখে দিয়েছি, তোকে মনে পড়তেই শুধু সৃতিটুকু দেখে মনকে শান্তনা প্রদান করি! তোর কি একটিবারও মনে পড়ে না আমায়?

৪র্থ মেসেজ,

– আমি জানি স্নেহাকে অনেক হার্ট করেছি বলে তুই আমার উপর খুবই রেগে আছিস! কিন্তু আমারও কি দোষ বল? আমার ভালোবাসার অধিকারটুকু ওতো আমি পেতে পারি তাই না?
স্নেহা আমাদের সম্পর্কের সবকিছু জেনেও তোকে মেনে নিয়েছে তাই ওর ভালোবাসা ভালোবাসা আর আমার যে ভালোবাসা তোকে বিলিয়ে দিয়ে দিয়েছিলাম তা কিছুই না?

মেসেজ পড়ে,হাত,পা, শরীর সবই কাপছিলো স্নেহার! এর আগে আরও কিছু পড়বে সেই সাহসটুকু হচ্ছে না আর! মোবাইলটা আলতো করেই ড্রেসিং এর উপর রেখে দিলো, না চাইতেও কেনো যেনো অজস্র অশ্রু ঝড়ে যাচ্ছিলো স্নেহার চোখ বেয়ে,

সময় পেড়িয়ে রাত ৯টা বেজে চলছে, স্নেহা ড্রেসিং এর চেয়ারে এখনো ঐবসায় বসে রয়েছে, চোখদুটো লাল হয়ে ফুলে টইটুম্বুর হয়ে গেছে, নাকের আগায় চোখের পানিগুলো ও এসে জমে রয়েছে,

হঠাৎ দরজা খোলার টুকটাক শব্দ ভেসে এলো,শিসের আওয়াজে স্নেহারও বুঝতে কষ্ট হলো না রাহুলই এসেছে! চোখের পানি মুছে দাড়িয়ে পেছন ফিরে তাকালো স্নেহা! হাসি ঝুলানো রাহুলের চেহেরাটিও মুহুর্তে গোমড়া হয়ে যায় স্নেহার চেহেরা দেখে! তাড়াতাড়ি স্নেহার কাছাকাছি এগিয়ে গিয়ে দুহাতে স্নেহার মুখটা হাতে তুলে ধরলো! পলক ঝুকিয়ে রেখেছে স্নেহা!

রাহুল : কি হয়েছে স্নেহা! কাদছো কেনো?

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] নেহাকে আপনার এখনো অনেক মনে পড়ে মাঝে মাঝে তাই না?

রাহুল : হোয়াট? ও..ওকে মনে পড়তে যাবে কেনো আমার?

স্নেহা : তাহলে গ্যালারীতে নেহার সাথে জুড়ানো সৃতি গুলো এখনো সাজিয়ে রেখে দিলেন যে? [ রাহুল আড়চোখে ড্রেসিং এর উপরে পড়ে থাকা তার মোবাইলটার দিক তাকালো ]

স্নেহা : রাহুল! প্রথম ভালোবাসা নাকি কেউই ভুলতে পারে না! ত..তবে আমি তো আপনাকে জোড় করিনি যে আমাকে ভালোবাসতেই হবে!

রাহুল : কি বলছো কি এসব স্নেহা? প্রথম ভালোবাস মানে?

– লিসেন্ট! ভালোবাসা মানে আমি শুধু তোমাকেই চিনি স্নেহা! আমার জীবনে কাউকে ভালো লেগেছে বললে সেটা তুমিই, আর কাউকে প্রথম ভালোবেসেছি বললে সেটাও তুমি!

– [ স্নেহার দুহাত মুঠি করে ধরে ] এন্ড! স্নেহা! আমি লাষ্ট কবে গ্যালারির ছবি চেক করেছি আমি নিজেও জানিনা! হয়তো নেহার সাথে কিছু পিক রয়েগেছে গ্যালারীতে, তবে এটার জন্য তোমার খারাপ লেগে থাকলে আম সরি! [ ফুফিয়ে কেদে চেয়ারে বসে পড়লো স্নেহা ]

রাহুল : [ হাটু গেড়ে বসে ] আরেহ! এভাবে কাদছো কেনো স্নেহা? আ..আমি এক্ষুণি ডিলিট করে দিচ্ছি সব! [ বলেই মোবাইলটা হাতে এগিয়ে নিতেই বলেই উঠলো ]

স্নেহা : রাহুল আমাদের মাঝে এখনো তেমন কিছুই হয়নি! তাই আমি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবো!

রাহুল : মা..মানে?

– কি মিন করতে চাচ্ছো?

স্নেহা : রাহুল! নেহার আপনাকে দরকার! আমি জানিনা আপনি আমার কাছ থেকে কি লুকাচ্ছেন! তবে আমি নেহার কথায় সব স্পষ্টই বুঝে নিয়েছি!

[ বিষন্ন চোখে তাকিয়ে রইলো রাহুল স্নেহার দিক, কিছু মুহুর্তের জন্য তো রাহুলের বিশ্বাসই হচ্ছে না এটা কি তারই স্নেহা? নাহ তার স্নেহা তো কখনোই এভাবে বলতে পারবে না তাকে ]

স্নেহা : সরি রাহুল! আমি আপনার পার্মিশন ছাড়াই নেহার মেসেজগুলো সিন করেছি বলে! [ রাহুল তাড়াতাড়ি মোবাইল অন করে মেসেজে ঢুকলো, হ্যাঁ সত্যিই তো নেহার অনেক মেসেজ এসেছে এইখানে, তা দেখে রাহুলের মাথাটাও ঘুরে গেছে, কয়েক সেকেন্ডের জন্য ]

রাহুল : স্নেহা! এই পর্যন্ত নেহার অনেক নাম্বারই আমি ব্লক করেছি, কিন্তু ও আবারও এসব নতুন নতুন নাম্বার নিয়ে আমাকে টেক্সট করতে থাকে!

– ট্রাষ্ট মি!

স্নেহা : ও..ঐরাতে যা কিছুই হয়েছে রাহুল! একটা মেয়ের পক্ষে এসব ভুলে থাকা অনেক কষ্টকরই হবে! তা..তাই হয়তো নেহাও..

রাহুল : [ চেচিয়ে ] স্টপ ইট স্নেহা!

– সিরিয়াসলি? তোমার মনে এখনো এই সন্দেহ রয়েগেছে?

– সরি! আমি সন্দেহ বলছি! তুমিতো নিসন্দেহে সব কথা বলে ফেলছো!

মাথায় হাত দিয়ে নিজের চুল নিজে মুঠি করে ধরে কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো রাহুল, দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হাত নামিয়ে আবার দু-হাত কোমোড়ে রাখলো, চোখের পলক নাড়াতে লাগলো এদিকওদিক, পানি এসে জমে যাচ্ছে রাহুলের চোখেও, স্নেহা বুঝতে পেরে রাহুলের হাতটা ধরতেই এক ঝাড়ি দিয়ে রাহুল স্নেহার হাতটা সরিয়ে দরজা খুলে ধাম করে বেধে বেড়িয়ে গেলো, স্নেহা রাহুল বলে চেচিয়ে উঠলো কিন্তু তাও! শুনলো না রাহুল, চলে গেলো,

তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরুলো স্নেহা, রাহুল শিরি দিয়ে নেমে একদম মেইন ডোরের দিকই চলে যাচ্ছে, দৌড়ে আবার রুমে এগিয়ে এসে স্নেহা মোবাইলটা হাতে নিয়ে কল দিতে লাগলো রাহুলকে কিন্তু রিসিভ করছে না রাহুল! কয়েকবার রিং যেতে না যেতে একদমই বন্ধ করে দিলো রাহুলের ফোনটা,কান্না যেনো এবার স্নেহার আরো ভেংগে এলো, জানালা দিয়ে এগিয়ে গেলে দেখে গেইট দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে রাহুলের গাড়ীটা, মুখে হাত দিয়ে চেপে রেখে ফুফিয়ে কেদে উঠলো স্নেহা ও, মাথায় কিছু আসছিলো না আর, রাহুল এই প্রথমই তার সাথে এভাবে অভিমান করে চলে গিয়েছে, নিশ্চয় আজ অনেক কষ্টই পেয়েছে সে! কলিজাটা যেনো ছিড়ে যাচ্ছে স্নেহার! চিৎকার করে করে কাদতে মন চাইছে, ঘৃণাও আসছে নিজের উপর, মনে মনে ভাবছে,

– রাহুল যা বলছে তাই সত্যি হবে,

– যদি রাহুলের এমন কোনো ইন্টেনশন থাকতো তাহলে তো মোবাইলটা ও ওর সাথেই রাখতো,

– আ..আমি কিনা স্টুপিড একটা! হুটহাট রাহুলকে ভুল বুঝতে চলেছি,

– রেগে যাওয়ারই তো কথা,

– রাহুল আমাকে কতো ট্রাষ্ট করে, আর আমি ওকে ট্রাষ্ট না করে নেহাকেই ট্রাষ্ট করতে চলছি!

– ঐ নেহা তো এমনই আ..আমার রাহুলকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে চাইছে!

দীর্ঘক্ষণ এভাবে ভেবে ভেবেই কেদে চলছে স্নেহা!

__আর এইদিকে, হাইওয়েতে ফুলস্পিডে গাড়ী চলছে রাহুলের! এক হাতে গাড়ীর স্টেয়ারিং ঘুরাচ্ছে আরেকহাতে বেয়ার এর বোতোল ধরে রেখেছে, কোনো সিগন্যাল লাইট ইউজ করা ছাড়াই বড় বড় গাড়ী ওভারটেইক করে যাচ্ছে রাহুল,কানে স্নেহার কথা গুলোই বাজছে বারবার, চোখ গুলো পানিতে ঝাপসা হতে না হতেই আবার হাতের কবজি দিয়ে মুছে ফেলছে, চারদিক থেকে লাইটিং ফোকাসে্ মাথাটাও ঘুরঘুর করে চলছে এবার, মনকে শুধু এসব প্রশ্নই করছে রাহুল,

– স্নেহার কি কোনো বিশ্বাসই নেই আমার উপর? আমি তো নিজের চাহিদার থেকেও বেশি ভালোবাসি স্নেহাকে, চোখ বন্ধে বিশ্বাস করে নিতে পারবো স্নেহার সবকিছু, তবে স্নেহাই কেনো বা পারবে না? এখনো নেহার ব্যপার নিয়ে মনে সন্দেহ রেখে দিয়েছে,

– তবে তো ঐদিন ভার্সেটিতে আমি সব খুলে বলেই দিয়েছিলাম, যদিও বা মনে এসব সন্দেহ থেকেই থাকতো তাহলে তখনিই কেনো বললো না, আজ এতোটা ভালোবাসার পর এসব কিভাবে মেনে নিবো?

হঠাৎ গাড়ীর পেছনের বেক সাইড সজোড়ে বারি খেলো কিছুর সাথে, তাড়াতাড়ি গাড়ী থামালো রাহুল, পাশ থেকে আরেকটি গাড়ীর ড্রাইভার চেচিয়ে চেচিয়ে কি কি যেনো বলে চলে গেলো, আজ আর সেসব কিছুই মাথায় নিলো না রাহুল, কারণ এই মাথাটা শুধু এখন স্নেহাকেই ভাবছে,

মনটাও খুব খারাপ হয়ে গেছে রাহুলের, গাড়ীটা আবারও স্টার্ট দিয়ে চালাতে লাগলো, আসার সময় স্নেহার হাত ঝাড়ি দিয়ে চলে আসার ব্যপারটা মনে পড়ে পড়ে ভেতরটা জ্বালিয়ে কয়লা করে দিচ্ছে রাহুলের, চোখ থেকেও অজস্র অশ্রু ঝড়ে যাচ্ছে, এইবার আর থামছেই না অশ্রু গুলো, স্নেহাকে যে বড্ড মনে পড়ছে রাহুলের, সে তো এতোক্ষণ রেগে থাকতে পারে না স্নেহার সাথে, তবে আজ কেনই বা দরকার ছিলো স্নেহার উপর এভাবে রাগ করার, হয়তো মেয়েটাও একটু ভুল বুঝে নিয়েছে আরকি, তাতে কি? সব বুঝিয়ে দিলে তো সে আবার বুঝেই যাচ্ছে,

নিজের উপরই বেশি রাগ হচ্ছে এবার রাহুলের, স্নেহাও হয়তো তার এই রাগে এতোক্ষণে কেদে মরছে, এতোটাই খারাপ রাহুল, সে তো প্রমিস করেছিলো স্নেহাকে কখনো কষ্ট দিবে না, দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মোবাইলটা হাতে এগিয়ে নিয়ে অন করে কল দিলো স্নেহার ফোনে, রিং যাচ্ছে!

হঠাৎ, ফোনের ওপাশ থেকে স্নেহার কান্নার ভয়েসে রাহুল! শব্দটা শুনতেই বাচ্চা ছেলের মতো ফুফিয়ে কেদে উঠলো রাহুল ও,

স্নেহা : আম সরি রাহুল! আ..আমার আপনাকে হার্ট করার কোনো ইন্টেনশন ছিলো না, আমি তো নেহার মেসেজ গুলো পড়ে মাথায় গুলিয়ে ফেলেছি,

– আ..আমার আপনার কথায় পুরো বিশ্বাস আছে, আ..আমি আসলে স্টুপিড একটা,

– আপনি যে শাস্তিটাই দিবেন আমি মেনে নেবো,কিন্তু প্লিজ এভাবে রাগ করে থাকবেন না..

রাহুল : শিসসসস!

– স্নেহা!

স্নেহা : হু!

রাহুল : আম সরি!

স্নেহা : [ কাদো সূরে ] আপনি কেনো সরি বলছেন! দোষ তো আমি করেছি ঐনেহার কথা গুলো মাথায় নিয়ে,

– বাট নাও ইউ ট্রাষ্ট মি আমি আর কক্ষনোই আপনাকে ভুল বুঝবো না রাহুল! প্রমিস!

রাহুল : [ মুচকি হেসে ] আই লাভ ইউ!

স্নেহা : আ..আই লাভ ইউ টু রাহুল! [ বলেই ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদতে লাগলো আরো ]

রাহুল : স্নেহা! প্লিজ ডোন্ট ক্রাই!

স্নেহা : [ ফুফিয়ে ] আ..আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে রাহুল! প্লিজ তাড়াতাড়ি ফিরে আসুন! আমি প্রমিস করছি আর কক্ষনোই আপনাকে ভুল বুঝবো না!

রাহুল : [ কাদো কন্ঠে ] ওকে রিলেক্স! আম কামিং

বলতেই হঠাৎ সামনে থেকে চোখের উপর গাড়ীর হলুদ ফ্লাশ লাইট এসে পড়লো, কান থেকে ফোনটা সরিয়ে রাহুল গাড়ীর স্টেয়ারিংটা আর ঘুরাতে পারলো না, সামনের ট্রাকের সাথে মুখোমুখি হয়ে ধুমড়েমুচড়ে গাড়ী দুই ডং খেয়ে আবারো সোজা হয়ে এক কোণে গাছের সাথে লেগে পড়লো, নিরিবিলি হাইওয়ে মানুষজন কেউই নেই, শুধু গাড়ীগোড়াই চলাচল করছিলো,

স্নেহার ফোনে টুট..টুট রিং কেটে যাওয়ার শব্দ বেজে উঠলো, বুকটা ধরে গেছে স্নেহার! মনটাও ছটফট করছে, নানারকম অহেতুক চিন্তাভাবনা সবই আসছে মাথার মধ্যে, তাও মনকে বুঝ দিয়ে বারবার রাহুলের ফোনে কল দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো,

___আর এইদিকে, মুখোমুখি সংঘর্ষ হোওয়া ট্রাকটাও কিছুদূর গিয়ে থামলো, ট্রাকের ড্রাইভার আর হেল্পার দুজনই তাড়াতাড়ি নেমে দেখছে রাহুলের গাড়ীটির দিক, গাড়ীর সামনের বনাট খুলে ধোয়া বেরুচ্ছে,

হেল্পার : মইরা গেছে নাকি কোনো বেরুইনা কেন? চলেন দেহি!

ড্রাইভার : মরতে যাছ? দেহছ না গাড়ীর বনাট খুইল্লা ধুয়া বেরুইতাছে, যে কুনো মুহুর্তেই গাড়ী ফুটবো!

__কিন্তু এই গাড়ীর ভেতর তো এখনো ছটফটাচ্ছে রাহুলের মতো জীবন্ত একটি লাশ, স্টেয়ারিং এ মাথা হেলিয়ে রেখেছে রাহুল, মাথা থেকে ঘাড়ে এসে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে অনবরত রক্ত!

হয়তো আজ এটাই প্রাপ্য ছিলো রাহুলের, স্নেহাকে কষ্ট দিয়ে কাদানোর শাস্তি, নয়তো ঝাড়ি দিয়ে স্নেহার হাত সরিয়ে চলে আসার শাস্তি, আর নয়তো স্নেহার সন্দেহের পেছনে লুকিয়ে থাকা সেই ভালোবাসাটিকে না বুঝার শাস্তি,

স্নেহার ভালোবাসা তো তার জন্য কখনোই মিথ্যে হবে না, এটা শুধু রাহুলের নিজেরই নয় তার ভালোবাসারই বিশ্বাস এবং আস্থা! স্নেহা তাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে, এতোটাই ভালোবাসে বলেই তো তাকে সন্দেহ করেছে, যেখানে সন্দেহ নেই সেখানে তো ভালোবাসা ও নেই! হ্যাঁ তবে একটু কষ্ট ও হয়, তবে এসব কষ্টকে আর কষ্ট মনে হচ্ছে না রাহুলের,কারণ স্নেহাই তো বললো,

– হোয়েন ইউ ডোন্ট হেভ পেইন ইন ইয়র লাভ, হোয়েন ইউ ডোন্ট হেভ স্মাইল ইন ইয়র পেইন! সো্ ইটস্ হার্ড টু লিভ ইন লাভ!

মুচকি হাসলো রাহুল, স্নেহার সব কথায় যে এতো ভালোবাসা মাখানো আছে এটাও প্রুভ করে দিলো আজ স্নেহা!

মৃদু হেসে ধীরধীরে চোখটাও স্থীর করে বন্ধ করে নিলো,শান্তি লাগছে হঠাৎ রাহুলের এই ভেবেই যে স্নেহাকে আর কখনোই কষ্ট দিবে না সে,শান্তি লাগছে এটাও ভাবতেই যে স্নেহার সাথে করা এই অভিমানই তার জীবনের শেষ অভিমান!

তবে তাও এই রাহুল, ভালোবেসে যাবে স্নেহাকে, মৃত্যুর শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত,

– এবং এর পরেও!

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে