স্বপ্ন সারথি পর্ব-১০

0
605

#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০

স্বপ্ন সারথি পর্ব-১০
টি এ অনন্যা

তূর্ণ কোমরে দু’হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল “ছিঃ ছিঃ ছিঃ তুই একটা মেয়ে মানুষ হয়ে আমাকে এভাবে টেনে নিয়ে আসলি ক্যান্টিন থেকে! কত্ত মানুষ দেখল! কী লজ্জা! কী লজ্জা! আমি এখন সবাইকে এই মুখ কী করে দেখাব?”
পূর্ণতা রাগী ভাব নিয়ে বলল, “ওই হারামি কোথায় তুই এত মানুষ দেখলি? এমনিতেই মাথা গরম আছে কিন্তু। এখন বেশি কথা বলবি তো একদম তোর মাথা ফাটাব বলে দিলাম।”
তূর্ণ ঘাসের উপর বসতে বসতে বলল, “তোর মাথা গরম তাতে আমার কী? তোর বফের সাথে ঝগড়া করে আমার সাথে ভাব দেখাতে আসবি না। যা ফট!”
“বফ থাকলেই কি আর তোর মতো বান্দর যায় আমার আব্বুর কাছে আমার দায়িত্ব নিতে?”
তূর্ণ বসা থেকেই পূর্ণতার হাত টেনে তার পাশে বসিয়ে বলল, “হোয়াট ডু ইউ মিন বাই বান্দর? আমার চেহারায় একটু তাকিয়ে দেখ তো কোন এঙ্গেল থেকে তোর চোখে আমাকে বান্দর মনে হয়? তুই একটা বান্দরনি। তাই তো একটা বফ জোটাতে পারলি না এখনো।”
পূর্ণতা তূর্ণর দিকে তাকিয়ে আঙুল উঁচিয়ে শাসানি দিয়ে বলল, ” বেশি কথা বলবি না। তোর খবর আছে আজ।”

তূর্ণ পেছনের দিকে দুহাতে মাটিতে ভর দিয়ে হেলান দিয়ে পা দুটো সামনে সোজা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, “রাখ তোর বিচার। দেখ না আকাশটা কী সুন্দর! মেঘের ভেলায় ভেসে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে তোকে নিয়ে।”
পূর্ণতা তূর্ণর ডান পেশিতে থাপ্পড় দিয়ে বলল, “এই ফাজলামি রেখে সোজা হয়ে বস। তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”
তূর্ণ সোজা হয়ে বসে বাম হাতে ডান হাতের পেশি বুলাতে বুলাতে বলল, “মেয়ে মানুষের এত শক্তি কোথ থেকে আসে রে? উফ কী ব্যথা রে বাবাহ!”
পূর্ণতা রাগান্বিত স্বরে চেচিয়ে বলল, “তূর্ণ আমি কিন্তু এবার সত্যি সত্যি রেগে যাচ্ছি। সেই কখন থেকে বলছি একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে তোর সাথে। আর তাই আমি তোকে ডেকে এনেছি আজ ওরা আসার আগেই। কিন্তু তুই হেয়ালি করছিস কতক্ষণ যাবত!”
তূর্ণ মুচকি হেসে সোজা হয়ে পূর্ণতার বরাবর বসে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে এই নে আম আর হেয়ালি করব না। বল তুই কী বলতে চাস? আমি দু’কান খুলে শুনব এখন।”

পূর্ণতা স্বাভাবিক স্বরে বলল, “তুই আব্বুকে কো বলেছিস কাল?”
“কত কিছুই তো বললাম! তুইও তো শুনেছিস। কেন কী হয়েছে?”
“আমি যখন ছিলাম না তখন কী বলেছিস সেটা জানতে চাই।”
তূর্ণ নিচের দিকে তাকিয়ে ঘাস ছিড়তে ছিড়তে বলল, “কই তেমন কিছু তো বলিনি।”
পূর্ণতা তূর্ণর থুতনিতে হাত দিয়ে তূর্ণর মুখ উঁচিয়ে “আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল।”
তূর্ণ হাসি দিয়ে বলল, “আরে আমি তেমন কিছু বলনি তো। তুই কী বলতে চাস সেটা বল আমায়।”
“তুই নাকি আব্বুকে বলেছিস আমার দায়িত্ব নিতে চাস?”
” তোকে আংকেল সব বলেছে?”
“না আব্বু কিছু বলেনি আমায়। তবে রাতে আব্বু আম্মু কথা বলছিলেন। আমি গিয়েছিলাম আব্বুকে দেখতে। তখন তোর নাম বলছিল আর দায়িত্ব দায়িত্ব কীসব যেন বলছল। বাইরে থেকে আর বেশি কিছু শুনতে পারিনি।”
“ভালো হয়েছে। তোর অত বেশি কিছু শুনতে হবে না। পোলাপান মানুষ সব শুনতে হয় না।”
পূর্ণতা বলল, “তুই কী বলতে চাস? কীসের দায়িত্ব নিবি আমার? দায়িত্ব নেয়া মানে বুঝিস?”
তূর্ণ হাসি মুখে বলল, “কেন বুঝব না? আমি কি কোনো বাচ্চা নাকি?”
“একটা মেয়ের দায়িত্ব নেওয়া আর রাস্তায় কাউকে অসহায় দেখে দায়িত্বের সাথে তাকে সাহায্য করা কিন্তু এক কথা নয়।”
তূর্ণ হাতের মুঠোয় থাকা কাগজের গোলাটা নাড়াচাড়া করতে করতে বলল, “হুম আমি তা জানি। পূর্ণ তুই আমাকে কতদিন ধরে চিনিস? ”
তূর্ণর কথায় পূর্ণতা উত্তরে বলল, ” এটা আবার কেমন প্রশ্ন? তুই জানিস না নাকি? তুই যতদিন ধরে চিনিস আমিও তোকে ততদিন ধরেই চিনি।”
“হুম আমি জানি তবুও তুই বল। তোর মুখে শুনতে চাই।”
“এই ধর এক বছরের উপরে হবে। আমি অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তো তোদের সাথে আমার পরিচয় এবং বন্ধুত্ব। কিন্তু এটার সাথে আমার কথার কী সম্পর্ক? ”
“আমাকে কি কখনো কোনো অযথা কথা বলতে দেখেছিস?”
পূর্ণতা মাথা নাড়িয়ে সংক্ষেপে উত্তর দিল, “না।”
“আমি আংকেলকে যা বলেছি তা ভেবে চিন্তেই বলেছি। আর একটা মেয়ের দায়িত্ব বলতে যা বুঝায় আমি তাও বুঝি। বুঝেই আমি তোর দায়িত্ব নিতে চাই।”
পূর্ণতা তূর্ণর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “তূর্ণ, তুই কী বলতে চাচ্ছিস? আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবি?”

তূর্ণ হাতে থাকা মোড়ানো কাগজের গোলা পকেটে রেখে পূর্ণতার হাত ধরে চোখে চোখে চোখ রেখে বলল, “পূর্ণতা তুই এখন কিন্তু এতটা অবুঝ নয় যে আমি যা বলতে চাই তা তুই বুঝতে পারছিস না। কিন্তু তুই যেহেতু আমার মুখে শুনতে চাচ্ছিস তাহলে আমি বলছি। তোর সাথে প্রথম দেখায় অনেক খুনসুটি করতে করতে একসময় তোকে পছন্দ করতে শুরু করি। সত্যি বলতে পূর্ণ তোকে আমি ভালোবাসি। ”
তূর্ণর কথা শুনে ব্যাগ হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায় পূর্ণতা। একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে অন্যদিকে তাকিয়েই পূর্ণতা বলে, “তূর্ণ সব কিছু আবেগ দিয়ে হয় না। ভালোবাসা একটা যা তা ব্যাপার নয়। এটা জীবনের এক কঠিন সিদ্ধান্ত। ”
তূর্ণ পেছন থেকে এসে পূর্ণতার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “তুই কি ভাবছিস আমি তোকে আবেগের বশে আজ এসব বলছি? মোটেও তা নয়। আমি যা বলছি তা ভেবেচিন্তে বলছি। প্লিজ পূর্ণ তুই আমায় ফিরিয়ে দিস না।”
“তূর্ণ প্লিজ এসব পাগলামি করিস না। তুই এখন বুঝতে পারছিস না তুই যা ভাবছিস তা সম্ভব নয়। তুই হয়তো আমার আব্বুর কথায় ইমোশনাল হয়ে আব্বুকে সান্ত্বনা দিয়েছিস। কিন্তু তাই বলে তুই আমাকে ভালোবেসে সেই দায়িত্ব পালন করবি?”
“পূর্ণ তুই আমাকে ভুল ভাবছিস। আমি আংকেলকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য ওসব বলিনি। যা বলেছি মন থেকে বলেছি। আর তোকে ভালোবাসা সেটা অন্তরে বপিত আমার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুভূতির বীজ যা এখন ভালোবাসা নামক বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। সেই বৃক্ষ বেঁচে থাকার জন্য তোর ভালোবাসার কার্বন-ডাই-অক্সাইড চায়।”
“তূর্ণ তুই অতি আবেগি হয়ে গিয়েছিস। এখন তুই বুঝতে পারছিস না তোর চোখে যা এখন ভালোবাসা বাস্তবতার সম্মুখীন হলে তা হারিয়ে যাবে একসময়। এই বয়সে ছেলেরা একটি বেশিই আবেগি হয়।”
তূর্ণ মুচকি হেসে বলল, “আমি আবেগি হলে তুইও তো আবেগি হওয়ার কথা ছিল। তুই আমি তো সমবয়সী। তুই কেন আবেগি হচ্ছিস না।”
“তুই নিজেও নিজেও জানিস মেয়েদের ম্যাচিউরিটি আসে ছেলেদের তুলনায় একটু বেশিই আগে।”
“তুই কেন বুঝতে পারছিস না আমার কথাগুলো? আমি কিছুই আবেগে বলছি না। যা বলছি ভেবে চিন্তেই বলছি।”
“দেখ তূর্ণ, তোর ফ্যামিলি স্ট্যাটাসের সাথে আমার ফ্যামিলি মিলে না। হ্যাঁ তুই বলবি যে আমাদের বন্ধুত্বের খাতিরে আমাদের দু’ পরিবারে খুব ভালো সম্পর্ক। কিন্তু বন্ধুত্ব আর বিবাহের সম্পর্ক এক নয়। তাছাড়া আমার আব্বু অসুস্থ। আমার এখন অনেক দায়িত্ব। খুব ভালো রেজাল্ট করে একটা জব পেতে হবে। আব্বু – আম্মুকে দেখতে হবে, প্রীতুলার জন্য কিছু করতে হবে। আমি মেয়ে বলে কখনো আমার ফ্যামিলিকে পিছিয়ে যেতে দিব না।”
“আমিও চাই তুই নিজে প্রতিষ্ঠিত হ। কিন্তু আমাকে ভালোবাসতে তোর সমস্যাটা কী? আমাকে কি তোর পছন্দ নয়?”
“না তা নয়। আসলে আমি চাই না এখন কোনো রিলেশনে যেতে। আমি আগে নিজের পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে চাই। আমি চাই না অন্য কেউ আমার পরিবারের দায়িত্ব নিক। আর তুইও ভালো করে পড়াশোনা কর। মাথা থেকে এসব ভুত নামা। ক্লাসে চল।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


“পূর্ণতা কথা শেষ করেই ক্লাসের দিকে রওনা দিলে তূর্ণ পেছন থেকে পূর্ণতার ডান হাত ধরে টেনে নিয়ে তার সামনে দাঁড় করায়, ” পূর্ণ আমি কিন্তু তোর উত্তর পাইনি। তুই কি আমাকে ভালোবাসিস না নাকি এখন রিলেশনে যেতে চাচ্ছিস না সেটা বল?”
“পূর্ণতা মাটির দিকে তাকিয়ে বলল, ” প্লিজ তূর্ণ বাদ দে না এসব। আমি এসব ভাবতে চাচ্ছি না এসব।”
তূর্ণ কিছুটা রাগান্বিত স্বরে বলল, “পূর্ণ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দে।”
পূর্ণ মাথা তুলে তূর্ণর চোখে তাকাতেই দেখল চোখগুলো পুরো লাল হয়ে আছে আর ছলছল করছিল। মনে হচ্ছিলো একটু টুপ করলেই অশ্রু গড়িয়ে পড়বে।
পূর্ণ জিজ্ঞাসা করল, “আচ্ছা তূর্ণ, আমাকে কেন ভালোবাসিস? ”
তূর্ণ পকেট হতে কাগজের গোলাটা বের করে পূর্ণতার হাতে দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায় ক্যাম্পাসের গেট দিয়ে। পূর্ণতা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। হা করে তাকিয়ে রইল তূর্ণর যাওয়ার দিকে।

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে