হ্যাকারের_লুকোচুরি পর্ব-১১

0
1222

হ্যাকারের_লুকোচুরি পর্ব-১১

লেখা- sharix dhrubo

কিছুক্ষণের নীরবতা ভেঙ্গে বী‌প বীপ করে একটি আওয়াজ রাফিকে চিন্তার জগৎ থেকে বাস্তবতায় ফিরিয়ে আনলো। ল্যাপটপ থেকে এই অদ্ভুত আওয়াজটা আসছে। রাফি ল্যাপটপের কাছে গিয়ে কারনটা বোঝার চেষ্টা করলো। ভাইরাস প্রোগ্রামটি অফলাইন হওয়ার কারনে আর ট্রাকিং করতে পারছে না, তাই ১৫ সেকেন্ডের একটি কানেকটিভিটি এলার্ট দিচ্ছে, অর্থাৎ ১৫ সেকেন্ডের ভেতর যদি ভাইরাসটি অনলাইন হতে না পারে তাহলে হয়তো আর ট্রেস করা যাবে না টাকাগুলোকে। রাফির আইডেন্টিটি ত কমপ্রোমাইজ হয়েই গেছে আর এখন যদি অনলাইনে কানেক্ট না করা হয় তাহলে দেশের এক বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। সবকিছু ভেবে রাফি আবার ল্যান কানেকশন দিয়ে দিলো ল্যাপটপে। কয়েক সেকেন্ড লোডিং শো করে আবারও ট্রাকিং শুরু করলো ভাইরাসটি। রাফি তার ল্যাপটপের অন্যান্য সবকিছু মুছে দিলো, যদিও এর কোন প্রয়োজন আদৌ আছে কিনা জানে না সে। মাফিয়া গার্ল চাইলে তো সব কপি করে নিয়ে নিতে পারে। তবে রাফির সমস্যা হবে না। রাফি তার প্রতিটা ফাইলের ব্যাকআপ রাখে। ল্যাপটপে কোনকিছু না রাখলেও রাফির কিছু হারাবে না। আর এমন কিছুই নেই যা খুব বড় বিপদে ফেলবে রাফি কে। যতই হোক, ল্যাপটপ তো। পোর্টেবল হওয়ায় খুব সহজেই চুরি হয়ে যেতে পারে। রাফি তাই কনফিডেনশিয়াল কোনকিছুই ল্যাপটপে রাখতো না। যাওয়ার মধ্যে গেলো রাফির আইডেন্টিটি।
রাত ১০ টা বাজতে চললো। ভাইরাসটিকে অফলাইন করা যাবে না তাই রাফি ল্যাপটপটি নিয়ে বসে থাকলো হেডকোয়ার্টারে। এমন সময় রাফির ফোনে একটা মেসেজ এলো। আননোন সোর্স থেকে এসেছে ম্যাসেজটি যার বডিতে ছিলো
“রাতে না খেয়ে থাকলে অসুখ করবে। নীচে ডিনার অপেক্ষা করছে, ডিনার করে নিন”
মেসেজটি দেখে রাফির খটকা লাগলো। অফিসের কোথাও ডায়নিং ফ্যাসিলিটি নেই। তাহলে ডিনার আসবে কোথা থেকে!!! ডেস্ক ছেড়ে নীচে রিসিপশনে গিয়ে দাঁড়ালো রাফি। একজন ডেলিভারি বয় এগিয়ে এলো।
ডেলিভারি বয় – মি. রাফি?
রাফি – জ্বী বলুন?
ডেলিভারি বয় – স্যার, আপনার অর্ডার। কাচ্চি বিরিয়ানি আর বোরহানী।
কিন্তু রাফি ত কোন অর্ডার করে নি। কে করলো অর্ডার। যাইহোক পকেট থেকে টাকা বের করতে যাবে তখন ডেলিভারি বয় বললো পেমেন্ট হয়ে গেছে শুধু সাইন করে দিলেই হবে।
রাফি বলার ভাষা হারায় ফেলছে। রাফির কাছে ব্যপারটা মুরগী জবাই দিয়ে পানি খাওয়ানোর মত লাগছিলো। বেচারা ডেলিভারি বয়কে আটকে রেখে আর কি হবে। কলমের একটা খোচা দিয়ে বিদায় দিলো ছেলেটাকে।
আবারও মেসেজ এলো,
“তোমার প্রিয় রেষ্টুরেন্টের কাচ্চি। খেয়ে নাও, শরীর যেন খারাপ না হয়।”
রাফির কি রাগ করা উচিৎ নাকি খুশি হওয়া উচিৎ তা বোঝার ক্ষমতা নাই হয়ে গেল। পাগলের মত মাথা চুলকাতে চুলকাতে নিজের ডেস্কে গিয়ে বসলো। আসলেই অনেক খিদে লেগেছিলো রাফির। অতিরিক্ত টেনশন রাফির অনুভূতিকে ভোঁতা করে দিয়েছে। ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে দেখলো ভাইরাস মশাই ঠিকঠাক কাজ করছে কি না , তারপর খিদার তাড়নায় গোগ্রাসে টেনে নিতে থাকলো ফুল প্লেট কাচ্চির প্যাকেটটা। খেতে খেতে রাফির নজর গেলো ল্যাপটপের স্ক্রীনের দিকে,
স্ক্রীনে বড় বড় করে লেখা এলো,
“বড্ড কিউট লাগে তোমাকে খাওয়ার সময়, হালুমের মত হাপুসহুপুশ করে ”
খাবার গিলতে গিলতে ভিষম খেলো রাফি! কি হলো বিষয়টা! খাওয়ার সময় আমাকে কেমন লাগে সেটা মাফিয়া গার্ল কিভাবে জানলো! ভাবতে ভাবতে চোখ চলে যায় ল্যাপটপের ওয়েবক্যামের দিকে। হায় হায় বলে দুইবার কপাল চাপড়ালো রাফি। গুলির গতিতে ল্যাপটপের লীড নামিয়ে দিলো রাফি, নর্মালি রাফির ওয়েবক্যাম বাইরে থেকে ঢাকা থাকে কিন্তু ইদানিং অফিসের কাজের জন্য অনেক বেশী ব্যবহার করতে হয়েছে ওয়েবক্যামটি। তাই রিসেন্টলি বাইরের পর্দাটি সরানোই ছিলো। আজ যে কার মুখ দেখে ঘুম দিয়ে উঠেছে রাফি তা ভেবে পাচ্ছে না। বিকাল থেকে একের পর এক দূর্ঘটনা ঘটেই চলেছে রাফির সাথে। নাহ, মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। মাফিয়া গার্ল রাফির প্রতিটা ভূলের সুযোগ নিচ্ছে।
রাফি বুঝতে পারলো যে সে যত কম ভুল করবে তত কম মাফিয়া গার্ল তার সুযোগ নিতে পারবে। একদিনের জন্য অনেক বেশী ভূল জমিয়ে ফেলেছে রাফি। আর না। তাই ল্যাপটপটা যে অবস্থায় ছিলো সেভাবে রেখে কোয়ার্টারের উদ্দেশ্যে রওনা হলো রাফি।
পরদিন সকালে রাফি যথারীতি অফিসে ঢুকলো। ডেস্কে গিয়ে ওয়েবক্যাম এক হাত দিয়ে ঢেকে রেখে ল্যাপটপের লীড তুললো রাফি। হ্যাঁ এখনো ট্রাক করছে ভাইরাসটি। ওয়েবক্যামের উপর একটা কালো স্কচটেপ লাগিয়ে দিয়ে কাজ করতে বসলো রাফি। এদিকে গতকাল মাফিয়া গার্ল যেসব ডকুমেন্টস পাঠিয়েছিলো সেগুলো একজায়গায় করা শুরু করলো রাফি, হ্যাকারদের আইডেনটিটি থেকে শুরু করে যারা যারা এই চুরির সাথে সংযুক্ত বলে মাফিয়া গার্ল তার ডকুমেন্টস এ তুলে ধরেছে তার সব তথ্য একজায়গায় করে বিশ্লেশন শুরু করলো। ভাইরাসটি যে সব ব্যাংক একাউন্ট ট্রাক করেছে তার ও একটা তালিকা বের করে জড়িতদের সম্পৃক্ততা নিয়ে নিশ্চিত হলো রাফি।
সকল তথ্য উপাত্ত নিয়ে রাফি চলে গেলো ডাইরেক্টর স্যারের রুমে। উকি দিয়ে ভেতরে আসার অনুমতি চাইলো রাফি।
রাফি – স্যার, আসতে পারি?
ডাইরেক্টর – এসেছো রাফি ? এসো ভেতরে এসো। মনে মনে তোমাকেই খুঁজছিলাম। তুমি না এলে হয়তো ৫ মিনিটের মধ্যে তোমায় ডেকে পাঠাতাম। তারপর বলো কেসের কি প্রগ্রেস।
রাফি – কেস কিছুটা জটিল হয়ে আছে স্যার।
ডাইরেক্টর – কেন? কোন সমস্যা? সরাসরি বলতে পারো আমাকে।
রাফি তার হাতে থাকা কেসের ড্রাফট ফাইলটি স্যারের সামনে এগিয়ে দিলো।
রাফি – রিজার্ভ চুরি কেসের একটা ড্রাফট ইনভেস্টিগেশন, একটু চেক করে দিন স্যার।
ডাইরেক্টর কেসের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে চোখ ও কপালের অপূর্ব কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করছিলেন।
ডাইরেক্টর – (গম্ভীর ও কৌতুক কৌতুহলের সাথে) রাফি? তুমি কি শিওর? কারন যাদের উপর তুমি দোষারোপ করছো তাদের চেয়ারগুলো সরকার ব্যবস্থার অনেক উঁচুতে। অকাট্য প্রমাণ ছাড়া এদেরকে ছোঁয়াও সম্ভব না।
রাফি তখন স্যারের দিকে একটি পেনড্রাইভ এগিয়ে দেয় যাতে টেলিফোন কনভার্সেশন ও জালিয়াতি রিলেটেড কিছু অডিও প্রমান রয়েছে। ডাইরেক্টর সেগুলো শুনে কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলেন।

রাফি – স্যার, আপনার মত দেশপ্রেমিক যতদিন এই দেশে আছে ততদিন পর্যন্ত এই দেশে সুশাসন বজায় থাকবে এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
ডাইরেক্টর – তোমার মাফিয়া বয় ভাইরাসের কি আপডেট? ট্রাক করছে এখনো?
রাফির হুট করে মাফিয়া গার্লের কথা মনে পড়ে গেলো। একটা পুঁটিমাছ ভাইরাস দিয়ে কি কাজটাই না করে দেখালো সে।
রাফি – জ্বী স্যার ট্রাকিং চলছে এখনো। আমাদের যত দ্রুত সম্ভব এই দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে হবে কারন টাকাগুলো এইসব দেশের ব্যাংকগুলোতে ঘুরপাক খাচ্ছে।
বলে রাফি এতটা আলাদা লিষ্ট ডাইরেক্টর স্যারের হাতে তুলে দিলো, যাতে বেশ কয়েকটি দেশের ব্যাংকের নাম ও একাউন্ট নাম্বার রয়েছে।
ডাইরেক্টর – (লিষ্টে চোখ বোলাতে বোলাতে) চিন্তা করো না রাফি, আমি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিষয়টা হ্যান্ডেল করবো কারন তোমার ইভিডেন্স মতে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এই চুরির সাথে সংযুক্ত।
রাফি – আচ্ছা স্যার। আমি এখন আসছি।
ডাইরেক্টর – হ্যাঁ এসো, আর আমাকে কেসের আপডেট জানাতে ভুলো না।
রাফি – অবশ্যই স্যার।
বলে রুম থেকে বেরিয়ে আসে রাফি।
ডেস্কে বসে নিজের পার্সোনাল মেইল ওপেন করে রাফি। একটা নতুন মেইল দেখতে পেলো
মেইল আইডি দেখেই রাফি বুঝতে পারলো মেইলটি রুহী পাঠিয়েছে। রাফি মনে মনে ভাবলো বেচারী রুহীকে দিয়ে পুরাতন নথি ঘাটিয়ে যার জন্য ইভিডেন্স জোগাড় করতেছিলো সে এখন রাফির ল্যাপটপে বাসা বেঁধেছে, ফোন নাম্বারটাও জেনে গেছে, ইমেইলের ব্যপারটা না হয় বাদই দিলাম।
ইসসসস…. রাফি জিভ কামড়ে বসলো। রুহীর পাঠানো মেইল খোলার আগেই ফোনে মেসেজ চলে আসে রাফির। চোখ বন্ধ করে পকেট থেকে ফোনটা বের করে চোখের সামনে ফোনটা ধরে চোখ খুললো রাফি। রাফি যা ভেবেছিলো ঠিক তাই। মাফিয়া গার্ল আননোন সোর্স থেকে মেসেজ পাঠিয়েছে।
” এই রুহীটা কে! সে তোমাকে কেন ডোনার টোকেন ওনারের লিষ্ট পাঠাচ্ছে? আমার বিরুদ্ধে ইভিডেন্স জোগাড় করতেছো? তোমার গার্লফ্রেন্ডকে কিন্তু আমি উধাও করে দেবো খবরদার ওই মেয়ের কাছে ঘেসবা না. ফল ভালো হবে না।”
রাফি কোনকিছু চেক না করেই মেইল আইডি ট্যাম্পোরারী ডিজেবল করে দিলো। রাফির ফোনটা সিকিউর কিন্তু ফোনের নেটওয়ার্ক ত আর রাফির কন্ট্রোলে নেই।
রাফি হিসাব কষতে বসলো যে মাফিয়া গার্লের কাছে রাফির কি কি কন্ট্রোল আছে, যতক্ষণ ভাইরাসটা কাজ করছে ততক্ষণ রাফি ল্যাপটপ ডিসকানেক্ট অথবা কোন ধরনের সেফটি মেজার নিতে পারবে না। ভাইরাস কোন কারনে কাজ করা বন্ধ করে দিলে কারেন্সিগুলো শেষমেশ কোথায় গিয়ে জমলো তা ধরা যাবে না, ইমেইলে মাফিয়া গার্ল ঢুকে পড়েছিলো তাই ট্যাম্পোরারী ডিজেবল করে একটা যন্ত্রনা কমালো রাফি। আর বাকী ফোন। নাম্বার কিভাবে সিকিউর করা যায় সেই ব্যপারে কথা বলতে হবে।
ঠিক তখনই রাফির কাছে রুহীর ল্যান্ডলাইন থেকে ফোন এলো।
রাফি – হ্যালো মিস রুহী।
রুহী – (সোজাসাপ্টা প্রশ্ন) ডকুমেন্টসগুলো পেয়েছেন?
রাফি- জানি না। আমার ইমেইল ডিজেবল হয়ে গেছে। আমি হাতে হাতে ডকুমেন্টসগুলো নিয়ে নেব। এখন রাখছি।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো রাফি। ভাবতে লাগলো মাফিয়া গার্ল কি শুনেছে কথপোকথন। হঠাৎ রাফির মাথায় এলো, শুনলেই বা কি? অপরাধ করতেছি নাকি যে চুরি করে সবকিছু করতে হবে। এভাবে আর না। একটা বিহিত করতেই হবে।

দুইদিন পর।
ভাইরাসটির ট্রাকিং করা কমপ্লিট হলে রাফি টোটাল লিষ্টটা নিয়ে ডাইরেক্টর স্যারের কাছে জমা দিয়ে নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। ভাইরাসটার ডিস্টার্ব হবে ভেবে এই দুইদিন কিছু করতেও পারে নি রাফি। তাই এবার সব আনইউজুয়াল প্রোগ্রামিং ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নিজের ল্যাপটপের ফায়ারওয়্যালটা আবার মজবুত করে দিলো রাফি, সাথে আইপি এড্রেস পরিবর্তন করে নিজের নেটওয়ার্ক সিস্টেমকে ও পরিবর্তন করে ফেলে রাফি। সবকিছু ঠিক ঠাক করে আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে আপগ্রেড ল্যান কানেকশন দিলো রাফি।
সাধারনত মাফিয়া গার্ল হুটহাট করে হাজিরা দিলেও আজ আর কোন খোজ পাওয়া যাচ্ছে না। রাফি কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। যাক এটলিষ্ট প্রিয় ল্যাপটপটিকে তো মাফিয়া গার্ল মুক্ত করা গেছে।
কিছুটা স্বস্তিতে রাফি কাজেরভেতর ডুবে গেলো, ডাইরেক্টর স্যারের রুমে মিটিং থাকায় ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দেয়েছিলো। অফিস শেষে কোয়ার্টারে যাবার সময় নিজের মোবাইলটা চেক করতেছিলো রাফি। দেখলো বেশ কয়েকটি মিসকল, রাফির বাসা থেকেও ফোন দিয়েছিল আর সেটাও একাধিকবার।
রাফির বাসা থেকে অফিস আওয়ারে কখনো একবারের বেশী কল করে না কারন তারা জানে যে ছেলে ফ্রি থাকলে রিসিভ করবে আর না থাকলে পরে ব্যাক করবে।
কিছুটা উদ্বিগ্নতা নিয়েই বাসায় ফোন দিলো রাফি। মনটা ছটফট করতে থাকলো প্রতিবার রিং হওয়ায়। নাহ প্রথমবার কেউ ফোন ধরলো না। ২য় বার ফোন দিয়ে আল্লাহর নাম জপতে থাকলো রাফি। যেন রিসিভ হয় আল্লাহ যেন রিসিভ হয়।
অবশেষে রাফির মা ফোনটা ধরলো, মা হ্যালো বলার সাথে সাথে রাফি কথার বৃষ্টি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো।
রাফি – মা, মা, কি অবস্থা? আছো কেমন? সুস্থ আছো ত? বাবার শরীর ভালো ত, তোমাদের কোন সমস্যা হয় নি তো?
রাফির মা রাফিকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়
মা- চুপ কর বোকা। আমাদের কি হবে। সবাই ভালো আছি আর আজ তো আরো ভালো ছিলাম সারাটা বিকাল।
রাফি – যাক আমি ত ভয়ই পেয়ে গেছিলাম।
মা – হ্যাঁ তোর বাপ অবশ্য ক্ষেপেছে তোর উপর। এতবড় সত্যি গোপন করেছিস। তাই।
রাফি – মানে? কি লুকিয়েছি! কি বলছো আবলতাবল?
মা – আবোলতাবোল বলবো কি রে, আজ আমাদের মেয়ে এসেছিলো আমাদের বাসায়। কি মিষ্টি চেহারা, যেন নূর ছিটকে বের হচ্ছে।
রাফি ভাবলো ছোটবেলা থেকে তো ওর কোন বোন ছিলো না, হঠাৎ এই বুড়া বয়সে মা বাবার মেয়ে আসলো কই থেকে।
রাফি – তা তোমাদের মেয়ে এতদিন কই ছিলো? হারায় ফেলছিলা নাকি ছোটবেলায়, কখনো ত বলো নি। আমি ত জানতাম ই না আমার একটা বোন আছে।
মা – চুপ কর ফাজিল ছেলে। তোর বোন হতে যাবে কেন? আমি ত কখনো ভাবতেও পারি নি আমার ঘরে এত ফুটফুটে একটা বৌমা আসবে। আর তুই তো কখনো বলিস ও নি।
রাফি – (অবাক হয়ে) তোমার বৌমা! আমি বলবো! কি বলছো টা কি। মাথা আছে না গেছে। আমি কেন বলতে যাবো।

মা – ধরা পড়ে এখন সং সাজা হচ্ছে! দাঁড়া তোর বাবাকে বলছি (রিসিভার থেকে মুখ সরিয়ে রাফির বাবাকে ডাকতে থাকলো রাফির মা, তারপর রাফির ভালোমানুষ সাজার ভান করার কথা বলে নালিশ দিয়ে ফোনটা রাফির বাবার হাতে তুলে দিলো)
বাবা – কিরে রাফি! কি বলছে তোর মা!
রাফি – (সালাম দিয়ে) বাবা কি হয়েছে একটু খুলে বলবে? মা সেই প্রথম থেকে কি সব যা তা ……..
বাবা – (থামিয়ে দিয়ে) তার আগে তুই বল, নতুবা যদি আমাদেরকে বলতিস তো আমরা কি না করতাম? এত সুন্দর সুশ্রী বৌমা কি আর সহজে জোটে!
রাফি – বাবা। ও বাবা। কি হয়েছে এতটু খুলে বলো না। আমি না মাথামুন্ডু কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।
বাবা – (রাগ আর ইয়ার্কি মেশানো গলায়) আজ তোর গার্লফ্রেন্ড এসেছিলো বাসায়, হারামজাদা।
বাবার মুখে গার্লফ্রেন্ড আর হারামজাদা শব্দদুটো শুনে রাফির বাতাসেই ভিষম খেলো। আমার গার্লফ্রেন্ড! অথচো আমি জানি না! কই থেকে উদয় হলো।
রাফি – কি বলছো কি বাবা। আমার গার্লফ্রেন্ড! আমার তো কোন গার্ল(!)ফ্রেন্ড ই নাই তো গার্লফ্রেন্ড কোথা থেকে আসবে।
বাবা – সেটা তো তুই জানিস। এমন ভাব নিয়ে ঘরে ঘুরতি যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানিস না। আর তলে তলে এতদূর।
রাফি – বাবা, মশকরা কইরো না ত, মা কে ফোনটা দাও।
রাফির বাবা রাফির মা কে ফোনটা দিলো আর বলতে লাগলো যে তার ছেলে এমন ভাব নিচ্ছে যে সে কিছুই জানে না।
মা – (হাসতে হাসতে) হ্যা বল কি বলবি।
রাফি – বলো ত মা কি হয়েছে! ভনিতা করবা না, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলবা।
মা – কি আর বলবো, সকালবেলা নাস্তা করে বারান্দায় পেপার পড়ছিলাম তোর বাবা আর আমি, এমন সময় দরজায় কে যেন এলো। উকি দিয়ে দেখি একটা পরী দাড়িয়ে আছে, দেখেই মনটা জুরিয়ে গেলো, দরজা না খুলেই জানতে চাইলাম কে, কাকে চায়? মেয়েটা তোর নাম ধরে বললো যে তোরা নাকি পূর্বপরিচিত, আর সে জানে তুই জব পেয়ে দূরে চলে গেছিস আর আমাদের কি অবস্থা তা জানার জন্য ওকে পাঠিয়েছিস।
রাফির তো এবার মাথা চক্কর দিতে থাকলো। কে না কে বাসায় ঢোকার চেষ্টা করেছে তাও আবার রাফি পাঠিয়েছে সেই কথা বলে? ভয়ংকর ত।
রাফি – কি বলছো কি মা? আমি পাঠিয়েছি! কই আমি ত কাউকে পাঠাই নি।
মা – ও বলেছিলো যে তুই এমনটাই বলবি, এখনো তোদের বিষয়টা বাসায় জানাস নি, তাই। সেইকারনেই তো ফোন দিয়েছিলাম তোকে। তুই তো মহা বিজি। তোকে কি আর ফোনে পাওয়া যায়!
রাফি – মিটিং এ ছিলাম। তারপর কি হলো?
মা – তারপর আর কি? অমন ফুটফুটে মেয়েকে যদি দরজায় দাঁড় করিয়ে রাখি তো এই সংসারের অমঙ্গল হবে যে।
রাফি অফিসের সামনে একটা বেঞ্চে ধাপ করে বসে পড়লো।
রাফি – তারপর কি হলো?
মা – সে কি লজ্জা পাচ্ছিলো মেয়েটা, বার বার বলছিলো যে ও চাইতো সবসময় আমাদের সাথে পরিচিত হতে, তুই নাকি সবসময় ওকে বারন করতিস, যে যতদিন তোর চাকরী বাকরি না হচ্ছে ততদিন নাকি তুই বাসায় কিছু বলবি না! (অভিমানী সূরে) কেন রে? আমাদের বললে কি আমরা না করে দিতাম নাকি!
রাফি – মা, এসব প্রশ্ন পরে করো, আগে বলো তারপর কি হলো?
মা – কি আর হবে? আমাদের পা ছুঁয়ে সালাম করে গল্প জুড়ে দিলো, ও নাকি ছোটবেলা থেকেই তোর ফ্যান ছিলো। তোর সবকিছু ফলো করতো, আর মনে মনে তোকেই আইডল মানতো। তুই ই নাকি শুরু শুরু ওকে পাত্তা দিতিস না। তারপর তোর প্রতি ওর ভালোবাসা দেখে নাকি তুইও ওর পিছে পড়ে যাস। এমন মিষ্টি আর লক্ষি মেয়েকে কোন ছেলে ইগনোর কিভাবে করতে পারে সেটাই আমি বুঝি না।
রাফি – তারপর কি হলো?
মা – তারপর আর কি? মেয়েটা নিজ হাতে দুপুরের রান্না করলো আমাকে পাশে বসিয়ে, তিনজন গল্প করতে করতে দুপুরের খাওয়াটা সেরে নিলাম আর গল্প করতে করতে কখন যে বিকেল গড়িয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না।
রাফি – মানে ওই মেয়ের সাথে সারা দিন কাটিয়েছো তোমরা দুইজন!!!!! তাড়াতাড়ি চেক করে দেখো ঘরের কিছু চুরি গেছে কি না? আচ্ছা তোমাদের কি ঘুম ঘুম লাগছে? খাবারে কিছু মিশিয়ে টিশিয়ে দেয় নি ত আবার!
মা – চুপ কর। যত্তোসব বাজে কথা। এই শোন না, আমার না মেয়েটাকে খুব পচ্ছন্দ হয়েছে, তোর বাবারও, তাই মেয়েটাকে বলে দিয়েছি যে আগামীকাল আমরা তাদের বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যাবো।
রাফি – কিইইইইইইইই!!! তোমাদের মাথা ঠিক আছে তো! কথা নাই বার্তা নাই কে না কে এসে দুপুরে রান্না করে খাইয়ে গেলো আর অমনি তাকে ঘরের বৌ বানানোর জন্য উঠে পড়ে লেগে গেলে। আমি মানি না। আর এখন আমার বিয়ে করার সময় নেই। নতুন চাকরী। তাছাড়া …..
মা – সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। তোর কাজ হবে শুধু বিয়ের দিন এসে চুপচাপ তিনবার কবুল বলে নিবি। আর হ্যাঁ মেয়েটাকে বকাঝকা করিস না। অনেক ভয়ে ভয়ে ছিলো যে তুই জানতে পারলে কি না কি বলিস। আমি মেয়েটিকে কথা দিয়েছিলাম যে তুই ওকে কিছু বলবি না। সেটা শুনে খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো মেয়েটা। আমি তো ঠিক করে ফেলেছি, যদি এই ঘরে কেউ বৌ হয়ে আসে তো ওই মেয়ে ই আসবে।
রাফি – কিন্তু মা……….
মা – কোন কিন্তু না। একদিনেই মেয়েটা কত মায়ায় জড়িয়ে গেলো। আমি আমার বৌমা কে ছাড়া আর থাকতে পারবো না। তাই কালই যাবো ওদের বাড়ি, গিয়ে কথা ফাইনাল করে আসবো একবারে।
রাফি – বৌমা পর্যন্ত চলে গেছো! কিন্তু মা আমি তো কোন মেয়ের সাথে প্রেম করি না। আমার সত্যিই কোন গার্লফ্রেন্ড নেই।
মা – যা তোর কথাই মানলাম যে তুইই প্রেম করিস না, তো প্রেম করবি। বিয়ের পরে কি প্রেম হয় না নাকি। তোর বাবাকে দেখ। আর গার্লফ্রেন্ড না থাকলে তো ভালই। আমার বৌমা কে আমার খুব পচ্ছন্দ হয়েছে। ওকে ছাড়া আর ভালো লাগছে না আমার।
রাফি জাদুটোনায় বিশ্বাস করে না কিন্তু হঠাৎ করে একটা মেয়ের প্রতি এতটা মোহ তৈরী হয়ে যাওয়া নিছক কালো জাদু ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু কে সে, নাম কি, থাকে কোথায়!
রাফি – তা মা, তোমার বৌমার নাম কি? বাড়ি কোথায়?
মা – কেন! জানিস না বুঝি! আচ্ছা জানতে হবে না। বাসররাতে জেনে নিস। (বলেই মুখ চেপে হাসতে থাকলেন)
রাফি – এ ত এক মহা যন্ত্রনায় পড়লাম, দেখো মা আমি কাল আসতেছি তাহলে, হঠাৎ কি হলো তোমাদের সেটাও ত একটু দেখি।

মা – ওমা, (ফোন সরিয়ে) কইগো শুনছো? তোমার ছেলের তর সইছে না, কালই চলে আসতে চায়।(বাবার কথাগুলো শুনতে পায় না রাফি) (ফোন কাছে নিয়ে) যেমন বাপ তেমন ছেলে। শোন রাফি, তোর বাবা বলেছে এখনই আসতে হবে না, কাল আমরা গিয়ে কথাবার্তা বলে আসি, এরপর দিনক্ষণ ফিক্স করে নাহয় তোকে ডেকে নেবো। ঠিক আছে? রাখছি এখন। ভালো থাকিস আর হ্যাঁ আবারো বলছি, বৌমাকে খবরদার কিচ্ছুটি বলবি না, যদি বলিস তো কাল জানতেই পারবো। এখন সোজা বাসায় যা, গিয়ে ফ্রেস হয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিস ঠিকঠাকভাবে। রাখছি।
রাফি – আচ্ছা মা, ভালো থাকো।
বলে ফোনটা কেটে দিলো রাফি। রাফি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারলো যে এখন মা বাবাকে যা ই বলি না কেন তা শোনার কোন ইচ্ছাই তাদের নেই। নিজেকে কেমন যেন অসহায় মিসকিনের মত লাগলো রাফির। নাহ, কালই ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যেতে হবে, কি না কি করতেছে বাবা মা, রাফিকে বাড়ি গিয়ে সে সব থামাতে হবে।
পরদিন সকালে রাফি অফিসে এসেই চলে গেল ডাইরেক্টর স্যারের রুমে ছুটির জন্য।
রাফি – (সালাম দিয়ে) স্যার আসতে পারি।
ডাইরেক্টর – ( ফাইল ঘাটতে ঘাটতে) ও হ্যাঁ রাফি, এসো এসো।
রাফি – স্যার একটু দরকার…….
ডাইরেক্টর – (থামিয়ে দিয়ে) রাফি দেখো ত তোমার দেয়া রিজার্ভভ সিস্টেম চুরির রিপোর্ট সব ঠিক আছে কি না।
কিছু বলতে না পেরে চুপচাপ ফাইল উল্টাতে থাকে রাফি।
রাফি – জ্বী স্যার সব ঠিক আছে। স্যার একটা কথা…….
ডাইরেক্টর – সবকিছু ঠিক থাকলে চটপট তৈরী হয়ে নাও, আজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জরুরী বৈঠক ডাকা হয়েছে এই কেস নিয়ে, তোমাকে এই কেস ইনভেস্টিগেশন ডিটেইলস সবার সামনে প্রেজেন্ট করতে হবে এবং কেসের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে হবে। আর ২ ঘন্টা পর মিটিং শুরু হবে, আধ ঘন্টার মধ্যে আমরা কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেবো। so get prepared.
রাফি – (মুখ ভার করে) ওকে স্যার।
ডাইরেক্টর – (ফাইল ঘাটতে ঘাটতে) ও হ্যাঁ রাফি তুমি যেন কি বলতে চাচ্ছিলে?
রাফি – (মলিন একটা হাসি দিয়ে) না স্যার। কিছু না।
বলে অফিস রুম থেকে বের হয়ে গেলো। ছুটি চাইতে এসে বিশাল দায়িত্ব মাথায় চেপে বসলো রাফির। ইয়া আল্লাহ , এ কোন পরিক্ষায় ফেললে তুমি আমায়। অফিসে মাফিয়া গার্ল, বাড়িতে বেনামী গার্লফ্রেন্ড ।।। আআআআআআআআআ, কি হচ্ছে আমার জীবনের সাথে। ছুটিই তো চাইতে পারলাম না তাহলে মা বাবা কে আটকাই কিভাবে?
১ ঘন্টা পর রাফি এবং ডাইরেক্টর স্যার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থিত হলেন। মিটিং শুরু হতে এখনো আধ ঘন্টা বাকি, তখন রাফির ফোনে ফোন এলো। রাফির মা ফোন দিয়েছে, রাফি রিসিভ করতেই,
মা – হ্যালো , রাফি? আমরা রেডি হয়ে গেছি, তোর বাবা আর আমি এই আধাঘন্টার ভেতর রওনা দিবো বৌমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। দোয়া করিস সব যেন ঠিকঠাকভাবে হয়ে যায়।
রাফি – ( কিছুটা উচ্চস্বরে) কি হবে! কি করছো টা কি তোমরা! তোমার ছেলেকে চেনো না তুমি।
মা – (আহ্লাদে) চিনিই তো আমার সোনা বাবা। লজ্জায় কিছু বলতেও পারে নি বাবুসোনা আমার। মন দিয়ে কাজ করিস আর টেনশন করিস না। তোর বাবা আর আমি এদিকটা ঠিক সামলে নেব।
রাফি – (করুন কন্ঠে) মা এই যন্ত্রনা কি না দিলেই নয়!
মা – (একটু ক্ষেপে গিয়ে) দেখ রাফি, ডিসিশন যখন নিয়েছি তোর বিয়ে দেবো আর ঐ মেয়ের সাথেই দিব তখন তুইও ব্যপারটা মাথায় গেঁথে নে। প্রেম করে মাঝপথে হাত ছেড়ে দেয়ার মত ছেলে আমার রাফি না, আর যেখানে আমরা মত দিয়েই দিয়েছি তখন আর চিন্তা কিসে।
রাফি – (হাল ছেড়ে দিয়ে) নাহ কোন চিন্তা নেই মা। আল্লাহ যা করেন ভালর জন্যই করেন। এখন রাখছি। মিটিং এ যাচ্ছি।
মা – আচ্ছা বাবা, সাবধানে থাকিস, আমাদের জন্য টেনশন করিস না। আমরা সব গুছিয়ে নেবো। আল্লাহ হাফেজ।
রাফি – আল্লাহ হাফেজ।
ফোন কেটে দিয়ে আকাশ কুসুম চিন্তায় ডুব দিতে গিয়েও পারে না রাফি। দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধীকারীর সামনে আজ রিপোর্ট পেষ করবে রাফি নিজে। এই মিটিং এর চিন্তা থেকে হয়তো অপরিচিত মেয়েকে বিয়ে করে নেওয়াটা একটু বেশীই সহজ বলে মনে হলো রাফির।
৪ ঘন্টা পর,
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সবাই বের হয়ে আসতে লাগলো, একে একে সবাই এসে রাফিকে কংগ্রাচুলেশনস জানালো তার সফল ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট দেখে। প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন তিনি নিজে এই কেসের সার্বিক তত্বাবধান করবেন এবং রাফিকে যে কোন প্রয়োজনে সরাসরি তাকে জানাতে বলেছেন।
রাফি যখন খুশি খুশি মনে সবার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত তখন একটা ফোন এলো রাফির। মোবাইল স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে হাসিটুকু উবে গেলো রাফির। আননোন সোর্স থেকে ফোন, রাফির বুঝতে বাকী রইলো না যে কে ফোন দিয়েছে।
রাফি – হ্যালো রাফি বলছি।
– (কম্পিউটার জেনারেটেড ফীমেল ভয়েস) Congratulations for your achievement, Mafia boy! Report direct to the primeminister, not bad..
রাফি বুঝলো না আসলে তার কি বলা উচিৎ তাই ইতস্তত করতে করতে থ্যাংকস জানিয়ে ফোনটা কেটে দিলো।
আবারও ফোনটা বেজে উঠলো রাফির, এবার আর স্ক্রীনের দিকে না তাকিয়েই রিসিভ করে বলা শুরু করলো
রাফি – কি চান আপনি, কেন আমার জীবনটা নরক বানাচ্ছেন?
– হ্যালো, রাফি ? কি সব আবোলতাবোল বকছিস, মাথা ঠিক আছে ত? অসুখ করে নি ত আবার।
গলাটা শুনে খুব চেনা লাগলো রাফির, কান থেকে ফোনটা নামিয়ে দেখলো মা ফোন দিয়েছে। নিজের গালে নিজে একটা আলতো চড় বসিয়ে দিয়ে বললো
রাফি – না মা , ওই রং নাম্বার ডিস্টার্ব করতেছে খুব। তারপর তোমাদের কি খবর, কোথায় তোমরা?
মা -(হাসি হাসি মুখ করে) এইতো বেয়াই বাড়ি। আল্লাহর অশেষ রহমতে আগামী শুক্রবার বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছে। তুই কাল পরশুর ভেতর চলে আয়।
রাফি মাথায় হাত দিয়ে বসলো। রাফি ভেবেছিলো পারিবারিক জানাশোনা হতে মাসখানেক সময় ত নেবেই দুই পরিবার ততদিনে মেয়ের মতলব বোঝার সময় পাবে রাফি। এখন দেখছে ৪ দিনের মাথায় বিয়ে।
রাফি – মা, তোমরা কি পাগল হয়ে গেলে? চেনা নেই জানা নেই নতুন একটা পরিবারের সাথে সম্পর্কে জড়াতে যাচ্ছো তাও ৪ দিনের মাথায়।
মা – আরে না রে বোকা। আমরা তো বাসা থেকে প্লান করে গেছিলাম মাসখানেক ত সময় নেব আমরা। কিন্তু ওই বাড়ি গিয়ে তো আমরা পুরোই অবাক।
রাফি – কেন অবাকের কি হলো? ভূত দেখছো নাকি?

মা – আরে ফাজলামি রাখ, গিয়ে দেখি বেয়ান সাহেব তোর বাবার স্কুল কলেজ ও ভার্সিটি জীবনের বন্ধু। আর তোর শ্বাশুড়ি ওই ভার্সিটিতে তোর বাবার ব্যাচমেট ছিলো। দুজনকেই তোর বাবা ভালো করে চেনে ইনফ্যাক্ট তাদের প্রেম তোর বাবাই করে দিয়েছিলো। (বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে) বেয়াই তো বলেই দিলেন, মেয়ের পচ্ছন্দই আমার পচ্ছন্দ কিন্তু এখন দেখছি আমার পচ্ছন্দই মেয়ের পচ্ছন্দ( আবার অট্টহাসি)! এখন শোন, কাল পরশুর ভেতর চলে আয়, সবকিছু গোজগাছ করার ব্যপার আছে। আর হ্যাঁ, তোর কোনো ব্যবহারে যেন তোর বাবা ও তার বন্ধুর সম্পর্কে কোন ফাটল না ধরে সেই দিক মাথায় রাখিস। এখন রাখছি।
রাফি বরফের মত জমা ঠাট হয়ে মায়ের কথাগুলো শুনলো, শুধুমাত্র মেয়ের কারসাজি হলে চলতো কিন্তু এখন দুই ফ্যামিলি মিলে গেছে। নিজেকে কোরবানী দেয়া ছাড়া আর কোন গতি দেখছে না রাফি।
অফিসে এসে ডাইরেক্টর স্যারকে বিয়ের সংবাদ জানালো রাফি। ডাইরেক্টর স্যার তো যার পর নাই খুশি হলেন। কিন্তু বিয়ের ডেট শুনে কিছুতেই খুশি হতে পারলেন না।
ডাইরেক্টর – কি ব্যপার রাফি? নিজের বিয়ে নিয়ে এত হেয়ালী করলে হয়? আজ বাসায় গিয়ে জামাকাপড় গুছিয়ে নাও। আমি কালকের ভেতর তোমার ছুটির ব্যবস্থা করছি। এখন যাও। আর হ্যাঁ, কংগ্রাচুলেশনস রাফি। তোমার সাফল্য ও নতুন জীবনের জন্য।
রাফি – ধন্যবাদ স্যার। (অনিচ্ছাকৃত হলেও) আমার বিয়েতে কিন্তু আপনাকে আসতেই হবে।
ডাইরেক্টর – এত বড় অফিস কে চালাবে শুনি? তুমি অফিস চালাও আর আমি গিয়ে তোমার বিয়ে খেয়ে আসি (অট্টহাসি দিয়ে)
রাফি – কি যে বলেন স্যার। আসছি তাহলে।
ডাইরেক্টর – হ্যাঁ এসো তাহলে। কাল সকালে এসে লীভ অর্ডার কালেক্ট করে নিও।
রাফি – ধন্যবাদ স্যার।
ওইদিনের মত অফিস থেকে বেরিয়ে গেল রাফি। এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভাবতে ভাবতে কোয়ার্টারে চলে গেল।
পরদিন সকালে অফিসে এসে লীভভ অর্ডার কালেক্ট করলো ডাইরেক্টর স্যারের কাছ থেকে। সবাইকে দাওয়াত দিয়ে বের হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো রাফি।
বাড়িতে পৌছে তো চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল রাফির। এলাহী আয়োজন চলছে চারিদিকে। পুরাতন বাড়িটাতে নতুন রং করা হয়েছে, লাইটিং করা হয়েছে পুরো বাড়ি। ঘরে ঢুকে মোটামুটি বংশের সব আত্বীয়স্বজনদের চেহারা দেখতে পেলো রাফি। রাফিকে দেখা সবাই ছুটে আসলো, সাথে রাফির মা ও।
মা – তুই এসেছিস বাবা, আয়।
বলে রাফিকে তার কামরায় নিয়ে যায় রাফির মা। ঘরে ঢুকে তো আরো অবাক রাফি। সব পুরাতন আসবাব বদলে নতুন আসবাব, ঘরে এসি, টিভি লাগানো। অবাক হয়ে গেলো রাফি এসব আয়োজন দেখে। ক্লান্ত থাকায় ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে গেল রাফি। সন্ধ্যায় ঘুম ভাংলে বাইরে এসে হইচই দেখতে পায় সবার। এত আনন্দ উৎসাহে মধ্যে ডুবে আছে সবাই অথচো যার বিয়ে তারই মন খারাপ। যার সাথে সারা জীবনের জন্য সংসার পাততে যাচ্ছে রাফি তার চেহারা তো দূর, মুখের দুই একটা কথা পর্যন্ত শোনে নি রাফি।
আর বেরসিক লোকজন কেউ রাফিকে একটু কথা বলার সুযোগ ও করে দেয় নি। রাফি শেষমেষ সবকিছু আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলো। গায়ে হলুদ হলো খুব ধুমধাম করে। রাফি চাচ্ছিলো যেন ওর হবু বৌটা এসে একবার উকি দিয়ে যায়। একটা বারের জন্য দেখতাম মেয়েটার কোন পাকা ধানে মই দেয়ার জন্য আজ রাফির কলিজা কুচি কুচি করেছে।
বিয়ের দিন শত চেষ্টা করেও রাফি নিজের বৌয়ের চেহারা দেখতে পেলো না। লাল বেনারশী, হাতে চুড়ি মাথায় ঘোমটা সবই দেখা যাচ্ছে দূর থেকে কিন্তু না চেহারা বোঝা যাচ্ছে না কথা শোনা যাচ্ছে । যখন কাজী আর মেয়ের পরিবার রাফির সামনে এসে কাবিননামা পড়ে শুনিয়ে কবুল বলতে বললো তখন রাফির অন্তরাত্মা চেচিয়ে বলতে চেয়েছিলো, আমি আমার বৌয়ের মুখ না দেইখ্যা বিয়া করুম না, কিন্তু চারিদিকে সবার উৎসুক চোখ আর আর্তি দেখে রাফি আর কিছুই বলতে পারলো না। এতদিন পর সে বুঝলো জামাইয়ের নাকে কেন রুমাল থাকে। শেষমেশ নিজের বুকে পাথরচাপা দিয়ে সবাইকে শুনিয়ে ৩ বার কবুল বলেই ফেললো রাফি। যাহ আল্লাহ ভরসা।
সব আয়জন শেষ করতে করতে বেশ রাত হয়ে গেলো। ঘর ভর্তি মেহমান তাই ছাদে দাড়িয়ে রইলো রাফি। কমিউনিটি সেন্টার থেকে বৌ আনার সময় ভেবেছিলো একটাবার চেহারা দেখে নেবে কিন্তু গাড়ির ভেতরে নিজের বাপের সামনে আর সে সাহস করে উঠতে পারে নি রাফি। ছাদে বসে সাত দুনিয়ার চিন্তা শেষ করে বাসরঘরে ঢুকলো রাফি। দরজাটা লাগিয়ে দিতেই খাট থেকে নেমে গুটিগুটি পায়ে কে যেন এসে রাফিকে কদম্বুচি করে আবারো খাটের উপর গিয়ে বসলো।
রাফি কিছুটা অবাক হয়ে কিন্তু বিচলিত না হয়ে মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেয়েটা বলা শুরু করলো,
– দেখুন এভাবে বসে থাকতে থাকতে আমার দম আটকে আসতেছে। যদি সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় তো কাপড়টা চেন্জ করতে পারি?
গলাটা খুব চেনা চেনা লাগছে রাফির। মেয়েটার সামনে বসে টুপ করে ঘোমটা সরিয়ে দিলো রাফি। নিজের বৌয়ের চেহারা দেখে নিজেই বিস্মৃত হয়ে গেছে রাফি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে