হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে পর্ব-১১+১২+১৩

0
1040

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১১ #kiss
#নবনী_নীলা
“তোমার আর অভির মাঝে কিছু কি হয়েছে?” অর্পা আপুর কথায় আমি না সূচক মাথা নাড়লাম। অভি এখনও আমার উপর রেগে আছে তবে আপুকে বলার সাহস হয়ে উঠলো না। আজ রাতে আসার কথা ছিলো সে দুপুরে বাসায় এসে বলে এক্ষনি যাবে। ২ঘণ্টার রাস্তা আসতে আসতে বিকেল হলো। এতক্ষণে আপু সমস্যার আন্দাজ করে ফেলেছেন।

অভির বড়ো বোন অভির মতন না সে পুরো বিপরীত হাসি, খুশি, প্রাণ উজ্জ্বল তবে অসম্ভম সুন্দরী।

বাসার কাজের মহিলা এসে বললো,” আফা, দুলাভাই, ভাইজান আর মামাজান ঐডি খাইতাসে ছাদে বইসা।”

আমি আপুর দিকে তাকালাম। আপু কঠিন গলায় মতিনের মাকে বললো,” কি খাচ্ছে?”

আমি আর আপু ছাদে গিয়ে দেখি তিনটা বেতের চেয়ারে দোতলার ছাদে বসে wine টাইপ কিছু খাচ্ছে তারা। অভি মাথায় হাত দিয়ে গ্লাস হাতে বসে আছে। ব্যাপারটায় আমি অবাক হ়ইনি কারণ এদের বংশের মানুষদের অভ্যাস আছে।

অর্পা আপু দুলাভাইকে টেনে তুলতে তুলতে বললো,” মামা তুমি খাচ্ছো খাবে ওদের না খাওয়ালেই পারতে। অভি নিজেকে একটু হলেও সামলাতে পারবে। আমারটাকে আমি কি করবো? বাবা, মা,ফুফু আছে কি ভাববে যদি এ অবস্থায় এদের দেখে।”

অভির মামা বিয়ে করেনি মদ, উইসকি এইগুলো সে চায়ের মতন খায়।তাকে নেশায় খুব কম ধরে। তিনি হাসতে হাসতে বললেন,” তোর বাবা একটু আগে খেয়ে গেলো, প্রথমে না বললো শেষে ২গ্লাস খেয়ে নিলো।”

অর্পা আপু মামাকে আর কিছু না বলে আমায় অভিকে রুমে নিয়ে যেতে বললেন।আমি অভির হাত ধরে কাধে হাতটা রেখে উঠালাম।মামা আমাকে ডেকে বললেন,” একটু লেবুর শরবত দিও অভিকে বেশ ভালই খেয়ে নিয়েছে।”

আমি কোনো রকমে অভিকে রুমে নিয়ে এলাম। রুমে সে ভালো ভাবেই এলো। মুভিতে যেমন মাতাল দেখেছি ঢুলে ঢুলে যায় তেমন কিছুই করছে না। দরজার সামনে হটাৎ দাড়িয়ে পড়লো।
এবার সে দাড়িয়ে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন মাতাল তো আমি কোনো মুভিতেও দেখিনি!

আমি বললাম,” কি দেখছেন আপনি?”
অভি ফ্লোর এ বসে পড়লো।
মনে হচ্ছে তার মাথা ব্যাথা করছে। মাথায় হাত দিয়ে আছেন।

” উঠুন আমি আপনাকে বিছানায় নিয়ে যাচ্ছি। আপনার মাথায় ম্যাসেজ করে দিবো।”

অভিকে নিয়ে আমি খাটে বসাতে চাইলাম যাতে তার মাথা ম্যাসেজ করতে পারি। সে খাটে শুয়ে পড়ল দুলতে দুলতে।
ব্যাথায় অভি নড়াচড়া শুরু করেছে। সহ্য করতে না পারলে খেতে কে বলেছে।
আমি অভির মাথা তুলে আমার কোলে রেখে ভালো ভাবে ম্যাসেজ করে দিচ্ছি। অভি চুপ করে চোখ বন্ধ করে আছে।
আমিতো শুনেছি এইগুলো খেলে মানুষ আরো বেশি কথা বলে উল্টা পাল্টা কথা। এর দেখি কথা বন্ধ হয়েগেছে।

অভি হটাৎ আমার হাত ধরে হাতটা বুকের কাছে নিয়ে ধরে রাখলো।

” আচ্ছা আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন?”আমি প্রশ্ন করলাম।

অভি চোখ খুলে বাচ্চাদের মতন মাথা নাড়িয়ে হা বললো।বলেই সে উঠে বসার চেষ্টা করছে কিন্ত ঠিকমতো ব্যালেন্স করতে পারছে না। আমি অভিকে ধরে অভির পিঠের নীচে একটা বালিশ দিয়ে বসলাম।

অভি শক্ত করে আমার দুই বাহু ধরে বললো,” তুমি অন্য ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বলবে কেনো? আমার সাথে কখনো হেসে কথা বলেছো।”

আমার বুকের ভিতরটা ধক করে উঠল।
বলেই অভি আমাকে আরো শক্ত করে ধরলো। আমার ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছিলো পরে মনে হলো উনিতো একটা ঘোরের মধ্যে আছে এখন। মাতলামি করছে এগুলো ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

আমি হেসে বললাম,”আচ্ছা আর কোনো ছেলের সাথে হেসে কথা বলবেনা শুধু আপনার সাথে হেসে কথা বলবো। এবার ছাড়ুন আমার হাত দুইটা খসে পড়বে নইলে।”

অভি আমাকে ছেড়ে আমার গাল টেনে বললো,” গুড গার্ল।” বলে আমার হাত ধরে বালিশে হেলান দিলো।

ওমা গো কথায় কাজ হইছে। একবার বললাম বুইঝ্যা গেসে এই জিনিস আগে কই ছিলো। এইটা তো আরো আগে খাওয়ানো উচিৎ ছিলো। অভি হাসছে প্রাণ খুলে হাসছে। মুখ থেকে হাসি সরছে না। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি। অভিকে রোজ এই ছাই পাশ খাওয়ানো দরকার এভাবে হাসবে তাহলে।

আচ্ছা আমি যতদুর জানি এইগুলো খেলে কিছু মনে থাকে না মানুষ সত্যি কথা বলে। পরীক্ষা করে দেখলে কেমন হয়।

আমি বললাম,” আচ্ছা আপনি কি অথৈকে এখনো ভালোবাসেন?”

অভি চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে চিন্তায় আমার অবস্থা খারাপ।যদি হা বলে তখন তোর কি হবে নওরীন।
অভি মুখ গম্ভীর করে বললো,” না।”

বাহ্ এইটাই তো শুনতে চাচ্ছিলাম।” খুব ভালো খুবই ভালো। ওর চেহারাও কোনোদিন দেখবেন না ।”রাগী স্বরে বললাম।

অভি ভদ্র বাচ্চার মতন সম্মতি জানিয়ে দুলতে দুলতে মাথা নাড়ল। বাহ্ এমন একটা জিনিস উনি এর আগে খায় নি কেনো। আমিও একদিন খেয়ে দেখবো যে এইটা আবিষ্কার করেছে তাকে অস্কার দেওয়া উচিৎ।

তাহলে কি সেফুদা ঠিক বলতেন ” মদ খাও মানুষ হও।”

অভির পেট থেকে আরেকটা কথা বের করতে হবে।
আমি বললাম,” তাহলে বিয়ের আগে যে বললেন সে আপনাকে ছেড়ে গেছে কিন্তু আপনি ভুলেননি। ওইসব কি ছিলো।”

” ওইগুলো বলেছি জাতে আমাকে কোনো মেয়ে বিয়ে না করে। আমি কেনো ওই চিটারকে ভালোবাসবো।”অভি বলে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।

আমার ইচ্ছে করছে চিৎকার করে সবার কানের পর্দা ফাটিয়ে দেই। খুশিতে আমি অভিকে জড়িয়ে ধরি। জড়িয়ে ধরে বুঝতে পরলাম অভির শরীর গরম। আমি মাথায় হাত দিয়ে দেখলাম কিন্তু জ্বর নেই। তাহলে শরীর এমন গরম কেনো?

অভি নিজের শার্টের বোতাম বিরক্তি নিয়ে খুলে ফেলছে।
” আরে আরে করছেন কি?” বলে আমি অভির হাত ধরে ফেললাম।

” গরম লাগছে। শার্ট খুলবো”,বলে আমার হাত ছাড়িয়ে নিলো।

” এসি চলছে তারপরও আপনার গরম লাগছে? আমি এসি বাড়িয়ে দিচ্ছে শার্ট খুলবেন না।” ,বলে শেষ না করতে অভি শার্ট খুলে ফেলেছে।

এবার আমার অসস্তি লাগছে। মামার কথা মতন লেবুর শরবত খাওয়াতে হবে। আরো মারাত্বক কিছু করার আগে থামাতে হবে।

” আচ্ছা আমি একটু আসছি আপনি বসুন।”,বলে যেই আমি উঠতে নিয়েছি অভি আমার কোমর জড়িয়ে ধরে আমাকে কাছে নিয়ে এলো।

আমার শরীরের লোম খাড়া হয়ে গেছে। অভির দিকে আমি তাকাতেও পারছিনা, অভির গায়ে শার্ট নেই। একটু আগে বাচ্চাদের মতন করছিলো এখন আবার কি হলো? হটাৎ করে বড়ো হয়ে গেলো কিভাবে।

” তুমি এখানে থাকবে”,বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আমি একটা ঢোক গিললাম। নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে আমার। মনে হচ্ছে আমি বরফ হয়ে গেছি।

” আচ্ছা থাকবো, আমাকে ছাড়ুন।”, গলা শুকিয়ে গেছে আওয়াজও বের হচ্ছে না। অভি আমার কাধ থেকে মুখ তুলে আমার দিকে তাকালো।আমি অভির চোখের দিকে তাকাতে পারছি না।

অভি আমার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। কিছু সেকেন্ড আমি বুঝতেই পারিনি কি হলো।

মদ খেয়ে বউ পিটানোর কথা শুনেছি কিন্তু এটা কি হলো? জিনিসটা যত ভালো ভেবেছিলাম এতো ভালো না।

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১২ #কাল_রাতে_কি_হয়েছিলো
#নবনী_নীলা
অভির ঘুম ভেঙেছে সকাল ১০টায়।অভি উঠে বসতে বসতে খেয়াল করলো তার গায়ে শার্ট নেই। নওরীনকে রুমে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। অভি দেওয়ালের ঘড়ির দিকে তাকালো ১০টা ২মিনিট।দেরিতে ঘুম থেকে উঠা অভির অভ্যাস নেই, মাথায় ঝিম ধরেছে।

অভির কাল রাতের কথা কিছু মনে নেই। অভি কিছুক্ষণ বসে মনে করার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছু মনে পড়ছে না। অভি রেগে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নীচে নামলো।

নওরীনকে খোঁজার জন্যে অভি কিচেন এ এলো। নওরীন কিচেনেই আছে কিন্তু অভি আসছে বুঝতে পেরেও তাকাচ্ছে না।

অভির নওরীনের সাথে কথা বলার প্রয়োজন।কিন্তু কিচেনে মা,ফুফু,আপু সবাই আছে। অভি কি বলবে বুঝতে পারছেনা। অভিকে দেখে নওরীন উল্টা দিকে ঘুরে কাজ করছে। কাল রাতে কি কিছু হয়েছে যার কারণে নওরীন রেগে আছে। অভি এইগুলো ভাবতে ভাবতে কিচেনে ঢুকলো।

অভি খেয়াল করলো মা, ফুফু, আপু সবাই মুচকি হাসছে অভিকে দেখে।অভির মা কিচেন থেকে চলে গেলো। অর্পা ছুরি দিয়ে লেবু কাটছিলো অভিকে দেখে বললো,” বাহ্ ঘুম থেকে উঠে সোজা কিচেনে চলে এলি।”

অভি একটা চেয়ার বসে বললো,” আপু আমাকে চা দে মাথা ধরে আছে।”

” তোকে আমি চা কেনো কিছুই দিবো না। নিজে খেয়েছিস আবার আমার জামাইটাকেও গিলাইসোস।”,অভির মুখের কাছে ছুরি দেখিয়ে শাসিয়ে বললো অর্পা।

” তোর জামাইকে আমি খাওয়াইনি সে নিজেই বসেছে। নতুন একটা এক্সপেরিয়েন্স করবে বলে।”,অভি হাই তুলে বললো।

” নতুন এক্সপেরিয়েন্স ছুটাচ্ছি আমি। কালকে রাতে কি করেছে জানিস বমি করে আমার জামা কাপড় ভরিয়ে দিয়েছে। বমি করলে নিজের গায়ে করতো কিন্তু না আমার গায়ে করেছে। ঘুম থেকে উঠুক আজকে তার একদিন কি আমার।”

অভি মুচকি হেসে বললো,” কার্টুনিস্ট কোথায় আমাদের?”

” প্রভাত মামার কাছে।”, বলে শেষ না করতে ফুফু উঠে এলো।

ফুফু এসে অভির পিঠে হাত রেখে বলল,” নওরীন মা একটু ছাদে গিয়ে দেখবা আমার আচার গুলোর উপর রোদ পড়ছে কিনা?”

নওরীন হাতের কাজ রেখে হা সূচক মাথা নেড়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। অভির সামনে দিয়ে গেলো কিন্তু নওরীন তাকালো না। ব্যাপার টা অভি কিছুই বুঝছে না। ফুফু তাকিয়ে আছে নওরীনের যাওয়ার দিকে।

” সাবধানে যাইও।”, বলে ফুফু অভির দিকে তাকালো। অভির পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,” ভালা আসস?”

“হুম, তোমার কি অবস্থা ফুফু?” বলে অভি গ্লাসে পানি ঢাললো।

“সুসংবাটা পাইসোস?”হাসি দিয়ে বললেন ফুফু।

অভি গ্লাস হাতে নিয়ে বলল,” কিসের সুসংবাদ?”

” তুই বাবা হবি।”,বলেই অর্পার দিকে তাকিয়ে হাসছে ফুফু।

অভি বললো,” হুম সে তো একদিন হবো।”বলে পানি খেলো।

” আরে একদিন হবি মনে? কিছুদিনের মধ্যেই হবি হুজুরের ওষুধ কাম করসে।”ফুফুর কথা শুনে অভি বিষম খেলো।

অর্পা হাসতে হাসতে বললো,” ফুফু তুমি থামতো যখন হবে তখন দেখা যাবে।”

অভি কালকে রাত নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেল।ফুফু হাসতে হাসতে কিচেন থেকে বেরিয়ে গেলেন। অভি একটা ঢোক গিলে বললো,” ফুফু এইগুলো কি বললো?”

” আরে সকালে ফুফু সবার জন্য পায়েস রেঁধেছিলো। নওরীন পায়েসটা খাবার সময় কিসমিস খেয়ে ফেলে তাই বমি হয়। বেচারি নাকি কিসমিস সহ্য করতে পারে না। ফুফু কি আর এইগুলা শুনে উনি শুরু করছে ওনার হুজুরের ওষুধ কাজ করছে।”

অভি শান্তির নিশ্বাস ফেলে বললো,” ও আচ্ছা।”

” অভি তোর কি সন্দেহ হচ্ছে? টেস্ট করাবো নাকি?”,বলেই অর্পা হাসতে লাগলো।

” আপু তুই থামবি?”

” আচ্ছা যা, রুমে যা। আমি রুমে চা পাঠিয়ে দিবো। চিন্তা করিস না তোর বউকে দিয়েই পাঠাবো।”,বলে আবার হাসতে লাগলো অর্পা।
অভি আড় চোখে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।

______
আমি ছাদে এসে কোনো আচারের বক্স পেলাম না। নীচে গিয়ে ফুফুকে বলায় উনি বললেন,” আচ্ছা কোনো সমিস্যা নাই, তুমি যাও।”

কিচেনে আসতেই অর্পা আপু আমাকে চায়ের কাপ হাতে দিয়ে বললেন,” যাও তোমার বরকে চা দিয়ে এসো।”

আমি এখন অভির রুমে যাবো চা নিয়ে? আমার অভির সামনেই যেতে ইচ্ছে করছে না। আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি বললাম,”আপু আমি নিয়ে যাবো?”

” তোমার বর তুমি নিয়ে যাবে না তো কি তোমার সতিনকে ডাকবো। এমন চেহারা করে লাভ নেই যাও অভিকে চা দিয়ে আসো।”,বলে অর্পা আপু ঠোঁট চেপে হাসলেন।

আমি পা টিপে টিপে দোতলায় উঠলাম দোতলার করিডোরের পাশের ঘরটা অভির। আমি অভির ঘরের সামনে গিয়ে একটা নিশ্বাস নিলাম। মনে হচ্ছে আমি যুদ্ধে যাচ্ছি। না আমি কোনো পুটি মাছ না আর উনি কোনো হাঙ্গর না। নার্ভাস হওয়ার কিছুই নেই।

রুমে যাওয়ার আগে বাহির থেকে উকি মেরে দেখলে কেমন হয়? রুম ফাঁকা থাকলে সাই করে গিয়ে রেখে আসবো। আমি দরজাটা একটু ফাঁক করে দেখার চেষ্টা করলাম। মনে হচ্ছে রুমে কেও নেই। নওরীন তোমার রাস্তা পরিষ্কার যাও সাই করে কাপ রেখে মিশন কমপ্লিট করো।

আমি যথা সম্ভব আস্তে আস্তে ঢুকলাম ঢুকে দেখি উনি খাটের এক পাশে বসে আছে। আমি কি দিন দিন অন্ধ হয়ে যাচ্ছি। রক্ত মাংসের একটা মানুষকে দেখতে পারিনি। ইচ্ছে করছে নিজের গালে দুটো চর মারি।

আমি চায়ের কাপটা রেখে সূরা ফাতিহা পড়তে পড়তে বের হয়ে যেতে নিবো।অভি পিছন থেকে ডাকলো,” নওরীন দাড়াও।”

দরজা আমার থেকে দূরে আছে আমি খাটের সামনে দাড়িয়ে পড়লাম। অভি উঠে এদিকে আসতে আসতে বললো,” তোমার সাথে আমার কথা আছে।”

আমি একটা ঢোক গিললাম আবার কিসের কথা। আমি দরজার দিকে তাকিয়ে বললাম,”আমার অনেক কাজ আছে।”বলেই চলে যাবো অভি হাত ধরে ফেললো।

” আমি বললাম না কথা আছে।” , গম্ভীর স্বরে বলল।

আমার এবার কি হবে? আমার কপালটাই এমন। উনি এবার কি বলবে না কি বলবে? আমি অভির দিকে তাকাচ্ছি না।

” দরজার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? আমার দিকে তাকাও।” বলে অভি আমার চোখের সামনে এসে দাড়ালো।

অভির দিকে তাকানো আমার পক্ষে সম্ভব না। তাকালেই কাল রাতের কথা মনে পড়ে।আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।

” কাল রাতে কি হয়েছিল?”, অভির প্রশ্ন আমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেল বোধ হয়। এখন কি উনি বলবে যে কাল রাতের কথা ওনার মনে নেই! হে আল্লাহ এবারের মতন বাঁচিয়ে দেও আগামী এক সপ্তাহ মিথ্যা কথা বলবো না।

এমন সময় প্রভাত মামা মামা বলে atসে পিছন থেকে অভিকে জড়িয়ে ধরলো। বাচ্চারা আসলেই ফেরেশতা। আল্লাহ সত্যি এক সপ্তহ আমি মিথ্যা বলবো না দেখে নিও।

অভি আমার হাত ছেড়ে প্রভাতকে কোলে নিয়ে বললো,” কি ব্যাপার কার্টুনিস্ট কোথায় থাকো তুমি?”

প্রভাত সম্ভব সুন্দর ড্রয়িং করতে পারে। কার্টুন আকার প্রতি তার ঝোক তীব্র। বড়ো হয়ে কার্টুনিস্ট হতে চায়, সে ড্রয়িং এর ক্লাসও করে। ওকে দেখলে মাঝে মাঝে নিজেকে বলি আমি জীবনে করলামটা কি?একটাই কাম পারি কুম্ভকর্ণের মতন ঘুম।O_o

প্রভাত আমার দিকে তাকিয়ে বলে,” আমি তোমাদের কার্টুন ভার্সন একেছি। তোমরা দেখবে? প্রথমবার ভালো হয়নি কিন্তু এবার ঠিক হয়েছে।”

ছবিটা দেখে আমি হা করে আছি। এতো সুন্দর করে একেছে প্রভাত। অভি বললো,” এই হ্যান্ডসামটা বুঝি আমি? আমার পাশের পিচ্চিটা হা করে আছে কেনো?”
আমি আড় চোখে তাকালাম।

প্রভাত বললো,” ওটা মামী পিচ্চি না। মামী তোমাকে জোর করে পিকনিকে নিয়ে যাচ্ছে তাই তোমার মুখ রাগী। আর মামী গান গাইছে।”

” ঠিক বলেছো”, বলে আমি আর প্রভাত হাইফাইভ দিলাম।

[ চলবে ]

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১৩ #অনুভুতি
#নবনী_নীলা
“দরজার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? দরজা বন্ধ, ওদিকে তাকিয়ে লাভ নেই। So better আমার দিকে তাকাও।”অভির কথায় নওরীন দরজার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকালো কিন্তু অভির দিকে তাকালো না।

অভির ব্যাপারটায় ভীষণ রাগ হচ্ছে। আজ সারাদিন নওরীন একই কাজ করেছে। হয় তাকে দেখলে দৌড়ে পালাচ্ছে নয়তো ইগনোর করছে। তাই যাতে পালাতে না তাই রুমে আসার সাথে সাথে অভি দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।

নওরীন দেওয়ালের সাথে আতিসাটি মেরে দাড়িয়ে আছে। অভি নওরীনের সামনে হাত দুটো ভাজ করে দাড়িয়ে আছে। নওরীন ভেবেছিলো সুযোগ বুঝে রুমে এসে ঘুমের ভান করে শুয়ে পড়বে কিন্তু সে ফেঁসে গেছে।

” এই রকম weird behave করছো কেন তুমি?”, অভির প্রশ্নে নওরীন একটা ঢোক গিলে বললো,”আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাবো।”বলেই নওরীন চলে যাচ্ছিলো অভি নওরীনের ধরে আগের জায়গায় নিয়ে আসে। নওরীনের দুই পাশের দেওয়ালে হাত রেখে দাড়ায়।

” আমার কথা শেষ হয়নি আর যতক্ষণ পর্যন্ত না শেষ হচ্ছে তুমি এখানে থাকবে। কালকে রাতের পর থেকে তুমি এমন weird behave করে যাচ্ছে। কি হয়েছে কাল রাতে আমাকে বলো।”

নওরীন অভির দিকে তাকাচ্ছে না কিন্তু অভির কণ্ঠের গাম্ভীর্যতা বলে দিচ্ছে সে রেগে আছে। নওরীন কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। আজ মনে হচ্ছে কথা বের করেই ছাড়বে অভি।

” কিছু না”, নিচু স্বরে বললো নওরীন।

” কিছু না হলে এমন ইদুরের মতন করছো কেনো? সত্যি করে বলো।”, অভি নওরীনের কাছে ঝুঁকে দাড়ালো।

” বললাম তো তেমন কিছু হয় নি।”, ইদুর বলায় নওরীন রাগে জোরে বললো।

এখন ফেঁসে গেছে বলে, নইলে নওরীনকে ইদুর বলেছে আর সে ছেড়ে দিবে এতক্ষণে লংক্কা কান্ড লেগে যেতো। নওরীন রাগী চোখে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।

” তেমন কিছুটা কি সেটাই জানতে চাচ্ছি, যার জন্য এমন ভিজে বিড়াল হয়ে আছো।”, অভি মজা নিয়ে বললো।

নওরীন গাল ফুলিয়ে জানালার দিকে অগ্নী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অভি আরো বললো,” কাল তেমন কিছু হয়নি, আজ অনেক কিছু হতে পারে তাই না।”অভি একটু কাছে এসে বললো।

নওরীন অভির দিকে মুখ ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,” ওইসব ফালতু জিনিস খেয়েছেন আপনি উল্টা পাল্টা কাজ করেছেন আপনি আর আমাকে বলছেন বলতে? আমি কেনো বলবো? আপনি খেয়েছেন কেনো।” চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলল নওরীন। নওরীনের কথা শুনে অভি হেসে ফেললো।

অভির হাসির শব্দে নওরীন চোখ খুললো। অভির দিকে তাকাতেই অভির ঠোঁটের দিকে চোখ গেলো নওরীনের।নওরীন একটা ঢোক গিলে সাথে সাথে দুই হাতে চোখ বন্ধ করে ফেললো।

অভি ব্যাপারটা খেয়াল করলো। অভির ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে নওরীনের লজ্জার কারণটা অভি বুঝতে পেরেছে।অভি মুখে বললো,” হাত সরাও মুখ থেকে।” নওরীন না সূচক মাথা নাড়ল।

অভি নওরীনের দুই হাত দেওয়ালের সাথে লক করে দিল। নওরীন চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় ভ্রু কুঁচকে ফেললো।
অভি নওরীনকে কিস করলো।নওরীন বুঝতে পেরে চোখ খুলে আবার বন্ধ করে ফেলে।

অভি নওরীনের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা এখনও চোঁখ বুঝে ঠোঁট কামড়ে দারিয়ে আছে। অভি নওরীনের হাত ছেড়ে দেওয়া মাত্র নওরীন দেওয়ালের দিকে ঘুরে চোখ খুলো। এমন ভাবে দাড়িয়েছে যাতে তার চেহারা দেখা না যায়।

অভি দেওয়ালের দু পাশে হাত রেখে নওরীনের কানের কাছে গিয়ে বলল,” তুমি কি সারারাত এখানে দাড়িয়ে থাকবে?”

নওরীন মুখ ফুলিয়ে হা সূচক মাথা নাড়ল।
” বাহ্ এভাবে তোমাকে চুপ করানো যায় সেটা তো আগে জানা ছিল না। আগে জানলে এতো কষ্ট করতে হতো না আমায়।”

নওরীনের উপায় নেই কারণ তার সাথে কি হচ্ছে সেটা সে নিজেও জানে না। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, হার্ট এমন ভাবে বিট করে যেনো এক্ষুণি বেরিয়ে আসবে। এ কেমন অনুভূতি তার জানা নেই। তবে নওরীন অভির দিকে তাকাতে পারছেনা কারণটা নওরীনের নিজেরও জানা নেই।

অভি নওরীনের হাত ধরে বললো,” অনেক হয়েছে ঘুমাবে এসো।”

নওরীন কোনো কথা না বলে হাত ছাড়িয়ে নিতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।

” তোমার কি মনে হয় তুমি আমার সাথে পারবে। নিজেই ব্যাথা পাবে।”,বলে অভি নওরীনের হাত ছেড়ে দিল।

” আমার ঘুম পাচ্ছে না।”, মুখ ফুলিয়ে বললো নওরীন।

” একটু আগে না খুব ঘুম পাচ্ছিল? তোমার ঘুম না পেলেও তুমি শুয়ে থাকবে। কারন রাত ১টার কাছাকাছি।”,বলে অভি নওরীনকে কোলে করে নিয়ে বিছনায় বসলো।

নওরীন আলুর মতন মুখ ফুলিয়ে রাগী স্বরে বলল,” সব কি আপনার ইচ্ছে মতন হবে?”

অভি ঘরের লাইট বন্ধ করতে করতে বলল,” হুম আমার কথায় হবে।”

নওরীন বিছনায় পা তুলে ঘাপটি মেরে বসে।অভি অপছা আলোর বাতি জ্বালিয়ে বলে,” তোমাকে কি এসে শুইয়ে দিতে হবে?”

” আপনা টাইম আয়গা “, মনে মনে বলে নওরীন আড় চোখে তাকিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ে।

ঘরের পানির জগে পানি নেই দেখে পানি আনতে অভি নিচে যায়। এসে দেখে এর মধ্যেই নওরীন ঘুমিয়ে গেছে বাচ্চাদের মতন ঘুমাচ্ছে।বালিশের নীচে হাত রেখে ঘুমাচ্ছে।অভি আস্তে করে জগটা রেখে নওরীনের দিকে মুখ করে শুয়ে পড়ে।

[চলবে]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে