হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে পর্ব-০৯+১০

0
1101

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ৯ #অভির_চশমা
#নবনী_নীলা
তোমার কি পিরিয়ড হয়েছে?”, ব্যাস্ত হয়ে বললো অভি। আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম। অভি মাঝে মাঝে খুব সহজেই আমাকে বুঝতে পারে। অভি বকা দিয়ে বললো,” এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে idiot!”

বলেই অভি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো যাওয়ার আগে দরজা চাপিয়ে দিয়ে গেলো।আমি টাওয়াল পেঁচিয়ে রুমে ঢুকে প্রথমে দরজাটা ভিতর দিয়ে লাগিয়ে নিলাম।
আমি জামা বদলে নিলাম কিছু জিনিসের প্রয়োজন লাগতো কাল সকাল পর্যন্ত চলতে পারবো, ভাল্লাগছে না। এখন আমার পক্ষে দোকানে যাওয়া পসিবল না।

অনেক tired লাগছে ঘুমও পাচ্ছে। আমি দরজাটা খুলে দিয়ে বেডে শুয়ে পড়লাম। পেট ব্যাথা শুরু হয়েছে। পেটের ওপর একটা বালিশ চাপা দিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।

রাত কটা বাজে বুঝতে পারছি না। ঘুম ভেগেছে আমার। মাঝে মাঝে আরমেও ঘুম ভেগে যায় আমার হয়েছে সেটা। অভির হাতের উপর আমি মাথা রেখে শুয়ে আছি। আমার মাথার কাছেই অভি মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।
অভির নিশ্বাস এসে পড়ছে আমার ঘাড়ে। হালকা একটু সুরসুড়ি লাগছে কিন্তু ভালোও লাগছে।অভি আমার কোল থেকে বালিশ সরিয়ে হটপ্যাক এনে দিয়েছে এসিটা বাড়িয়ে দিয়ে গায়ে একটা কাথা দিয়েছে, আরাম লাগছে অনেক।

আমার ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় সব করেছে অভি। আমি ঘুমিয়ে থাকলেই এনার আমার প্রতি মমতাবোধ জাগ্রত হয়। আমিও গাজাখোরদের মতন ঘুমাই টের ও পাই না। রুমে আপছা আলোর বাতি জ্বলছে। অভি চশমা পরেই ঘুমিয়ে গেছে।
চশমাটা খুলে দিতে পারলে ভালো হতো। আমি আস্তে আস্তে চশমাটা খুলে টেবিলে রাখলাম।

টেবিলে চশমা রাখতে গিয়ে দেখি এক বাটি নুডুলস প্লেট দিয়ে ঢাকা। তার পাশে একটা আইস ক্রিমের বক্স। আমার মন ভালো না থাকলে আমি নুডুলস খাই। আমি একটু অদ্ভুত।
খিদে আমার পেয়েছিলো, হয়তো এই জন্যেই ঘুম ভেঙেছে,এইগুলো দেখে আমি চুপ করে রইলাম। এই সব অভি করেছে। এতো ভালো হয় কি করে কেউ? অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করছে মুখ থেকে হাসি সরছেই না।

আমি আস্তে করে উঠে ফ্রেশ হলাম রাত এখন ৩টা বেজে ২৩মিনিট। অনিচ্ছা থাকা সত্বেও নুডুলস পুরোটা শেষ করলাম, ফেলে দিতে ইচ্ছা করছে না।
নুডুলস আমার বলতে গেলে প্রিয় কারন এইটা তৈরি করা সহজ। খাওয়া শেষ করে আইস ক্রিমের বাটি ধরলাম কিন্তু পেটে জায়গা নেই অল্প একটু খেয়ে রেখে দিতে হলো।

আমি অভির কাছে এসে শুয়ে পড়লাম। এতো নিষ্পাপ লাগছে অভিকে দেখতে। আমি অভির একটা হাত কোলবালিশের মতন জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে উঠে দেখি অভি নাস্তা নিজেই তৈরি করে অফিসে গেছে। আমাকে ঘুম থেকে তোলে নি আর আমিও মরার মতো ঘুমিয়েছি।
অভি শুধু নাস্তা তৈরি করেনি আমার প্রয়োজনের জিনিসগুলো এনে রেখে দিয়েছে আমার ড্রয়ারে। উনি জানলো কিভাবে? হটাৎ হটাৎ কি টেলিপ্যাথি কাজ করে নাকি? গরিলাটাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সে তো অফিসে।

সন্ধ্যা ৭টা বাজে কলিং বেল বেজে উঠলো এমন সময় অভি আসে। আমি দরজা খুলে দেখলাম অভি না একটা মেয়ে এসেছে। বুঝার বাকি রইলো না যে এই মেয়েই অথৈ চেহারায় কুটনি মার্কা হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ইচ্ছে করছে এ মেয়ের মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেই। কিন্ত না রেগে গেলে চলবে না নওরীন ঠান্ডা মাথায় সামলাতে হবে।

” ভেতরে আসতে পারি?”, বললো অথৈ।

আমি মনে মনে বললাম না ভিতরে কিসের দরকার? এক্ষুণি চলে যা। কিন্তু এগুলো বলা যায় না আমি হা সূচক মাথা নেড়ে ভিতরে আসতে বললাম।

সোফায় আমার বরাবর অথৈ বসেছে। এই মেয়েকে আমি সোফায় বসিয়ে অ্যাপায়ন করছি ভাবা যায়।

” তা তোমাদের ডিভোর্স কতদূর এগিয়েছে?”কত বড় সাহস এই মেয়ের আমার বাসায় এসে নির্ভয়ে এইগুলো বলছে।
ইচ্ছে করছে ডাইনিটাকে রসুনের শরবত খাইয়ে মেরে ফেলি। আমি চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছি। এমন সময় আবার কলিং বেল বেজে উঠল।

অথৈ বললো,” অভি এসেছে মনে হয়।” আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
আমি গিয়ে দরজা খুলে দেখি অভি এসেছে। এখনই আসতে হলো তার। মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ পর রাগে নিশ্বাসের সাথে আগুনের লাভা বের হবে।
আমি কিছু না বলে আগের জায়গা এসে বসে পড়লাম। অভি আমার নাম ধরে ডেকেছে কিন্তু আমি সারা দিচ্ছি না। কেনো সাড়া দিবো এই ডাইনিটাকে উনি এনেছেন।

অভি ড্রয়িং রুমে এসে অথৈকে দেখে চোখ মুখ শক্ত করে ফেললো। অভি এমন ভাবে আমার দিকে তাকালো যেনো একে বাসায় ঢুকতে দিয়ে বিরাট অপরাধ করেছি আমি। অথৈ অভির দিকে তাকিয়ে বললো,” মনে হচ্ছে আমাকে দেখে তুমি খুশি হও নি।”

তুমি করে বলছে দেখো ওরে প্রেম একবারে উতলিয়ে উপচে পড়ছে। তুমি আমাকে দেখে খুশি হও নি? যত্তসব মনে মনে বললাম আমি।

অভি বললো,” অফিসে ঢুকতে দেইনি বলে তুমি বাসায় চলে আসবে। Self respect বলেও তো কিছু আছে তাই না।”

অভির কথায় আমার রাগ এবার একটু কমলো কিন্তু এই ডাইনি অফিসেও হামলা করেছে।

অথৈ বললো,” অভি তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।”

” বুঝতেই যখন পারছো দারিয়ে আছো কেনো, get out. তোমার ছায়াও আমি আমাদের আসে পাশে দেখতে চাই না। তোমার সাহস কি করে হয় নওরীনকে ডিভোর্সের কথা বলার। নিজের লিমিট বজায় রাখো।”রেগে গিয়ে বলল অভি।

অভির কথায় ডাইনিটার সাথে আমিও চমকে উঠলাম অভিকে তো আমি কিছু বলিনি। লান্ডলাইনের সাথে কি কোনো ভাবে অন্য কোনো ডিভাইসের সংযোগ আছে।

অথৈ হাসছে শয়তানি হাসি না।হালকা একটু হাসি ব্যার্থতার হাসি যাকে বলে।

অথৈ বললো,” অভি তুমি কি এখনও চশমা পড়ে ঘুমিয়ে যাও?”

অভি মুখ আরো শক্ত করে বললো,” just get out .”

অথৈ আর কিছু না বলে চলে গেল। আমার এতক্ষন খুব বেশী রাগ হয়নি। কিন্তু শেষের কথাটা শুনে রাগে আমার কান লাল হয়ে গেছে।
অভিকে ওই ডাইনি ঘুমাতে দেখেছে। আচ্ছা দেখেছিস ভালো কিন্তু না সে যে চশমা পড়ে সেটাও খেয়াল করেছে। অভিকে তখন দেখতে অন্য রকম সুন্দর লাগে অভির কাছে যেতে ইচ্ছা করে। ওই মেয়ের ও নিশ্চয় ইচ্ছে করেছে।

অভি রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে ছিলো।

আমি কিছু টোস্ট বিস্কুট নিয়ে ডাব্লিউ ডাব্লিউ খেলা দেখতে বসেছি।
নিজের রাগ কমাতে হবে। বসে বসে শক্ত টোস্ট বিস্কুট চাবালে রাগ কমে। মনে হয় যার উপর রাগ তাকে চাবাচ্ছ।
ডাব্লিউ ডাব্লিউ খেলা দেখবো কারন এটা দেখলেও রাগ কমে। যে মার খায় সেটা যার উপর রাগ হয়েছে তাকে মনে করলেই আনন্দ। আর যে মারে সেটা আমি নিজে।

আমি যে রাগ করেছি বা জ্বলে যাচ্ছে আমার শরীর সেটা অভিকে বুঝতে দেওয়া যাবে না। সে ভাববে আমি তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি। আমি টিভি দেখতে বসলে অভি এসে আমার পাশে বসে।
আজও সেটাই করলো কিছুক্ষণ পর আমার পাশে এসে বসলো।

অভি টিভির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো। আমার মুড কেমন সেটা বুঝার চেষ্টা করছে আমি এদিকে টোস্ট বিস্কুট চাবিয়ে যাচ্ছি।

“তোমার কি কাউকে মারতে ইচ্ছা করছে।”, অভি বললো।

আমি স্বাভাবিক আচরণ করতে চাচ্ছি। তাই শান্ত গলায় বললাম, ” আপনার এমন মনে হবার কারণ?”, বলেই অভির দিকে তাকিয়ে দেখি তার চশমা।

ওনার চশমা দেখে রাগ লাগছে আমি টিভির দিকে তাকিয়ে আরেকটা টোস্ট বিস্কুট নিলাম ৪,৫টা খাওয়া হয়ে গেছে আমার। পেটে জায়গা নেই তাও খাচ্ছি।

অভি বললো,” তুমি তো রোমান্টিক ড্রামা দেখো আজ হটাৎ ডাব্লিউ ডাব্লিউ খেলা দেখছো তাই জানতে ইচ্ছে করছে।”

” কেনো আমি কি এইটা দেখে খুব ভুল করেছি?”, রেগে বললাম।

অভি আমার হাত ধরে ওর কাছে নিয়ে গেলো। আমি হাত ছড়ানোর চেষ্টা করছি অভি দুই হাত দিয়ে পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। আমি চুপ করে আছি। ওনার ফাঁদে পা দিবো না।

অভি আমার কানের কাছের চুল সরিয়ে দিয়ে বললো,” রাগ টা ঝেড়ে নিলেই পারো , শুধূ শুধু বসে বসে টোস্ট বিস্কুট চাবাতে হতো না।”

[ চলবে ]

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১০ #মান_অভিমান
#নবনী_নীলা
“আমি কারোর উপর রাগ করিনি। আমি কেনো রাগ করতে যাবো?”,বলেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।
“সত্যিই রাগ করোনি?”, প্রশ্ন করলো অভি।
আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম।

অভি বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,” এতো কথা শুনার পরও রিয়েক্ট করছো না। তোমার এসবের পর রাগ হচ্ছে না।”

” আমি রাগ করে কি করবো। আপনার জীবন আপনি যা ইচ্ছে করুন।”, নিচু স্বরে বললাম আমি।

” ওকে done। সেটাই করবো।”বলে অভি উঠে চলে গেলো। অভি রেগে গেছে। হটাৎ আমি কি এমন বললাম যে রাগ করলো।এভাবে রাগ দেখিয়ে গেলো কেন?

সকালে আমি ভার্সিটির জন্যে তৈরী হয়ে রওনা দিলাম। অভি সকালেও দরকারের বাহিরে একটাও কথা বললো না। ভার্সিটিতে গিয়ে ক্লাস করতেও ভাল্লাগছে না। দুইটা ক্লাস করে আমি বাসায় চলে আসি।

আমি অনেক সময় ধরে রান্না করলাম। তাও সময় কাটছে না।
সারাদিন অভির জন্য অপেক্ষা করলাম অভি এলো অনেক রাতে তার নাকি ইম্পর্ট্যান্ট কাজ ছিলো।
আমি আর কিছু বললাম না। সারাদিনে একবার আমাকে ফোনও দেয়নি হটাৎ এমন পরিবর্তন। মন মরা করে আমি পড়ার রুমে এসে বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করলাম।

এই রুমটায় একটা সিঙ্গেল খাট, পড়ার টেবিল বিশাল এক বুকশেলফ। বুকশেলফ এ এতো বই যে আমার চুল পেকে যাবে সবগুলো বই পড়ে শেষ করতে।

আগে প্রথম প্রথম আমি এই রুমে থাকতাম। একদিন ঘুমের মাঝে একটা বাজে স্বপ্ন দেখে ঘুমের মাঝে চিৎকার করেছিলাম। অভি ছুটে নিজের রুম থেকে চলে এসেছিল। ভাগ্যিস সেদিন সে জেগে ছিলো। সারারাত কান্না করে কাটিয়েছিলাম আমি। স্বপ্নটা ভুতের স্বপ্ন ছিলো। পুরো ফ্ল্যাট এ বাতি জ্বালানোর পর আমি একটু শান্ত হয়েছিলাম।

আমি রুমের খাটে শরীর ছড়িয়ে শুয়ে পড়লাম। কালকে থেকে আমি ঐ রুমে কম যাচ্ছি। হয়তো সোফার রুমে নয়তো এখানে আসি।
এই রুমটায় অনেক সুন্দর একটা গাছের পেইন্টিং আছে। গাছটার পাতাগুলো নীল এজন্যই পাইন্টিংটা আমার ভালো লাগে।

অভির রাগ কখন ভাঙবে? আমার কি উচিত ওর রাগ কমানোর চেষ্টা করা, জড়িয়ে ধরবো গিয়ে?যদি আমার হাত সরিয়ে দেয় অভি।
কি করেছি সেটাই বুঝতে পারছি না রাগ ভাঙ্গবো কিভাবে? আমি কি রেগে কথা বলেছি? না আমিতো শান্ত ছিলাম। তাহলে……..?

“নওরীন! নওরীন!”অভির গলা, অভি ডাকছে। আমি লাফ মেরে উঠে বসি। তাহলে কি রাগ কমেছে। যাই হোক আমাকে ডেকেছে এই ভেবেই আনন্দ লাগছে। আমার কথা মনে পড়েছে তাহলে।

আমি গিয়ে দেখি অভি পানির জগ থেকে গ্লাস এ পানি ঢালছে। আমি গিয়ে ডায়নিং টেবিলের একটা চেয়ার ধরে দাঁড়ালাম।

অভি ইশারায় জগের পাশে আমার ফোন দেখিয়ে বললো,” তোমার ফোন বাজছে।” আমি ফোনটা এইখানে রেখে হয়তো ভুলে গেছি।
ভাইব্রেশনের কারণে শুনতেও পাইনি। অভি আমাকে ফোনের জন্যে ডেকেছে ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ফোনটা বেজে না উঠলে কি ডাকতো না আমাকে। আমি ফোনটা নিয়ে আগের জায়গায় চলে এলাম।
ভেবেছিলাম অভি কিছু বলবে কিন্তু সে আর কিছুই বলেনি।

অভি নওরীনকে খুঁজতেই এসেছিলো। কারন বাসায় আসার পর থেকে নওরীন অভির আসে পাশে নেই।
অন্যদিন সোফায় বসে টিভি দেখতো আজ তাও করছেনা। রান্না ঘরে আছে কিনা দেখতে এসে দেখে নওরীনের মোবাইল ভাইব্রেট করছে।
নওরীনকে ডাকার ভালো একটা অজুহাত পাওয়া গেছে।
অভি কথা বলছেনা কারণ অভিমান হয়েছে। অথৈ নওরীনকে কম কিছু বলেনি এরপরও নওরীন শান্ত ছিলো।অন্য মেয়ে হলে হয়তো অভিকে নাকানি চুবানি দেওয়াত। অভি নওরীনকে ভালোবেসে ফেলেছে হয়তো কিন্তু নওরীন কি পেরেছে।

অভির একটু অভিমান হয়েছে। কারন সারাদিনে নওরীন তার আসে পাশে ঘুরেনি। টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে দিয়ে অভিকে বিরক্ত করেনি। উল্টা পাল্টা কান্ড কারখানা কিছুই সে করেনি। শান্ত হয়ে আছে।

অভি ফোনটার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে গেলো। ইমন ফোন করেছে। একবার না ৭টা মিসড কল উঠে আছে।
নওরীনের ফ্রেন্ড রচনা বলেছিলো ইমন নামের এই ছেলের নওরীনের প্রতি দুর্বলতা আছে, নওরীন ওর ভালো ফেন্ড তাই সে প্রকাশ করেনি। রচনা অভিকে প্রায়
এমন কথা জ্বালানোর জন্যে বলে।
অভি নওরীনকে এতক্ষনে ডেকেও ফেলেছে আগে এই নাম দেখলে সেটা হয়তো করতো না। নওরীনকে আসতে দেখে পানির জগ হাতে নেয়।

নওরীনকে ফোন হাতে অন্য রুমে যেতে দেখে অভির রাগ লাগলো। দুই গ্লাস পানি খেয়ে অভি রুমে চলে যাচ্ছিলো। যাওয়ার আগে নওরীনের রুমে যেতে ইচ্ছে হলো। কি এমন কথা যার জন্য ফোন রুমে নিয়ে যেতে হলো।

আমি রুমে বসে বিরক্তি নিয়ে ইমনকে ফোন দিলাম। ইমন সঙ্গে সঙ্গে ফোন ধরলো।
” কিরে ফোন ধরিসনি কেনো এতক্ষন?”, ওপাশ থেকে বললো ইমন।

” কি জন্য ফোন দিয়েছিস সেটা বল।”

” ৩দিন পর আমাদের একটা অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। তুই তো ক্লাস না করে চলে গেছিস তাই জানানোর জন্য ফোন দিয়েছি। তোর ইমেইল চেক করলে পেয়ে যাবি সব।”

” আচ্ছা ঠিক আছে।”, নিচের ঠোঁট উল্টে বললাম।

অভি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এদিকে জানালার দিকে তাকিয়ে ফোন হাতে নওরীন বসে আছে। ইমন কথা বলছে, ইমন মাঝে মাঝে মজার কথা বলে।
কথাগুলো সত্যি না মিথ্যা নওরীন জানে না কিন্তু শুনে হাসি থামানো যায় না।

ইমন বলছে,” জানিস আজকে কি হয়েছে? আজকে রিক্সাওয়ালার টায়ার গেলো ফুটো হয়ে। বাধ্য হয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম জানিসই তো আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাটি। ইটের সাথে ঊষ্ঠা খেয়ে একটা মহিলা কুকুরের লেজে একটু পারা পরে। বিশ্বাস করবি না বউ জামাই মিলে আমাকে তাড়া করেছে। ১০ মিনিটের রাস্তা ৪মিনিটে এসেছি। বউয়ের প্রতি কুকুরের ভালোবাসা দেখে আমি বিমোহিত।”

নওরীন হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়লো। শুয়ে পড়তেই তার চোখ গেলো দরজার দিকে অভি বুকের কাছে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে।
নওরীন হাসি থামিয়ে উঠে বসলো। অভির চোখ মুখ শক্ত।
অভির কথায় নওরীনকে সে এভাবে কখনো হাসতে দেখেনি। অভির রাগ হচ্ছে কিন্তু রাগ সে দেখাতে পারছে না বলে আরো রাগ হচ্ছে। নওরীন ফোন কেটে দিয়ে উঠে দাড়ালো।

নওরীন বুঝতে পারছেনা অভি কখন থেকে এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছে।
অভি ভারী গলায় বললো,” কালকে রাতের বাসে আমরা বাড়ি যাচ্ছি। জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখো অফিস থেকে ফিরে তোমাকে নিয়ে যাবো।”

নওরীন ক্ষীণ গলায় বললো,” হটাৎ কালকে!”

” জানি না মা যেতে বলেছে।”

” কয়দিনের জন্য যাচ্ছি?”

” দুইদিন “, বলেই অভি মুখ ঘুরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

নওরীন কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না কারণ অভি নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। নওরীনের কান্না পাচ্ছে। তার ইচ্ছে করছে অভির সামনে বসে কাদতেঁ তখনও কি সে রাগ করে থাকবে?

[চলবে]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে