Khatarnak Isq Part-06

0
1963

#Khatarnak_Isq.[Impossible Love]
#Sumaiya_Moni.
#Part_06.
_______________________
আলফি রাতে আর বাসা থেকে বের হয় না। ঘুমিয়ে যায়। সকালে ওঠে দেখে ইয়ান সব নাস্তা তৈরি করে রেখেছে। টেবিলে সব খাবার সাজিয়ে রেখেছে। আলফি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে এত পদের খাবার দেখে কিছুটা অবাক হয়। পিছন থেকে ইয়ার পানির জগ নিয়ে আসতে আসতে বলে,
-“গুড মরনিং শাহজাদী।”

আলফি ইয়ানের কথার উত্তর না দিয়ে পাল্টা জবাব দেয়,
-“এগুলো আপনি রান্না করেছেন?”

-“জী শাহাজাদী!”

-“কেন? আমি নিজে রান্না করতে পারতাম।”

-“আপনাকে এসব কাজে মানায় না। আমিই রান্না করব এখন থেকে। ”

আলফি কিছু বলার আগে জিনান নিচে নেমে আসে। চেয়ারে বসতে বসতে আলফি ও ইয়ানকে ডাইনিং টেবিলে বসতে বলে। আলফি আগে বসে। তারপর ইয়ান বসে। খাবার খাওয়ার সময় কেউ কারে সাথে কথা বলে না।আলফি খাওয়া শেষ করে উপরে চলে আসে। রেডি হয়ে কলেজের জন্য বের হয়ে যায়। কলেজে এসে গেট দিয়ে প্রবেশ করার সময় জেনিফার আলফিকে ইচ্ছা করে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়। আলফি মাটিতে বসে পড়ে। জেনিফার বান্ধবী রা খিলখিল করে হাসতে থাকে। আলফি বসা অবস্থায় চোখ রাঙ্গিয়ে জেনিফার দিকে তাকায়। এলেন প্রিন্সিপালের কক্ষে বসে এই দৃশ্য দেখছিল। রাগ হলেও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ,এলেন দেখতে চায় আলফি কী করে। ইয়ান মাঠের গাছটির পিছনে দাঁড়িয়ে দেখছিল। রাগ ইয়ানেরও হচ্ছে জেনিফার উপর। আলফি চোখ সরিয়ে ওঠে দাঁড়িয়ে গায়ের জামাটা একটু ঝেড়ে হাঁটা ধরল। জেনিফা পিছন থেকে আলফির গলার স্কাফ টেনে ধরে। এবার ইয়ান আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। বের হতে নিলেই ‘ঠাসস’ করে একটা শব্দ শুনতে পায়। ইয়ান থেমে যায়। মাঠে বসে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের নজর এখন জেনিফার উপর। জেনিফা গালে হাত দিয়ে এলেনের দিকে চক্ষু চোখে তাকিয়ে আছে। এলেন তাঁর চেয়ে আরো কঁড়া চোখে জেনিফার দিকে তাকিয়ে আছে। রাগী ভাব নিয়ে আঙুল তুলে বলে,
-“নেক্সট টাইম এমন ভুল করলে……..।” বাকিটা না বলে আলফির হাত ধরে নিয়ে আসে কলেজের ভেতরে। আলফি এখনো সকড আছে। এলেন যে এমন একটা কাজ করবে সেটা ওর ধারনা ছিল না।
আলফি পিছন থেকে এলেনের দিকে তাকিয়ে আছে। এলেন আলফিকে একটি নিরিবিলি গলিপথে নিয়ে হাত টেনে এলেনের মুখোমুখি নিয়ে এসে রাগ নিয়ে বলে,
-“প্রতিবাদ করতে শিখো। যে যা করবে মুখ বন্ধ রেখে……..।”

বাকিটা বলার আগে থামিয়ে আলফি বলে,
-“আমাকে জ্ঞান দেওয়ার কোনো দরকার নেই।” বলেই হাত ছাড়িয়ে নেয়। আবার বলে,
-“আপনাকে কে বলেছে জেনিফার গালে থাপ্পড় দিতে। আমি? কই না তো!…..নিজের লিমিট মতো থাকুন। আর আমার লাইনে এডজাস্ট হওয়ার ট্রাই করবেন না।” শেষের কথা বলে আলফি চলে যায়।

এলেন ফিক করে হেসে দেয়। মনে মনে বলে,
-“অলরেডি হয়ে গেছো।”

আলফি ক্লাস রুমে এসে বসতেই এনা,লিনা,ম্যারি ঠেসে ধরে একটার পর একটা প্রশ্ন শুরু করে দিয়েছে। আলফি পাগলেম হয়ে যায়। শেষে চিল্লিয়ে বলে,
-“তেমন কিছু নেই এলেন আর আমার মাঝে। এবার চুপ থাক তোরা।”

এই কথাটা বলার পরও এনা,লিনা,ম্যারি সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছে আলফির দিকে। আলফি ওদের তিন জনের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তোরা কি চাস আমি ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে যাই।”

ম্যারি বলে,
-“নাহ! বোস।”

-“আমার দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে তাকা।”

আলফির কথা মতো ওরা তিনজন সামনের দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ পর ক্লাস শুরু হয়ে যায়। ক্লাস করার সময় আলফির মনে হতে থাকে কেউ ওর আশেপাশে আছে। ও’কে কাছ থেকে দেখছে স্পর্শ করছে। কিন্তু কে সেটা ঠিকমতো বুঝতে পারছে না।
প্রতিটা ক্লাস করার সময় আলফির এমন ফিল হতে থাকে। লাস্টের ক্লাসের সময় আলফি সবার আড়ালে স্পেশাল পাওয়ার প্রয়োগ করে বুঝতে পারে এটা আর কেউ নয় এলেন। আলফি রাগীভাব নিয়ে স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে। স্যার বোর্ডে অংক লিখার সময় আলফি চট করে দাঁড়িয়ে গিয়ে ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে। স্যার আলফিকে নিষেধ করে না। যেতে বলে। আলফি বের হয়ে যায় ক্লাস রুম থেকে। ওয়াশরুমের সামনে আসতেই আলফি পিছন থেকে এলেনের কলার চেপে ধরে দেয়ালে ঠেসে ধরে। এলেন অদৃশ্য থেকে সঠিক রূপে ফিরে আসে। আলফির এমন ব্যবহারে এলেন বেশ মজা পাচ্ছে। আলফি চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
-“সমস্যা কী? অদৃশ্য হয়ে আমার সাথে মজা করা হচ্ছে?”

এলেন কিছু বলার আগে আলফির ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ‘হুঁশশ’ বলে চুপ করিয়ে দেয়। আলফির কানে কানে বলে,
-“কথা বোলো না। কেউ এদিকে আসছে।” এটা বলে এলেন আলফিকে নিয়ে দেয়ালের পিছনে লুকিয়ে পড়ে। দুজনকে এভাবে যদি কেউ দেখে ফেলে সমস্যা হতে পারে। তাই আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। কিন্ত আলফি আড়ালে লুকাতে চায় না। এখান থেকে বের হতে নিলে এলেন আলফির দু বাহু চেপে ধরে দেয়ালে ঠেস দিয়ে ধরে রাখে। আলফি রাগের চোটে কিছু বলতে যাবে ঠিক সেই সময় এলেন আলফির ঠোঁট জোড়া তাঁর আয়ত্তে করে নেয়। আলফি কিছু বলতে পারে না। চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়।পাথর হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর এলেন যখন বুঝতে পারে কারো পায়ের আওয়াজ আসছে না,চলে গেছে বুঝতে পারে। তখন এলেন আলফিকে ছেড়ে দু কদম দূরে সরে দাঁড়ায়। আলফি তখনো চোখ জোড়া বড়ো বড়ো করে রেখেছে। এলেন একটা ঠান্ডা মুড নিয়ে বলে,
-“ভুলটা কিন্তু আমার ছিল না। আগে কিন্তু তুমি আমাকে দেয়ালে ঠেসে ধরেছিলে। আর,তারপর যা হয়েছে সেগুলো হিসাবের খাতায় যোক হয়েছে।” আলফির চেহারার সামনে গিয়ে স্লো ভয়েসে ‘বাই’ বলে দ্রুত জাগা প্রস্থান করে এলেন। এলেন যাওয়ার পর আলফি ঠান্ডা রিয়াকশনে ক্লাস রুমে ফিরে আসে। চুপটি করে সামনের দিকে পলক হিন ভাবে তাকিয়ে রয়। এনা আলফির এমন রিয়াকশন দেখে দেয় জোরে ধাক্কা। এক ধাক্কায় আলফির হুঁশ ফিরে আসে।

-“হয়েছে টা কী? এক দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছিস কেন?” এনা বলে।

আলফি চোখের পকল ফেলে তখনকার কথা মনে করে। সামনে থাকা খাতা রাগে দু হাত দিয়ে মুচড়িয়ে ধরে।

-“বলবি তো কী হয়েছে? ”

-“ক্লাসে মন দে।” কথাটা বলে আলফি খাতা মুচড়ে ধরে রাখে।

এনা আর কিছু জিজ্ঞেস করে না। এলেন খুশি মুডে প্রিন্সিপালের কক্ষে ফিরে আসে। এরোন এলেনকে খুশি মুডে দেখে জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই এরোন নীল রশ্মি এলেনের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে মাইন্ড পড়ে ফেলে। এরোন হা হয়ে যায়। এলেন বুঝতে পারে এরোন ওর মাইন্ড পড়েছে। তাই এরোনের মুখটা বন্ধ করে বলে,
-“পারলে করে দেখা।”

এরোন বলে,
-“এটা অসম্ভব! প্রথম মিটে কিস…। নো নো নো।”

-“তাহলে আর কি করার। আমি প্রেম করি আর তুই বসে বসে দেখ।”

-“না।”

-“তাহলে তুইও যা,প্রেম কর।”

-“না।

-“তাহলে বসে বসে দেখ।”

-“না।”

-“তাহলে..মর তুই।”বলেই বের হয়ে যেতে নিলে এরোন এলেনের সামনে এসে বলে,
-“আমার একটা ব্যবস্থা করে দে লিনার সাথে ইটিশ-পিটিশ করার।”

-“দিবো নে। এবার চল ঘুরে আসি।”

-“কোথায়?”

-“আরে আয় না।”
____________________
আলফি বাসায় আসার পর ইয়ান আলফির রুমে আসার পারমিশন চায়। আলফি পারমিশন দেয় ইয়ানকে ভেতরে আসার। ইয়ান নরম কন্ঠে বলে,
-“শাহাজাদী,আমি যদি ভুল না হই। তাহলে এলেন নামের ছেলেটি ভ্যাম্পায়ার।”

-“হুম।”

-“তাঁর হাব-ভাব দেখে মনে হচ্ছে সে আপনাকে পছন্দ করে।”

আলফি কপাল কুঁচকে ইয়ানের দিকে তাকায়।বলে,
-“এত সব আপনার না বুঝলেও চলবে। আর আমি আমার কথায় অটুট আছি। শাস্তি ভ্যাম্পায়ার দের পেতেই হবে। সে এলেনই বা হোক না কেন।”

-“জী,শাহাজাদী আপনি ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে আসুন।”

-“হুম।”

ইয়ান চলে যাওয়ার পর আলফি গেট লাগিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। এক দৃষ্টিতে নিজের প্রতি ছবি দেখতে থাকে। আনমনে ঠোঁটে হাত চলে আসে আলফির। সাথে সাথে হাত সরিয়ে নেয়। নিজের কথায় অটুট থাকতে চায় আলফি। ভালোবাসা জীবনে জড়াতে চায় না। দূরে রাখতে চায়। অনেক দায়িত্ব আছে।
.
রাতে……

স্যাম তাঁর কক্ষে ছিল। হঠাৎ তাঁর রক্ত খাওয়ার নেশা জাগে। ফ্রিজ খুলে দেখে রক্তের ব্যাগ নেই। ব্লাড খেতে হলে এখন বাহিরে বের হতে হবে। স্যাম দেরি করে না। চলে আসে ক্লাবের সামনে। যে কোনো একটি মেয়েকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে জঙ্গলে নিয়ে যেতে হবে। ক্লাবের ভেতরে এসে মানুষের রক্তের গন্ধ পেয়ে রূপ পাল্টে যাচ্ছে স্যামের। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে একটি মেয়ের কাছে আসে। তাঁকে কোনোভাবে পটিয়ে অধিক মদ্যপান করিয়ে বাহিরে নিয়ে আসে। নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারে না। হাওয়ার বেগে জঙ্গলে নিয়ে আসে। চুলের মুঠি ধরে ঘাড়ে কামড় বসাতে যাবে তখনি আলফি বুকে জোরে লাথি মারে। স্যাম অনেকটা দূরে গিয়ে ছিটকে গাছের সাথে বারি খায়। আলফি ততক্ষণে মেয়েটিকে স্পেশাল পাওয়ার দিয়ে আড়াল করে ফেলে। আলফি ওর নিজের রূপ পরিবর্তন করে স্যামের কাছে এসে কলার ধরে উপরে জাগিয়ে ফেলে। স্যাম আলফির দিকে তাকিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। একি দেখছে? একি তাহলে শাহাজাদী কায়রা? কথাটা ভাবতে ভাবতে আলফি ততক্ষণে ছুঁড়ে দূরে ফেলে দেয়। হাওয়ার বেগে স্যামের কাছে এসে ঘুষি মারতে শুরু করে।
কলার ধরে আবারও দূরে ফেলে দেয়। এবার আলফি হাত নিচের দিকে নামিয়ে জ্বীনি তলোয়ার নিয়ে আসে। সামনের দিকে তাক করে। স্যামের দিকে ছুটে যেতে লাগল। স্যাম এমন দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে দু হাত দিয়ে মুখ ডেকে ফেলে।

তলোয়ার স্যামের বুকে গেথে দিতে যাবে তখনি এলেন এসে শক্তির মাধ্যমে তলোয়ার আঁটকে ধরে। আলফি বার বার চেষ্টা করছে তলোয়ার আগে বাড়াতে। কিন্তু পারছে না। ডানে তাকিয়ে দেখে এলেন হিংস্র নজরে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আলফি তোয়াক্কা করে না। তলোয়ার শক্ত করে ধরে অন্য পাশে সরিয়ে নেয়। ফের আঘাত আনতে যাবে আবারও আটকে ফেলে এলেন। আলফি রাগে তলোয়ার সরিয়ে জোরে চিৎকার দেয়। সেই চিৎকারের গতিতে এলেন দূরে ছিটকে পড়ে। এরি মাঝে আলফি গায়েব হয়ে যায়। এলেন হাওয়ার বেগে এসে দেখে মেয়েটি উধাও। চার দিক বাতাসের বেগে দৌঁড়ে খুঁজতে থাকে। কোথাও খুঁজে পায় না শাহজাদী কে। এলেন দৌঁড়ে এসে স্যামের কলার চেপে ধরে রাগী কন্ঠস্বরে জিজ্ঞেস করে,
-“কেন শাহজাদী তোকে মারতে চেয়েছিল? কী করেছিস তুই?”

স্যাম চুপ করে থাকে। এলেন চিল্লিয়ে বলে,
-“বল……!”

স্যাম ভয় পেয়ে কাঁপা কন্ঠে বলে,
-“আমি একটি মেয়েকে জঙ্গলে নিয়ে এসে রক্ত……। ”

বাকিটা বলার আগেই এলেন বুঝে য়ায়। রাগের বশে ভ্যাম্পায়ার রূপ ধারণ করে। এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে স্যামকে।তারপর আহত অবস্থায় স্যামকে ফেলে চলে যায়। স্যাম রক্তাক্ত অবস্থায় জঙ্গলে পড়ে থাকে। এলেন চলে আসে আলফির বাড়িতে। এলেনের সন্দেহ হচ্ছে আলফির উপর। আলফিও হতে পারে শাহজাদী। জানালার কাছে এসে দেখে আলফি ঘুমিয়ে আছে। এলেন এটা দেখে রাগের মাত্রা কমিয়ে দেয়। সন্দেহটা কমে যায়। চলে যায় সেখান থেকে। এলেন চলে যাওয়ার পর আলফি চোখ মেলে তাকায়। জঙ্গলে এলেনকে দেখার পর আলফি মেয়েটিকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এসে রুমে এসে বিছনায় কম্বল জড়িয়ে শুয়ে পড়ে। সরু নিশ্বাস ফেলে ঘুমিয়ে যায়। ইয়ান সবটা দূর থেকে দেখেছে। কিন্তু কিছু করেনি।
.
.
.
.
.
Continue To……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে