হ্যাকারের_লুকোচুরি পর্ব-১৫

0
1208

হ্যাকারের_লুকোচুরি পর্ব-১৫
শেষ পর্ব সন্ধার পর।

লেখা- sharix dhrubo

দেশের ভেতরে থাকা দেশের শত্রুদের সমূলে উৎপাটন করার পথে এক এক ধাপ করে এগোতে থাকে দুইজন।
কিন্তু রাফি একটা জিনিস বুঝতে পারে না, মাফিয়া গার্ল এইসব ডকুমেন্টস কিভাবে পায়?প্রতিটা ডকুমেন্টস এতোটা কনফিডেনশিয়াল যে এগুলো ভুলেও কেউ অনলাইন করার চিন্তা করবে না।
কৌতুহল সামলাতে না পেরে রাফি জানতে চাইলো মাফিয়া গার্লের কাছে,
রাফি – একটা প্রশ্ন না করে পারছি না, আপনি এত সহজে কিভাবে এইসব ডকুমেন্টস পেয়ে যান। এগুলো পাওয়া কি এতই সোজা। কোথায় কার কাছে এসব ডকুমেন্টস পাওয়া যাবে তা আন্দাজ করে এইসব ডকুমেন্ট হাতড়ানো ও তো কম ঝামেলার ব্যপার না। তাহলে কিভাবে?
– আগেই তোমাকে বলেছি, I have a very efficient partner. তার যদি কোনকিছু খুঁজতে হয় তাহলে একটা সূচনা ক্লু এর প্রয়োজন শুধু। অনেকটা গুগোল সার্চ ইন্জিনের মত। তুমি যেমন একটা শব্দ সার্চ দিয়া ওই শব্দের সাথে জড়িত সবকিছু পেয়ে যাও, ঠিক তেমনই। কিন্তু গুগোল শুধুমাত্র পাবলিক কন্টেন্ট শো করতে পারে, কিন্তু আমার পার্টনার? সাইবার জগতের এমন কোন পাবলিক, প্রাইভেট, সিক্রেট, সুপার সিক্রেট, লকড, হীডেন ব্লা ব্লা ফাইল নেই যা আমার পার্টনারের চোখ ফাঁকি দিতে পারে।
রাফি – তোমার পার্টনার মানে হাইড্রা!
কিছুক্ষণের জন্য নীরবতা চললো। নীরবতা ভেঙ্গে কথা বললো মাফিয়া গার্ল।
– I can drop all of this at once and let you die, if you insist.
রাফি – (দুই একটা কাশি দিয়ে) না না ঠিক আছে। আমি তো কৌতুহলের বশে…….
– your curiosity can kill you now. I’m helping you doesn’t mean you can question me like this.
বলেই ফোনটা কেটে দেয় মাফিয়া গার্ল। রাফি একদম চুপ হয়ে যায়। আসলেই তো, রাফি হতে পারে বড় মাপের হ্যাকার কিন্তু এত পাওয়ারফুল সার্চ ইন্জিন নেই ওর কাছে যে এই কেসগুলোর ইভিডেন্স এত দ্রুত এবং ইফিশিয়েন্টলী খুঁজে বের করতে পারবে, না জানি কার মেইলে অথবা কার ক্লাউড স্টোরে এসব ডকুমেন্টস রয়েছে যা সুড়সুড় করে চলে আসছে মাফিয়া গার্লের কাছে।
বেশ কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। হঠাৎ রাফির কাছে রিজার্ভ কারেন্সি চুরির কমপ্লিট ইভিডেন্স চলে আসে। সাথে মোবাইলে একটা কল ও। ডজনখানেক ডিমওয়ালা নাম্বার।
– Did you have it? The complete evidence?
রাফি – wait a minute, let me check.
রাফি কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করলো। বিয়ের জন্য ছুটিতে যাবার আগে রাফি যে ইভিডেন্সগুলো কালেক্ট করেছিলো সেগুলোকে লিংক করা হয়েছিলো না। ইভিডেন্স ছিলো উপরমহল জড়িত কিন্তু কিভাবে জড়িত তা প্রমাণ করা বাকি ছিলো। রাফি খুঁজে দেখলো একটা দুটো করে মুক্তা দিয়ে গাথা মালার শেষ মুক্তাটি গেঁথে গিট্টু দিয়ে দিয়েছে মাফিয়া গার্ল।
রাফি – আমার মনে হয় সবকিছু ঠিকঠাকই আছে।
– Now call directy to the Prime Minister. Tell her everything.
রাফি – okay. ধন্যবাদ।
– ধন্যবাদ পরে দিয়ো কিন্তু এখন ল্যাপটপটা কাধে নাও আর জানালা দিয়ে পালাও।
রাফি – কেন?
– বিল্ডিং এর সিসিটিভি শো করছে বিল্ডিংএ পুলিশ ঢুকছে। আর সারা বিল্ডিং এ তোমার মত মোষ্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল আর একটাও নাই।
রাফি – আমি এখন ৯ তলায়, জানালা দিয়ে পালাবো কিভাবে।
– it is a safe house, it always has a 2nd exit. I’m cutting the power of your building. Stay on the phone.
রাফি – তারা যদি এখনো নীচতলায় থাকে তাহলে আমি চাইলে সামনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতে পারি।
– সেটাই করতে হবে কারন বিল্ডিংয়ের সিসিটিভি ফুটেজ শো করছে সূর্যই পুলিশ ডেকে এনেছে।
রাফি – সূর্য! !!!!

– don’t blame him. He is just following the protocol. He helped you till the end. সূর্যই যদি পুলিশ ডেকে আনে তাহলে সব exit ই সিকিউর করে দেবে।
রাফি – এখন কি করা উচিৎ!
– আমি বিল্ডিংয়ের ফায়ার এ্যালার্ম এক্টিভেট করে দিচ্ছি। স্প্লিংকার চালু হলে পানি ছড়ানো শুরু হয়ে যাবে আর তাতে সবাই একসাথে বের হবার চেষ্টা করবে। ভীড়ের সাথে তাল মিলিয়ে বের হয়ে যেতে হবে তোমাকে।
রাফি তার ল্যাপটপকে লেমিনেশন কভারে মুড়ে নিলো।
রাফি – আমি রেডি।
– Cutting the power, activating fire alarm.
হুট করে বিদ্যুৎ চলে গেলো আর সাইরেন বাজতে শুরু করলো।
ফায়ার এক্সিট আর শিড়িগুলো লোকারন্য হয়ে গেলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এদের কারোরই বিল্ডিং এ আগুন লাগলে কি করনীয় তা জানা নেই। হুড়মুড় করে বের হতে গিয়ে কয়েকজন আহত ও হলো।
এদিকে যেসব পুলিশ লিফট ব্যবহার করে উঠতে চাচ্ছিলো তারা বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারনে আটকা পরে গেল আর হুড়োহুড়ি করে বিল্ডিংয়ের লোকজন নীচে নামার কারনে যেসব পুলিশ শিড়ি ব্যবহার করছিলো তারাও পিছিয়ে যেতে বাধ্য হলো। রাফি সেই ভীড়ে মাথা গুঁজে বিল্ডিং থেকে বের হয়ে এলো। মেইন গেটে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রাখলে এতো পরিমান মানুষ দল বেঁধে শিড়ি আর ফায়ার এক্সিট দিয়ে বের হতে লাগলো যে বাধ্য হয়ে ব্যারিকেড তুলে দিতে বাধ্য হলো, আর রাফিও সুযোগ পেয়ে গেল মুখ লুকিয়ে পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে মেইন গেট দিয়ে বের হয়ে আসতে।
রাফি তখনও ফোন লাইনে ছিলো মাফিয়া গার্লের সাথে। চারপাশের পরিস্থিতি বুঝে রাফি যখন নিজেকে আপাতদৃষ্টিতে নিরাপদ মনে করলো তখন ফোনে বললো,
রাফি – I’m clear.
– Not yet. Two persons are following you. It seems they are not sure about you but they are following you from the building.
রাফি – বলেন কি?
– তুমি ডান দিকের গলিতে ঢুকে পড়ো। রাস্তার মাথায় একটা কালো টয়োটা এলিয়েন দেখতে পাবে। রেজিস্ট্রেশন নাম্বার Dk m ১২৩৪৫। Ubar থেকে কানেক্ট করে দিয়েছি। যাষ্ট উঠে পড়ো। আমি ড্রাইভারের GPS সেট করে দিয়েছি। Just go.
রাফি – ডানদিকে। শিওর তো?
– I CAN SEE and my navigation system are absolute. Just go but act like its normal. Do not alart them with your wrong move.
রাফি – (উৎকন্ঠা নিয়ে) এমন সময়ে কিভাবে নরমালি এ্যাক্ট করে? যাইহোক ফোনটা রাখছি।
– Good luck. Mafia Boy.
রাফি ফোনটা কেটে দেয়। রাফির খুব করে ঘাড়টা ঘুরিয়ে দেখতে ইচ্ছা করছিলো পেছনের লোকদুটোকে কিন্তু তাতে লোকদুটোকে এ্যালবার্টা করে দেয়া হবে। তাই রাফি নিজেকে সংযত করে এগিয়ে যেতে থাকলো। সামনেই দেখতে পেল মাফিয়া গার্লের বলা ডানদিকের রাস্তা। রাফি চুপচাপ সাধারন মানুষের মত ডানদিকের রাস্তায় ঢুকে গেলো। গলিটা অনেক চিপা, দুইজন মানুষ পাশাপাশি হাঁটাচলা করতে সমস্যা হয়। রাফি গলির ভিতরে পায়ের গতি একটু বাড়িয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি গলিটা পার হয়ে যেতে চাইল। পেছনে না তাকিয়েই কালো টয়োটা খুজতে থাকলো রাফি। একটু সামনেই কালো টয়োটা দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। সামনে এগোতে এগোতে রেজিস্ট্রেশন নাম্বারটাও মিলিয়ে নিলো রাফি। ঠিক আছে দেখে আর দেরী করলো না রাফি। দরজা টান দিয়ে খুলে ফেললো রাফি। ড্রাইভার পেছনে ফিরে জানতে চাইলো “রাফি?”
রাফি – (ব্যস্ততা নিয়ে) হ রে ভাই, উড়া তোর পঙ্খিরাজ।
– you got it boss.
বলেই গাড়ির টপ স্পিড ওঠাতে ব্যস্ত হয়ে গেল ড্রাইভার। রাফি কিছু বলতে যাবে তখনই মাফিয়া গার্লের ফোন।
– you should fashion your seat belt. This driver has a bad reputation of fast and reckless driving. More than 100 user give him 1 star because of his driving. I choose him specially for this situation. Hold tight Mafia boy.
এদিকে রাফির তো জান যাইতে যাইতে ফেরৎ আসা অবস্থা। ফোন কাটবে নাকি সিটবেল্টটা টেনে বাঁধবে তা বুঝতে পারলো না। কোনভাবে নিজেকে সিটের সাথে চেপে রাখে সিটবেল্ট টা বেঁধে নিলো। তারপর ফোনটা কানে তুলে নিলো।
রাফি – and now you are telling me this! If I die I will kill you Mafia girl.
বলে ফোন কেটে ভয়ে ভয়ে সামনে তাকায়। গাড়ির স্পিড ১০০+ আর এমন ভীড়ের মধ্যে এত স্পিডে গাড়ি চলতে থাকলে যে কোন সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। রাফি পেছনে তাকালো। গাড়ির পেছনে কারো পক্ষে লেগে থাকা অর্থাৎ ফলো করা সম্ভব না। বিভিন্ন অলিগলি টপকে রাফিকে বাড়ির রাস্তা থেকে বেশ খানিকটা দূরে নামিয়ে দেয় ড্রাইভার। গাড়ি থেকে নামার সময় রাফির মাথা চক্কর দিতে থাকলো।বুক থেকে হার্টটা বের হয়ে যাবে যাবে করছে। গাড়ি ধরে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলো মাথা ঘোরা কমানোর জন্য। ১০০+ স্পিডে গাড়ির ড্রাইভার হওয়া আর সেই গাড়ির প্যাসেঞ্জার সিটে বসার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। রাফি কিছুটা নর্মাল হলে ফোন আসে মাফিয়া গার্লের।
– Hows the ride? should I rate him 5 star?
রাফি – can’t you find any other option to kill me!!
ড্রাইভার – আমার বাড়ি আসেপাসেই স্যার। গাড়ি লাগলে ডাক দিয়েন।
রাফির গলা দিয়ে আর স্বর বের হচ্ছে না। মাফিয়া গার্লের নকলটারও কেটে একটু দম নিলো। জান হাতে চলে আসলেও এটলিষ্ট যারা ফলো করছিলো তাদের পিছু ছাড়াতে এমন একজন ড্রাইভারেরই দরকার ছিলো রাফির। মাফিয়া গার্লের এ্যানালিটিক্যাল পাওয়ার দেখে থ হওয়া ছাড়া গতি নেই। ১০০ র উপর রাইডার যেখানে ১ স্টার দিয়েছে ড্রাইভারকে সেখানে মাফিয়া গার্ল ঠিকই ড্রাইভারকে ৫ স্টার দেয়ার মত রাইডার খুঁজে দিলো!
রাফি চুপচাপ গা ঢাকা দিতে দিতে ঘরের দরজায় দাড়ালো। নক করে অনেকক্ষণ ধরে দাড়িয়ে থাকার পরও যখন কেউ দরজা খুললো না তখন রাফির খুব টেনশন হতে লাগলো। ফোন বের করে ঘরে রাখা ফোনে ফোন দিতে যাবে তখনই দরজা খুলে গেলো। তোহা এসে দরজা খুলেছে।
রাফি – কি হলো? এতক্ষণ লাগালে কেন দরজা খুলতে! টেনশনে আমার গলার পানি শুকিয়ে গেছে, ভাবলাম আমার কারনে তোমরা আবার বিপদে পড়লে কিনা?
তোহা – (অভিমানী গলায়) এতই যদি ঘরের চিন্তা তোমার তো বাইরে যাও কিসের জন্য? আব্বু আম্মু কতটা টেনশন করতেছিলো জানো? আজ সারাটা দিন দুইজনের কেউ জায়নামাজ থেকে ওঠে নি। পুরোটা সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করেছে যেন তোমার কোন ক্ষতি না হয়। এই বয়সে তাদের দিকে তো এখন একটু নজর দিতেই পারো?
এতক্ষণ পর তোহার উপর নজর পড়লো রাফির, টলটলে চোখে এতগুলো কথা বলে গেলো সে। চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ ভালই গঙ্গা যমুনা বৈয়েছে ওই গরুর মত মায়াবী চোখদুটোতে। আজিব, এই মেয়ে এত মায়া রাখে কোথায়? চোখ দিয়ে মায়া ঝরতেই থাকে সবসময়। আর রাফি যখনি ওই চোখে তাকায় তো মনে হয় মায়ার ঝর্নার নীচে দাড়িয়ে চুবনী খাচ্ছে। রাফির বৌয়ের মাঝে দীন দুনিয়া ভুলায় দেবার মত অদ্ভুত এক ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ। আর রাফি তো প্রতিবার তোহার মুখ দেখলেই ভুলেই যায় যে ঘাড়ের উপর জীবন মৃত্যুর দাড়িপাল্লা নিয়ে ঘুরছে সে। তোহাকে দেখলে মনেই হয় না যে এই মেয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর দেশের বর্তমান নাগরিক। রাফি আজ পর্যন্ত কোন বিদেশী পাসপোর্টধারী দেশী মেয়ের এমন মায়াভরা চেহারা দেখে নি। অবশ্য রাফি দেখেছেই বা কত মেয়েকে। নিরামিষের উপর শাকাহারী ছিলো রাফি, ছেলে বন্ধুর বালাই ছিল কম আর মেয়ে!!!! আসমানে যে তাঁরা দেখা যাচ্ছে না ওই তাঁরার সমান দূরত্ব বজায় রাখতো সবসময়। তাই হয়তো তোহার মায়ায় খুব দ্রত জড়িয়ে পড়ছে রাফি। বিয়ের পর থেকেই রাফির কল্পনাবিলাস রোগটা বেড়েছে। নাহ, বৌ তার ভয়ংকর মায়াবতী।
রাফি তোহার হাতে ল্যাপটপটা তুলে দিয়ে মা বাবা কোথায় আছে তা জানতে চাইলো। তোহার দেখিয়ে দেয়া রুমে গিয়ে রাফি দেখলো মা তার সিজদায় পড়ে আছেন আর বাবা দুইহাত তুলে মোনাজাত করছেন। দুইজনের দোয়া শেষ হলে রাফি দুইজনের মাঝে গিয়ে বসলো। বাবা মা ও তাদের বুকের মানিককে কাছে পেয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলো।
বাবা – (আবেগতাড়িত কন্ঠে) এসেছিস বাবা! সব ঠিক আছে তো? তোর কোন সমস্যা হয় নি তো?
মা তো রাফিকে জায়নামাজে বসা অবস্থায় জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দেন।
রাফি – (নরম আবেগে) এই দেখো আমি এসেছি তো। একদম সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় চলে এসেছি তোমাদের কাছে। সব ঠিক আছে। তোমাদের দোয়া আছে না আমার সাথে। আমার কিচ্ছু হবে না।
বলতে বলতে একটা মেসেজ পেলো রাফি,
“The CCTV footage are ready, did you contact with Prime Minister? Time is running out”
রাফি আবেগের দুনিয়া থেকে বাস্তবে ফেরত এলো। বাবা মা এর দুই কপালে দুইটা চুমু দিয়ে রাফি উঠে দাঁড়াতে গিয়ে দেখে তোহা দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো। রাফি মা বাবার ঘর থেকে বের হয়ে যাবার সময় তোহা ও পিছু নেয় রাফির। রাফি ঘরে গিয়ে জামাকাপড় ছাড়তে যাবে তখন দেখে তোহা রুমের দরজায় কিছু একটা খুটছে আর বিড়বিড় করে কি যেন বলছে।
রাফি – (কৌতুহল নিয়ে) কি বললে, শুনি নি, একটু জোরে বলবে?
তোহা – (বিড়বিড় করে) আমারটা কই?
রাফি – (ঠিকমত শুনতে না পেয়ে) তোমারটা কি?
তোহা – (অভিমানী আবেগে) বারে? আব্বু আম্মুকে দোয়া করসে তাই তাদের দিসো আর আমিও যে দোয়া করসি? আমাকে দিবা না?
এমন কোন সময় নেই যখন এই মেয়েটাকে ভালো লাগে না রাফির। রাফির এখন ঘোর বিপদ, পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাকে কিন্তু তারপরও তোহার অভিমান আর ছোট্ট ছোট্ট ভালোবাসাগুলো রাফিকে সব টেনশন থেকে কেমন যেন টেঁনে হিঁচড়ে বের করে আনে। রাফির টেনশনভরা গোমরা গালের কোনায় কোথেকে একটা মুচকি হাসি চলে এলো ভাবতেই পারলো না রাফি।
রাফি – (দুষ্টুমি ভরা মুচকি হাসি দিয়ে) আচ্ছা তোমারও চাই?
বলে তোহার দিকে এগিয়ে যেতেই তোহা লজ্জাভরা একটা হাসি দিয়ে পালিয়ে গেলো। রাফি ভাবে এই বিপদের দিনে তার পরিবার যেন অক্সিজেন দিয়ে রাফিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বাঁচানোর কথা ভাবতে ভাবতে মাফিয়া গার্লের কথা মনে পড়ে যায় রাফির। মারতে মারতে যেভাবে বাঁচিয়ে রেখেছে রাফিকে তা চিন্তা করতেই ভিমরি খায় রাফি। মাফিয়া গার্ল না থাকলে আজ হয়তো ওই গোলকধাঁধা থেকে স্বশরীরে ফেরত আসা সম্ভব ছিল না।
রাফি ভেবে দেখে এখন প্রধানমন্ত্রীকে ফোন দেয়া ঠিক হবে কি না। ভাবাভাবির ফলাফল শুন্য বুঝে রাফি ফোন দেয় প্রধানমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী ফোনটা রিসিভ করলে রাফি নিজেকে NSA এর এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দেয় এবং একটা কেস রিলেটেড আলোচনা প্রয়োজন সেটা জানায়। সহকারী কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলে লাইন হোল্ডে রাখলো। কিছুক্ষণ পর আনহোল্ড করার সংকেত পায় রাফি। সহকারী ফোনটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিলো।
বেশ লম্বা সময় ধরে কথপোকথন চলে। এরই মাঝে রাফি ডাইরেক্টর স্যারের হত্যা, রিজার্ভ কারেন্সি চুরির মিথ্যা ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট, রাফির প্রাতিষ্ঠানিক ছুটিকে পলাতক বলে চালিয়ে দেয়া এবং চুরির কেস রিলেটেড সকল ইভিডেন্স সংগ্রহ করা হয়ে গেছে বলে রিপোর্ট করে।
প্রধানমন্ত্রী রাফির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন এবং কাল সকালেই গোপনে প্রধানমন্ত্রীর নিজ গাড়ি এসে রাফিকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে আসবে বলেও জানান।
রাফি কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। এতক্ষণে এটলিষ্ট কোন একজন উচ্চপদস্থের কাছে রিপোর্ট করতে পেরে রাফির কিছুটা হালকা লাগে। রাফি একটা লম্বা গোসল দেবার উদ্দেশ্যে ওয়াশরুমে যায়।
ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে দেখে তোহা গামছা নিয়ে কোমড় ভেঙ্গে দাড়িয়ে আছে। চোখে মুখে অভিযোগ অভিযোগ ভাব।
তোহা – (অভিযোগ) খবরদার আজ ভেজা তোয়ালে বিছানায় রাখবে না। বার বার বলবো বলববো করে ভুলে গেছি, তাই আজ দাঁড়িয়েই আছি যেন কথাটা বলতে আবারও ভূলে না যাই।
তোহা এক দমে বলে গেল পুরা কথাগুলো। রাফি তার জীবনের অবাক হবার লেভেল ম্যাক্সিমাম করে তাকায় তোহার দিকে, অভিযোগ করার সময়ও মেয়েটার গালে টোল পড়ে।
রাফি – (অবাক) এই এক ভেজা তোয়েলের জন্য এত অভিযোগ! আচ্ছা বাবা মাফ চাইছি। আর কক্ষনো এমন ভূল হবে না।
বলে তোহার হাত থেকে গামছা নিয়ে নিজের চুল মুছতে থাকে , তোহা রুম থেকে বের হয়ে গেলে রাফি কাপড় বদলে অভ্যাসবসত ভেজা গামছাটা আবার খাটেই ফেলে দেয়।
কিছুক্ষণ পর তোহার রুম থেকে চিৎকারের আওয়াজ শোনা গেলো।
রাফি রাতের খাবার শেষ করে টিভি দেখতে বসলো, তোহা রান্নাঘরে সবকিছু গোজগাছ করছিলো। রাফির ফোনে মেসেজ এলো একটা।
” Do not get on that car tomorrow. Someone flash your contact with Prime Minister to the enemy. They know, you are coming. ”
রাফির মাথায় বড়সড় বাজ পড়লো। এ কোন মহাবিপদে পড়লো রাফি। হয়তো প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলে রাফি সুবিচার পেত কিন্তু সে পৌছাবে কিভাবে? যদি রাস্তাতেই কোন সমস্যা হয়? রাফির মাথা কাজ করতে চায় না, এমন সময় আরো একটা মেসেজ এলো রাফির কাছে। একটা মেইল আইডি আর মেসেজে আরো লেখা,
“Only Prime minister has access on this E-mail, send those evidence tomorrow and avoid the trip.”
মনে মনে এমন একটা স্যলুশন ই খুঁজছিলো রাফি। যেন বুকের উপর থেকে বিশাল এক পাহাড় নেমে গেল রাফির। ফুরফুরে মেজাজে মিটিমিটি হাসতে লাগলো রাফি।খুশিতে সোফার উপর পা তুলে বসলো রাফি। মনটা এতটাই হালকা হয়ে গেলো রাফির যে রাফির বসে থাকা সোফার ঠিক পাশে তোহা এসে দাড়িয়ে কোমড় বাকিয়ে গলা লম্বা করে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে রাফির চেহারার হালচাল বোঝার চেষ্টা করছে অথচো রাফি সেটা খেয়ালই করে নি। যখন খেয়াল হলো তখন হাঁসি ছেড়ে পা দুটো সোফা থেকে নামাতে নামাতে দুই তিনটা কাশি দিয়ে সোজা হয়ে বসলো রাফি। কাশির আওয়াজ শুনে তোহা সোজা হয়ে দাড়িয়ে গেলো আর মুচকি হাসি ছড়িয়ে উধাও হয়ে গেল।
পরদিন সকালে রাফি তার ল্যাপটপ দিয়ে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর ইমেইল আইডিতে রিজার্ভ কারেন্সি চুরির সব ইভিডেন্স এবং সাথে ডাইরেক্ট স্যার যে এক্সিডেন্টে মারা যান নি তার প্রমান সিসিটিভি ফুটেজ এড করে খুব সুন্দর একটা মেইল লিখে চালান করে দিলো, তারপর আরো কয়েশো মেইলে এ্যাটাচমেন্টগুলো ফরোয়ার্ড করে দিলো। এরপর প্রধানমন্ত্রীকে আবার ফোন দিল রাফি। এজ ইউজুয়াল একান্ত সহকারী পার হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বললো রাফি, মেইলের ব্যপারে ডিটেলস খুলে বললো রাফি। সাথে সাথে স্বশরীরে উপস্থিত না হতে পারার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে রাফি। প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন যে প্রমানাদি বিশ্লেষণ করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
রাফির বেশ হালকা লাগলো। পেছনে দেখে তোহা দাড়িয়ে দাড়িয়ে সব দেখেছিলো, শুনছিলো। রাফি ঘুরে তোহাকে দেখে একটা বিজয়মাখা হাসি দিলো। তোহা যেন রাফিকে এমন বিজয়ের হাসি কখনো হাঁসতে দেখে নি।
তোহা – (আবেগতাড়িত হয়ে) তুমি পেরেছো!!!!
রাফি – (হাসতে হাসতে) না, আমরা পেরেছি।।
২ সপ্তাহ পর,
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এবং মিডিয়ার প্রচারনার কারনে অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়া স্বত্ত্বেও দোষী ব্যক্তিদের আটক করা হয়। রাফির জোগাড় করে দেয়া তথ্য উপা‌ত্ত পর্যালোচনা করার জন্য ১০ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এবং রাফির বিরুদ্ধে হওয়া ওয়ারেন্ট তুলে নেয়া হয়।
রাফি তার পুরো পরিবারকে নিয়ে আবার নিজেদের বাড়ি চলে যায়। রাফির জন্য নতুন কোয়ার্টার বরাদ্দ হয় তাই তোহাকে নিয়ে নতুন কোয়ার্টারে ওঠে রাফি। পরদিনই অফিসে যোগদান করে। সবাই রাফিকে কংগ্রাচুলেশনস জানায় তার এচিভমেন্টের জন্য, প্রাতিষ্ঠানিক ছুটিতে থেকেও এতবড় মিষ্ট্রি কেস সলভ করা অনেক বড় ব্যপার বৈ কি। রাফি অফিসের সবার সাথে দেখা শেষ করে ডাইরেক্টর স্যারের রুমে যায়। চেয়ারে নতুন একজনকে দেখতে পায় রাফি
রাফি – ভেতরে আসবো, স্যার।
ডাইরেক্টর – Come in.
রাফি – আসসালামু আলাইকুম স্যার, আমি রাফিউল ইসলাম।
ডাইরেক্টর – ও হ্যাঁ, রাফি। The রাফি।
রাফি ডাইরেক্টর স্যারের গলায় তাচ্ছিল্যের সূর পায়।
রাফি – (নম্রতার সাথে) শুধুই রাফি, স্যার।
ডাইরেক্টর – (তাচ্ছিল্যের সাথে) দেশকে খুব উদ্ধার করা হচ্ছে! কি ভাবো নিজেকে? রবিন হুড? নাকি টারজান? দেশকে দেশের কাজ করতে দাও আর এজেন্সিকে এজেন্সির কাজ। Now get back to work.
রাফি – as you please, sir.
বলে চুপচাপ বের হয়ে আসে ডাইরেক্টর স্যারের রুম থেকে। রাফি নতুন ডাইরেক্টর স্যারের কাছ থেকে এপ্রিসিয়েশন কামনা করে নি, কিন্তু সামান্য ভালো ব্যবহার তো আশা করতেই পারে। ওই মানুষটাকে খুব মিস করবে রাফি, রুমে উঁকি দিলেই পরম উষ্ণতায় কাছে টেনে নেয়া মানুষটিকে। মৃত্যুর আগমুহূর্তে অন্যের কথা ভাবা সেই মানুষটিকে যার কারনে আজ রাফি বেঁচে আছে। নতুন ডাইরেক্টর স্যারের সাথে পরিচিত হয়ে আরো ভালোভাবে মনে পড়ে গেলো রাফির বন্ধুর মত বসকে। ভাবতে ভাবতেই চোখের কোনায় পানি চলে এলো রাফির।
করিডোরের রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাঁকিয়ে,
রাফি – (আবেগজড়ানো কন্ঠে) যেখানেই থাকেন না কেন স্যার, ভালো থাকবেন।
নিজের ডেস্কে ফিরে এলো রাফি। ল্যাপটপটা ওপেন করে কাজ শুরু করলো। বেশ লম্বা ছুটি কাটিয়েছে সে। অনেক কাজ জমে গেছে। এক এক করে শেষ করতে হবে কাজ।
অফিসের কাজ শেষ করতে করতে কফির কাপে চুমুক দেয় রাফি। গলা ধরে আসে কফি খেতে গিয়ে। তোহা দুর্দান্ত কফি বানায়, এককথায় দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ কফি। তোহার কফি বাদে এখন অন্য সব কফি রাফির কাছে ছাইপাশ গেলার মত অবস্থা। ছুটির পুরোটা সময় যেভাবে সাপোর্ট দিয়েছে মেয়েটা। চাইলেই চুড়ুইপাখির মত উড়ে চলে যেতে পারতো তার দ্বিতীয় নাগরিকত্বের দেশে। চিন্তামুক্ত সময় কাটাতে পারতো চাইলে। কিন্তু কফির জল চোখের জল এক করে রাফি ও তার ফ্যামিলির পাশে ছিলো মেয়েটি।
এমন সময় মোবাইলে মেসেজ এলো,
মাফিয়া গার্ল থেকে
“Miss me? I know you don’t miss me. But I do. In this whole world, I miss you more than anybody else. If you don’t need me, pay the price or if you need me, you must fulfill my needs first.”
রাফির খটকা লাগে। মাফিয়া গার্ল হঠাৎ এমন কথা বললো কেন? মাফিয়া গার্ল এতদিন যে সাহায্য করেছে তার প্রাইস চায়? মানে কি?
ল্যাপটপ স্ক্রীনেও ভেসে ওঠে একটা চ্যাটবোট।
– are you not interested to know?
রাফি – to know what?
– the price or my needs?
রাফি – আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ আপনার সাহায্যের জন্য। বলুন আপনার সাহায্যের বিনিময়ে আপনি কি চান? অবশ্য তার আগে আমার কিছু প্রশ্ন আছে।
– Shoot..
রাফি – আমাকেই কেন সাহায্য করলেন?
– তুমি আমার inspiration. তোমার পদচিহ্ন ধরেই আমার এই রাজ্যে আসা। দেখো না তোমার নামের সাথে মিলিয়ে নাম রেখেছি। you are my master of this path.
রাফি – যদি আমি আপনার গুরু হই তাহলে গুরুদক্ষীনা তো আমার প্রাপ্য।
– I gave you everything you ever dream, even I saved your life several times.
রাফি – সেইজন্য আমি আপনার কাছে আজীবন ঋণী হয়ে থাকবো।
– I don’t like debts. Price must be paid in full.
রাফি – Ask your price.
– are you sure, don’t you need me anymore!
রাফি ভাবনায় পড়ে গেলো, মেয়ে এমন কি চায় যার জন্য এত ভনিতা? এমন কি আছে যা দিতে গেলে রাফিকে ২য় বার ভাবতে হবে!
রাফি – আমার ক্ষমতার বাইরে না হলে আমি অবশ্যই তা পূরন করবো।
– its within your range. Don’t worry.
রাফি – আচ্ছা বলুন।
রাফির কাছে ফোন আসে। স্ক্রীনে ভেসে আসে বৌ নাম আর ঘোমটা টানা বৌ তোহার ছবিটা। চ্যাট রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে ফোনটা রিসিভ করে রাফি।
তোহা – (কৌতুহলজড়ানো অভিমান নিয়ে) সারাদিনে কি একবারও মনে পড়ে না? (ফোপাতে ফোপাতে) কক্ষনো আমার খোজ নাও না তুমি। তুমি অনেক খারাপ। পচা বর।
রাফি – (হাসতে হাসতে) আজ প্রথম দিন ছিল তাই কাজে ডুবে গিয়েছিলাম। আর চাইলেও কি তোমাকে ভোলা যাবে? এই জীবনে তো না।
বলে রাফি সোজা হয়ে বসে। ল্যাপটপের চ্যাটবোটের দিকে চোখ যায় রাফির, মাফিয়া গার্ল রিপ্লাই দিয়েছে! রিপ্লাই দেখে রাফির গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো। ফোনে তোহাকে বললো
রাফি – (উৎকন্ঠা লুকিয়ে কথা বলার চেষ্টা) একটু পরেই বাসায় চলে আসবো। এখন জলদি হাতের কাজ শেষ করে নেই? যত দ্রুত কাজ শেষ হবে তত দ্রুত বাসায় আসতে পারবো।
তোহা – আচ্ছা ঠিক আছে। শোনো না, আসার সময় আইসক্রিম নিয়ে আসতে পারবা?
রাফি – (আনমনে) আচ্ছা। রাখছি
বলে ফোনটা রেখে দিলো। আর ভাবতে লাগলো মাফিয়া গার্ল এমন আবদার কিভাবে করতে পারে।
চ্যাটবোটে মাফিয়া গার্ল রিপ্লাই করেছে বড়হাতের স্পেলিং দিয়ে,
– My price and my need both are “YOU”
এই YOU এর মানে কি তা খুব ভালোভাবেই জানে রাফি কিন্তু তারপরও রিপ্লাই করে
রাফি – Me? What me?
– My price and also my need is you. I want to marry you.
রাফি – পাগল হয়ে গেছেন কি? আমি বিবাহিত।
– you can divorce her anytime.
রাফি – are you mad! I can’t do that.
– But I can do a lots of thing. I can throw you back as most wanted criminal and expose your true identity in the cyberspace. I can find lots of people who are interested in Mafia boy, in real world.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে