স্বপ্নীল ০২

0
1959

স্বপ্নীল
০২

ঢাকা থেকে প্রাচ্য,স্বপ্ন, তৃন,ধূসর,রোদ সবাই সাজেক ভ্যালি ট্যুরে যাবে।বাস ঢাকা থেকে কুমিল্লা বাস স্ট্যান্ড থামে।সবাই মিলে নাস্তা করে এখন অপেক্ষা করছে। তখনই ধূসর বলে
-“কিরে প্রাচ্য তোর বয়ফ্রেন্ড নীলের জন্য আর কতক্ষন অপেক্ষা করবো। তাড়াতাড়ি ফোন কর।
তখনই তৃন বলে,
-“এখানেই অনেকের বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড আছে।আমাদের কারো বয়ফ্রেন্ড গার্ল, গার্লফ্রেন্ড নিয়ে যাচ্ছি না।তাহলে কেন আমরা আমাদের বন্ধুমহল ট্যুরে বাহিরে লোক যোগ হবে কেন???কই আমরা তো আর প্রাচ্য মতো কাউকে নিয়ে যাচ্ছি না।এখানে আমরা সব বন্ধুর যাচ্ছি।
প্রাচ্য দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
-আমরা কি তোকে মানা করেছি যে তোর গার্ল ফ্রেন্ড এই ট্যুরে নেওয়া যাবে না। তোর এতো জ্বলে কেন?? আমি আমার বয়ফ্রেন্ড সঙ্গ নিয় নাকি অন্য কাউকে নিয়ে সেটা আমার ব্যপার।তুই নাক গলাচ্ছিস কেন???তোর মন চাইলে তোর ওই গার্ল ফ্রেন্ড গুলো কি যেন নাম

আর তখনই রোদ বলে ঊঠে,
-“টিনা, মিনা, শিনা,রিনা।
-“হ্যাঁ, তোর ওই টিনা, মিনা, শিনাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারিস।আমরা কেউ মানা করবো না।
সবার উদ্দেশ্য করে বলে প্রাচ্য,
-“তৃন যদি এই ট্যুরে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আসতো।তাহলে কি তোরা মানা করতি।
ধূসর আর রোদ বলে,
-“না।কিন্তু স্বপ্ন …
-“স্বপ্ন কি,, বলবি মানা করত, একদম মানা করত না।এই তৃন তো গার্ল ফ্রেন্ড ছাড়াই চলে না
তূর্ন বলে,
-“আমি জাস্ট সামন্য কথা বলেছি। আর তোরা সবাই একটা একটা কথে করে ১০টা কথা শুনাইলি।
-“বেশ করেছি।তোর জ্বলে কেন??
স্বপ্ন পাশে দাঁড়িয়ে তার বন্ধুরে ঝগড়া দেখছে।এরা সবাই এক হলেই সামন্য কথা নিয়ে ঝগড়া করে। ঝগড়া শেষে সবাই আবার এক হয়ে যায়।এবার স্বপ্ন বলে
-“প্রাচ্য ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস কর। আর কতক্ষন লাগবে আসতে লেট হয়ে গেলেই আবার সমস্যা হবে।
প্রাচ্য ফোন বের করে কল করে।রিসিভ করে নীল।প্রাচ্য বলে
-“নীল কোথায় তুই । আর কতক্ষন লাগবে তোর।
-“এতো আপু বাস থেকে নামতেছি আমি।
-“আচ্ছা তাড়াতাড়ি আস।আমরা বাস স্ট্যান্ড দাঁড়িয়ে আছি।
নীল ফোনে কথা বলতে বলতে বাস থেকে নামে। বোরখা বাসে বসেই খুলে ফেলে।একহাতে বোরখা আরেক হাত ফোন কান নিয়ে ধরে আছে।
ধূসর তাকিয়ে দেখে বাসের থেকে একটা বউ নেমে আসছে তাও আবার এত রাতে একলা একলা তা দেখে একটু জোরে সবাইকে বলে
-“তোরা সবাই এই দিকে দেখ
ধূসর কথা শুনে পিছনে তাকায় সবাই।সবাই লাল শাড়ি পড়া একটা মেয়েকে দেখতে পায়। সবাই দেখে বুঝে গেছে মেয়েটা বিয়ের কনে।। আর এতো রাতে বাহিরে মানে পালিয়ে যাচ্ছে।স্বপ্ন মেয়েটা দিকে তাকিয়ে আছে। লালশাড়ি পড়া একটা পরি যেন বাস থেকে নামছে।প্রাচ্য নীলকে দেখে হাসে। তখনই ধূসর বলে,
-“আমি ১০০%সিউর আজকে এই মেয়ে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যাচ্ছে বয় ফ্রেন্ড কাছে।
তখনই রোদ বলে
-“মেয়েটা কে দেখে তো বিয়ের কনে মনে হচ্ছে। মনে পালিয়ে এসেছে।
নীল এইদিক ওইদিক তাকিয়ে তারপর সামন্য তাকিয়ে প্রাচ্য দেখে খুশি হয়ে দৌড় দেয়।
সবাই মেয়েটাকে তাদের দিকে দৌড়িয়ে আসার কারণ বুঝতে পাচ্ছে না।নীল তখনই দৌড়ে এসে স্বপ্ন পাশে দিয়ে যেয়ে প্রাচ্যকে জড়িয়ে ধরে।সবাই অবাক হয়। এই বিয়ের কনে সঙ্গে প্রাচ্য কি সম্পর্ক। প্রাচ্য বলে
-“কদম ফুল তোর আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তোর।”
-“না আপু।
প্রাচ্য কে মেয়েটার সাথে কথা বলতে দেখে সবাই শিউর হয়। এই মেয়েটাকে প্রাচ্য চেনে।সবাই প্রাচ্য দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে দেখে।প্রাচ্য নীল কে সরিয়ে বলে
-“ও হচ্ছে কদমফুল….
একটু থেমে বলে
-“ও হচ্ছে নীল যার জন্য এতক্ষন অপেক্ষা করছিলাম।
প্রাচ্য যখন সবাইকে বলেছে তার এক কাজিন তাদের সাথে সাজেক ট্যুরে যাবে। নাম বলেছে নীল।সবাই ভেবেছে ছেলে হবে।কারণ নীল নামটা বেশিভাগ ছেলেদের হয়।কিন্তু এখন এখানে একজন কনে মেয়েদেখে সবাই অবাক। আর সবার মনে একই প্রশ্ন। এই মেয়ে এই সাজ কেন??? বিয়ের সাজে কেউ ট্যুরে যায় নাকি।তখনই ধূসর বলে উঠে,
-কিরে প্রাচ্য তোদের নোয়াখাইল্লারা কি ট্যুরে যায় বিয়ের সাজে।আজ তোর এই কাজিনকে না দেখলেই বুঝতে পারতাম না।আমাদের পাশের দেশ নোয়াখাইল্লারা ট্যুরে যায় বউ সেজে যায়।
ধূসর কথা শুনে স্বপ্ন বাদে সবাই হো হো হো করে হেসে দেয়।কারণ স্বপ্ন দের দেশের বাড়ি নোয়াখালীতে।এবার তৃন বলে
-“আমি নামের বাহার শুনে মনে করেছি।ছেলে হবে। এখন দেখি এখন জলজ্যান্ত মেয়ে। প্রাচ্য যেন মেয়েটা কি নামে প্রথম ডেকেছে।
তখনই রোদ বলে,
-“কদম ফুল
তৃণ আর ধুসর হো হো করে হেসে দেয়। ধূসর ব্যাঙ্গ করে বলে,
-“কদম ফুল, লাল, নীল সবুজ,রোদ,বৃষ্টি মেঘ
সবার দেখা আমদের সাথেই হয়,এদের ফ্যামিলি মনে হয় সব ছেলেদের নাম রাখতে পছন্দ করে।নামের কি ছিঁড়ি।

রোদ চোখ গরম করে ধূসর তাকিয়ে বলে,
-“আমার নাম রোদেলা রোদ। তুই আমার নাম ব্যাঙ্গ করবি না বলে দিলাম।
-“তোর নাম দেখে সবাই মনে করবে ছেলে। আসলে তো তুই আটা ময়দা মাখা সুন্দরী।
এবার স্বপ্ন মুখে খুলে,তোরা কি থামবি।
সবাই চুপ হয়ে যায়।স্বপ্ন প্রাচ্য ইশারা বুঝায় “মেয়েটা এই সাজে কেন???প্রাচ্য সবাই বলে,
-“সবার অনেক প্রশ্ন আছে কদম ফুলকে নিয়ে সে এই সাজে কেন।আমি সবাইকে সেই প্রশ্ন উত্তরএকটু পরে দিবো।আগে কদমের ফ্রেশ হওয়া উচিত।”
তখনই নীল বলে,
-“আপু তোমাকে কতোবার বলেছি আমায় এই কদম নামে ডাকবে না। আমায় নীল বলে ডাকবে।
-“আচ্ছা ডাকবো না
—“নীল এরা সবাই আমার ফ্রেন্ড।আর এই হচ্ছে কদম মানে নীল। আমার কাজিন।নীল তুই এখানে দাঁড়া আমি তোর জামা কাপড় নিয়ে আসছি।

প্রাচ্য কিছু জামা সহ একটা ওয়াশরুম খুজে নীলকে নিয়ে সেখানে যায়।।একটা জিন্স আর টপস পড়ে আসে।
স্বপ্ন কখনো কোনো মেয়েদিকে এইভাবে তাকায় নিয়ে তবু বার বার এই মেয়েদিকে তাকায় । এতক্ষন শাঁড়ি পড়ে কেমন বউ বউ লাগছিল।আর এখন জিন্স আর টপস পড়ে কেমন পিচ্ছি পিচ্ছি লাগছে।
প্রাচ্য বলে,চল
ধুসর বলে,
-“প্রাচ্য তোর কদম ফুল উপরে যে ক্রাশ খাইছি।
নীল বলে
-“একদম আমায় কদম টদম ফুল বলবেন না। আমার নাম নীল
প্রাচ্য বলে,ওর দিকে নজর দিলে চোখ তুলে ফেলবো।তোদের ওই টিনা মিনা রিনা দের উপরে ক্রাশ খাইছ।আমার বোনের উপরে না।

প্রাচ্য কথা শুনে নীল হো হো হো করে হেসে দেয়।
স্বপ্ন বলে, বাসে উঠে ও কথা বলা যাবে। এখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করার দরকার নাই।
নীল এবার নজর যায় স্বপ্ন দিকে। সুদর্শন ছেলে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ব্লু জিন্স পড়া কালো টি-শার্ট পড়া মাথা হ্যাট পড়া । জাস্ট একথা অসাধারণ। তারপর পাশে থাকা দুটো ছেলেদিকে নজর যায়।তারা কোনো অংশ কম নয়।একথা তিন জনে হ্যান্ডসাম।। তার তামিম আর সমুদ্র ভাইয়ের মতো।
স্বপ্ন আবার বলে-“চল সবাই
সবাই মিলে বাসে উঠে।
তৃণ আর ধূসর এক সঙ্গে বসে।প্রাচ্য জানালার সিট ছাড়া বসতে পারে না। তাই সে জানালার সিটে বসেছে।। তার পাশেই রোদ বসেছে।কিন্তু নীল ও জানালার সিট ছাড়া বসতে পারে না।সোনারগাঁ যাওয়ার সময় সবাই জানালার সিট দখল করে নিয়ে ছিল।তার বসার জন্য জানালার পাশে কোনো সিট নাই।তখনই তার এক ক্লাসমেট সাথে মারামারি করে জানালার সিট নিয়েছে।
নীল বলে,
-“আপু আমি কোথায় বসবো।

স্বপ্ন সিট ও জানালার পাশেই

প্রাচ্য উঠে এসে স্বপ্ন কে বলে।
-“স্বপ্ন তোর সিট টা নীল কে দেয়। নীলের সিটে তুই এসে বস।নীল জানালার সিট ছাড়া বসতে পারে না।
স্বপ্ন আর কিছু না বলেই নীল কে সিট দেয়।নীল জানালার সিট পেয়ে খুশি হয়ে বসে পড়ে।
বাসের দুই সারি মধ্যে এক সারি মধ্যে, রোদ আর প্রাচ্য সিট তারপর তৃণ আর ধূসরে।তাদের চারজনের সিট মাঝ বরারব অন্যসারিতে স্বপ্ন আর নীলের সিট।

রোদ বলে’
-“প্রাচ্য তোর এই কদম ফুল বিয়ের সাজে কেন এসেছে।
-“ও বিয়ে থেকে পালিয়ে এসেছে।
সবাই এক সঙ্গে বলে”কি???
-“কুল, কুল, বলছি তোদের কে??
প্রাচ্য কথা কেড়ে নিয়ে নীল বলে
-“আমি বলি
-“হ্যাঁ তুই বল
-“আসলে আমি প্রাচ্য আপু সাথে ট্যুর যাবো বলে বিয়ে থেকে পালিয়ে এসেছি।
নীলের এমন কথা শুনে সবাই হতবাক।আজ পর্যন্ত তারা কেউ এমন মেয়ে দেখে নাই। যে ট্যুরে যাবে বলেই বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে আসে।প্রাচ্য তার বন্ধুদের মুখের এই করুন অবস্থা দেখে বলে
-“তোরা সবাই বানরে মতো মুখ করে রেখেচি কেন???
তৃণ বলে
-“তোর এই কদম ফুলের কথা শুনে।
প্রাচ্য বলে’

-“এখন কিছু শুনেসনি।ওর জীবন বিত্তান্ত শুনলে তোরা সবাই হার্ট ফেল করবি।ওশুধু ওখন পালায় নি এই নিয়ে ও ৩৬বার পালিয়েছে।
সবাই বলে
-“৩৬বার
-“হুম
রোদ বলে,
-“আমি যতটুকু জানি তোর দাদু নিজের এলাকায় সম্মানিত ব্যক্তি । তার নাতনি যদি এভাবে পালায় সবাই কে ভাবে।আর ও কেন এভাবে পালায়
তখন নীল বলে
-“আমার স্বপ্ন জন্য।
নীলের মুখে স্বপ্নর নাম শুনে সবাই স্বপ্ন দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়।তা দেখে স্বপ্ন বলে
-“এভাবে তোরা তাকিয়ে আছিস কেন????
তৃণ বলে,
-“প্রাচ্য বোন কদম ফুল কি বলেছে।সে নাকি পালিয়ে আসে তোর জন্য।
স্বপ্ন কিছু বলতে যাবে তার আগেই নীল বলে,
-“আমি উনার জন্য পালাতেই যাবো কেন???
ধূসর বলে,
-“তুমি তো একটু আগেই বললেই তুমি নাকি স্বপ্ন জন্য পালাও।
-“হ্যাঁ আমার স্বপ্ন জন্য।আমার স্বপ্ন হলো এই পৃথিবী সব সুন্দর সুন্দর জায়গা ঘুরে বেড়ানো।এটা আমার স্বপ্ন।

নীলের কথা শুনে প্রাচ্য বাদে সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খায়।
তৃণ বলে
-” আমি ভাবছি আমাদের স্বপ্ন জন্য। পালালে।

-“আপনাদের স্বপ্ন মানে??
ধূসর বলে
-“আপনার পাশেই যে ব্যক্তি বসে আছে তাহার নাম স্বপ্ন
নীল খুশি হয়ে বলে “সত্যি ”
আবার বলে
-“স্বপ্ন আর নীল। স্বপ্ন আর নীল দুটো নাম মিলে একটা নাম উৎপত্তি হলে হয় #স্বপ্নীল।আপনার আর আমার নাম মিলেই হয়ে যায় স্বপ্নীল।সুন্দর না।
সবাই নীলের কান্ড দেখছে।তখনই ধুসর বলে
-“হুম খুব সুন্দর।আর তোমাদের দুজনের নামের সাথে যেমন মিল আছে।তেমন তোমাদের দুজনকে একসঙ্গ খুব সুন্দর লাগছে।
নীল খুশি হয়ে বলে
-“সত্যি ”
-“হুম
স্বপ্ন এবার ধূসর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায়।তাই আর কিছু বলতে যেয়ে বলে না। তখনই প্রাচ্য বলে।
-“নীল এবার কি বিক্রি করেছি।
প্রাচ্য কথা শুনে স্বপ্ন বলে
-“বিক্রি করেছে মান??
-“নীলের মুখে শুনিস
নীল বললো,
-“কি আর করবো।মায়ের দেওয়া বিয়ের সব গয়না গাটি বিক্রি করে এসেছি ট্যুরে যাওয়ার জন্য
এই মেয়ের এইসব কথা বার্তা শুনে সবাই আহত হয়।এমন কি কেউ আছে যে মায়ের দেওয়া গয়না ঘাটি বিক্রি করে ট্যুরে আসে।
রোদ বলে,

-“গয়না বিক্রি করে ট্যুরে,, impossible
-“এটা শুধু এবার নয়।৩৬বার যখন পালিয়েছে কিছু না কিছু বিক্রি করেছে। তাই ওর কাছেimpossible বলতে কিছু নেই।।।

প্রাচ্য নিলের উদ্দেশ্য করে বলে,
-“কোথায় বিক্রি করে এসেছি। বলে এসেছি।
-“হুম তামিম ভাইয়া কাছে বলে এসেছি।
-“এবার কি তামিম ভাইয়া পালাতে সাহায্য করেছে।
-“তামিম ভাইয়া আর সোহা বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত এসেছে।
চলবে
#kawsar _sorna

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে