স্বপ্ন সারথি পর্ব-০৯

0
599

#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০

স্বপ্ন সারথি পর্ব-০৯

টি এ অনন্যা

“পূর্ণতা যখন তোমাকে ডাকতে গেল তখন মনিকা, রিনি আর সাইফ বাইরে যায়। ভাবছিল একটু ঘুরবে বাড়ির আশেপাশে। কিন্তু তূর্ণ ওদের সাথে যায়নি। ”
“কখন ওরা ঘুরতে গেল? পূর্ণতা ডাকার পরে আমি এসে তো ওদেরকে ঘরেই দেখলাম।”
মোশাররফ উঠে খাটে হেলান দিয়ে বসে বললেন, “আরে গিয়েছিল তবে তুমি আসার একটু আগেই আসছে। ওরা নাকি প্লান করেছে একদিন আমাদের বাসায় পিকনিক করবে তখন ঘুরবে। তূর্ণ ওদের সাথে যায়নি কেন জানো?”
রেহানা দু’দিকে মাথা নেড়ে না সূচক ইঙ্গিত দিয়ে বলল, “না জানি না। আমি কী করে জানব?”
মোশাররফ বললেন, “ও আমাকে একা রেখে যেতে চায়নি। তাছাড়া আরেকটা কথা বলার জন্য। ”
রেহানা জিজ্ঞাসা করলেন, “কী কথা বলল তূর্ণ?”
“ও আমার চাকরির ব্যাপারে সবকিছুই শুনেছে পূর্ণতার কাছে। আমাকে আশ্বস্ত করে বলল আমি যেন কোনো চিন্তা না করি।”
“হ্যাঁ ছেলেটা খুব দায়িত্বশীল। যেমন ওর পরিবারের প্রতি তেমন অন্যদের প্রতিও। ওর বাবা-মাও খুব ভালো। তাই তাদের শিক্ষায় ওর মতো এত ভালো ছেলে এখনো পাওয়া যায়। ”
মোশাররফ বিরক্তির স্বরে বললেন, “আগে আমার কথাটা তো শেষ কর‍তে দাও।”
“আচ্ছা ঠিক আছে বলো আমি শুনছি। তোমার কথা শেষ হওয়ার আগে আমি আর কিছু বলব না। ঠিক আছে? ”
“না কথা বলবা ঠিক আছে কিন্তু যখন আমি জিজ্ঞাসা করব।”

রেহানা ভালো করেই জানেন মোশাররফকে। তিনি কথা বলার সময় অন্যকে কথা বলতেও দিবেন না আবার তার কথার সাথে তাল মিলিয়ে কথা না বললেও ভাবেন তার কথায় সায় দিচ্ছে না। তাই ভেবে নিজেই অভিমান করেন বাচ্চাদের মতো। তাই রেহানা আর কথা না বাড়িয়ে মোশাররফ এর কথায় সায় দিলেন।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


মোশাররফ আবার বলতে শুরু করলেন, “যখন আমি বললাম আমার পূর্ণতাকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা হয় তখন তূর্ণ আমায় জিজ্ঞাসা করে ওকে নিয়ে আমার আবার আমার কী এত চিন্তা! পরে বললাম আমার কিছু একটা হয়ে গেলে বড় মেয়ে নিয়ে কীভাবে কী হবে। তুমি কীভাবে চলবে। ওর একটা বিয়ে দিতে হবে। তখন ও রেগে গিয়ে কী বলল জানো?”
রেহানা গালে হাত দিয়ে মনোযোগী ভাব ধরে মোশাররফ এর কথা শুনছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “কী বলল? ”
“বলল আমি কেন এখন এসব চিন্তা করছি? পূর্ণতা অনেক ভালো ছাত্রী। ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হবে ভালো করে পড়াশোনা করলে। পরে বললাম কিন্তু আমার চাকরি নেই এখন। আর এই শরীর নিয়ে কোথাও কাজ করতেও তো পারব না। তাছাড়া ওর বিয়ের বয়স হয়েছে মানুষ তো নানান কথা বলে। পরে তূর্ণ বলল আমার চাকরি নিয়ে চিন্তা না করতে। ওদের ফার্মে একটা হালকা কাজের ব্যবস্থা করে দিবে। আরও বলল ও নাকি পূর্ণ এবং প্রীতুলার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিবে। পূর্ণকে ও বিসিএস পাস করাবে। তার আগে বিয়ে দিতে দিবে না।”
“কিন্তু তূর্ণ কেন আমাদের জন্য এত কিছু করবে? মানুষ কী বলবে!”
“আমিও সেটাই জিজ্ঞাসা করেছি পরে বলল ও পূর্ণকে নাকি পছন্দ করে।”
রেহানা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “কী বলছ তুমি এসব! তূর্ণ কী করে তোমায় এসব বলল? আর পূর্ণতা তো আমায় কখনো এসব বলেনি কিছু।”
“আসলে ছেলেটা একদম সরল মানসিকতার। আমার সাথে যা বলে নির্দ্বিধায় বলে ফেলে। তুমি তো জানোই পূর্ণর সব বন্ধুদের তুলনায় তূর্ণ একটু বেশিই মিশুক। তবে পূর্ণ এখনো জানে না তূর্ণর এই কথা। আমরা রাজি থাকলে ও পূর্ণ এবং ওর পরিবারের সাথে কথা বলবে।”
রেহানা কিছুটা বিরক্তির স্বরে বললেন, “এ কেমন ছেলে বাবাহ্ মেয়ের বাবার কাছে কী নির্লজ্জের মতো এসব কথা বলে!”
মোশাররফ একটু ঝুঁকে রেহানার হাত দুটো নিজের হাতের তালু বন্দী করে কোলের উপর রেখে বললেন, “দেখো রেহু ছেলেটা আমার কাছে এসে আমার মেয়েকে পছন্দ বা ভালোবাসার কথা বলেছে তাই তুমি বলছো সে নির্লজ্জ। কিন্তু একটু ভেবে দেখো তো ও যদি আমাকে না বলে আমার মেয়ের সাথে প্রেম করে বেড়াতো, যেখানে সেখানে ঘুরাঘুরি করত আড্ডা দিত, ক্লাস ফাঁকি দিত তখন সেটা কি ভালো দেখাতো? এর চেয়ে ভালো না যে সে আমার মেয়েকে আমার কাছেই চেয়েছে?”
“তা ঠিক আছে। কিন্তু আমার মেয়ে মোটেও এমন না যে ছেলেদের সাথে ঘুরে বেড়াবে। এসব কিছু করার আগে ও আমাকে সব আগেই জানাত।”
মোশাররফ মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, “তুমি এখনো ছেলে মানুষই রয়ে গেলে। মেয়ে এখন বড় হয়েছে। তোমাকে সব কিছু জানায়,কোথাও ঘুরতে যায় না সেটা ঠিক আছে কিন্তু সব কিছু আর প্রেম-ভালোবাসা এক জিনিস নয়। প্রেমে পড়লে মানুষের নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায়। কারণ ভালোবাসা মনের ব্যাপার। আর মন, সে কখনো মানুষের অধীন নয় বরং মানুষ মনের অধীন। যখন মানুষ প্রেমে পড়ে তখন তার চোখে অনেক সময় খারাপ জিনিসটাও ভালো লাগে কিংবা অন্ধকারকেও আলোর মতো লাগে। দেখা যেত অন্য কোনো ছেলের সাথে কোনোভাবে প্রেমে পড়তো তখন কী না কী করে তা কি আমরা জানতাম বলো? যাহোক এখন বলো আমি কী বলব তূর্ণকে। ও আমাদের উত্তরের অপেক্ষায় আছে।”
“পূর্ণতা তো টুকটাক নিজের খরচ নিজেই চালাচ্ছে। তুমি ওর কাছে এত কথা বলতে গেলে কেন? ছেলে এখনো কিছু করে না। তাছাড়া ওরা সমবয়সী। ছেলে প্রতিষ্ঠিত হতে দেরি আছে। ততদিনে আমার মেয়ের বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাবে। ”
“চলছে তবুও আমার তো চিন্তা হয়। কখন কী হয়ে যায় আমার তখন তুমি একা কী করে সব সামলাবে। সেটাই বলেছিলাম আমি ওকে কিন্তু আমি তো জানতাম না ছেলেটার মনের কথা। ও পূর্ণকেই প্রতিষ্ঠিত করেই বিয়ে করবে।”
“এতে করে আমরা ছোট হয়ে যাব ওর পরিবারের কাছে। ”
“না রেহু, আমি তো আর আমার মেয়ের দায়িত্ব সত্যি সত্যিই তূর্ণকে দিচ্ছি না। কিন্তু আমার কাছে ছেলেটা ভালো মনে হচ্ছে। তাছাড়া গত এক বছরে তো ওর পরিবারের সাথেও আমাদের ভালোই যোগাযোগ। কখনো তো কিছু খারাপ দেখিনি ওদের। এখনকার যুগে ভালো পাত্র পাওয়া কষ্টসাধ্য। তূর্ণ তো ধরতে গেলে আমাদের হাতের ছেলে তাই বলছিলাম ওরা পরিবারের সাথে কথা বলে রাখব কি-না?”
“আচ্ছা তুমি যা ভালো মনে করো তাই করো। কিন্তু মেয়ের পরিবার হয়ে কি আমরা কথা বলতে পারি? আর পূর্ণতারও তো একটা মতামতের ব্যাপার আছে তাই না?”
“ও বলেছে ওর পরিবারের সাথে কথা বলে আমাদের কাছে পাঠাবে। আর পূর্ণতার সাথেও কথা বলবে। পূর্ণ রাজি থাকলেই ও এগুবে।”
“আচ্ছা সেসব পরে দেখা যাবে। এখন তুমি ঘুমাও। কত রাত হয়েছে সে খেয়াল তোমার আছে? শরীর কিন্তু ভালো না তোমার।”
মোশাররফ বিছানায় শুয়ে বললেন, “এত চিন্তা করো না রেহু আমি এখন অনেকটাই ভালো আছি। তবুও তোমার কথাই রাখলাম। তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো।”

পূর্ণতা পরের দিন সকালে তূর্ণকে কল করে জানিয়েছিল আজ একটু তাড়াতাড়ি ক্যাম্পাসে আসতে। পূর্ণতা ক্যান্টিনে গিয়ে দেখে তূর্ণ বসে কিছু একটা লিখছিল কাগজে। তবে এখনো তেমন কোনো ছাত্রছাত্রী আসেনি।
পূর্ণতা পেছন থেকে গিয়ে তূর্ণর কান টেনে ধরে বলল, “ঐ বান্দর কী লিখতেছিস?”
পূর্ণতা দেখার আগেই তূর্ণ কাগজটা একহাতে মুচড়ে হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয় আর অন্য হাতে নিজের কান হতে পূর্ণতার হাত ছাড়িয়ে বলল, “সকাল বেলা সকালে আমার ঘুম ভাঙিয়েছিস এমনিতেই কিন্তু মেজাজ খারাপ কান ছাড় বলছি।”
পূর্ণতা তূর্ণর কান ছেরে হাত ধরে টেনে নিয়ে ক্যাম্পাসে বড় মাঠের এক পাশে যেখানে ওরা আড্ডা দেয় সবসময়।

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে