coffee & vanilla Part-09

0
2222

#coffee & vanilla
#part_9
#Arohi_Ayat


ঠাসসস করে চর পড়লো ফারহানের গালে যেটা আমিই অকে মেরেছি৷ ফারহান গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ আমি রেগে বললাম
– এই কথাটা কেন বললেন আপনি? আমি কি কোন রাস্তার মেয়ে নাকি যে একজনকে ছেরে আরেকজনকে ধরবো!! তাহলে এমনটা মনে হয় শুধু আপনিই পারবেন!! এতক্ষন আমি এই জন্যই আপানার পিছনে ঘুরছিলাম কারণ জানেন আমি কি ভাবছিলাম বলদের মত যে আপনি হয়তো সবার সামনে আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন না পরে একা আমার সাথে কথা বলবেন! আর আমি ত এটা মাথায়ও আনি নি যে আপনি আমাকে সত্যিই ইগনোর করছেন!!

একটু আগে,,,
অনেক্ষন ধরে দেখছিলাম ফারহান আমাকে দেখানোর জন্য ওই মিতিকার সাথে আমার সামনে দিয়ে ঘুর ঘুর করছিলো! তখন রেগে সবার সামনেই ফারহানের হাত ধরে একটা রুমে নিয়ে যাই৷ ফারহান বলল
– কি হয়েছে আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছো??

– আপনি কি করছেন আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না! আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ড থাকতে আবার আরেকটা মেয়েকে নিজের গার্লফ্রেন্ড বানিয়েছেন?

ফারহান বলল
– আমি তোমার মত না! যে বয়ফ্রেন্ড থাকতে আরেকটা বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে নিব!!

আমি ভ্রু কুচকে বললাম
– মানে কি?? আমি আবার কি করলাম?

ফারহান আমাকে সোজা উত্তর না দিয়ে বলল
– তুমিও দেখলাম মিতিকার মত বেরিয়েছো শেষে! আমি জানতাম না তুমি এমন তাহলে কখনোই তোমাকে আমি নিজের গার্লফ্রেন্ড বানাতাম কি তোমার মত মেয়ের সাথে ত কথাই বলতাম না! হ্যা আমি তোমাকে বলেছিলাম আমার গার্লফ্রেন্ড হতে তুমি প্রথমে মানো নাই কিন্তু পরে মেনেছো আমি জানো বলদের মত কি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ভালবেসে ফেলেছো কিন্তু আমি ভুল ছিলাম আর আমার দ্বারা আরেকটা ভুলও হয়েছে সেটা হলো এই ৫দিনে যে আমি নিজে তোমাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম!!!

ব্যাস এর পরেই চর পড়লো ফারহানের গালে!! আমি আবার বললাম
– এখন আপনি আগে বলেন কি করেছি আমি যে আপনি আমাকে এইসব কথা বলছেন? আর আপনি কেমন ওইদিন আমাকে এইসব সারপ্রাইজ দিয়ে তারপর আমাকে না বলেই চলে এলেন! এভাবে চলেই যখন যাওয়ার ছিল কেন করেছেন এত কিছু আর যখন আমি জিজ্ঞেস করছিলাম আপনি যাবেন না? তখন হাসলেন কেন? যানেন এত কিছু করার পরেও আমি আমার মাথায় একটা খারাপ কিছু আনি নি আপনার নামে,,যে গুলো এখন আপনি বললেন আমার নামে!!! আমি একটা আশায় ছিলাম যে আমি লন্ডন আসলে হয়তো আপনি আমাকে বলবেন যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন!

ফারহান রেগে বলল
– ও তাহলে এই আরহানের সাথে কি চলছে তোমার?? আমি যেতেই আরহানকে নিজের বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে নিয়েছো? আমি যাওয়ার পর একবারো কাউকে জিজ্ঞেস করেছো আমি এসেছি কেন? যাই হোক,,এই লন্ডনে তোমাকে প্রথম দেখে আমি চমকে গেছিলাম আর সবচেয়ে বেশি চমকেছি এটা দেখে যে তুমি আরহানের সাথে! আমি ত ভেবেছিলাম তোমরা হয়ত বিয়ে করে ফেলেছো!! এর পরেও তোমার মত মেয়েকে ইগনোর করবো না ত কি??

– লিসেন!! আরহান ভাইয়া শুধু মাত্র আমার ভাইয়া যাকে আমি আমার আপন ভাইয়ের থেকেও বেশি মানি!!! জানেন আমি কি দোয়া করি যদি আরহান ভাইয়া আমার আপন ভাই হতো তাহলে আমি কত লাকি হতাম! আর আমার সেই ভাইকে নিয়ে আপনার মাথায় এইসব বাজে চিন্তা ভাবনা এসেছে?!!আর তাই বলে আপনি মিতিকা কে আবার আপনার গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলেছেন?? আর ওইদিন এইভাবেই চলে এসেছেন কেন? এর থেকে যদি আমাকে না কোন আশা ভরসা দিয়ে চলে যেতেন তাহলে কি আপনার ভাল লাগতো না? আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি দেখেই ত বেহাইয়াদের মত লন্ডনে আসার পরে আপনার পিছে ঘুরছি নাহলে ত কবেই আপনাকে থাপ্পড় মেরে চলে যেতাম!! আমাকে চিনেন ত আমার মত মেয়ে আপনাকে ঘুরে ফিরে ২টাকারও দাম দেয় না!!

– লিসেন ওইদিন আমি তোমাকে আশা ভরসা দিয়েছি চলে যাওয়ার জন্য না! আমি তোমার সাথে যে চিটিংবাজি করে চলে এসেছি এমন কিছুও না!! তুমি চলে যাওয়ার পর আমার কল এসেছিল যে আমাদের কম্পানিতে অনেক বড় প্রব্লেম হয়েছে আর বাবা সেখানে একা ছিল বাবা বাংলাদেশে আসে নি! আমার বাবা হ্যার্ট আট্যাক করেছিল তাই কাউকে কিছু না বলেই সেখান থেকে ব্যাক করেছিলাম!! এর পর থেকে এই ২মাস ধরে কম্পানি সামলাবো নাকি বাবাকে সেটাই বুঝতে পারছিলাম না আর আমার ভাইও এই কাজেই ব্যাস্ত!!! আর তুমি কিছু না ভেবে না চিন্তে এইসব বলছো!! সত্যিই আমি তোমাকে যেমন ভেবেছিলাম তুমি তেমন না!

– you know what!! আপনার সাথে আমি আর কথা বলতে চাই না!!! আপনি আসলেই একটা ফালতু লোক আপনি যার তার কথা না বুঝে না শুনে উলটা পালটা ভেবে ব্যাস তাকে ইগনোর করা শুরু করে দেন!! এই জন্যই আপনি ফালতু অনেক বড় ফালতু আপনাকে না মিতিকার সাথেই মানায়! আপনি ওকেই ডিসার্ভ করেন!!

এটা বলে চলে আসতে নিলে ফারহান আমার হাত শক্ত করে টেনে ধরলো৷ আমি ছারানোর চেষ্টা করে বললাম
– আহ্ ছারেন!

ফারহান আমাকে হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের কাছে এনে আমার ঠোটে জোরে কামর দিল৷ আমি এক ধাক্কায় ফারহানকে দূরে সরিয়ে বললাম
– আমি আর কখনোই আপনার এই চেহারা দেখতে চাই না!! কালকে চলে যাব আমি এখান থেকে!!

এটা বলে চোখের পানি মুছে রেগে সেখান থেকে চলে গেলাম৷ আরহান ভাইয়াকে লাইসাকে কিছু না বলেই পার্টি থেকে চলে গেলাম৷ এই অচেনা দেশে রাতের বেলা তাও আবার একা বেরিয়েছি এটার জন্য ভয় করছে কিন্তু আমি আর ওই পার্টিতে ফিরে যেতে পারবো না!! কাদতে কাদতে হাটতে হাটতে রাস্তার পাশেই একটা বসার যায়গায় বসে পড়লাম৷ ইচ্ছে করছে এখনি এখান থেকে চলে যাই! অনেক্ষন ধরে সেখানেই বসে আছি রাস্তার পাশ দিয়ে অনেক মানুষ যাচ্ছে আর আমার দিকে তাকাচ্ছে! একটু পরে কোথা থেকে যেন রিতু এসে আমার পাশে বসলো৷ আমি ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
– তুই এখানে কেন?

রিতু নিচের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি আবার বললাম
– যা তুই এখান থেকে তোর আর আমার মজা নিতে হবে না আমি আর কখনোই আরহান ভাইয়ার আশে পাশেও যাব না!

এটা বলে কেদে দিলাম৷ রিতু আমার হাত ধরে বলল
– না রাইসা প্লিজ আমাকে ভুল বুঝিস না! আমি এখানে তোর মজা নিতে আসি নি আমি তোকে সরি বলতে এসেছি!

– ওহ্ আচ্ছা এখন সরি বলতে এসেছিস কেন?

– আ’ম সরি রাইসা আমি তোর সাথে আগে যাই করেছি,, আমি জানি এর জন্যই তুই আমাকে পছন্দ করিস না! সরি ইয়ার!

– ছার! আমি বুঝলাম না সবসময় এই একি সময় সবাই আমার সাথে এমন করে কেন? যেকোনো সময় আমি একটা দুঃখ পেলে সবাই একসাথে আমাকে আরও দুঃখি করে দেয়! ওইবার যখন আমার মা মরেছিল তখন সবাই আমাকে আরো স্বান্তনা না দিয়ে সবাই আমার সাথে মজা নিয়েছে এমনকি তুইও!! এর জন্যই আজকে তুই আমার চোখে এত নিচে পরে গিয়েছিস!

রিতু আমাকে জোরিয়ে ধরে বলল
– প্লিজ রাইসা আমাকে মাফ করে দে আমি মন থেকে তোর কাছে মাফ চাইছি! প্লিজ আমরা কি আগের মত ফ্রেন্ড হতে পারি না? আ’ম সরি!

আমি রিতুকে ধরে অনেক কান্না করলাম এই সময় একজনকে আমার প্রয়োজন ছিল৷ আর রিতু আগে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল আমাদের মাঝখানে কিছু মিসান্ডার্সটেন্ডিং এর কারণে আমাদের ফ্রেন্ড শিপটা ভেঙেছে!!


পরের দিন,,,

আজকেই আমরা সবাই চলে যাবো! এখানে একটা আশা নিয়ে এসেছিলাম যে ফারহানকে আমি বলে দিব যে আমি ওকে ভালবাসি! কিন্তু ওর প্রতি এখন মনে ঘৃনা নিয়ে ফিরছি!! আর আমি এখন আরহান ভাইয়ার ধারে কাছেও যাব না উনি কিছু করে নি কিন্তু তবুও উনার সাথে দেখলে যখন সবাই উলটা পালটা মনে করে তাহলে না যাওয়াই ভালো! আমি আমার ব্যাগ গুছাচ্ছিলাম আর আমার সাথে লাইসা হেল্প করছে! লাইসা বলল
– রাইসা! তুই ঠিক আছিস!!?

– হুম!

লাইসা বলল
– রাইসা! কালকে তুই পার্টি থেকে রুমাইশার সাথে দেখা না করে চলে এসেছিস! আর আজকে আমরা চলে যাচ্ছি! কালকে তুই চলে যাওয়ার পর রুমাইশা অনেক কান্না করেছিল তোর জন্য ! এর পরে ওর সাথে আর কবে দেখা হয় তুই কি একবার ওর সাথে দেখা করে যাবি না? ও ত তোর ছোট বেলার ফ্রেন্ড!

আমি তারাতাড়ি করে ব্যাগ গুছিয়ে লাইসাকে বললাম
– আমি ভুলে গিয়েছিলাম লাইসা! আমি রুমাইশার সাথে দেখা করতে চাই!

– কিন্তু এখন আমাদের হাতে মাত্র ৩০ মিনিট সময় আছে এর পর সবার এয়ারপোর্টে চলে যাবে তুই এখন,,,,,

– হ্যা,,,এখন প্লিজ আমি তারাতাড়ি করে ওর সাথে দেখা করবো আর চলে আসবো! তুই আমার সাথে চল!

– আচ্ছা চল! আরহান ভাইয়াকে বলে যাই!
– না দরকার নেই! চল আমাদের শুধু মাত্র ১০ মিনিট লাগবে! তারাতাড়ি চল!

আমি আর লাইসা গেলাম রুমাইশাদের বাসায়! দরজার কলিং বেল বাজাতে রুমাইশা এসে দরজা খুলে দিল৷ আমি তারাতাড়ি ওকে জোরিয়ে ধরে কেদে দিলাম৷
– রুমাইশা! আমি চলে যাচ্ছি এর পর তোর সাথে আর কবে দেখা হয় আমি জানি না! কিন্তু আমাকে মাফ করে দিস!
– রাইসা প্লিজ তুই আমার ছোট বেলার ফ্রেন্ড!
আমি রুমাইশাকে ছেরে বললাম
– কে বলেছে তোকে এত দূরে বিয়ে করতে? আমাদের থেকে এত দূরে চলে গেলি তুই! থাক তাহলে!!আমাদের কথা মনে করারও কোন দরকার নেই!
– রাইসা প্লিজ! আয় আগে ভিতরে!
লাইসা বলল
– না আমাদের কাছে এত সময় নেই আমরা এখনি এয়ারপোর্টে রওনা দিব!
আমি রুমাইশাকে বললাম
– চলে যাই আমি!
– রাইসা প্লিজ তোর খেয়াল রাখিস!
আমার হাত ধরে বলল৷ এরপর আমরা দুইজন দুইজনকে জোরিয়ে ধরে কেদে দিলাম৷ লাইসা বলল
– রুমাইশা তারাতাড়ি চল আমাদের কাছে টাইম নেই!
রুমাইশাকে বায় বলে আমরা তারতাড়ি চলে আসতে নিলে হঠাৎ একটা গাড়ি এসে আমাদের সামনে দাড়ালো৷ গাড়িতে ফারহান বসে ছিল৷ আমি আর লাইসা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি৷ ফারহান গাড়ির গ্লাস খুলে বলল
– আসো আমি তোমাদের এয়ারপোর্টে দিয়ে আসি!
আমি রেগে কিছু না বলেই লাইসার হাত ধরে সেখান থেকে চলে আসতে নিলে ফারহান আবার চিল্লিয়ে বলল
– লিসেন রাইসা! এখন আমার সাথে না গেলে লন্ডনই থেকে যেতে হবে কারণ ওরা চলে গেছে সবাই এয়ারপোর্টে! আর আমার না এত টাইম নেই তোমাদের পিছনে ব্যায় করার মত! সো যেতে চাইলে তারাতাড়ি আসো না হলে আমি চলে যাই আর তোমরা দেখো তোমরা কি ভাবে যাবে!! আর এইটা তোমাদের অচেনা দেশ রাইট?! এখানে ত আর তুমি একা একা যেখানে ইচ্ছে যেতে পারবে না!
লাইসা আমার হাত ধরে বলল
– প্লিজ রাইসা চল! না হলে দেরি হয়ে যাবে!!

চলবে,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে