সূচনাতে প্রেম পর্ব-০৫

0
325

#সূচনাতে_প্রেম
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
#পর্ব৫
প্রায় আধা ঘণ্টা পর সাফোয়ান আর আবান ফিরে আসলো। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল দুই তরুণীকে । আবান প্রথমে বোরখা পরা নারীটিকে সানার কোনো আন্টি হবে ভেবেছিলো।কারণ বৃষ্টি কালো বোরখা নিকাব হাত +পা মুজা পরা ছিল দেখে।
পরে যখন এটা তার বেস্ট ফ্রেন্ড নিজেই একা একা লজ্জা পেয়েছিল নিজের ভাবনার জন্য।

~আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে বলতে চাচ্ছিলাম কি আমরা আপনাদের সাথে যেতে পারবো না। আসলে বৃষ্টি তো পর্দা করে মানুষের সামনে কথা বলা উচিত না আর না থাকা। এই দিকটা ভেবে আমি চাচ্ছিলাম ওকে নিয়ে আমি আলাদা চলে যাই আপনারা নাহয় আজ একা চলে যান।

সাফোয়ান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ভাবল, এরপর রিক্সা ডেকে সানা আর বৃষ্টিকে উঠিয়ে দিলো।

~আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড কে আপনাদের বাড়িতে নিয়ে যান। যেহেতু আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড পর্দা করে তা আমি সম্মান করি।আমি চাচ্ছি আজ প্রথম আমার শালির সাথে পরিচয় হলো ট্রিট না দিলে দুলাভাই হিসেবে আমার বদনাম হবে। আমি প্যাক করে বাড়িতে দিয়ে আসবো আপনার রুমে বসে খাবেন দুজন । সাবধানে যাইয়েন আপনারা।

সানা আর বৃষ্টিকে বিদায় দিয়ে আবার আবানের কাছে ফিরে এলো সাফোয়ান। সানার ব্যবহারের আবানের কিছু সন্দেহ জাগে মনে।

~ভাবি আর তোর মধ্যে কি সবকিছু ঠিকঠাক হচ্ছে না? এমন চুপচাপ তোর সাথে বেশি কথা বলল না?

~ও এইরকমই চুপচাপ থাকে বাহিরের মানুষের সামনে। বাড়িতে একদম পুরাই উল্টো চঞ্চল। আর আজ আবার বৃষ্টি ছিল তাই চুপচাপ। ও আমার সাথে থাকলে মেয়েটা আবার একা হয়ে যেতো। সানা বৃষ্টিকে নিজের বোনের মতো ভাবে সুমাইয়া বলছে আমাকে।

~ওহ আচ্ছা। কিন্তু ভাবির ফ্রেন্ড অন্যরকম আই লাইক ইট।

বৃষ্টির কথায় আবানের মুখে অন্যরকম এক হাসির রেখা দেখা যায়। তা দেখে সাফোয়ানের খটকা লাগলো তাই সাফোয়ান বলে,

~ওর দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। ও যেরকম মেয়ে হাজবেন্ড ও খুঁজে সেই রকম।। ও আর দশটা মেয়ের মত না। আর তোর ভাবীর ইমোশন ওকে ঘিরে তাই বাদ দে তোর ভাবনা। চল তুই যা এখন নিজের কাজে আমি খাবার দিয়ে আসি৷

সাফোয়ান যত যাই বলুক না কেন তার কথা কানে নেয় নাই।সে তো নিজের ভাবনায় ব্যাস্ত। একবার যখন নিজের পছন্দ হয়েছে তো হয়েছেই।

অন্যদিকে রিক্সায় বসে বৃষ্টি বললো,

~দেখ ভাইয়া তোকে কত ভালোবাসে। তুই একবার বলেছিস আর ভাইয়া বুঝে নিয়েছেন আমাদের কথা চিন্তা করেই বাসার মধ্যে খাবারের ব্যবস্থা করতেছে।

~আমি জানি উনি একজন দায়িত্ববান মানুষ। কিন্তু আমাকে ভালবাসে কিনা আমি জানিনা। আমি নিজে ওনাকে ভালোবাসি না। উনার প্রতি আমার এক ভালো লাগা কাজ করে।

~এখন ভালবাসিস না তো কি হয়েছে? একদিন না একদিন ঠিকই বাসবি,হালাল সম্পর্কের জোর ই অন্যরকম ।

হ্যাঁ হালাল সম্পর্ক গুলোর মধ্যে টান আলাদা। দুজন অপরিচিত মানুষ গুলো কি সুন্দর সারা জীবনে একসাথে থেকে যায় একে অপরের পাশে।

~আমি জানিনা ঠিক ভবিষ্যতে কি হবে বা না হবে। কিন্তু এখন যা হচ্ছে তা আমার খুব ভালো লাগছে । উনাকে আমি যতই দেখছি অবাক হচ্ছি।এই যে কি সুন্দর আমাদের সাথে কথা বললো দেখলি না? কারো সাথে ভুলেও কথা বলতেন না। কেমন যেনো অনেক গম্ভীর ভাব ধরে থাকতে। এত রাগী মনে হতো যে ভয়ে তার আশেপাশ যেতাম না ভুলেও।কিন্তু এখন লোকটা আমার সাথে সম্পূর্ণ আলাদা ব্যবহার করে।

~এটাই হয়তো স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা। এখন এসব কথা বাদ দিয়ে বাসায় যাই অনেকদিন হচ্ছে ভাবির সাথে দেখা হয় না আমার।

বাসায় বসে সানা সুমাইয়া এবং বৃষ্টি আড্ডা দিচ্ছে। বৃষ্টির আম্মুকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে আজ বৃষ্টি এবাড়িতেই থাকবে।সানার কথা শুনে তিনি আর আপত্তি করেননি ৷ সাফোয়ান ড্রয়িংরুমে বসে আছে। অফিসে আর যায়নি আজ তাকে বড্ড ক্লান্ত লাগছে। ফ্রেশ হওয়া দরকার।

বৃষ্টিকে রুমে থাকতে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই হয়তো সে নামাজ আদায় করছে। সানা ড্রয়িংরুমে গিয়ে সাফোয়ান কে বলে।

~আপনি এক কাজ করুন আমার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।

সানা যযে তকে তার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হবার অফার দেবে তো সাফোয়ান ভাবেনি। ভাবার কথাও না কারণ সানা তার আগের ব্যাবহারে বুঝিয়েছে সে সাফোয়ান কে পছন্দ করেনা।

~ না থাক সমস্যা নাই আমি এখানেই ঠিক আছি। বাসায় ফিরবো এখন।

সাফোয়ানের এর প্রত্যাখ্যানের মন খারাপ হয়ে যায় সানার।সাফোয়ান তার মুখের উপর এভাবে না করে দিবে সে ভাবে নাই। সাফোয়ান হয়তো সেদিনের কথা রেস ধরেই তার ওপর এখনো অভিমান করে আছে। থাকারই কথা।

কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলল না সানা। সাফোয়ান খাবার গুলো টেবিলের উপর সানাকে দেখিয়ে দিল।

~এখানে আপনাদের জন্য খাবার এনেছি খেয়ে নেবেন। আসি ভালো থাকবেন নিজের খেয়াল রাখবেন।

~আপনি না হয় বসুন একসাথে খাব সবাই আমরা ।

~না সাইফ বাসায় একা তাই ওকে ছাড়া খাওয়া সম্ভব না।

সাফোয়ান আর দেড়ির করলো না চলে গেল বাড়ি থেকে । সানা সেখানে যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। ড্রয়িং রুমে এসে দেখে সানা দরজার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাফোয়ান মনে হয় চলে গিয়েছে। তাই সুমাইয়া মশকরা করে বলে ওঠে,

~এভাবে খালি রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকলে কি হবে ননদিনী? যার যাওয়ার সে তো চলেই গেছে।

সুমাইয়ার কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় সানা। ভাবির কাছে যে এভাবে ধরা খেয়ে যাবে বুঝিনি আগে। এখন তো সব সময় তাকে এই একটা কথা নিয়ে ক্ষেপাবে।।

~কি যা তা বলতেছ আমি তো তাকিয়ে আছি দরজাটা খোলা নাকি বন্ধ বোঝার জন্য।

~ তা কি বুঝলে দরজা খোলা নাকি বন্ধ?

ততোক্ষনে সেখানে বৃষ্টি এসেও হাজির হয়। ভাবিকে হাসতে দেখে জিজ্ঞেস করে,,

~ কি নিয়ে হাসছো তুমি ভাবি? আর ভাইয়া কি চলে গেছে?

~হ্যাঁ একটু আগেই চলে গেল। আর সে দরজার দিকে তাকিয়ে চেক করছে দরজা খোলা না বন্ধ। আর আমি হাসলে দোষ হয়ে যায়।

বৃষ্টি ও সুমাইয়ার কথায় হেসে ফেলে। ওইদিকে সানা মুখ গুমরো করে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে নিয়ে মজা করে এই ব্যাপারটা তার ভালো লাগেনা। সব সময় তাকে লজ্জায় ফেলে।

~ভাবি আর বৃষ্টি তোমরা সবসময় আমার পিছে কেন লাগো ওইভাবে হ্যাঁ, আমি কি করেছি?

~তুই আর কি করবি? আজ আমার কেউ নাই দেখে এভাবে দরজা বন্ধ কিনা দেখতে পারি না।

বৃষ্টির কথায় জোরে হেসে ফেলে সুমাইয়া।

~আমাকে খ্যাপানো হলে এবার দেখো তোমার ভাই কি নিয়ে এসেছে সার্ভ করে দেও খুদা লেগেছে ।

সুমাইয়া সব খাবার প্লেটে সাজিয়ে বৃষ্টি আর সানা কে দিল। তখন বৃষ্টি সুমাইয়াকে বলল,

~ভাবি সাফোয়ান ভাইয়া ফোন নাম্বার কি আপনার কাছে আছে? তাহলে দয়া করে আপনার ননদিনীকে দিন। তার কাছে কিন্তু সাফোয়ান ভাইয়ের নাম্বার নাই।

~তারা একসাথে এত ঘুরে ফিরে আসলো কিন্তু ফোন নবার এক্সচেঞ্জ এখনো করেনি?

~জানো না ভাবি তোমার ননদিনী কত পরিমাণের আনরোমান্টিক একজন মেয়ে। যাইহোক বাড়ির গুরুজনদের সাথে কথা বলে তারিখ ঠিক করে ফেলো কবে ননদেকে ন তোমার ভাইয়ের বাড়ি পাঠাবে। সাইফের যে বাড়িতে একা কষ্ট হয় থাকতে জিনিসটা ভুলে গেছো?

~নাগো বোন ভুলি নাই। আমরা জানি মা-বাবাকে ছাড়া সাইফকে এত বড় কিভাবে করেছি আমি আর ভাইয়া।আমি চলে আসার পর ও প্রচন্ড একা হয়ে গেছে বাড়িতে। কিন্তু আমি ভাবলাম সানাকে যদি এত তাড়াতাড়ি তুলে দেওয়ার কথা বলি তাহলে যদি আমার শ্বশুরমশাই হাজবেন্ড ভুল বুঝে। হাজার হোক সানা তাদের বাড়ির একমাত্র মেয়ে।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে