হাসি

0
655
ক্যাম্পাসে ঘাসের উপরে বসে আছে ওরা পাঁচজন অর্থাৎ; আফিফ, লাবিব, তামিম, রুদ্র আর রাফসান। একসঙ্গে পড়ে ওরা; ক্লাসমেট বন্ধু। আড্ডা দিচ্ছে। আড্ডার একপর্যায়ে রুদ্র বলে উঠল, “আর ভাল্লাগে নারে।” জবাবে তামিম বলল, “কেন, তোর আবার কি হয়েছে?” “আরে বাবাকে সেই একমাস ধরে বলছি বাইক কিনে দেও, কিন্তু কিপ্টাটা দিচ্ছেই না।” ভ্রু কুঁচকে তামিম বলল, “কিন্তু তোর তো বাইক আছে।” রেগে গিয়ে রুদ্র বলল “ধুরও। ওটা তো পুরাতন হয়ে গেছে। নতুন একটা কিনব।” এবার রাফাসান বলল, “কিন্তু ওটা তো কিনেছিস এক বছরও হয়নি। তাহলে আবার কেন নতুন একটা কিনবি?” “ওটা চালাতে আর ভাল্লাগে না। লেটেস্ট মডেলের একটা কিনব। কিন্তু বাবা দিচ্ছেই না। এই নিয়ে গতকাল রাতে এক পশলা ঝগড়াও করেছি বাবার সঙ্গে।” “আর বলিস না। তুই তো আছিস বাইক নিয়ে। আর এদিকে আমি সেই এক সপ্তাহ ধরে ল্যাপটপ ল্যাপটপ করেই যাচ্ছি। তাও দিচ্ছে না।”
“কিন্তু তোর তো ল্যাপটপ আছে। তাহলে আবার…” ওকে থামিয়ে দিয়ে রাফসান বলল, “আরে ওটা তো পুরাতন হয়ে গেছে। MacBook চাচ্ছি। আমার MacBook লাগবে।” সবাইকে থামিয়ে দিয়ে তামিম বলে উঠলো, “তোরা আছিস বাইক, ল্যাপটপ নিয়ে। এদিকে আমি যে এই স্যামসাং গত ছয়মাস ধরে চালাচ্ছি। IPhone 11 কিনে দিতে বলেছি বাবাকে। বলেছে সামনের সপ্তাহে দিবে। না দিলে খবর আছে।” এক পর্যায়ে ওরা খেয়াল করল, লাবিব চুপচাপ বসে আছে। কিছু নিয়ে চিন্তায় আছে যেন। সেটা দেখে ওকে ধাক্কা দিল রুদ্র। বলল, “কিরে তোর আবার কি হলো? মুখটাকে অমন প্যাচার মত করে রেখেছিস কেন?” জবাবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো লাবিব। তারপর বলল, “আর বলিস না, সামনের সপ্তাহে নাতাশার বার্থডে। ওর বার্থডেতে IPhone 11 দিব। বাবার থেকে ৮০ হাজার নিয়েছি। এখন বাকি টাকা কই পাব সেটাই ভাবছি।”
এতক্ষণ ওদের সবার কথা চুপচাপ শুনছিল আফিফ। এবার সে লাবিবের কাধে হাত রেখে মুচকি হেসে বলল, “চিন্তা করিস না। বাকি টাকা সময়মত ম্যানেজ হয়ে যাবে।” ওর দিকে তাকিয়ে লাবিব বলল, “তা নাহয় হলো। কিন্তু তুই নতুন ইউনিফর্ম কিনবি কবে? এই একটা দিয়ে আর কত? আচ্ছা তুই এত কিপটা কেন বল তো?” জবাবে মুচকি হাসলো আফিফ। বলল, “কিনব কিনব..আজই কিনব।” “কিন্তু তোর সাইকেলটা কই? দেখছি না তো।” “বিক্রি করে দিয়েছি।” “কেন? বাইক কিনবি নাকি?” “আরে নাহ। এক্সামের ফিস ম্যানেজ করতে পারিনি। তাই ওটা বিক্রি করে দিয়েছি।” এমন সময় রাফসান বলল, “আচ্ছা আফিফ,তোর ফোনটা দে তো। ওতে আমার কিছু পুরোনো ছবি রয়ে গেছে। নিতে হবে।” “কিন্তু ওটা তো আমার কাছে নেই।” “কেন? কী করেছিস?” “ওটাও বিক্রি করে দিয়েছি।” “কেন? নতুন একটা কিনবি?” “সেকেন্ড একটা কিনে নিয়েছি। এই এটা।” পকেট থেকে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড বাটন ফোন বের করে দেখালো আফিফ। “তাহলে আগেরটা বিক্রি করলি কেন?” “আব্বুর ওষুধ কিনতে হবে।” এমন সময় ওর ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা বের করে দেখলো ওর আপু ফোন দিয়েছে। “এখন আমি উঠি রে। আপু ফোন দিয়েছে। পরে কথা হবে।” বলেই আড্ডা থেকে উঠে এল আফিফ। এক পাশে এসে ফোনটা রিসিভ করে কানে ঠেকালো। “হ্যাঁ, আপু বলো।” “কোথায় তুমি?” “এইতো কলেজে।”
“আচ্ছা আমাকে এক হাজার টাকা দিতে পারবা?” কথাটা শুনে এক মুহুর্ত চুপ থাকলো আফিফ। তারপর বলল, “আচ্ছা, আমি দেখছি।” “একটু দ্রুত দিও।” “আচ্ছা ঠিকাছে। আমি এখনি দিচ্ছি।” ফোনটা রেখে পকেট থেকে ওয়ালেটটা বের করল আফিফ। সেখানে এক হাজার পঞ্চান্ন টাকা আছে। এই এক হাজার টাকা রেখেছিল নতুন ইউনিফর্ম কিনবে বলে। সেটাই বিকাশ করে আপুকে পাঠিয়ে দিল। বুঝতে পারলো খিদে লেগেছে বেশ। লাগবেই না বা কেন? সকালে না খেয়েই এসেছে। আর এখন দুপুর। এখন কিছু একটা খেতেই হবে। পকেটে আছে পঞ্চান্ন টাকা। বিশ টাকা রিকশা ভাড়া। তারমানে এখন পঁয়ত্রিশ টাকা খেতে পারবে ও। সেটা ভেবেই কাছের টং দোকানটার দিকে দিকে হাঁটা শুরু করল। হঠাৎ একটা ছেলে ওর হাত ধরে বলল, “ভাই আমারে কয়ডা টাকা দিবেন? আমার বোনরে কিছু খাওয়ামু। আজ দুইদিন ওরে কিছু খাওয়াইতে পারিনাই। খালি পানি খাওয়াই রাখছি।” আফিফ ছেলেটার দিকে ভালোকরে তাকাল। ছেলেটার বয়স বড়জোর দশ কি এগারো। কোলে ছোট্ট একটা মেয়ে। মেয়েটার বয়স পাঁচ কি ছয়। ছেলেটা নিজেই ঠিকমতো চলতে পারছে না, তাও বোনকে কোলে করে রেখেছে। বুঝাই যায় ছেলেটার পেটেও গত কয়েকদিন কিচ্ছু পড়েনি। এবার আফিফ ছেলেটাকে বলল, “গত দুইদিনে তুই কিছু খেয়েছিস?” জবাব দিতে গিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল ছেলেটা। তারপর মাথা তুলে বলল, “হ, খাইছি।” “কী?” “পানি।”
আর কিছু বলল না আফিফ। পঁয়ত্রিশ টাকা ছেলেটার হাতে দিয়ে দিল। তারপর কি ভেবে পকেটে হাত ঢুকিয়ে বাকি বিশ টাকাও বের করল। সেটাও দিয়ে দিল ছেলেটাকে। টাকাটা পেয়ে ছেলেটার নোংরা মুখে হাসি ফুটলো। সে হাসির তুলনা অন্য কোন হাসির সঙ্গে চলে না। কোটি টাকা দিয়েও সে হাসি কেনা যায় না। আর এক মুহুর্তও দাঁড়াল না ছেলেটা। কাছেই থাকা টং দোকান থেকে পাউরুটি কিনে বোনকে খাওয়ানো শুরু করল। মাঝেমধ্যে নিজেও দুয়েকটা কামড় বসালো পাউরুটিটাতে। সেটা দেখে এক চিলতে হাসি ফুটলো আফিফের মুখে। আবার ক্যাম্পাসের দিকে হাঁটা শুরু করল সে। ®সাকিব ফারহান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে