coffee & vanilla Part-07

0
2179

#coffee & vanilla
#part_7
#Arohi_Ayat


আজকে ২০ দিন হয়ে গেছে রুমাইশার বিয়ের৷ সেইদিন বাসায় এসে বাবার সাথে কিছুক্ষন কথা বলার পর আর ধরে রাখতে পারছিলাম না,, বুক ফেটে কান্না আসছিলো আর গলা ধরে আসছিলো৷ ওয়াশ্রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে কাদতে হয়েছে যেন বাবা না দেখে ফেলে৷ আমি কখনো কোন বিষয়ের জন্য কান্না করি নি শুধু মাত্র ব্যাথা পেলেই ভ্যা করে কেদে দিতাম এছাড়া সব বিষয়ে আমি যথেষ্ট স্ট্রং এত সহজে কেউ আমাকে কাদাতে পারে না৷ আমি জানি না এত কান্না আসছে কেন? ফারহান শুধু এখানে ৫দিনের জন্য ছিল,, আর এই ৫দিনই আমার ফারহানের গার্লফ্রেন্ড হয়ে থাকার কথা ছিল যেটা আমি নিজেই বলেছিলাম ফারহানকে যে আমি এই কয়েকদিনের জন্যই ওর গার্লফ্রেন্ড হবো এর পর ওকে ভুলে যাবো,, ও ওর লাইফে আর আমি আমার লাইফে!!! আর আজকে ফারহানের যাওয়ার কথাই ছিল তো চলে গেছে শেষ কাহিনী এতে এত দুঃখী হওয়ার কি আছে আমরা বুঝলাম না আমার কান্না আসছে কেন? ফারহানের সাথে আমার পরিচয় কি ৫ বছরের নাকি? শুধু মাত্র ৫দিনের আর এই ৫দিনের পরিচয়ের একটা মানুষের জন্য আমি কাদছি কেন? আমি বলেছিলাম ফারহান যখন চলে যাবে আমি ওকে ভুলে যাবো কিন্তু মনে হচ্ছে যেন এই ৫টা দিনের কথা আমি জীবনেও ভুলতে পারবো না!! আর ওইদিকে ও কি আমাকে ভুলে গেছে? যাবেই ত!! কিন্তু এখন আমার এই অবস্থার কারণ শুধু মাত্রই ফারহান! সব দোষ ওর,,,ও যখন চলেই যাবে কি দরকার ছিল আমাকে এত আশা ভরসা দিয়ে যাওয়ার? কি দরকার ছিল আমাকে ডেকে এত অবাক করিয়ে দেওয়ার? কি দরকার ছিল আমাকে আমার এত গুলো ছবি দেখানোর যা ও লুকিয়ে তুলেছে? কি দরকার ছিল এমন কথা বলার? আর আমি যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি চলে যাবেন নাকি তখন এমন ভাবে হাসার কি দরকার ছিল?? এই জন্যই ত আমি ভেবেছি ও হয়ত যাবে না!! ফারহান এইভাবেই চলে যেতো আমাকে কিছু না বলে তাহলে হয়তো এত কষ্ট লাগতো না কিন্তু যাওয়ার আগে আমাকে এত সারপ্রাইজ করার কি দরকার ছিল?? আমি এখন কি করবো বুঝতে পারছি না!! হঠাৎ করে আমার হাত লেগে শ্যাম্পুর বোতলটা পরে যেতে বাবা বাহির থেকে দরজা বারি দিয়ে বলল
– কি হয়েছে রাইসা? পরে গেলি নাকি আবার?

আমি তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলিয়ে বললাম
– আব,,,,না বাবা! শ্যাম্পুর বোতল পরে গেছে!!

– আচ্ছা,, তুই ফ্রেশ হয়ে আয় তোর খাবার রেডি আছে!

আমি তারাতাড়ি মুখ ধুয়ে ভালো মত কান্না থামিয়ে মুখ মুছে দরজা খুলে বললাম
– বাবা,, আসার সময় আন্টির বাসা থেকে খেয়ে আসছি এখন খিদা নেই!


আজকে ২০ দিন হয়ে গেছে,,,এই ৫দিনেও এত বিরক্তি ফিল করি নি ফারহানের জন্য যেমনটা এখন ফারহান নেই বলে করি! এখন আমি নিজেও জানি না কেন যেন অনেক তারাতাড়ি বিরক্ত হয়ে যাই আগে ত রাগি ছিলাম এখন আরও বেশি রেগে যাই! আবার আমার সামনে এসে কেউ ফাইজলামি করলেও ভাল লাগে না শুধু একাই বসে থাকতে ইচ্ছা করে!! এখন আবার কলেজে যাই আর সেখানে লাইসার সাথে দেখা হলেই লাইসা একটু আমাকে ফারহানের কথা জিজ্ঞেস করলেই এত পরিমান রেগে যাই যে কি বলবো! তাই লাইসা এখন আর ফারহানের কথা বলেও না৷ লাইফটা আগের মত ত হয়েছে কিন্তু অনেক কিছুই মনে হয় যেন বদলে গেছে কিন্তু আসলে কিছুই বদলায় নাই আমি নিজেই একটু বদলে গেছি!!

কলেজের মাঠে বসে আছি লাইসা আর আরহান ভাইয়ার সাথে৷ আমি রুড চেহারা নিয়ে বসে আছি৷ লাইসা আর আরহান ভাইয়া কথা বলছিলো আমাকে এইভাবে দেখে আরহান ভাইয়া লাইসাকে জিজ্ঞেস করলো
– ওর কি হয়েছে?
– আরে ফারহান চলে গেছে তাই!
– ফারহান চলে গেছে তাতে ওর কি?
– আমার মনে হয় ও ফারহানকে ভালোবসে তাই,,,,,,!
লাইসার কথার মাঝখান দিয়ে আমি হঠাৎ রেগে গিয়ে বললাম
– লাইসা!! এত কথা কেন বলিস তুই না শুনে না বুঝে?! তোকে বলিছি না ফারহানের নাম নিবি না! আর ভাইয়াকে কি বলছিস এইসব? তুই জানিস আমি ওকে ভালবাসি? এত পাকনামি কেন করিস!?

লাইসা চুপ হয়ে গেলো৷ আমাকে এভাবে দেখে আরহান ভাইয়া বলল
– রাইসা!! কি সমস্যা তোর?? এমনই করবি এখন থেকে? এত কিসের বিরক্তি তোর এত কিসের রাগ?? আর যেটা সত্যি সেটা বলেছে ও আমাকে কি হয়েছে!? আগে ত এমন করতি না তুই এমন হুটহাট রেগে যেতি না তাহলে এখন কি হয়েছে? আরেকবার যদি আমার সামনে এভাবে দেখেছি তোকে!!?

আমি চুপ করে বসে আছি৷ ভাইয়া আবার বলল
– চল! তোর মন ঠান্ডা করতে হবে,, তোকে এই ফারহান টারহান ভুলাতে হবে! চল তুই আমার সাথে!

এটা বলে আমার হাত টেনে উঠিয়ে নিজের সাথে নিয়ে গেলো সাথে লাইসাও গেলো৷ আমি ভাইয়ার উপরে কিছু বলতে পারবো না তাই চুপ করে গেলাম৷

আজকে সারাটা দিন আমারা ৩জন টোটো করে ঘুরে বেলাম৷ সারাটা দিন ঘুরেছি আজকে যেখানে যেতে ইচ্ছে করেছে সেখানেই গিয়েছি৷ ভাইয়া আর লাইসা পুরো চেষ্টা করেছে আমাকে হ্যাপি করার আর আমিও সেটা বুঝতে পেরেছি৷ আরহান ভাইয়া অনেক বেশি ভালো এইটা ত আমি আগেই জানতাম কিন্তু আজকে সারা দিন ভাইয়ার সাথে ঘুরার পর মনে তার জন্য আরো রেস্পেক্ট বেরে গেলো৷ সন্ধ্যার সময় আমরা রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম তখন হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো কিন্তু আমরা দৌর দিলাম না আমরা ভিজে ভিজেই যাচ্ছিলাম অনেক বেশি ভাল লাগছিলো এই মোমেন্টা! বৃষ্টিতে ভিজে বাসার নিচে আসার পর ভাইয়া বলল
– কেমন লেগেছে তাহলে আজকের দিনটা?

আমি খুশি হয়ে বললাম
– অনেক বেশি ভালো!

– দেখ তোর লাইফ তুই ইচ্ছে করলেই ওইসব বাদ দিয়ে নিজের খুশি দেখতে পারিস! আজকে তোর অনেক ভাল লাগছে না নিজেকে এইভাবে খুশি দেখে?! তাহলে কেন নিজের মনের ভালো লাগা বাদ দিয়ে শুধু শুধু খারাপের কথা ভেবে মন মরা হয়ে বসে থাকবো?! of course সব সময় এই দিকটা দেখবো যে আমি খুশি হবো কিভাবে? কিভাবে মনকে ভালো ফিল করাবো! কত মানুষ যে যায় আসে না আমাদের এতটুকু লাইফে এর জন্য কি ওইসব মনে রেখে দুঃখী হতে হবে নাকি? যদি এমনই হতো তাহলে দুনিয়ার প্রত্যেক্টা মানুষই এমন আগের কথা মনে রেখে মন মরা হয়ে থাকতো,,কারণ দুনিয়ায় সব মানুষেরই একটা না একটা দুঃখ থাকেই!!! আর শেষ একটা কথা বলবো আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে!!!

আমি বড় একটা নিশ্বাস ছেরে মুচকি হাসলাম আর তার মানে হলো আমি বুঝতে পেরেছি ভাইয়ার কথা!! তারপর আমি ওদের দুইজনকে বায় বলে উপরে চলে গেলাম৷ সিরি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে চোখ দিয়ে দুই ফোটা পানি পরলো৷


১মাস পরে লন্ডনে,,,,,

আহমেদ ইন্ডাস্ট্রির নিচে অনেক ভির জমে আছে৷ অনেক সাংবাদিকরা দাঁড়িয়ে আছি৷ হঠাৎ এই ভিরের মাঝখান থেকে বের হলো ফারহান! চার পাশে secretary! আর ফারহান চোখে একটা কালো সানগ্লাস পড়া আর কালো কোর্ট পড়া আজকে পুরাই বিজনেস ম্যান মনে হচ্ছে! ফারহান বের হয়েই সোজা গাড়িতে ঢুকে গেলো৷ কারো কোন প্রশ্নের উত্তরই দিল না৷ অনেক মিডিয়ারা দাঁড়িয়ে আছে এখনো৷ ফারহান ড্রাইভার কে বলল তারাতাড়ি এখানে থেকে যেতে৷ ফারহান গাড়ি দিয়ে যাচ্ছিলো হঠাৎ ফারহান পাশে তাকাতে ফারহান প্রথমে ওর সান গ্লাসটা খুলে তারপর গাড়ির গ্লাসটা খুলল৷ গাড়ির গ্লাস খুলতে ফারহান একেবারে পরিষ্কার দেখছে যে রাইসা ওইখানে দাঁড়িয়ে আছে৷ ফারহান ওর ড্রাইভারকে বলল
– স্টপ দি কার!!

গাড়ি থামাতে ফারহান দূর থেকে দেখছে রাইসা সেখানে দাঁড়িয়ে আছে৷ ফারহান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে৷ একটু পরে ফারহান দেখলো আরহান এসে রাইসার পাশে দাড়ালো৷ রাইসা আরহানের হাত জোরিয়ে ধরে আরহানের দিকে তাকিয়ে হাসলো৷ ফারহান এখনো শকড এ আছে যে রাইসা এখানে কি করছে? ফারহান আবার ওর চশমা পরে ড্রাইভারকে বলল
– জাস্ট গো!!

চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে