হৃদয়ে তুমি পর্ব-০২

0
1766

#হৃদয়ে তুমি
#লেখিকাঃতানিমা আক্তার মিরা
#পার্টঃ২

তরীকে কেউ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরায় তরী চমকে উঠলো।তরী দেখতে পেলো ওকে জড়িয়ে রাখা মানুষটার হাতে অনেক গুলো প্যাকেট।

তরী- কে?

তরীর গলা শুনে চমকে উঠে তরী কে ছেড়ে দিলো আরুশ।তরী সামনে ঘুরতে ওকে দেখে আরুশ অবাক হয় সেটা ওর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে যে আরুশ ঠিক কতটা অবাক হয়েছে।

তরী আরুশের মুখ দেখে হেসে ফেলে,আরুশ ভ্রু কুঁচকে তরীর দিকে তাকিয়ে বলে- হাসছো কেন??

তরী কোনো মতে হাসি থামিয়ে বলে- কিছু না।
আরুশ- তাহলে হাসছো কেন??
তরী- আপনার মুখ দেখে।
আরুশ- কেন আমার মুখে কী হয়েছে।

তরী কিছু বলতে যায় তখনি অদ্রি রুমে আসে।তরী আর কিছু বলে না অদ্রিকে দেখে।

অদ্রি আরুশকে এখানে দেখে অবাক হয়ে বলে- দাদাভাই তুই এখানে?কখন এলি?
আরুশ-তোকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছিলাম কিন্তু ..

আরুশ চুপ করে যায়,অদ্রি আর তরী ভ্রু কুঁচকে তাকায় আরুশের দিকে..

অদ্রি- কী??
আরুশ- নিজেই সারপ্রাইজট হয়ে গেছি( মনে মনে)

অদ্রি- কি করে বল।
আরুশ- হুম,এই নে তোর গ্রিফট আমি যায় সবার সাথে দেখা করে আসি।

অদ্রিকে কিছু বলতে না দিয়ে আরুশ চলে গেলো,অদ্রি তরীকে বললো- কিরে দাদাভাই তোকে কী বলছিলো।
তরী- কী বলবে কিছুই বলেনি তো।
অদ্রি- ওহ ।
তরী- কোথাই ছিলো তোমার দাদাভাই।
অদ্রি- দাদাভাই একটা বিজনেসের কাছে বাইরে গিয়েছিলো কয়েকদিনের জন্য।
তরী- ওহ।

অদ্রি আরুশের দিয়ে যাওয়া প্যাকেট গুলো খোলে। অনেকগুলো শাড়ি আছে।

তরী- তোমার দাদাভাই এর পছন্দ আছে বলতে হয় তো।
অদ্রি- হুম, তার সবথেকে বড় প্রমান তো….( তরীর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে)
তরী- সবসময় দুস্টুমি তাইনা,যাও সবাইকে দেখিয়ে আসো।

অদ্রি আর তরী সবাইকে শাড়ি গুলো দেখাতে যায়।

নিরা- শাড়ি গুলো কোথা ছিলো।
অদ্রি- দাদাভাই এনেছে।
মিলি- বা সবগুলো তো খুব সুন্দর।
অদ্রি- কে এনেছে দেখতে হবে তো।
মিলি- হুম,আরুশ চৌধুরী নিয়ে এসেছে ভালো হবেনা,যা ভালো করে তুলে রাখ।

ওরা রুমে এসে শাড়ি গুলোকে গুছিয়ে বসে গল্প করতে লাগলো হঠাৎ একটা মেয়ে ওদের রুমে আসলো,

আরুশি- তরী তুই?( অবাক হয়ে)

আরুশির কন্ঠ শুনে অদ্রি আর তরী ওর দিকে তাকায়।

আরুশি- তুই কেন এসেছিস এখানে??

আরুশি এমন কিছু বলবে ওরা তা কল্পনাও করেনি।

অদ্রি- কি বলছিস আরু এসব
আরুশি- ঠিকই বলছি ,ওহ এখানে কেন?
অদ্রি- আরু মার খাবি এবার উল্টো পাল্টা বললে।
আরুশি- আমি আগে তরী কে মারবো,এতদিন কোথায় ছিলে ওকে তো আমি

তরী কে মারতে গেলো আরুশি।

তরী- তরী পালা,নিজের প্রাণ বাঁচা।

তরী আর আরুশি দৌড়াচ্ছে।অদ্রি হা করে দাঁড়িয়ে ওদের কান্ড দেখছে।
অদ্রি- ওই তোরা থামবি।
আরুশি- ওই তরী তুই দাঁড়া।
তরী- আমাকে কী পাগলা কুকুরে কামড়েছে যে এখন তোর সামনে দাঁড়াবো।
আরুশি- তুই দাঁড়া আমি কিছু বলবো না সত্যি।

তরী আরুশির দিকে তাকিয়ে পেছন হাটছিলো হঠাৎ কারোর সাথে ধাক্কা লাগে আর…. ধুম পটাস।

তরী- ও মাগো পড়ে গেলাম।

সবাই তরী কে দেখে হাসতে লাগলো।

আর্দ্র- তরী তুই পড়ে গেলি কেমন করে।( হাসতে হাসতে)
তরী- হাসছো সবাই হাসো,আমাকে কে ফেলে দিলো।
আর্দ্র- সরি রে আমি বুঝতে পারিনি তুই আসছিস।
তরী- এখন আর সরি বলতে হবে না আমাকে দেখে সবাই হাসছে( ন্যাকা কান্না করে)
আরুশী- ওই তুই কী ওখানেই থাকবি।
তরী- না আমি উঠতে পারছিনা, কেউ হেল্প করো।
আর্দ্র- নে হাত ধরে উঠে আয়।

আর্দ্র হাত বাড়িয়ে দিলো,তরী আর্দ্রের হাত ধরবে বলে হাতটা তুললো তখনি আরুশ কোথা থেকে এসে তরীর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে দিলো।সবাই আরুশের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।

আরুশ ব্যাপারটা খেয়াল করে দিলো এক ধমক- কী সবকটা দাঁত বার করছিস কেন??
আরু- কিছুনা দাদাভাই,তরী বেবি কাম তোমার সাথে আমার বোঝাপড়া আছে।
তরী- না আমি যাবো না তোর সাথে।
আরুশ- কী হয়েছে তোদের তরীর সাথে তোর কী বোঝপড়া আছে?( ভ্রু কুঁচকে)
আরুশী- পার্সোনাল তোমরা এখন যাও এখান থেকে।
আরুশ- থাকবো না তোদের কাছে,একটা কথা বলতে এসেছিলাম।
আর্দ্র- ওই ওদেরকে বলতে হবে না চল।
অদ্রি- কি বলে যা তোরা।
আরুশ- না বলবো না।
আরুশী- বল না এত ঢং করিস কেন.
আরুশ- আমরা ঢং করি তো যদি বা বলতাম তাও বলবো না। আর্দ্র চল।

আরুশ আর আর্দ্র চলে যাবে বলে রেডি হয় তখন আরুশী তরীর কানে কানে বলে- ওই তুই বল দেখবি দাদাভাই আর না বলবে না।
তরী- আমি
আরুশী- হূ তুই তাড়াতাড়ি বল চলে গেলো।
তরী – ওকে।

তরী একটু গলাটা পরিস্কার করে নেয়, তারপর বলে- বলছি কী বলবেন বলছিলেন বলে দিন না।

আরুশ আর আর্দ্র ওদের দিকে তাকায়,আরুশ সিরিয়াস মুখ করে বলে- বলে দেবো।
তরী- হুম।

আরুশ একবার তরীদের দিকে তাকায় আর একবার আর্দ্রের দিকে তাকিয়ে বললো- কিছু নয়।

কথাটা বলে আরুশ আর্দ্রের হাত ধরে দৌড়ে চলে গেলো,ওরা তিনজন ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কি হলো কিছু বুঝলো না।

ওদিকে-

আর্দ্র- কিরে টেনে আনলি কেন??
আরুশ- আরে কি বলবো।
আর্দ্র-মানে?
আরুশ- আমি তো এমনি বললাম ওরা সিরিয়াস নেবে কে জানতো।
আর্দ্র- এ্যা।তুই আর মিথ্যে( অবাক হয়ে)
আরুশ- কেন ??
আর্দ্র-না কিছুনা আরুশ চৌধুরীর মুখে মিথ্যা শোনা যায় না তো তাই বললাম।
আরুশ- মজা করছিস।
আর্দ্র- আমার বুকে এতো সাহস নেয় যে তোর সাথে মজা করবো।
আরুশ- ফাজিল একটা।

( আরুশ চৌধুরী- চৌধুরী বাড়ির বড়ো ছেলে। আসফাক চৌধুরী ও মিলি চৌধুরীর ছেলে।আরুশি আরুশের ছোটো বোন।আরুশ ওহ বিজনেস দেখাশোনা করে।)

আরুশ আর আর্দ্র একই বয়সী এক মাসের ছোটোবড়।দুজনে একসাথে বড়ো হয়েছে পড়াশোনাও একসাথে করেছে।ওরা একে অপরের বেস্টফ্রেন্ড।আরুশী আর অদ্রিতা একবছরের ছোটো বড়। অদ্রি বড়ো আরুশী থেকে,আরুশী তরীর বয়সী।আরুশী আর তরী ভালো বন্ধুত্ব। কিন্তু অনেক দিন পর ওদের দেখা তাই আরুশী তরীর উপর রেগে আছে।

আরুশী- তরী
তরী- আমি এখানে নেয়।
আরুশী- ওই মজা নয় সত্যি বলছি।
তরী- হ্যা বল( বাঁকা হেসে)
আরুশী- দূর আমি তোর সাথে কথাই বলবো না,যা।
তরী- ওহ আরু সোনা রাগ করো কেন
আরুশী- একদম ঢং করবি না।
তরী- না তুই কী বলবি বল।
আরুশী- হঠাৎ করে যোগাযোগ বন্ধ করলি কেন?
তরী- এটা জানতেই হবে।
আরুশী- হুম।
তরী- পরে একদিন বলবো।

আরুশি আর কিছু বলে না কারণ ওহ জানে তরীর কথার খেলাপ হয়না।

রাতে খাবার টেবিলে-

সারাদিন সবাই বাইরে থাকলেও রাতে খাবার টেবিলে গোটা চৌধুরী পরিবার একসাথে হয়।

আসফাক চৌধুরী- কেমন আছিস তরী মা।
তরী- ভালো তুমি।
আসিফ- আমাকে তো ভুলে গেছিস দেখি
তরী- ভুলিনি আমি কাউকে আমাকে সবাই ভুলে গেছে।
মিলি- তোকে ভুলবে এমন সাহস কারো নেয়।
তরী- থাক বলতে হবে না।আমি সবটা জানি।
নিরা- বেশি বকবক করিস না খেতে বস দিদি তোকে কী খেতে দেয় না‌।
তরী- কেন?
নিরা – রোগা হয়ে গেছিস।
তরী- আমি রোগা হয়ে গেছি তোমার মনে হচ্ছে।
নিরা- হুম, বেশি করে খা আর মোটা হ।
আর্দ্র- বেশি করে খাওয়াও যাতে একটু মোটা হয়।

তরী কে মিলি আর নিরা মিলে খাওয়াচ্ছে,করুন,আরুশী,অদ্রি, আর্দ্র বসে বসে মজা নিচ্ছে।তরীর অবস্থা ছেড়ে দে মা খেতে বাঁচি।

তরী- আমি আর পারবো না আমায় ছেড়ে দাও।
নিরা- আচ্ছা ছেড়ে দিলাম যা।

তরী যেনো প্রাণ ফিরে পেলো।রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। অদ্রি আর আরু ওকে দেখে হাসতে থাকে।

তরী- হাসছো তোমরা।
আরু- আমাকে যদি করতো এরকম।
তরী- তোকে বললাম দ্যাখ তোর শাশুড়ি তোকে খেতে দেবে না।
আরু- আর তোর শাশুড়ি তোকে খাওয়াবে।

তরী চুপসে যায় খাওয়ানোর কথা শুনে।

পরেরদিন বিকালে –

ওরা সবাই ঘুরতে যাবে বলে ঠিক করে।

আরুশ- তোদের হলো।
আরুশি- আর একটু।
আর্দ্র-এরা কতো সাজবে আর……

আর্দ্র হা করে রয়ে যায়,আরুশ আর্দ্রের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো আর ওহ হা হয়ে গেলো…..

#চলবে_

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে