মনেরও গোপনে পর্ব-২৪+২৫

0
457

#মনেরও_গোপনে
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_২৪
(প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)

” আপনি থাকতে আমারে ডাকলেন ক্যান ভাই? ”
” কথা পরে বলো আগে পাল্টে দাও প্লিজ,ঠান্ডা লেগেছে খুব ওর। আমারই ভুল ড্যাম ইট!”
রুদ্র নিজের উপর রেগে গেছে খুব। কেনো যে তখন বৃষ্টিতে ভিজতে যাওয়ার কথা বললো! মিহির জন্য আলমারি থেকে থ্রিপিস বের করে দিয়ে রুদ্র ওয়াশরুমে গিয়ে ভেজা জামাকাপড় পাল্টাতে গেলো। সুমি মিহির জামাকাপড় পাল্টে পাশে বসে হাত ও পায়ের তালুতে ঘষা দিচ্ছে। একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেছে মিহির শরীর। সুমি বেশ ভরকে গেছে বটে। রুদ্র ওয়াশরুম থেকে বের হতেই সুমি ভয় জড়সড়ভাব করে বললো,
” ভাই আপার কী হইছে! এক্কেরে সারা শরীল ঠান্ডা হইয়া গেছে। ”
” বৃষ্টিতে ভিজেছে এজন্য। তুমি এখন যাও আমি সামলে নিবো। চিন্তা করতে হবে না। ”
” আইচ্ছা ভাই লাগলে ডাক দিয়েন আবার। ”
সুমি নিঃশব্দে ঘর ত্যাগ করলো। রুদ্র মিহির পাশে বসলো। মিহির চোখ বন্ধ কিন্তু ঠোঁটগুলি কাঁপছে। রুদ্র মিহির গায়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে কপালে হাত রেখে তাপমাত্রা বোঝার চেষ্টা করছে। শরীরে তেমন তাপ বৃদ্ধি পায়নি উল্টো ঠান্ডা হয়ে আছে। রুদ্র ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত একটা বেজেছে। মিহিকে আরো ভালো করে কম্বল দিয়ে ঢেকে দিয়ে ঘরে পায়চারি করতে শুরু করলো। দেখে তেমন কিছু মনে হচ্ছে না শুধু শরীরের তাপমাত্রা কমে গেছে ঠাণ্ডায়।
” মা….”
মিহি অস্ফুটে কিছু বলতেই রুদ্র তড়িৎ গতিতে মিহির পাশে বসে।
” মিহির দানা? এই মিহির দানা? কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোমার? ”
” ডাক্তার সাহেব… ”
মিহির মুখে “ডাক্তার সাহেব ” ডাকটা শুনে কেমন ভালো লাগলো রুদ্রর। কপালে হাত রেখে রুদ্র হেসে বললো,
” হ্যাঁ বলো।”
” আমার… ”
” হ্যাঁ তোমার কী?”
” খু…”
মিহি কথা বলতে পারছেনা ঠিকমতো। শরীর কাঁপছে রীতিমতো ঠান্ডায়। অবস্থা বেগতিক দেখে রুদ্র মিহির কম্বলের মধ্যে ঢুকে জড়িয়ে ধরলো। মিহি রুদ্রর শরীরের উষ্ণতায় একটু নড়েচড়ে উঠলো। হিমশীতল শরীরের পাশে হঠাৎ রুদ্রর উপস্থিতি তাপের সঞ্চার মনে হলো মিহির অবচেতন মনের। রুদ্র মিহির হাতের তালুতে ঘষা দিচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে একটু গরম হয় মিহির হাত। শীতের মধ্যে কেনো যে বৃষ্টিতে ভিজতে গেলো এই কারণে বারবার নিজের উপর ক্ষেপে যাচ্ছে রুদ্র।
” ডাক্তার সাহেব! ”
আনমনে তাকিয়ে ছিলো রুদ্র। মিহির ডাকে তার দিকে তাকালো সে। অল্প অল্প চোখ মেলে তাকিয়েছে মিহি।
” কেমন লাগছে এখন?”
রুদ্র আস্তে করে সরে যেতে চাইলো মিহির কাছে থেকে। কিন্তু মিহু দূর্বল শরীরে জড়িয়ে রাখতে চাইলো রুদ্রকে।
” ছেড়েই যখন যাবেন তাহলে কাছাকাছি এসেছিলেন কেনো?”
” তোমার শরীর, মাথা কোনোটাই ঠিক নেই এখন।”

মিহি রুদ্রর পিঠে এত জোরে আঙুল দিয়ে ধরেছে যে রীতিমতো নখের কারণে ব্যথা পাচ্ছে সে। কিন্তু রুদ্র কিচ্ছু বললো না। মিহি আধো আধো চোখে রুদ্রর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলো। রুদ্র চমকালো,মেয়েটার কী হয়েছে! কিন্তু রুদ্র কিছু বলার আগেই মিহি রুদ্রর ওষ্ঠ নিজের দখলে করে নিলো। মুহুর্তেই কেঁপে উঠলো রুদ্র। মিহি এখন হুঁশে নেই বলে ছাড়াতে চাইলো সে। কিন্তু মিহির আবেদন অগ্রাহ্য করার সাধ্য হলোনা তার। মিহিকে জড়িয়ে ধরে নিজেও গভীর চুম্বনে লিপ্ত হলো প্রিয়তমার সাথে।

সকাল হতেই সুমি কয়েকবার রুদ্র ও মিহির ঘরের বাইরে এসেছিলো। কিন্তু এখনো ভেতর থেকে দরজা আঁটকা ছিলো বলে আর ডাকতে পারেনি সে। অগত্যা রহমান চাচার সাথে হাতে হাতে নাস্তা তৈরি করতে শুরু করে সুমি। মিতুও ঘুমোচ্ছে এখনো। রহমান চাচা ফজরের নামাজ শেষে আর ঘুমান না। সোজা এই বাড়িতে এসে নাস্তা তৈরি করার কাজে লেগে যায়। এ নিয়ে মাঝে মধ্যে তার স্ত্রী তহমিনা অভিমান করেন অবশ্য। তবে রুদ্রর প্রতি রহমানের ভালোবাসা তারও কিছু কম নয়। চুলোয় চায়ের জন্য পানি বসিয়ে টোস্ট তৈরি করছেন রহমান চাচা। সুমি পাশে দাঁড়িয়ে সেদ্ধ ডিমগুলোর খোসা ছাড়িয়ে অন্য পাত্রে রাখছে।
” তুমি আবার বাসনকোসন পরিষ্কার করতে গেলে কেনো মা?”
রহমান চাচা পরম মমতার সাথে সুমির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন। সুমি হাসলো, রহমান চাচার ঠোঁটের কোণেও হাসি।
” আফনে আমার বাবার বয়সী, সব কাম আফনেরে ক্যামনে করতে দেই?”
সুমির কথায় রহমানের বুকের ভেতর কেমন ছ্যাঁত করে উঠলো। বাবা! দু-চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে রহমান চাচার। সুমি বিষয়টা বুঝতে পেরে ফের বলে উঠলো,
” আমার তো বাপ থাইকাও নাই, আপনার বুঝি মাইয়া নাই? ”
” নাহ মা, আমার কোনো সন্তান নেই। ”
” তাতে কী হইছে! রুদ্র ভাই তো আফনের পোলার মতোই আর এহন তো আমিও আছি। আফনের মাইয়া!”
রহমান চাচা হুট করেই সুমির মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে কেঁদে উঠলেন। সুমি উনার চোখের অশ্রু মুছে দিলো।
” সত্যি তুমি আজ থেকে আমার মেয়ে। ”
নতুন মেয়েকে নিয়ে রহমান চাচা খুব খুশি আর সুমিও। দু’জনে মিলে হাতে হাতে খাবারগুলো ডাইনিং টেবিলে পরিবেশন করে। তারপর চেয়ারে বসে আরো কিছুক্ষণ কথোপকথন চলে তাদের। এরমধ্যেই শরীফ এসে উপস্থিত হয়। দরজা ভেজানো ছিলো বলে বিনা কলিংবেলের আওয়াজে বাসায় প্রবেশ করেছে সে। শুকিয়ে যাওয়া ক্ষতটা শরীফকে দেখা মাত্রই ফের দগদগে হয়ে উঠলো সুমির।
” শরীফ তুমি! তা-ও এই সকালবেলা? ”
এমনিতে সকালে রুদ্র নিজেই ড্রাইভ করে হসপিটালে যায়। তাই রহমান চাচা শরীফের আগমনে কিছুটা অবাক হয়েছেন।
” আসলে আজকে যদিও হসপিটাল ছুটি কিন্তু ডাক্তারদের তো ছুটির সুযোগ কম। আজকে একটা সিরিয়াস পেসেন্ট আসবে, হঠাৎ করে কল দিলেন তারা। আর যেহেতু আগেও এসেছিলেন তাই না করা যায়নি। এদিকে রাত থেকে রুদ্র ভাইয়াকে কতবার কল দিলাম ধরছে না। ভাবলাম কোনো বিপদআপদ হয়নি তো?”
বিপদের কথা শুনে সুমি ভাবলো মিহি আপার শরীর খারাপের কথা বলা দরকার সবাইকে।
” চাচা মিহি আফার শরীর খারাপ ছিলো গত রাইতে। মনে হয় ঘুমাইতেও পারেনাই ভাই ঠিকমতো। ”
শরীফ সুমির কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলো। দীর্ঘ দিন পর কথা বলতে দেখলো প্রেয়সীকে। রহমান চাচা কিছুটা উদগ্রীব হয়ে শরীফকে বললেন,
” তাহলে এখন ডাকতে হবে না ওদেরকে। সাড়ে আটটা বাজে তো কেবল,তা রোগী মনে হয় আরো দেরিতে আসবে তাই না? ”
” হ্যাঁ উনারা সাড়ে দশটার দিকে আসবেন বলেছেন। ”
” তুমি তাহলে নাস্তা করতে শুরু করো। রুদ্র বাবা আর মিহি মা একসাথে খেয়ে নিবে।”
রহমান চাচা, শরীফ ও সুমিকে সকালের নাস্তা খেতে দিলেন। এ বাড়িতে কাউকে হেয় চোখে দেখে না রুদ্র। এখানে সবার পরিচয় শুধু মানুষ হিসেবে ধনী-গরিব হিসেবে নয়।
সকালের মিঠে রোদ জানালা দিয়ে প্রবেশ করে মিহির মুখখানায় পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো তার। ঘুম ঘুম চোখে তাকাতেই ভুত দেখার মতো চমকালো মিহি। বিবস্ত্র শরীরে মিহিকে জড়িয়ে আছে রুদ্র। যদিও শুধু টিশার্ট নেই। মিহি দ্রুত রুদ্রর বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলো ।
” উফ! মিহির দানা একটু ঘুমোতে দাও প্লিজ।”
” ইশশ! কী আদুরে আবদার। ছাড়ুন বলছি।”
রুদ্র ছাড়লো না মিহিকে। ঘুমের দেশে তলিয়ে গেছে আবারও সে। মিহি আস্তে করে রুদ্রর হাত নিজের গায়ের উপর থেকে সরিয়ে বিছানা ছেড়ে নামলো। কিন্তু ওড়না খুঁজতে গিয়ে দেখলো সেটা ফ্লোরে পড়ে আছে। মিহির বুকটা কেমন ধুকপুক করছে। কী হয়েছিলো গতরাতে? মিহি দ্রুত আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখলো চুলগুলো সব এলোমেলো হয়ে গেছে। ঠোঁটের কোণে কেমন লাল দাগ হয়ে গেছে। সবকিছু বুঝে উঠতেই ভীষণ লজ্জা পেলো মিহির। সবকিছু এভাবে না হয়ে অন্যভাবে হলেও তো হতো? কিছু মনে নেই মিহির এটা ভাবতেই খারাপ লাগছে। লোকটা কেনো তার অবচেতন অবস্থায় এসব করতে গেলো! ন’টা বেজেছে, এলার্ম-ঘড়ি তার সময়মতো বাজতে শুরু করেছে তাই। মিহি জানে রুদ্রর ঘুম এখুনি ভেঙে যাবে। তাই আর দেরি না করে দ্রুত বাথরুমে চলে গেলো গোসল করতে। এরকম এলোমেলো অবস্থায় সামনে পড়তে চায় না সে মোটেও।
এলার্ম-ঘড়ির অত্যাচারে বেশিক্ষণ ঘুমানো সম্ভব হলো না রুদ্রর পক্ষে। মিহিকে পাশে দেখতে না পেয়ে বাথরুমের দরজার দিকে দৃষ্টিপাত করলো সে। বাইরে থেকে লক করা না মানে ভেতরে মিহি আছে। গতরাতের সুখকর স্মৃতি রোমন্থন করতেই আনমনে হেসে উঠলো রুদ্র। নিশ্চয়ই মেয়েটার কিছু মনে নেই ভেবে ঠোঁটের কোণের হাসি আরও প্রসস্থ হলো।
চলবে,

#মনেরও_গোপনে
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_২৫
(প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)

বাইরে থেকে লক করা না, মানে ভেতরে মিহি আছে। গতরাতের সুখকর স্মৃতি রোমন্থন করতেই আনমনে হেসে উঠলো রুদ্র। নিশ্চয়ই মেয়েটার কিছু মনে নেই ভেবে ঠোঁটের কোণের হাসি আরও প্রসস্থ হলো। এরমধ্যেই মিহি বাথরুম থেকে বেরোলো। কিন্তু বিছানার দিকে না তাকিয়ে সোজা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে বসে ভেজা চুলগুলো মুছতে লাগলো। রুদ্র বিষয়টা খেয়াল করে মিহির পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। মিহি অবশ্য আনমনে তাকিয়ে ছিলো আয়নার দিকে।
” কী হয়েছে? এরকম দৃষ্টি নিচে রেখে চলছো কেনো?”
রুদ্রর উপস্থিতিতে মিহি খুব বিব্রতবোধ করছে। কেমন জানি অস্বস্তি হচ্ছে। কেনো যে রাতে ঠান্ডা লাগাতে গেলো!
” না মানে আসলে..”
” ব্যথাও দিলে তুমি আর এড়িয়েও যাচ্ছো তুমি!”
” আপনার কোনো লাজলজ্জা নেই? ”
মিহি আয়নার দিকে তাকিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। রুদ্র সেদিকে তাকিয়ে হাসলো।
” আছে বলেই তো যখন তুমি ঠোঁটে আমার স্পর্শ চাচ্ছিলে তখন আমি সরে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তো ছাড়লে না। উপরন্তু আমার পিঠের কী অবস্থা করেছো দেখো।”
রুদ্র পিছনে ফিরে দাঁড়ালে মিহি আয়নায় দেখলো নখ বসে গেছে সমস্ত পিঠে। কী লজ্জার কান্ড! অবচেতন অবস্থায় এসব কীভাবে করলো ভেবেই মরমে মরে যাচ্ছে মেয়েটা। লোকটা নিশ্চয়ই খুব ব্যথা পেয়েছিলো তখন? পেলে পেয়েছে তাতে কী হুহ্?
” চাইবোই তো,আপনি আমার একমাত্র স্বামী। বেশ করেছি নখ বসিয়ে দিয়েছি। আপনি কী করেছেন? ঠোঁট ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে আমার। ”
রুদ্র আঁড়চোখে একবার তাকিয়ে দেখলো মিহিকে। আসলেই তো!
“এতকিছু কী খেয়াল থাকে না-কি তখন? ভালোবাসার সময় এরকম একটু-আধটু হয়। ”
” আপনি একটা যাচ্ছে তাই। ঘরের বাইরে গেলে সবাই কী ভাববে? ইশশ! লজ্জায় মরেই যাবো আমি। ”
” হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। একটু কিস করেছি আরকিছুই না। তাছাড়া এসব সবাই করে, নতুন কিছু না। ”
মিহি চিরুনি রেখে রুদ্রর দিকে দৃষ্টিপাত করলো। লোকটা কি সত্যি বলছে? আসলেই কিছু হয়নি গতরাতে! অবশ্য মিথ্যা কেনো বলবে।
“নির্লজ্জ লোক একটা, তারমানে আমাদের ফুলসজ্জা হয়নি?”
” না মিহির দানা। তুমি এখনও ছোটো বুঝলে,আগে বড়ো হও তারপর এসব করবো।”
” আমি ছোটো? মাস্টার্সে পড়া মেয়েকে পৃথিবীর আর কে ছোটো বলেছে আমার জানা নেই।”
” তারমানে তুমি চাচ্ছিলে সবকিছু হোক? সমস্যা নেই তাহলে আজকে রাতে কন্টিনিউ করবো।”
” ধ্যাৎ! অসভ্য লোক।”
মিহি ভেংচি কেটে দরজার দিকে দৌড়ে চলে গেলো। রুদ্র একটু গলা উঁচিয়ে বলেলো,
” এখন থেকে মনে মনে না ডেকে এমনিতেই ডাক্তার সাহেব বলে ডেকো,ভালোই লাগে শুনতে।”
” ঠিক আছে ডাক্তার সাহেব, তাড়াতাড়ি নিচে আসুন।”
রুদ্র গোসল করার জন্য বাথরুমে গেলো। গত রাতের পাগলামির কথা ভাবতেই বারবার হাসি পাচ্ছে মিহির। এরমধ্যে বসার ঘরে উপস্থিত হলো মিহি। শরীফ, আর রহমান চাচা বসে গল্পগুজব করছেন। সুমি আর মিতুর কথার আওয়াজ আসছে ডাইনিং টেবিলের দিক থেকে। যদিও সুমি আগেভাগে খেতে চায়নি কিন্তু রহমান চাচার বলায় আর না করেনি। এখন মিতুকে খাইয়ে দিচ্ছে। কিন্তু মেয়েটা এসব খাবারে শান্তি পায় না।
” শরীফ ভাই কী খবর?”
” এইতো ভাবি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন? ”
” হ্যাঁ ভালোই। চাচা আপনারা খেয়েছেন তো?”
শরীফ এক নজর মিহির দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে কথা বললো। মিহি বিষয়টা বুঝতে পেরে বেশ অস্তিত্বতে পড়েছে। মনে মনে রুদ্রর উপর খুব রাগ হলো তার। একটুও বুদ্ধি নেই না-কি লোকটার? রহমান চাচাও অন্য দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলো,
” আমি খাইনি,ওদেরকে খাইয়েছি। মিতুকে খাওয়াতে গেলো সুমি।”
” আচ্ছা চাচা।”
মিহি বসার ঘর পেরিয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে গেলো। এখানে বেশিক্ষণ আর থাকা সম্ভব হচ্ছিলো না। মিতুকে খাওয়ানোর জন্য বেশ বকাবকি করছে সুমি।
” আমি এগুলান খামু না মা। আমারে পান্তা ভাত আর কাঁচা মরিচ দাও। এইসব রুডি, ফলমূলে পরানে শান্তি পাই না। ”
” ওগুলান কই পামু! এগুলাই খাইতে হইবো। ”
মিহিকে দেখে চুপ করলো সুমি। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে শুধালো,
” এহন কেমন আছেন আপা?”
” কেনো কী হয়েছিলো আমার! ”
মিহি কিছুটা চমকালো। অসুস্থ হয়েছিল বলে তো কিছু মনে পড়ছে না। তাহলে কী গতরাতে ঠান্ডায় জমে যাওয়ার বিষয়টা সুমিও জানে?
” আরে কাইলকা রাইতে ভাই হঠাৎ আইসা কইলো আপনের শরীল খারাপ খুব। গিয়া দেখলাম জামাকাপড় ভেজা,উনি কইলেন সেগুলো পাল্টাইয়া দিতে। তারপর পাল্টাইয়া দিয়া আমি আমার ঘরে আসছিলাম। ”
রুদ্র এতটা ভালো! ভাবতেই মিহির মনে রুদ্রর প্রতি খুব শ্রদ্ধা জাগলো মনে। অনুমতি না নিয়ে তাকে বাজেভাবে দেখার কথাও ভাবেনি মানুষটা।
” আসলে আমার সেসব মনে ছিলো না। এখন ঠিক আছি। মিতু কী বলছিলো? পান্তা ভাতের কথা কী জানি বললো।”
” আর বইলেন না আপা,মাইয়া আমার শহরের খাওনদাওন পছন্দ করে না। ”
” আমি চাচাকে বলে দিবো ভাত বেশি রান্না করতে। রাতে পানি দিয়ে রাখবে, সকালে সেগুলো খাইয়ে দিও ওকে।”
” আপা আফনে এত্তো ভালো! আল্লাহ আফনের ভালো করুক।”
মিহি হেসে মিতুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। সত্যি আজ নিজেকে খুব সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। রুদ্রকে পেয়ে জীবনটা ভালোবাসাময় হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে।
কথামতো বিয়ের আগেই তোশাদের বাড়ি গিয়েছিলো রাহি ও আদ্রিয়ান। দেখতে দেখতে তোশার বিয়ে হয়ে যায়। তোশা বেশ স্বাভাবিকভাবেই ওদের সাথে কথাবার্তা বলছে সেই ক’দিন। তবে আদ্রিয়ানও খুব সতর্ক ছিলো রাহির ব্যাপারে। কিন্তু তোশা আসলেই নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলো। তাই হাসিমুখে বিয়ে করে নিজের সংসারে পাড়ি জমিয়েছে সে।

পড়ন্ত বিকেলে চন্দ্রিমা উদ্যানের একপাশে হাতে হাত রেখে বসে আছে আদ্রিয়ান ও রাহি। দুজনের মুখেই হাসির রেখা ফুটে আছে। আশেপাশে ওদের মতো আরো অনেক কাপল আছে। তবে ওদের আনন্দ আলাদা। একটু আগেই প্রেগন্যান্সির রিপোর্ট হাতে পেয়েছে রাহি। ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে এখানে এসে বসেছে দু’জন। এত বছর পর মা হওয়ার স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছে ভাবতেই রাহির মনে আনন্দের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে।
” রাহি!”
” হ্যাঁ বলো।”
” কী চাও বলো।”
” হঠাৎ করে কী চাইবো? ”
” তুমি আমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো খবরটা দিলে,আমি বাবা হচ্ছি রাহি! তাই আমার সন্তানকে ধারণ করার জন্য উপহার দিতে চাই তোমাকে। ”
” আমার শুধু তোমাকে চাই। ”
” আমি তো আছি তোমারই, ইনশাআল্লাহ আজীবন থাকবো। ”
” তাহলেই হবে। তুমি থাকলে শাড়ি,গয়না,বই সব অটোমেটিক পেয়ে যাবো।”
রাহি দুষ্টমি করে হেসে বললো কথাটা। আদ্রিয়ানও রাহির দুষ্ট কথায় হাসলো। রাহির কপালে উড়ে আসা চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিলো আদ্রিয়ান।
” বুদ্ধিমতী বউ আমার। চলো এবার বাসায় ফিরতে হবে। বাবা-মা কতটা খুশি হবেন ভাবতেই খুব এক্সাইটেড লাগছে। ”
” হ্যাঁ, মিহিও খুব খুশি হবে।”
” তা তো বটেই। বাসায় গিয়ে কল দিয়ে জানিও বরং।”
” আচ্ছা। ”
রাহির হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায় উঠলো আদ্রিয়ান। গাড়িতে উঠতেই যাবে এমন সময় হঠাৎ রাহি বললো,
” শোনো না। ”
” কী হলো? ”
” আমি বেলুন কিনবো।”
রাহি একটু ভয়ে ভয়ে বললো কথাটা। না জানি বাচ্চাদের মতো বেলুন কিনতে চাওয়াকে কেমন ভাববে আদ্রিয়ান। কিন্তু আদ্রিয়ান মুখে কিছু না বলপ সোজা বেলুন বিক্রেতার কাছে গিয়ে দশটা বেলুন কিনে নিয়ে এসে রাহির হাতে দিলো।
” এই নাও। আরকিছু লাগবে? ”
” আপাতত লাগবে না, চলো।”
রাহি হাসিমুখে গাড়িতে উঠে আদ্রিয়ানের পাশে বসলো আর বেলুনগুলো পিছনের সিটে রাখলো। ভালোবাসা আসলেই সুন্দর। ভালোবাসার মানুষের কাছে কোনো রাখঢাক রেখে কিছু চাওয়া লাগে না।
চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে