স্বপ্ন সারথি পর্ব-০১

0
1690

#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০

স্বপ্ন সারথি পর্ব-০১
টি এ অনন্যা

” আমার কথাগুলো একটু ভেবে দেখ মা। তোর জীবনটাও তো গুছিয়ে নিতে হবে। আর কতদিন চলবে তোর এভাবে?”
“আল্লাহ যতদিন চালায় ততদিন। এতকিছু ভেবে কী লাভ! আল্লাহ ভাগ্যে যা রাখছে ঠিক তাই হবে, তার চেয়ে কমও না আবার বেশিও না।”
“কিন্তু আল্লাহ তো বলেনি চেষ্টা না করে শুধুমাত্র ভাগ্যের উপর বসে থাকতে। তোর নিজের কী কোনো চেষ্টা করতে হবে না? আবারও বলছি আমার কথা গুলো একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখ। আমি মা হয়ে তোর ভালো ছাড়া খারাপ চাই না।”
“উফ মা এই সকালবেলা সকালে শুরু করলে! এত ভাবাভাবি বাদ দাও তো। ভালো লাগছে না এসব ।”
” আমার কথা তো তোর কাছে ভালো লাগে না। আমার হয়েছে তোকে নিয়ে যত জ্বালা!”
“মা আমি বের হবো। অন্য কোনো কথা থাকলে বলতে পারো। আর নাহয় দয়া করে একটু চুপ করো। ঘ্যানঘ্যান করো না তো। প্রতিদিন এক কথা শুনতে এবং তার প্রতি উত্তরে একই কথা বলতে আমার বিরক্ত লাগে।”
“হ্যাঁ আমার কথা তো তোর কাছে ঘ্যানঘ্যানই মনে হয়। এখন তো বুঝবি না আমি যে কেন বলি এসব। যখন মা হবি তখন বুঝবি মায়েদের কত ভাবনা! কেন আমি এসব বলি।”

মেয়ের উপর কপট রাগ দেখিয়ে চোখের কোণে অশ্রু ফোঁটা নিয়ে খাবারের টেবিল হতে উঠে গেলেন রেহানা বেগম। পেছন থেকে পূর্ণতা হাতে নেওয়া গ্লাসটা টেবিলে রেখে বলল,
“মা, তুমিও আমায় বুঝবে না? সবকিছু জেনে বুঝে তুমিও কেন অভিমান করো আমার সাথে? তুমি ছাড়া আমার ভালো লাগা, খারাপ লাগাগুলো বলার মতো তো আর কেউ নেই এই দুনিয়ায়।”

রেহানা মেয়ের এমন কথায় থমকে দাঁড়ালেও আর বাঁধ মানাতে পারেনি চোখের অশ্রুবিন্দু। দুচোখ বেয়ে নামে তার অশ্রু ফোয়ারা। মেয়ে তার চোখের অশ্রু দেখার আগেই তিনি ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলেন তা লুকাতে। কিন্তু সন্তান যেমন পারে না মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে কষ্ট আড়াল করতে তেমন মায়ের কষ্টও সন্তানের দৃষ্টির আড়াল হয় না। পূর্ণতা মায়ের অনুভূতি বুঝতে পেরে নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে রেহানাকে জড়িয়ে ধরে কান্নামিশ্রিত স্বরে বলল,
” মা’গো আমায় তুমি ভুল বুঝো না। আমি যে ক্লান্ত নিজের মনের সাথে লড়াই করে। তোমার কথা ভাবতে গিয়ে আমি বারবার মনের সাথে লড়াই করে পরাজিত হয়েছি। আমি আর পারছি না মা।”
“দেখ মা, একটা মেয়ে মানুষের জীবন এভাবে চলে না। তোর বাবা আমার উপর তোদের দু’বোনকে রেখে চলে গেলেন। এখন তোদের দায়িত্ব আমার উপর। সারাক্ষণ তোদের চিন্তায় থাকি। তাই রাগ হয় কিন্তু তোর ভালো চেয়েই আমি বারবার এগুলো বলি।”
” মা, আমি তোমাদের নিয়ে অনেক ভালো আছি। একদম দুঃচিন্তা করো না আমায় নিয়ে।”
“দুঃশ্চিন্তা কেন হবে না বল? তোর বাবা চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। এখন কবে আমার ডাক এসে যায় কে জানে! তখন তোদের কে দেখবে?”

পূর্ণতা মায়ের চোখের অশ্রু মুছে দিয়ে ধমকের স্বরে বলল, “তোমাকে কতদিন না করেছি এসব বাজে কথা না বলতে? কিছু হবে না তোমার।”
রেহানা মেয়ের কপালে চুমো খেয়ে বললেন, “মা’রে এটা বাজে কথা না এটাই সত্যি। সবাইকেই যেতে হবে একদিন। এখন যা তুই নাস্তাটা করে নে।”
পূর্ণতা সোফা হতে ব্যাগটা কাঁধে নিতে নিতে বলল, “আমি খেয়েছি মা। আমার আজ লেইট হয়ে গেছে । তুমি খেয়ে নিও প্লিজ। আমি বের হচ্ছি।”
“কী খেলি দুই মিনিটে? সবকিছুতেই তোর খামখেয়ালি। খাওয়া দাওয়া নিয়েও এমন শুরু করেছিস।”

তার কথা শোনার আগেই বেরিয়ে পড়ে পূর্ণতা। এতক্ষণ নির্বাক দর্শকের ভূমিকায় থাকা পূর্ণতার ছোট বোন প্রীতুলা বলল, “মা খাওয়ার সময় আপুকে এসব না বললেই কী হতো না?তুমি তো জানো আপু এসব পছন্দ করে না। দেখেছ না খেয়েই কলেজে চলে গেল আজ।”
“হ্যাঁ সব দোষ তো এখন আমার। তোরা কথা শুনবি না, যে যার মতো চলবি তাতে আমি আর কিছু বলব না। যা খুশি কর।”
“মা তুমি আবার রাগ করছো কেন?দেখলে না তুমি এসব বলার পর আপু কিছু না খেয়েই চলে গেল তাই তো আমি বললাম।”
“হয়েছে খুব বুঝেছ তুমি। এবার খেয়ে স্কুলে যাও।”

পূর্ণতা কলেজে ঢুকে অফিসের দিকে পা বাড়ালে হুট করে তার হাত টেনে নিয়ে ক্যান্টিনের দিকে অগ্রসর হয় রিয়ানা। কলেজের কলিগদের মধ্যে রিয়ানা একজন যার সাথে পূর্ণতা মন খুলে কথা বলতে পারে। আর রিয়ানা সেও সব কথা শেয়ার করে পূর্ণতার সাথে। বয়সের দিক থেকে রিয়ানা পূর্ণতার চেয়ে দু’বছরের ছোট হলেও তাদের চাকরির বয়স একই। একই ব্যাচে বিসিএস ক্যাডার হয়ে দু’জন একসাথেই এই কলেজে ভিন্ন বিভাগে জয়েন করে। দু’জনের মাঝে ভালো বন্ধুত্বের সূত্রে প্রায়ই নাস্তা বা লাঞ্চ টাইমে তাদের আড্ডা চলে কলেজ ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে। ক্যান্টিনে আসার আগে পর্যন্ত হতবিহ্বল ছিল পূর্ণতা কী হচ্ছে! হঠাৎ করে রিয়ানা তাকে এভাবে টেনে নিয়ে চলেছে কোথায়। কিছুই বুঝতে পারছিল না সে।

ক্যান্টিনে আসার পরে পূর্ণতা জিজ্ঞাসা করলো, “কী হলো এভাবে টেনে আনলে কেন আমায়? আমি তো নাস্তা করে এসেছি আজ।”
রিয়ানা জোর করে পূর্ণতাকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিজে পূর্ণতার বিপরীত দিকে বসে বলল, “টেনে না আনলে কি আর তুমি আসতে। আমাকে বাধ্য হয়েই তোমাকে টেনে আনতে হয়েছে। বুঝেছ?”
পূর্ণতা মৃদুস্বরে জবাব দিলো, “বুঝলাম কিন্তু আমাকে এখানে নিয়ে আসলে কেন? তুমি তো কাল বললে আজ নাস্তা করে আসবে। তাই আমিও করে এসেছি।”
“যা বলার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো তো। দেখি কী করে তুমি আমাকে মিথ্যা বলো? অবশ্য আমি তো বুঝতামই না আন্টি আমাকে না বললে।”
পূর্ণতা থতমত খেয়ে বলল, “মানে কী? কীসের মিথ্যা কথা? আর মা তোমায় কী বলেছে? তুমিই – বা মাকে কেন কল দিয়েছিলে।”
“উঁহু আন্টিকে আমি কল দেইনি। কল দিয়েছিলাম তোমাকে একটা দরকারে। কিন্তু ম্যাডাম আপনি তো ফোনটা রেখেই চলে এসেছেন। তাই আন্টিই কল রিসিভ করে কথা বলল। তুমি নাকি রাগ করে না খেয়েই চলে এসেছ আজ। দাঁড়াও আমি আগে অর্ডারটা করে আসি পরে কথা বলি।”
পূর্ণতা ব্যাগে হাত দিয়ে দেখল সত্যিই সে ফোনটা ফেলে রেখে এসেছে। রিয়ানাকে উঠে যেতে দেখে ডাকল, “এই রিয়া শোনো, আমি এখন খাবো না। আমি খেয়ে এসেছি। অর্ডার করো না প্লিজ।”
“তুমি চুপ করে বসো তো। আমি আসছি। ওয়েট।”

চলবে……

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share