হিজিবিজি (প্রথম পর্ব)

0
1835

গল্পঃ #হিজিবিজি (প্রথম পর্ব)
লেখায়ঃ #তাজরীন_খন্দকার

প্রায় দুইবছর হয়ে গেলো জাবের আর আমার সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয়েছে। অথচ এখন আমার বাবা তার বাবার সাথে আমাদের বিয়ে নিয়ে খুব পাকাপোক্ত কথা বলে যাচ্ছে।
জাবেরের সাথে ব্রেকাপের পরে আমার আরেকটা সম্পর্ক হয়েছিল, যেটার সবকিছুই জাবের জানে।
শুধু জানে বললে বিষয়টা স্বাভাবিক হয়ে যাবে, আমার সেকেন্ড বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে অসংখ্য ছবি তুলে পাঠাতাম, সেও তার নতুন প্রেমিকাকে নিয়ে বিভিন্ন রকম ছবি আমার কাছে পাঠাতো৷
প্রতিনিয়ত দুজন দুজনকে রাগানোর একের পর এক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতাম।
কিন্তু মাসছয়েক আগে জাবের আমার সাথে সব রকম যোগাযোগ থেকে দূরে আছে, হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে আমি তার সব জায়গায় ব্লকে। আর জাবেরও আমার সব জায়গায় ব্লকে আছে।

মানে বর্তমানে আমরা দুজন দুজনকে প্রচন্ড ঘৃণা করি। সেও আমার নাম শুনলে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে, আর আমিও!

একসময় জাবেরের বাবা আর আমার বাবা চাকরিতে একই পোস্টে ছিলো,একসাথে তারা কাজ করতো। সেই সুবাদে তারা খুব ভালো আন্তরিক ছিল। তবে বাবার চাকরির বদলির পরে সেটা হালকা হয়ে যায়।
কিন্তু আজ থেকে ৫ বছর আগে জাবের ইউভার্সিটির এডমিশন পরিক্ষার জন্য ঢাকাতে এসেছিল, পরিচিত বলতে আমার বাবাই ছিলো। তাই আমাদের বাসায় উঠেছিল। আমি তখন ক্লাস টেনে পড়ি।
জাবের ভালো ছাত্র ছিল, যার জন্য আব্বু মাঝে মাঝে আমাকে পড়াতে বলতো।
তখন তো আমার প্রচন্ড আবেগী বয়স ছিল, সাথের বান্ধবীরা সবগুলো প্রেম করতো। যদিও আমার সেই সুযোগ ছিল না।
কিন্তু সে-বার জাবেরের প্রেমে পড়তে নিজেকে একটুও আটকাইনি। প্রথম প্রথম সে আমাকে এড়িয়ে যেতো।
কিন্তু পরবর্তীতে সেও উল্টেপাল্টে আমার প্রেমে পড়েছে। দুজন এতো বেশি, এতো বেশি কেয়ারফুল ছিলাম যে,আমাদের পড়ালেখার অবস্থা বারোটা বেজেছিল। তাই সেও কোনো পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে চান্স পায়নি, আর আমিও এসএসসিতে মোটামুটি একটা পাশ দিয়েছিলাম।

আমাদের সম্পর্কের বিষয়ে কাউকেই কিছু বুঝতে দেইনি,তবে মা হয়তো কিছুটা আচঁ করতে পেরেছিল। কিন্তু একমাস পরে জাবের আমাদের বাসা থেকে চলে যাওয়ার পরে বিষয়টা একদম স্বাভাবিক। এদিকে আমাদের সবসময় কথা হতো, জাবেরকে আমি ঢাকায় একটা কলেজে অনার্সে ভর্তি হতে বলেছিলাম। সেও তাই করেছিল, অন্য ছাত্রদের সাথে এখানে বাসা ভাড়ায় থাকতো। প্রায়ই আমাদের দেখা হতো, কথা হতো। তখন একটাই ভয় ছিল আমাদের পরিবার হয়তো মেনে নিবেনা। কারণ আমার বাবাকে সবসময় জানতাম বাবা আত্মীয়ের মধ্যে আত্মীয়তা পছন্দ করেন না।
আমার ক্ষেত্রে তো কখনোই মানবেন না।

অথচ আজকে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই, আর বাবা নিজে থেকে আমাদের বিয়ের কথা বলছে।
যা কোনোভাবেই আমার পক্ষে মানা সম্ভব না। এমনকি জাবেরও এটা মানবে না সে ক্ষেত্রে আমি একদম সিউর৷
তার সাথে আমার যদি পূর্ব কোনো রিলেশন না থাকতো, পরিবার বিয়ে ঠিক করতো,,আমি আমার শতকিছু ছেড়েও পরিবারের মতামতকে সম্মান জানাতে প্রস্তুত থাকতাম। কিন্তু এখন এই অবস্থায় জাবেরকে বিয়ে করা সম্ভব না। আমার কাছে সে একটা পেইন জাস্ট!

সকাল থেকে ভাবছি আম্মুর নাম্বার থেকে জাবেরকে ফোন করে বিষয়টা জানাবো। সে যেন যে কোনোভাবে বিয়েটা ভেঙে দেয়। আর তার গার্লফ্রেন্ডের কথা পরিবারে জানায়।
বিশাল বড় একটা চিন্তার পাহাড় আমার মাথায় পড়েছে, কিছু বুঝতে পারছিনা। শেষ পর্যন্ত আম্মুর মোবাইল আনতে আম্মুর রুমে যাওয়া মাত্রই আম্মু বলতে শুরু করলো..

___ কিরে এতো বিষন্ন লাগছে কেন তোকে? তোর তো খুশি হওয়ার কথা, কারণ তোর পছন্দের মানুষের সাথে বিয়ে হচ্ছে।

আম্মুর কথা শুনে আমার চোখ তো চড়কগাছ! কি বলে এসব! নিজেকে কিছুটা সামলে অজান্তা ভাব নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম…

___আম্মুউহ,খুশির কি আছে এখানে?

___ ন্যাকামী বস্তায় ভরে রাখেন । আমি সব জানি আপনার ব্যাপারে! এসএসসি, এইসএসসি আর সকল পরিক্ষায় গোল্লা পাওয়ার কারণও আমার অজানা নয়। তাই এখন দিবো তার গলায় ঝুলিয়ে। খুব শীগ্রই বিয়ের তারিখ হচ্ছে বুঝলে?

বলেই আম্মু রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
মাথা এলোমেলো লাগছে,আম্মু তাহলে বুঝতে পেরেছিল সব। সব বুঝেও কিছু বলেনি,কি আজব মা আমার!

আমি আম্মুর ফোনটা হাতে নিয়েও আবার রেখে দিলাম। নাহ ফোন দিয়ে এখন কি বলবো আমার জানা নেই।
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে জাবের নিজে থেকেই বিয়েটা ভেঙে দিবে।

আর জাবেরের সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো তিন বছর, দুই বছর একদম ছুটিয়ে প্রেম!
অতঃপর একবছর ছিল বিচ্ছেদের আলামত,খেলামত। তার ছিল সারাক্ষণ ব্যস্ততার অজুহাত, আর আমার ছিল রাগারাগি।
সেটা কয়েকদিন হলে অবশ্য সম্পর্কটা নষ্ট হতো না।
কিন্তু প্রতিদিন একই অবস্থা, একটা সময় আসে যখন দুজনেই দূরে সরে যাই। প্রথমদিকে তাকে খুব মিস করতাম,কান্না করতাম। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারতাম না৷

এর দুই মাস পরেই জাবের আমার কাছে তার নতুন সম্পর্কের জন্য দু’আ চায়,সাথে তাদের দুজনের ছবি পাঠায়। এটা দেখার পরে ইচ্ছে করছিল সত্যি মরে যাই। কিন্তু বান্ধবীরা আমাকে আবার রিলেশন করতে বলে। আমারও মনে হয়েছিল জাবেরকে টক্কর দিতে এটাই বেস্ট আইডিয়া। তারপর শুরু হলো শত্রু শত্রু খেলা। সে যেদিন তার প্রেমিকাকে নিয়ে ঘুরতে যেতো,আর সেই ছবি আমাকে পাঠাতো। এর পরেরদিনই আমিও আমার নতুন বয়ফ্রেন্ডকে জোর করে ঘুরতে নিয়ে যেতামই। এরপর সেই ছবি তার কাছে দিতাম।

তারপর আমাদের যদি কখনো কথা হতো, সেটাও ছিল আমাদের দুজনের প্রেমিক,প্রেমিকা নিয়ে। তারা আমাদের কতো কেয়ার করে এটা নিয়ে যে যত পারতাম প্রশংসা করে যেতাম। অবশেষে গত ছয়মাস আগে অন্য কাউকে নিয়ে এসব ওভার প্রশংসার সমাপ্ত হলো। জাবেরের সাথে টোটালি সকল কথোপকথন বন্ধ। ভালো মন্দের খবরও নেওয়া হয়নি।
তার সাথে সাথে আমার সেকেন্ড রিলেশনেও ফাটল ধরে। আর এই কয়েকমাস খুব ভালো সময় কাটাচ্ছিলাম। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে সবকিছু লাভে আসলে শোধ হতে যাচ্ছে।

এক সপ্তাহের মাথায় জাবেরের পরিবার থেকে আমাকে আংটি পরিয়ে বিয়ের দিনতারিখ ঠিক করার জন্য আসছে। প্রথমত ভেবেছিলাম জাবের আসবেনা,পরে শুনলাম সে তার সাথে একজন বন্ধুকে নিয়ে আসছে এবং তার মা-বাবা।

ইচ্ছে করেই সাজগোজ করিনি, কোনোরকম তাদের সামনে যাওয়ার জন্য চায়ের সরঞ্জাম হাতে একটু একটু করে এগিয়ে গেলাম। এগুলো টি টেবিলের উপর রেখে সোফায় বসলাম। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি জাবেরের দিকে তাকাবো না। যেই ভাবা সেই কাজ। বুঝতে পারছিলাম আমার বরাবর জাবের বসে আছে, তাই সামনে না তাকিয়ে একপাশে তাকালাম। তাকাতেই আমার কলিজা ধুমরে উঠলো। এটা কে। আহান, মানে আমার দ্বিতীয়বার যার সাথে সম্পর্ক হয়েছিল, সেই ছেলে বসে আছে। সাথে সাথে সামনে তাকালাম,সামনে জাবের বসে মিটমিট করে
হাসছে। কি হচ্ছে এসব! আহান জাবেরের সাথে এখানে আসলো কেন?

তখনই শুনলাম কে যেন বলছে ওদেরকে একান্ত কথা বলতে দাও। আর এই কথার জবাবে আমার আম্মু বলছে..
__আরে নাহ তাদের নতুন করে বলার কিছুই নেই। তারা আগে থেকেই চেনাজানা। তাই এখনই আংটি পরানো হয়ে যাক।

মানে কি, আমার ভীষণ রাগ উঠতেছে, আমি যদি কিছু বলতে না পারি তাহলে আমি শেষ। তাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে একদম সম্ভব না। ঠিক তখনই আমার মাথায় আসলো বিয়েটা আসলে কার সাথে হচ্ছে! এখানে তো দুজন, যাদের দুইজনের পরিচয়ই হলো আমার প্রাক্তন। আর আম্মুর কথা অনুযায়ী আগে থেকেই চেনাজানা!
ওহহো আসলেই বিয়েটা কার সাথে হচ্ছে? এখানে জাবের কোনো পেঁচ লাগাচ্ছেনা তো আবার?

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে