হেমন্ত ধারার অশ্রু পর্ব-১২ এবং শেষ পর্ব

0
1203

#পর্ব-১২ [ সমাপ্ত]
#হেমন্ত ধারার অশ্রু
#মারুফ হাসান সজীব

রিজু কিছুটা মনে করার চেষ্টা করলো পূর্বের ঘটনা।সে যখন কফি খাচ্ছিল তখনি এরকম হয়েছে ‌আর শেষ
কথা মনে আছে এটা যে ধারার মা বলল হেমন্ত ধারার চাচাতো ভাই।আর ওসিও এটাই লিখছে।

‘ হেমন্ত আর ধারা দুই ভাই বোন ‘

রিজু খেয়াল করলো কি ব্যাপার এটাই তো ধারাদের বাড়ি। তারমানে আমি এই ঘরেই ঢুকেছিলাম তখন ভালো করে খেয়াল করা হয়নি।

‘ আর বাড়ির সবাই কোথায় ? ‘

‘ ধারার মা কোথায় ? একটা মেয়ে ছিল সে কোথায় ? ‘

‘ রিজু তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল এখানে থেকে সময় নষ্ট করে লাভ নাই। আগে থানায় যেতে হবে’

‘ রিজু একটা ব্যাটারি চালিত ভ্যানে উঠে গেল বাড়ির সামনে থেকে উদ্দেশ্যে এখন থানায়‌ ‘

‘ যাওয়ার সময় মাকে ফোন দিয়ে বলল আমি ভালো আছি মা। মোবাইলে চার্জ ছিল না তাই বন্ধ হয়ে গেছে। তুমি কোনো চিন্তা করো না ‘

এসব বলে রিজু ফোন রেখে দিল।

‘ এরপর ওসিকে ফোন দিল ‘ সাথে সাথে রিসিভ করলো !

‘ হ্যালো রিজু তুমি কোথায়? ‘ এখানে তো অনেক ঘটনা ঘটে গেছে ‘

‘ হ্যা স্যার আমি ম্যাসেজ দেখলাম আমি ধারার বাসায় এসেছিলাম কোনো এক কারণে চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বাকি ঘটনা ধারার মা জানতে পারে। উনি
কি সেখানে আছে থানায়? ‘

‘ হ্যা আছে তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো এখানে তো কেস উল্টে গেছে ‘

‘ আমি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌছে যাবো ‘

থানা থেকে ওসি ফোন কেটে দিল রিজুর মাথায় নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।কি হতে পারে এর পরিনতি ?
ধারা কেন খুন করলো ?
আর এটার পিছনে মূল কে?
আর নদীকে কেন খুন করতে পারে?

‘ সমস্ত ঘটনা সেখানে গেলেই জানতে পারবে ’কিছুক্ষণ এর মধ্যে থানায় পৌছে গেল।

রিজু সরাসরি থানায় পৌছে গেল। থানার সামনে বসে রাফির বাবা মা ধারার মা রয়েছে !

রাফির মা আর ধারার মা কান্নাকাটি করছে।

‘ আমি ধারার মাকে প্রশ্ন করলাম আমি অজ্ঞান হয়েছিলাম কিভাবে? ‘

‘ উনি বিলম্ব না করে চট করে উওর দিলো জানি না তুমি কিভাবে ঘুমিয়েছিলে ? যখন আমাকে এসব বলল আমি তখনি রওনা দিয়েছি ‘

‘ আমাকে কফি দিয়েছিলেন সেটা কে বানিয়েছিল ? ‘

‘ পাশের বাসার মেয়ে শিমলা ‘

‘ আমার মনে হয় মেয়েটা কফির মধ্যে মিশিয়ে দিয়েছিল কিছু ‘

‘ মেয়েটা ভালো এসব কিছু করতে পারে না‌। আমি মেয়েটাকে খুব বিশ্বাস করি ‌। ওরকম মেয়ের পক্ষে এটা
করা সম্ভব না আমার মনে হয় ! ‘

‘ কিন্তু কিছু একটা করেছে তো , আপনি কফির মগ কোথায় রেখেছেন ? ‘

‘ আমি তো ধুয়ে ফেলেছি ‘

‘ ওহ শীট এটা কি কলেজে ? এখন তো কোনো প্রমান রইল না ‘

আমি বললাম ওসির সাথে একটু কথা বলি ।

‘ ওসি সাহেব আমাকে তার নিজের কক্ষে নিয়ে গেল। ‘

আমি বললাম সমস্ত ঘটনা কি হয়েছে? আর হেমন্ত ধারা দুই ভাই বোন কিভাবে খুন করলো ?

ওসি বলল বাবা উকিল এনে জামিন করাতে চেয়েছিল ‌।
এবং সব কাগজপত্র ঠিক দেখে আমরাও বের করেছিলাম। কিন্তু আমরা যখন একটা কাগজে সই করতে বললাম তখনি রাফি কোনো কিছু না বলে দৌড়ানো শুরু করল। আমাদের মাথার। উপর দিয়ে সম্পূর্ণ ঘটনা ঘটে গেল ‌। তখন সবাই খোজ করতে শুরু করল।আর ঠিক তখনই আমাদের কাছে একটা ফোন আসলো একটা কাপা কন্ঠে বলল আমি ধারা রাফির স্ত্রী। আমি বললাম কি হয়েছে ?

রাফির স্ত্রী বলল সে নাকি এইমাত্র তার স্বামীকে খুন করেছে।আর তার হাতে খুন করার অস্ত্র রয়েছে ‌।
আমরা কিছুই বুঝতে পারলাম না। তাড়াতাড়ি সেই স্থানের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম ঠিকানা দেওয়া অনুযায়ী।
আর তখন সেখানে সত্যি দেখতে পেলাম দুইজন রয়েছে। আমি প্রশ্ন করলাম এই ছেলে কে? ধারা বলল আমার চাচাতো ভাই। আমরাও তাই মানলাম।
আর দেখি সামনে রাফির নিথর দেহ পড়ে রয়েছে ‌। আমরা তখনি দুজনকে গ্ৰেপ্তার করলাম।আর কেন খুন করেছে তা জানতে চাইলাম?

ধারা বলল নদী আর রাফির নাকি অনেক দিনের অবৈধ মেলামেশা ছিল।সেটা ধারা অনেক আগেই জানতে পারে।তাই হেমন্তের মাধ্যমে কয়েকটা লোক ভাড়া করে নদীকে খু!ন করার ব্যবস্থা করেছে।তারা সমস্ত দোষ স্বীকার করেছে।

আর হেমন্ত কোনো ভাবে খবর পেয়েছে রাফি জেল থেকে পালিয়েছে।আর সেই সুযোগে দুই ভাই বোন মিলে
সেই জায়গায় যাওয়ার সাথে সাথে খু!ন করেছে।
এটাই ছিল ঘটনা।

‘ আপনারা বিশ্বাস করেছেন ‘

‘ বিশ্বাস না করে কি করব?তারা যেহেতু নিজের মুখে স্বীকার করেছে। ‘

‘ হুম তা ঠিক ‘

‘ কিন্তু ওসি সব তো বললেন কিন্তু রাফি পালালো কেন?
এই বিষয়ে কিছু জানেন !’

আমরাও সেটা নিয়েই ভাবছি কেন পালালো। তবে আমরা এটা ধরে নিয়েছি রাফি ভেবেছে এখানে থাকলে
আবার ওকে জেলে নেওয়া হতো তাই পালাতে চেয়েছিল।

‘ আপনার কথায় যুক্তি আছে কিছুটা ‘

আমি একটু হেমন্ত আর ধারার সঙ্গে কথা বলতে চাই।

‘ ঠিক আছে আমি ব্যবস্থা করছি ‘

একটু পরে ওসি সাহেব ব্যবস্থা করে দিলেন। দুই ভাই বোন একসাথে রয়েছে‌‌।

‘ রিজু ধারাকে বলল হেমন্ত আপনার ভাই এটা লুকিয়ে ছিলেন কেন ? ‘

‘ আমার ভাই এর অসম্মান হতো যে ও আমার নিজের শশুর বাড়িতে কাজ করে ‘

‘ আচ্ছা খুন কেন করলেন ? ‘

‘ আমার ইচ্ছা তাই ‘ এটা বলেই ধারা কেদে দিল।

রিজু খেয়াল করল হেমন্ত অনবরত কান্না করছে।
রিজু বলল সত্যি বলুন আপনাদের কান্না বলে দিচ্ছে আপনারা মিথ্যা বলছে।

হেমন্ত রিজুর পায়ে পড়ে গেল আর কান্না করতে বলল আমরা খুন করিনি রিজু ভাই আমরা একটা চক্রে ফেসে গেছি‌।

রিজু পা থেকে উঠিয়ে বলল আমি বুঝতে পারছি যে খুন আপনারা করেননি।

ধারাও কেঁদে কেঁদে বলল হ্যা আমরা খুন করিনি ‌।

আমাদের দুই জনের অশ্রু সাক্ষী আমরা খুন করিনি।
পৃথিবী সাক্ষী আছে রাফিকে খুন করার সময় আমাদের অশ্রু সাক্ষী ছিল‌।

এই দুই ভাই বোন “হেমন্ত_ধারার_অশ্রু “সাক্ষী আমরা খুন করিনি ‌‌।
আমাদের সামনে আমার স্বামীকে খুন করা হয়েছে।

রিজু বলল আমি কিছুটা তথ্য পেয়েছি আপাতত আপনারা স্বীকার করবেন যে আপনারা খুন করেছেন‌‌
আমি আজ ঢাকা যাব কিছুদিন এর মধ্যে ফিরে আসবো। আপনাদের নিয়ে একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছি যাই হোক আমি আপনাদের বাচাবো। আমি এই পর্যন্ত কোনো কেস এ হারিনি ‌।
আপনাদের দুই ভাই বোন #হেমন্ত_ধারার_অশ্রু বলে
দিচ্ছে খুষ করেননি।

আর একটা কথা মনে রাখবেন আপনাদের কোর্টে তোলা কিছুদিন দেরি আছে আমি শুনেছি আমি আসা না পর্যন্ত কখনো স্বীকার করবেন না।

তারা দুজন এ একসাথে বলল আমরা আপনাকে বিশ্বাস করি রিজু ভাই। আমরা স্বীকার করব খুন করেছি।

রিজু তাদের কান্না সহ্য করতে পারলো না শুধু এটা বলল ভালো থাকবেন কিছুদিন আমি আসছি তথ্য সংগ্রহ করে।
________________
রিজু ওসিকে বলল ওই দু’জন খুনি আমি বুঝে গেছি।
এখন তাদের শাস্তি দেওয়ার পালা।

আর আমি এখনি একটু ঢাকা যাব আবার আসব ৩ দিন পর আর কারো কাছে বলে যাব না।
আমি এখন চলে যাচ্ছি ওসি সাহেব এটা যেন কেউ না জানে তিন দিনের মধ্যে।

‘ কেন ? ‘

‘ আপনাকে আমি ইমেইল এ একটা নতুন নাম্বার পাঠাবো আজ থেকে তিনদিন আমার নম্বর বন্ধ থাকবে। নতুন নাম্বারে ফোন দিবেন ‘

‘ ওসি বলল আপনার রহস্য কিছু বুঝতে পারছি না ‘

‘ রিজু বলল আমাকে যে মেয়েটা কফি বানিয়ে দিয়েছিল আজ সন্ধ্যায় তার মিসিং কেস পাবেন ! ‘

‘ মানে ‘

‘ অপেক্ষা করুন। সত্য কখনো চাপা থাকে না ‘ রিজু চলে গেল।

________________
বাসের কন্ডাক্টর বলল ভাই ভাড়া দেন।

রিজু দেখল আর কিছুক্ষণ এর মধ্যে পৌঁছে যাবে। পকেট থেকে নিজের ভাড়া দিয়ে দিল।

বাসে ওঠার সময় শুধু একটা কথাই বলেছিল। আমি আবার আসবো ‌।
আমি #হেমন্ত_ধারার_অশ্রুকে বিশ্বাস করে আসবো।

★★★

সন্ধ্যায় থানায় আরেক দফা কান্না কাটি রিজুকে যে মেয়েটা কফি বানিয়ে দিয়েছিল সে বিকেলে থেকে নিখোঁজ।

– ওসি হাত এ পানির বোতল ছিল সেটা নিচে পড়ে গেল।
আর গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল রিজুর কথা সত্যি হলো।
এর পেছনে তার কোনো হাত আছে‌‌ আমি ওইসময় রিজু
কথাই তেমন গুরুত্ব দিলাম না এটা কি সেই করেছে ?

কেন করলো এরকম রিজু??

………সমাপ্ত……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে