Khatarnak Isq Part-05

0
2013

#Khatarnak_Isq.[Impossible Love]
#Sumaiya_Moni.
#Part_05.
_______________________
সকালে যে যার ব্যাগ গুছিয়ে বাসায় ফিরে আসে। বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে একটা বেজে যায়। সবাই এই সামার ভ্যাকেশন টা খুব সুন্দর ভাবে কাটিয়েছে। কারো কোনো শিকায়েত নেই। আলফি ফ্রেশ হয়ে টিভি অন করে বসে পড়ে নিউজ দেখতে। আলফি দেখতে চায় আজ কোনো মানুষের লাশ পাওয়া গিয়েছে নাকি। কিন্তু নিউজে এসব কিছু বলে না। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নিউজটি দেখে। অন্য চ্যালেন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে, কিন্তু এমন কোমো নিউজ আলফির নজরে পড়ে যায়। আলফি টিভি বন্ধ করে দেয়। হঠাৎ করে একদিনের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হলো কি করে? এর মধ্যে অন্যকোনো কারণ লুকিয়ে আছে। কিন্তু সেটা কি হতে পারে? কথা গুলো নিজের মনের মধ্যে আঁকে। হঠাৎ করে সব স্বাভাবিক হওয়ার কারণে আলফির মনে ঘটকা লাগছে।

আলফি এসব চিন্তা ভাবনা ছেড়ে বিছানায় বসে। আচমকা নিচ থেকে কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পেল। আলফি জানে ওর মামা বাসায় নেই। তাহলে নিচে কিসের শব্দ হলো তা দেখানর জন্য আলফি নিচে চলে এলো। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আলফি ড্রাইনিং টেবিলের উপর নজর পড়ে।সেখান থেকে একটি কাঁচের গ্লাস ফ্লোরে পড়ে ভেঙে টুকরো হয়ে আছে। তার পাশেই একটি বিড়াল চুপটি করে বসে আলফির দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। বিড়ালটি যে গ্লাসটি ভেঙেছে সেটা আলফি বুঝতে পারে। এই বিড়ালটিকে দেখে আলফির সেদিনের জঙ্গলের বিড়ালের কথা মনে পড়ে যায়। কিন্তু সেই বিড়ালটি ছিল পুরো সাদা হলেও লেজের কিছু অংশ কালো ছিল। আর এখন দেখা বিড়ালটি ছিল পুরো সাদা। বলতে গেলে দুধের মতো। আলফি বিড়ালটিকে দেখে কিছু একটা সন্দেহ করে।
গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-“কে তুমি? আসল রূরে ফিরে আসো?”

আলফির কথা বিড়ালটি শুনেই নিজ রূপ ধারণ করতে শুরু করে। চোখের পলকের মধ্যে বিড়াল থেকে মানুষে পরিনত হয়। সাদা শট পাঞ্জাবি ও কাবলি পায়জামা পড়া একটি সুদর্শন ছেলে আলফির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ছেলেটির চেহারা দিয়ে নূরের আলো বের হচ্ছে। আলফি দেখে অবাক হয় কিছুটা। কারণ এত সুন্দর যুবক আলফির নজরে আগে কখনো পড়েনি। ছেলেটি হালকা ঝুঁকে মিষ্টি কন্ঠে বলে,
-“আমি আফরান বিন ইয়ান। ইমতিয়াজ আমার আব্বাজান। আমি তাঁর পুত্র।”

-“আপনি এখানে কেন?”

-“আমি আপনার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। আব্বাজান বলেছে এখন থেকে আমি এখানে থাকব।”

-“কেন?”

-“শাহজাদী,আপনি যদি না চান আমি এখানে থাকি। তাহলে আমি চলে যাচ্ছি। আসলে আব্বাজান আপনার সাথে থেকে,আপনার দেখাশুনা করতে বলেছে। যেহেতু আপনি আমাদের শাহজাদী।”

আলফি কিছু বলতে গিয়েও বলল না।কথা ঘুরিয়ে বলে,
-“আপনি থাকতে পারেন এখানে। আমার কোনো সমস্যা নেই।”

-“শুকরিয়া শাহজাদী কায়রা। আপনি আমাকে ইয়ান বলে ডাকতে পারেন।”

-“হুম।”

-“আপনি নিশ্চয় আমার বড়।”

-“জী,শাহাজাদী। ”

-“তাহলে নাম ধরে ডাকা যাবে না। কারণ বড়দের নাম ধরে ডাকা যায়েজ নেই।”

-“আপনি শাহজাদী। আমি আপনাকে আমার নাম ধরে ডাকার অনুমতি দিলাম। দয়া করে আপনি না করবেন না।”

আলফি কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
-“ঠিক আছে।”

-“শুকরিয়া শাহাজাদী।”

-“আচ্ছা আপনি এখন বিশ্রাম নিন কামরায় গিয়ে।”

-“জী।” ইয়ান চলে যায় নিচের একটি কক্ষে।
আলফি চলে আসে ওর রুমে।
রুমে এসে ফোন হাতে নিতেই এনার ছয়টি মিসড কল দেখতে পায়। আলফি দ্রুর এনাকে কল দেয়।
এনা তড়িঘড়ি করে বলে,
-“কোথায় ছিলি আলফি। কতবার কল দিলাম।”

-“নিচে ছিলাম। শুনতে পাইনি। কি হয়েছে বল?”

-“আরে আমি একদম ভুলে গিয়েছি আজ আমার মম,ড্যাড এর Wedding anniversary. সকালে বাসায় এসে মমের কাছে জানতে পারি। এখন তারা কোনো আয়োজন করবে না বলেছে। কিন্তু আমি তাঁদের এক মাত্র সন্তান হয়ে যদি চুপ থাকি কেমন দেখায় বিষয় টা। তাই আলরেডি সব কিছুর আয়োজন শুরু করে দিয়েছি। কাছের কিছু আত্মীয় স্বজনদের ইনভাইট করেছি। এখন তুই সন্ধ্যার পর তাড়াতাড়ি চলে আছিস। না করিস না প্লিজ।”

-“আচ্ছা আসবো। ওদের বলেছিস?”

-“হ্যাঁ। বলে দিয়েছি।”

-“রাখ তাহলে।”

-“রাখি,তুই আসবি কিন্তু।”

-“আসবো আসবো।”

কথাটা শুনে এনা ফোন কেঁটে দিল। আলফি ফোন বিছানার উপর রেখে ভাবতে থাকে কোন ড্রেস পড়ে যাবে। আর কী গিফট দিবে তাঁদের। আলফি গিফটের ব্যাপার মামার উপর ছেড়ে দেয়। তাকে ফোন দিয়ে গিফটের কথা বলে।
__________________________
ভ্যাম্পায়ার কিংডম……

টেনিস বল নিয়ে খেলছে এলেন। বার বার দেয়ালের পিঠে মারছে,আর ক্যাচ ধরছে। এরোন ফোন হাতে নিয়ে কথা বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করে। ফোন কেটে বলে,
-“এলেন!”

-“বল।” কিছুটা তীক্ষ্ণ স্বরে উত্তর দেয় এলেন।

-“কি ব্যাপার,রেগে আছিস মনে হচ্ছে? ও,বুঝেছি কাল রাত থেকে তাজা ব্লাড খেতে পারিসনি তাই।”

এলেন চুপ। যার উত্তর এরোন পেয়ে যায়।
-” দোস্ত রেগে থাকিস না। আজ তোকে আমি নিজে তাজা ব্লাড খাওয়াবো।”

এলেন তারপরও কোনো কথা বলে না।

-“কী হয়েছে বলবি তো?”

-“নাথিং…।” বলেই বল ফেলে রুম ত্যাগ করে এলেন।

-“হলো কী বুঝলাম না।” বিড়বিড় করে বলে এরোন।
.
.
সন্ধ্যার সময়…

আলফি একাই আসে পার্টিতে। ইয়ানকে নিয়ে আসে না। আজ আলফি সিল্কের শাড়ী পড়েছে। তাঁর সাথে হালকা সাজ হেব্বি মানিয়ে ওঁকে। ভেতরে এসে গিফটের প্যাকেট এনার মম,ড্যাডের হাতে দিয়ে, তাঁদের উইস করে লিনাদের কাছে চলে আসে। ওদের কাছে এসে আলফি কিছুটা অবাক হয়। কারণ এনা,লিনা,ম্যারিও শাড়ী পড়েছে। খুশি হয়ে যায় চারজন। কথা বলতে থাকে একে অপরের সাথে। কিছুক্ষণ পরে সেখানে উপস্থিত হয় এলেন ও এরোন। তাঁদের কেও ইনভাইট করেছিল এনা।

আলফির চোখ পড়ে এলেনের দিকে। এলেনের নজরও আলফির উপর পড়ে। আলফি এলেনের দিকে ক্ষোভ নিয়ে তাকালেও। এলেনের চোখে কোনো রাগ,ক্ষোভ ছিল না। বরং আলফিকে দেখে মনে মনে বেশ খুশি হয়। এনা ওদের দুজনকে এক স্থানে বসতে দেয়। সামনে হালকা নাস্তা দেয় খাওয়ার জন্য। এলেন শুধু ড্রিঙ্কের গ্লাস হাতে নিয়ে পান করছে আর আলফির দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।

-“ওয়াও,এলেনকে আজ কত সুন্দর লাগছে। আমি তো পাগল হয়ে যাব।” খুশি মুডে বুকে হাত রেখে বলে ম্যারি।

জন পিঞ্চ মেরে বলে,
-“যাক,এখন এলেনের চেহারা ঠিক আছে চুল গুলো কালো করার কারনে। আগে তো লাল বানর,সাদা বানর দেখাতো।”

ম্যারি জনের বুকে গুঁতো দিয়ে বলে,
-“চুপ,এলেন যেই স্টাইল করুন না কেন। ওঁকে ভালো লাগে আমার কাছে। মুখ সামলে কথা বল।”

-“লেগেছে বুকে। ”

-“উঁফ! অন্য লোকের জন্য আমাদের মাঝে ঝগড়া হচ্ছে কিন্তু। চুপ কর।” আলফি রাগ নিয়ে বলে ওদের।

-“ওকে,চুপ।”

এনার কিছুক্ষণ পর ডাকদিয়ে সবাইকে নিয়ে যায়।কারণ এখন কেক কাঁটবে। ভালো ভাবে কেক কাঁটা হলো। সবাই প্রিজ,চামিচ হাতে কেক খেতে ব্যস্ত। এনা বক্সে গান অন করে দেয়। ফুল মিউজিক শুনে জন,জি-তাও আরো অনেকেই ডান্স করছে। এনা,ম্যারি,লিনাও ওদের সাথে ডান্স করছে। আলফি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। এলেন সবাইকে উপেক্ষা করে শুধু আলফির দিকে তাকিয়ে আছে। এই বিষটা সবার চোখে এড়িয়ে গেলেও আলফির চোখে এড়ায়নি। ভীষণ রাগ হচ্ছে আলফির। এভাবে তাকিয়ে থাকার কারণে বিব্রতবোধ করছে।
আর এদিকে এরোন রাগে নাক ফুলিয়ে লিনা ও জি-তাও এর দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ লিনা জি-তাও এর সাথে ডান্স করছে। যেটা দেখে এরোন ঠিক থাকতে পারছে না।

-“কোরিয়ানের বাচ্চা। দোস্ত আমাকে ধরে রাখ। আর নয়তো কোরিয়ানের বাচ্চাকে চুষে শেষ করে দিব।” মনে মনে এলেনের উদ্দেশ্যে কথাটা বলে।

এলেন এরোনের লাস্টের কথাটা শুনে ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকায়। এরোন দ্রুত বলে,
-“রক্ত চুষে,রক্ত চুষে খাব বলেছি।”

এলেন ওপর নিয়ে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। সামনে তাকাতেই অজানা রাগ এসে এলেনের মনে বাসা বেঁধেছে। কারণ,আলফি জনের সাথে কাপল ডান্স করছে। বার বার জন আলফির গায়ে টার্চ করছে। এলেন কিছুক্ষণ বসে থেকে এসব দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। ওঠে দাঁড়িয়ে ভিড়ের মধ্যে আলফির হাত টেনে জনের থেকে দূরে নিয়ে এসে হাত ছেড়ে চলে যায় পার্টি থেকে। এমন অবাক করা কাণ্ডে আলফি,জন ‘থ’ হয়ে যায়৷ একটু আগে যা হলো সব মাথার ওপর দিয়ে গেল ওদের। আলফির এখন বেশ রাগ হচ্ছে। এমন করার কোনো মানেই হয় না। ভাগ্যিস কেউ দেখেনি। যে যার মতো ডান্স করছে তাই। আগের বার ইচ্ছাকৃত ভাবে টার্চ করেছে। কিছু বলেনি। এবার টার্চ করলে প্রত্যেক টা টার্চের মুল্য দিতে হবে। মনে মনে ঠিক করে আলফি। আলফিও পার্টি ছেড়ে বাহিরে চলে আসে। এসে রাগী ভাব নিয়ে এপাশ ওপাশ তাকিয়ে এলেনকে খুঁজতে শুরু করে। কোথাও নেই এলেন। দু কদম সামনে যেতেই এলেন বাতাসের বেগে আলফিকে বাড়ির পিছনের দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। আলফি চমকে গিয়েও নিজেকে সামলে নিতে সক্ষম হয়। এলেনের দিকে কপাল কুঁচকে ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকায়। আর এলেন হিংস্র নজরে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে এতটা রাগ আলফির উপরে কেন হচ্ছে আদৌও কি তার কারণ এলেনের জানা আছে। নাকি অজানা?

আলফি আর টলারেট করতে পারে না। জোরে ধাক্কা মেরে এলেনকে পিছনে সরিয়ে দেয়। এলেন দু তিন কদম দূরে সরে গিয়ে আলফির দিকে অবাক চোখে তাকায়। আজ পর্যন্ত এলেনের শক্তির কাছে সবাই হার মানতে বাধ্য। আর সেখানে কি না একটি মেয়ে এলেনকে ধাক্কা মেরে দু তিন কদম দূরে সরিয়ে দিয়েছে। ভাবতেই এলেনের অবাক লাগছে।
এলেনের রাগ নিমিষেই উধাও হয়ে যায় আলফির ধাক্কার কারণে। কপাল কুঁচকে আলফির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
-“তুমি কে?”

-“ইনসান!”

-“নাহ! তুমি কোনো মানুষ নও।”

-“সেটা মানা,না মানা আপনার ব্যাপার। আমার নয়।”
বলেই চলে যেতে নিলে ফের বলে,
-“ভালো হবে যদি আপনি আমার কাছ থেকে দূরে থাকেন।”

চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই এলেন আলফির হাত ধরে ফেলে পেছন থেকে। হাত ঘুরিয়ে এনে আলফিকে এলেনের বুকে এনে ফেলে। আলফি এবার বেশ অবাক হয়। এলেন এক দৃষ্টিতে আলফির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।এলেনের নীল চোখের মনির দিকে যে একবার তাকায়,সে আর চোখ ফিরাতে পারে না। আলফিও একি কাজ করল। এলেনের চোখের দিকে তাকিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। কিন্তু চোখের মায়ায় পড়তে চায় না আলফি। এবারও ধাক্কা দিয়ে এলেনকে দূরে সরিয়ে দেয়।

রাগে আলফি আঙুল তুলে বলে,
-“লজ্জা হওয়া উচিত আপনার। আমার কাছ থেকে দূরে থাকতে বলেছি। কথাটা কি কান অব্ধি পৌঁছায় নি আপনার?”

-“নো! আর পৌঁছাবেও না। নজর পড়ে গেছে কারো উপর।” কথাটা বলতে বলতে এলেন মুচকি হেসে আলফির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে চলে যায়।

আলফি এলেনের কথার মানে ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। আরো চোখ টিপ মেরে কথাটা ভালো করে বুঝিয়ে গেছে। রাগে হাত মুঠো বদ্ধ করে নিমিষেই উধাও হয়ে যায়। ফিরে আসে বাসায়। গেটের ভেতরে প্রবেশ করতেই ইয়ানের মুখোমুখি হয়। ইয়ান নরম কন্ঠে বলে,
-“শাহজাদী রেগে আছেন কেন? কিছু হয়েছে কি?”

-“নাহ!” বলতে বলতে চলে আসে কক্ষে।

ইয়ান কিছু বুঝতে পারে না। তাই বিষটা নিয়ে ঘাটায় না।
.
.
.
.
.
.
Continue To………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে