স্বপ্ন?পর্ব_৩৪/৩৫/৩৬

0
680

স্বপ্ন?পর্ব_৩৪/৩৫/৩৬
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_৩৪
.
.
.
অনু দরজা খুলে ভেতরে ডুকতেই ওর হাতে হ্যাঁচকা টান পরে । সামলাতে না পরে অনু একবারে পরেই যেতে নেয় । তাও কোনোমতে নিজেকে সামলে সোজা হয়ে দাড়ায় । তারপর ফিরে তাকায় পেছন দিকে । মিশি হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে । অনু নিশির দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে কড়া স্বরে বলে,
—এভাবে টান মারলি ক্যান আপি? এখনই তো পরে যেতাম ।
নিশি অনুর কথার জবাব না দিয়ে ওকে টেনে রুমের মাঝখানে নিয়ে আসে । তারপর ওর হাত ধরে গোল হয়ে ঘুরতে শুরু করে । কন্ঠে আনন্দ আর উত্তেজনা মিশিয়ে হাসতে হাসতে বলে,
—অনুওওও… আমার পিচ্চিইইই… থ্যাংক ইয়্যু… থ্যাংক ইয়্যু… থ্যাংক ইয়্যু…
নিশির এমন হুটহাট উদ্ভট কার্যকলাপে অনু অভ্যস্ত । তাই অবাক হলো না । খিলখিল করে হেসে দিল । একটু আগের রাগ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল । হাসতে হাসতে অনু বললো,
—আরেহ্ হয়েছে তো । ছাড় না আপি… । আর কত ঘুরাবি? মাথা ঘুরছে আমার ।
নিশি হাসতে হাসতে ঘুরা বন্ধ করে অনুকে নিয়ে ধপাস করে বিছানার উপর একেবারে শুয়ে পড়লো । দুজনই খিলখিল করে হেসে যাচ্ছে । নিশির চোখে পানি এসে গেছে হাসতে হাসতে । তবুও ও হেসেই যাচ্ছে । অনু হাসি থামিয়ে বললো,
—অনেক হয়েছে হাসাহাসি । এবার জলদি যা ফ্রেশ হয়ে নে ।
একথা বলে অনু উঠতে ধরলে নিশি ওকে টেনে আবার বিছানায় ফেলে দেয় । অনুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজে বলা শুরু করে,
—তোর জন্য আমার স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে রে । আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি সত্যিই সাজেক যাচ্ছি । ইভেন অলরেডি এসেই পড়েছি । আমি ভেবেছিলাম আমার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে । কারণ সবকিছু ম্যানেজ করতে পারলেও মাকে আমি কখনোই ম্যানেজ করতে পারতাম না ।
এই পর্যন্ত নিশি প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললো । অনেকটা ইমোশনালি কথাগুলো বলছিল নিশি । একটু থেমে অনুর গালে টেনে ধরে নিশি আবার বললো,
—তোর জন্যই সম্ভব হলো । থ্য……আউচচচ্…
অনু নিশির কথা শেষ করার আগেই ওর হাতে চিমটি কাটে । তাতে নিশির আর পুরো কথা বলা হলো না । শেষের কথাটুকু অসমাপ্তই থেকে যায় । আর “আউচ” বলে আর্তনাত করে উঠে । কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,
—চিমটি দিলি কেন?
তখন অনু নিশির আরেক হাতেও চিমটি দেয় । বলে,
—আমি বাহিরের কেউ না যে তুই আমার সাথে ফরমালিটিস মেইন্টেইন করে কথা বলবি । আমি তোর বোন । তোর কত বড় সাহস তুই আমাকে থ্যাংকস বলতে আসিস । তোরে তো…
নিশি অনুর হাত ধরে দুষ্টুমি একটা হাসি দিয়ে ঢং করে বলে,
—তাই তো! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তুই আমার বোন । ইসস রে… ভুল হয়ে গেছে ।
কথাটা শেষ করেই অনু আঙ্গুলে কামড় দেয় নিশি । চেঁচিয়ে উঠে অনু । নিশির দিকে তেড়ে যায় অনু । কিন্তু তাতে লাভ হলো না । কারণ নিশি দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেছে । অনু ফিরে এসে ব্যাগটা নিয়ে বিছানায় বসলো । ড্রেস চেঞ্জ করা দরকার । কারণ কাল থেকে এই ড্রেস পরা ও । এই ড্রেসে এখন ওর কেমন জানি মনে হচ্ছে যে ও ধুলাবালিতে মেখে আছে । তাই চেঞ্জ করতে হবে । ব্যাগ থেকে ড্রেস বের করার জন্য চেইন খুলতেই ওর ডায়েরিটা সামনে পড়লো । মুচকি একটা দিয়ে ডায়েরি বের করে পাশে রেখে এক সেট ড্রেস বের করে আবার ব্যাগের চেইন লাগিয়ে রাখে । নিশির ফ্রেশ হতে সময় লাগবে এটা জানা কথা । তাই ড্রেসটা একপাশে রেখে ডায়েরিটা নিয়ে বিছানার উপর উঠে পা মুড়ে বসলো অনু । মাঝে অনেকদিন ডায়েরিটা ধরা হয় নি ওর । এখন খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে ডায়েরির সাথে । এলোমেলো কিছু ছন্দও এসে বার বার তাই করতে বলছে অনুকে । ডায়েরির সাথে থাকা কলমটা বের করে হাতে নিল অনু । যেই ছন্দগুলো বারবার মনের কোণে উঁকি ঝুঁকি মারছে তাদেরকে বদ্ধ ডায়রির পাতায় ফেলতে লিখতে শুরু করলো,
“জানো আকাশ রং,
আমার রাত্রি কাটে তোমায় ভেবে…..
তারার পানে চেয়ে….
স্বপ্ন সাজাই একটু করে….
টুকরো টুকরো করে…
আনমনে ভাবি কেন বাসো এত ভালো আমাকে…..
কেনই আমি ভেসে যাই নীল তোমাতে…..
শোনো আকাশ রং,
…….তুমি ভোর হয়ে এসো আমার জানলায়
……মিষ্টি রৌদ্দুর হয়ে ছুঁয়ে যাও আমায়
…..মৃদু বাতাস হয়ে কানে কানে বলে যাও
…….ভালোবাসি……
আর…”
বাকিটুকু আর লেখা হলো না অনুর । বাঁধ সাধলো ফোনের রিংটোন । ডায়েরিটা বন্ধ করে ফোন হাতে নিল । নীল কল দিয়েছে । দ্রুত রিসিভ করে ফোন কানে লাগালো অনু । ওপাশ থেকে শোনা গেল নীলের কণ্ঠ ।
—কিউটি জলদি রেডি হয়ে নিচে আসো । বের হতে হবে । আমরা নিচেই আছি ।
খুব ধীর কন্ঠে অনু জবাব দিল,
—আমি এখনো ফ্রেশ হতে পারি না । আপু ফ্রেশ হচ্ছে ।
—আচ্ছা প্রবলেম নেই । পারলে একটু জলদি করার চেষ্টা করো । কারণ আর্মি ক্যাম্প থেকে পারমিশন নিতে হবে জানোই তো । ১১টার মধ্যে যেতে না পারলে আবার ৩টা অবধি অপেক্ষা করতে হবে ।
—আচ্ছা জলদিই আসছি নিচে ।
—বের হওয়ার আগে কল দিও । আমি গিয়ে নিয়ে আসবো ।
—আচ্ছা ।
ফোন রেখে দিল অনু । এর মধ্যে নিশিও বের হলো ওয়াশরুম থেকে । নিশিকে জলদি রেডি হতে বলে অনু ওয়াশরুমে ঢুকে গেল । পাঁচ মিনিটের মধ্যে শাওয়ার নিয়ে বের হলো অনু । ততক্ষণে নিশিও রেডি হয়ে গেছে । অনু বের হয়ে খালি চুলটা ভালো করে মুছে ছেড়ে দিল । নিশিও কোনো সাজগোজ করে নি । নীল রংয়ের লং স্কার্টের উপর সাদা টপস পড়েছে নিশি । আর গলায় নীল রংয়ের স্কার্ফ । অনুও একই ড্রেস পড়েছে । খালি কালারটা ভিন্ন । নীলকে কল দিয়ে আসতে বলে নিশিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো অনু । সিড়িতেই দেখা হলো নীলের সাথে । অনুকে দেখে নীল ড্যাবড্যাব তাকিয়ে রইলো । হালকা ভেজা মুখ । এলোমেলো ভেজা চুল থেকে চুইয়ে পড়া ফোঁটা ফোঁটা পানি । পুরো মুখে ছড়িয়ে থাকা মিষ্টি একটা হাসি এসবে যেন আটকে গেল নীল । শাওয়ার নেয়ার পর মেয়েদের স্নিগ্ধতা যেন একটু বেশি বেড়ে যায় । তাই তো এই স্নিগ্ধতায় হারিয়ে যাচ্ছে নীল । সব সময়ের শুনে আসা কথাটা আজ সত্যিই মনে হচ্ছে । নীলকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় কুকড়ে মাথা নিচু করে ফেললো ফেললো অনু । নিশি সবই খেয়াল করলো । মিটি মিটি হাসতে লাগলো । কৃত্রিম কাশি দিল ওদের ধ্যান ভাঙ্গতে । নিশির আওয়াজে নীল অনুর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল । নিশির দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললো,
—চলো নিচে যাই ।
একথা বলেই নীল পেছনে ঘুরে গেল । একবারের জন্যও আর অনুর দিকে ফিরে তাকায় নি । নিচে নামতে আগে মাহির সাথে দেখা হলো । তারপর নিঝুমের সাথে । নিশিকে দেখে নিঝুমের অবস্থাও নীলের মতোই হলো । সেটা মাহি খেয়াল করে চুপিচুপি নিঝুমকে পিঞ্চ করে মজা নিতে লাগলো । আবার নীলকেও খেয়াল করলো । কিন্তু কিছু বললো না । অপেক্ষা করতে লাগলো সময়ের । সুযোগ বুঝে জিজ্ঞেস করবে ।
একটা রেস্টুরেন্টে বসে ছয়জন মিলে সকালের নাস্তা করে নিল । সাথে টুকটাক আড্ডাও চললো । রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে চান্দের গাড়ি ঠিক করে উঠে পরে সাজেকের উদ্দেশ্যে ।
সকাল ১১টা ।
বাঘাইহাট ১০নং পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্পের সামনে দাড়িয়ে আছে নিশি নিঝুমদের গাড়ি । উদ্দেশ্য সাজেক যাওয়ার পারমিশন নেয়া । খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে এসেছে ওরা । রাঙামাটি জেলার সর্ব উত্তরের খিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত সাজেক ভ্যালি । বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় ইউনিয়ন হচ্ছে সাজেক । যার আয়তন ৭০২ বর্গামাইল । খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০কিলোমিটার । আর দীঘিনালা থেকে ৪০কিলোমিটার । আর বাঘাইহাট থেকে ৩৪কিলোমিটার ।
সাজেক নিয়ে আরো অনেক টুকটাক তথ্য হেসে হেসে বলছে মাহি । সাথে আরও অন্যান্য আড্ডাও চলছে । কিন্তু নীল চুপচাপ । কারণ……
.
.
.
চলবে?
(বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন । )
.

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

#স্বপ্ন?
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_৩৫
.
.
.
সাজেক নিয়ে আরো অনেক টুকটাক তথ্য হেসে হেসে বলছে মাহি । সাথে আরও অন্যান্য আড্ডাও চলছে । কিন্তু নীল চুপচাপ । কারণ ওর চোখে এখনো হোটেল থেকে বেরুনোর সময় অনুর সেই চেহারাটা ভাসছে । ওর হালকা ভেজা মুখ । নিম্ন অধরে লেগে ছিল এক ফোঁটা পানি । সেই পানির ফোঁটাটাকে ঐ মুহুর্তে প্রচুর হিংসে হচ্ছিল নীলের । ঠোঁটের নিচের বাম পাশে হালকা কালো রঙের একটা ছোট্ট তিল । খুব বেশি নজর কাড়ছিল তিলটা । ভেজা জোড়া ভ্রুজুগল । তার ঠিক মধ্যখানটায় অধর দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছিল । এই ছোট্ট ছোট্ট জিনিসগুলো খুব বেশি নজর কাড়ছিল ওর । খুব করে যেন টানছিল ওকে । যার জন্য তখন অনুর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিল । আর এখন সেই চোখ, ভেজা ভ্রু, ঠোঁট সব ওর চোখের সামনে ভাসছে বিধায় থম ধরে আছে ।
মাহি অনেক আগে থেকেই নীলকে খেয়াল করছে । ভাইকে এভাবে দেখে চুপ থাকতে না পেরে শেষমেষ সবার মধ্যে থেকে নীলের হাত ধরে টেনে একটু সাইডে নিয়ে গেলো । যাওয়ার সময় বাকিদের উদ্দেশ্য বললো,
—তোমরা আড্ডা দাও । আমরা একটু ঐদিকটা ঘুরে আসি । জলদিই এসে পড়বো ।
নীল কিছু বললো না । চুপচাপ মাহির সাথে গেল । নীলকে নিয়ে একটু আড়ালে আসলো মাহি । এসেই সোজা নীলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল,
—ভাই কি হয়েছে তোর?
নীল মুখে একটু হাসি টেনে বললো,
—কি হবে? কিছু হয় নি তো ।
—একদম মিথ্যে বলবি না ভাই । যদি কিছু না-ই হয়ে থাকে তাহলে হোটেল থেকে বের হবার পর থেকে মুখটা ওমন গোমড়া করে রেখেছিস কেন? এত কি ভাবছিস তুই?
নীল দূর থেকেই অনুর দিকে তাকালো । দেখলো অনু চুপ করে নিশি নিঝুমদের সাথে দাড়িয়ে আছে । টুকটাক কথা বলছে । কিন্তু ওর দৃষ্টি নীলের দিকে । নীলকে তাকাতে দেখেই অনু চোখ সরিয়ে নিল । কিন্তু নীল ওর দৃষ্টি সরালো না । তাকিয়ে রইলো অনুর দিকেই একদৃষ্টিতে । অনুর দিকে তাকিয়ে থেকেই মাহিকে বললো,
—কিছু না রে মাহু ।
মাহি নীলের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো । দেখলো নীলের দৃষ্টি সীমাবদ্ধ অনুতে । হয়তো অনুর সাথে কিছু হয়েছে এটাই ভেবে নিল মাহি । তাই আর নীলকে ঘাটালো না এই বিষয়ে ।
নীলের হাত ধরলো নিঃশব্দে । হাতে মাহির ছোঁয়া পেয়ে নীল অনুর থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে মাহির দিকে তাকালো । নীল তাকাতেই মাহি বললো,
—এভাবে মুড অফে তোকে মানায় না ভাই ।
নীলের গাল দু’দিক থেকে টেনে ধরে বললো,
—তোর মুখের হাসিটাতেই তোকে সবচেয়ে বেশি মানায় ।
মাহির কথা শুনে নীল হেসে ফেললো । বললো,
—চল ওদের কাছে যাই ।
নীলকে সম্মতি জানিয়ে মাহি বললো,
—চল…
এদিকে অনু মনে মনে ভাবছে যে, ‘হঠাৎ করে নীলের কী হলো! এভাবে মুড অফ করে আছে, ওর সাথে কথা বলছে না ।’ এগুলো ভেবে ওর মনও খানিকটা খারাপ হয়ে গেছে । কিন্তু তবুও মুখে জোর করে একটা হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে ।
মাহি আর নীল দু’জনে এসে আবার ওদের সবার সাথে দাড়ালো । নীল এখন এসে আর দূরে না একদম অনুর পাশ ঘেঁসে দাড়ালো । আর মুখে আগের সেই হাসিটা। সবার অগোচরে অনুর হাতটাও ধরলো নীল । হুট করে হাত ধরায় বেশ চমকে গেল অনু । কিন্তু নীল পুরো স্বাভাবিক রইলো । যেন কিছুই হয় নি ।
.
পারমিশন পেতেই নিঝুম নিশি সহ বাকি সবাই গাড়িতে উঠে বসল । সবাই উঠে বসতেই গাড়ি স্টার্ট দেওয়া হলো ।
সাঁই সাঁই করে ছুটতে লাগলো চান্দের গাড়ি । পথে যেতে চলতে থাকলো দুষ্টুমি আর আড্ডা । নিশিই শুধুমাত্র চুপ করে আছে । ওর দৃষ্টি দূর থেকে দূরান্তে । ফেলে যাওয়া পথ পানে চেয়ে আছে ও ।
বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প থেকে পাড়ি দিতে হবে আরো ৩৪কিলোমিটার পথ । ধীরে ধীরে ফুরোচ্ছে পথ । আর ওর এগিয়ে যাচ্ছে মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালিতে ।
সাজেক!!! এমন একটি জায়গা, সেখানে হোক দিন কিংবা রাত! যখনই দেখা হোক মনে হয় যেন শিল্পীর রং তুলিতে ফুটিয়ে তোলা একট রঙিন জলছবি, এটাই সচ্ছ । সময় গড়ায় তবে তার সৌন্দর্য কখনো পুরোনো হয় না । সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি হচ্ছে সাজেক । সৃষ্টিকর্তার এক অসাধারণ সৃষ্টি ।
বাঘাইহাট পাড় হওয়ার পর সামনে পড়ে কাসালং ব্রিজ । ২টি নদী মিলে এই কাসালং নদীর উৎপত্তি । নিশিদের গাড়ি এখন কাসালং ব্রিজে । কাসালং ব্রিজের উপর দিয়েই যাচ্ছে ওরা । কাসালং ব্রিজ পাড় হওয়ার পর পড়বে টাইগার টিলা আর্মি পোষ্ট ও মাসালং বাজার । বাজার পেরুবার পর পড়বে সাজেকের প্রথম গ্রাম । রুইলুই পাড়া । যার উচ্চতা ১০০০ফুট উপরে । এই রুইলুই পাড়ার বাসিন্দা হলো পাংকুয়া, ত্রিপুরা এবং প্রবীণ লুসাইরা । সকালবেলা এই রুইলুই গ্রামে এমনভাবে মেঘেরা ছেয়ে পড়ে যা দেখলে প্রথম মনে হবে শীতের সকালের কুয়াশা । কিন্তু সেগুলো কুয়াশা নয় । সেগুলো হচ্ছে মেঘপুঞ্জ । সকাল আট’টা পর্যন্ত মেঘেরা ঘুড়ে বেরায় এই গ্রামে । বিশেষ করে শীতকালে এর অস্তিত্ব বেশি দেখা যায় ।
খুব বেশি সময় লাগে নি নিশিদের সাজেক পৌঁছুতে । রিসোর্ট আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখা ছিল । তাই সাজেক পৌঁছেই রিসোর্টে গিয়ে উঠলো ওরা । যেই রিসোর্ট ওরা উঠেছে তার নাম মেঘমাচাং । কাঠের তৈরি এই রিসোর্ট । হোটেলে যেভাবে ওরা রুম নিয়েছিল রিসোর্টেও সেভাবেই রুম ভাগ করে নিল ।
নিশি রাস্তায় খুব কম কথা বলেছে । শুধু অভিভূত হয়ে দেখেছে ওর স্বপ্নের সাজেকের রাস্তার প্রতিটা কোণ । অনু ইশারায় সবাইকে নিষেধ করে দিয়েছিল । যাতে কেউ নিশিকে না ডাকে । ওকে ওর বাস্তব স্বপ্নের মাঝে ডুবে থাকতে দিয়েছিল । রিসোর্টে ডুকেই নিশি সোজা বারান্দায় চলে গেল । কাঠের তৈরি রেলিং ঘেঁসে দাড়ালো । দৃষ্টি মেলে দিল সামনের দিকে । যতদূর চোখ যায়, মেঘের ভেলার উড়াউড়ি আর সবুজে ঘেরা । যেন সবুজের সমুদ্র ।
খুব বড় করে একটা শ্বাস টেনে নিল নিশি । সেই শ্বাসের সাথে সাথে যেন দুঃখ, কষ্ট, গ্লানি. যত না পাওয়ার বেদনা ছিল সব মিলিয়ে গেল । বুক ভরে গেল প্রশান্তি, খুশি আর আনন্দে । এই মুহুর্তে নিশির কান্না পাচ্ছে । ভীষণ কান্না পাচ্ছে । চোখ বন্ধ করে ফেলল নিশি । থরথর করে কাঁপতে শুরু করেছে ও । মনে হচ্ছে এখনই ভারসাম্য হারিয়ে পরে যাবে । হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেল নিশি । যদিও দেখে নি যে কে ওর কাঁধে হাত রেখেছে । কিন্তু স্পর্শটা মনে হচ্ছে চেনা । খুব চেনা । মনে হচ্ছে মানুষটা আস্তে আস্তে ওর অনেক কাছে এসে দাড়িয়েছে । আরেকটু হলে হয়তো তার বুকের সাথে ঠেকবে গিয়ে ওর পিঠ । নিশির হঠাৎ কি হলো কে জানে না । নিশি চোখ বন্ধ রেখেই বিদ্যুৎ বেগে পেছন দিকে ঘুরে জড়িয়ে ধরলো ওর পেছনে থাকা মানুষটিকে ।
আচমকা নিশি এমন জড়িয়ে ধরায় কিছুক্ষণ থ হয়ে রইলো নিঝুম । বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লাগলো । যখন এটা মনে হলো যে নিশি ওকে নিজে থেকে জড়িয়ে ধরেছে তখন ওর ঠোঁটের একোণে থেকে ওকোণে একটা স্মিত হাসি ছড়িয়ে পড়লো । এটা নিশির নিজে থেকে ওকে দ্বিতীয় বার জড়িয়ে ধরা । নিঝুমও নিশিকে নিজের সাথে আঁকড়ে ধরার জন্য হাত উঠালো ওর পিঠ পর্যন্ত । পরে আবার ভাবলো যে, নিশি তো ওকে আসতে দেখে নি । তাহলে কি নিশি ও যে এসে সেটা টের পেয়েছে? নাকি অন্যকেউ ভেবে জড়িয়ে ধরেছে?
এই কথাগুলো ভেবে নিঝুম আর নিশিকে জড়িয়ে ধরলো না । চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো ।
—থ্যাংক ইয়্যু সো মাচ্ নিঝুম ।
নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে রাখা অবস্থায়ই বললো নিশি । নিশির কথা শুনে এবার নিঝুম নিশ্চিত হলো যে নিশি ওকে ভেবেই জড়িয়ে ধরেছে । নিঝুমের এতক্ষণের মনে মনের ভাবনাটা দূর হয়ে গেল । নিশির কণ্ঠ শুনে মনে হচ্ছে যে ও কাঁদছে । কারণ ও যখন ‘থ্যাংক ইয়্যু’ বলছিল ওর গলা কাঁপছিল । এবার নিঝুম ও আলতো করে নিশির মাথায় হাত রাখলো ।
.
.
.
চলবে?
(বিঃদ্রঃ গল্পে রেসপন্স আবার আগের মতো হয়ে গেছে । একদম নেই বললেই চলে । লেখার মুডটাই খারাপ হয়ে গেছে ।
আর কয়েকটা পার্ট পর্যন্ত দেখবো । যদি রেসপন্স না পাই তাহলে এই স্টোরি দেওয়া অফ করে । 🙂

ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)

#স্বপ্ন?
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_৩৬
.
.
.
নিশির কণ্ঠ শুনে মনে হচ্ছে যে ও কাঁদছে । কারণ ও যখন ‘থ্যাংক ইয়্যু’ বলছিল ওর গলা কাঁপছিল । এবার নিঝুম ও আলতো করে নিশির মাথায় হাত রাখলো ।
বা হাত মাথায় আর ডান হাত পিঠে রেখে আরেকটু জড়িয়ে নিল নিশিকে । নিশি কিছুই বললো না । আষ্টেপৃষ্টে রইলো নিঝুমের সাথে । এই ছোঁয়ায় কোনো অসস্থি নেই । আছে তো বিশ্বাস, ভরসা । তার মাঝে ভালোবাসাও খুঁজে পাচ্ছে নিশি । নিঝুমের কাঁধ থেকে বুকে মুখ গুজে রইলো নিশি । নিশির তপ্ত নিঃশ্বাস পড়ছে নিঝুমের বুকে । কেমন মিষ্টি একটা অসস্থি আর ভালোলাগার সংমিশ্রণ অনুভূতি হচ্ছে নিঝুমের । ওর ইচ্ছে করছে নিশিকে আরো জড়িয়ে নিতে নিজের কাছে । নিঝুম আর নিশি দু’জনের কারোরই হুশ নেই । দু’জনই অনুভবের সাগরে ডুবে আছে ।
আড়ালে থেকে ওদের দুজনকে একসাথে দেখে সস্থির নিঃশ্বাস আর তৃপ্তির হাসি হাসলো একজন । মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানালো যাতে এইভাবেই সারা জীবন একসাথে থাকে নিশি নিঝুম ।
হঠাৎ নিঝুমের ফোনের রিংটোন বেজে উঠায় ঘোর কাটে দু’জনের । নিশি নিঝুমের বুক থেকে মাথা তুলে পিটপিট করে তাকায় নিঝুমের থেকে । দেখতে পায় নিঝুমের ঘোর লাগা গভীর দৃষ্টি । প্রচন্ড লজ্জা লাগলো নিশি । এতক্ষণ কি করেছে সেটা ভাবতে ওর লজ্জা আরো বেড়ে যাচ্ছে । নিঝুমের চোখের দিকে তাকাতেও লজ্জা লাগছে কিন্ত তবুও তাকিয়ে আছে ও বেহায়ার মতো । দৃষ্টি সরাতে ইচ্ছে করছে না । নিঝুমের ঐ চোখের মাঝেই যে কোনো এক বৃষ্টিস্নাত রাতে প্রথম হারিয়ে ফেলেছিল নিজেকে ।
নিঝুমও তাকিয়ে রইলো একদৃষ্টিতে । নিশির চোখ পড়তেই চেষ্টা চালাচ্ছে ও । শুনেছে মানুষের চোখ নাকি মনের কথা বলে । তাই সেই চোখ পড়েই বুঝতে চাইছে নিশি ওকে ভালোবাসে কিনা ।
হুট করেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো মাহি ।
—দাভাইইই! দাভাইইই!
করতে করতে সোজা বারান্দায় এসে পড়লো । এসে নিশি আর নিঝুমকে এভাবে দেখে ও প্রথমে চোখ বড় বড় করে ফেললো । তারপর তড়িৎ বেগে আবার উল্টো দিকে ঘুরে বললো,
—না না নাহ্ আমি কিচ্ছু দেখি নি । ক্যারি অন ।
একথা বলেই মাহি একছুটে সেখান থেকে চলে গেল । কিন্তু ততক্ষণে নিশি নিঝুমের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে রিসোর্টের রুমের ভেতরে চলে যায় । মাহি যখন আসে তখনই নিঝুম আর নিশি চমকে উঠে । তখনই নিশি নিঝুমকে ছেড়ে দেয় । কিন্তু নিঝুম ওর মতোই দাড়িয়ে থাকে । এতে নিশি আরও লজ্জা পায় । তাই দৌড়ে চলে যায় । নিশি যেতেই নিঝুম এক হাত কোমড়ে আরেক হাত ঘাড়ের পেছনে দিয়ে মাথা একটু নিচু করে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মুচকি একটা হাসি দেয় । ভাবতে থাকে নিশিকে ।
.
—ভাই এমন করছিস কেন? চল না ।
—না মাহু । এতদূর যেতে পারবো না আমি তাও আবার পায়ে হেঁটে । অসম্ভব ।
—ঢাকায় তো সবসময়ই করিস । আজকে একটু কষ্ট করে গেলে কি হয় তোর?
মাহি আবদারের স্বরে বললো ।
—অনেক কিছু হয়ে যায় ।
নীলকে বলে কাজ হচ্ছে না দেখে এবার নিঝুমের কাছে যায় মাহি । নিঝুমকে মানাতে চেষ্টা করতে থাকে ।
—দাভাই তুই অন্তত ভাইকে বল । বিলিভ মি ভালো লাগবে সবারই ।
—মাহু তুই তো কতবারই গেছিস ওখানে । যতবার এসেছিস ততবারই গেছিস । এবার বাদ দে না বাবু ।
নিঝুম আর মাহি কথা বলছিল এমন সময় নিশি আর অনু ওদের কাছে এলো । দেখলো মাহি নিঝুম আর নীলকে কোনো একটা বিষয়ে রাজি করানো চেষ্টা করছে । আর আযান ওদের পাশে দাড়িয়ে ওদের কথা শুনছে আর মুচকি হাসছে । সেটা দেখে অনু মাহির কাছে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বললো,
—কি হয়েছে মাহি?
—আর বলো না । কখন থেকে দাভাই আর ভাইকে একটা কথা বলছি কিন্তু ওরা মানতেই চাইছে না ।
মাহি আফসোসের স্বরে বললো । এবার নিশি জিজ্ঞেস করলো,
—কি কথা?
—এখান থেকে কিছুদূর গেলে একটা সুন্দর ঝর্ণা…..
মাহিকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে নীল বললো,
—এই ফাজিল ওটা কিছুদূর? পাক্কা দুই থেকে আড়াই ঘন্টা লাগবে যেতে ।
অনু নীলকে বললো,
—ওকে বলতে তো দাও ।
অনু বলাতে নীল চুপ হয়ে গেল । সেটা দেখে মাহি ফিক করে হেসে দিল । নীল রাগী চোখে তাকালো মাহির দিকে । মাহি ভাইকে পাত্তা না দিয়ে বলতে লাগলো,
—যেটা বলছিলাম । এখান থেকে কিছুদূর মানে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা লাগবে যেটা ভাই বললো আরকি সেখানে একটা সুন্দর ঝর্ণা আছে । তো আমি চাচ্ছিলাম যে সেখানে গিয়ে ঝর্ণার পানিতে ভিজবো । কিন্তু দাভাই আর ভাই রাজি হচ্ছে না যেতে । বলছে এখান থেকেই ফ্রেশ হয়ে নিতে । আচ্ছা তোমরা দুজনই বলো, ঢাকায় তো আর আমরা এমন ঝর্ণার পানি পাই না শাওয়ারের জন্য । ওখানে তো প্রতিদিনই ট্যাপের পানিতেই শাওয়ার নেই । এখানে এসেও যদি তাই করি মজাটা আর রইলো কই? এক জায়গায় এসেছি সে জায়গার সব সৌন্দর্য যদি উপভোগই না করতে পারি তাহলে সে জায়গায় যাওয়ার মানে কি বলো? আমি আগেও এর আনন্দটা উপভোগ করেছি তাই চাইছিলাম তোমাদেরও সেটা ফিল করাতে । বিলিভ মি অনেক ভালো লাগবে তোমাদের । কিন্তু দেখো না এই দুই লোক রাজিই হচ্ছে না ।
শেষ কথাটা মাহি মুখ ভার করে অভিযোগের সুরে বললো । মাহির কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলো নিশি অনু । কিছু একটা ভেবে নিশি বললো,
—আমরা যাব ঝর্ণাটা দেখতে ।
নিশির কথা শুনে মাহি “ইয়াহু” বলে একটা লাফ মারে । তখনই নিঝুম বলে,
—মাহু তুই বুঝতে পারছিস না । তুই অনেক ট্রাভেলিং করিস তাই তোর ট্রেকিংয়ের অভ্যাস আছে । দুই ঘন্টার চেয়েও বেশি হাঁটতেও তোর প্রবলেম হবে না । কিন্তু ওরা তো তোর মতো ট্রেকিংয়ে অভ্যস্ত না রে বাবা ।
অনু নিঝুমের বিরোধিতা করে বললো,
—অভ্যেস নেই তাতে কি? করে নিব । প্লিজ ভাইয়া মানা করবেন না ।
নিঝুমকে আর কিছু বলার সুযোগই দিল না নিশি অনু মাহি । শেষমেষ রাজি হলো যাওয়ার জন্য । নিঝুম রাজি হতেই ওরা তিনজন “ইয়েএএএ” বলে একসাথে লাফিয়ে উঠে হাই ফাইফ মারলো । ওদের তিনজনের বাচ্চামো দেখে নীল আর আযান হাসতে লাগলো ।
.
কমলক ঝর্ণা । রুইলুই পাড়া থেকে প্রায় দুই বা আড়াই ঘন্টা ট্রেকিং করে বা পায়ে হেঁটে এই ঝর্ণায় যেতে হয় । যদিও এই দুই ঘন্টা পায়ে হেটে যাওয়া খুবই কষ্টকর । তবে পৌঁছানোর পর যখন ঝর্ণাটির দিকে চোখ যায় তখন সব কষ্ট নিমিশে মিলিয়ে যায় । গ্রামের পথ ধরেই নিঝুম, নিশি, নীল, অনু, আযান, মাহি ট্রেকিং করে গিয়ে পৌঁছায় কমলক ঝর্ণা । ঝর্ণার ঝিরিঝিরি শব্দ আর অপরূপ সৌন্দর্য বিমোহিত হয়ে দেখছিল ওরা । নিশি আর অনুর চোখে আনন্দ যেন ঝিলিক দিয়ে উঠছিল । মাহির চোখে সেটা খুব ভালোভাবেই ধরা পড়ে । নিশি আর অনুকে উদ্দেশ্যে মাহি বলে,
—কি বলেছিলাম না ভালো লাগবে?
মাহির দিকে তাকিয়ে তৃপ্তি হাসি হেসে বললো,
—থ্যাংক ইয়্যু । তুমি সাথে না থাকলে বোধ হয় সাজেকে এলেও সব কিছু আমার দেখা হতো না । অনেক কিছুই মিস হয়ে যেত ।
নিশির উত্তরে মাহি একটা হাসি দিল । নিশির আড়ালে অনু চোখ মুছে নিল । নিশি এই খুশিটাই ও দেখতে চেয়েছিল । কারণ নিশি সব সময় হাসিখুশি থাকলেও সেটা অনুর লোক দেখানো মনে হতো সেই হাসি । কিন্তু আজ মনে হচ্ছে সত্যিই নিশি মন খুলে হাসছে ।
ঝর্ণার পানি শুধু দূর থেকেই না কাছে গিয়ে ছুঁয়েও দেখলো ওরা । ইচ্ছে মতো ভিজলো ঝর্ণার পানিতে । প্রায় এক ঘন্টার মতো ওখানে থেকে ওরা ফিরে আসার জন্য রওনা দেয় ।
নিশি চুপচাপ হাঁটছিল । বেখেয়ালে থাকায় হঠাৎ কিছু একটার সাথে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়া ধরে । কিন্তু তার আগেই নিঝুম ওকে ধরে ফেলে । আরেক দফা চোখে চোখে কথা নিশি নিঝুমের । মুহুর্তটা ক্যাপচার করতে ভুলে যায় নি মাহি । তারপর অনেকক্ষণ নিশি মাথা তুলে দেখেনি নিঝুমের দিকে । মাথা নিচু রেখে আড়চোখে দেখছিল নিঝুমকে । নিঝুমের ঠোঁটের কোণে তখন দুষ্টু হাসি । সেটা দেখে নিশি আরো রক্তিম আভা ধারণ করছিল । তখন অনু নিশির কাছে এসে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো,
—কি আপি এভাবে রংধনু হচ্ছিস কেন?
অনুর কথায় নিশি আরো লজ্জা পেয়ে হাতে চিমটি কাটলো । অনু নিশিকে দেখে খিলখিলয়ে হেসে উঠে । আচমকা নীল পেছন থেকে এসে অনুকে কোলে তুলে নিল । অনু এতটাই চমকে যায় যে কথা বলতে পর্যন্ত ভুলে গেল । হতবিহ্বলের মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো নীলের দিকে । হুশ ফিরলো কানে নীলের ফিসফিসানিতে ।
—এভাবে তাকিয়ে আছো কেন মিষ্টি?
তখনই অনুর কানে আসে হাসাহাসির শব্দ । তাকিয়ে দেখে আযান, মাহি আর নিঝুম ওদের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসছে । আর নিশি বোকার মতো তাকিয়ে আছে । এবার অনু লজ্জায় লাল হতে শুরু করে । মাথা নিচু করে নিম্ন কণ্ঠে বললো,
—আমাকে নামান প্লিজ ।
নীল মুখে হাসি রেখেই বললো,
—কেন? আরামসে যেতে ভালো লাগছে না বুঝি?
এবার অনু আরো নিচু স্বরে বললো,
—আমার লজ্জা লাগছে প্রচুর । প্লিজ নামান ।
নীল দুষ্টুমি স্বরে বললো,
—কেউ চাইলে বুকে মুখ লুকাতে পারে । আমি কিন্তু মাইন্ড করবো না ।
নীলের দুষ্টুমি করে বলা কথা বুঝতে অনুর কষ্ট হলো না । অনু সত্যিই নীলের বুকে মুখ লুকালো……
.
.
.
চলবে?
(ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন )
.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে