সূচনাতে প্রেম পর্ব-০৭

0
401

#সূচনাতে_প্রেম
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
#পর্ব৭
সানার মনের মাঝে অদ্ভুদ এক অনুভূতি কাজ করছে। এর আগে এমন অনুভূতির সাথে সে পরিচিত ছিলো না। সাফোয়ান তার জিবনে আসার পর থেকে নিত্যনতুন এইসব নাম না জানা অনুভূতির সাথে পরিচিত হচ্ছে সে। আর মাত্র কিছুদিন এরপর বিয়ে। চলে যবে শশুর বাড়ি। যেই লোককে সে পছন্দ করতো না সেই লোককে নিজের অজান্তে ভালোবেসে ফেলা আর তার সাথে গোটা জীবন পার করে দেওয়ার ভাবনা। একা একা বসে এসব ভাবছিলো তখন সানার মোবাইলে টুংটাং শব্দ বেজে উঠলো। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখতে পেলো সাফোয়ানের ম্যাসেজ।

~ প্রিয়,প্রিয়তমা,,

এই অধমের জিবনে এসে সাদাকালো রঙ দূরে সরিয়ে দিয়ে নানান রঙ্গে তাকে রাঙ্গিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে এক সমুদ্র ভালোবাসা। আপনাকে ভালো না বাসলে হয়তো এতো সুন্দর জিবন হতে পারে আমি ভাবতেই পারতাম না। অনেক কিছু নিজের মাঝে চেপে আছি। আমার মনের সব কথা আপনাকে জানাতে চাই। অধির আগ্রহে সেইদিনের অপেক্ষায় থাকলাম। প্রিয়তমার অপেক্ষায় এই অধম প্রেমিক পুরুষের হৃদয়ের যে কি হাল হচ্ছে বুঝাতে পারবো না। নিজেকে সেই অষ্টাদশীর আবেগে ভরপুর পাগল প্রেমিক মনে হচ্ছে। নিজের ভালোবাসা কে দেখার জন্য বারবার ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে। এই যে নিজের বয়সের ব্যাপারটা আমি কি সুন্দরভাবে ভুলে গেছি তাই না? আমার এই ব্যাবহার বাচ্চামো লাগছে হয়তো আপনার কাছে? তবুও বলবো নিজের বিবাহিত বৈধ প্রিয়তমার জন্য এমন হাজারো বাচ্চামো করতে রাজি আছে। আমি যে শুধুমাত্র নিজের এই প্রিয়তমাতে মজেছি।

ওহ হ্যাঁ যার জন্য মোবাইল হাতে নেওয়া,সুমাইয়া কে নিয়ে জলদি চলে আসুন অপেক্ষায় আছি।

~ইতি আপনার ব্যাক্তিগত প্রেমিক পুরুষ~

সাফোয়ান যে এতো সুন্দর ভাবে লিখতে পারে ব্যাপারটা সানার অজানা। কি সুন্দর ভাবে নিজের অনুভুতির একাংশ তাকে লিখে পাঠালো। সানার পালটা ম্যাসেযে লিখতে ইচ্ছা করলো, আপনার এই ব্যাক্তিত্বের প্রেমে পরেছি আমি প্রেমিক পুরুষ। আপনাকে ধীরে ধীরে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসতে শুরু করেছি।

কিন্তু নিজের মনের ইচ্ছা মনের মাঝে চেপে রেখে ম্যাসেজ দিলো টাইম মতো পৌছে যাবে তারা।

অন্যদিকে আবান চিন্তায় মরে যাচ্ছে সে কিভাবে আবার বৃষ্টির দেখা পাবে। সেই এক পলকে এক মেয়ের চাহনী যে এখোনো তার মনের মাঝে গেথে আছে। কাউকে না দেখে কারো কথা না শুনে যে তাকে ভালোবাসা যায় এই ব্যাপারে আবান আগে বিশ্বাস করতো না। অথচ নিজের সাথে আজ সেই ব্যাপারটি ঘটে গেলো। তখন সাফোয়ান আসায় তাকে জিজ্ঞেস করলো।

~ তোর বিয়েতে কি ভাবির বেষ্টফ্রেন্ড আসবে?

~ হ্যাঁ বৃষ্টি আর ওর মা আসবে। তোর ভাবি নিজে গিয়ে নিয়ে আসবে। কারন তাদের যে কি ভালোবাসে তোর ভাবি আমি বোঝাতে পারবো না। আর মামনিও মানে বৃষ্টির আম্মাও তোর ভাবিকে অনেক ভালোবাসে।

~ তুই কখোনো বৃষ্টি কে দেখোস নাই?

আবানের প্রশ্নে সাফোয়ান হাল্কা হাসে। এরপর জবাব দেয়,,,

~না দেখি নাই। আমি তোর ভাবিদের বাসায় বেশি যাই নাই। বৃষ্টির ব্যাপারে এইটুকুই জানা যা সুমাইয়ার থেকে শুনেছি। মেয়েটি কে জহির ভাইয়া ও মেবি ৪-৫ বছর হবে দেখে নাই৷ সেই ছোট থেকে না কি ওরা বেষ্টফ্রেন্ড৷ যবে থেকে বৃষ্টি পর্দা শুরু করলো তবে থেকে ননমাহরাম মানুষের সাথে দেখাও করে না আর কথাও বলে না।

~ ভাবি কেনো বৃষ্টির মতো চলেন? বৃষ্টি কি তার বেষ্টফ্রেন্ড কে এসব নিয়ে বলেনা?

~ এসব নিয়ে জানিনা আমি ঠিক। ওদের ব্যাপার ওরা বুঝে নিবে৷ আমি এতো কথা এখনো বলি নাই। তাই জানিনা ঠিক। এতো আগ্রোহ কেনো ওর ব্যাপারে তোর?

~ সেটা সময় হলে জানতে পারবি তুই। এখন যা ভাবি অপেক্ষা করবে আবার। তোর কাজ এখন আমার করতে হবে। নিজের বিয়ের জন্য আমার ঘাড়ে কাজ চাপানো হয়েছে। আমি বলে দিলাম এটাই আমার করা শেষ কাজ হবে সাফোয়ান এরপর আমাকে আর ডাকবি না। আমি জানি বস আমাকে আনার জন্য তোকে ব্যাবহার করে। কিন্তু এরপর ইমোশোনাল ব্লাকমেইলেও কাজ হবে না।

~ রাগছিস কেন? এই কাজ কি আমার একার? এই কাজের পর তুই যা আমার সমস্যা নাই। আমি আর ডাকবো না বস যা করার করবে নে।

~ পরের চাকরি করার এই এক সমস্যা রে ভাই। আমি তো শখের বসে করতেছি আর তোর তো এটা প্যাশন।

~ অনেক সময় ইচ্ছা হয় ছেড়ে দেই নিজে কিছু করি।এরপর নিজের এতো কষ্টের কথা মাথায় আসে। এটা আমার স্বপ্ন ছিলো। এই কাজের জন্য আমি জানি আমি কতো স্যাক্রিফাইস করেছি।

~ এইবার আমিও এসেছি দুইজন মিলে এসব ঠিক করে নিবো এবার। দেখবি সব আমাদের মতে হবে।

~ আশা করি ভাই তাই হোক। আচ্ছা গেলাম থাক।

সাফোয়ান চলে গেলো শপিংমলের উদ্দেশ্যে। আজ তার প্রিয়তমা কে নিজের পছন্দমতো শাড়ি কিনে দিবে। ভাবতেই মন ভালো হয়ে গেলো তার। সুমাইয়া আর সানাও রিক্সায় বসে বসে কথা বলছে। তারাও নিজের গন্তব্যের জন্য বের হয়েছে।

~ আচ্ছা সানা একটা কথা বলো আমাত ভাইয়ার জন্য কি তোমার মনে কোনো ভালোবাসা নাই?আমি জানি প্রথমে ভাইয়াকে তোমার অপছন্দ ছিলো। ভাইয়া যে প্রচুর ইন্ট্রোভার্ট একজন মানুষ। উনি সহযে কারো সাথে মিশতে পারে না। কিন্তু যখন মিশে তার মতো অসাধারন ব্যাক্তি আর একজন পাবেনা জিবনে। আমার সেই ভাই তোমাকে কিভাবে ভালোবেসে ফেললো আমি জানিনা। প্রথমে প্রচুর ভয়ে ছিলো তোমাদের বয়সের ব্যাবধান নিয়ে। তুমি ২২ বছরের আর আমার ভাই ৩১ বছরের। বিয়েতে যদি বাবা আর তোমার ভাই অমত দেয়। কিন্তু বাবা সাফোয়ান ভাইজানের ভালোবাসা বুঝেছেন। সে বুঝতে পেরেছিলেন তার রাজকন্যাকে একজন ভালো পাত্রের হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হলেন। তোমার ভাইজান ও কিন্তু এই বিয়তে রাজি না বা এখোনো হয়তো রাজি হতে পারেন নি। কিন্তু বাবার উপর যে সে কথা বলতে পারেন না। তাই চুপচাপ আছেন। কিন্তু বিশ্বাস করো ভাইজানের মতো করে এতো ভালো তোমায় অন্যকেউ বাসতে পারবেনা সানা।

~ ভাবি আমি প্রথমে ওনাকে অন্যভাব্র জাজ করেছিলাম আর প্রতিনিয়ত আমি অন্য এক সাফোয়ান কে দেখতে পাই। নিজের বোকামির পরিচয় দিচ্ছি। আমি জানিনা আমি ওনার যোগ্য কি না কিন্তু আমি চেষ্টা করবো সবটা দিয়ে ওনার উপযোগী হওয়ার।

~ দেখো বোন খুব একটা কম সময় হয়নি আমি তোমাদের বাড়িতে এসেছি। আমি জানি সংসার ধর্ম এতোটা সহয না। সব কিছু বুঝে উঠতে সময় লাগে৷ কিন্তু দেখো প্রতিটি পদে তুমি সাফোয়ান ভাইজান কে নিজের পাশে পাবে। আমিও রান্না জানতাম না ঘরের কাজ জানতাম না। ভাইজান নিজের হাতে আমাকে সব শিখিয়েছেন। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর একমাত্র ভাইজান ছিলেন আমাকে আর সাইফকে সামলানোর জন্য। আমাদের দিকে কোনো আত্মীয়ের থেকে সাহায্যের হাত আসে নি। ভাইজান বাবা-মা কে প্রচন্ড ভালোবাসতেন। বাবা-মা কে হারিয়ে সে অনেক ভেঙ্গে পরেছিলো কিন্তু আমাদের সামলাতে সে নিজের সব অনুভুতি চাপা দিয়ে দেয়। আমাদের দেখভাল শান্তনা সব ভাইজান করেছেন। নিজের দুঃখ কষ্ট প্রকাশ করেন নি যদি আমরা কষ্ট পাই। সেই ভাইজান যখন তোমাকে ভালোবেসে ফেললো আমি ঠিক করে নিয়েছিলাম যেভাবেই হোক আমার ভাইজানের ভালোবাসা তাদের মিলিয়ে দিবো।

ভাবির মুখে এতো কথা শুনে কান্না চলে আসছে সানার। সানার থেকেও বেশি সাফার করেছে সাফোয়ান আর সুমাইয়া। বাবা-মা একত্রে হারানোর শোক যে পেয়েছেন।

~ আচ্ছা ভাবি ভাইজান তো তোমাকে অনেক ভালোবাসে তাই না?

~ হ্যাঁ তোমার ভাইজান ও আমাকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু আমার ভাইজান আর তোমার ভাইজানের ভালোবাসার মধ্যে আকাশ – পাতাল তফাৎ রয়েছে। সবার প্রকাশের ধরন আলাদা আলাদা৷

সুমাইয়ার কথায় এক রহস্য প্রকাশ পেলো। কেমন উদাসীন ভাবে বললো সে৷এভাবে তো সে কখোনো কথা বলেনা।

~ ভাবি?

~ থাক সানা আজ আর না। অন্যএকদিন ব লবো এই বিষয়ে কথা। আমরা তো চলে এসেছি তাইনা?

সুমাইয়া সানার কথা এড়িয়ে গেলো। হয়ত বাব-মায়ের কথা মনে পরায় খারাপ লাগছে। তাই আর প্রশ্ন করে ডিস্টার্ব করলো না সুমাইয়াকে । সুমাইয়াও নিজের মনের কথা চেপে গেলো। কিছু কথা অপ্রকাশিত থাকলেই জিবন সুন্দর থাকে।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে