সুপ্ত অনুভূতি পর্ব-১৪

0
2054

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_১৪
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

দেখতে দেখতে আরও চারদিন কেটে গেলো৷ আগামীকাল অদ্রিতা আপুর বিয়ে৷ রিংকি কালই চলে এসেছে৷ আজ সকাল থেকে কাজের পর কাজ৷ দুপুরে হলুদ অনুষ্ঠান আর সন্ধ্যায় মেহেদী অনুষ্টান৷
আমি, সামু, রিংকি, ফারিহা, আয়েশা আপু আমরা কাঁচা হলুদ আর টিয়া কালার পারের সুতি শাড়ি পড়েছি৷ শাড়িতেই নারী কথাটার আবারো প্রমাণ পেলাম৷ আসলেই সবাইকে শাড়ি পড়াতে খুব ভালো লাগছে৷ আরও বেশি ভালো লাগছে রিংকি আর ফারিহাকে দেখে৷ ওরা দুজন নিজের বাড়ির মতো হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে দেখে মনেই হচ্ছেনা এটা ওদের বাড়ি নয়৷

ফারিহা আর রিংকি পাটায় হলুদ বাটছে৷ আর আমি আর সামু বসে বসে ডাল থেকে মেহেদী পাতা আলগা করছি৷ ওরা হলুদ বাটার পর আমরা মেহেদী পাতা বাটবো৷
ফারিহা আর রিংকি হলুদ বেটে বাটিতে রেখে চলে গেলো৷ আমার ফোনে চার্জ না থাকায় উপরে গেলাম হঠাৎই একটা হাত আমায় টেনে নিয়ে গেলো৷ চিনতে অসুবিধা হলোনা কার হাত এটা৷
আদিল ভাইয়া আমাকে টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন৷

আরুহিঃকী??? কী সমস্যা৷
.
নাথিং ডিয়ার৷
.
“তাহলে এভাবে চেপে ধরেছো কেনো ছাড়ো নিচে সবাই ওয়েট করছে সবাইকে হলুদ লাগাতে হবেতো লেইট হয়ে যাচ্ছে৷”
আদিল তবুও ছাড়ছেনা আরও হেসে তাকিয়ে আছে৷

“আরে ছাড়ো না রে৷
.
উম,,হুম৷
.
আদিল ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে একটা বাটি থেকে হলুদ এনে আমার দুই গালে মাখিয়ে দিলো৷

“এবার যা৷ ”
,
আমি দৌড়ে নিচে এলাম৷ ফোনও আর চার্জে দেওয়া হলোনা ধূর ধূর৷

সামু, রিংকি, ফারিহা তিনজন সোফায় বসে বসে গল্প করছে৷ আমি এগিয়ে গেলাম ওদের দিকে
“এমা সবার গালেই হলুদ লাগানো শুধু ফারিহা বাধে৷ হুম বুঝতে পারসি৷

আরুহিঃতোদের গালে হলুদ লাগানো কেনো৷ নিশ্চয় স্পেশাল মানুষে স্পেশাল ভাবে লাগিয়েছে৷
.
সামান্তাঃঠিক বলেছিস৷ কিন্তু তোকে তো ভাইয়া রুমে টেনে নিয়ে গিয়ে হলুদ লাগিয়েছে৷কী ঠিক বললাম তো৷
.
আরুহিঃতুই কী করে জানলি৷
.
সামান্তাঃআদিল ভাইয়া জীবনেও কারও সামনে তোকে হলুদ লাগাবেনা তাই৷
.
আরুহিঃকিন্তু তোদের কী করে লাগালো৷
.
সামান্তাঃএইতো আমি আর রিংকি সোফায় বসেছিলাম কোথা থেকে ওরা দুই ভাই এসে আমাদের গালে চট করে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে চলে গেলো৷
.
রিংকিঃশুধু কী তাই ওই আহিল বেটাতো আমার চোখেও হলুদ লাগিয়ে দিয়ে চলে গেসে৷ চোখ এখনও জ্বলতেসে৷
.
ফারিহা মন খারাপ করে উঠে চলে গেলো৷ এই মেয়ের হাবভাব কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা৷ কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি আদিব ভাইয়া কথা বলতে চায় ওর সঙ্গে বাট সে ভাইয়াকে ইগনোর করে৷ কেনো করছে সেটাও জানিনা৷
🍁🍁🍁🍁
ফারিহা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করতে যেতেই আদিব দরজা টেলে ভিতরে চলে গেলো৷

ফারিহাঃকী সমস্যা৷ এভাবে একা একটা মেয়ের রুমে কেনো ঢুকছেন আপনি৷
.
তোমার কী সমস্যা সেইটা বলো৷ কেনো ইগনোর করছো আমায়৷
.
ইগনোর করতে যাবো কোন দুঃখে৷ আপনার সাথে আমার ইমার্জেন্সি কথা থাকলে তো কথা বলবো৷ হুদাই কথা বলতে যাবো কেন আজব৷
.
মিথ্যা বলোনা রমনী৷ তোমায় মিথ্যা কথায় একদম মানায় না৷ তাই সত্যি কথাটা বলোতো৷
.
কী বলবো আমি৷ যান না যান নিজের গার্লফ্রেন্ডের কাছে যান আমার কাছে এতো কৈফিয়ত চাইতে কে বলেছে আপনাকে৷ আমার পিছনে না ঘুরে বরং তাকে টাইম দিন৷
.
আমি কী একবারো বলেছি যে আমার গার্লফ্রেন্ড আছে৷
.
আপনি না বললে কী হবে আপনার ভাইতো বলেছে না কী৷ আর বললে তো সত্যিটাই বলবে মিথ্যাটা তো আর বলবেনা৷ তাই সরুন এখান থেকে আমি চেঞ্জ করবো৷
.
ফারিহা আমার কথা শুনো ভাইয়া তখন মিথ্যা কথা বলেছে৷ হ্যাঁ আমি মানছি যে ওদের তিনজনের পছন্দ করে রাখা আছে৷ কিন্তু আমার নেই৷ তখন চারজনের কথা না বললে বড় চাচ্চু মেয়েটাকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিতো৷ আচ্ছা এখন এই কথাটা বলো যে এই কথা শুনে তোমার মনে এতো কষ্ট লাগলো কেনো৷
.
ফারিহা আদিবের থেকে পিছন ঘুরে বললো,,জানিনা৷

“কেনো জানোনা সোজা বলে দাও যে তুমি আমায়,,,
.
কী আমি তোমায়??
.
তুমি আমায় ভালোবাসো৷
.
মোটেওনা আমি আপনাকে ভালোবাসিনা৷
.
আচ্ছা তাহলে তো বেশ ভালো আমি এসেছিলাম তোমাকে ভালোবেসে হলুদ লাগাবো বলে কিন্তু তুমিতো আর,,যাইহোক নিচে একটা মেয়েকে দেখলাম খুব কিউট একেই না হয় হলুদ লাগাবো গেলাম আমি৷ আদিব রুম থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ফারিহা এগিয়ে এসে ওর কলার চেপে ধরলো৷

“হাউ ডেয়ার ইউ৷ আর একবার যদি আপনার মুখে আমি অন্য মেয়ের নাম শুনি তাহলে মেরে তক্তা বানিয়ে দিবো বলে দিলাম৷
.
ওরে বাবা এতো রাগ৷ তাহলে স্বীকার করছো যে তুমি আমাকে৷
.
হ্যাঁ ভালোবাসি৷
আদিব মুচকি হেসে ফারিহার গালে হলুদ লাগিয়ে চলে গেলো৷ ফারিহা গাল থেকে হলুদ এনে দেখে হাসছে৷ তার বাটা হলুদই তার গাল ছুয়েছে৷
🍁🍁🍁
সবাই পানি আনার জন্যে বাসার পাশের পুকুরে গেছে আমরা সবাইও আছি৷ আমার আর রিংকির কোমড়ে কলসি৷ আজ আমাদের পিওর বাঙালী লাগছে৷
সবাই পুকুর থেকে পানি নিয়ে চলে গেছে৷ কিন্তু আমি আর রিংকি এখনো কলসিই ভরতে পারছিনা৷ পুকুর অনেক পিচ্ছিল হয়ে গেছে যার জন্যে পা রাখাই যাচ্ছেনা৷ আমি রিংকির হাত ধরে পানি নেওয়ার জন্য একটু ঝুকে গেলাম কিন্তু আমার আর পুরোপুরি ঝুকা হলোনা তার আগেই রিংকি আর আমি দুজনই পুকুরে পড়ে গেলাম৷ শাড়ি খুলে গিয়ে মুখে পেছিয়ে গেছে৷ পুকুর অতটা গভীর নয় তাই আমাদের অসুবিধে হচ্ছেনা৷ কোনমতে পাড়ে উঠে শাড়িটা পেছিয়া পানি না নিয়েই দৌড়ে বাসার দিকে চলে গেলাম৷ রিংকি দুই হাত দিয়ে শাড়ি ধরে দৌড়াচ্ছে বেচারি যে মাটির কলস নিয়ে গেছিলো সেটাও ভেঙে ফেলসে৷ দৌড়াতে দৌড়াতে ধপাস করে মাটিতে পরে গেলো৷ সারা শরীর ধুলায় মাখামাখি৷ কোনমতে একে তুলে আবারও দৌড়াতে লাগলাম৷ ইশ কেউ দেখে ফেললে ইয়া কী লজ্জা কী লজ্জা৷ আমি আর রিংকি বাসার পিছন দিক দিয়ে ঢুকলাম যাতে কারও চোখে পড়তে না হয়৷
🍁🍁🍁🍁
আরুহিঃমা গো কোমড় আমার গেলো৷ আমি আর মেহেদী পাতা বাটতে পারবোনা আল্লাহ্ গো৷ এত শক্ত আগে জানলে বাটতেই বসতাম না৷
.
রিংকিঃতারাতাড়ি বাট নোখে মেহেদী দিতে হবে তো৷
.
আরুহিঃপারবোনা নিজে বাট পারলে৷
.
রিংকিঃআমরা যখন হলুদ বাটসিলাম তখন তো তুমি লাগাইছিলা আমি কী তখন এই কথা বলসি৷
🍁🍁🍁
মেহেদী পর্ব শেষ করে সবাই এখন ড্যান্স করার কথা ভাবতেছে৷ ড্যান্স করার জন্য খুব সুন্দর করে স্টেজ সাজানো হয়েছে৷আদনান,আদিল,আহিল,আদিব ওরা ওদের পার্টনার কে নিয়ে স্টেজে গেলো কাপল ড্যান্স করবে সবাই৷ আদনান সামান্তাকে রেখে এগিয়ে গিয়ে গান প্লে করলো৷

হায়ে গারমী৷
“না এইটা না৷ ”
.
ডিজে ওয়ালা বেবি তেরি গানা চালাদো৷
“এইটা ঠিক আছে৷ ”

আদিল গানটা শুনে নাক মুখ কুঁচকে এগিয়ে এসে এসব গান চেঞ্জ করে বাংলা গান প্লে করলো৷

🎼তোমার নামে রোদ্দুরে, আমি ঢুবেছি সমুদ্দুরে
জানি না যাবো কতদূরে এখনও,
.
আমার পোড়া কপালে,আর আমার সন্ধ্যে সকালে
তুমি কেনো এলে জানিনা এখনও
(সবাই গানের তালে তালে স্লো মোশনে ড্যান্স করছে)
.
ফন্দি আঁটে মন পালাবার,বন্দী আছে কাছে সে তোমার
যদি সত্যি জানতে চাও তোমাকে চাই,তোমাকে চাই
যদি মিথ্যা মানতে চাও তোমাকই চাই৷
(ড্যান্সের তালে তালে আমি আদিল ভাইয়ার খুব কাছাকাছি যাচ্ছি যা আগে কোনদিন যাইনি৷ ভাইয়া আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে গানের তালে তালে ড্যান্স করছে৷)

ড্যান্স করার মধ্যেই ধপাস করে একটা আওয়াজ হলো৷ আমরা সবাই ড্যান্স বাদ দিয়ে এগিয়ে এসে দেখলাম ফারিহা মেঝেতে পরে আছে পায়ে হাত দিয়ে৷ রিংকি বেচারিকে টেনে দাঁড় করালো৷

আরুহিঃফারিহা ঠিক আছো তুমি৷
.
কী ঠিক থাকবো হ্যাঁ তোমার ভাইয়ার জন্য আমি পা মচকে পড়ে গেসি৷ আর এই যে হিটলার খুব তো মাধুরী, নোরা ফাতেহিকেও ড্যান্সে হারিয়ে দিতে পারেন এটাই আপনার ড্যান্সের নমুনা৷ সবাই কত সুন্দর হাত ধরে ধরে ড্যান্স করছিলো৷ আর এই আদিব আমাকে এক হাত দিয়ে না দু-হাত দিয়ে ঘুরানো শুরু করছে এর নাচের তালে মনে হলো পৃথিবী সূর্যের চারপাশে না ঘুরে আমার চারপাশে ঘুরতেছে৷ হিল জুতো টাল সামলাতে পারলাম না আমি তাই পা মচকে পড়ে গেলাম৷ আচ্ছা আমি যাচ্ছি তোমরা নাচো৷

ফারিহা নিজের রুমে চলে গেলো৷ আদিব ভাইয়া এখনও তাকিয়ে আছে৷
আমরাও আর না নেচে সোফায় বসে পড়লাম৷ আদনান ভাইয়া আবারো গিয়ে হিন্দি গান প্লে করলো৷

“ওহ্ ইকতো কাম জিন্দেগানি৷ উসেপে কাম হে জাবানি৷
এটাকে বলে গান আহা৷

আদিল গান বন্ধ করে ফেললো৷ নিরব পরিবেশের জন্য নিরব গানই মানায় এসব উল্টা পাল্টা গান নয়৷

আদনানঃআচ্ছা গান বন্ধ করেছিস তো কী হয়েছে আমাকে বন্ধ কর৷ পারবিনা আমি তো গান গাইবই
.
মুক্কাল্লা মোকাবলা লেলা ওহো লেলা৷ মে লেলা তের মজনু,তু বানজা মেরি লেলা৷
তারপর যেন কী ধূত মনে নাই

চলবে♥️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে