হ্যাকারের_লুকোচুরি সিজন_২ পর্ব-৯

0
1246

হ্যাকারের_লুকোচুরি সিজন_২ পর্ব-৯

কিছুক্ষণের ভেতর চোখগুলো ভারী হয়ে আসতে থাকে রাফির। হাত পা অসাড় হয়ে যায়, ধীরে ধীরে জ্ঞান হারায় রাফি।
লিমুজিনটা চলতে থাকে রাফির পরবর্তি গন্তব্যের দিকে।
হঠাৎ এক বিকট গন্ধে জ্ঞান ফেরে রাফির। গা হাত পা ঝাড়া দিয়ে ওঠে মুহূর্তের ভেতর। অনেকটা হঠাৎ করেই কিক স্টার্ট দেয়া মোটরসাইকেলের মত অবস্থা। রাফির ঘোর আর অজ্ঞানতা কাটিয়ে বের হয়ে আসতে বেশ সময় লাগলো। রাফি মিটি মিটি করে চোখ মেলে দেখতে চায় আসপাস আর ওই উটকো গন্ধের উৎস। হাত পা নড়াতে না পারলেও চোখ খুলে পরিবেশ বোঝার চেষ্টা করে , কে যেন নাকের কাছে একটা ছোট্ট কাঁচের বোতলের ছিপি খুলে ধরে আছে আর বোতলটা থেকেই উটকো গন্ধটা আসছে। রাফি নাক ঝাড়া দিয়ে সরে যেতে চায় কিন্তু নিজেকে হাত পা বাধা অবস্থায় একটা চেয়ারে আবিষ্কার করে সে।
জ্ঞান ফিরেছে এবং স্বজ্ঞানে চেয়ারে দাপাদাপি করতে দেখে রাফির নাকের কাছ থেকে বোতলটি সরিয়ে নিলো লোকটি। জ্ঞান ফেরানোর জন্য চেহারায় একটু পানি ছিটিয়ে দিলেই হতো, নাকের এমন বিদঘুটে গন্ধ দেয়ার কি প্রয়োজন ছিলো সেটাই বুঝতে পারলো না রাফি। পুরোপুরি জ্ঞান ফেরার পর আশপাশটা ভালোভাবে দেখা শুরু করলো রাফি। বেশ বড়সড় একটা আলোছায়া ঘেরা রুম। মোটামুটি আন্দাজ করা যাচ্ছে রুমের মাঝখানে বসে আছে রাফি। আধো আলো ছায়ায় যতুটুকু বোঝা যায় পুরো রুমটাতে শুধু সাদা এবং কালো রং এর জিনিসপত্র। দেয়ালের রং থেকে শুরু করে বইয়ের মলাট পর্যন্ত। রাফি কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না আর। সবাই কেমন যেন অন্ধকারে লুকিয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে রাফি চুপচাপ থেকে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলেও কিছুই বুঝতে পারলো না, শেষমেষ বলে বসলো,
রাফি – ( ইংরেজীতে) কেউ কি বলবে আমি কোন জাহান্নামে আছি?
ব্যক্তি ১ – (ইংরেজিতে) পৃথিবীর জাহান্নামে?
রাফি – এভাবে বেধে রাখার কি মানে? আমি সেচ্ছায় এখানে এসেছি। এভাবে বেধে রাখার প্রয়োজন আছে কি?
ব্যক্তি ২ – তুই এখন যার সামনে বসে আছিস তার সামনে বসে কেউ আজ পর্যন্ত এতগুলো কথা বলতে পারে নি।
রাফি – তাহলে আমি বেঁচে আছি কিভাবে?
বস – ( বেশ গম্ভীরভাবে) কারন আমার ইচ্ছা।
রাফি কথার ওজন শুনেই বুঝে গেলো এ বস টাইপের কেউ। কিছু বলা যৌক্তিক হবে কি না ভেবেও বলে বসে রাফি,
রাফি – মেহেরবানী করে হাতের বাধনটি খুলে দিন। প্রচন্ডরকমের নাক চুলকাচ্ছে। পারছি না আর।
এমন থমথমে পরিবেশে এইরকম কথা শুনে একটা গম্ভীর হাঁসির আওয়াজ পেল রাফি। বেশ জোরেশোরেই হাসছেন তিনি,
বস – (হাসতে হাসতে) খুলে দে।
অন্ধকারের ভেতর থেকে দুটি ছায়া এগিয়ে এলো, একজন ঠায় দাড়িয়ে রইলো এবং আর একজন হাতের বাঁধন খুলে দিতে লাগলো।
হয়তোবা এখানে পৌছানোর পর থেকেই হাত বাঁধা ছিলো, বাঁধন খুলে দেয়ার সাথে সাথে রক্ত চলাচল শুরু করলো হাতের শিরা উপশিরাতে। রাফি দ্রুত এক হাত দিয়ে নাক চুলকাতে লাগলো, যদিও নাক চুলকানোর ব্যপারটা মিথ্যা ছিলো। তাইই বলে তো আর সবাইকে বুঝতে দেয়া যাবে না বিষয়টা।
বস – ( হাঁসি থামিয়ে গম্ভিরতা এনে) তাহলে তুই দাবি করছিস যে তুই আমার বাংলোতে ঢুকেছিলি আর জ্যান্ত বের হয়ে এসে আমার সাথে কথা বলছিস!!!!?
রাফি – ( দড়ি দিয়ে হাতের বাঁধা জায়গায় হাত বোলাতে বোলাতে) জ্বী হ্যাঁ। বিপদে পড়েই ঢুকতে হয়েছিলো ওখানে।
বস – (কৌতুহল) বিপদ! কিসের বিপদ! আমার বাংলোই তো একটা বিপদের কূপ। তোর আন্দাজ আছে যে গতকাল কতগুলো মানুষ জান খুইয়েছে আমার বাংলোর দরজার সামনে!
রাফি না সূচক মাথা দোলায়।
বস – (গর্ব করে) ১৪৩ জন। একজনও বাংলোর বাউন্ডারি ও ছুঁয়ে দেখতে পারে নি অথচো মরে লাশ হয়ে গেছে আর তুই কিনা বলছিস তুই আমার বাড়ি ঢুকেছিলি! তো কিভাবে মানবো যে তুই আমার বাড়ি ঢুকেছিলি? প্রমান দে।
রাফি – আমার সাথে দুইটা ব্যাগ ছিলো, ওগুলো কোথায়?
ব্যক্তি ১ – ওগুলো বাইরে কাউন্টারে রয়েছে।
রাফি – দয়া করে আমার সামনে এনে দেবেন কি? প্রমান ব্যাগে।
বস গলা দিয়ে হুহহ বলে হয়তো কাউকে নির্দেশ দিলেন ব্যাগ নিয়ে আসার জন্য।
কেউ একজন ছায়ার ভেতর থেকে হেঁটে হেঁটে রাফির পেছনে চলে গিয়ে দরজা খুলে বাইরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর আবারও দরজা খোলার আওয়াজ হয় আর ঝপ করে দুইটা ব্যাগ রাফির সামনে ফেলে লোকটি আবার ছাঁয়ায় মিলিয়ে যায়।
রাফি বাংকার থেকে নিয়ে আসা ব্যাগটা তুলে নিয়ে তার উপর কার্ডটি রেখে বলে,
রাফি – (আত্ববিশ্বাসের সাথে) দেখুন তো ব্যাগ আর কার্ডটি চিনতে পারেন কিনা!
অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না ঠিকমত কিন্তু রাফির হাতে থাকা ব্যাগটি আবছা আলোতে দেখেই,
বস – (আতংক এবং উত্তেজনায়) আলো জ্বালা। কেউ একজন আলো জ্বালা, এখনই।
রাফি জানে যে এখন ভয়াবহ এক ড্রামা সিরিয়াল হতে চলেছে। তাই মানষিকভাবে রাফি প্রস্তুত ই ছিলো।
আলো জ্বলে উঠতেই রাফি তার সামনে টেবিলের গায়ে হেলান দেয়া মাঝবয়সী এক ব্যক্তিকে আবিস্কার করে, ভয়াবহ স্ট্যাইলিশ, হাতে রোল্যাক্স, গায়ে সাদা শার্ট কালো কোর্ট, কালো স্যু! শুধু চোখটা একটু বেশীই বড় হয়ে আছে, আর দৃষ্টি স্থীর হয়ে আছে রাফির হাতের ব্যাগটা দিকে।
একজনকে ইশারা করলো রাফির হাত থেকে ব্যাগটা নিয়া আসার জন্য, আর নিজে ঘুরে গিয়ে চেয়ারের সামনে দাড়িয়ে একটা মোটা চুরুট ধরাতে শুরু করলো।
একজন এসে ব্যাগ আর কার্্ডটা রাফির হাত থেকে নিয়ে বসের সামনে টেবিলে রাখলো। চুরুটে লম্বা এক টান দিয়ে বস টাইপের লোকটি ওই কার্ড টেবিল থেকে হাতে তুলে নেয়। চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম তারপরও নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করছে ওই বস টাইপের লোকটি।
বস – ( অন্য দুজনকে উদ্দেশ্য করে) তোরা বাইরে যা, প্রয়োজনে ডেকে নেবো।
রুমের ভেতর বস আর রাফি ছাড়া আর সবাই বের হয়ে গেল। সবাই বের হয়ে যাওয়ার পর দরজা লাগতেই,
বস – (বিস্মিত হয়ে) একটাই প্রশ্ন করবো, পরিস্কার জবাব চাই। কিভাবে?
রাফি যা যা ঘটেছে তার বর্ননা শুরু করতেই,
বস – ওসব শুনতে চাই নি, এই ব্যাগটা আমার বাংলোর ১০০ ফুট নীচে বাংকারের একটা লকারে ছিলো। এটা তোর হাতে আসলো কিভাবে?
রাফি – কারন গতপরশু রাত থেক গতকাল রাত পর্যন্ত আমি ওই বাংকারেই ছিলাম।
বসের চোখ নাক গাল লাল হয়ে গিয়েছে রাফির কথা শুনে।
বস – কি!!!!! তুইই বলতে চাস গতকাল বাউন্ডারি ছুঁতে না পারা চোরগুলোকে শেষ করে দেয়া সিকিউরিটি সিস্টেমকে ফাঁকি দিয়ে তুই আমার বাউন্ডারিতে ঢুকেছিস, বাংকারের লিফটে পৌছেছিস, লিফট থেকে নেমে বাংকারের কোড ভেংঙ্গে বাংকারের দরজা খুলেছিস, আমার ক্যাশরুমে ঢুকে লকার খুলে ব্যাগটা নিয়ে বের হয়ে এলি অথচো তোর গায়ে ফুলের টোকাও পড়ে নি!!!!!! আর আমি কোন ইনট্রুডার এ্যালার্ট ও পেলাম না!!!! অসম্ভব!!!!
রাফি – আমার জানামতে আপনার বাউন্ডারির ভেতর যে একটা এন্টিনিউক্লিয়ার বাংকার রয়েছে এই ইনফরমেশন জানা কোন ব্যক্তিই জীবিত নেই। আর আপনার সিকিউরিটি এসিস্টেন্ট ও যথেষ্ট কর্মপটু তা গতরাতে আপনার বাড়ির সামনের লাশের বহর দেখলেই বোঝা যায়। কিন্তু আমার এ্যাসিস্টেন্ট ও কম যায় না। সে আপনার পুরো সিস্টেমকে হ্যাক করে ফেলেছে।
বস – (উদ্বিগ্ন) আমার সিকিউরিটি সিস্টেম হ্যাক করা যাবে না এমনটাই বলেছিলো ওরা, তাহলে আমার টাকা!
রাফি – চিন্তার কোন কারন নেই। আপনার পুরো বাংলো থেকে ওই ব্যাগ আর এই হার্ডড্রাইভ ছাড়া আর কিছুই খোঁয়া যায় নি!
বস – (আরো বিস্মিত হয়ে) হার্ডড্রাইভ ও নিয়ে এসছিস!!!!! সেটা কোথায়?
রাফি – ওই ব্যাগের ভেতরই আছে। ব্যাগটা যে আমি সাজিয়ে নিয়ে আসি নি তার প্রমাণ।
বস – (বিস্ময়ের সাথে) তুই! তুই আমার বাংকার পর্যন্ত চলে গেলি! তার মানে আমার সিকিউরিটি সিস্টেমে সমস্যা রয়েছে। আমার ইন্টেলিজেন্ট সিকিউরিটি সিস্টেম আসলে ইন্টেলিজেন্ট নয়! এমন ভুলভাল সিকিউরিটি এসিস্টেন্ট যদি আমি বিক্রি করি তাহলে তো আমার জীবন নিয়েই টানাহ্যাচড়া শুরু হয়ে যাবে।
রাফি – আপনার সিকিউরিটি সিস্টেম যে ডেমো দেখিয়েছে তাতে নিশ্চয়ই অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে পিকাচু?
বস – (অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে) তুই আমার বাংকারের ইন্টেলিজেন্ট সিকিউরিটি এ্যাসিস্টেন্টর নাম ও জানিস?
রাফি – (মুচকি হাঁসতে হাঁসতে) আসলে ২৪ ঘন্টার ও বেশী সময় ধরে ছিলাম তো বাংকারে, একা একা ভালো লাগছিলো না। তাই পিকাচুর সাথে গল্প করছিলাম। ভালো এবং খুবই ভদ্র এসিস্টেন্ট।
বস – (চোখ বাকিয়ে) তোর ভালো লেগেছে পিকাচু কে?
রাফি – আবার জিগায়, ভালো লাগবে না কেন? খুবই ভালো মনের এসিস্টেন্ট খালি একটা শরীর নাই।
বস মনে মনে ভাবে এমন একটা সিকিউরিটি সিষ্টেমের উপর ভরসা করে সে তার বানানো ১৫ নং বাংলো খোলা ফেলে রেখে এসেছে! হায় হায়।
বস – (ভাব নিয়ে) হমমমম, তার মানে তুই কম্পিউটার নিয়ে নাড়াচাড়া করিস! ভালো। তোকে একটা অফার দিতে চাই। তুই যদি পিকাচুর সমস্যা সমাধান করে দিতে পারিস তাহলে পিকাচু তোর।
কথাটা শোনার সাথে সাথে রাফির খটকা লাগে, পিকাচুর ডেভলপার কাউকেই এই লোক জীবিত রাখে নি আর রাফি ত মামুলি মানুষ।
রাফি – (কপাল কুঁচকে) কাজটা করার পর আপনি যে আমাকে মেরে ফেলবেন না তার গ্যারান্টি কি!
বস মনে মনে ভাবে যে এই ছেলেকে যতটা বোকা মনে করেছিলাম ততটা বোকা নয়। এখন!
বস – (ইতস্ততঃ) না না না, আমি তোকে মারবো কেন? তুইই আমার এত বড় উপকার করবি, তোকে মারা যায়!
কথাটা শোনার পর রাফির বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে, মনে হতে লাগে এ যাত্রাই মনে হয় শেষ যাত্রা।
রাফি – (কিছুটা উত্তেজিত) আমার ফোনটা? আমার কথা বলতে হবে আমার এ্যাসিস্টেন্টের সাথে।
এখানে তোর জন্য ফোনে কথা বলার কোন সুযোগ নেই, যদি গোয়েন্দা সংস্থাকে আমার লোকেশন জানিয়ে দিস, তো?
তখন রাফি কিছু বলতে যায়, কিন্তু বসের ফোন বেজে ওঠায় সে হাত তুলে থামিয়ে দেয় রাফিকে।
ফোনে কথা বলা শুরু করে রাফির সামনেই, প্রথম প্রথম হু হা তে জবাব দিলেও কিছুক্ষণের ভেতর সে রাফির দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে। আরো কিছুক্ষণ কথা চলার পর বস রাফির দিকে ফোন এগিয়ে দিলেন।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


রাফি বিস্ময়ের সাথে ফোনটি নিয়ে কানে ধরলাে,
কম্পিউটার জেনারেটেড ফীমেল ভয়েসটা রাফির খুবই পরিচিত,
– মাফিয়া গার্ল।
রাফি – কোথায় এনে ফাঁসিয়ে দিলে! এ তো এখন আমাকে মারার ফন্দি আটছে।
– (অট্টহাসি) তাই নাকি? বেশ বাড় বেড়েছে মনে হচ্ছে। যাইহোক যে জন্য তোমাকে এখানে আনা, তোমাকে কোন ট্রেস ছাড়া পরবর্তী গন্তব্যে পৌছে দিতে কেবলমাত্র ও ই পারবে। ভেবেছিলাম পুরস্কার হিসেবে তোমার ফ্রী ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করবো। কিন্তু এখন তো দেখছি ব্যপারটা উল্টো করতে হবে।
রাফি – (রাগান্বিত) তুমি যদি বিনা অনুমতিতে আমার টাকার গুদামে ঢোকো তাহলে আমার রাগ হওয়া স্বাভাবিক নয় কি!
– কথাটা তুমি মন্দ বলো নি। যাইহোক ফোনটা ওকে দাও।
রাফি ফোনটা এগিয়ে দিতেই কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা কানে তুলে নিলো বস। কিছুক্ষণ ইয়েস নো তে কথা বলে ফোনটা কেটে দিলো। রাফির দিকে তাকিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো। চুরুটে লম্বা একটা টান দিয়ে রাফিকে প্রশ্ন করতে বসলো,
বস – (চিন্তিত) গতকাল রাতে যারা আমার বাড়ির সামনে এসেছিলো তারা আসলে আমার বাড়ি চুরি করতে এসেছিলো না, তাইনা?
রাফি না সূচক মাথা দোলায়।
বস – ( চিন্তিত) তারা সব তোকে মারতে ওখানে হাজির হয়েছিলো?
রাফি হ্যাঁ সূচক মাথা দোলায়।
বস – (চিন্তিত) তুই ওদের হাত থেকে বাঁচতে বাংকারে ঢুকেছিলি!? চুরি করতে নয়!?
রাফি হ্যাঁ সূচক মাথা দোলায়।
বস – তোর এ্যাসিস্টেন্ট আমাদের সব কথা শুনছিলো?
রাফি এর উত্তর জানে না তবে মাফিয়া গার্লের পক্ষে আড়ি পাতা সম্ভব তাই হ্যাঁ সূচক মাথা দোলালো।
বস উঠে গিয়ে জানালার দিকে ফিরে ডাক দিলো তার এ্যাসিস্টেন্টগুলোকে, দুইজন রুমে এসে রাফির পিছনে দাঁড়াল।
বস – (এ্যাসিস্টেন্টগুলোর উদ্দেশ্যে) প্রাইভেট জেট রেডি করতে বলো, আর এর বাঁধন খুলে পেন্টহাউজে নিয়ে যাও। জেট রেডি না হওয়া পর্যন্ত একে ওখানেই রাখো। আর একে এর সবকিছু দিয়ে দাও।
এ্যাসিস্টেন্টগুলো রাফির কোমরের আর পায়ের বাঁধন খুলে দিলো আর রাফির ব্যাকপ্যাকটা রাফির হাতে ধরিয়ে দিয়ে তাদেরকে অনুসরণ করতে বললো। রাফি বুঝলো না ওই বস টাইপের লোকটিকে ধন্যবাদ জানানো উচিৎ কি না। ভাবনাচিন্তা বাদ দিয়ে রাফি এ্যাসিস্টেন্ট দুইজনের পেছন পেছন চলতে শুরু করলো, দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে শেষবারের মত তাঁকিয়ে দেখলো লোকটি তখনো জানালা বরাবর তাকিয়ে চুরুট টানছে।
রুম থেকে বেরিয়ে করিডোর হয়ে এসিস্টেন্ট দুইজন রাফিকে নিয়ে গিয়ে লিফটে তোলে।
করিডোরের ডেকোরেশন আর লোকজনের আসাযাওয়া দেখে রাফি ধারনা করে এটা কোন বড়মাপের হোটেল। লিফট ২২ তলায় গিয়ে থামে। এ্যাসিস্টেন্টের পেছন পেছন রাফি গিয়ে ঢোকে পেন্টহাউজে। টপ ফ্লোরের এই পেন্টহাউজটিকে একটা জানালার ঘর বলা চলে। পুরো ঘরটার মেঝে ছাদ আর একপাসের দেয়াল ছাড়া পুরোটাই জানালা দিয়ে ঘেরা। এ্যাসিস্টেন্টগুলো রুমে আসে না, ইশারায় বলে ইন্টারকমে ফোন এলে যেন রিসিভ করে। রাফি ফোনটা বের করে অন করে। অন হতে হতেই মাফিয়া গার্লের ফোন,
– কি? সব ঠিকঠাক আছে তো? নাকি সমস্যা হয়েছে কোন!
রাফি – এভাবে মানুষদের ব্যবহার করা আমার মোটেই পচ্ছন্দ নয়। আমি এখানে তাদের সাথে দুশমনী করতে আসি নি। নিজের প্রয়োজনে মানুষকে এভাবে ব্যবহার করা!!! নিজের উপরই নিজের ধিক্কার জানাতে ইচ্ছা করছে।
– নিজেকে এত ছোট করে দেখার কিছু নেই, তুমি যে দুনিয়ায় বাস করো সেই দুনিয়ায় কেউ কারো জন্য কিচ্ছু করে না। হয় তোমাকে সেটা আদায় করে নিতে হবে অথবা দখল নিয়ে নিতে হবে। আর তুমি তো কারো ক্ষতি করছো না।
রাফি – ১৪৩ টা লাশ কি কোন ক্ষতির ভেতর পড়ে না!
– তার জন্য তুমি দায়ী নও আর পুলিশ ও কোন ক্লু মেলাতে পারবে না। কারন লোকালয়ের ভেতর এমন সিকিউরিটি সিস্টেম রাখা বেআইনী আর পুলিশ জেনেশুনে কিভাবে এটা এতদিন এলাউ করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইনেসপেক্টর G কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে আর অভিযোগ প্রমানিত হলে পাপের শাস্তি ভোগ করা শুরু আর আমি নিজে সেটা কনফার্ম করবো।
রাফি – কিন্তু এই অস্ত্র ব্যবসায়ীকে কেন ব্যবহার করছো!
– এ ই এখন তোমাকে নিরাপদ গন্তব্যে নিয়ে যাবে। তোমরা এখন ভালো বন্ধু হয়ে গেছো। দেখো না সে তোমার জন্য কত্ত কিছু করবে।
রাফি – আমি কেবল বাড়ি যেতে চাই। আমার মা বাবা আর বৌয়ের কাছে।
– আগে বের তো হও এখান থেকে, তারপর অন্যকিছু। এখন রাখছি। ফ্রেস হয়ে তৈরী হয়ে নাও। একটু পরই বস আসবে তোমার সাথে কথা বলতে।
রাফি কিছু বলার আগেই মেয়েটা ফোন কেটে দেয়। এই বাজে স্বভাবটা রাফির একদমই পচ্ছন্দ না।
ফোনটা রাখতে রাখতে দরজা খুলে বসের আগমন ঘটে। রাফিকে দেখে উষ্ণ একটা হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়। কিছুক্ষণ আগে যে লোকটা রাফিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে কথা বলছিলো, হঠাৎ করে তার এমন পরিবর্তন দেখে রাফি যার পর নাই অবাক হয়ে যায়।
বস – অফিসরুমে করা ব্যবহারে আমি সত্যিই দুঃখিত। আমি বুঝতেই পারি নি যে আপনি মাফিয়া বয়, দি মাফিয়া বয়।
রাফি – এমনভাবে কেন বলছেন?
বস – আমি আপনার কাজের অনেকবড় ফ্যান। আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবতে পারি নি যে আপনাকে কখনো দুই চোখে দেখতে পাবো।
রাফি – (কৌতুহল নিয়ে) মাফিয়া বয়ের কাজের ফ্যান আপনি! কিন্তু আমার যতদূর মনে পড়ে আমি কখনো কোন সন্ত্রাসীকে সাহায্য করি নি।
বস টাইপের লোকটা জিভে কামড় বসিয়ে দিলো,
বস – ছি ছি ছি ছি, আমাকে সন্ত্রাসী বললেন! আমি একজন সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী, পৃথিবীর বেসামাল ক্ষমতার সুযোগে যারা পৃথিবীর বুকে রাজত্ব করছে তাদেরকে রুখে দিতে বিভিন্ন দেশের বিদ্রোহীদের সাথে আমি ব্যবসা করি। আমি না থাকলে ওইসব মারনাস্ত্রের সামনে কি নিয়ে দাড়াতো বিদ্রোহীরা বলুন তো? এই আমরা আছি বলেই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারে।
রাফি – বাহ, নিজের ব্যবসায়ের পক্ষে খুব সুন্দর একটা উপসংহার দাঁড় করিয়েছেন।
বস – ( হাসতে হাসতে) ব্যবসাকে কিভাবে খারাপ বলি ভাই, আমার রুটিরুজী যোগাড় হয় এখান থেকে।
তখন ইন্টারকম বেজে ওঠে। বস উঠে গিয়ে রিসিভারটা কানে তুলে নেয় কিছু কথা শুনে ওকে বলে রিসিভারটা রেখে দেয়।
বস – আপনার জেট তৈরি। আপনাকে আপনার গন্তব্য পর্যন্ত পৌছে দেবে আমার জেট। (একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে) এটা রাখুন, জানি যে আমার নাম্বার খুজে পেতে এই কার্ডের দরকার পড়বে না, তারপরও যেখানে যাচ্ছেন সেখানকার যে কোন সমস্যা আপনি আমাকে নির্দিধায় জানাতে পারেন। আমি আপনাকে সাহায্য করবো।
রাফি – (কার্ড হাতে নিয়ে) আপনি আমাকে সাহায্য করবেন! কেন?
বস – (হাসতে হাসতে) আপনি অনেক বেশী প্রশ্ন করেন, কৌতুহল ভালো তবে আমাকে বের হতে হবে। চলুন একসাথে বের হওয়া যাক।
বস রাফিকে হোটেলের লবি পর্যন্ত এগিয়ে দিলো। তারপর একজন এ্যাসিস্টেন্ট রাফিকে নিয়ে সেই লিমুজিনে ওঠালো। মাঝখানে কোথাও না থেমে লিমুজিনটি এয়ারপোর্টের ভিআইপি লঞ্জ হয়ে সোজা প্রাইভেট জেটের সামনে এসে দাঁড়ায়। ডিপ্লোম্যাটিক ক্লিয়ারেন্স থাকলেও ইমিগ্রেশনে যেতে হয় কিন্তু এ তো পুরাই আলাদা লেভেলের।
ড্রাইভার এসে রাফিকে দরজা খুলে দিলো আর বিমানের পাইলট রাফিকে অভর্থনা জানিয়ে বিমানে তুলে নিলেন। জেটের দরজা লাগার আগে গাড়ির ড্রাইভার একটা ব্যাগ এনে রাফির সামনে রাখলো যেটা রাফি বাংকার থেকে নিয়ে এসেছিলো। তখনই বিমানের ইন্টারকমে ফোন আসে। রাফি রিসিভ করতেই,
বস – আমাদের বন্ধুত্বের শুরুটা সুখকর না হলেও আশা করা যায় সামনের দিনে আমাদের সম্পর্ক আরো মজবুত হবে। আমার তরফ থেকে সামান্য উপহার আপনার জন্য। আপনার যাত্রা শুভ হোক।
বলে টেপরেকর্ডারের মত কথাগুলো বলে ফোনটা রেখে দিলো। রাফি কোন কথা বলার সুযোগই পেল না। ফোনটা রেখে ব্যাগটার দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগেই পাইলট অনুরোধ জানায় ফোন অফ করে সিটবেল্ট বেধে নিতে। জেট এখনই টেকঅফ করবে। জানতেও পারলো না কোথায় পরবর্তী গন্তব্য। জেট ছুটতে শুরু করলো রানওয়ে বরাবর। রাফি চোখ বন্ধ করতেই পরিবারের সবার চেহারা ভেসে ওঠে। নাহ, তাদের কাছে ফিরে যেতেই হবে রাফিকে।

টিপসঃ
যে কোন সোসাল একাউন্টের পাসওয়ার্ড অবশ্যই একটু কঠিন রাখবেন। সংখ্যা, নাম্বার ও সিম্বল মিলিয়ে রাখবেন। যেমনঃ a5l4p3h2a1@(). সফটওয়্যার দ্বারা একে ক্রাক করতে ২ বিলিয়ন বছর লাগবে। আসা করি বুঝতে পেরেছেন। না বুঝলে পেজের ইনবক্সে টেক্সট করতে পারেন।

বিঃদ্রঃ আপনার বন্ধুদেরও invite করে গল্প পড়ার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে